রবীন্দ্রনাথের আসল পদবী ছিল কুশারী । অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি এই বিষয় নিয়ে লিখেছেন । তবে, কালের গর্ভে সেগুলো এখন সমাধিস্থ । যে সব তথ্য আমি দিয়েছি তার কিছু প্রমাণ আছে, বেশীর ভাগেরই নেই । জনপ্রিয় ঠাকুর পরিবারের ঠাকুর পদবীটি বহুযুগ পূর্বে ছিল কুশারী। ইংরেজ শাসন আমলে এই কুশারী পদবীর ক্রমবিবর্তন ঘটে হয়েছে ‘ঠাকুর’।
এবারে, বেশ পেছনের দিকে ফিরে যেতে হবে। না হলে, ব্যাপারটা সবিস্তারে বোঝা যাবে না ।
জনশ্রুতিকে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা বহাল তবিয়তে এখনও আছে । যেমন আছে, পুরাণ এবং আরও অনেক সংস্কৃত সাহিত্যের বর্ণণাকে উড়িয়ে দেবার । কারণ একটাই- প্রমাণের অভাব ।
তবু, যেসব লোকেরা এই সব ঘেঁটে আসল নির্য্যাস বের করে আমাদের সামনে আনেন, তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই হয় । আমার বিচারে এঁরা- বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিক ।
ধর্মশাস্ত্র বা যুদ্ধবিগ্রহ থেকেই ইতিহাসের সূত্রপাত হয়!
*Mythology is to be considered to be the parent of all history!!!!
Sir William Jones: - History of the primitive world!
History কথাটার উদ্ভব, বহু হাজার বছর আগের গ্রীক শব্দ HISTOR থেকে। যার অর্থ:- Knowledge and judgment। পরে ল্যাটিন শব্দ Historia আরও একটা অর্থ যোগ করে। সেটা হলো- বর্ণণ বা narration।
“বাংলার ইতিহাস পাওয়া যায় না।ঋকবেদেও বাংলার নাম পাওয়া যায় না।ঋকবেদে ঐতরেয় আরণ্যকে ৩ টি জাতির নাম পাওয়া যায়।..... জাতি অর্থে Caste নয়; Ethnic Race।.... এই ৩ টি জাতির নাম বঙ্গ, বগধ ও চের।চের রা যে আসলে দ্রাবিড় জাতির ১ টা বড় অংশ, সে বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতভেদ নেই।.....” প্রাসঙ্গিকভাবে একটি কথা এখানে বলা দরকার। “খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ হতে ৩০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০০ বছর আমরা দ্বিতীয় পর্ব বা যুগ বলে গ্রহণ করতে পারি। এই যুগের সূচনায় ভারতীয় আর্যসমাজে সর্ব্বোচ্চ স্থান লাভের জন্য ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় এই দুই বর্ণের মধ্যে এক সঙ্ঘাত লক্ষ্য করা যায়।ব্রাহ্মণেরা অবশ্যই শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ এবং মহাকাব্যের মধ্যে দিয়ে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করেছিলেন। কিন্তু, এই যুগে রচিত বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে যে, ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি সমাজে সর্বজনস্বীকৃত ছিল না।ঐতিহাসিকরা মনে করেন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণ-প্রাধান্যের বিরুদ্ধে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের প্রতিবাদই সূচিত হয়েছে এবং এই দুই বর্ণের লোকেই অন্তত বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এই কথাগুলো কেন লিখলাম, তা পাঠকরা পরে বুঝবেন। আর্যরা বলেছিলেন- তীর্থযাত্রা বাদে বঙ্গদেশে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। শ্রাদ্ধের পংক্তিতে বাঙ্গালীকে একসঙ্গে বসতে দেবে না। আর্যরা বঙ্গদেশকে বড় ভালোবাসতেন!!!!!এহেন বঙ্গদেশে ব্রাহ্মণদের আগমন একটু বিষ্ময়কর ! তাই,কোন বিশেষ জাতির বা ব্রাহ্মণ্যধর্মর গুণকীর্তন বা দোষবিচার নয়। স্বামীজী বলেছিলেন:-“Religion is realization, not talk or doctrine, nor theories however beautiful they may be. It is being and becoming, not hearing or acknowledging, but, it is the whole human soul becoming changed into what it believes.”স্বামীজী আরও বলেছিলেন:- “Religion is the highest plane of human thought and life.” এটাকে মাথায় রেখে একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস এই লেখক করেছে। ইতিহাস প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। এক তাম্রশাসনে দেখা যায়, ৪৩৬ খ্রীষ্টীয় সালে মহারাজাধিরাজ কুমারগুপ্তর সময়ে রাজসাহী অঞ্চলে একজন ব্রাহ্মণকে ভূমিদান করা হয়। এর ১০০ বা ১৫০ বছর পর ফরিদপুরে কিছু ব্রাহ্মণ জমিজমা নিয়ে বাস করতেন। এটাও তাম্রশাসনে দেখা যায়। কিছু পণ্ডিত এই তাম্রশাসন গুলোকে জাল বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু জাল হলেও , এই জাল গুলো ১০০০ বা ১২০০ বছর আগে হয়েছে এটা মেনে নিতে হয়।কিন্তু এই ব্রাহ্মণরা ছিলেন এবং ৭০০ ঘর ছিলেন। এঁরা, তখন এবং এখনও “সপ্তশতী” ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত। এঁদের হেলা করা হত, কারণ বলা হত এঁরা বেদ সম্বন্ধে কিছু জানতেন না।
কিন্তু রাবণ তো বেদ জানতেন! তার ওপর তিনি দ্রাবিড় এবং ব্রাহ্মণ!! তাহলে এই অবহেলার কারণ কি? তাই আমি; খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ হতে ৩০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০০ বছরের কথা আগেই বলেছি। এবার দেখা যাক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ কি লিখেছিলেন? তিনি বঙ্গদেশে ৬২৯ – ৬৪৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ১৬ বছর ছিলেন।তিনি বলছেন, তখন বঙ্গদেশে ১,০০,০০০ এর বেশী বৌদ্ধ ভিন্ন ভিন্ন সঙ্ঘারামে বা বিহারে বাস করতেন।
এছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বী ভিক্ষুরাও ছিলেন- মানে জৈন প্রভৃতি ভিক্ষুরাও ছিলেন। এবার এই ভিক্ষুরা ভিক্ষা ছাড়া অন্য কোন রোজগার করতেন না বা নিষেধ ছিল। ৩ বাড়ীতে ভিক্ষার পর, ৪র্থ বাড়ীতে ভিক্ষা করার নিয়ম ছিল না। আবার ১ বাড়ীতে ভিক্ষা করার পর, সেই বাড়ীতে ১ মাস পর ভিক্ষা করতে পারতেন; তার আগে নয়। এটাও নিয়ম ছিল (কি সুন্দর অর্থনীতি!)। সুতরাং একজন যতি (এই ভিক্ষুদের তাই বলা হত; কারণ তাঁরা ইন্দ্রিয় সংযম করতেন) প্রতিপালন করতে অন্তত ১০০ ঘর গৃহস্থ বৌদ্ধ থাকা চাই!তাহলে, লক্ষাধিক যতিকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য ১ কোটি গৃহস্থ বৌদ্ধ থাকা চাই। আর ছিলও তাই! প্রায় গোটা বঙ্গদেশ তখন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণদের(মাত্র ৭০০ ঘর! যাঁদের কেউ পাত্তা দিত না বলে আস্তে আস্তে তাঁরা সব ভুলে যাচ্ছিলেন?)তারা গ্রাহ্য করতেন না। আর পুঁথিপত্র ঘাঁটলে দেখা যায় যে এই আন্দোলনটা সারা ভারতেই হচ্ছিল।(এই প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা বুদ্ধদেব এবং তীর্থংকর জৈন করে গেছিলেন।)তাই কুমারিল ভট্ট; মীমাংসা সূত্রের শবর ভাষ্যর ১ টীকা লিখে আবার বৈদিক ধর্মের প্রচারের চেষ্টা করছিলেন। কুমারিল ভট্ট তখন কনৌজের ব্রাহ্মণদের নেতা। কনৌজ তখন ১ জন প্রবল পরাক্রান্ত ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী মহারাজার রাজধানী।
সুযোগও এসে গেল। বাংলার রাজা আদিশূর পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করবেন বলে ঠিক করলেন। আবার ইতিহাসের গুঁতো! “বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকরা” বললেন বাংলার রাজা আদিশূর বলে কেউ ছিলেন না! কারণ কোন তাম্রশাসনে আদিশূরের নাম পাওয়া যায় না। কেউ বললেন; তাম্রশাসনেই কি সব পাওয়া যায়? জনশ্রুতির কোন মূল্য নেই! আর ইতিহাস কি সব সময় সব নিয়ম মেনে চলে!! অনেক বাকবিতণ্ডার পর ঐতিহাসিকরা প্রায় এক মত হলেন, যে কাশ্মীরের রাজা “জয়ন্ত” বাংলার রাজা আদিশূরের অপর নাম ।(এসম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা বারান্তরে করা যাবে, না হলে প্রবন্ধটির কলেবর বৃদ্ধি পাবে, আর পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি হতে পারে!)
তা এই যে বাংলা বলছি, এটার ঠিক অবস্থানটা কোথায় ছিল? তখনকার বাংলায় ২টো বড় বড় নগর ছিল। একটা পৌন্ড্রবর্ধন; আরেকটি তাম্রলিপ্তি। তাম্রলিপ্তির আরও প্রাচীন নাম দামলিপ্তি।অর্থাৎ, তামিলদের শহর। তাই আমি রাবণের কথা প্রসঙ্গিকভাবে আগে উল্লেখ করেছিলাম। যাই হোক, এই পৌন্ড্রবর্ধন বর্তমানে মালদহের পাণ্ডুয়া। তাম্রলিপ্তি এখন তমলুক- পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর।এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।
এখনকার বিহার রাজ্যের নাম ছিল কান্যকুব্জ। এখানকার বাসিন্দাদের কনৌজী বলা হত/ হয় । এই কান্যকুব্জর ২ টি ভাগ ছিল। মূল কনৌজ এবং কোলাঞ্চ। কোলাঞ্চর অধিষ্ঠান ছিল এখকার পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ।
কনৌজের রাজা ছিলেন রাজা আদিশূর বা জয়ন্তর শ্বশুর “চন্দ্রদেব”। আর পূর্বাদ্ধ কোলাঞ্চের রাজা ছিলেন “চন্দ্রদেবের” ভাই “বীরসিংহ”। এই বীরসিংহের রাজ্য কোলাঞ্চ থেকে ৫ জন ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক এসেছিলেন বঙ্গদেশে। এঁরা এসেছিলেন কুমারিল ভট্ট ও তাঁর শিষ্য ভবভূতির নির্দ্দেশে। কারন, বাংলার অপুত্রক রাজা আদিশূর যখন বাংলায় ৭০০ জন ব্রাহ্মণকে ( এখন এরা সপ্তশতী ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত)পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে বলেন, ব্রাহ্মণরা তখন বলেন তাঁরা অনভ্যাসের ফলে বেদবিহিত যজ্ঞ করতে পারবেন না। (এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, প্রক্ষিপ্ত। কারন, কুমারিল ভট্ট ও তাঁর শিষ্য ভবভূতির প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল বাংলাতে আবার বৈদিক ধর্মের প্রচারের চেষ্টা। ) পুত্রেষ্টি যজ্ঞ হয়েছিল, বর্তমান মালদহের পাণ্ডুয়ায়। মালদহ টাউন বা ইংলিশবাজার থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরত্বে এই ধূমদিঘী বা হোমদিঘী গ্রামটি আজও বর্তমান। যজ্ঞ থেকে প্রচুর ধূঁয়ো বা ধূম হয়েছিল বলে এই নাম। আবার যজ্ঞর অপর নাম হোম।প্রচুর সমিধ( যজ্ঞের বেলকাঠ) পোড়ানর জন্য দিঘীর আকারে মাটী খোঁড়া হয়েছিল। তাই ধূমদিঘী বা হোমদিঘী, নাম।
এবার এই ৫ জন ব্রাহ্মণকে নিয়ে একটি কাহিনী বলি। কাহিনীটি, নবভারত পাবলিশার্স কর্ত্তৃক প্রকাশিত; “তারা রহস্য” বইয়ের ভূমিকাতে দেওয়া আছে।
সেই কালে ব্রাহ্মণদের কি কি করা নিষেধ ছিল; ১ বার দেখে নেওয়া যাক:-
• শীলিত(সেলাই করা) বস্ত্র পরিধান।
• চর্ম পাদুকা (চামড়ার জুতো) পরিধান।
• তাম্বুল চর্বণ (পান চিবোন বা খাওয়া)।
• অশ্ব বা অশ্বেতর পশুর উপর আরোহণ।
এবার, আদিশূর চরমুখে খবর পেলেন যে, ৫ জন ব্রাহ্মণ যাঁরা আসছেন, তাঁরা ফতুয়ার মত জামা পরে, ঘোড়ার ওপর চড়ে, পান চিবোতে চিবোতে আসছেন। আদিশূরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, এ কাদের আমি আনলাম? এরা তো ব্রাহ্মণ্যধর্মের কিছুই মানে না! তাই মন্ত্রীদের নির্দ্দেশ দিলেন যে, ৫ জন ব্রাহ্মণ এলে, তাঁদের অতিথি শালায় যেন রাখা হয়। রাজা সময়মত তাঁদের সাথে দেখা করবেন। ৫ জন ব্রাহ্মণ রাজবাড়ীর দুয়ারে এসে এই খবরটা পেলেন। রাজাকে আশীর্বাদ করার জন্য তাঁদের হাতের মুঠিতে জল ছিল। রাজা সেই সময় দেখা করবেন না দেখে তাঁরা আশীর্বাদ করার জন্য জল ফেলে দিলেন। জল গিয়ে পড়ল এক শুকনো গাছের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে সেই শুকনো গাছ জীবিত হয়ে উঠল। এই চমৎকার ঘটনার কথা শুনে আদিশূর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাথে দেখা করলেন।
এবার “তারা দেবী” মূলত বৌদ্ধ দেবী। সেই দেবীর সাধনা গ্রন্থে এই কাহিনীর অবতারণা কেন? এটা কি ব্রাহ্মণ্যধর্মের অলৌকিক ক্ষমতার প্রচার? সত্যাসত্য জানা যাবে না, তাই বিচারের ভার পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম।
এবার ৫ জন ব্রাহ্মণ এসে যজ্ঞ করলেন, আদিশূরের সন্তানও হলো, কিন্তু তাঁরা আর কনৌজের কোলাঞ্চতে আর ফিরতে পারবেন না। কারণ, সেই বাংলা যেখানে অবৈদিক কাজকর্ম হয়। তাঁরা ফিরে গেলে পতিত হয়ে যাবেন! কিন্তু সত্যিই কি তাই? না। ওপর ওপর এই কথাটা বলা হলো বটে, আসলে তাঁরা রয়ে গেলেন বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রচার করতে!
এই ৫ জন ব্রাহ্মণের কথা এখনও বিহারের ব্রাহ্মণদের মধ্যে স্মৃতির আকারে চালু আছে । এদের বলা হয়- “সরয়ুপারী” ব্রাহ্মণ ! “সরয়ুপারী” মানে সরযু নদী পার করে যেসব ব্রাহ্মণ এসেছিলেন এই বাংলায় ।
এবার এই ৫ জন ব্রাহ্মণদের নাম এবং গোত্র কি? ২ টো মত আছে। বারেন্দ্র মত এবং রাঢ়ীয় মত। (বারেন্দ্র এবং রাঢ়ী কি, এব্যাপারে পরে বলছি।)
বারেন্দ্র মত:-
. ক্ষিতিশ, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
. তিথিমেধা/ মেধাতিথি, গোত্র:-ভরদ্বাজ।
. বীতরাগ, গোত্র:- কাশ্যপ।
. সুধানিধি, গোত্র:-বাৎসব।
. সৌভরি, গোত্র:- সাবর্ণ।
রাঢ়ীয় মত:-
. ভট্টনারায়ণ, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
. শ্রীহর্ষ, গোত্র:-ভরদ্বাজ।
. দক্ষ, গোত্র:- কাশ্যপ।
. ছান্দোড়:- গোত্র:-বাৎসব।
. বেদগর্ভ, গোত্র:- সাবর্ণ।
(গোত্র এবং প্রবর সম্বন্ধে একটু বলে নেই।যে ঋষির যে বংশধর, সেটা গোত্র। যেমন শাণ্ডিল্য গোত্র মানে শাণ্ডিল্য ঋষির বংশধর। আর প্রবর মানে সেই গোত্রের যাঁরা খ্যাতিলাভ বা অন্য ভাষায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, তাঁরা প্রবর। গোত্র এবং প্রবর মালা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা দেখলেই পাওয়া যাবে।সাধারনতঃ বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার খ১১৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়।বর্ষবিশেষে ২-১ পাতা এদিক ওদিক হতে পারে। বর্তমানে ৫১ টি গোত্র এবং তার সংশ্লিষ্ট প্রবর গুলি দেওয়া আছে।)
অনেকে এদের পিতাপুত্র বলে জানান। কিন্তু এই দ্বন্দের মীমাংসা করেছেন “বাংলার সামাজিক ইতিহাস” প্রণেতা শ্রী দুর্গাচরণ সান্ন্যাল।তিনি লিখেছেন:-
“প্রত্যেক ব্রাহ্মণের ২টি করিয়া নাম থাকে। একটি প্রকাশ্য নাম, অপরটি পূজার সংকল্পের নাম।রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণগণ প্রকাশ্য নাম এবং বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণ পূজার সংকল্পের নাম গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া এইরূপ নামভেদ হইয়াছে।”
আসলে এইখান থেকেই কিন্তু ডাকনাম এবং ভালোনামের উৎপত্তি।( আমার সংযোজন)
এবার তাঁরা কবে এসেছিলেন?বিদ্যাসাগরের মতে ১০৭৭ খ্রীস্টাব্দ বা ৯৯৯ শক।পরবর্তী কালে “গৌড়ের ইতিহাস” প্রণেতা শ্রীরজনীকান্ত চক্রবর্তী ৭৩২ খ্রীস্টাব্দ বা ৬৫৪ শক বলেছেন। ঘটক অনুশাসন বিচার করলে ৭৩২ খ্রীস্টাব্দ বা ৬৫৪ শক বেশী গ্রহণযোগ্য।পরবর্তী ঐতিহাসিকরা এটা মেনে নিয়েছেন।
পঞ্চব্রাহ্মণের বসবাস করার জন্য রাজা আদিশূর তাঁদের জমিদারী দিলেন তদানীন্তন বাংলার বিভিন্ন জায়গায়। অবশ্যই জীবন যাপন এবং বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রচার করার জন্য।
তখনকার গৌড় রাজ্য ৫ ভাগে বিভক্ত ছিল।
• গৌড়
• দেবকোট
• মহাস্থান
• সন্তোষ
• রংপুর
রাজা আদিশূর পঞ্চব্রাহ্মণের বসবাস করার জন্য যে জায়গাগুলো দিলেন; নাম এবং ধাম অনুসারে নীচে লিপিবদ্ধ করলাম:-
. ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ,পিতা-অজ্ঞাত, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
জমিদারী- পঞ্চকোট, মানভূম (এখনকার পুরুলিয়া)।
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ; নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: কালীঘাটে।
. বীতরাগ/দক্ষ, পিতা- রত্নাকর, গোত্র:- কাশ্যপ।
জমিদারী- কামকোটি, বীরভূম। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: ভতিপুর, মালদহ।
. সুধানিধি/ছান্দোড়, পিতা-উষাপতি, গোত্র:-বাৎসব।
জমিদারী- হরিকোটি, মেদিনীপুর। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: ত্রিবেণী।
. তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ,পিতা- দিণ্ডি গোত্র:-ভরদ্বাজ।
জমিদারী- কঙ্কগ্রাম, বাঁকুড়া। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন:অগ্রদ্বীপ, বাঁকুড়া।
. সৌভরি/বেদগর্ভ,পিতা- শ্রীমান প্রিয়ঙ্কর, গোত্র:- সাবর্ণ।
জমিদারী- বটগ্রাম, বর্ধমান। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: গুপ্তিপাড়া, হুগলী।
স্বাভাবিক ভাবেই এঁদের সন্তান সন্ততির কথা আসে। এঁদের সংখ্যা এরকম:-
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ-১৬
বীতরাগ/দক্ষ-১৬
সুধানিধি/ছান্দোড়-৮
তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ-৪
সৌভরি/বেদগর্ভ-১২
এই প্রত্যেক সন্তানকে রাজা বসবাসের জন্য গ্রাম দান করেছিলেন। এই সন্তানরা পরস্পর অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে পরিচিত হন। পরে এটাই “পদবী” বলে পরিচিত হয়।এর পরে কর্ম ও জীবিকা অনুসারে “উপাধি”র প্রচলন হয়।
“উপাধি”র কিছু নমুনা:-
হিন্দু উপাধি- ভট্টাচার্য্য, চক্রবর্তী, রাজগুরু প্রভৃতি।
মোঘল আমলে- মজুমদার, সরকার, কারকুন প্রভৃতি।
ইংরেজ আমলেও কিছু পদবী খেতাব হিসেবে দেয়া হতো ।
মূল পদবী গুলো হল:-
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ-১৬(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
বন্দ্য/বাড়ুরী(বন্দোপাধ্যায়),কুসুম,দীর্ঘাঙ্গী,ঘোষলী, বটব্যাল, পারিহা, কুলকুলি, কুশারী,কুলভি,সেয়ক, গড়গড়ি, আকাশ, কেশরী, মাষচটক, বসুয়ারী,করাল।
বীতরাগ/দক্ষ-১৬ (অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-কাশ্যপ।
চট্ট(চট্টোপাধ্যায়), অম্বুলি, তৈলবাটী, পলসায়ী, পীতমুণ্ডি, পোড়ারী,হড়, গূঢ়, ভুরিষ্ঠাল, পালধি, পাকড়াসী, পূষলী, মূলগ্রামী, কোয়ারী, সিমলাই/সিমলায়ী, ভট্ট।
সুধানিধি/ছান্দোড়-৮ (অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-বাৎসব।
কাঞ্জিলাল, মহিন্তা, পতিতুণ্ড/পইতুণ্ডি, পিপলাই, ঘোষাল, বাপুলি, কাজ্ঞারী,শিমলাল/শিমলাই।
তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ-৪(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-ভরদ্বাজ।
মুখুটি(মুখোপাধ্যায়), ডিংসাই, সাহরী, রাই।
সৌভরি/বেদগর্ভ-১২(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:- সাবর্ণ।
গংগুরী(গঙ্গোপাধ্যায়), পুংসিক, নন্দিগ্রামী, ঘন্টেশ্বরী, দায়ী, নায়েরী, পারিহাল, বালিয়া, সিদ্ধল,কুন্দগ্রামী,সিয়ারী,সাটেশ্বরী।
এরপর যা হয়! ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই! অমোঘ নিয়মে জমি নিয়ে ঝগড়া হলো সবার মধ্যে।
পাঁচজন চলে গেলেন উত্তরবঙ্গের দিকে!মূলত, রাজসাহী, বগুড়া, রংপুর, পাবনার দিকে। এই স্থান গুলো বরেন্দ্রভূম নামে পরিচিত। সুতরাং এরা বারেন্দ্র নামে পরিচিতি লাভ করলেন। বাকী যাঁরা পদ্মার এই পারে থেকে গেলেন;যা রাঢ়ভূম নামে পরিচিত, তাঁরা হলেন রাঢ়ী। এই পাঁচজন বা পাঁচগ্রামীন কারা, তা নিয়ে ইতিহাস নীরব! তবে, এঁদের গ্রাম/পদবী হল:-
সান্ন্যাল(বাৎসব গোত্র), মৈত্র(কাশ্যপ গোত্র), লাহিড়ী(শাণ্ডিল্য গোত্র), বাগচী(শাণ্ডিল্য গোত্র), ভাদুড়ী(কাশ্যপ গোত্র।
রাজা বল্লাল সেন তাঁর সময়ে এক আদমশুমারী(Census) করেছিলেন। ৩৫০ ঘর – রাঢ়ী, ৪৫০ ঘর- বারেন্দ্র ছিলেন। এর ওপর, কিছু সপ্তশতী, কিছু পাশ্চাত্য, কিছু দাক্ষিণাত্য ব্রাহ্মণ ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০০ হাজারের বেশী ব্রাহ্মণ ছিল না।
এবার রাজা বল্লাল সেনের আমলে রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের মধ্যে এক ঝগড়া শুরু হয়, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?
বল্লাল সেন এবার ডেকে পাঠালেন তাঁদের। একদল তাড়াতাড়ী আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন। আর এক দল অর্ধেক আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন।সবশেষে, পুরো আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন আর এক দল।
যাঁরা শেষে এলেন তাঁরা হলেন- কুলিন।কারণ তাঁরা পুরো পূজাপাঠ সেরে এসেছিলেন। যাঁরা মধ্যে এলেন তাঁরা হলেন ভঙ্গ কুলিন। আর যাঁরা আগে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন শুধুই ব্রাহ্মণ।
বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের সাথে রাঢ়ীদের একটা ঝগড়া লেগেই থাকত, সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার জন্য। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা, রাঢ়ীদের বলতেন যে এরা মুখে মিষ্টি, কাজের বেলায় অস্টরম্ভা। আর রাঢ়ীরা বলতেন বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা মাথায় এত প্যাঁচ রাখেন যে, মাথায় পেরেক ঢোকালে নাকি সেটা স্ক্রু হয়ে বেরিয়ে আসবে। শেষে তাদের মধ্যে বৈবাহিক সর্ম্পক একেবারে হত না। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের পেশা যজন, যাজন ও অধ্যাপনা হলেও তাঁরা জলদস্যুতাও করতেন। তাই বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা বেশীর ভাগই কালী ভক্ত ছিলেন।
দীর্ঘ ভূমিকার পর আসি, আসল কথায়।
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণের ছেলে হলেন – দীননাথ । ইনি, বর্দ্ধমান জেলার ‘কুশ’ নামের একটা গ্রাম (বর্ধমান জেলা) পেয়েছিলেন । সেই থেকে, ওনার নাম হয় দীননাথ কুশারী । কারণটা আগেই লিখেছি । দীননাথ কুশারীর অষ্টম অথবা দশম পুরুষ হলেন জগন্নাথ কুশারী। এরা হলেন রাঢ়ী ।
এবার, এদেরকে পরে পিরালী ব্রাহ্মণ বা পীরালি ব্রাহ্মণ বলা হত । বাংলার ব্রাহ্মণ সমাজের একটি "থাক" বা উপসম্প্রদায়।
এই "পিরালী" (বা "পীরালি") শব্দটি অপবাদ ও নিন্দাসূচক ব্রাহ্মণ উপশাখা । কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদীরা এই নিন্দাটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
নগেন্দ্রনাথ বসু "বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস" গ্রন্থের ব্রাহ্মণ কাণ্ডের তৃতীয় ভাগে, ব্যোমকেশ মুস্তফী "পিরালী ব্রাহ্মণ বিবরণ" প্রথম খণ্ডে, কুলাচার্য নীলমণি ভট্টের কারিকা অবলম্বনে পিরালী থাকের উৎপত্তির যে বিবরণটি দিয়েছেন তা হল: “যশোর জেলার চেঙ্গুটিয়া পরগণার গুড়-বংশীয় জমিদার দক্ষিণারঞ্জন রায়চৌধুরীর চার পুত্র কামদেব, জয়দেব, রতিদেব ও শুকদেবের মধ্যে প্রথম দুই জন স্থানীয় শাসক মামুদ তাহির বা পীর আলির প্রভাবে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।”
এরও একটা গল্প আছে । নবাবের রোজা চলছে । দরবারে বসে কামদেব আর জয়দেব । নবাব তখন একটা লেবু শুঁকছেন । কামদেব আর জয়দেব বললেন :- জাঁহাপনা- আমাদের শাস্ত্রে আছে “ ঘ্রাণেন অর্দ্ধভোজনম্” । অর্থাৎ গন্ধ পেলেই অর্দ্ধেক খাওয়া হয় । তাই আপনার রোজা ভেঙ্গে গেল । এরপর নবাব ডেকে পাঠালেন ঈদের দিনে কামদেব আর জয়দেবকে। নবাবের ডাক পেয়ে, দরবারে গেলেন । একটু দূরে গরুর মাংস রান্না হচ্ছিল । নবাব জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কোনো গন্ধ পাচ্ছেন? কামদেব আর জয়দেব স্বীকার করাতে, নবাব বললেন :- আপনাদের শাস্ত্রেই আছে “ ঘ্রাণেন অর্দ্ধভোজনম্” । অর্থাৎ গন্ধ পেলেই অর্দ্ধেক খাওয়া হয় । তাই আপনারা আজ গরুর মাংস খেয়ে ফেলেছেন ।জাত গেলে আর কি করবেন? এবার ইসলাম ধর্ম নিন ।
তবে, এই গল্পটা চালু থাকলেও এর কোনো প্রমাণ নেই । যাই হোক, কামদেব আর জয়দেব ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন, এটা সত্যি ।
এর ফলে তাঁদের পুরো পরিবার, এমনকি যাঁরা ধর্মান্তরিত হননি তাঁরাও সমাজচ্যুত হন। ব্যোমকেশ মুস্তফীর অনুমান, এই ঘটনা ঘটে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো সময়ে। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ পিঠাভোগের জমিদার জগন্নাথ কুশারী শুকদেবের মেয়েকে বিয়ে করে পিরালী থাকভুক্ত হয়েছিলেন।
এই জগন্নাথ কুশারীর পাঁচ পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র পুরষোত্তম এর বংশ থেকেই ঠাকুর বংশের ধারা চলে এসেছে। অপর তিন পুত্রের ধারা প্রায় লুপ্ত। পুরুষোত্তমের প্রোপৌত্র রামানন্দের দুই পুত্র পঞ্চানন ও শুকদেব। এদের মাধ্যমেই কোলকাতায় ঠাকুর গোষ্ঠীর সর্ব প্রথম বসবাস শুরু হয়।
বলা হয়, জ্ঞাতিদের ঝগড়ায় পঞ্চানন ও শুকদেব দেশ ছেড়ে দেন। উপার্জনের জন্য তাঁরা সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে কোলকাতায় আসেন। এই অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসার লাভ করেছিল।তখন শেঠ-বসাকরা বিখ্যাত বণিক । সেই সময় শেঠ বসাকদের সুতা এবং সুতির কাপড়ের হাট বহুলোককে এই অঞ্চলের দিকে আকৃষ্ট করেছিল।পর্তুগীজ, ডাচ, ইংরেজ বণিকদের আসা যাওয়া ছিল। ঠিক এই একই আকর্ষণেই পঞ্চানন ও শুকদেব কোলকাতা গ্রামের দক্ষিণে গোবিন্দপুরে আদিগঙ্গার তীরে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলে,মালো,কৈবর্ত জাতির বাস । ইংরেজদের জাহাজ গোবিন্দপুরের গঙ্গায় এসে নোঙ্গর করত। পঞ্চানন কুশারী ইংরেজদের মালপত্র জাহাজে উঠানো নামানোর কাজ করতেন এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় ও খাদ্য সংগ্রহের কাজ করতেন। তাঁর এই সব ভারী ভারী কাজের করার জন্য তিনি সেখানকার স্থানীয় হিন্দু নীচু শ্রেণীর লোকদের সাহায্য দিতেন। সমাজের এই সকল নীচু শ্রেণীর লোক ভদ্রলোক ব্রাহ্মণকে তো আর নাম ধরে ডাকতে পারে না তাই তারা পঞ্চাননকে ঠাকুর মশাই বলে ডাকতেন।
‘ঠাকুর’ নামটি তখন সকলের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। সেই থেকে জাহাজের নাবিকরাও তাঁকে পঞ্চনন ঠাকুর বলে ডাকা শুরু করে। ইংরেজ নাবিকরা তাদের নথিপত্রে কুশারী নামটি পাল্টে ঠাকুর লেখা শুরু করে। ‘কুশারী’ পদবী হয়ে যায় ‘ঠাকুর’। তারপর থেকে ‘ঠাকুর’ পদবীটি বহুল প্রচলিত । এই পঞ্চানন ঠাকুর থেকেই কোলকাতার পাথুরিয়া ঘাটা, জোড়া সাঁকো, কয়লা ঘাটার ঠাকুর গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় এবং শুকদেব থেকে চোরাবাগানের ঠাকুর গোষ্ঠীর বিকাশ ঘটে।
এই হলো, মোটামুটি একটা ইতিহাস । বিজ্ঞ পাঠক যদি আরও অনুসন্ধান করে আমাদের জানান তবে কৃতজ্ঞ থাকবো ।
সমাপ্ত
সূত্র:-
১। শ্রীহরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্রী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়,উদ্ধোধন;শতাব্দী জয়ন্তী নির্বাচিত সঙ্কলন,
২। বিদ্যাসাগর রচনাবলী
৩। নগেন্দ্রনাথ বসুর "বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস"
৪। ব্যোমকেশ মুস্তফীর "পিরালী ব্রাহ্মণ বিবরণ"
৫। রজনীকান্ত চক্রবর্তীর “ গৌড়ের ইতিহাস”
৬। দুর্গাচরণ সান্যালের “বাংলার সামাজিক ইতিহাস”
৭। শারদীয় বর্তমানে(১৪১৩) প্রকাশিত সাহিত্যিক শ্রীসঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ।
৮। ক্ষিতীশ চরিতাবলী।
2 comments:
রাজা বল্লাল সেন যেভাবে অত্যাচার করেছিলেন কশ্যপ গোত্রদের
সেটা নিয়ে কিছু লিখেন
Post a Comment