Thursday, February 19, 2015

কবিতা

কবিতা লিখতে গেলে অনুভব দরকার । কয়েকটা লাইনে, যিনি বা যাঁরা অনুভবকে সর্বজন গ্রাহ্য করে তুলতে পারেনতিনিই কবি বলে আমার ধারণা ।
আমি নিজে কবিতা লিখি না, কারণ সেই এলেম আমার নেই । আসলে লেখালেখিটাই আমার সেরকম ভাবে আসে না ।
অবসরের পর সময় কাটাতে, ফেসবুকেই আমার যা আঁকিবুকি ।
যাক্, যে কথা বলছিলাম !
বাঙালি যেখানেই যাক না কেন, এই বিশ্বায়নের যুগে- মাতৃভাষাকে ভোলে না । হতে পারে, সেই ভাষা অন্য ভাষা থেকে প্রভাবিত, তবে চেষ্টা করে বাংলা এবং দেশকে মনে রাখতে ।
খেয়াল করে দেখবেন মন্দির, মজসিদ ,গির্জা, বৌদ্ধ মন্দির যাই থাক না কেন, বা যে ধর্মেই বিশ্বাস করুক না কেন, অজান্তেই একটা হাত উঠে যায় শ্রদ্ধা জানাতে ।
বাংলা বা বাঙালির কোনো দেশ নেই । তবু, যদি আমি কোলকাতায় বসে এই মাটিকে প্রণাম করি, তবে অখণ্ড বাংলার সব মাটিকেই প্রণাম করা হয় ।
মালদার বা বরিশালের লোক কোলকাতা বা ঢাকাতে নাই এসে থাকতে পারে, তবু সেখানকার মাটিকে স্পর্শ করলে- সেটা যেখানেই হোক না কেন, বাংলারই তো মাটি !
লণ্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা, টাওয়ার হ্যামলেটস বা অ্যামেরিকার নিউ জার্সি, ছোট্ট দেশ সিঙাপুর, নতুন দিল্লির বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকা চিত্তরঞ্জন, ওডিশার বিভিন্ন শহর- সব জায়গার বাঙালিদের টান দেশের মাটি ।
অনবরত প্রণাম চলছে তো চলছেই- গল্প, আড্ডা, নাটক, সাহিত্য সব মিলিয়ে ।
চার প্রজন্ম ধরে দিল্লি প্রবাসীর ছেলে - কোলকাতায় ছুটে আসে ডাক্তারি পড়তে , এক অমোঘ টানে ।
পুজো-ঈদ- বুদ্ধ পূর্ণিমা- বড়দিন- সবেতেই বাঙালি থাকে জবরদস্ত ভাবে ।
মার প্রতি অভিমান হলে- তুমি বেরিয়ে আসে সম্বোধনে আর আদর করে ডাকে- তুই বলে ।
==========
নজরুল মারা যাবার পর একটি যুবক যখন বলে- নজরুল এতদিন বেঁচে ছিলেন ?
ইস্- জানতাম না ।
তার বেদনা, কবিকে ভাবায় ।
কবির ভাবনা, অনুভবে পরিণত হয় ।
বেরিয়ে আসে
মা / পার্থ বসু
++++++++
তোমার কাছে যাওয়ার বড় সাধ।
তোমায় কাছে পাওয়ার বড় সাধ।
মা বলে তোকে ডাকতে চাই মা
আমি তো তোর সতীন ছেলে নই।
আমিও তোর বুকের টুকরোই
চেয়েছি তোর স্নেহের পরসাদ।
তোমার কাছে যাওয়ার বড় সাধ।
তোমায় কাছে পাওয়ার বড় সাধ।
এপারে অবশিষ্ট জননীর
জঠরগত ক্যাঙ্গারু সন্তান ।
উধাও মাঠ স্মৃতির শালি ধান
বর্গী নেই কে তবু লুঠে খায়
সোনার ধান স্বপ্ন খুঁটে খায়
ভয়ে সে মাথা তুলতে পারে কই?
ওপারে সবই সুখের ছবি নয়
ওপারে আছে দুঃখ বারোমাস
ওপারে তবু বাঙালী করে বাস
এপারে যারা কি তার পরিচয় ?
মাড়িয়ে এই সকল পরমাদ
তোমার কাছে যাওয়ার বড় সাধ
তোমায় কাছে পাওয়ার বড় সাধ।।
========
নজরুল / পার্থ বসু
++++++
ভাবতে খুব ইচ্ছে হয়
একলা নজরুল যদি
বাকরহিত নাই হতেন
থাকত সম্বিৎ অটুট
বাংলা ভাগ আটকাত।
আটকাতই বাংলা ভাগ
তাঁর কলম সাত্যকীর
গাণ্ডীবের মতন ক্রোধ
করত যেই উদগীরণ
ভয় পেতই দাঙ্গা বাজ
লুঠতরাজ ধান্দা যার।
তাঁর কলম তাৎক্ষণিক ?
তাঁর কলম কালজয়ী ?
ব্রাত্য কি? কালনিরিখ
বিশ্লেষণ নিস্পৃহ
তাঁর চারণ উচ্চারণ
মৃত্যুতক তিন দশক
মূক ছিল এই ক্ষতির
টানছে জের টুকরো দেশ।
ভাবতে খুব ইচ্ছে হয়
একলা নজরুল যদি
বাকরহিত নাই হতেন
থাকত সম্বিৎ অটুট
ভারত ভাগ আটকাত।

Parthasarathi Basu সেলাম !

Sunday, February 15, 2015

আবার হরি



আজ ভারত – পাকিস্তান ম্যাচ । হরির দোকান জুড়ে বিশেষজ্ঞদের ভীড় । একটা কোণে চুপ করে বসে আমি ।

হরি তার “বিষ চা” আমাকে এক গেলাস, ধরিয়ে বললো :-

রামকিসনোদা, বিসকুট দিমু?

আমি তো চায়ের সাথে বিস্কিট খাই না ! জানিস তো তুই !

 আরে, কও কি ! আইজ ইসপেসাল দিন, তোমারে বিসকুট দিত্যাছি, খাও !

অগত্যা, একটা বিস্কিট নিলাম । হরি বলল, এটার নাম – গুলে খা

মানে?

চায়ের লগে, বিসকুট ডুবাইয়া খাইবা !



খাওয়া শেষ হলো । হরি, আর একটা বিস্কিট ধরালো- আমার হাতে ।

এটার নাম বল্ হরি !

এইডা হইলো গিয়া – চেপে খা ।

এটা আবার কি নাম ?

তোমার তো দাঁতগুলান অহনে  অষ্টগ্রহ হইছে, হের লাইগ্যা গালের পাশে চাইপ্যা খাইবা




এটাও শেষ হলো !

এবারে, আমার হাতে হরির শেষ বিস্কিট । নাম :- ধরে খা

এক হাতে বিস্কিট ধরে, চায়ের গেলাসে চুমুক দিতে হবে ।

=========
এবারে আসল জ্ঞানটা পেলাম ।

এগুলো নাকি ভারতের টিমকে- ব্যাটিং উপদেশ !

---------

হরি হে- চান করবো না গা ধোবো?

Thursday, February 12, 2015

আম আদমীর জীবন



++++++++++++

নবা, ইয়ার, বাবলু, সেলিম, লক্ষণ, আবদুল এবং আরও অনেক – এদের চেনার কথা নয় কারোরই ।
ভোর ভোর, এদেরই প্যাডেল ভ্যানগাড়ী ভর্তি সব্জী বা পেছনে মাছের চুপড়ী নিয়ে সাইকেল গুলো দাঁড়িয়ে থাকে সারসার হরির দোকানের সামনে ।

কেউ এসেছে, লাউহাটি,  খড়িবাড়ী (উত্তর চব্বিশ পরগণা), কেউ বা ভোজেরহাট ( দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ) থেকে ।
 রাত দেড়টা থেকেই শুরু হয়ে যায় এদের তৎপরতা । সাইকেল বা ভ্যানগাড়ী তে ভর্তি করে সব্জী তোলা হয় ।
আর যারা মাছওয়ালা, তারা চলে যায় খড়িবাড়ী । মাছ নিয়ে আসে সেখান থেকে ।
মাছের খুব আকাল এখন । আগে যেখানে ভালো মাছের যোগান ছিল, সেখানে প্রায় নেইতে এসে ঠেকেছে ।
সব্জীও তাই । তবু পেট চালাতে হবে ।
একপেট পান্তা খেয়ে রওনা হয় সাইকেল বা ভ্যান নিয়ে, সার বেঁধে সবাই রাস্তায় নামে । শীত, বর্ষা, গরম সব ঋতুতেই একই ছবি ।
রাস্তায় খোলা থাকে চায়ের দোকানগুলো, অত রাতেও । সাঁ সাঁ করে ছুটে যায় প্রাইভেট বা অন্য গাড়ী । তোয়াক্কা নেই  এদের প্রতি ।
অসাবধান হলেই, এক ছোবলেই ছবি । প্রাতঃকৃত্য সেরে নেয় মাঠেই, আসার সময় ।

পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার মত- সাইকেল বা ভ্যান চালিয়ে এসে পৌঁছয়- দমদমের আনাচে কানাচে ।
কেউ কেউ আবার ম্যাজিক গাড়ীতেও আসে,  অতখানি রাস্তা শরীর আর দেয় না, সাইকেল বা ভ্যান চালাতে ।
এরা  ভ্যান বা সাইকেল রাখে স্থানীয় কোনো জায়গায় ।

পৌঁছেই বেরিয়ে পড়ে  সেই সব নিয়ে । যারা ডিম আনে, তাদের বাধ্য হয়েই ৯৩ নং বাসে আসতে হয়, সাবধানে । না হলে, ডিম গুলো ভেঙে যেতে পারে ।
টাটকা, হাঁস বা দেশী মুরগীর ডিমের চাহিদা প্রচুর । তবে, এদেরও যোগান কম আজকাল ।
 জিরিয়ে নেয় হরির দোকানে, লেড়ে বিস্কুট আর চা খেয়ে ।


পাইকারি হিসেবে বেচা হয় সব্জী । পাঁচ কিলোতে এক পাল্লা । স্থানীয় ভ্যানওয়ালারা কিনে নেয় সেসব ।

দরাদরির হাঁকডাক, বাস লরির আওয়াজকে ছাপিয়ে যায় ।
যোগান থাকলে, লাভ ২০০ থেকে ৩০০ টাকাও হয় । না হলে শ দেড়েক ।
ধুঁকতে ধুঁকতে বাড়ি ফেরে সব বেলা একটা দেড়টায় ।
এবারে গরম ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ আর কুচো মাচের জিরে বাটা ঝোল খেয়ে, মাটির মেঝেতেই লুটিয়ে পড়ে  ঘুমে,মড়ার মত ।
সন্ধে হব হব সময় উঠে শুরু হয়, পরের দিনের তৎপরতা ।
সময় নেই অন্য কিছু নিয়ে ভাববার । সংসার, মা, চাচী, বৌ সামলায় ।
=================
চলুন বাজার করে আসি ।




Wednesday, February 11, 2015

স্মৃতির রিসাইকেল বিন -৩


+++++
আমার কর্মজীবনে অনেক উপরওয়ালা পেয়েছি, যাদের কথা আমি জীবনে ভুলবো না।
এর মধ্যে অনেকদিন আগে, প্রয়াত জ্যোৎস্নাময় দাশগুপ্তের কথা লিখেছিলাম । ইনিই আমাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিলেন ।
আজ লিখি শ্রী হেমেন রায়ের কথা ।
চালু ভাষায়, এনাদের বলা হতো- বস্
শুনলেই আলতো করে রেগে যেতেন কানুদা মানে হেমেন রায় ।
বলতেন আমি তুমি কি গ্যাংয়ের লোক নাকি ? বলেই হেসে ফেলতেন ।
মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভদের কাজের জায়গাকে বলা হয়- টেরিটরি ।
নিয়ম ছিল-অন্তত সাতদিন আগে জানাতে হবে টেরিটরিতে বস আসার আগে ।
কানুদা সাতদিন আগেই টেলিগ্রাম করে দিতেন :- প্লিজ অ্যালাও মি টু হ্যাভ দি প্লেজার অফ্ ওয়ার্কিং উইথ ইউ ফ্রম ............ বলে দিন গুলো জানিয়ে দিতেন ।
এত সৎ ভদ্রলোক আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি । শুনেছিলাম তিনি রিপ্রেজেনটেটিভ থাকা কালিন ৫০ হাজার টাকার জন্য সেলস্ টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না অথচ যে অর্ডার দিতে পারে, সেই ষ্টকিষ্ট বড় টেঁটিয়া টাইপের । ফলে, কানুদা চুপ ।
মাত্র একদিন বাকি, এর মধ্যে সেই ষ্টকিষ্ট কারও কাছে শুনে অর্ডারটা পাঠিয়ে বলেছিল- কানুদার টার্গেট হবে না, সেটা আবার হয় নাকি ?
এ হেন কানুদার মাথা জোড়া টাক এবং পেছনে কিছু অলকদাম, চাষের জমির কিছু আগাছার মত ইতি উতি ছড়িয়ে থাকতো ।
সন্ধে সাতটা বেজে গেলেই তিনি উসখুস করতেন একটা কারণে ।
আমার সাথে কাজ করতে করতে বলতেন :- ভশ্চাজবাবু, আপনার সঙ্গে কিন্তু সিরিয়াস কথা আছে রাতে । তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুন ।
প্রথমে ভয় পেতাম ! কি আবার বলবেন ।
হোটেলে ফিরে মুচকি হাসি হেসে সুটকেস খুলে বের করতেন- হুইস্কির বোতল ।
আরামে চুমুক দিয়ে শুরু হতো খোসগল্প । আপিসের কথা বিন্দু মাত্র থাকতো না তাতে ।
অসম্ভব রসিক এই কানুদার লেখার হাতও ছিল চমৎকার ।
যদি তিনি ফেসবুক করতেন, তালে বোঝা যেত কি অসাধারণ লিখতেন তিনি ।
একদিন চলেছি, তাঁকে গৌড় এক্সপ্রেসে তুলে দিতে । বারণ করতেন, কিন্তু তাঁর সাথে শেষ মুহূর্তের আড্ডাটাও ছাড়তে মন করতো না ।
রিক্সো চলেছে । হঠাৎ তিনি হাত দুটো বেহালা বাজানর মত করে গেয়ে উঠলেন :-
বাজে করুণ সুরে
কি হলো, কানুদা ?
আরে ভশ্চাজ মশাই, আমার জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিসটাই ফেলে এসেছি হোটেলের ঘরে !
সেকি ? চলুন ফিরে, নিয়ে আসা যাক্
না থাক, কিনে নেবো কোলকাতায় ফিরে
খুব দামী ?
নিশ্চয়ই, অন্তত আমার কাছে !
তাহলে, দেখুন আবার আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে ।
ও তো মাত্র দুটাকা
তাহলে খুব দামী বললেন যে?

আরে মশাই, চিরুনীর মাহাত্ম আপনি কি বুঝবেন ?

Saturday, February 7, 2015

স্মৃতির রিসাইকেল বিন



এমনিতে আমি ভোজন রসিক, যদিও আমার বাবার ধারে কাছে আজও পৌঁছতে পারি নি । তাঁর পাণ্ডিত্যের  হাজার আলোকবর্ষ থেকে দূরে থাকি ।

যাই হোক, এবারে আসল কথাটায় আসি ।

এক বাড়ীতে সত্যনারায়ণ পুজোর নেমন্তন্ন পেয়েছি । ওরা ভালো খাওয়ায় , প্রসাদে , আর ওটাই আমার আসল আকর্ষণ ।
যথারীতি পুজোর আগেই গিয়ে পৌঁছনো গেল ।
বামুন ঠাকুর বয়সে আমার থেকে বড় । বেশ অভিজাত চেহারা । দেখলেই সম্ভ্রম জাগে।
ফর্সা চেহারায় উপবীত জ্বল জ্বল করছে তাঁর খালি গায়ে । শুনলাম তিনি ওপার বাংলার লোক ।
পুজো- আচ্চা করেই  তাঁর মূল উপার্জন ।
 পুজো আরম্ভ হলো ।

হঠাৎ কানে গেল – তিনি বলছেন – বিষ্ণুলোম্- তারপর যা যা বলতে হয় !

কয়েকবার হবার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম বিনীত ভাবে :-

ঠাকুর মশাই  আপনি  বিষ্ণুরোম্ না বলে প্রতি মন্ত্রের আগে বিষ্ণুলোম্  বলছেন । আপনার উচ্চারণ শুনে তো মনে হয় না, আপনি এত ভুল বলবেন ?

ফেটে পড়লেন তিনি ।

হালায়, এগো বাড়ীত্ যারা কড়াইয়ের হোগা মাজে, তাগো বেতন ৫০ ট্যাহা ডেইলি, আর আমার পূজার দক্ষিণা – ২১ ট্যাহা ! তইলে, এইহানে “লোম” না কইয়া “রোম” কমু ক্যা ?   হালায় লোমের পূজা !





টেলিফোন




আমি জীবনে প্রথম টেলিফোন ধরি, ক্লাস এইটে । তার আগে যন্ত্রটাকে দেখেছি, তবে  তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না ।

আশ্চর্য, সব টেলিফোনের রঙ্ ছিল কালো । কি ভারি ছিল রিসিভার !

 বাপ রে বাপ !  মনে হতো এক সেরের বাটখারা ।

তখন যাদের বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাদের রাজা মহারাজা বলে মনে হতো আমার।

লেস করা কাপড় দিয়ে সযত্নে ঢাকা থাকতো সেই টেলিফোন ।

তবে- অস্বীকার করার উপায় নেই , যাঁদের বাড়ী টেলিফোন থাকতো, তাঁরা কিন্তু একটুও বিরক্ত বোধ করতেন না, যার বা যাদের টেলিফোন আসতো- তাদের ডেকে দিতে ।

আশেপাশে প্রায় সবার  কাছেই আসতো টেলিফোন, তাই জরুরী কাজ না থাকলে ফোন করা বারণ ছিল ফোনানো পাবলিকদের ।

কোনো অবিবাহিতা মেয়ের ফোন আসতই না বললে চলে ।  এলে আবার মুশকিল । টেলিফোন ওয়ালারা আবার নিজেরাই অভিভাবক ( এটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করার অভ্যাস ছিল আমাদের কালে ) হয়ে  কড়কে দিতেন যে ফোন করেছে, তাকে ।

 একদিন হঠাৎ - কল এলো আমার । দিদিমা আর দাদু তো ঠাকুরের নাম জপতে লেগেছেন । কোন ছেলের বিপদ হলো আবার , কে জানে ! না হলে, দাদুকে না ডেকে আমাকে কেন ?

আমিও তুন্থলু মন্থলু করে দৌড় দিলাম সেই বাড়ীতে । গিয়ে দেখি- রিসিভার শোয়ানো  টেবিলের সুদৃশ্য কভারের ওপর ।

কাঁপা কাঁপা হাতে ওটা তুললাম । মুখ দিয়ে হাপড়ের মত নিঃশ্বাস পড়ছে ভয়ে ।

ওপারে বুঝে গেল- আমি ফোন ধরেছি । আমাকেই ডাকা তো !

কে রে , রামু নাকি ?

হহহহহহহহহহ হ্যাঁ

শোন্ কাউকে বলবি না বল ?
কি ?
আঃ ! আস্তে !
আস্তে  ববববববব লবো কেন ? উঃ !

কি হলো, কার কি হলো ?
 এটা শুনে স্বয়ং গৃহকর্তা ফোন হাতে নিলেন । যে ফোন করেছে, সে তো আর জানে না!

খালি প্রতিক্রিয়া শুনলাম এপারের ।

ক্ষী ! রামুকে ডেকে এনে আমার মেয়েকে  খবর দেওয়া হচ্ছে মোড়ে বিকেল পাঁচটার সময় দাঁড়াতে ? ছুঁছো, বেল্লিক্ ।


ধড়াম্ করে ফোন রেখে আমাকে বলা হল তুই যা রামু !

রেফ্রিজিরেটার



ওডিশা ও আন্ধ্রার সীমান্তবর্তী শহর – পারলাখেমুণ্ডি । এখন অবশ্য সরগরম শহর । তবে, ষাটের দশকে সেটা একটা ছোট শহরই ছিল ।

বাবা সেই শহরের কলেজে, দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন ।

রাজা শ্রী ক্রুষ্ণচন্দ্র গজপতি ( কৃষ্ণচন্দ্র)  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই কলেজ তবে,  পরে  বাবা থাকা কালিনই ওডিশা রাজ্য সরকার সেই কলেজকে সরকারী করে নেয় । এখন ভীষণ নাম সেই কলেজের ।
 শহরে, ইলেকট্রিক থাকলেও, বাড়ী বাড়ীতে বিদ্যুৎয়ের যোগান ছিল না ।
 সারা শহরে, তখন মোটে চারটে   রেফ্রিজিরেটার ছিল ।
রাজার, সরকারী হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল এবং এক মিশনারীর বাড়ীতে ।

না ! ওগুলো বিদ্যুৎ চালিত ছিল না ।  ব্র্যাণ্ড ছিল- সুর ফ্রিজ, সবকটাই । বাঙালি কোম্পানির তৈরি এই ঠাণ্ডা যন্ত্রের চাহিদা এবং নাম তুঙ্গে । কালের নিয়মে, এই সুরফ্রিজ আর নেই বর্তমানে ।
কেরোসিনে চলতো এই সব ফ্রিজ । যন্ত্রের একদম পেছন দিকে একটা ল্যাম্প জ্বলতো কেরোসিনে ।
সামনে একটা টানা ষ্টিলের লাঠিতে আয়না ফিট করা থাকতো । সেটা টেনে দেখে ল্যাম্প ঠিক মত জ্বলছে কিনা দেখা হতো । ল্যাম্পের ফিতেও বাড়ানো কমানো যেত- ঠাণ্ডাকে কন্ট্রোল করার জন্য ।

গরমের দিনে- মিশনারির বাড়ীতে গিয়ে বরফ ঠাণ্ডা জল খেয়ে আসতাম । সাথে কিছু বরফ ।
কলকাতায় এসে বিদ্যুৎচালিত রেফ্রিজিরেটর প্রথম দেখি । ধারণা ছিল- এসব বড়লোকদের বাড়ীতেই থাকে ।
ধীরে এই যন্ত্র “ফ্রিজে” পরিণত হলো ।
চাকরি পাবার পর, নানা সহকর্মীদের বাড়ীতেও দেখতাম এই ফ্রিজ ।

আমার যে কোনদিন হবে, সেটা স্বপ্নেও ভাবি নি । আমার ছোট ভাই রামানুজ, জোর করে মালদায় কেনালো ।
অবশ্য – চেনা শোনা থাকার সুবাদে এক লপ্তে টাকাটা দিতে হয় নি । চারটে কিস্তিতে টাকা নিতে রাজী হয়েছিল  দোকানদার ।

ফ্রিজ তো এলো বাড়িতে । ছেলেদের উত্তেজনা চরমে ।  ঠাণ্ডা জলের আর অভাব হবে না । রসনা মিক্সও চলে এলো , সাথে কিলো খানেক চিনি ।

অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছি – আমার ফ্রিজ । পাড়ার অনেকেই দেখতে এলো   তাকে ।
একজন ফুট কেটে দিল কম্প্রেসর বার্ষ্ট করতে পারে ।  ২৪ ঘন্টা অন করে রাখলে যদি না ফাটে তবে আর হবে না কিছু ।
ব্যাস্ ! হয়ে গেল আমার । কেন যে মরতে কিনতে গেলাম ।
ভাই, ছেলেরা এই সম্ভাবনার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেও আমার ভয় আর যায় না ।

শেষে সারা রাত্তির জেগে কাটালাম ।
না কিছু হয় নি, তবে নতুন কেনা চারটে ব্যাটারি যন্ত্রের ভেতর রেখেছিলাম- ভালো থাকবে বলে ।





Wednesday, February 4, 2015

টেনিদার পুজো

আজ প্রয়াত তারক নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৯০ তম জন্মদিন ।  ১৯১৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী দিনাজপুর জেলার বালিয়াডিঙ্গি গ্রামে জন্ম। পৈত্রিক নিবাস বরিশালের বাসুদেব পাড়া গ্রামে।

বাবা  প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশ কর্তা ।

তাই স্বর্ণেন্দু সেন অত ভালো বাঙাল ভাষা বলতে পারে ।

 ওহো !  তারক বাবু কিন্তু নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নামে লিখতেন ।
উনি নেই, আর আমার কৈশোর কালও হারিয়ে গেছে ।

অক্ষম ভাবে, সম্পূর্ণ কল্পনায় লিখলাম- চারমূর্তি বড় হলে কি হতে পারতো । বেশ কিছুদিন আগে লেখা । মালদার একটি পত্রিকায় ( আমাদের মালদা) বেরিয়েছিল লেখাটা ।
আজকের দিনে – এটাই আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি ।


+++++++++++++++++
ডি লা গ্র্যান্ডি, মেফিষ্টোফেলিস, ইয়াক্ ইয়াক‌্ ! সকাল ১১ টায়,দমদমে প্লেন থেকে নেমে,ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের বাইরে এসে, ডঃ কুশল মিত্র, চিৎকার করে উঠল ।
মাষ্টারমশাই ভজহরি মুখুজ্জে, ডাঃ বাবুকে রিসিভ করতে গেছিল আ্যরপোর্টে । গেটের বাইরে , দাঁড়ানো অন্য লোকজন একটু অবাক ,এই দুজনের এইরকম চিৎকার দেখে
ভজহরি বলল:- দাঁড়া, কুশল‍! পরের ইণ্ডিগো ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু থেকে আসছে- ইঞ্জিনিয়ার স্বর্ণেন্দু সেন ।
হাতে, গাড়ীর চাবি দোলাতে দোলাতে সফ্টওয়ার কোম্পানীর মালিক কমলেশ ব্যানার্জ্জিও হাজির ।
 কমলেশের গাড়ী করে, সকলে মিলে যাবে, পটলডাঙ্গায় ! কমলেশের দুই বোন, আধুলি আর পুঁটি ; এখন বিবাহিত । একবার,  ওদের বাড়ী দুটোতেও  হাজির হবার প্ল্যান আছে ওদের । আধুলির বরের নাম – ভোলা । পুঁটির বর- বঙ্কা !
দমদমের ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল থেকে, কমলেশের স্করপিও গাড়ী করে ওরা তিনজন চলে এলো ডোমেষ্টিক টার্মিনালের বাইরে । ডিসপ্লে বোর্ডে জ্বল জ্বল করছে, ইণ্ডিগোর প্লেন নামার তথ্য ।
নীল আকাশের পেঁজা মেঘের টুকরোর মধ্যে দিয়ে ভেসে আসছে হালকা ধূপ ধুনোর গন্ধ ।  বৃষ্টি ভোর বেলা পর্যন্ত তাড়ু ব্যাটিং করে, আউট হয়ে, প্যাভিলিয়নে ফেরত । এখন জেন- এক্স, রোদ্দুর আকাশ পাত্র থেকে উছলে উছলে পড়ছে । আজ চতুর্থী !  মাত্র দুদিন বাকী দুগ্গোপুজোর !!!!
স্বর্ণেন্দু বেরিয়ে আসার পর ভজহরি চিৎকার করল-ডি লা গ্র্যান্ডি, মেফিষ্টোফেলিস !!
বাকী তিনজন সমস্বরে বলল :- ইয়াক্ ইয়াক্ ।
টেনিদা মোবাইল কানে গুঁজে, ঘনাদাকে ফোনালো ।  ঘনাদার বাড়ী, আ্যরপোর্টের কাছেই ।  বনমালী নস্কর লেনের টঙ্গের ঘরে আর থাকেন না ।
-ঘনাদা?
- হ্যাঁ বল্
- আমি, ভজহরি বলছি ।
- চোপ্ ! ব্যাটা মাষ্টার হয়ে কেতা ধরেছে  ! আমাদের কাছে, তুই টেনি ! এবার বল, কি বলবি ?
- হ্যাঁ, হ্যাঁ ! আমি টেনি ! প্যালা, ক্যাবলা, হাবুল সব চলে এসেছে ।
- বেশ ! এবার তালে একদিন আড্ডানো যাক । তোরা, লর্ডসের মোড়ে আসবি । তারপর, চিনি কম রেষ্টুরেন্টের পাশ দিয়ে যে গলি, সেই গলির মধ্যেই আছে লর্ডস রেস্তোঁরা । ওখানকার বিরিয়ানীটা জম্পেশ ।
- কবে বলো ?
- আজকেই কর । প্যালা, ক্যাবলা, হাবুল তো সাউথ সিটিতে ফ্ল্যাট কিনেছে । ওদেরও সুবিধে হবে । তুই তো, এখন বাঘাযতীনে থাকিস । আমার অসুবিধে হবে না । প্যালাকে বলবি,  তোদের সঙ্গে আমাকে ওর গাড়ীতে করে তুলে নিয়ে যেতে
ফোনানোর পরে, চারমূর্তি পটলডাঙ্গার দিকেই রওনা দিল । চাটুজ্জেদের রোয়াক আর নেই । বাড়ীটা ভেঙ্গে প্রোমোটিং হয়েছে । তাও ঘুরে আসা, সেই ছোটবেলার দিনগুলোকে চেখে দেখার জন্য । রাস্তায়, ঘনাদাকে তুলে নেবে ।
ক্যাবলা এখন নামকরা ডাক্তার লণ্ডনে । টেনিদাকে জিজ্ঞেস করল:- তালে টেনিদা, তুমি কি কি সাবজেক্ট পড়াও ইস্কুলে ?
ইংরেজী বাদে সব ।
সেকি ! ওটাই তো তুমি একটু বুঝতে !
ওই জন্যই তো পড়াই না- টেনিদার ঝটিতি জবাব ।
হাবুল বলল :- খাইসে ! টেনিদা ! অঙ্ক শেখাইত্যাসেন?
চোপ্ ! এক চড়ে , তোর নাক নাসিকে পাঠাবো ! আমি শেখাতে পারি ভালো ! যা, প্যালা, গাড়ীটা থামিয়ে কিছু খাবার কেন্ তো ! সক্কালে মাত্র ৩০ টা লুচি খেয়েছি । খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে ।
ক্যাবলা বলল:- বিকেলে হাতীবাগান গিয়ে এগপ্লানটাইটিস্ খাবো !
হেইডা আবার কি? হুনলে পরে ভাউয়া ব্যাঙ মনে লয় !- হাবুলের জিজ্ঞাসা ।
আরে!!!! ডাক্তারি পরিভাষায় শব্দের শেষে “আইটিস” থাকলে, সেটাকে ফোলা বলে । এগ্ প্ল্যান্ট মানে বেগুন । তোদের আবার কালচারাল শক্ লাগতে পারে । তোরা তো ব্রিঞ্জাল বলিস । সে যাক গে । বেগুনি গুলো ফুলো ফুলো হয় তো ! তাই-এগপ্লানটাইটিস্ ! ভাউয়া ব্যাঙ আবার কি ? ক্যাবলার উত্তর  এবং জিজ্ঞাসা!
ভাউয়া ব্যাং কয় ভাউয়া ব্যাঙরে। - হাবুলের উত্তর ।
প্রাক পূজোর ভীড়ে, চারিদিকে গমগম করছে । গাড়ীর জ্যাম । সব মিলিয়ে ভজকট অবস্থা ! প্যালা, গাড়ীটাকে পার্ক করতে পারছে না ।
বাগুইআটির “জাষ্ট বেকড্” এর দোকানটাতেও অকথ্য ভীড় । ওখানে ঢুকে যে একটু কোল্ড কফি খাবে, তারও উপায় নেই । প্যালা, গাড়ীটাকে কোনোরকমেও এগিয়ে নিয়ে, চালপট্টির মধ্যে দিয়ে ঘনাদার বাড়ীর দিকে যেতে শুরু করল ।
ঘনাদার বাড়ীর কাছেই একটা দোকান ঘেঁসে গাড়ীটাকে পার্ক করল প্যালাএকটা দোকান থেকে “ মোবাইল মুড়ি” কিনল  । আইসক্রিম কোণের মত দেখতে প্যাকেটটা ।
এগুলো ছোটো । বড়গুলো সিঙারার মত দেখতে । মুড়ি, আগে থেকেই মেখে রাখা আছে এই প্যাকেট গুলোতে ।
প্যালা আনতেই, সবাই অবাক । মুড়িও আজকাল রেডিমেড !!!!!! টেনিদা বলল:- হাবুল! তুই আর বলতে পারবি না – মেকুরে হুড়ুম খাইয়া হৈক্কর করসে ।
হাবুল কি একটু উদাস !
যে রেটে চলছে তাতে অচিরেই করিম্‌সের বিরিয়ানি, সাবিরের রেজালা, ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সি উঠে আসবে । প্যাকেটের শেষ নুনটুকু আর চাটার সুযোগ নেই ।
ঘনাদা, মাঞ্জা মেরে এসে উঠে পড়লেন গাড়ীতে । চারিদিকে, ঢাকের শব্দ- তবে মাইকে আস্তে করে বাজছে । শাড়ী পরা মেয়েরা সংখ্যায় কম । সবাই জিনস আর সার্ট ! কে যে মেয়ে, আর কে যে ছেলে সেটা বোঝাই যাচ্ছে না ।
ক্যাবলা, “ডানহিল” সিগারেটের তিনটে ফ্লিপ প্যাকেট ঘনাদার হাতে তুলে দিল । গাড়ীর এ.সি.টা বন্ধ করে জানলার কাঁচগুলো নামিয়ে দিল প্যালা ।
ক্যাবলা বলল :- ঘনাদা, আমাদের গল্পগুলো আজকালকার নতুন প্রজন্মের কিশোর- কিশোরীরা আর পড়ে না বোধহয়, তাই না?
ঘনাদা সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে অর্ন্তযামীর মত বলল:-  সবেতেই ঠেসেঠুসে সমসাময়িক সমাজ, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক পটভূমি মায় ভূমার প্রভাব ভরে দিতে হবে এইটা এই সময়ের একটা আজব দাবি। এর চেয়ে চ্যবনপ্রাশের বিজ্ঞাপন পড়লেই হয়, আমাদের গপ্প পড়তে যাওয়া কেন বাপু !!!! এই মূল্যায়ণটা দামড়ারা করছে । পটলডাঙার চারমূর্তির সঙ্গে এই সময়ের  আত্মিক যোগ নেই !  আজকের কোচিং দৌড়নো, হায়ার সেকন্ডারি দেয়া, কম্পু-স্যাভি, মোবাইল-কানে ব্যাচের সঙ্গে আর কোন যোগ নেই।
নির্মল হাস্যরস টেনি দিতখুব সিম্পল কমিক,চারমূর্তির সাথে অনেক বেশি আইডেন্টিফাই করতে পারত সেই সময়ের ছেলে- মেয়েরা
টেনিদা - ঘোয়াং ঘাং !  বললে, আজ আর কেউ হাসে না !

প্যালা গাড়ী চালাতে চালাতে বলল :- পেশোয়ার কি আমীর? ঈশ্বরের দান সেই আমগাছ যা পরের কালবৈশাখীতেই পড়ে যায়। ঐ আমের জোরেই তো টেনিদার কুট্টিমামার (?) হবু বসের বাত সেরে গেছলো আর মামা চাকরী পেয়েছিলেন। এটার কথা মনে নেই !
ঘনাদা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল:- সূর্য্য কাঁদলে সোনাতে জম্পেশ করে কত কি বললাম । এখনকার সব লোকেরা হাসে ।
একটা বিশাল ভীড় । গ্রীণ পুলিশে ছয়লাপ । হাবুল মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল:- কি হইসে ভাই !
পোসেনজিৎদা আসছে পূজোর উদ্বোধন করতে । এখন যেতে পারবেন না । দেরী হবে ।
ক্যাবলা বলল:- পুঁটি মেল পাঠিয়েছিল । পটলডাঙ্গা থাণ্ডার ক্লাবে মুখ্যমন্ত্রী আসছেন পূজোর উদ্বোধন করতে । আজ বোধহয় আর পটলডাঙ্গায় ঢুকতে পারবো না !
 বাঙুর দিয়ে, সোজা, উল্টোডাঙ্গা হয়ে হাতিবাগান ক্রসিং পেরিয়ে  পটলডাঙ্গার দিকে চলল প্যালা ! পথে তেলেঙ্গাবাগান পূজো, হাতিবাগানের পূজো । ভীড়ে ভীড়াক্কার ।
ঘনাদা বলল :- চল প্যারাডাইসের কচি ডাবের সরবত খাই ।
প্যালা গাড়ী ঘোরাল কলেজ স্ট্রীটের দিকে । যাবে কি? এত ভীড় ঠেলে মানুষ হাঁটতেই পারছে না, তো গাড়ী !!!!!
টেনিদা শুকনো গলা দিয়ে বলার চেষ্টা করল -ডি লা গ্র্যান্ডি ! শব্দ বেরুলো না !
মনে মনেও কেউ বলল না – ইয়াক্, ইয়াক্ !
শালপাতার বদলে, কাগজের থালা ভিড়ে চিপ্টে গেছে । বড় হয়েও সুখ নেই !
কোলকাতায় না এলেই বোধহয় ভালো হতো











Tuesday, February 3, 2015

হাতে গরম





বাড়িতে বসে থাকা আর শুয়ে থাকা, তাও চিৎ হয়ে  বা ডান দিকে কাৎ হতে পারা যায় কিছুটা ডাক্তারের নির্দেশে ।
 বাঁ দিকে কাৎ হতে এখনও কষ্ট হয় একটু । গরম পড়লে নাকি সেটাও থাকবে না- ডাক্তারের ভবিষ্যবাণী ।

মাঝে মাঝে বেরুবেন, তবে এক নাগাড়ে  গাড়ীতে ঘন্টা দেড় দুইয়ের বেশী বসবেন না।
 বেশ – এত কড়াকড়ি আর ভালো লাগছে না । 

ছেলে বলল – আজ  আমার বিকেলে কোনো কাজ নেই, চলো বেড়িয়ে পড়ি ।

তা, যাবোটা কোথায় ?

কেন ? বেলঘরিয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে !

সেটা কোথায় ?

জানো না ? চলো দেখাই ।

সারথী সুরজিৎ আমাকে শিখিয়েছে, এখন কি ভাবে গাড়ীতে উঠতে হয় ।
ওঠবার সময় পেছনটা সিটে রেখে তারপর দুটো পা ভেতরে রাখতে হবে । নামার সময় ঠিক উল্টোটা ।
 গাড়ী চলল ।
এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর পেরিয়ে, বিরাটির আগের বাস ষ্টপেজের  ঠিক আগে বাঁ দিকে ঘুরলেই- বিশাল চওড়া টু লেনের রাস্তা,  ।

মনে পড়ল এতক্ষণে । কতবার, ডানকুনি  আর দক্ষিণেশ্বর গেছি, এই রাস্তা দিয়ে ।
নাঃ ! অ্যামনেশিয়া হচ্ছে, বুঝতে পারছি ।
বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে , যাওয়ার সময় রাস্তার ডান দিকে । একটা ফাইভ ষ্টার বড় হোটেলও আছে, ঝকঝকে নতুন ।
একটা ব্রিজ পেরুতেই  বাঁ দিকে ( ডান দিকেও আছে) অজস্র দোকান । সব, চা আর  জলখাবারের । প্রচুর লোক যাবার  সময়, দু দণ্ড দাঁড়িয়ে  ভাঁড়ের গরম চায়ে চুমুকের সঙ্গে, টুকটাক মুখও চালাচ্ছে ।

বেশ কয়েকটা দোকান পেরিয়ে জয়ন্তর ঠেক  । বাঁশের খুঁটি আর ওপরে টিন ।
 এত বাঁশ কোথায় পায়রে বাবা !মুখ দিয়ে, সট্ করে বেরিয়ে গেল !
সুরজিৎ কানের কাছে মুখ এনে বলল – চেপে যান জেঠু ।  “এশব পোসনো করতে নেই”
কেন রে ? মার ধোর খাবো নাকি ?

হতেও পারে, সব হাওড়া থেকে আসে কিনা !


 সে যাক্  জয়ন্ত নাকি খুব ভালো ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানায়, শুনলাম । আমার অভিজ্ঞতা বলে- কোনো দোকানই সোনালি রঙের অমলেট বানাতে পারে না ঠিক ঠাক ভাবে । হয়, দরকাঁচা নয় পোড়া । তা, জয়ন্ত বানাবে ফ্রেঞ্চ টোষ্ট ? ছ্যা ছ্যা ছ্যাঃ ।
কাগজের প্লেটে অবশেষে সুগন্ধ ছড়িয়ে বস্তুটি এলো ।
 বেশ সুন্দর করে পিস করা ।

আহা ! কি রঙ ! একেবারে  হলমার্কা সলিড সোনা ! হাল্কা কাঁচা লঙ্কার সুবাসের সাথে ভাজা পেঁয়াজের সুগন্ধ ! দিল একেবারে তর্ !
 আমি সুনামির মত ঝাঁপিয়ে পড়লাম প্লেটটার ওপর ।

চাকুম চুকুম করে খেতে শুরু করতেই, ওনার ভুরু কোঁচকালো । গোৎ গোৎ করে জল খাই বলে একটা অভিযোগ আছে ওনার । আমি- ভদ্রলোক সমাজের উপযুক্ত নই , এটা ওনার বদ্ধ ধারণা । যাই বলুন আমাকে – খ্যাসখ্যাস করে চুলকিয়ে আরাম পাই, চোখ বুঁজে আসে মৌতাতে । চা খাই শব্দ করে ‍!‍

খাবো তো আমি, নাকি ? তো আরামই যদি না পেলাম- তালে কিসের চুলকুনি আর খাওয়া ?

আশে পাশে খলিসাকোটা । সব বরিশালের আদি বাসিন্দা এককালের ।
জয়ন্তর হাত খালি হতেই ডাকলাম ওকে ।

কি দাদু, কি বলবেন ?

বলছিলাম- তোর আদি বসত কোথায় ?

এখানেই জন্ম আমার !

 ------------বুঝলাম প্রশ্নটা ওয়াইড হয়ে গেল ।

মানে, বলছিলাম – তোর বাপ ঠাকুর্দা কোথাকার লোক ?

ও ! ওনাদের তো বাংলাদেশ !

বাংলাদেশের কোথায় ?

বরিশাল বলে শুনেছি
মনে মনে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ালাম ।

তো- শিখলি কোথায় এই রকম ভাবে মামলেট বা ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানানো ?

 সে অনেক কথা দাদু !

------- এবারেও বুঝলাম প্রশ্নটা বাউন্সার না হয়  !

অ ! তা তুমিও কি মানস সরোবরে গিয়ে অন্নপূর্ণার হাতা পেয়েছিলে নাকি ?
 মানে ?
না না – ওটা এমনি বললাম ।

ও ! আমাকে পথ চলতি একজন শিখেয়েছিলেন । ফ্রাইং প্যানে একটু বেশী তেল দিলেই করা যায় এটা ।
 এরপর ভাঁড়ে চা । বড় ভাঁড় – ১০ টাকা ।
 এটাতেও চায়ের ফ্লেভার আছে ।

------------
হাতে গরম ফ্রেঞ্চ টোষ্ট আর চা খেয়ে বাড়ী ফেরা । উদাস ভাবে দেখলাম- মুনলাইট বার আর রেস্তোরাঁর আলোর বিজ্ঞাপন ।

এরাও কি বরিশালের ? উত্তরটা, শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরির মত অধরাই থেকে গেল ।