Tuesday, February 3, 2015

হাতে গরম





বাড়িতে বসে থাকা আর শুয়ে থাকা, তাও চিৎ হয়ে  বা ডান দিকে কাৎ হতে পারা যায় কিছুটা ডাক্তারের নির্দেশে ।
 বাঁ দিকে কাৎ হতে এখনও কষ্ট হয় একটু । গরম পড়লে নাকি সেটাও থাকবে না- ডাক্তারের ভবিষ্যবাণী ।

মাঝে মাঝে বেরুবেন, তবে এক নাগাড়ে  গাড়ীতে ঘন্টা দেড় দুইয়ের বেশী বসবেন না।
 বেশ – এত কড়াকড়ি আর ভালো লাগছে না । 

ছেলে বলল – আজ  আমার বিকেলে কোনো কাজ নেই, চলো বেড়িয়ে পড়ি ।

তা, যাবোটা কোথায় ?

কেন ? বেলঘরিয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে !

সেটা কোথায় ?

জানো না ? চলো দেখাই ।

সারথী সুরজিৎ আমাকে শিখিয়েছে, এখন কি ভাবে গাড়ীতে উঠতে হয় ।
ওঠবার সময় পেছনটা সিটে রেখে তারপর দুটো পা ভেতরে রাখতে হবে । নামার সময় ঠিক উল্টোটা ।
 গাড়ী চলল ।
এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর পেরিয়ে, বিরাটির আগের বাস ষ্টপেজের  ঠিক আগে বাঁ দিকে ঘুরলেই- বিশাল চওড়া টু লেনের রাস্তা,  ।

মনে পড়ল এতক্ষণে । কতবার, ডানকুনি  আর দক্ষিণেশ্বর গেছি, এই রাস্তা দিয়ে ।
নাঃ ! অ্যামনেশিয়া হচ্ছে, বুঝতে পারছি ।
বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে , যাওয়ার সময় রাস্তার ডান দিকে । একটা ফাইভ ষ্টার বড় হোটেলও আছে, ঝকঝকে নতুন ।
একটা ব্রিজ পেরুতেই  বাঁ দিকে ( ডান দিকেও আছে) অজস্র দোকান । সব, চা আর  জলখাবারের । প্রচুর লোক যাবার  সময়, দু দণ্ড দাঁড়িয়ে  ভাঁড়ের গরম চায়ে চুমুকের সঙ্গে, টুকটাক মুখও চালাচ্ছে ।

বেশ কয়েকটা দোকান পেরিয়ে জয়ন্তর ঠেক  । বাঁশের খুঁটি আর ওপরে টিন ।
 এত বাঁশ কোথায় পায়রে বাবা !মুখ দিয়ে, সট্ করে বেরিয়ে গেল !
সুরজিৎ কানের কাছে মুখ এনে বলল – চেপে যান জেঠু ।  “এশব পোসনো করতে নেই”
কেন রে ? মার ধোর খাবো নাকি ?

হতেও পারে, সব হাওড়া থেকে আসে কিনা !


 সে যাক্  জয়ন্ত নাকি খুব ভালো ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানায়, শুনলাম । আমার অভিজ্ঞতা বলে- কোনো দোকানই সোনালি রঙের অমলেট বানাতে পারে না ঠিক ঠাক ভাবে । হয়, দরকাঁচা নয় পোড়া । তা, জয়ন্ত বানাবে ফ্রেঞ্চ টোষ্ট ? ছ্যা ছ্যা ছ্যাঃ ।
কাগজের প্লেটে অবশেষে সুগন্ধ ছড়িয়ে বস্তুটি এলো ।
 বেশ সুন্দর করে পিস করা ।

আহা ! কি রঙ ! একেবারে  হলমার্কা সলিড সোনা ! হাল্কা কাঁচা লঙ্কার সুবাসের সাথে ভাজা পেঁয়াজের সুগন্ধ ! দিল একেবারে তর্ !
 আমি সুনামির মত ঝাঁপিয়ে পড়লাম প্লেটটার ওপর ।

চাকুম চুকুম করে খেতে শুরু করতেই, ওনার ভুরু কোঁচকালো । গোৎ গোৎ করে জল খাই বলে একটা অভিযোগ আছে ওনার । আমি- ভদ্রলোক সমাজের উপযুক্ত নই , এটা ওনার বদ্ধ ধারণা । যাই বলুন আমাকে – খ্যাসখ্যাস করে চুলকিয়ে আরাম পাই, চোখ বুঁজে আসে মৌতাতে । চা খাই শব্দ করে ‍!‍

খাবো তো আমি, নাকি ? তো আরামই যদি না পেলাম- তালে কিসের চুলকুনি আর খাওয়া ?

আশে পাশে খলিসাকোটা । সব বরিশালের আদি বাসিন্দা এককালের ।
জয়ন্তর হাত খালি হতেই ডাকলাম ওকে ।

কি দাদু, কি বলবেন ?

বলছিলাম- তোর আদি বসত কোথায় ?

এখানেই জন্ম আমার !

 ------------বুঝলাম প্রশ্নটা ওয়াইড হয়ে গেল ।

মানে, বলছিলাম – তোর বাপ ঠাকুর্দা কোথাকার লোক ?

ও ! ওনাদের তো বাংলাদেশ !

বাংলাদেশের কোথায় ?

বরিশাল বলে শুনেছি
মনে মনে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ালাম ।

তো- শিখলি কোথায় এই রকম ভাবে মামলেট বা ফ্রেঞ্চ টোষ্ট বানানো ?

 সে অনেক কথা দাদু !

------- এবারেও বুঝলাম প্রশ্নটা বাউন্সার না হয়  !

অ ! তা তুমিও কি মানস সরোবরে গিয়ে অন্নপূর্ণার হাতা পেয়েছিলে নাকি ?
 মানে ?
না না – ওটা এমনি বললাম ।

ও ! আমাকে পথ চলতি একজন শিখেয়েছিলেন । ফ্রাইং প্যানে একটু বেশী তেল দিলেই করা যায় এটা ।
 এরপর ভাঁড়ে চা । বড় ভাঁড় – ১০ টাকা ।
 এটাতেও চায়ের ফ্লেভার আছে ।

------------
হাতে গরম ফ্রেঞ্চ টোষ্ট আর চা খেয়ে বাড়ী ফেরা । উদাস ভাবে দেখলাম- মুনলাইট বার আর রেস্তোরাঁর আলোর বিজ্ঞাপন ।

এরাও কি বরিশালের ? উত্তরটা, শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরির মত অধরাই থেকে গেল ।




  








No comments: