Monday, September 15, 2014

সফি ( মুকুল)

যন্ত্রণার কোনো ভাষা হয় না ।
=================== 

বলা যাবে না, গেষ্টাপোর মত পাহারাদারেরা সফির  যতীন দাস পার্কে কি ভাবে মিটিং  বানচাল করার চেষ্টা করেছিল  ।

বলা যাবে না, বইমেলায় হীরেন সান্যালকে কারা হেনস্থা করেছিল ।

বলা যাবে না, আশু বাবুর বাজারে হাউসিংর কাছে আমার বক্তব্য রাখার সময়, পুলিস কি ভাবে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল- যখন কিছু উঠতি কিছু ছেলে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় খিস্তি করেছিল ।

বলতে পারবো না- দমদমের টাউন হলে, মঞ্চে যখন সফির সঙ্গে বসে আমি- সেই ছবি তুলে আমার কোম্পানীতে পাঠানো হয়েছিল, চাকরী খাবার সুপারিশ সহ ।
ই- টিভির ক্যামেরা ম্যানকে হুমকি দিয়েছিল কারা ? বলা যাবে না ।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ স্বরাষ্ট্র সচিব (পরে মুখ্য সচিব) কটকে র‌্যাভেনশ কলেজের আমার চার বছরের জুনিয়র খালি পিডিএস করার অপরাধে আমার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করল না । অথচ, ফোনে আমায় সময় দিয়েছিল- একটা  আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানের জন্য ।

দিনের পর দিন- আমার শোওয়ার ঘরের জানলার পাশে আমাকে দিনের পর দিন খিস্তি করার কথা বলা যাবে না ।

আমার অপরাধ ছিল- কোম্পানীকে বলে, বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনকে কিছু ফ্রি ওষুধের নমুনা দিয়েছিলাম, আমার বড় কর্তার সাইন করা অনুমতি ক্রমে ।

জানতোই না---- ম্যানেজাররা ফ্রি স্যাম্পেল পায় না- তাও বিক্রি করার অভিযোগ তুলেছিল আমার বিরুদ্ধে ।

বলা যাবে না- রোগশয্যায় আরেক বর্ষীয়ান নেতা প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত- সফিকে বলেছিলেন আমার সামনেই- বিদ্রোহ করলি, কিন্তু দুঃখ হচ্ছে আমি এই রোগ শয্যায় থেকে তোকে সাহায্য করতে পারছি না ।

সফির মালদায় মিটিং করার সময়- প্রয়াত একজন ভূতপূর্ব মন্ত্রী কি ভাবে আটকে রেখেছিল স্থানীয় পার্টির সদস্যদের-  বলা যাবে না ।

অনেক কিছুই বলা যাবে না !

শুধু আজ যখন দেখছি- কমরেড সফি অমর রহে , দুঃখের মধ্যেও হাসি পাচ্ছে ।
নাঃ ! এই কথা টাও বলবো না !

কলমের তলোয়ার নিয়ে ফতোহা জারি হবে । পারলে, আমার মাথাটাও আইএস আইএসের জঙ্গীদের মত কেটে নেবে  - এটাও বলা যাবে না ।

এখন, এই বয়সে তো আর কিছু পারবো না ।

তবে যতদিন বেঁচে থাকবো- ততদিন মনে রাখবো- গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতায় কেন ২০ % লোক কি বলেছিল জানতে পারবো না - তোমার এই কথাটা কেন মেনে নিতে পারে নি বাঘা বাঘালোকজন ।

বলা যাবে না, কারণ প্রমাণ নেই ।


সফি----- ঘুমোও বন্ধু ।

Friday, September 12, 2014

কালাপাহাড়




বাংলা ও বিহারের শাসনকর্তা তখন সুলেইমান কারনানী (কেউ আবার বলেন কারারানী)   । সুলেমান কারনানী নামটা সিন্ধী হলেও, ইনি ছিলেন আফগান।
কাররাণীরা মাত্র বারো বছর (১৫৬৪ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত) বাংলা শাসন করে । এই সময়টুকু কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তাজ খান কাররাণী তার জীবনের শুরুতে আরেক আফগান শের শাহ্‌ সূরীর অধীনস্থ কর্মচারী ছিলেন।

 তার প্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সূরীদেরই শাসক মুহাম্মদ আদিল শাহ্‌ সূরীকে আক্রমণ করে উত্তর প্রদেশের কিয়দংশ দখল করেন। পরবর্তীতে মুহাম্মদ আদিল শাহ্‌ আর সম্রাট হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্যের সম্মিলিত আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে পূর্ব দিকে সরে যান। পরে বাংলার দুর্বল শাসক তৃতীয় গিয়াস উদ্‌ দীন শাহকে কৌশলে হত্যা করে বাংলার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কাররাণীদের গোটা সময়টাই বিশ্বাসঘাতকতা, গুপ্তহত্যা, ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক অ সম্প্রীতিতে পূর্ণ।
তাজ খান কাররাণীর আগমন বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের কুর্‌রম থেকে।

বাংলা আক্রমণের সময় তার সাথে তার তিন ভাই ইমাদ, সুলাইমান ও ইলিয়াস সাথে ছিলেন। সাম্রাজ্য স্থাপনের পর তিনি সেটি ভোগ করার জন্য দুই বছরেরও কম সময় পান। ১৫৬৬ খ্রীস্টাব্দে তাজ খান কররাণী মারা যাবার পর তার ছোট ভাই সুলাইমান খান কররাণী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সুলাইমান কাররানীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় (প্রায় সাত বছর) শাসন করেছিল।

রাজধানী গৌড় থেকে পদ্মার তীরের  ট্যাঁড়া বা তান্দায় স্থানান্তর করণ ও শরীয়া আইন প্রচলন অন্যতম। ট্যাঁড়া বা তান্দা প্রায় দশ বছর বাংলার রাজধানী থাকলেও এর নাম আজ প্রায় কেউ জানে না। শহরটি পরিত্যক্ত হবার পর এক সময় পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। (ট্যাঁড়ার খাজা নামে একটা তিলের খাজা এখনও পাওয়া যায় মালদাতে)  কাররাণীরা বাংলার ক্ষমতায় বসার পর দলছুট আফগানেরা তাদের কাছে জড়ো হতে থাকে। গৌড়ের আবহাওয়া আফগানদের ও তাদের ঘোড়াদের জন্য সহনীয় ছিল না। তাছাড়া কৌশলগত কারণে বাংলার রাজধানী মুঘলদের কাছ থেকে একটু নিরাপদ দূরত্বে রাখা দরকার ছিল। গৌড় থেকে রাজধানী স্থানান্তরের প্রধান কারণ ছিল এইগুলো।
সুলাইমানের সেনাপতি কালা পাহাড় আমৃত্যু মুঘলদের বিরুদ্ধে ছিলেন। কেউ কেউ লোদী সম্রাট সুলতান বাহ্‌লুল লোদীর ভাগ্নে মিয়াঁ মুহাম্মাদ ফারমুলীকে তার হিন্দু মন্দির ধ্বংসের প্রবণতার জন্য কালা পাহাড় নামে আখ্যায়িত করেন।

কিন্তু এখানে আলোচ্য কালা পাহাড় মিয়াঁ মুহাম্মাদ ফারমুলীর প্রায় একশত বছর পরের মানুষ।
রাজীব লোচন রায় উত্তরবঙ্গের মালদার হরিশচন্দ্রপুরের ( কেউ বলেন পাণ্ডুয়ার রাজবংশে) এক বাঙালী বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তিনি বিদ্বান, বুদ্ধিমান ও অস্ত্র চালনায় পারদর্শী ছিলেন । তার কর্মজীবন শুরু কিভাবে হয়েছিল সেকথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না। পরে গৌড়ের সেনানীতে যোগ দিয়ে, সৈন্য পরিচালনা ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা দেখান ।

ব্যক্তিগত যোগ্যতায় তিনি সুলাইমানের শাসনামলে গৌড়ের ফৌজদারের পদ লাভ করেন। এভাবে তিনি সুলাইমানের কাছাকাছি আসার সুযোগ পান এবং তার কন্যার প্রেমে পড়েন। রাজীব লোচন রায় সুলাইমানের কন্যার পাণিপ্রার্থী হলে সুলাইমান তাকে ধর্মান্তরিত হবার শর্ত দেন।

কারো কারো মতে রাজীব লোচন রায়ের যুদ্ধ দক্ষতা দেখে সুলাইমান নিজেই তার নিকট নিজের কন্যার বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। উচ্চাভিলাষী রাজীব লোচন রায় সুলাইমানের প্রস্তাব গ্রহন করেন এবং ধর্মান্তরিত হয়ে সুলাইমানের কন্যাকে বিবাহ করেন।

এর ফলে রাজীব লোচন রায় নিজ সমাজে জাতিচ্যূত হন। শাহজাদীও বলেন, একজন নারীর জন্য ধর্ম পরিবর্তন করার কোনো কারণ ছিল না ।

 কিছুদিন পর তিনি বাংলার ধর্মগুরুদের কাছে প্রায়শ্চিত্তের বিধান চাইলে তারা কোন বিধান দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে রাজীব পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরে গিয়ে প্রায়শ্চিত্তের সংকল্প করেন। কিন্তু পুরীর ধর্মগুরুরা তাকে ও তার স্ত্রীকে মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং তার কোন প্রায়শ্চিত্ত হবে না বলে জানিয়ে দেন। এতে রাজীব লোচন রায় মর্মাহত হন এবং প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সুলাইমান এই রকম

 সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।  ওডিশার রাজা মুকুন্দ দেবের সাথে যুদ্ধে রাজীব লোচন রায়কে একজন সেনাপতি বানানো হয়। এতে তিনি উড়িষ্যার ধর্মগুরু ও ধর্মস্থানের উপর প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পান।
১৫৬৭ খ্রীষ্টাব্দে মুকুন্দ দেবের বিরুদ্ধে সুলাইমান কররাণীর পুত্র বায়েজিদ খান কাররাণী ও সেনাপতি সিকান্দার উজবেকের যুদ্ধে মুকুন্দ দেবের পতন হলে কালা পাহাড় উড়িষ্যা ও তার নিকবর্তী অঞ্চলের হিন্দু মন্দিরগুলোতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান।

১৫৬৮ খ্রীষ্টাব্দে কালা পাহাড় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান, প্রতিমা ভাঙচুর করেন এবং মন্দিরের সম্পদ লুণ্ঠন করেন। জানা যায়, কালা পাহাড় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার কাঠের প্রতিমা উপড়ে নিয়ে হুগলীর তীরে আগুনে পুড়িয়ে দেন।


 কালা পাহাড় ওডিশার বালেশ্বরের     গোপীনাথ মন্দির, ভুবনেশ্বরের কাছে কোনার্ক মন্দির, মেদিনীপুর, ময়ুরভঞ্জ, কটক ও পুরীর আরো কিছু মন্দিরে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালান। কালা পাহাড়ের মন্দির আক্রমণের প্রক্রিয়াটি একটু অভিনব ছিল। তিনি গরুর চামড়ার বিশাল আকৃতির ঢোল আর পিতলের বড় বড় ঘন্টা মন্দিরের ভেতরে ক্রমাগত বাজিয়ে তীব্র অনুরণন তৈরি করার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই অনুরণনের তীব্রতায় প্রতিমাদের হাতগুলো খসে পড়ত। এতে উপস্থিত লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়লে প্রতিমা উপড়ে ফেলা হত। কালা পাহাড় মন্দির সমূলে ধ্বংস করার চেয়ে প্রতিমা ধ্বংস ও লুটপাটে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
মন্দির আক্রমণের শেষ পর্যায়ে কালা পাহাড় সম্বলপুরের মা সম্বলেশ্বরীর মন্দিরে আক্রমণ করতে সম্বলপুরের উপকণ্ঠে মহানদীর তীরে দুর্গাপালীতে উপস্থিত হন। সমলেশ্বরী মন্দিরের পূজারীরা মন্দির রক্ষার্থে এক দুঃসাহসী পদক্ষেপ নেন। একজন নারীকে গোয়ালিনীর ছদ্মবেশে কালা পাহাড়ের ছাউনিতে পাঠানো হয়। তিনি সৈন্যদের মধ্যে বিষ মিশ্রিত দুধ, দই, ছানা, বিক্রি করে।

পরদিন সকালে খাদ্যের বিষক্রিয়ায় কালা পাহাড়ের বেশির ভাগ সৈন্য আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তিনি অবশিষ্ট সৈন্যদের নিয়ে পালিয়ে যান।


কালা পাহাড়ের মন্দির ধ্বংসের ঘটনা ঊড়িষ্যা ও মেদেনীপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৫৬৮ খ্রীষ্টাব্দে কাররাণীরা কোচ বিহার আক্রমণ করলে সেখানে তিনি কামাখ্যা মন্দিরসহ আরো কিছু মন্দির ধ্বংস করেন। কালা পাহাড় কররাণীদের শেষ শাসক দাউদ খান কররাণীর আমল পর্যন্ত কররাণীদের সেনাপতি ছিলেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলোতে অংশগ্রহন করেন। ১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে কররাণীদের পতনের পর কালা পাহাড় সম্ভবত আফগান নেতা মাসুম কাবুলীর দলে যোগ দেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন। সম্ভবত ১৫৮৩ খ্রীষ্টাব্দে মুঘল সেনাপতি খান ই আজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মাসুম কাবুলী পরাস্ত হলে সেই যুদ্ধে কালা পাহাড়ও নিহত হন।
=============

তথ্যসূত্র :- ইন্টারনেটের বিভিন্ন  সাইট ও ব্লগ

Thursday, September 11, 2014

সময় যখন বৃদ্ধ হয়


সময় বয়ে চলে যায় । নিয়ে যায় জীবনের কর্মক্ষমতা, অনেক সময়ে বোধবুদ্ধি ।  চলচ্ছক্তিহীন বা হীনা হয়ে কাটাতে হয় বিছানায় ।


“আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি” – কবিতা আছে, কিন্তু আশী বা নব্বই বছর নিয়ে নেই ।


এই বয়সে স্পর্ধা থাকে না । অজস্র ভয়, পুরোনো স্মৃতি, আজন্ম পালিত সংস্কার নিয়ে অক্ষম ভাবে বেঁচে থাকতে হয় ।


পদে পদে আশঙ্কা- এই বুঝি পড়ে গিয়ে হাত বা পা ভাঙল ।


বিনিদ্র রজনী কাটে- কখন ভোর হবে । কেউ খেয়ে ভুলে যায় আর আবার খেতে চায়, কেউ বা খায়ই না ।


এক বুক ভর্তি অম্বল আর অসহায় সন্দেহ নিয়ে বলে
ও মনু ! আমার নস্যির ডিবাটারে তোর পোলা চাডা দিছে । দ্যাখ কত্তখানি কইম্যা গেছে ।

ছুটছে সবাই- জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে । সময় নেই- এই সব বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার জন্য ।
সে কথা কি এঁদের বোঝানো যায় ?

বাড়ী বাগিয়ে নিয়ে- ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয়, বৃদ্ধাশ্রমে ।

না হলে, মাটিতে পড়ে থাকা এক কণা ভাত তুলে, মুখে দিয়ে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অতিথির সামনেই বলে বসবে :- ভাতের যে কি কষ্ট, হেয়া তুমি কি বুঝবা ?
সমাজে যে প্রেস্টিজ থাকবে না ।

-
ধ্যুর ! যৌথ পরিবার? হা হা হা! 

খালি আমরা কিছু পাগল লোক, লবেঞ্জুসের মত তারিয়ে তারিয়ে স্মৃতি টাকে চুষে চুষে খাচ্ছি। 

আর কাজ নেই হে? “যত্ত সব ফালতু সেন্টু”!!
 



Saturday, September 6, 2014

পেনু সাহা ( পেনুদা)





অজস্র সাধারণ মানুষের মধ্যে একজন- পেনু সাহা । ঢাকা জেলার কোন এক গ্রামে বাড়ী ছিল দেশভাগের আগে ।

যে সময়ে, এই পারে আসে, তখন নাকি ওনার বয়স ছিল বছর বারো- তেরো ।

আমার বিবেকানন্দ পল্লী থেকে একটু এগোলেই  লাহা কলোনি । লোকমুখে শুনেছি- ওটা নাকি কোনো এক লাহা পদবীধারী এক এদেশীয় জমিদারের বিরাট বাগান ছিল ।

ঢোকার মুখে মস্ত এক লোহার গেট আর চারপাশ ঘিরে ছিল শক্তপোক্ত এক ইটের দেওয়াল ।  
উদ্বাস্তুরা সেই বাগানের গেট ভেঙ্গে, দখল করে বসতী বানায় । শুনেছি- সে এক রক্তারক্তি কাণ্ড হয়েছিল সেই সময় ।
মালিকও দখল ছাড়তে নারাজ আর এরাও ছাড়বে না । একদিন ঘিরে ধরে আগুনও লাগিয়ে দেয় বসতীতে, মালিকের লোকেরা ।

ধীরে ধীরে সেই লাহা বাগান এখন লাহা কোলোনীতে রূপান্তরিত । বেশ কয়েকবার প্রস্তাব এসেছিল, নামটা পাল্টে- লাহা পল্লী করার, কিন্তু এই প্রজন্মের ছেলে- মেয়েরাই বাধা দেয় । অতীতের- পাঁচফোড়নের গন্ধ মেশানো লাহা কলোনি বহাল আজও ।
সেই কলোনির মুখের ঠিক উল্টো দিকেই ছিল পেনুদার দোকান । মূলত- বিড়ি নিজের হাতে বেঁধে বিক্রি করাই ছিল পেনুদার পেশা ।
বিড়ি সেঁকার মন মাতানো সুবাস অধূমপায়ীদেরও মাতাল করে তুলতো ।
সাথে ছিল চা এবং বিস্কুটের পশরা । হরির দোকান বন্ধ হয় সন্ধেবেলায়, পেনুদার দোকান রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকতো সব সময়-  এমনকি শীত কালেও ।
পাশে দীনেশ-দার দোকানও ছিল একটা আটচালার নীচে , কিন্তু জনতা ষ্টোভে জল ফোটানো চায়ে অবধারিত ভাবে থাকতো কেরোসিনের গন্ধ ।
পেনুদার চায়ে সেসব থাকতো না বলেই ভিড় আর আড্ডা তো ছিলই ।
কত কি জেনেছি- সেই আড্ডায় বসে !!!!! বিড়ি বাঁধার নিয়ম কানুন থেকে শুরু করে, পিস্তল আর রিভলভারের ফারাক- সবই শেখা হতো এক লহমায় ।
ফুনাই ভিসিআর না আকাই- কোনটা ভালো, এই নিয়ে চলতো চুলচেরা বিশ্লেষণ । ফিরিতে শিখতাম সব কিছু ।
 ময়লা হাত কাটা গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা পেনুদা ধারও দিত । সপ্তাহের শেষে পেমেন্ট  । হয়তো কোনো একজনের পঞ্চাশ কাপ চায়ের পয়সা বাকী, কোন জাদুবলে সেটা হতো- পঁচাত্তরটা ।
বিড়ি- চার মুঠোর জায়গায়, আট মুঠো ।
হিসেব চাইলেই- পেনুদার নিজের হাতে হায়ারোগ্লিফিক লিপি তে লেখা খাতা খুলে যেত ।
কার সাধ্যি চ্যালেঞ্জ করে !!!!! এমনকি- নগদ দিয়েও খেয়ে- শুনতে হতো :-
রামকৃষ্ণ বাবু- আফনে বোধহয় গেলো সপ্তায় দুয়োটা চায়ের দাম দেন নাই !
একটু কড়া স্বরে উত্তর দিলে মুখ কাঁচুমাচু করে বলত:- অহনে বুড়া হইসি, অত কি আর মনে থাহে ?
২০১১ সালে পেনুদার দোকানের বাড়ীটা প্রোমোটার নিয়ে নিল । পেনুদাও একটা দোকান পেয়েছিল, তবে দুলাখ টাকায় বেচে দেয় ।

এহেন পেনুদা আমাকে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে গেছিল-  ওর মেয়ের ঘরের নাতনীর অন্নপ্রাশনের নেমতন্নে ।
খুব ভালো খাইয়েছিল- এটা মনে আছে ।
আমি এর আগে পর্যন্ত জানতাম না, পেনুদার ফ্ল্যাট বাড়ী, হরির দোকানের উল্টো দিকেই । আশীর দশকের শেষে পেনুদা আর দাদা মিলে প্রোমোটারকে দিয়েছিল ।
==========
লাঠি ঘোরানো, গুণ্ডা তাড়ানো লিকলিকে চেহারার পেনুদা আজ সকালে মারা গেলেন ।
একটা নীরব ইতিহাসের অবসান হলো ।





Friday, September 5, 2014

বিধি সম্মত সতর্কীকরণ :- ডোন্ট জাজ এ পারসন বাই হিজ/ হার ফেসবুক ষ্টেটাস । -


আমার এক তরুণ লেখক বন্ধুর (০৫/০৯/২০১৩) ষ্টেটাস ছিল গত বছরে
-
প্রথাগত শিক্ষা যাঁরা দেন, তাঁদের বাইরেও কিছু শিক্ষক থাকেন । বিড়ি/ সিগারেট খাওয়াতে হাতে খড়ি দেওয়ার মান্যবরকে তো শিক্ষক বলাই যায় ।

কি ভাবে আসব পান করতে হবে এবং তার রকম ফের কি হবে সেটা যাঁরা জানিয়ে দেন , তাঁদেরকেও অনায়াসে বলা যায় শিক্ষক ।

টিচার্সনামক একটি বিদেশী আসবের চিত্র দিয়ে যাঁরা শিক্ষক দিবসকে পালন করছেন তাঁরাও শিক্ষক এবং আমার কাছে প্রাতঃস্মরণীয় ।

ফেসবুকে এবং এর বাইরেও কিভাবে নোংরামিকরা যায় ,সেটাও যখন শিখি, তখন তাঁদের প্রতি শিক্ষকের শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে ।

শিক্ষকদের মার দেবার ব্যাপারে যারা অগ্রণী, তারাও শিক্ষা দেন মেরে ।
------------------------
বিজয়গড় শিক্ষানিকেতনের প্রধান শিক্ষক- প্রয়াত প্রবোধ চন্দ্র মিত্র, শশাঙ্ক বাবু, হিমাংশু বাবু, বিজন বাবু, রতন বাবু, প্রিয়তোষবাবু- এঁদের কাছে আমি ঋণী ।

ছাত্রদের যে পুত্রতুল্য ভালবাসা যায়, সেটা এঁদের কাছ থেকেই জেনেছি ।
-
কর্ম জীবনে, প্রচুর শিখেছি প্রয়াত সমীর সান্যাল, জোৎস্নাদা, শ্রী হেমেন রায়, শ্রী অরূপ মজুমদারের কাছ থেকে ।

রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত দীনেশ মজুমদার, প্রয়াত দুর্গা পদ সেন ( বুজুদা) ।

সর্বোপরি আমার পিতৃদেব- প্রয়াত রামনারায়ণ ভট্টাচার্য্য, তিনি আমার শিক্ষক, বন্ধু এবং পথপ্রদর্শক ছিলেন ।

এঁদের কারোর ঋণ শোধ করতে পারবো না ।
====

- সো? চিয়ার্স- টিচার্স !!!!

বুদ্ধিমান


++++++

অর্পণ  ভালো ছেলে, কিন্তু বেশ ইন্ট্রোভার্ট ।  মা- বাবার একমাত্র সন্তান । ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আপাতত বাড়ীতেই বসে ।  বড্ড ঘরকুনো । কোলকাতার বাইরে যাবে না চাকরি করতে ।
নিজের ঘরের মধ্যেই বসে সময় কাটায় বই টই পড়ে ।  মাঝে মধ্যে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে বটে, তবে মিনিট দশের মধ্যেই বন্ধ করে দেয় । তবে নেটে, বিভিন্ন লেখা পড়ে, দেশ বিদেশের সংবাদপত্রতে চোখ বুলোয় ।
পাড়ার ক্লাবে বা চায়ের দোকানে যায় না । মা- বাবা একটু হলেও চিন্তিত । একমাত্র বন্ধু সমীর । চাকরি করছে আর ভীষণ আড্ডাবাজ ।
সমীরই একদিন জোর করে ধরে নিয়ে গেল পাড়ার বিবেক সংঘে ।
ক্যারাম, তাস পেটা চলছে । কিছু লোকে আড্ডাতে মগ্ন ।  অর্পণকে নিয়ে সমীর আড্ডার মধ্যেই বসল ।
যা হয় আর কি !  একটা ছেলে, অর্পণকে মুখে কিছু না বলে জামার পেছনে পোড়া সিগারেটের টুকরো, ছোট চিরকুটে “ গাধা” লিখে  জামার পেছনে সুতো দিয়ে বেঁধে দিলো ।
অর্পণ লক্ষ্য করলেও  কিছু বলল না । শুধু ছেলেটিকে চিনে রাখল ।
পরপর চারদিন একই ঘটনা ।
পঞ্চম দিনে, অর্পণ সমীরকে বলল :- তুই আজ ক্লাবে গিয়ে আমাকে হাত দেখিয়ে বলবি- গুরু, একটু হাতটা দেখে দাও না । সময় ভালো যাচ্ছে না । আর, তোর কিছু ঘটনা আমাকে বলে রাখ, যদিও বেশীর ভাগটাই জানি ।
সব কথাতেই বলবি :- কি করে বলছিস গুরু ?
যথারীতি সেই কাজটাই করল সমীর ।
হৈ হৈ পড়ে গেল ক্লাবে । সবাই  দেখানোর জন্য অর্পণের কাছে হাত মেলে ধরল ।
অর্পণ শুধু সেই ছেলেটিরই হাতটা টেনে নিল- যে বদমাইয়েসী গুলো করছিল ।
বেশ সময় নিয়ে দেখে- হঠাৎ সজোরে থাপ্পড় মারল ছেলেটির কানের গোড়ায় ।
ছিটকে পড়ল ছেলেটি ।
একি !!! আমায় মারলেন কেন এভাবে ?
একটা ফাঁড়া ছিল- কাটিয়ে দিলাম, অর্পণের গম্ভীর জবাব ।
আজ চলি- বলে বেরিয়ে গেল অর্পণ , হতভম্ব সকলের সামনে দিয়ে ।
=======

অর্পণ আজকাল চাকরি নিয়ে গুরগাঁওতে , হয়তো বিদেশেও যেতে পারে ।




Thursday, September 4, 2014

সংগ্রাম



স্থান:-  ধরে নিন, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো একটা মফঃস্বল জেলা শহর

কাল :- আশীর দশকের মাঝামাঝি

পাত্র/পাত্রী :- এবারে ঘটনাটা ইচ্ছে হলে পড়ুন, তা হলেই বুঝবেন ।
==========
হঠাৎ মারা গেলেন বাড়ীর একমাত্র রোজগেরে কর্তা । সামান্য চাকরি ছিল এক প্রাইভেট কোম্পানিতে, তাঁর ।

একমাত্র ছেলে তখন কলেজে পড়ছে । বিধবা মায়ের ইচ্ছে- ছেলে আরও পড়ুক ।

মালিক বাবার জায়গায় ছেলেকে চাকরি দিতে চাইলেও, মা সেটা করতে দিলেন না ছেলেকে । ছেলেও, পড়াশোনায় খারাপ নয় ।

এককালীন একটা থোক টাকাও পেলেন মালিকের কাছ থেকে ।

সে কটা টাকা, যৎসামান্য হলেও ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট হিসেবে রেখে দিলেন ।
নিজে ধরলেন টিউশনি । ইংরেজি-বিষয়টা মোটামুটি ভালই জানতেন, বলে বেশ কয়েকটা জুটেও গেল ।

টিউশন নিতে আসা একটি , ষোল- সাতেরো বছরের মেয়ের সাথে বেশ ভাব –ভালোবাসা হল ছেলেটার ।

ছেলের মা, টের না পেলেও- মেয়ের মা ব্যাপারটা যেন কিভাবে যেন জেনে গেলেন ।

একদিন তিনি এসে বললেন – অণিমাদি, আপনি ভালো পড়ান সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর এখানে যা টিউশনের রেট, তার থেকে বেশীই দেই আপনাকে ।
না কোনো দয়া নয় ! আপনার পড়ানোর জন্য মেয়েটা আমার ভালো রেজাল্টও করছে, তাই । তবে, আমার মেয়েটি কোনো কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ুক, এটা আমি চাই না !

অণিমা ব্যাপারটার কিছুই জানেন না তবু, ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হয়েই জবাব দিলেন :- বেশ ! আজ থেকে আর আপনার মেয়েকে আমি আর পড়াবো না !

ছেলেটি এরপরে আর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেই না ! এক নম্বর কারণ :- মায়ের কিছু রোজগার কমে যাওয়া আর দ্বিতীয় হলো, মেয়েটির সাথে দেখা না হওয়ার দুঃখ ।

অণিমা একে ধরেন, তাকে ধরেন কারণ জানার জন্য, ছেলেকে বোঝান---- কিন্তু ছেলেটি বাড়ীতে আর খায় না ।

উপায়ন্তর না দেখে, অণিমা গেলেন নিতুর কাছে ।

বাবা নিতু, জানি তুমি আমার ছেলের থেকে বয়সে বড়, তাও একটু বোঝাও ওকে ।  দুদিন ধরে বাড়ীতে তো খায়ই না, তার ওপর পড়াশোনাতেও মন নেই আর । খালি – পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । কারণ তো বুজতে পারছি না ! দেখো যদি কিছু করতে পারো !”

নিতু সেইদিনই বিকেলবেলা ছেলেটিকে পেয়ে গেল- এক বাজারের ভেতর চায়ের দোকানে । গরম গরম বেগুনিও ভাজা হচ্ছে, সেই দোকানে । ছেলেটি উদাস ভাবে তাকিয়ে সেই দিকে ।

নিতু গিয়ে বলল :- আমার সঙ্গে একটু কথা বলবি ? তাহলে আড়ালে চল ।

ছেলেটি অনিচ্ছা সত্বেও উঠে এলো নিতুর কাছে ।

বাড়ীতে না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করাতে, হড়হড় করে সব বলে ফেলল ছেলেটি ।

কোথায় খেলি, এই দুদিন ?

এই তো সঞ্জীবদের বাড়ীতে । কিন্তু আমি আর মায়ের পয়সায় খাবো না  ! ভাবছি, ওই মালিকের কাছে গিয়ে চাকরিটা চাইবো । আমাকে তো খেতে হবে !  তুমি কিন্তু আমাকে আর মায়ের কাছে খেতে অনুরোধ করো না  । মাথার ওপর ছাদ নেই বলে, রাতে বাড়ীতে থাকি ।

বেগুনী খাবি ?

তা খেতে পারি, খিদেও পেয়েছে ।

নিতু পয়সা দিতে ছেলেটি মোটা মোটা দুটো বেগুনিও নিয়ে এলো ।

খেতে খেতে নিতু বলা শুরু করলো :-

জানিস তো প্রদীপ আর মন্টু আমার বন্ধু ?

হ্যাঁ !

একদিন বেলা দুটো বেজে গেছে । বাজারে প্রায় ৭০ বছরের এক বুড়ো মানুষ একটা লাউ নিয়ে  সব্বাইকে অনুরোধ করছে:- এই লাউটা নিন । দু টাকায় ছেড়ে দেবো ।

কেউ নিচ্ছে না দেখে, মন্টু লাউটা নিয়ে বুড়োকে দুটো টাকা দিয়ে লাউটা নিয়ে নিলো।

প্রদীপ রেগেই অস্থির ।

মন্টু, তোর তো লাউ দরকার নেই ! সকালেই তো কিনেছিস !

ঠিক

তবে কিনলি কেন ?

লোকটাকে দেখিছিলি?

হ্যাঁ !

এই বয়সে, রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে , পাঁচ টাকার লাউটা দুটাকায় বিক্রি করতে চাইছিল । তাই!

দয়া ?

না, তবে মনে হলো ওনাকে সাহায্য করা উচিত !

 তা হলে তোর পাঁচ টাকাই দেয়া উচিত ছিল !

না, এটাই ঠিক হতো না !

কেন ?

উনি কিন্তু, এই বয়সেও ঘুরে ঘুরে একটা লাউ বিক্রি করছেন কড়া রোদে ।  ভিক্ষে চান নি  উল্টে কিছু বিক্রি করে টাকা চাইছেন। পাঁচ টাকা দিলে- ভিক্ষে দেওয়া হতো ।

ছেলেটি এবারে বলল – নিতুদা, আপনি ঠিক কি বলছেন বলুন তো ?


তোর মা- ভিক্ষে করছে না, এটা মনে রাখিস । এবারে বাড়ীতে খাবি কি খাবি না, সেটা তোর ব্যাপার  । আমি আর কিছু বলতে চাই না ।
==========
ছেলেটি  বাড়ী ফিরে গেছিল । পরে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে একটা বিডিওর চাকরি করছে এখন !

শেষ কথা :- সেই মা নিজে এসে ছেলেটির মাকে  নিজের মেয়ের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন ।

অণিমা  মেনে নিয়েছিলেন বিয়েটা ।


নাও দে আর এ হ্যাপি ফ্যামিলি  !

বাংলা সিরিয়াল

অনেকদিন ধরে হরির দোকানে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে না আমার । বাজারে যাওয়ার সময়ে খালি চায়ের আচমন করেই চলে যাই ।
আজ গিয়ে বসলাম । বসতেই কানে এলো- উত্তেজিত আলোচনা । টালিগঞ্জ পাড়ায় ঠেকের একটি ছেলে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলা সিরিয়ালে চান্স পাওয়ার জন্য।
কোনো একটা বাংলা সিনেমায় চান্স পেয়েছিল বটে, তবে সেটা ছিল- নায়কের হাতে ঠাস করে চড় খাওয়ার সিন ।
ছেলেটির পিষ্টিজে গ্যামাক্সিন । তাই, আর রিস্ক নেয় নি ।
কুলোকে বলে, স্যুটিংয়ে খালি চড়টাই খেয়েছিল, লাঞ্চটাও পায় নি । ফেরার সময় গাড়ী ভাড়া বলে মাত্তর কুড়িটা টাকা ঠেকিয়ে বিদায় করেছিল ফিলিম কোম্পানী ।
তাও সেই সিনটা পোষ্ট প্রোডাকশনের সময় বাদ ।
ছেলেটা তারপর থেকে, প্রচুর ছবি টবি তুলে একটা অ্যালবাম মত তৈরি করে নাম দিয়েছে- অটোবায়োগ্রাফী” !
সেটা নিয়েই ঘুরে বেড়ায়, দোরে দোরে ।
আজ প্রসঙ্গটা আবার তুলতেই হরি গেল ক্ষেপে ।

রাস্তার সিনে হালায় কুত্তাগুলিও চানোস পায়, তুই পাস না ক্যা?”


Wednesday, September 3, 2014

দুই ভাই


++++++
নিজেদের বাড়ী । মা অনেকদিন আগেই গত । বাবাও কিছুদিন আগে চলে গেছেন । বড় ভাইকে ডেকে, বাবা বলেছিলেন :-
ছোটটাকে দেখিস । জানি, ও ব্যাটা অকর্ম্মার ঢেঁকি আর আলসেমিতে সক্কলকে টেক্কা দেয়।
তবু, তোর নিজের ভাই । খেয়াল রাখিস ওর প্রতি ।
ছোট দিনরাত পাড়ায় চরকী দেয় । বাজে নেশা নেই , তবে ওই আলস্য !
বড়, বর্ধমানে ডেলি প্যাসেঞ্জারী করে । বিয়ে করে নি, যদি ছোট ভাইয়ের সাথে বৌয়ের গোলমাল বাধে ।
ভোরবেলা বেরোনোর আগে, রান্না- বান্না করে সাজিয়ে রেখে যায় ভাইয়ের জন্য । সন্ধেবেলা এসে আবার রান্না করে ।
একদিন দেরী হয়ে যাবার ফলে, ভাইকে বলল দুধটা গরম করে রাখিস ।
ছোট হিটারে প্যান চাপিয়ে দুধ বসিয়ে , বিছানায় চিৎপটাং ।
এদিকে দুধ ফুটে ফুটে প্রথমে ক্ষীর, তারপর পুড়ে ছারখার । এমনকি হিটারটাও নষ্ট হলো।
বড় ভাই ফিরে এসে এই কাণ্ড দেখে অবাক ।
জিজ্ঞেস করাতে ছোট ভাইয়ের জবাব:- গরম করার দায়িত্ব আমার, হয়ে গেলে নামানোর দায়িত্ব তোমার ।
পাড়ার লোক বড়কে বলে- ছোট ভাইকে কিছু করতে বলুন, এতো আপনার সর্বনাশ করবে ।
বড় ভাই বাবার কথা বলে আর চুপ করে থাকে ।
এক ছুটির দিনে, সন্ধেবেলা ছোট মশা মেরে সাদা দেওয়ালে লটকে দিচ্ছে । লালে লাল হয়ে গেল, পরিচ্ছন্ন সাদা দেওয়াল ।
বড় ক্ষুব্ধ হয়েই ছোটকে বলল এটা কি করছিস ?
বাড়ীটা বাবার, তোর মাথা না ঘামালেও চলবে ।
-----
এই করে চলছে । বড় একদিন বেরোনোর সময় দেখল, ছোটোর ঘরের দরজা বন্ধ । খাবার রেখে চলে গেল বড় ।
রাতে এসে দ্যাখে, এঁটো থালা পড়ে আছে বাইরে ।
এই রকম দু তিন দিন চলার পর বড় এসে দ্যাখে- খাবার যে রকম, সেরকমই পড়ে আছে ।
ভয় পেয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি । তাও ছোট দরজা খোলে না ।
পাড়ার লোক এসে দরজা ভেঙে ঢুকলো ঘরে ।
ছোট বিছানায় শুয়ে পা নাচিয়ে চলেছে । পেছনের দেওয়ালে বড় করে লেখা:-
যে শুয়ে থাকে, তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে ।
লোকেরা জিজ্ঞেস করল :- জানোই যদি, তবে শুয়ে আছো কেন ?
উদ্দমের অভাব ছোটোর জবাব ।

থাকতে না পেরে সবাই মিলে গণধোলাই দিল, খিস্তি দিয়ে । তারপর থেকেই ছোট এখন লাইনে এসেছে ।