Monday, December 28, 2009

BMTPA এর পিকনিক ২৭/১২/২০০৯

ঠাণ্ডাটা এবার জম্পেশ পড়েছে।কিছুদিন আগে মনে হচ্ছিল, ঠাণ্ডা না পড়লে চড়ুইভাতিটা জমবে তো? ভাবনা দূর। হৈ হৈ করে ঠাণ্ডা পড়ে গেল। প্রথম আশঙ্কা দূর অস্ত। দ্বিতীয় আশঙ্কা বাঙ্গালির সময়জ্ঞান! এটা বিশ্ববিখ্যাত! ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমার সময়জ্ঞান তো গিনেস বুকে উঠেছে। সক্কালবেলা আমার স্টেপনী/ব্রাহ্মণী, ঠেলা দিয়ে লেপের ওম থেকে জোর করে উঠিয়ে দিল। আমি বললাম- আঃ, করো কি? দেরী আছে তো!!! না, না, ওঠো। ৭.৩০ টা বাজে। বিএমটিপির বাস বাগুইআটিতে ৯.৩০ টার সময় আসবে।
আমি উবাচ- “ধূ্স্, এরা বলে, কিন্তু গিয়ে দেখবে দাঁড়িয়ে আছি, বাগুইআটিতে।” “তুমি উৎপলকে ফোন কর তো!” অগত্যা, উৎপলকে ফোন। ফোন বেজে গেল। আবার ফোন। এবারও একই অবস্থা! বিজয়ের হাসি আমার মুখে। ব্যাটা উৎপল ঘুম থেকে ওঠেই নি। আরাম করে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছি, উৎপলের ফোন।“দাদা, আমি টয়লেটে ছিলাম, ফোন ধরতে পারিনি। ৯.০৫ এ উল্টাডাঙ্গায় বাস আসবে। আমি ওখান থেকে উঠব।” আমি বললাম- শোনো, বাসে উঠে আমাকে ফোন করো, আমি বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়ব। ততক্ষণে স্টেপনী/ব্রাহ্মণী রেডি। অগত্যা, মধুসূদন। আমিও রেডি হলাম। ঠিক, ৯.০৬ এ উৎপলের ফোন।“দাদা, উঠে পড়েছি, আপনারা রওনা দিন।” এম্মা বলে কি??? এরা কি বাঙ্গালি? তড়িঘড়ি করে ওনাকে ট্যাঁকে গুঁজে, মোড়ে দাঁড়ালাম। বরাতজোর! কার্ত্তিকের নতুন অটো! উঠে পড়লাম। কার্ত্তিককে বললাম, একটু জোরে ছোটা বাবা, না হলে পিস্টিজে গ্যামাক্সিন!! বাগুইআটিতে নেমে দেখি, বারবি ডল। পাশে- এক লম্বু। কাছে গিয়ে বুঝলাম, উশ্রী আর অভিষেক। দূর থেকে দেখি, এক হ্যাণ্ডসাম ভদ্রলোক, মাথায় টুপি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। “ঘনাদা, আমি বাস থেকে নেমে পড়ে আগে এলাম। বাসটাকে দাঁড় করাতে হবে ঠিক জায়গায়, বাস আনন্দকে তুলে এখানে আসছে” কে রে বাপ? ওম্মা!!!! এযে, উৎপল!!!!!!! কিছু বলার আগেই বাস এসে পড়ল। নামল, “বাবা”“বাবা” দেখতে একটি ছেলে। গালে দাড়ি। জড়িয়ে ধরল! ঘনাদা!!!!!!!
আবার চমক! এযে প্রো!!!!![ কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের মত, এটি একটি।]প্রসেনজিৎ বাড়ুজ্জে। উঠে পড়লাম। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। জায়গা পেলাম, মাথায় ইন্দ্রলুপ্ত, কিন্তু গণ্ডদেশে আলুলায়িত কেশ, এরকম এক ভদ্রলোকের পাশে। বিমোচন ওরফে বাসু। হৈ হৈ আর গপ্পোর মধ্যে বাস এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ , সামনের সিট থেকে একটি সুন্দরী মেয়ে, বলে উঠল- জেঠু, চিনতে পারছ? চিনলে তো, হ্যাঁ বলব!!! রাগ করলে মেয়েদের সুন্দর দেখায়।( অবশ্য এখানে সবাই দেখতে সুন্দর/সুন্দরী, একজন আর তার বর ছাড়া) মেয়েটি গাল ফুলিয়ে বলল- আমি লোপা! খুব তো বংশের মেয়ে বল, চিনতেই পারলে না!!!!ঠিক, সামনের সিটে আর একজন সুন্দরী। হেসে বলল- আমি নিবেদিতা! লাল সোয়েটার পরা একজন জড়িয়ে ধরল। গুরু রু রু রু!!!!! দেখি, আদি ও অকৃত্রিম- অজয়!!!! যাই হোক, এই করতে করতে গুস্তিয়া!!!!!!
নেমেই , গরম গরম কচুরী, ফাষ্টোকেলাস আলুর দম! আর রসগোল্লা! আহা! “স্বর্গ এসেছে নামি”। একটু পরে গরম গরম “কফির পায়েস!”( চিনি বেশী হয়েছিল।, পরে নীরব কর্মী সুবীর চাটুজ্জে অন্য ভালো কফি, প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেয়।)। দেবাঙ্কনের মাও এসেছিলেন! আর এক নীরব কর্মী। দিয়ার মা আর বাবা! সব মিলিয়ে একটা পরিবার! ইতিমধ্যে বিমোচনের কাছে জেনে গেছি, ওর চেয়ে দু বছরের বড় দাদা বুদ্ধ ওরফে বিশোভন আমার মালদার পুরনো বন্ধু। বিশোভনের পরিচালনায় “মিছিল” নাটকে অভিনয়ও করেছি। নাটক, গান, কবিতা “বাসু আর বুদ্ধের”বংশগত। হবে নাই বা কেন? কার ছেলে দেখতে হবে তো!!!! বিখ্যাত নাট্যকার প্রয়াত বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের ছেলে এরা!!!! জমজমাটি ব্যাপার। রঙ্গীন “শিশুরা” দোলনায় দুলছে, হাসছে, গল্প করছে। হাঁড়ি ভাঙ্গা খেলা শুরু হল। হাঃ! হাঃ হাঃ! যা কাণ্ড!!! উৎপল তো অফিসিয়াল এখানে। মুখে পুরুরুরু বাঁশী। পম্পা তো সারা জায়গাটা ঘুরে নিল।
শতরঞ্চি পেতে বসল গানের আসর! বাসু বলল- “আমি হ্যাংলা গায়ক”। খুব রাগ হলো! আমার চেয়েও হ্যাংলা কেউ আছে নাকি??? শুরু করে দিলাম। দেবাঙ্কন ( ভুল হতে পারে। দেবাঙ্কর বলে আর একটি ছেলে ছিল। তবে এই ‘র’ আর ‘ন’ এর রনে আমি নেই,বাবা লোকনাথকে স্মরণ করে, ঠিক করে নিস তোরা, আমি তো তোদের পাড়ায় থাকি না!) গীটার বাজাচ্ছে। ছেড়ে দিল বাজনা। খেই পাচ্ছে না তো। তারপর বাসু, নীলাদ্রী, সুরঞ্জিতা,প্রলয়; সরকার আরও অনেকে।বাসু, নীলাদ্রী তো জমিয়ে দিল। সরকার তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করে দেখিয়ে দিল।
এবার খাওয়া। আমি লুকিয়ে খেলাম। পাছে আমাকে লোকে সরকারের চেয়েও বড় রাক্ষস বলে।(হেঃ, হেঃ, হেঃ)। বাসু, মনে হলো দেবতারা যেমন দৃষ্টি দিয়ে খান, সেরকম খেল। আনন্দ খালি ভি.ডি.ও করে গেল। আর হেসেই গেল। রবি, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পা মচকে পা টাকে ফাইলেরিয়ার পা বানিয়ে ফেলল। কাকে ছেড়ে কার কথা বলি????? এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। অনেকের কথা বাদ পড়ে গেল। কিছু মনে করিস না বাপ!

নিলয়, সুবীর, প্রো, অভিষেক, সৈকত-------- অজস্র ধন্যবাদ!!!!
আসছে বছর আবার হবে!!!!!!!

Saturday, December 26, 2009

মহাভারতে অক্ষৌহিনী

মহাভারত সম্বন্ধে অনেকে নানা কথা বলেন। অনেকেই আছেন; যাঁরা বিশ্বাসই করতে চান না যে, এরকম একটা যুদ্ধ আদৌ হয়েছিল ! মহাভারত নিজে পড়ে আমার মনে হয়েছে, হ্যাঁ! এরকম একটা যুদ্ধ হয়েছিল। কারন? কারন হিসেবে যেটা আমি প্রথমেই বলতে চাই, সেটা হলো মহাভারতে Details এর বর্ণনা প্রচুর। বিস্তৃত বর্ণনা কল্পনা দিয়ে হয় না। তাই আমি মহাভারতে অক্ষৌহিনী নিয়ে কিছু লিখছি। বিচারের ভার পাঠকদের। অক্ষৌহিনী ১টি রথ, ১টি হাতি, ৫ জন পদাতিক সৈন্য, ও ৩টি ঘোড়া= ১ পত্তি। ৩ পত্তি=১সেনামুখ।৩ সেনামুখ= ১ গুল্ম।৩ গুল্ম= ১ গণ।৩ গণ= ১ বাহিনী।৩ বাহিনী= ১ পৃতনা।৩ পৃতনা= ১ চমূ।৩ চমূ= ১ অনিকিনী।১০ অনিকিনী= ১অক্ষৌহিনীসুতরাং ১ অক্ষৌহিনী=২১,৮৭০ টি রথ।২১,৮৭০ টি হাতী।১,০৯,৩৫০ জন পদাতিক সৈন্য।৬৫,৬১০ টি ঘোড়া।অতএব, ১৮ অক্ষৌহিনী=৩,৯৩,৬৬০টি রথ।৩,৯৩,৬৬০টি হাতী।১৯,৬৮,৩০০ জন পদাতিক সৈন্য।১১,৮০,৯৮০ টি ঘোড়া।১৮ দিন ধরে চলা কুরুক্ষেত্রের এই যুদ্ধে; সব পদাতিক সৈন্য, হাতী, ঘোড়া, রথের সারথী কিন্তু সবাই মারা গেছিল!উৎস: - হরিদাস সিন্ধান্তবাগীশ কৃত"মহাভারতম্", বিদ্যাসাগর রচনাবলী।

Friday, December 25, 2009

আমার প্রথম প্লেন যাত্রা!



প্লেনে চড়াটা আজকাল জলভাত! কিন্তু আমাদের বালক,কৈশোর বা যৌবন বয়সে সেটা ছিল না! মধ্যবিত্ত পরিবারে প্লেনে চড়াটা আকাশ কুসুম কল্পনা ছিল। ট্রেনে, এখন কার মত স্লিপার ছিল না! ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা ট্রেনে আনরিজার্ভড অবস্থাতেই উঠত, বেশির ভাগ! গুঁতোগুঁতি, মারামারি। আমার তো অনেকদিন পর্য্যন্ত ধারণা ছিল, ট্রেনে ওঠার দরজা নেই। জানলা দিয়ে উঠতে হয়!!!!!!!! (তখন ট্রেনের কামরার জানলাতে রড লাগানো থাকতো না, পরে বোধহয় আমাদের মত লোকের কথা ভেবে লাগানো হয়েছে)। এহেন আমি প্লেনে চড়ব!!!!!! আপনারা কি ভাবছেন জানি না, কিন্তু আমার প্রচণ্ড ভয় করছিল। কলেজ/ইউনির্ভাসিটির ক্যান্টিনে রাজা উজির মারা লোক, ভয়টা প্রকাশও করতে পারছিনা!ওদিকে নতুন চাকরী। আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার এসে গেছে। তার সাথে নির্দ্দেশিকা, অমুক দিন জয়েন করতে হবে। নির্দ্দেশিকার শেষে লেখা ছিল, Please come by air, to avoid delay in training program. Expenses will be reimbursed. [বলে রাখি, Please come by air, ব্যাপারটা বুঝতেও সময় লেগেছিল।] অগত্যা, পাড়ার এক দাদাকে ধরলাম। তখনকার দিনে, দাদা ক্যাপষ্টান সিগারেটের টিন আর এবোনাইটের লাইটার হাতে নিয়ে ঘুরতেন। তা শুনেই তিনি বললেন- টিকেট( টিকিট নয় ) কিনেছিস? আমি বললাম, না। তারপর বললাম, ও তো যাওয়ার দিন দমদমাতে গিয়ে কিনব।[ আগেই বলেছি, ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা!!] দাদা অনুকম্পার দৃষ্টিতে আমার আপাদমস্তক দেখলেন।দাদা উবাচ:- “তুই কি সত্যিই বোম্বের (তখন মুম্বই হয় নি) ওই কোম্পানীতে চাকরী পেয়েছিস?” দাদার ওই কথা শুনে আমার নিজেরও কেমন সন্দেহ হতে লাগল। হাতের ফাইলটা খুলে দেখে নিলাম! কাগজে তো আমার নাম, ঠিকানা সবই ঠিক লেখা আছে!!!!! দাদা, ফাইলটা নিয়ে দেখলেন। একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস। স্বগতোক্তি করলেন- “ভগবান!!” তারপর বললেন- দেখিস, ওখানে আবার ইষ্টিশন বলিস না!! প্লেন যেখান থেকে ছাড়ে, ওটাকে বলে এ্যারপোর্ট। বুঝলি? আমি বিদ্যাসাগরের সুবোধ বালকের মত মাথা নাড়লাম। “ট্যাক্সি ধর”- দাদার হুকুম! তা ট্যাক্সিতে উঠে দাদা সর্দ্দারজীকে বললেন- চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউ। আমার দিকে তাকিয়ে- “ তোকে কিছু প্রাথমিক পাঠ দেব। প্রথমেই কিভাবে ইংরাজী বলবি শোন! তোর তো আবার ভেতো বাঙ্গালী উচ্চারণ!!” আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “প্লেনে উঠতে গেলে,ইংরাজী উচ্চারণ শিখতে হয় নাকি?” দাদার চাউনি দেখে তখন আমার ধরণী ...... অবস্থা।
দাদার বোধহয় দয়া হলো। বললেন- ওরে ,সেই ম্যারিকান ভদ্রলোকের গল্প জানিস তো? বলতো!!! There was a cool day মানে কি? বা There was a brown crow!!! বলতে যেতেই, দাদা হাত তুলে থামালেন! “হবে না! তুই যেটা বলতে চাইছিস, সেটা নয়! ওই দুটো বাক্য,ম্যারিকান উচ্চারনে হবে- দরওয়াজা খুল দে আর দরওয়াজা বন্ধ্ করো!” [ গল্পটা বস্তাপচা, কিন্তু ৩৯ বছর আগে দাদার কাছ থেকেই প্রথম এই গল্পটা শুনি]
এ্যার হোসটেস রা যখন কোনো আনাউন্স করবে, তখন তো তোকে বুঝতে হবে, কি বলতে চাইছে!!! ( অনেক পরে অবশ্য, দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চারনে- মি. ভাটাচারাইয়া, ভাই ভার ইউ ভাণ্ডারিং ইন দা ভারাণ্ডা [Why are you wondering in the verandah,] শুনতে হয়েছে।) তা শুনতে শুনতে অবশেষে চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউ পৌঁছলাম। ভিতরে ঢুকলাম, দাদার পেছন পেছন। বাবা বলেছিলেন- ট্রাঙ্ক আর হোল্ড অল কিভাবে নিবি, জেনে আসবি। সব টাই পরা, সাদা সার্ট, কাঁধের আ্যপুলেন্টে (পরে জেনেছিলাম ওটা আ্যপুলেন্ট) কালো কালো কি সব লেখা! বুকে লেখা- “সার্ভিস উইথ এ স্মাইল”। সবার মুখ গম্ভীর। একটা ডেস্কের সামনে দাদা দাঁড়ালেন। ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বললেন- ইয়েস?? দাদা আমার যাবার দিনটা গোদা বাংলায় বলে বললেন ওই দিন বোম্বের টিকেট আছে কিনা!! ( আমার ইংরাজী শিক্ষাটা ধাক্কা খেল)।ভদ্রলোক একটা জাবদা খেরো খাতার মতো খুলে বললেন- ২ হ্যান আছে, কটা লাগবো? বলতে ভুলে গেছি- দাদা বাংলা বললে বাঙ্গাল ভাষা বলতেন! টাকা, বের করে দিলাম। ভদ্রলোক একটা লম্বা আয়তাকার বিল বইয়ের মত কি একটা তে মন দিয়ে লিখলেন। মধ্যের থেকে একটা কাগজ ছিঁড়ে নিয়ে পুরো বিল বইটা দাদার হাতে দিলেন। দেখলাম, পরের কাগজ গুলোতে কার্বনে সব লেখা! আশ্চর্য্য, কাবর্ন নেই, অথচ কার্বনে লেখা?????? যাই হোক, রিপোটিং টাইম, বলল- ভোর ৫.৩০ টা। সিটি অফিস! এ্যারপোর্ট না গিয়ে সিটি অফিস?? ব্যাপার কি? দাদা বললেন, তোকে গর্দভ বললে, ওই অবলা জীবদের অপমান করা হয়। আরে সিটি অফিস মানে তোকে এখানে আসতে হবে ভোর ৫.৩০ টাতে। এখান থেকে তোকে ঢাউস বাসে করে এ্যারপোর্ট নিয়ে যাবে। এটা এদের দায়িত্ব! আর ট্রাঙ্ক,হোল্ড অলের কথা কি বলছিলি? আরে তোকে তো কোম্পানী হোটেলে রাখবে। শুধু স্যুটকেশ নিয়ে যাবি! বুঝলি?
ঘাড় নাড়লাম! দাদা বললেন, প্লেনে কি পরে যাবি? তাই তো! এটা তো ভেবে দেখিনি!!!!!
সেজমামা এক্স এয়ার ফোর্স। তাঁর কাছে গেলাম। তিনি বললেন- এই গরমকালে তুই ব্লেজার পরবি? আমি বললাম- তা হলে? উপদেশ এল- সার্ট, প্যান্ট পরে যা! তা ছাড়া ব্লেজার পরলে তোকে সবাই কাকতাড়ুয়া বলবে। গরমে কেউ ব্লেজার পরে?
নির্ধারাত দিনে ভোর ৩টেয় উঠে, ফ্রেস হয়ে কপালে দইয়ের ফোঁটা পরে , বেরুলাম। শুধু সেজমামা বললেন- বিয়ে না হতেই দধি মঙ্গল? সিটি অফিস! ঢাউস বাস! উঠলাম। প্রচুর যাত্রী। যাই হোক, এ্যারপোর্ট পৌঁছলাম। প্লেনের পেটেও ঢুকলাম। গ্যালি সিট। পাশের ভদ্রলোককে দেখলাম কি একটা টিপে সামনে একটা ছোট টেবিলের মত বের করলেন। আমিও চেষ্টা করলাম। বোতাম টিপতেই পাশের ভদ্রলোক ধপাস করে সিট শুদ্ধু শোয়ার মত হয়ে গেলেন। দাঁত কড়মড় করে কি যে বলেছিলেন, এ্যাতোদিন বাদে আর মনে নেই। কান তখন ভোঁ ভোঁ করছিল। ইষ্টনাম জপ করতে করতে কথাবার্তা শুনে বুঝলাম প্লেন আকাশে। ৩ ঘন্টা বাদে প্লেনের গর্ভযন্ত্রণা শেষ হলো। তবে সে অন্য কাহিনী।
পুনশ্চ:- আমি এখনও একটু গেঁয়ো!

Sunday, December 20, 2009

আড্ডা

ফেলে আসা জীবনে শুধু তো দুঃখ থাকে না! অনেক মজা, হাসি , ঠাট্টা লুকিয়ে থাকে! মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরী জীবন শুরু ও শেষ হয়েছিল।শেষের দিকে একটু পায়া ভারি হয়েছিল, তবে ওটা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। এই চাকরী টা না করলে, আমি হয়তো বুঝতামই না, জীবনের মজা টা কি! আমাদের রেস্ট হাউস বলে একটা বাসস্থান থাকত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে। হোটেল থেকে অনেক আরাম, আর আমাদের ইউনিয়নও আমরা করতাম এই রেস্ট হাউসকে কেন্দ্র করে।রেস্ট হাউসে দু ধরনের রিপ্রেজেন্টেটিভই থাকতেন।মেডিক্যাল এবং সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ। অনেক সাহায্য পেতাম আমরা, এই সব রেস্ট হাউসের সিনিয়র দাদাদের কাছ থেকে। তা আমাদের আড্ডাটা জমত রাতে। ওই আড্ডায় কি না চর্চা হত। অনেকেই পরবর্তী জীবনে সিনেমা, থিয়েটার, সংগীত, রাজনীতিতে নাম করেছিলেন। দু একটা নাম করছি। স্বরূপ দত্ত, অসীম রায়চৌধুরী। হালের শ্রীকান্ত আচার্য্য। প্রসঙ্গত বলে রাখি, শ্রী মৃণাল সেনও তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন,মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে । যাই হোক, কিছু টুকরো মজার ঘটনা তুলে ধরছি।
সেবার, একটি নতুন ছেলে এলো কটকের রেস্ট হাউসে। একটু হাই- ফাই ব্যাপার, ছেলেটির। টেনিদার চরিত্র ঠিক না হলেও, প্রায় কাছাকাছি। তা ছেলেটি, একদিন কথায় কথায় বলল- “বুঝলে, মিসেস সেন এর সাথে, একটা বড় রোল পাচ্ছি। বুড়োদা খুব হেল্প করছেন। আর,মিঠুর বিপরীতে আমার হিরো হবার কথা চলছে।”
আড্ডা তখন জমজমাট। হঠাৎ সবাই নিস্তব্ধ। মিসেস সেন, বুড়োদা এরা কে, আর মিঠু?????? সবাই মনে মনে উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। তা কিছুক্ষণ বাদে আমাদের এক সিনিয়ার দাদা বললেন‌ “মিসেস সেন মানে রমা???”আমরা অকুল পাথারে। আমার পাশের দাদা, আমার মুখ হাঁ দেখে, হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে; কানে চুপি চুপি বললেন- রমা হচ্ছে সুচিত্রা সেন, আর বুড়ো দা- তরুণকুমার।
সিনিয়ার দাদা বললেন‌- তা, “মিসেস সেন, তোমার সাথে দেখা করেছেন?”
ছেলে-“ না, আসলে আমি ঠিক টাইম করে উঠতে পারি নি। হটাৎ চলে এলাম তো!”
সিনিয়ার দাদা-“ তা বুড়োদাকে ভার দিয়ে এসেছ বুঝি?
ছেলে- বললাম না, কটকে চলে এলাম!!!
সিনিয়ার দাদা-“তা, রমাকে টেলিগ্রাম করে দিচ্ছি, যাতে তোমার কাছে আ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে টেলিগ্রাম পাঠায়!”
ছেলেটি এরপর শুধু হাতে পায়ে ধরতে বাকি রাখে। কিনতু ওর নাম হয়ে যায়- হটাৎকুমার
----------
আর এক দিন, একটি নতুন ছেলেকে সেই সিনিয়ার দাদা জিজ্ঞেস করলেন- ভাই, তোমার নাম কি?
ছেলেটি- দাদা, আমার নাম; রবি সোম। আপনার নাম দাদা?
দাদা- মঙ্গল বুধ।
----------
হটাৎকুমার একদিন ছুটির শীতের সকালে খালি গায়ে তেল মাখছিল।
তা দাদা বললেন- কি রে! তোর গায়ে তো দেখছি প্রচুর কেশ!
"হটাৎকুমার-পুরুষ দাদা,পুরুষ।
দাদা- গাধা তো তা হলে মহাপুরুষ রে!

ভবিষ্যতে, আরও জানানোর ইচ্ছে রইল!




Friday, December 18, 2009

ওই ভদ্রলোক

ভাগ্যিস, তারক চাটুজ্জে ছিলেন। না হলে তো তিলুর কথা জানতেই পারতাম না! উল্কার গর্তের মধ্যে লাল খাতাটা তো তারক চাটুজ্জেই খুঁজে পেয়েছিলেন। টানাটানি যাচ্ছিল বলে মাত্র কুড়িটা টাকার বিনিময়ে খাতাটা হাত ফেরতা করেছিলেন। খাতাটা অদ্ভুত! পাতা ছেঁড়ে না, লেখার কালি ঘন্টায় ঘন্টায় রং বদলায়। আগুনে পোড়ে না! যে খাতাটা অবিনশ্বর মনে হয়েছিল, শেষে কিনা বুভুক্ষু ডেঁয়ো পিঁপড়েরা খেয়ে ফ্যালে!!!!!! তা খোঁজ খবর করে,পরে আরও একুশটা খাতা/ডায়েরী হাতে আসে, তিলুরই লেখা। না হলে কি যে হতো!!!!
গিরিডির ধন্বন্তরী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, ত্রিপুরেশ্বর বাবুর একমাত্র এই ছেলেটা; গিরিডির ইস্কুল থেকে মাত্র বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করে। তারপর চোদ্দোতে, আই.এস-সি আর ষোলোয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বি.এস-সি। এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট!!!!!!!জীবনে সেকেন্ড হয় নি কোনো পরীক্ষায়। আবার বিশ বছর বয়সে কোলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে অধ্যাপক! ভাবা যায়???????
১৯১৬ সালের ১০ ই জুন না অক্টোবরে জন্ম, তা নিয়ে একটু ধন্ধ ছেলেটির ডায়েরিতে আছে, আর ১৯৯১ সালের ডায়েরিতে অসমাপ্ত একটা লেখাতে লিখেছিল, “আজ আমার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হলো”। ও নিজে না বললেও ১৯১৬ সালটা বিয়োগ করলেই বেরিয়ে আসে। আর ১০ ই জুন না ১০ ই অক্টোবর; এটা নিয়ে দুরকম লেখা আছে ওই ডায়েরিতে। তা যাক, ওতবড় পণ্ডিতের একটু আধটু ভুল হতেই পারে।
আর হবে নাই বা কেন!!!! যে ছেলে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার করে, তেরো বছর বয়স থেকে চুল পাকে, সতেরো বছরে টাক পরতে শুরু করে, একুশ বছরে পুরো টাক, সে ছেলে যে মাথায় প্রচুর জিনিস ভরে রাখে, তার ভুল হতেই পারে। এগারো মাস বয়সের স্মৃতি মনে আছে ভদ্রলোকের। ওই জন্য, জন্মের তারিখের গোলমালটা.......। থাক!
লম্বায় পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি ( পরে আরও দুই ইঞ্চি বেড়েছিল), চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা। চোখের পাওয়ার মাইনাস সিক্স আর মাইনাস সেভেন পয়েন্ট টু ফাইভ। সুইডিস আ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস থেকে নোবেল সমতুল্য ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত এই ভদ্রলোক (আর ছেলে বলব না) আমাদের গর্ব।
বাইরের বিজ্ঞানীরা কিন্তু ভদ্রলোককে বিজ্ঞানী বলে মানতেই চায় না। আবিস্কারের কথা বললে বলে--- ভারতবর্ষ মন্তর তন্তরের দেশ। ওই ভাবেই নাকি আবিস্কার গুলো হয়ে গেছে। এই ভুল ধারণার একটা ভিত্তি আছে। ভালো সংস্কৃত জানেন ভদ্রলোক। তার ওপর, অতি বৃদ্ধ প্রপিতামহ বটুকেশ্বর তান্ত্রিক ছিলেন। বাবা গোলকের শিষ্য ছিলেন বটুকেশ্বর। আবার একটা গণ্ডগোল!!!! ডায়েরিতে পিতামহ বটুকেশ্বরের উল্লেখ দেখি। ইনি সাধনরত অবস্থায় শিলাবৃষ্টিতে ব্রহ্মতালুতে ফুটো হয়ে মারা যান। এদিকে পিতামহ, আর এক বটুকেশ্বর খাঁটি গৃহস্থ হলেও অসম্ভব ভালো শ্রুতিধর ছিলেন। তবে বটুকেশ্বরের নামটা তো আবার কেউ দিতেও পারে। হাজার হোক, তান্ত্রিক বলে কথা!! ভদ্রলোক নিজেও আবার ভুত-প্রেতের ব্যাপারটা বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করে মৌলিক এক বইও লিখেছিলেন।
নাঃ! এই ভদ্রলোককে কালটিভেট করতে হবে!

পুনশ্চ:- ভালো নামটা ভুলে গেছি বলতে! প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু! ওনার ডায়েরী টা পড়ে নেবেন আপনারা।

পঞ্জিকা অপভ্রংশে পাঁজি, নামটি এসেছে পঞ্চাঙ্গ থেকে। পঞ্চাঙ্গের অর্থ পঞ্জিকার ৫টি অঙ্গ।পঞ্জিকা : - বার বা বাসর , তিথি, নক্ষত্র, করণ, যোগ ।1. বার বা বাসর: - সোমবার থেকে রবিবার বা সোমবাসর থেকে রবিবাসর।2. তিথি: - সূর্য্যের সঙ্গে সংযোগের হিসাবে চান্দ্রমাসের গড় মান-২৯.৫৩ দিন। চান্দ্রমাস কাকে বলা হয়? এক অমাবস্যা থেকে ঠিক পরের অমাবস্যা পর্য্যন্ত সময়কে সাধারণত ১ চান্দ্রমাস বলা হয়। চান্দ্রমাসের নামকরণ কিভাবে হয়? আমরা জানি ১২ টি সৌরমাস। যথা:-১. বৈশাখ ২. জৈষ্ঠ ৩.আষাঢ় ৪. শ্রাবণ ৫.ভাদ্র ৬. আশ্বিন ৭.কার্ত্তিক ৮. অগ্রহায়ণ ৯. পৌষ ১০. মাঘ ১১.ফাল্গুন ১২.চৈত্র।আমরা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করি। এই মাসের কোন না কোন দিনে অমাবস্যা পড়বে। এই অমাবস্যা থেকে পরের অমাবস্যা পর্যন্ত “১ চান্দ্র বৈশাখ” বলা হয়। এইভাবে ১২টি চান্দ্রমাস হবে। যদি একই মাসে ২ টি অমাবস্যা পড়ে, তবে সেই চান্দ্রমাস মলমাস হিসাবে গণ্য হবে।আগেই বলা হয়েছে যে, এক চান্দ্রমাসের মান ২৯.৫৩ দিন। ২৯.৫৩ কে পূর্ণসংখ্যাতে রুপান্তরিত করলে হয় ৩০। এই ৩০ দিনকে ৩০ টি সমান ভাগে ভাগ করে, এক একটি অংশকে বলা হয় ‘তিথি’।তিথি হলো ১ চান্দ্রদিন। এবার প্রশ্ন কেন? অমাবস্যা কে আদি তিথি বা ১ম দিন ধরা হয়। যখন চন্দ্র ও সূর্য্যের একই সরলরেখায় মিলন হয় তখন অমাবস্যা হয় । সুতরাং তিথি= ১ চান্দ্রদিন। অমাবস্যার পরের দিন প্রতিপদ বা প্রথমা এবং শুরু শুক্লপক্ষ। সুতরাং অমাবস্যার পরের দিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ বা প্রথমা।চন্দ্র, সূর্য্যের সাপেক্ষে ১২০ কৌণিক দূরত্ব (angular distance) অতিক্রম করলেই প্রতিপদ বা প্রথমার শেষ এবং শুক্লা দ্বিতীয়ার আরম্ভ।পক্ষ ২টি। শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। পক্ষ সাধারণত ১৫ দিনের। অমাবস্যা থেকে পরের ১৫ দিন পর পূর্ণিমা। এই ১৫ দিন শুক্লপক্ষ । আবার পূর্ণিমা থেকে পরের ১৫ দিন পর অমাবস্যা। এই ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষ।

সুতরাং১ চান্দ্রমাসের ১ম ১৫ দিন শুক্লপক্ষীয় এবং ২য় ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষীয়।তিথি, যে কোন দিনাঙ্কের যে কোন সময়ে শুরু হতে পারে; দিনে অথবা রাত্রিতে। সাধারণত পঞ্জিকার যে কোন দিনাঙ্কের সূর্য্যোদয়ের সময় যে তিথি চলছে সেটাই সেই সৌরদিনের তিথি হিসাবে গণ্য হবে। তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হতে পারে। এর কারণ চন্দ্রের জটিল গতি। চন্দ্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এক কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, এটা আমরা সবাই জানি। কক্ষপথটি কিন্তু উপবৃত্তাকার (Elliptical) যার ফলে চন্দ্রের গতি সেই কক্ষপথে সব জায়গায় সমান নয়। কখনো ধীরে, কখনো জোরে।--আর সেই জন্যেই তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হয়। সুতরাং, পাঁজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হোল তিথি ।এবার নক্ষত্র: - নক্ষত্র ২৭ টি। ক্রমানুসারে ২৭ টি নামগুলি হোল: -১। অশ্বিনী ২। ভরণী ৩। কৃত্তিকা ৪। রোহিণী ৫। মৃগশিরা ৬।আর্দ্রা ৭। পুনর্বসু ৮। পুষ্যা ৯। অশ্লেষা ১০। মঘা ১১। পূর্বফাল্গুনি ১২। উত্তরফাল্গুনি ১৩। হস্তা ১৪। চিত্রা ১৫। স্বাতী ১৬। বিশাখা ১৭। অনুরাধা ১৮। জ্যেষ্ঠা ১৯। মূলা ২০। পূর্বাষাঢ়া ২১। উত্তরাষাঢ়া ২২। শ্রবণা ২৩। ধনিষ্ঠা ২৪। শতভিষা ২৫। পূর্বভাদ্রপদ ২৬। উত্তরভাদ্রপদ ২৭। রেবতী ।এছাড়াও অভিজিৎ নামেও আরও একটি নক্ষত্র আছে। উত্তরাষাঢ়ার শেষ পাদ এবং শ্রবণার প্রথম পঞ্চদশাংশ ব্যাপিয়া অভিজিৎ নক্ষত্র গণণা করা হয়। অর্থাৎ: -৯ রাশি ৬ অংশ ৪০ কলা থেকে ৯ রাশি ১০ অংশ ৫৩ কলা ২০ বিকলা পর্য্যন্ত।এখন নক্ষত্র বলতে কি বুঝব?মূলত চন্দ্র রাশিচক্রের (প্রকৃতপক্ষে চান্দ্রমার্গের) ৩৬০ডিগ্রি ঘুরে আসে। এই চন্দ্র রাশিচক্রের ভাগ ২৭ টি। প্রত্যেকের ব্যবধান হোল ১৩০২০’ ।এই এক একটি ভাগকে নক্ষত্র বলা হয়। এই ভাগের প্রধান উজ্জ্বল তারাকে যোগতারা বলা হয়।কোন দিন কোন নক্ষত্র বললে বুঝতে হবে চন্দ্রের অবস্থান নক্ষত্রের ১৩ ০ ২০’ সীমানার মধ্যে। (০=ডিগ্রি ’= মিনিট,)

Sunday, December 13, 2009

বাংলা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্র টেনিদা


টেনিদা নামটা শুনলেই না, কেমন গা ছমছম করে! বাপরে!!!!! এই বুঝি ডালমুট, পাঁঠার ঘুঘনি খেতে চাইবে!প্যালা একবার বলেছিল, হাওড়া, ইষ্টিশনে,জুতো বুরুশ যাচ্ছে, খাবে নাকি টেনিদা? টেনিদার যা চোপা!!!!!!!! তবে টেনিদার সিংহ হৃদয়। আমাদের লীডার।ভজহরি মুখুজ্জে বলে কথা!!!!!!! ম্যাট্রিক দিয়েছে, স্কুল ফাইনাল দিয়েছে, কে জানে হায়ার সেকেন্ডারীও দেবে কিনা!! তবে ৭ বারের চেষ্টায় স্কুল ফাইনাল পাশ করেছে। সিটি কলেজ আবার কাঁঠালে অমাবস্যাতেও ছুটি দেয়। গাবলু মামার আর কোনো খোঁজ নেই, কুট্টি মামা বাঘের দাঁত আর বাঁধালো কিনা বোঝা যাচ্ছে না!

ক্যাবলা [কুশল মিত্র] “ছপ্পর উপর কৌয়া নাচে, নাচে বগুলা” গাইছে না।

হাবুল [স্বর্ণেন্দু সেন] “মেকুরে হুড়ুম খাইয়া হৈক্কর করসে” বলছে না।

প্যালা [কমলেশ বন্দ্যোপাধ্যায়]‍“ বাসক পাতা দিয়ে সিংগি মাছ” খাচ্ছে কিনা জানি না। পটলডাঙায় চাটুজ্জ্যেদের রোয়াকটা কি আর আছে? নাকি ওটাও promoting হয়ে গেছে?

প্যালার দুই বোন- পুঁটি আর আধুলির বিয়ে হয়েছে কি? বাঙ্গালির আজ ঘোর দুর্দিন।

জাগো....................................................


আদ্যা স্তোত্রম্

আদ্যা স্তোত্রম্

ওঁ নম আদ্যায়ৈ

শৃণু বৎস প্রবক্ষ্যামি আদ্যাস্তোত্রম্ মহাফলম।যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব বিষ্ণুবল্লভঃ ।।

মৃত্যুর্ব্যাধি ভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিৎ কলৌযুগে।অপুত্র লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি।।

দ্বৌ মাসৌ বন্ধনামুক্তিঃ বিপ্র বক্ত্রাৎ শ্রুতং যদি।মৃতবৎসা জীববৎসা ষন্মাসং শ্রবণং যদি।।

নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয় মাপ্নুয়াৎ।লিখিত্বা স্থাপয়েৎ গেহে নাগ্নি চৌরভয়ং ক্কচিৎ।।

রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্নাঃ সর্ব্বদেবতাঃ।ওঁ হ্রীং ব্রহ্মাণী ব্রহ্মলোকে চ বৈকন্ঠে সর্ব্বমঙ্গলা।।

ইন্দ্রাণী অমরাবত্যাম্বিকা বরুণালয়ে।যমালয়ে কালরূপা কুবেরভবনে শুভা।।

মহানন্দাগ্নি কোণে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী।নৈঋত্যাং রক্তদন্তা চ ঐশানাং শূলধারিণী।।

পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী।সুরসা চ মণিদ্বীপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা।।

রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে।বিরজা ওড্রোদেশে চ কামাখ্যা নীল পর্ব্বতে।।

কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী।বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী।।

কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা।দ্বারকায়াং মহামায়াং মথুরায়াং মাহেশ্বরী।।

ক্ষুধা ত্বং সর্ব্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ।নবমী কৃষ্ণপক্ষস্য শুক্লস্যৈকাদশী পরা।।

দক্ষস্য দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণধ্বসং কারিণী।।

চন্ডমুন্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী।নিশুম্ভশুম্ভমণনী মধুকৈটভঘাতিনী।।

বিষ্ণুভক্তিপ্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা।আদ্যাস্তবমিমং পুণ্যং যঃ পঠেৎ সততং নরঃ।।

সর্ব্বজ্বরভয়ং ন স্যাৎ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনম্ ।কোটীতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।

জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ।নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্ব্বাঙ্গে সিংহবাহিনী।।

শিবদূতী –উগ্রচণ্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী।বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী শঙ্খিনী শিবা।।

চক্রিণী জয়দাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া ।দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরী।।

নারসিংহা চ বারাহী সিদ্ধিধাত্রী সুখপ্রদা।ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয় বিনাশিনী।।

ইতি--- ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদসংবাদে আদ্যা স্তোত্রম্ সমাপ্তম্ ।


একান্নবর্তী পরিবার

একটু ধান ভাঙ্গতে শিবের গান গাই। মনে হয়, অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ঋগ্বেবেদের বিবাহ সূক্তে (১০/৮৫) যে সব উক্তি আছে তার থেকে প্রমাণ পাই যে সেকালে একান্নবর্তী পরিবার ছিল। প্রাসঙ্গিক অংশটিতে পাই, বধূকে আশীর্ব্বাদ সূচক একটি ঋক্ (৪৬) । তাতে যা লেখা আছে, তার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়- “তুমি শ্বশুরের উপর প্রভুত্ব কর, শ্বশ্রুকে বশ কর, ননদ ও দেবর গণের উপর সম্রাটের মত আধিপত্য কর।‍” বধূ বিবাহের পর এক বিরাট পরিবারের অঙ্গীভূত হত; তাকে শ্বশুর, শাশুড়ী, ননদ, দেবরদের নিয়ে সংসার করতে হত। এই গুলো ব্যবহারিক প্রয়োজন দ্বারা যে অনুপ্রাণিত ছিল, তা পাঠক মাত্রেই বুঝতে পারবেন। আমার মনে হয়, একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে অনেক গুলো আকাঙ্ক্ষার মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে আত্মপ্রকাশ করত। মানুষ হতেও মানুষের যে প্রতিকূলতা আছে তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য একটি শক্তির প্রয়োজনীয়তা, এবং সেই শক্তি হল যৌথ পরিবার, আর সেই যৌথ পরিবার কে সযত্নে রক্ষা করা।

আমি সমাজতাত্ত্বিক বা শব্দ বিশেষজ্ঞ নই, তবুও আমার মনে হয় “পাড়া” এই ধারণাটা এই যৌথ পরিবার থেকেই এসেছে। তা প্রত্যেক যৌথ পরিবারেই একজন করে অভিভাবক থাকতেন, যাঁরা যৌথ পরিবারের প্রত্যেকের অভাব অভিযোগের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। সাধারণত তাঁদের পরিচিতি “কত্তা” নামেই হত। “পাড়া” হত ( ইচ্ছে করেই অতীত ব্যবহার করলাম) কতক গুলো যৌথ পরিবারের সমষ্টি। এখানেও একাধিক “কত্তা” থাকতেন, যাঁদের ‘দাদা’ বলা হত।‘দাদা’ মানেই বড় ভাই আর এটা ষ্পষ্ট যে এঁরা কিন্তু রক্তের সর্ম্পকের না হলেও , ‘দাদা’ হিসেবেই আমাদের দায়ে অদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

তা যা বলছিলাম, সেই ঋগ্বেদের যুগ থেকে কিছুদিন আগে পর্য্যন্ত যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব ছিল। আর সেই যৌথ পরিবারে কিছু এমন সদস্যও থাকতেন, যাঁরা আবার গ্রাম সর্ম্পকে বা দূর সর্ম্পকের আত্মীয়। সব মিলিয়ে একটা জমজমাটি ব্যাপার।বেকার, সকার, নিষ্কর্মা, সব ছিল।

দেশ ভাগ হবার পর চেহারাটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল। অর্থনৈতিক অবস্থাও ভেঙ্গে পড়তে লাগল।(শ্রী প্রফুল্ল রায়ের উপন্যাস আর গল্পে এর প্রতিফলন আছে)

যৌথ পরিবারে সব মজার মধ্যে, কোথায় যেন সুর,তাল, লয় কেটে যাচ্ছিল। যারা রোজগার করেন, তাদের পাতে একটু ভালো মন্দ জিনিস, আর যারা করেন না; তাদের পাতে ওই থোড় বড়ি খাড়া বা খাড়া বড়ি থোড়।“পাড়া”তেও কিন্তু এর প্রভাব পড়তে শুরু করল। নিমন্ত্রণ বাড়ীতে কোমোরে গামছা বেঁধে পরিবেশন করার সময়, গানও তৈরী হলো—“ আরে যাদের পাতে মাথা মুড়ো, ওরাই কি তোদের জ্যাঠা খুড়ো?” ফলে,ম্যাটিনী শো এর টিকিট, মা, জেঠাইমা, খুড়ীমাদের কেটে দেওয়ার লোকের অভাব। ঘরে বসে, রঙ্গ মিলন্তি তাস আর কাঁহাতক খেলা যায়? পরনিন্দা, পরচর্চা শুরু হলো, আর জমতে লাগলো ধূমায়িত অসন্তাষ। আরও একটা ব্যাপার শুরু হলো, খুব আস্তে।“লভ ম্যারেজ”।“কত্তা”রা এই “লভ ম্যারেজ” ব্যাপারটা মেনে নিতে পারতেন না; নানা কারণে। জাত, পাত, সম্ভ্রম, আভিজাত্য সব মিলিয়ে একটা ভজকট ব্যাপার। ব্যাপারটা যেখানে গিয়ে দাঁড়াল,যারা “লভ ম্যারেজ” করত, তারা আলাদা হতে থাকল। একটা আপাত স্বাধীনতা, এদের কে আর যৌথ পরিবারের দিকে আকর্ষণ করতে পারল না।

এরপর, জীবিকার প্রয়োজনে.. দেশে, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে লাগল যৌথ পরিবারের লোকেরা। প্রথম প্রথম চিঠি- চাপাটি, তারপর প্রাথমিক উচ্ছাস কেটে গেলে; কমে যেতে লাগল যৌথ পরিবারের বন্ধন। জীবন যাত্রার মানও বদলাতে লাগল । স্বাভাবিক ভাবেই একই যৌথ পরিবারের লোক হলেও একটা অলিখিত ফারাক চলে এল। বাংলা ও বাঙ্গালি বদলাতে লাগল। বদলাতে লাগল, রুচি, ভাষা। রান্নাঘরেও এল অন্য স্বাদ। যে বাঙ্গালি অর্দ্ধেক ডিম খেত, যৌথ পরিবারে; তাদের সন্তানরা খেতে লাগল দুটো করে ডিম। মুড়ি, বাদাম হটে গিয়ে এল চাউমিঁএ। মুরগী আর বাইরে রান্না করতে হল না। বড় বাড়ী, প্রমোটিং এ চলে গেল। “যত্ত সব ফালতু সেন্টু” বলার লোক বেড়ে চলল। অণু পরিবারে ২ টাকায় সারাজীবন বসে খাওয়ার পিঁড়ি অদৃশ্য।

নিমন্ত্রণ খাওয়াবার জন্য গামছা পড়া পাড়ার ছেলে ছোকরা? তারাও যাদুবলে ভ্যানিশ। ক্যাটারারের আবির্ভাব হল। “দাদা, এদিকে আরও দশ পিস মাছ” বলা উঠেই গেল। সব ক্যালরি কনসাশ!“দাদা, এদিকে জল দেখি” আর কেউ বলে না। “এই যে, জল টা নাচান তো” বলার লোক বেড়ে চলল।

বাবা, মা গর্ব করে বলতে লাগল--- ছেলে না, বাংলাটা বলতে পারে; কিনতু পড়তে লিখতে পারে না।

পাড়ার রক আর নেই। ফলে, টেনিদা, ঘনাদা নেই। ঠাকুমার ঝুলি নেই। হ্যারি পটারের লেটেস্ট এডিশন কেনার জন্য ভোর থেকে লম্বা লাইন।

ঠাকুমা, ঠাকুরদারা সব বৃদ্ধাশ্রমে। যৌথ পরিবার?????? “যত্ত সব ফালতু সেন্টু”!!!!!!!!!!

খালি আমরা কিছু পাগল লোক, লবেঞ্জুসের মত তারিয়ে তারিয়ে স্মৃতি টাকে চুষে চুষে খাচ্ছি।

আর কাজ নেই হে????? “যত্ত সব ফালতু সেন্টু”!!!!!!!!!!

Thursday, September 24, 2009

প্রাচীন কালে বস্তুর আকার ও পরিমাণ

সচরাচর কনুই থেকে মধ্যমার অগ্রভাগ পর্যন্ত পরিমাণকে আমরা ১ হাত বলে জানি।কিন্তু প্রাচীন কালের শাস্ত্রকারেরা এই পরিমানকে ১ হাত বলেন নি।তার কারন হিসেবে যেটা বলা হয়েছে যে; সকলের হাত সমান নয়। তাই আমার ১ হাত অন্য লোকের ১ হাত নাও হতে পারে। তাই শাস্ত্রকারেরা একটি “নির্দ্দিষ্ট মান” ঠিক করে দিয়েছেন। মধ্যমার ২য় ও ৩য় পর্বের মধ্যভাগকে; এক মানাংগুলি বা এক অঙ্গুলি বলে। সাধারণত এটা ৮ টি যবোদরের সমান। এবার যবোদর কি? যবোদর=যব+উদর, অর্থাৎ ১টা যবের উদর বা মধ্যের ভাগ। ৮ টা যব পর পর রাখলে তাদের মধ্যভাগের যে মাপ হবে তা এক অঙ্গুলি। এখনকার মতে ১.৩ ইঞ্চি বা ৩.৩ সে.মি. এর সমান।এটাই Standard বা Parameter.
সুতরাং; ৮ টি যবোদর = ১ অঙ্গুলি= ১.৩ ইঞ্চি বা ৩.৩ সে.মি.।
২৪ অঙ্গুলি= ১ হাত =২.৬ ফিট/৭৯.২ সে.মি.।
৪ হাত = ১ ধনু = ১০.৪ ফিট/ ৩১৬.৮ সে.মি.।
২০০০ ধনু = ১ ক্রোশ = ২ মাইল/ ৩.২৪ কিমি।
৪ ক্রোশ = ১ যোজন= ৮ মাইল/১২.৯৬ কিমি।

উৎস:- শ্রীজগন্মোহন তর্কালংকার প্রণীত "নিত্যপূজা পদ্ধতি"।

পুরীর রথ

এই ছোট প্রবন্ধে আমি চেষ্টা করেছি, পুরীর রথ সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানাতে। প্রথমেই আসা যাক, নব কলেবর প্রসঙ্গে। যে নিম গাছগুলি থেকে বিগ্রহগুলির নবকলেবর হবে; সেগুলির কতকগুলি বৈশিষ্ট্য থাকবে। ১) নিমগছের রং ঘন কালো হবে।
২) এই গাছের কাণ্ডের ব্যাস কম করে ১২ ফুট হবে।
৩) এক একটি গাছের ৪ টি প্রধান শাখা থাকবে।
৪) গাছগুলি কোন নদী বা পুকুরের পাশে থাকবে। গাছগুলিকে ৩টি রাস্তার সংযোগস্থলে খুঁজে পেতে হবে।
৫) গাছগুলি বরুণগাছ ও বেলগাছ দ্বারা পরিবৃত থাকবে।
৬) গাছগুলি ৩টি পাহাড় দ্বারা পরিবৃত থাকবে।
৭) নিমগাছের কাছেই কোন আশ্রম থাকবে।
৮) একটি শ্মশান ভূমিও থাকবে।
৯) ভগবান বিষ্ণুর ৪টি পবিত্র চিহ্ন – শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মের ছাপ থাকবে গাছের কাণ্ডে।
১০) নিমগাছের কাছেই উইপোকার ঢিবি থাকবে।
১১) পাখীর কোন বাসা থাকবে না গাছে।
১২) নিমগাছের ওপর কোনদিন বাজ পড়া চলবে না। ঝড়ে, নিমগাছের কোন শাখা প্রশাখা ভাঙ্গা চলবে না।
১৩) নিমগাছের নীচে গোখরো সাপের বাসা থাকতে হবে।
১৪) নিমগাছের নীচে কোন ঝোপঝাড় থাকা চলবে না।
এই ১৪ টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কম করে ৫ টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই নবকলেবরের জন্য সেই নিমগাছ নির্বাচন করা হবে।

সরকারী রেকর্ডে ১৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দ থেকে নবকলেবরের নথীভূক্তকরণ আছে। তারপর ১৮০৯,১৮২৮,১৮৫৫,১৮৭৪,১৮৯৩,১৯১২,১৯৩১,১৯৫০,১৯৬৯,১৯৭৭,১৯৯৬ পর্যন্ত আছে।

বলভদ্রের রথের নাম:- তালধ্বজ্ ।
সুভদ্রার রথের নাম:- দেবদলন।
জগন্নাথের রথের নাম:- নন্দিঘোষ।

রথগুলির বর্ণনা:-

তালধ্বজ্ (বলভদ্র/বলরাম) -
উচ্চতা- ১৩.২ মিটার।
কাঠের টুকরো-৭৬৩ টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- উন্মনী।
রথের কাপড়ের রং- লাল সবুজ।
চাকা-১৬ টি।

দেবদলন (সুভদ্রা) -
উচ্চতা-১২.৯ মিটার।
কাঠের টুকরো-৫৯৩টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- নাদম্বিক।
রথের কাপড়ের রং- লাল কালো।
চাকা-১৪ টি।

নন্দিঘোষ (জগন্নাথ) -
উচ্চতা- ১৩.৫ মিটার।
কাঠের টুকরো- ৮৩২ টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- ত্রৈলোক্যমোহিনী।
রথের কাপড়ের রং- লাল হলুদ।
চাকা-১৮ টি।

উৎস:- আমার পুরীতে সাধনরত অবস্থায় পুরীর পাণ্ডা বন্ধুদ্বয়; শ্রী বনবিহারী পতি ও শ্রীবিপিন পতি, পুরীর সরকারী গেজেট ও শারদীয় “বর্তমানে” প্রকাশিত শ্রী সুমন গুপ্তের প্রবন্ধ।

Tuesday, September 22, 2009

“টাকা –কড়ি” এই সমাসটা খুবই চালু। আবার – “ফ্যালো কড়ি মাখো তেল”! বা “১ ফুটো কড়িও” নেই, “টাকা কড়ির যা অবস্থা!”টাকা তো বুঝি, কিন্তু কড়ি টা কি? কীভাবে ‘কড়ি’ শব্দটা টাকার সঙ্গে জুড়ে গেল? আসুন, দেখা যাক, এর রহস্যটা কি?
ইংরাজীতে বলে cowry যদিও মূলত শব্দটা আফ্রিকান । বোধহয়, এখান থেকেই বাংলা ‘কড়ি’ শব্দটা এসেছে। তা যাক, কড়ি তখনকার দিনে স্বল্প মূল্যের বিনিময় দ্রব্য ছিল, বা নিম্নতম দ্রব্যমূল্যমান। প্রধানত ভারত মহাসাগরে এই কড়ি পাওয়া যেত। এর ওপরের ভাগ চকচকে হওয়াতে এর চাহিদা ছিল প্রচুর।
আফ্রিকা, চীন, ইয়েমেন, সুদান; প্রায় সব দেশেই কড়ির ব্যবহার ছিল।খ্রীষ্টীয় ৪র্থ শতকে পর্যটক ফা-হিয়েনের বিবরণ অনুযায়ী, লোকে তখন কেনাবেচায় কড়িই ব্যবহার করত!
১৯ শতক অব্দি কড়ির ব্যবহার ছিল। রাজারা যখন দান করতেন তখন কড়ি দিয়েই করতেন। রাজা লক্ষণ সেনের নিম্নতম দান ছিল ১ লাখ কড়ি।
কড়ির হিসেবটা ছিল এরকম:-
১০০ কড়ি= শিহায়
৭০০ কড়ি = ফাল
১২০০ কড়ি =কুট্ট
১ লাখ কড়ি = বুস্ত
১০ লাখ কড়ি = ১ স্বর্ণমুদ্রা

সূত্র :- ১৪১৬ সালের শারদীয় বর্তমানে শ্রী বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘ ইবনের সঙ্গে ৭০০ বছর আগে’

Monday, September 14, 2009

Monday, July 6, 2009

বঙ্গে ব্রাহ্মণদের আগমন

প্রথমেই বলে রাখা ভাল এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য বাঙ্গালীদের সাথে বঙ্গীয় ব্রাহ্মণদের সম্পর্কের উৎস সন্ধান।“বাংলার ইতিহাস পাওয়া যায় না।ঋকবেদেও বাংলার নাম পাওয়া যায় না।ঋকবেদে ঐতরেয় আরণ্যকে ৩ টি জাতির নাম পাওয়া যায়।..... জাতি অর্থে Caste নয়; Ethnic Race।.... এই ৩ টি জাতির নাম বঙ্গ, বগধ ও চের।চের রা যে আসলে দ্রাবিড় জাতির ১ টা বড় অংশ, সে বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতভেদ নেই।.....” প্রাসঙ্গিকভাবে একটি কথা এখানে বলা দরকার। “খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ হতে ৩০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০০ বছর আমরা দ্বিতীয় পর্ব বা যুগ বলে গ্রহণ করতে পারি। এই যুগের সূচনায় ভারতীয় আর্যসমাজে সর্ব্বোচ্চ স্থান লাভের জন্য ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় এই দুই বর্ণের মধ্যে এক সঙ্ঘাত লক্ষ্য করা যায়।ব্রাহ্মণেরা অবশ্যই শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ এবং মহাকাব্যের মধ্যে দিয়ে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করেছিলেন। কিন্তু, এই যুগে রচিত বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে যে, ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি সমাজে সর্বজনস্বীকৃত ছিল না।ঐতিহাসিকরা মনে করেন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণ-প্রাধান্যের বিরুদ্ধে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের প্রতিবাদই সূচিত হয়েছে এবং এই দুই বর্ণের লোকেই অন্তত বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয়েছিলেন।‌ এই কথাগুলো কেন লিখলাম, তা পাঠকরা পরে বুঝবেন। আর্যরা বলেছিলেন- তীর্থযাত্রা বাদে বঙ্গদেশে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। শ্রাদ্ধের পংক্তিতে বাঙ্গালীকে একসঙ্গে বসতে দেবে না। আর্যরা বঙ্গদেশকে বড় ভালোবাসতেন!!!!!এহেন বঙ্গদেশে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতি আমাকে বিষ্মিত করেছিল । তাই,কোন বিশেষ জাতির বা ব্রাহ্মণ্যধর্মর গুণকীর্তন বা দোষবিচার নয়।স্বামীজী বলেছিলেন:-“Religion is realization, not talk or doctrine, nor theories however beautiful they may be. It is being and becoming, not hearing or acknowledging, but, it is the whole human soul becoming changed into what it believes.”স্বামীজী আরও বলেছিলেন:- “Religion is the highest plane of human thought and life.” এটাকে মাথায় রেখে এবং যেহেতু,আর্যদের আচার আচরণের সঙ্গে ব্রাহ্মণদের একটা যোগাযোগ দেখা যায়, এবং বঙ্গীয় ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ভারতবর্ষের অন্যান্য ব্রাহ্মণদের আচার আচরণের এবং পদবীর একটা তফাৎ পাই, তাই একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস এই লেখক করেছে। ইতিহাস প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। এক তাম্রশাসনে দেখা যায়, ৪৩৬ খ্রীষ্টীয় সালে মহারাজাধিরাজ কুমারগুপ্তর সময়ে রাজসাহী অঞ্চলে একজন ব্রাহ্মণকে ভূমিদান করা হয়। এর ১০০ বা ১৫০ বছর পর ফরিদপুরে কিছু ব্রাহ্মণ জমিজমা নিয়ে বাস করতেন। এটাও তাম্রশাসনে দেখা যায়। কিছু পণ্ডিত এই তাম্রশাসন গুলোকে জাল বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু জাল হলেও , এই জাল গুলো ১০০০ বা ১২০০ বছর আগে হয়েছে এটা মেনে নিতে হয়।কিন্তু এই ব্রাহ্মণরা ছিলেন এবং ৭০০ ঘর ছিলেন। এঁরা, তখন এবং এখনও “সপ্তশতী” ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত। এঁদের হেলা করা হত, কারণ বলা হত এঁরা বেদ সম্বন্ধে কিছু জানতেন না। কিন্তু রাবণ তো বেদ জানতেন! তার ওপর তিনি দ্রাবিড় এবং ব্রাহ্মণ!! তাহলে এই অবহেলার কারণ কি? তাই আমি; খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ হতে ৩০০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ৯০০ বছরের কথা আগেই বলেছি। এবার দেখা যাক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ কি লিখেছিলেন? তিনি বঙ্গদেশে ৬২৯ – ৬৪৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত ১৬ বছর ছিলেন।তিনি বলছেন, তখন বঙ্গদেশে ১,০০,০০০ এর বেশী বৌদ্ধ ভিন্ন ভিন্ন সঙ্ঘারামে বা বিহারে বাস করতেন।
এছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বী ভিক্ষুরাও ছিলেন- মানে জৈন প্রভৃতি ভিক্ষুরাও ছিলেন। এবার এই ভিক্ষুরা ভিক্ষা ছাড়া অন্য কোন রোজগার করতেন না বা নিষেধ ছিল। ৩ বাড়ীতে ভিক্ষার পর, ৪র্থ বাড়ীতে ভিক্ষা করার নিয়ম ছিল না। আবার ১ বাড়ীতে ভিক্ষা করার পর, সেই বাড়ীতে ১ মাস পর ভিক্ষা করতে পারতেন; তার আগে নয়। এটাও নিয়ম ছিল (কি সুন্দর অর্থনীতি!)। সুতরাং একজন যতি (এই ভিক্ষুদের তাই বলা হত; কারণ তাঁরা ইন্দ্রিয় সংযম করতেন) প্রতিপালন করতে অন্তত ১০০ ঘর গৃহস্থ বৌদ্ধ থাকা চাই!তাহলে, লক্ষাধিক যতিকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য ১ কোটি গৃহস্থ বৌদ্ধ থাকা চাই। আর ছিলও তাই! প্রায় গোটা বঙ্গদেশ তখন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণদের(মাত্র ৭০০ ঘর! যাঁদের কেউ পাত্তা দিত না বলে আস্তে আস্তে তাঁরা সব ভুলে যাচ্ছিলেন?)তারা গ্রাহ্য করতেন না। আর পুঁথিপত্র ঘাঁটলে দেখা যায় যে এই আন্দোলনটা সারা ভারতেই হচ্ছিল।(এই প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা বুদ্ধদেব এবং তীর্থংকর জৈন করে গেছিলেন।)তাই কুমারিল ভট্ট; মীমাংসা সূত্রের শবর ভাষ্যর ১ টীকা লিখে আবার বৈদিক ধর্মের প্রচারের চেষ্টা করছিলেন। কুমারিল ভট্ট তখন কনৌজের ব্রাহ্মণদের নেতা। কনৌজ তখন ১ জন প্রবল পরাক্রান্ত ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী মহারাজার রাজধানী।
সুযোগও এসে গেল। বাংলার রাজা আদিশূর পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করবেন বলে ঠিক করলেন। আবার ইতিহাসের গুঁতো!বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকরা বললেন বাংলার রাজা আদিশূর বলে কেউ ছিলেন না! কারণ কোন তাম্রশাসনে আদিশূরের নাম পাওয়া যায় না। কেউ বললেন; তাম্রশাসনেই কি সব পাওয়া যায়? জনশ্রুতির কোন মূল্য নেই! আর ইতিহাস কি সব সময় সব নিয়ম মেনে চলে!! অনেক বাকবিতণ্ডার পর ঐতিহাসিকরা প্রায় এক মত হলেন, যে “জয়ন্ত” বাংলার রাজা আদিশূরের অপর নাম ।(এসম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা বারান্তরে করা যাবে, না হলে প্রবন্ধটির কলেবর বৃদ্ধি পাবে, আর পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি হতে পারে!)
তা এই যে বাংলা বলছি, এটার ঠিক অবস্থানটা কোথায় ছিল? তখনকার বাংলায় ২টো বড় বড় নগর ছিল। একটা পৌন্ড্রবর্ধন; আরেকটি তাম্রলিপ্তি। তাম্রলিপ্তির আরও প্রাচীন নাম দামলিপ্তি।অর্থাৎ, তামিলদের শহর। তাই আমি রাবণের কথা প্রসঙ্গিকভাবে আগে উল্লেখ করেছিলাম। যাই হোক, এই পৌন্ড্রবর্ধন বর্তমানে মালদহের পাণ্ডুয়া। তাম্রলিপ্তি এখন তমলুক- পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর।এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। আবার আগে ফিরে যাই।
তা কনৌজের ২ টি ভাগ ছিল। মূল কনৌজ এবং কোলাঞ্চ। কনৌজের রাজা ছিলেন রাজা আদিশূর বা জয়ন্তর শ্বশুর “চন্দ্রদেব”। আর পূর্বাদ্ধ কোলাঞ্চের রাজা ছিলেন “চন্দ্রদেবের” ভাই “বীরসিংহ”। এই বীরসিংহের রাজ্য কোলাঞ্চ থেকে ৫ জন ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক এসেছিলেন বঙ্গদেশে। এঁরা এসেছিলেন কুমারিল ভট্ট ও তাঁর শিষ্য ভবভূতির নির্দ্দেশে। কারন, বাংলার রাজা আদিশূর যখন ওই ৭০০ জন ব্রাহ্মণকে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে বলেন, ব্রাহ্মণরা তখন বলেন তাঁরা অনভ্যাসের ফলে বেদবিহিত যজ্ঞ করতে পারবেন না। (এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, প্রক্ষিপ্ত। কারন, কুমারিল ভট্ট ও তাঁর শিষ্য ভবভূতির প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল বাংলাতে আবার বৈদিক ধর্মের প্রচারের চেষ্টা। ) এবার এই ৫ জন ব্রাহ্মণদের নাম এবং গোত্র কি? ২ টো মত আছে। বারেন্দ্র মত এবং রাঢ়ীয় মত। (বারেন্দ্র এবং রাঢ়ী কি, এব্যাপারে পরে বলছি।)
বারেন্দ্র মত:-
. ক্ষিতিশ, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
. তিথিমেধা/ মেধাতিথি, গোত্র:-ভরদ্বাজ।
. বীতরাগ, গোত্র:- কাশ্যপ।
. সুধানিধি, গোত্র:-বাৎসব।
. সৌভরি, গোত্র:- সাবর্ণ।
রাঢ়ীয় মত:-
. ভট্টনারায়ণ, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
. শ্রীহর্ষ, গোত্র:-ভরদ্বাজ।
. দক্ষ, গোত্র:- কাশ্যপ।
. ছান্দোড়:- গোত্র:-বাৎসব।
. বেদগর্ভ, গোত্র:- সাবর্ণ।
(গোত্র এবং প্রবর সম্বন্ধে একটু বলে নেই।যে ঋষির যে বংশধর, সেটা গোত্র। যেমন শাণ্ডিল্য গোত্র মানে শাণ্ডিল্য ঋষির বংশধর। আর প্রবর মানে সেই গোত্রের যাঁরা খ্যাতিলাভ বা অন্য ভাষায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন, তাঁরা প্রবর। গোত্র এবং প্রবর মালা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা দেখলেই পাওয়া যাবে।সাধারনতঃ বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার খ১১৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়।বর্ষবিশেষে ২-১ পাতা এদিক ওদিক হতে পারে। বর্তমানে ৫১ টি গোত্র এবং তার সংশ্লিষ্ট প্রবর গুলি দেওয়া আছে।)
অনেকে এদের পিতাপুত্র বলে জানান। কিন্তু এই দ্বন্দের মীমাংসা করেছেন “বাংলার সামাজিক ইতিহাস” প্রণেতা শ্রী দুর্গাচরণ সান্ন্যাল।তিনি লিখেছেন:-
“প্রত্যেক ব্রাহ্মণের ২টি করিয়া নাম থাকে। একটি প্রকাশ্য নাম, অপরটি পূজার সংকল্পের নাম।রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণগণ প্রকাশ্য নাম এবং বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণ পূজার সংকল্পের নাম গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া এইরূপ নামভেদ হইয়াছে।‍”
আসলে এইখান থেকেই কিন্তু ডাকনাম এবং ভালোনামের উৎপত্তি।( আমার সংযোজন)
এবার তাঁরা কবে এসেছিলেন?বিদ্যাসাগরের মতে ১০৭৭ খ্রীস্টাব্দ বা ৯৯৯ শক।পরবর্তী কালে “গৌড়ের ইতিহাস” প্রণেতা শ্রীরজনীকান্ত চক্রবর্তী ৭৩২ খ্রীস্টাব্দ বা ৬৫৪ শক বলেছেন। ঘটক অনুশাসন বিচার করলে ৭৩২ খ্রীস্টাব্দ বা ৬৫৪ শক বেশী গ্রহণযোগ্য।পরবর্তী বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকরা এটা মেনে নিয়েছেন।
পুত্রেষ্টি যজ্ঞ হয়েছিল, বর্তমান মালদহের পাণ্ডুয়ায়। মালদহ টাউন বা ইংলিশবাজার থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরত্বে এই ধূমদিঘী বা হোমদিঘী গ্রামটি আজও বর্তমান। যজ্ঞ থেকে প্রচুর ধূঁয়ো বা ধূম হয়েছিল বলে এই নাম। আবার যজ্ঞর অপর নাম হোম।প্রচুর সমিধ( যজ্ঞের বেলকাঠ) পোড়ানর জন্য দিঘীর আকারে মাটী খোঁড়া হয়েছিল। তাই ধূমদিঘী বা হোমদিঘী, নাম।
এবার এই ৫ জন ব্রাহ্মণকে নিয়ে একটি কাহিনী বলি। কাহিনীটি, নবভারত পাবলিশার্স কর্ত্তৃক প্রকাশিত; “তারা রহস্য” বইয়ের ভূমিকাতে দেওয়া আছে।
সেই কালে ব্রাহ্মণদের কি কি করা নিষেধ ছিল; ১ বার দেখে নেওয়া যাক:-

• শীলিত(সেলাই করা) বস্ত্র পরিধান।
• চর্ম পাদুকা (চামড়ার জুতো) পরিধান।
• তাম্বুল চর্বণ ( পান চিবোন বা খাওয়া)।
• অশ্ব বা অশ্বেতর পশুর উপর আরোহণ।
এবার, আদিশূর চরমুখে খবর পেলেন যে, ৫ জন ব্রাহ্মণ যাঁরা আসছেন, তাঁরা ফতুয়ার মত জামা পরে, ঘোড়ার ওপর চড়ে, পান চিবোতে চিবোতে আসছেন। আদিশূরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি ভাবলেন, এ কাদের আমি আনলাম? এরা তো ব্রাহ্মণ্যধর্মের কিছুই মানে না! তাই মন্ত্রীদের নির্দ্দেশ দিলেন যে, ৫ জন ব্রাহ্মণ এলে, তাঁদের অতিথি শালায় যেন রাখা হয়। রাজা সময়মত তাঁদের সাথে দেখা করবেন।
তা ৫ জন ব্রাহ্মণ রাজবাড়ীর দুয়ারে এসে এই খবরটা পেলেন। রাজাকে আশীর্বাদ করার জন্য তাঁদের হাতের মুঠিতে জল ছিল। রাজা সেই সময় দেখা করবেন না দেখে তাঁরা আশীর্বাদ করার জন্য জল ফেলে দিলেন। জল গিয়ে পড়ল এক শুকনো গাছের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে সেই শুকনো গাছ জীবিত হয়ে উঠল। এই চমৎকার ঘটনার কথা শুনে আদিশূর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাথে দেখা করলেন।
এবার “তারা দেবী” মূলত বৌদ্ধ দেবী। সেই দেবীর সাধনা গ্রন্থে এই কাহিনীর অবতারণা কেন? এটা কি ব্রাহ্মণ্যধর্মের অলৌকিক ক্ষমতার প্রচার? সত্যাসত্য জানা যাবে না, তাই বিচারের ভার পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম।
এবার ৫ জন ব্রাহ্মণ এসে যজ্ঞ করলেন, আদিশূরের সন্তানও হলো, কিন্তু তাঁরা আর কনৌজের কোলাঞ্চতে আর ফিরতে পারবেন না। কারণ, সেই বাংলা যেখানে অবৈদিক কাজকর্ম হয়। তাঁরা ফিরে গেলে পতিত হয়ে যাবেন! কিন্তু সত্যিই কি তাই? না। ওপর ওপর এই কথাটা বলা হলো বটে, আসলে তাঁরা রয়ে গেলেন বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রচার করতে!
পঞ্চব্রাহ্মণের বসবাস করার জন্য রাজা আদিশূর তাঁদের জমিদারী দিলেন তদানীন্তন বাংলার বিভিন্ন জায়গায়। অবশ্যই জীবন যাপন এবং বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রচার করার জন্য।
তখনকার গৌড় রাজ্য ৫ ভাগে বিভক্ত ছিল।
• গৌড়
• দেবকোট
• মহাস্থান
• সন্তোষ
• রংপুর

রাজা আদিশূর পঞ্চব্রাহ্মণের বসবাস করার জন্য যে জায়গাগুলো দিলেন; নাম এবং ধাম অনুসারে নীচে লিপিবদ্ধ করলাম:-
. ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ,পিতা-অজ্ঞাত, গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
জমিদারী- পঞ্চকোট, মানভূম (এখনকার পুরুলিয়া)।
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ; নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: কালীঘাটে।
. বীতরাগ/দক্ষ, পিতা- রত্নাকর, গোত্র:- কাশ্যপ।
জমিদারী- কামকোটি, বীরভূম। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: ভতিপুর, মালদহ।
. সুধানিধি/ছান্দোড়, পিতা-উষাপতি, গোত্র:-বাৎসব।
জমিদারী- হরিকোটি, মেদিনীপুর। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: ত্রিবেণী।
. তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ,পিতা- দিণ্ডি গোত্র:-ভরদ্বাজ।
জমিদারী- কঙ্কগ্রাম, বাঁকুড়া। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন:অগ্রদ্বীপ, বাঁকুড়া।

. সৌভরি/বেদগর্ভ,পিতা- শ্রীমান প্রিয়ঙ্কর, গোত্র:- সাবর্ণ।
জমিদারী- বটগ্রাম, বর্ধমান। নিজে তীর্থাবাস এবং চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন: গুপ্তিপাড়া, হুগলী।
স্বাভাবিক ভাবেই এঁদের সন্তান সন্ততির কথা আসে। এঁদের সংখ্যা এরকম:-
ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ-১৬
বীতরাগ/দক্ষ-১৬
সুধানিধি/ছান্দোড়-৮
তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ-৪
সৌভরি/বেদগর্ভ-১২
এই প্রত্যেক সন্তানকে রাজা বসবাসের জন্য গ্রাম দান করেছিলেন। এই সন্তানরা পরষ্পর অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে পরিচিত হন। পরে এটাই “পদবী” বলে পরিচিত হয়।এর পরে কর্ম ও জীবিকা অনুসারে “উপাধি”র প্রচলন হয়।
“উপাধি”র কিছু নমুনা:-
হিন্দু উপাধি- ভট্টাচার্য্য, চক্রবর্তী, রাজগুরু প্রভৃতি।
মোঘল আমলে- মজুমদার, সরকার, কারকুন প্রভৃতি।
ইংরেজ আমলে- রায়, চৌধুরি প্রভৃতি।

মূল পদবী গুলো হল:-

ক্ষিতিশ /ভট্টনারায়ণ-১৬(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:- শাণ্ডিল্য।
বন্দ্য/বাড়ুরী(বন্দোপাধ্যায়),কুসুম,দীর্ঘাঙ্গী,ঘোষলী, বটব্যাল, পারিহা, কুলকুলি, কুশারী,কুলভি,সেয়ক, গড়গড়ি, আকাশ, কেশরী, মাষচটক, বসুয়ারী,করাল।

বীতরাগ/দক্ষ-১৬ (অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-কাশ্যপ।
চট্ট(চট্টোপাধ্যায়), অম্বুলি, তৈলবাটী, পলসায়ী, পীতমুণ্ডি, পোড়ারী,হড়, গূঢ়, ভুরিষ্ঠাল, পালধি, পাকড়াসী, পূষলী, মূলগ্রামী, কোয়ারী, সিমলাই/সিমলায়ী, ভট্ট।

সুধানিধি/ছান্দোড়-৮ (অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-বাৎসব।
কাঞ্জিলাল, মহিন্তা, পতিতুণ্ড/পইতুণ্ডি, পিপলাই, ঘোষাল, বাপুলি, কাজ্ঞারী,শিমলাল/শিমলাই।


তিথিমেধা/ মেধাতিথি//শ্রীহর্ষ-৪(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:-ভরদ্বাজ।
মুখুটি(মুখোপাধ্যায়), ডিংসাই, সাহরী, রাই।

সৌভরি/বেদগর্ভ-১২(অমুকগ্রামীন বা অমুকগাঁই হিসেবে),গোত্র:- সাবর্ণ।
গংগুরী(গঙ্গোপাধ্যায়), পুংসিক, নন্দিগ্রামী, ঘন্টেশ্বরী, দায়ী, নায়েরী, পারিহাল, বালিয়া, সিদ্ধল,কুন্দগ্রামী,সিয়ারী,সাটেশ্বরী।

এরপর যা হয়! ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই! অমোঘ নিয়মে জমি নিয়ে ঝগড়া হলো সবার মধ্যে।

পাঁচজন চলে গেলেন উত্তরবঙ্গের দিকে!মূলত, রাজসাহী, বগুড়া, রংপুর, পাবনার দিকে। এই স্থান গুলো বরেন্দ্রভূম নামে পরিচিত। সুতরাং এরা বারেন্দ্র নামে পরিচিতি লাভ করলেন। বাকী যাঁরা পদ্মার এই পারে থেকে গেলেন;যা রাঢ়ভূম নামে পরিচিত, তাঁরা হলেন রাঢ়ী। এই পাঁচজন বা পাঁচগ্রামীন কারা, তা নিয়ে ইতিহাস নীরব! তবে, এঁদের গ্রাম/পদবী হল:-
সান্ন্যাল(বাৎসব গোত্র), মৈত্র(কাশ্যপ গোত্র), লাহিড়ী(শাণ্ডিল্য গোত্র), বাগচী(শাণ্ডিল্য গোত্র), ভাদুড়ী(কাশ্যপ গোত্র।
রাজা বল্লাল সেন তাঁর সময়ে এক আদমশুমারী(Census) করেছিলেন। ৩৫০ ঘর – রাঢ়ী, ৪৫০ ঘর- বারেন্দ্র ছিলেন। এর ওপর, কিছু সপ্তশতী, কিছু পাশ্চাত্য, কিছু দাক্ষিণাত্য ব্রাহ্মণ ছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০০ হাজারের বেশী ব্রাহ্মণ ছিল না।
এবার রাজা বল্লাল সেনের আমলে রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের মধ্যে এক ঝগড়া শুরু হয়, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ?
বল্লাল সেন এবার ডেকে পাঠালেন তাঁদের। একদল তাড়াতাড়ী আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন। আর এক দল অর্ধেক আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন।সবশেষে, পুরো আহ্নিক প্রভৃতি সেরে রাজার দরবারে হাজির হলেন আর এক দল।
যাঁরা শেষে এলেন তাঁরা হলেন- কুলিন।কারণ তাঁরা পুরো পূজাপাঠ সেরে এসেছিলেন। যাঁরা মধ্যে এলেন তাঁরা হলেন ভঙ্গ কুলিন। আর যাঁরা আগে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন শুধুই ব্রাহ্মণ।
বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের সাথে রাঢ়ীদের একটা ঝগড়া লেগেই থাকত, সাংস্কৃতিক বিভিন্নতার জন্য। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা, রাঢ়ীদের বলতেন যে এরা মুখে মিষ্টি, কাজের বেলায় অস্টরম্ভা। আর রাঢ়ীরা বলতেন বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা মাথায় এত প্যাঁচ রাখেন যে, মাথায় পেরেক ঢোকালে নাকি সেটা স্ক্রু হয়ে বেরিয়ে আসবে। শেষে তাদের মধ্যে বৈবাহিক সর্ম্পক একেবারে হত না। বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের পেশা যজন, যাজন ও অধ্যাপনা হলেও তাঁরা জলদস্যুতাও করতেন। তাই বারেন্দ্র ব্রাহ্মণরা বেশীর ভাগই কালী ভক্ত ছিলেন।
পরিশেষে বলে রাখি, এই অপণ্ডিত লেখক ১ জন বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ! পদবী- সান্ন্যাল, উপাধি- ভট্টাচার্য্য। ভট্ট= শ্রেষ্ঠ। আচার্য্য= শিক্ষক।
অতএব সাধু সাবধান!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
অলমিতিবিস্তরেণ.......................



এই প্রবন্ধটি লেখার অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জানাই শ্রী শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী ও তাঁর সুযোগ্যা সহধর্মিণীকে।

গ্রন্থ ঋণ:- শ্রীহরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্রী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়,উদ্ধোধন;শতাব্দী জয়ন্তী নির্বাচিত সঙ্কলন, বিদ্যাসাগর রচনাবলী, গৌড়ের ইতিহাস- শ্রী রজনীকান্ত চক্রবর্তী, তারা রহস্য, বাংলার সামাজিক ইতিহাস- শ্রীদুর্গাচরণ সান্ন্যাল, উইকিপেডিয়া, বাবা এবং কাকার মুখে শোনা ইতিহাস, শারদীয় বর্তমানে(১৪১৩) প্রকাশিত সাহিত্যিক শ্রীসঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ, ক্ষিতীশ চরিতাবলী।

পাণিনি ও অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ (একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা)

সংস্কৃত ভাষাটা খুবই খটোমটো, অন্তত আমার কাছে। তার ওপর ব্যাকরণ!!!! উরেঃ ব্যাস্‌! মা সরস্বতীর সঙ্গে আমার ছোটবেলা থেকে যে কেস চলছে, সেটা চলছে তো চলছেই। তবে ৬০ বছর পর, সম্প্রতি আমার উকিলবাবু আমায় একটা খবর দিয়েছেন। তাতে আমি সান্তনা পেয়েছি। মা সরস্বতী কেসটা হেরে গিয়েছেন। তাই টুকলী কোরে পাণিনি সম্বন্ধে লিখছি। কাদের কাছ থেকে টুকলী কোরেছি, সেটা শেষে লিখব। সংস্কৃত শিখে নাকি পাণিনি পড়তে হয়। তা, সংস্কৃত আমি শিখিনি। তাই সাহস করে এবারে আসল বিষয়ে আসি। আমরা কোলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলে গেলে, পাণিনির একটি আবক্ষ মূর্ত্তি দেখতে পাব। তা এই পাণিনি ভদ্রলোকটি কে? কি বা তাঁর পরিচয়? আমাদের এই পোড়া দেশটার একটা দুর্ভাগ্য আছে। গ্রীকদের হেরোডেটাস ছিল, কিন্তু কলহন ছাড়া কেউ আর আমাদের প্রাচীন ইতিহাস লেখেন নি বা লিখলেও তা আর নানা কারণে পাওয়া যায় না। তাই কলহনের আগে জানতে হলে, আমাদের বিভিন্ন বিদেশী পর্য্যটকদের লেখা বিবরণ, জনশ্রুতি, উপকথার ওপর নির্ভর করতে হয়।
এই সবের ওপর ভিত্তি করে, বলা যায় যে, পাণিনি খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৯ম থেকে খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে কোন এক সময় জীবিত ছিলেন। তবে গবেষকরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, পাণিনির জীবনকাল খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষে বা খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে ছিল। পাণিনির জন্মস্থান নিয়েও একই রকম বিভ্রান্তি থাকলেও গবেষকরা মোটামুটি ভাবে একমত যে তিনি, গান্ধার প্রদেশের (বর্তমান- পাকিস্তান) শালাতুর (বর্তমান- লাহোর) গ্রামে জন্মেছিলেন।
পাণিনির জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে মগধের রাজধানী পাটলীপুত্রে। তাই কিছু পণ্ডিতের মতে পাণিনির পূর্বপুরুষেরা শালাতুর গ্রামের হলেও পাণিনির জন্ম হয়েছিল, পাটলীপুত্রে।
পাণিনি ছিলেন একজন শিষ্ট। শিষ্টেরা ছিলেন এক ধরণের ব্রাহ্মণ। শাস্ত্রের ওপর ছিল তাঁদের অসামান্য অধিকার।
পার্থিব সুখ, স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা একটি বিশেষ অঞ্চলে বসবাস করতেন(গবেষণা? ) । বাস স্থানের উত্তরে ছিল হিমালয়, দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতমালা, পূর্বে বঙ্গভূমি এবং পশ্চিমে আরাবল্লী পাহাড়ের রেখা।
পাণিনি ছিলেন, পণি নামে এক ঋষির সন্তান। এবার পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়।
পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক এবং ফিনিসীয় গোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসবাস করতেন।
পাণিনির বাবা ছিলেন ফিনিকিয় পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর নাম ছিল, শলঙ্ক। তাই পাণিনির আর এক নাম ছিল শালাঙ্কি। পাণিনির মা ছিলেন ডেসিয়ান। দক্ষ জাতির মহিলা। তাই তাঁর নাম দাক্ষি। তিনি রূপে গুণে অতুলনীয়া ছিলেন। পাণিনির আর এক নাম তাই দাক্ষিপুত্র। পাণিনির ভক্ত পতঞ্জলি পাণিনি কে এই নামে বিখ্যাত করেছেন।
পাণিনি ছিলেন অহিগলমালা শিবের উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে।
অতএব, পাণিনির পুরো নাম হলো:-
আহিক দাক্ষিপুত্র শালাঙ্কি শালাতুরীয় পাণিন্‌ পাণিনি।
এই নামের মধ্যে পাণিনির ইষ্ট,মাতা,পিতা, জন্মস্থান, গোত্র সবকিছুর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
এবার আসা যাক, তাঁর ব্যাকরণ সম্বন্ধে।পাণিনির আগে কি ব্যাকরণ ছিল না? ছিল। বেদের যে ষড়ঙ্গ অর্থাৎ ৬ টি অঙ্গ (শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত ও জ্যোতিষ) তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাকরণ।
বেদ মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে হলে, ভাষাতত্ত্ব, (Linguistics), উচ্চারণ বিধি বা (Phonetics ) এবং ব্যাকরণ শাস্ত্র(Grammar) এই তিনটি বিষয় ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাণিনির আগে মোট ৮ টি ব্যাকরণের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেগুলি হলো:- ঐন্দ্রং, চান্দ্রং, কাশকৃৎস্নং, কৌমারং,সারস্বতং , আপিশলং, শাকলং এবং শাকটায়নং। এর মধ্যে শাকটায়নং ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ।
পাণিনি এইসব ব্যাকরণ ভালভাবেই পড়েছিলেন এবং এইসব ব্যাকরণ থেকে অনেক কিছু নিয়েছেন। তিনি এইসব ব্যাকরণের ভুল ধারণা গুলিকে বাদ দিয়েছেন এবং শেষ পর্য্যন্ত সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন।
পাণিনি তাঁর ব্যাকরণে বৈদিক ভাষা (ছান্দস) এবং আঞ্চলিক ভাষা ( লৌকিক) এই ২টি ভাষাকে গ্রহণ করেছেন। এই ব্যাপারটি পৃথিবীর কোন ব্যাকরণে আগেও ঘটেনি এবং পরেও না।
এখানে বলে রাখা ভাল, রামায়ণে যখন সুগ্রীব ছদ্মবেশে হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন রামচন্দ্রের পরিচয় জানতে, তখন হনুমানের কথা শুনে, রামচন্দ্র লক্ষণকে বলছেন যে হনুমান পরিশীলিত ও ব্যাকরণ সম্মত কথা বলছেন। রামচন্দ্র এও বলছেন যে হনুমান ব্যাকরণ বেশ ভালভাবে আয়ত্ত করেছেন।
সুতরাং প্রাচীন যুগে যে ব্যাকরণের চর্চা ছিল, এব্যাপারে কোন বিতর্ক উঠতে পারে না।
এখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, পাণিনি কি এমন করেছিলেন? এবার আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।
পাশ্চাত্যের প্রাচীন ভাষা হল, প্রধানত গ্রীক ও ল্যাটিন। ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষা হল সংস্কৃত। আমাদের দেশে, প্রধান ভাষা হল ১৫ টি। এই ১৫ টি প্রধান ভাষার উৎপত্তি কিন্তু সংস্কৃত।
সংস্কৃত সাহিত্যের যে ভাণ্ডার, তা অকল্পনীয়। এই সংস্কৃত সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ হলো ঋগ্বেদ।
বেদোত্তোর যুগে পাণিনি তাঁর সমসাময়িক বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন।
বলা হয় পাণিনি হিমালয়ে গিয়ে ১৮ দিন ধরে শিবের তপস্যা করে শিবকে সন্তুষ্ট করেন। নৃত্যের ভঙ্গীতে শিব ১৪ বার ঢক্কা বা ঢাক বাজান।প্রতিবার ঢাক বাজানোর সাথে এক একটি নতুন শব্দের সৃস্টি হলো। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, নটরাজ মূর্ত্তি শিবের আর একটি প্রতিরূপ। নটরাজ মূর্ত্তি পৃথিবীর ছন্দ এবং তালের রূপক।ঢাকের শব্দ ছন্দ এবং তালের সমার্থক।
এখানে মনে হতে পারে, তালবাদ্য থেকে কি বর্ণের সৃষ্টি হওয়া কি সম্ভব? বলে রাখা ভাল প্রতিটি তালবাদ্যের বোল অথবা বাণী বিভিন্ন বর্ণের সাহায্যেই তৈরী হয়েছে।
তবলার বোল ‍‌ : ‘ধিন ধাগে তেরে কেটে’, পাখোয়াজের বোল: ‘তেটে কতা গদি ঘেনে’, ঢোলের বোল: ‘টাক ডুমা ডুম্ ডুম্’ , খোলের বোল: ‘ঝাগুড় ঝাগুড় ঝিনি ঝিনি ঝিনি’, ইত্যাদি সব কিছুই বিভিন্ন বর্ণের সমাহার। তালবাদ্যের বোল অথবা বাণীর মাধ্যমে সমস্ত বর্ণকে প্রকাশ করা যায়।
এবার, নৃত্যের ভঙ্গীতে শিব ১৪ বার ঢক্কা বা ঢাক বাজানর পর এক একটি নতুন শব্দের সৃষ্টি হলো। প্রতিটি শব্দ বিভিন্ন বর্ণের সমষ্টি। শব্দগুলো হল:-
১) অ ই উ ণ্ ২) ঋ ৯ ক্ ৩) এ ও ঙ্ ৪) ঐ ঔ চ্ ৫) হ য ৱ র ট্ ৬) ল ণ্ ৭) ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্ ৮) ঝ ভ ঞ ৯) ঘ ঢ ধ ষ্ ১০) জ ব গ ড দ শ্ ১১) খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্ ১২) ক প য্ ১৩) শ ষ স র্ ১৪) হ ল্ ।

বলা হয়, শিবের উপদেশে, পাণিনি এই শব্দগুলিকে ১৪ টি সূত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন।
এই ১৪ টি সূত্র শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর সূত্র । এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। এই শিবসূত্রজালের জন্য পাণিনি বিখ্যাত, এবং তাই তিনি অন্যান্য বৈয়াকরণদের থেকে একেবারে আলাদা।
শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম সংজ্ঞা।সেজন্য, এটির আর ১ টি নাম সংজ্ঞাসূত্র। মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি এগুলোকে আরো সংক্ষিপ্ত করলেন। নাম দিলেন:- প্রত্যাহার সূত্র। প্রত্যাহার মানে সংক্ষেপিত।
এক বা একাধিক সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণটি জোড়া দিয়ে যে শব্দটি তৈরী হয় তাকে প্রত্যাহার বলে। যেমন ‘অণ্’ একটি প্রত্যাহার,যার অর্থ অইউ । অক্ একটি প্রত্যাহার যার অর্থ অইউঋ৯।
আবার ‌‘অচ্’ প্রত্যাহারটির মানে অইউঋ৯এওঐঔ। প্রকৃতপক্ষে অণ্, অচ্, অল্, ইক্, উক্, জশ্, হল্ প্রভৃতি প্রত্যাহারগুলি এক ধরণের ‘কোড’বা ‘ক্রিপ্টোগ্রাফি’(সাংকেতিক ভাষা) যার সাহায্যে পাণিনির ব্যাকরণের অনেক সূত্র তৈরী করা হয়েছে। পাণিনির ব্যাকরণে এরকম ৪৪ টি প্রত্যাহার আছে। প্রথম প্রত্যাহারটি ‘অণ্’ হওয়ায় শিবসূত্রকে অণাদি(অণ্-আদি) সূত্রও বলা হয়। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ‌‘অচ্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত স্বরবর্ণ এবং ‘হল্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং ‘অল্’ প্রত্যাহার টির মধ্যে সমস্ত বর্ণগুলি রয়েছে। সুতরাং ‘অল্’ মানে ALL বোঝা যেতে পারে। তাহলে শিবসূত্রজালের বিভিন্ন নামগুলি হোলো:-
শিবসূত্র
মহেশ্বরসূত্র
সংজ্ঞাসূত্র
প্রত্যাহারসূত্র
অণাদিসূত্র
এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার আছে। চর্তুদশ সূত্রের প্রত্যেকটির শেষে হসন্তযুক্ত যে বর্ণগুলি আছে সেগুলি ‘ইৎ’ হয়। পাণিনির ব্যাকরণের ভাষায় ‘ইৎ’ মানে লোপ পাওয়া, কিন্তু বিনষ্ট হওয়া নয়। উদাহরণ:- ‘অণ্’ মানে অইউ। এখানে ‘ণ্’ বর্ণটি ‘ইৎ’হয়েছে। সমস্ত প্রত্যাহারের শেষের বর্ণটি ‘ইৎ’ হবে, যা পৃথিবীর অন্য কোন ব্যাকরণেই নেই।

শিবসূত্র জালের বর্ণমালাকে ভিত্তি করে সমকালীন বৈদিক এবং সংস্কৃত ভাষার ওপর পাণিনি তাঁর সুবিখ্যাত অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ রচনা করেন। পাণিনির ব্যাকরণে মোট ৩৯৭৮ টি সূত্র আছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লেখা এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাকরণ সারা বিশ্বের কোনও পণ্ডিত রচনা করতে পারেন নি। পরবর্তী কালে পাণিনির ধারণা নিয়ে অন্যান্য দেশের ব্যাকরণ গুলি লেখা হয়েছে।
অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ শুধু ব্যাকরণ নয়, এটি হলো ভাষার বিজ্ঞান। পাণিনির সংস্কৃত বেদের ভাষা থেকে সরল হলেও তা একটি জটিল ভাষা। তাই প্রবন্ধের আরম্ভেই বলেছিলাম; সংস্কৃত শিখে পাণিনি পড়তে হয়। না হলে পাণিনির সন্ধির সূত্রগুলি বুঝতে অসুবিধা হয়। প্রচুর পড়াশোনা এবং কোন ভাষ্যকারের সহায়তা ছাড়া পাণিনির সূত্রগুলি বোঝা যায় না। পাণিনি তাঁর ব্যাকরণে শব্দের উৎপত্তি, ধ্বনিতত্ত্ব, বর্ণমালা, উচ্চারণবিধি, সন্ধির নিয়ম নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর সমকালীন প্রতিটি শব্দের ব্যূৎপত্তি নির্ণয় করেছেন এবং ৩৯৭৮ টি সূত্র সাহায্যে অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণটি রচনা করেছেন। ব্যাকরণের প্রধান বিষয়বস্তু হলো ভাষা। তাই ভাষাতত্ত্বের বিশ্লেষণ নিয়ে পণ্ডিতেরা পুরুষানুক্রমিক ভাবে পাণিনির ব্যাকরণে ওপর চিন্তাভাবনা করে চলেছেন। পাণিনির সূত্রগুলি বহুদিন ধরে ব্যাকরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ বলেছেন পৃথিবীর সমস্ত ভাষার উৎস হলো পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ। পাণিনির সময় থেকে ভাষা একটা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে।
তাঁর সময় থেকেই এই ভাষার নাম হয়েছে সংস্কৃত (মার্জিত) যা প্রাকৃত (অমার্জিত) থেকে আলাদা।প্রাকৃত ভাষা প্রাকৃতিকভাবেই অর্থাৎ নিজের থেকেই গড়ে উঠেছিল।
এবার পতঞ্জলির কথায় আসা যাক। পতঞ্জলির কথা না বললে পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।পতঞ্জলি ছিলেন খ্রীস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর লোক এবং ভোজপুর নিবাসী ব্রাহ্মণ। পতঞ্জলি ছিলেন পাণিনির একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি পাণিনিকে আচার্য্য, ভগবান, মহর্ষি এইসব নামে সম্বোধন করেছেন। পাণিনির ব্যাকরণের ৩৯৭৮ টি সূত্রর মধ্যে পতঞ্জলি মাত্র ১৭২০ টি সূত্র বেছে নিয়েছিলেন, যে গুলো সমালোচিত হয়েছিল। কে প্রধানতঃ সমালোচনা করেছিলেন? ইনি হলেন বার্ত্তিককার কাত্যায়ন। পাণিনির উত্তরসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলেন এই কাত্যায়ন। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম হলো বার্ত্তিক। তাই তিনি বার্ত্তিককার কাত্যায়ন নামে পরিচিত। তাঁর জীবনকাল সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু জানা যায় না। কিন্তু তিনি যে পাণিনির চেয়ে ন্যূনতম ১ শতাব্দী পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তার কারণ বার্ত্তিককার কাত্যায়ন তাঁর গ্রন্থে বেশ কিছু ভাষা ব্যবহার করেছেন যেগুলি পাণিনির সময়ে প্রচলিত ছিল না। বার্ত্তিককার কাত্যায়ন ব্যাকরণের অন্য এক শিক্ষাধারায় গড়ে উঠেছিলেন যার নাম কাতন্ত্র বা কলাপ ব্যাকরণ। বলা হয়, দেবসেনাপতি কুমার কার্ত্তিক এর স্রষ্টা। কাত্যায়ন, পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণের কিছু সূত্রের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি কিছু সূত্রের পরিবর্তন, কিছু সূত্রের পরিবর্ধন এবং কিছু সূত্রকে পরিত্যাগ করেন।তাছাড়া তিনি তাঁর সময়ে প্রচলিত কিছু নতুন শব্দগুলির জন্য অতিরিক্ত কিছু সূত্র গঠন করেন।

এবার যাঁরা পাণিনিকে অনুসরণ করতেন তাঁদের মনে হলো কাত্যায়ন, পাণিনির ওপর সুবিচার করেন নি, উপরন্তু তাঁকে বিকৃত করেছেন।অনেকেই চেস্টা করেছিলেন এই বিকৃতি থেকে পাণিনিকে বাঁচাবার, কিন্তু সফল হন নি। প্রথম যিনি সফল হয়েছিলেন, তিনি পতঞ্জলি। তাই পতঞ্জলি এখানে প্রাসঙ্গিক। পতঞ্জলি যে ৪ টি বই লেখেন, সেগুলো হলো ১) যোগদর্শন(এটি ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম; সাংখ্য, বেদান্ত, যোগ, বৈশষিক, ন্যায় এবং মীমাংসা)।২) মহাভাষ্য, এগুলি তিনি লিখেছিলেন চিত্তশুদ্ধির জন্য।৩) আয়ুর্বেদ, দেহশুদ্ধির জন্য।৪) ব্যাকরণ, বাক্ শুদ্ধির জন্য।(এই ৪ পতঞ্জলি ১ ই ব্যক্তি কিনা; তাই নিয়ে মতভেদ আছে, তবে সেটা প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা করা যাবে সময় এবং সুবিধা মত।)
পতঞ্জলির মহাভাষ্য প্রন্থটি গ্রীক পণ্ডিত প্লেটোর মত সংলাপের ভঙ্গিতে লেখা। তাঁর গ্রন্থে পাণিনির কিছু সূত্রকে বিকল্পভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর বর্ণনা দেখলে মনে হয় পাণিনির বিরুদ্ধবাদীদের নিরস্ত করার জন্যই তিনি এই কাজ করেছিলেন।
পাণিনির সমালোচনা করে বার্ত্তিককার কাত্যায়ন যা লিখেছিলেন এবং কাত্যায়নকে সমালোচনা করে পতঞ্জলি যা লিখেছিলেন সবগুলোই শেষ পর্য্যন্ত পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণেরই অঙ্গ হয়ে উঠল। সেই জন্য পাণিনির অস্টাধ্যায়ী ব্যাকরণকে ত্রিমুনি ব্যাকরণ বলা হয়। এই ৩ জনের সম্মিলিত অবদানের জন্য সাধারণভাবে এই ব্যাকরণকে পাণিনি ব্যাকরণ, পাণিনি তন্ত্র বা পাণিনিনয় নামে বলা হয়ে থাকে।
পাণিনির এই বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার জন্য শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে:- “ AHIK DAKHSHIPUTRA SALANKI SALATURIYA PANIN PANINI was not only the best grammarian of Vedic and Sanskrit language, but also a Sacrificer, Priest, Logician, Philosopher, Mathematician, Astronomer, Poet and politician. He was the precursor of the most intelligent and powerful computing system and the probability for Physics of the Cosmos. In that way his ‘PANINI MACHINE’ is the most powerful model of recent Computers.”
আহিক দাক্ষিপুত্র শালাঙ্কি শালাতুরীয় পাণিন্‌ পাণিনির প্রতি আমাদের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও শতকোটি প্রণাম জানিয়ে এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি শেষ করলাম।



ঋণ- বন্ধুবর ডঃ প্রদীপ চক্রবর্তী(পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুযোগ্য শিষ্য) রচিত প্রসঙ্গ পাণিনি এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট।

Saturday, January 3, 2009

श्री रामकृष्ण ध्यान मंत्र

ॐ हृदय कमल मध्ये राजितम निर्बिकलपं ,सद -असद -अखिल -भेदातितम एक्स्वरुपम।
प्रकृति - बिकृतिशुनयम नित्य मानन्द मूर्तिम, बिमल परम हंसं रामकृष्णम भजामः॥

निरुपममति सुखस्मं निस्प्रपोंचम निरीहं , गगन सदृशमीशं सर्बभुतादी बासम।
त्रिगुन रहित -सच्चिद ब्रम्हरूपं बरेनयम,
बिमल परम हंसं रामकृष्णम भजामः॥

बितारितुमबतीर्नम ज्ञान भक्ति -प्रशान्तिः,प्रणय गलितचित्तं जीब दू:ख-असहिस्नुम ।
धृतसहज समाधिम चिन्मयम कोमोलांगम
बिमल परम हंसं रामकृष्णम भजामः॥