Sunday, November 28, 2010

ভুলভাল (শারদীয়া “ সর্বজয়া” ১৪১৭)

শিরোনামে যা আছে, সেটা ঠিকই পড়েছেন!!! এমন কি চশমা চোখে দিয়ে পড়লেও বাঙ্গাল আর ঘটির লড়াই কবে থেকে চালু হয়েছে, তা ঐতিহাসিকরাই বলতে পারবেন এই বিষয় নিয়ে বহু পত্র পত্রিকায় লেখালেখি, চলচিত্র তৈরী, মুখে মুখে ছড়া চালু-ও হয়েছিলসরলীকরণ করে বলা যায়, দেশভাগের পর, বাঙ্গালী হলেও দুই ভিন্ন মুখী সংস্কৃতির সংঘর্ষ, বিশেষ করে রান্না বান্না আর ফুটবলের ক্ষেত্রে এই তথাকথিত সংঘাতের সৃষ্টিদুটো প্রচলিত ছড়া বলি
বাঙ্গাল মনুষ্য নহে
বিদঘুটে জন্তু
লাফ দিয়ে গাছে ওঠে
ল্যাজ নাই কিন্তু!!!!!!
উত্তরে, এই ছড়াটি চালু হলো
বাঙ্গাল মনুষ্য নহে
দেবতার তুল্য
এ দেশের ঘটিরা
বুঝিবে কি মূল্য!!!!
৬৪ বছর পর এসবের আর মূল্য সত্যিই নেইসবই ইতিহাস! যেটা আছে, সেটা পুরোনো স্মৃতি নিয়ে হাসাহাসিআসুন, সেই ভুলে যাওয়া দিনগুলোকে নিয়েই এই ভুলভাল লেখাটা শুরু করি
দেশভাগ হয়ে গেছেমদনেরও চাকরী গেল! ওপারের জমিদার বাবু মদনকে ডেকে বললেন-( কথপোকথন বাঙ্গাল ভাষাতেই হয়েছিল, কিন্তু আমি সেটা ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেলাম)
-
বুঝলি রে! তোর রান্না খেয়ে খেয়ে আর কারো রান্না মুখে রুচবে না জানি, কিন্তু আমার আর মাইনে দিয়ে তোকে রাখার সামর্থ্য নেইতাছাড়া, আমি ঘটি বাটি বেচে দিয়ে কোনরকমে ওপারে চলে যাচ্ছি কোথায় থাকব জানি নাতোকে বাপ পিতেমোর রাখা এই দুটো মোহর দিয়ে গেলামভালো থাকিস
মদন কিছু দিন ধরেই আঁচ পাচ্ছিল এরকম কিছু একটা ঘটবেবিয়ে সাদী করে নিবাপ মাও মরে ভূততিনকূলে কেউ নেইথাকার মধ্যে পিতৃপুরুষের দেড় কাঠার ভিটেটাতিন চার দিন ভেবে চিন্তে, মদন আবদুল চাচাকে ভিটেটা বেচেই দিলো
যে টুকু পয়সা পেলো, সেটাই নিয়ে পাড়ি দিয়ে এসে মদন এসে পৌঁছল এপারের এক জেলাতেছোট্ট এক চিলতে বাসা ভাড়া করে মদন থিতু হলো

রান্না ছাড়া কিছু জানা নেই!!!! রোজই কাজের সন্ধানে বেরো্য় আর ফেরে এক বুক হতাশা নিয়ে
ঘুরে ঘুরে মদন ভাবল, এপারে আসাটা কি ভুল হলো! ওপারে থাকলেও বা কি হতো!!! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা পড়ল জমে থাকা জলের ওপর! কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি! ঠিক সেই সময় মোটোর গাড়ীতে উঠছিলেন স্থানীয় জমিদার গৃহিণীচলকে ওঠা জল গিয়ে পড়ল তাঁর দামী শাড়ীর ওপর! আর যায় কোথায়! পায়ের চটি খুলে সপাটে মদনের গালেতারপর গটমট করে মোটোর গাড়ীতে উঠে চলে গেলেন! সঙ্গে তীর্যক মন্তব্য-
বাঙ্গাল গুলো রাস্তাটাও দেখে চলতে পারে না!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
মদন ভেবে অবাক! তাকে বাঙ্গাল বলে চিনলেন কি করে ওই মা জননী? ভেবে কোনো কূল কিনারা পেল না! শেষে রাস্তার ধারের মুদি দোকানে বসে ১ পয়সার মুড়ি কিনে চিবোতে লাগলঅন্তত পেটের জ্বালাটা তো মিটুক! অপমানের জ্বালাটা আপাতত থাক!
দোকানী হেসে বলল: -বাপু হে! ওই ছোট্টো টিনের বাক্সর ওপর ভালেবাসা কথাটা কেন লিখেয়েছ? তুমি তো দেখছি এক্কেরে খাজা বাঙ্গাল!!!
মদন,বাড়ী থেকে বেরুলে তার সমস্ত টাকা পয়সা, জামা কাপড় বাবার বিয়ের এই ছোট বাক্সটাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়বিদ্যুৎ খেলে গেল মদনের মাথায়!!!!!!
এবার বুঝতে পারল, মা জননী কেন তাকে বাঙ্গাল বলেছিলেন!!!!!

দোকানীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল. মা জননী কার স্ত্রী!!! ভদ্রলোক বিশাল পয়সার মালিক আর তাঁকে সবাই জমিদার বাবু বলেই ডাকেমা লক্ষ্মীর কৃপায় পয়সার কোন অভাব নেই! রোজ বেলা ১২ টা থেকে ৩ টে কাছারী বাড়ীতে বসেন, পাত্র মিত্র সহবিশাল পয়সার মালিক হলেও ভদ্রলোক বেশ দয়ালু! রোজ তাঁর বাড়ীতে প্রায় ১০০ জনের পাত পড়ে, আর বেশ কিছু বেকার লোক জনও থাকেন ওনার বাড়ীতে
তখন বাজে বেলা একটাজল খেয়ে মদন কপাল ঠুকে বেরিয়ে পড়ল জমিদারবাবুর কাছারী বাড়ীর দিকে
তখন লোকজন একটু কমবাবু আয়েস করে গড়গড়া টানছেন!!! মদনকে দেখে বাবু ভুরু কুঁচকে বললেন- কি চাই? গম্ভীর স্বরের সঙ্গে মদন পরিচিততাই না ঘাবড়ে বলল- হজুর, আমি ওপার থেকে আসছিরান্না ছাড়া তো কিছু জানি না! হজুর যদি দয়া করে একটা রান্নার কাজ দেন!!!!
-
ওহে! তোমার ওই বাঙ্গাল রান্না এখানে কারুর মুখেই রুচবে না! আর তা ছাড়া, আমার চার চার জন রান্নার লোক! তোমাকে রেখে কি লাভ?
-
হজুর আমার রান্না একবার খেয়েই দেখুন!!!
-
বেশ! খেতে পারি, কিন্তু এমন জিনিস তোমাকে রেঁধে খাওয়াতে হবে, যেটা আমি জীবনে খাই নি!! পারবে???
মদন এক মুহূর্ত্ত ভেবে বলল- পারব হজুর! কিন্তু দশ দিন সময় দিতে হবে!
বাবু বললেন- বেশ! তা যদি পার, তবে তোমাকে আমি কাজে বহাল করবওরে! কে আছিস! এ ব্যাটাকে নিয়ে গিয়ে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দে! আর রান্নার জিনিস কিনতে যা পয়সা লাগবে দিবি! যাও বাপু! এখন আর বিরক্ত করো না!

মদন লাফাতে লাফাতে গিয়ে ওর ভাড়া বাড়ীটা ছেড়ে দিয়ে বাবুর বাড়ী এসে উঠল
সেই যে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকল, খাওয়া আর টুকটাক কেনাকাটি করা ছাড়া মদন আর বাবুর বাড়ীর বাইরে আর বেরোয় না
ক্রমে ক্রমে দিন গড়িয়ে যাচ্ছেদশদিনও হয়ে গেলবাবুর আর মনে নেই! কে কার খবর রাখে? মদন কিন্তু ঠিক মনে রেখে সময় মত তার নতুন রান্না এক বিরাট কড়াই করে হাজির করল বাবুর সামনে
বাবুকে একটা বড় বাটী করে মদন খেতে দিলমুখে দিয়েই লাফিয়ে উঠলেন!
-
অমৃত! অমৃত! ওরে গিন্নীমাকে ডেকে নিয়ে আয়! ওনাকেও চাখাই! গিন্নীমা এলেন, খেলেন কিন্তু মদনকে চিনতে পারলেন না! চেনার কথাও নয়দশদিনে গরীবের কথা কে আর মনে রাখে? রান্না খেয়ে গিন্নীমাও লাফিয়ে উঠলেন!
একই কথা মুখে-অমৃত! অমৃত! পারিষদেরাও খেলতাদেরও একই কথা! রান্না যারা করত, তারা দৌড়ে এসে ঘটনা দেখে হতভম্ব! ওদের মধ্যে একজন বলল- সবই তো হল!! কিন্তু বাবুকে নতুন জিনিস কি খাওয়ালে হে, মদন?
বাবুরও মনে পড়লঞ্যাঁ!! তাই তো! বল হে, কি সেই নতুন জিনিস!!!! গিন্নীমাও সুরে সুর মেলালেন!

মদন শুরু করল-
কাছারী বাড়ীতে ঢোকার সময় দেখি একগাদা পুরোনো জুতো! জিজ্ঞেস করে জানলাম- ওগুলো চাকর বাকরদের বাতিল জুতো!!! তা ওই জুতো গুলো থেকে গোড়ালী গুলো খুলে নিয়ে, এই দশদিন ভিনিগারে ভিজিয়ে রেখে রান্না করেছি!! অনেক ভেবে দেখলাম বাবু আর গিন্নীমা, আপনারা তো অনেক জিনিস খেয়েছেন, কিন্তু বাঙ্গাল রান্না আর চাকরের জুতো তো আর খান নি!!!!!!! তাই আর কি!!!!


............
সমাপ্ত..........

Saturday, May 22, 2010

একটি কথপোকথন (হয়তো বাস্তব, হয়তো কাল্পনিক)

-
Good Morning, Sir.
- সুপ্রভাত।
- In fact, কাল আপনার acting দেখলাম।
- ও!!!! তাই নাকি?
- Yes, Sir. It was wonderful.
- ধন্যবাদ।
- ওটা, Tagore drama ছিল তো?
- হ্যাঁ, রক্তকরবী!
- That’s great!
- আপনি দেখেছেন, এটা আমার সৌভাগ্য।
- No no. It’s my pleasure!
- বাঃ! আপনি তো বেশ রবীন্দ্র অনুরাগী!
- In fact, আমি যখন লান্ডনে ছিলাম, তখন আমি ওখানকার বাংলা আ্যসোসিয়েশনের Secretary ছিলাম। বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছি। পরে মুম্বাই এসেও বাংলা সাহিত্যের গুরু হিসেবে সবাই মানত। In fact, আমি Conversation এ, বাঙ্গালী পেলে, English word use ই করি না। বাড়ীতেও strict instruction ই দেওয়া আছে। আমরা pure Bengali তে কথা বলি। By the way, আপনার সাথে আমার formal introduction ই হয় নি। (হাত বাড়িয়ে) আমি জ্যাজি বোস! আসলে জয়ন্ত বোস। ওই short এ জ্যাজি বোস!
- ও! আমি ঘনা ভশ্চাজ!
- Pleased to meet you!
- আমিও।
- Thanks. আচ্ছা কাল কি occasion এ আপনারদের drama staged হলো?
- শ্রীরবীন্দ্রনাথের সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমাদের নাট্যসংস্থা “ রবীচ্ছটা” র সশ্রদ্ধ নিবেদন।
- What? Tagore এর শ্রাদ্ধ!!!!!!
- না না, শ্রাদ্ধ নয়! সার্দ্ধ
- What’s that?
- সার্দ্ধ মানে হাফ অর্থাৎ অর্দ্ধেক। শত মানে একশ। তাহলে সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ মানে ১৫০ তম জন্মদিন। আপনাকে কি আর বোঝাব,মি. বোস! আপনি তো বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছেন!!! আচ্ছা, স্যাটা বোস আপনার কেউ হন কি?
- Who is he?
- উনি একটি বড় হোটেলে কাজ করতেন!
- Oh! Sheet! আমার ও সব lower level এর লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
- ঠিক! ঠিক! তা, ঘনাদা, টেনিদা, ফেলুদা;এদের চেনেন তো?
- দেখুন, মুম্বাইতে দাদা, ভাই এসব Criminal দের বলে। তা, are they criminals of Calcutta?????
- Criminal বলে Criminal!!!!!! এরা সব বাঙ্গালীদের সব কিছু ডাকাতি করে নিয়ে গেছে!!!!!
My God! Police inactive???????? আমার লালবাজারে চেনাশোনা আছে। বলুন তো ওদের area of operation!
- উম!! ঘনাদা, বেহালার বনমালি নস্কর লেন, টেনিদা আমর্হাষ্ট ষ্ট্রীটের পোষ্ট আপিসের কাছে পটলডাঙ্গা আর ফেলুদার সাউথে রজনীকান্ত সেন লেন।
- এদের Good name গুলো বলুন তো!
- ঘনাদা= ঘনশ্যাম দাস, টেনিদা= ভজহরি মুখুজ্জ্যে আর ফেলুদা= প্রদোষ . সি. মিটার! তবে, সাবধান!
- কেন?
- ঘনাদা আর টেনিদা কিন্তু সব রকম মার্শাল আর্ট জানে। ফেলুদার তো কথাই নেই। একটা সাংঘাতিক অস্ত্র আছে ওনার!
- What’s that?
- মগজাস্ত্র।
- Is it a deadly weapon? More than atomic ones?
- হ্যাঁ, মি. বোস!!!!
- হুম!!! Then, I have to contact Mr. A.K. Anthony.
- কে কে?????
- আরে, our defense minister. I mean, India র।
- কেন?
- কি হবে?
- আরে,These deadly weapons should not be with them. Any way, don’t worry. I will take care. কাল আমাদের Complex এ একবার আসবেন?
- কেকেকেননননননন?
- আরে , আমরাও আমাদের Complex এ Tagore centenary করছি। আমার মেয়ে ওখানে Tagore এর সেই বিখ্যত কবিতাটা recite করবে।
- কোনটা?
- ওই যে, হারুদের ডালকুকুরে etc etc.
- আমার শরীর খারাপ করছে।
- My God! Should I give a tinkle to my family doc?
- আরে না না ! বাড়িতে শুয়ে এট্টু রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
- OK, take care!
সকালটা অন্যদিনের মত শুরু হলো না! অনিলের দোকানে চা খেতে গিয়ে ২ টাকা দিলাম। অনিল ১.৭৫ পয়সা ফেরত দিল। চা এর দাম ৪ আনা?????
অনিল, পয়সা ফেরত দিলি..... মাথা খারাপ হলো নাকি?
“আরে না দাদা, দাম তো ঠিকই নিয়েছি।”
আমার কি মতিভ্রম হলো!!!!!!! বাড়ী ফিরতেই গ্যাসের- বিকাশ! সিলিণ্ডার দিয়ে ১০০ টাকা নিল! কি হচ্ছে টা কি? বুঝতেই পারছি না! বাজারে গেলাম,
আলু- ১ টাকা, চাল-২ টাকা, রুই- ২০ টাকা করে কিলো!
ধূস্ বলে হাতটা আকাশে ছুঁড়লাম। আড়াই বছরের নাতনি – দাদা, ওঠ, চা খাবি না?
বাঙাল গেছে শিয়ালদার বাজারে। তরকারি পট্টীতে প্রায় সব ঘটি।
“বাইগনের কিলো কত?”
ঘটি হেসে কুটিপাটি, বলে- কি বললে মাইরী!
বাঙাল তো!!! চেইত্যা গেল।
“ক্যান? বাইগন কইসি তো কইসি, তয় হইসে টা কি?”
ঘটি—ছোঃ! বেগুন বলতে পারো না?
বাঙাল:- ক্যান, বাইগনরে বেগুন কমু ক্যান?
ঘটি:- আহা, বেগুন বললে মিষ্টি শোনাবে!
বাঙাল:- তাইলে, বাইগনরে বেগুন না কইয়া, প্রাণনাথ কইলেই হয়, আরও মিষ্টি শোনাইবো! তা. তোমার প্রাণনাথের কিলো কত কইর্যাি ?
বস্তাপচা গপ্পো, কিন্তু বললাম বিশেষ কারণে। দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ নাতনী ঠেলা দিয়ে বলছে- এই দাদা, হালুম নানা হয়েছিস নাকি? শুনেছি আমার নাক ডাকে। কিন্তু নাক তো আর মিষ্টি করে ডাকে না!!! বিয়ের পর তিনি তো কানে কালা হয়েছেন বলে; বলে বেড়ান। কিন্তু এবার আমি কি করি? তিনি তো কোনোদিনই প্রাণনাথ বলে ডাকবেন না! নাতনিটাও! “দাও টু ব্রুটাস!”

শেষে ঠিক করলাম ও যখন বড় হবে; রবীন্দ্রনাথের বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ থেকে পড়ে শোনাব----

“শুধু বেঘোরে ঘুমঘোরে,
গরজে নাক বড় জোরে।
বাঘের ডাক মানে পরাভব,
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।"

ওঁ শান্তিঃ!!! ওঁ শান্তিঃ!!! ওঁ শান্তিঃ!!!
‘আমাদের পাড়ার রাজু খুবই ভোলা ভালা ছেলে। যা করতে যায়, তাতেই গণ্ডগোল। “চন্দ্রগুপ্ত” নাটক হবে, রাজু বলল ওর একটা পার্ট চাই। ডাইরেক্টর সাহেব যতই বলে, “রাজু- তুই বাবা এবার খ্যামা দে, পরের বার পার্ট দেবো”, ততই রাজু নাছোড়বান্দা! শেষে ঠিক হলো- রাজু, সেলুকাসের রক্ষীর পার্ট করবে। একটাই ডায়ালগ থাকবে-“ রক্ষী, বন্দী করো”। তারপর রাজু আর রিহার্সালে আসে না। জিজ্ঞেস করলেই বলে- ও স্টেজে ম্যানেজ করে দোবো! এদিকে তখন নতুন ক্যাটারিং চালু হয়েছে। রাজু ক্যাটারিং এর ব্যাবসা চালু করেছে। তাই ও রিহার্সালে আসতে পারছে না। প্রথম যে ক্যাটারিং টা রাজু করল, তাতে ওর ভূয়সী প্রশংসা হলো। সেটা ছিল, শ্রাদ্ধের ক্যাটারিং। শুধু রাজু একটাই গণ্ডগোলিস করেছিল। শ্রাদ্ধবাড়ীতে একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল- “আচ্ছা! যাঁর শ্রাদ্ধ, তাঁকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?”
এই ক্যাটারিং এর ১৫ দিন পর একটা বিয়েবাড়ীর ক্যাটারিং। রাজুর তদারকিতে ফিস ফ্রাই ভাজা হচ্ছে। মেয়ের বাবা বললেন- “রাজু, একটা ফিস ফ্রাই দাও তো! টেষ্ট করে দেখি!” রাজু দুটো ফিস ফ্রাই একটা প্লেটে দিয়ে বলল- “ নিন কাকু, খান”। মেয়ের বাবা-“ না হে রাজু, টেষ্টটা ঠিক খুলছে না”। রাজু অম্লান বদনে বলল- “কেন কাকু? তেলটা তো ওই ১৫ দিন আগেকারই!!!!!!”
‘রাজুর ইংরাজী শেক্সপীয়ারের মত! উচ্চারণটাও সুস্পষ্ট। যেমন- বিরিয়ানীকে বলে- ব্রানী। গ্রেভিকে বলে – গ্রাভী। এরকম আর কি!!! ,,,,তো রাজু কে বলা হলো- কিরে? তুই কি আজও রিহার্সালে আসবি না? রাজু বলল-“ ওই যে নতুন ফ্ল্যাট বাড়ী টা হয়েছে না!!! ওই যে গঙ্গা আ্যাপয়েন্টমেন্ট, ওখানে একটা কাজ ধরেছি।” আ্যাপয়েন্টমেন্ট? পটল বলল –“ আরে ওটা আ্যাপার্টমেন্ট”। রাজু- “ঠিক বলেছিস! ওই যে নতুন ষ্টেডি( এস.টি,ডি) বুথটার নীচে!!!”
রাজু, হঠাৎ একদিন মোটোরবাইক নিয়ে হাজির! আমরা হইহই করতেই, রাজু লাজুক হেসে বলল- এটা “ষ্টলমেন্টে” কিনলাম! রাজু আর একদিন এলো। আমরা বললাম, আজ রিহার্সালটা দিয়ে যা!!! রাজু দেখলাম, খুব ক্ষেপে আছে। বলল- মুড খারাপ! আমরা বললাম – কেন? রাজু- “ওই যে দেখিস নি? রাজুর গেঞ্জি........... পরুন! চারিদিকে লেখা আছে? তা সবাই আমার গেঞ্জি........... পরলে, আমি পরব কি?”
রাজু এসে একদিন বলল- “তেরো কাপ নুন” টা কি রে? আমরা বললাম- কোথায়? রাজু বলল- এই তো গড়িয়াহাটার মোড়ে। আমরা দৌড়লাম, দেখতে। পটলা শেষে উদ্ধার করল! ওটা ছিল—“তাঁতের কাপড় কিনুন। শাড়ীর দোকানের আ্যাড! “তাঁ,ড় কি” টা উঠে গেছে।
যাই হোক, শেষের সে দিন এলো! রাজুও এসেছে। সেজে গুজে রাজু রেডি। মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত!
রাজু বলল- বন্দী ই ই ই- রক্ষী করো
ড্রপসিন!
বুকী আজ এসেছিল আমার বাড়ী। খানিক্ষণ আড্ডায় জমে থাকলাম।
একটা ঘটনা শোনাল। আপনাদের সাথে ভাগ করে নি।
এক মহিলার দুই জামাই। বড় জামাই বাংলায় বি.এ পাশ, আর ছোটজন বাংলায় এম্. এ পাশ।
যা হয় আর কি!
ছোটজন, বড়কে পাত্তা দেয় না। বড় অবশ্য তাতে কিছু মনে করে না।
বড়জন, শ্বাশুড়িকে চিঠি লেখে- শ্রীচরণেষু, মা বলে।
ছোটজন কোনো চিঠি লেখে না। কারণ “চরণ” থেকে তো ও বড় থাকতে হবে।
শ্বাশুড়ি দুঃখ করে ছোটজনকে লিখলেন- তুমি তো কোনো খবরই নাও না আমার। বড়জন কত খবর নেয়, চিঠি লেখে!!!!
ছোটজন চিঠি লিখল- হাঁটুরেসু মা বলে।
চরণ থেকে তো উঁচু!!!!!!!
শ্বাশুড়ি জবাবে ছোটজনকে লিখলেন- ভাগ্যিস, তুমি ডবল এম্. এ পাশ নও!!!!!!!!!
এই মাত্র সুখেনের হোটেলে বাপ, ব্যাটা মিলে খেয়ে এলাম। “উনি” মে মাসের ১০ তারিখে আসছেন। বৌমার মায়ের শরীর খারাপ। বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিলাম।
খুব ভীড়! রোব্বারের বাজার। সুখেন, যেতেই ওর বৌ উমাকে হাঁক দিয়ে বলল- কাকা আসছে! ভালো মাংস দিবা, বুঝলা?
তারপর বলল- কাকা, মেয়েটার না রোমান্টিক ফিভার হইসে।
আমি- কি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
সুখেন- হঃ! কি আর কমু। এইমাত্র ডাক্তার দেখাইয়া আনলাম।
আমি- প্রেসক্রিপশান দেখি!
সুখেন- উমা! পেচছিপশানটা লইয়া আস ত!
প্রেসক্রিপশান আনতেই দেখি- লেখা আছে- রিউমাটিক্ ফিভার।
ও হ্যাঁ!
গত ১৯ তারিখ, ধর্মতলা গিয়েছিলাম এক বন্ধুর (পুং- আপনারা ভারচুয়ালি চেনেন তাকে) সঙ্গে দেখা করতে। টাইম ছিল বিকেল ৬.১৫- ৬.৩০ এর মধ্যে। মেট্রোর ( সিনেমা হল) সামনে অ্যাপো। আমি একটু আগেই পৌঁছে গেলাম। খিদেও পেয়ে ছিল। পাশের “ ম্যাড্র্যাস টিফিনে” গেলাম দোসা খেতে। খেয়ে, বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে দেখি, বাঁ পাশের রান্নাঘরের দরজায় লেখা আছে- “নো কাম”। বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
কত শিল্পী যে ছড়িয়ে আছে!!!!!!
আমরাই “ভুল-ভাল”
বুকী ঘোষের ওখানে অনেকদিন যেতে পারছি না!
তা,খুব দুঃখ করে; ও “ ভদ্রতার ব্যালান্স” নিয়ে আমায় ফোন করে ওর স্বরচিত ,এই শ্যামাসংগীতটা শোনাল
(সুর- রামপ্রসাদী)
দে মা আমায় বোতোল খুলে
যতই ভাবি আর খাব না,
সন্ধে হলেই যাই মা ভুলে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........

টাকাকড়ি নেই মা আমার
টাকা কামাই নানা ছলে
টাকাকড়ি নেই মা আমার ( উঁচু স্বরে)
টাকা কামাই নানা ছলে

(তাই) প্রাণ সঁপেছি, বাংলা মালে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........ ( খাদে)

রাস্তা দিয়ে, যাই হেঁটে মা
লোকে আমায় মাতাল বলে
রাস্তা দিয়ে, যাই হেঁটে মা
লোকে আমায় মাতাল বলে ( উঁচু স্বরে)
(তাই) বাংলা ধরেছি তোর চরণতলে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........ ( খাদে)


আমি শুনে “ঢিশ্”!!!!!!!!!!

ভুলভাল

কথাটা, মামলেট না ওমলেট? এই নিয়ে খুব মুশকিল!মামলেট বললে, লোকেরা বাঙ্গাল বলে খ্যাপায়! মামলেট কথাটা চিরকাল বলে এসেছি বা শুনে এসেছি। কি বলি তা’লে? মুশকিল আসান বুকী ঘোষ বলল- সিম্পল! এই কথাটা আমাকে বলেন নি, ঘনাদা! আরে,আদতে পোলট্রির ডিম তো বিদেশী , তাই বিদেশী ডিম হলে ওমলেট আর দিশি হলে মামলেট! খেল খতম! খেলার কথাতে মনে পড়ল,আই. পি. এলের খেলা চলছে এখন! ডট বল! নো বল! ক্যারম বল! ( ক্যারম খেলাও ঢুকে গেছে, সাধে কি আর টেনিদার চ্যালা, প্যালা বলেছিল- ক্রিকেট মানে ঝিঁ ঝিঁ খেলা!!!!!!)কত কিছু নতুন শব্দ!!!! জানলাম, ডট বল ডট পেন নয়। যে বলে রান হয় না, সেটাকেই নাকি ডট বল বলে! আর নো বল মানে বল নেই নয়। ( আমি এতদিন এটাই জানতাম) নো বল মানে, বল করার সময় ওই একটা বোলারস লাইন থাকে, সেটা যদি বোলারের পা পেরিয়ে যায়, তা হলে নো বল।( যাঁরা ক্রিকেট খেলা বোঝেন, এই অর্বাচীনকে ক্ষমা করবেন)
জানেন তো! পাড়ায় পাড়ায় আজকাল মন্দির গজায়! তা, আমাদের প্রিয় ক্রিকেটারেরও একটা চাটাই ঘেরা টেম্পোরারী মন্দির গজিয়ে উঠল। দেবতারা নানা পোজে মন্দিরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ খাঁড়া হাতে, কেউ গদা হাতে....ইত্যাদি। এখানেও আমাদের প্রিয় ক্রিকেটার ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে। যে কেউ বল হাতে পুজো দিতে পারে। পুরোহিতের পারমিশন নিয়ে প্রিয় ক্রিকেটার দেবতাকে বল করতে হবে। দর্শনার্থী, বল করার পর, প্রিয় ক্রিকেটার যদি-বাপী, বাড়ী যা বলেন মানে ছক্কা মারেন, তো দর্শনার্থীর দিন, খুব খুব ভালো যাবে। যদি চার মারেন, তো দর্শনার্থীর দিন, ভালো যাবে। সিঙ্গল বা ডাবল নিলে দিন মোটামুটি যাবে। ডট বলে হলে ৫০-৫০।
এক ক্রিকেট প্রিয় ভদ্রলোক “সুতানুটি ডে রাইডারস” এর জন্য গেলেন পূজো দিতে। “সুতানুটি ডে রাইডারস”পরপর কয়েকটা খেলাতে হেরে প্রায় যায় যায়। পুরোহিত, মন্ত্র পড়ে বল তুলে দিলেন ভদ্রলোকের হাতে । ভদ্রলোক দৌড়ে এসে বল করলেন প্রিয় ক্রিকেটার দেবতাকে।
বোল্ড!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!, মানে কাঠি গুলো সব ছিটকে গেল, বেল সহ ( এ বেল, সে বেল নয়)। তিনটে কাঠি মিলে উইকেট! কি উইকেড ব্যাপার!!!!!!!
পুরোহিত বললেন- সর্বনাশ! এরকম তো হয় না।
ভদ্রলোক- কি হবে?
পুরোহিত- দাঁড়ান, বল শুদ্ধ করতে হবে। দিন হাজার টাকা দিন!
অগত্যা মধুসূদন! কড়কড়ে দশটা একশ টাকার নোট বের করে দিলেন ভদ্রলোক!
পুরোহিত মন্ত্র পড়ে বল শুদ্ধ করে বললেন- “ ওঁ নো বলায় নমঃ”। বল শুদ্ধ হয়ে গেল, আর “আউটের” দোষ কেটে গেল। ফ্রি হিট! ভদ্রলোক মনের আনন্দে বল করলেন আবার! এবার কিন্তু -বাপী, বাড়ী যা । ভদ্রলোক মনের আনন্দে “ছপ্পর উপর কৌয়া নাচে, নাচে বগুলা, আরে রামাহো” গাইতে গাইতে মাঠে খেলা দেখতে গেলেন। তখন কি তিনি আর জানতেন, পুরোহিতের বাড়ীতে আয়কর হানা হবে????????
বলতেই ভুলে গেছি, ভদ্রলোক টেনিদা ভক্ত।
হলে কি হবে!!! ঘোর কলিকাল! পুরোহিতের প্রতিকার কাজেই লাগল না। পুস্করে স্নান করেও কলিকালে চন্দ্র গ্রহণ হচ্ছে। শুধু “ গেলাম আর এলাম” আর “ফেল”। আমাদের গর্ব টেনিদাই যা খেলল। “সুতানুটি ডে রাইডারস” হেরে ভূত! সবার মুখে শ্লোগান- খেলব, ক্যাচ ফেলব, হারবো রে! ললিত বাণী আর পাওয়ারের শক্তি প্রদর্শন।

“আসছে বছর আবার হবে” বলে ভদ্রলোক হাজারীবাগে ফিরে গেলেন। গত তিন বছরে ওই বিদেশি ওমলেট আর দেশী মামলেট মিলেমিশে একাকার হতে পারল না। “আসছে বছর আবার হবে”, হবেই হবে।
দুগ্গা! দুগ্গা! তাই যেন হয়! হয়ে যেন যায়!!!!

Friday, April 9, 2010

আমার শ্বশুরবাড়ী যাত্রা!

ট্রেন থেকেই শুরু করি। শিয়ালদা থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস সন্ধ্যে ৭.৩৫ এ ছাড়বে।কোচবিহার যাব। খুড়তুতো শালাবাবুর বিয়ে। কোচবিহারের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৩৬ বছরের সর্ম্পক। সৌজন্য- বিবাহ।মনটা খুব ভালো নেই। গচ্চা গেছে অনেক পয়সা। কি সব উপহার কিনেছেন আমার উনি। সান্তনা দিলেন- আরে আমরা তো সিনিয়ার সিটিজেন। ভাড়া তো কম লাগছে যেতে।বুঝলাম, সান্তনা দিচ্ছেন। জনান্তিকে ভাবলাম, মরে তো গেছি; মাথার চুল কামালে আর কতটুকু হালকা হব?যথারীতি, শেয়ালদা পৌঁছলাম। জানি প্ল্যাটফর্ম ৯। শেষ মুহূর্তে মাইকে বলল প্ল্যাটফর্ম ৮। যৌবনের সেই ‘সার্ভিস উইথ এ স্মাইলের’ কথা মনে পড়ল। “সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে”। ‘রং বদলায় না’।হুড়মুড় করে প্ল্যাটফর্ম ৮। কোচ নং ৯।প্ল্যাটফর্ম না হোক, কোচ তো হল। এবার দেখলাম, যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানেই কোচ টা দাঁড়াল। কোচবিহারে বিহার করতে যাচ্ছি, কোচ তো সামনে দাঁড়াবেই। কি বলুন? তা, ধীরে ধীরে সীটে গিয়ে বসে,জম্পেশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। হাঁ হাঁ করে উঠলেন, সামনের ভদ্রলোক।“খাবেন না, খাবেন না!”“কেন?”“দেখছেন না! এই যে, আমার প্যাকেট। আমি বলে খাচ্ছিনা, আর আপনি খাচ্ছেন?”“তাতে, আপনার কি? আমি তো আপনার কাছে সিগারেট চাই নি।”“বুঝবেন ঠ্যালা, যখন পুলিশ ধরবে!!!”“কেন, পুলিশ ধরবে কেন, আমি কি চুরি করেছি নাকি ,আপনার সিগারেট?”“কোন বেকুবের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা!!! কোত্থেকে আসচেন? দেখে তো হটেনটট মনে হচ্ছে না”“দেখুন! গালাগালি করবেন না!বেকুবটা বুঝি, হটেনটট মানে কি?”“যা ইচ্ছে বুঝুন, শুধু সিগারেটটা খাবেন না”“আরে মশায়, আপনি কি আমার গার্জেন নাকি? উনি তো সাথেই আছেন, কিছু তো বলছেন না!! আপনি কে মশাই?”

এবার হাসতে হাসতে পাশের কিউবিকল থেকে ভদ্রলোকের মেয়ে ( পরে জেনেছি) এসে সামনে এসে বলল- জেঠু, অনেকদিন হলো রেলের প্ল্যাটফর্ম আর কামরায় সিগারেট খাওয়া বন্ধ। পুলিশ দেখতে পেলে, হয় ফাইন না হয় জেলে পুরবে আপনাকে। জানেন না? অনেকদিন ট্রেনে চড়েন নি, না?ধাঁ আ আ-- করে মনে পড়ল। চট করে সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে, আমার পক্ষে যতটা সম্ভব মোলায়েম মুখে বললাম- আগে বলবেন তো!!! খালি হেঁয়ালি করে যাচ্ছিলেন!!! ভদ্রলোক স্বভাবতই গম্ভীর।বললাম- আমার চেহারা দেখেছেন? (যাঁরা আমায় “লাইভ”দেখেছেন, তাঁরা জানেন, আমি গোরিলাদের সাক্ষাৎ বংশধর)কেন? মারবেন নাকি?ছিঃ! ছিঃ! কি যে বলেন!!!!আরে না মশাই। আমার যেমন দেহে ফ্যাট, সেরকম ব্রেনেও ফ্যাট! তাই ব্রেনের হার্ড ডিস্কের “ফাইল আ্যলোকেশন টেবল”(FAT) কাজ করে না আমার। ফলে,এই ধূমপায়ীদের বিরূদ্ধে ফরমানটা ভুলে মেরে দিয়েছি।এবার মেয়ে হেসে বলল- NTFS বা New Type File System, Brainএ লাগিয়ে নিন। অনেক তাড়াতাড়ী কাজ করবে। আমি বললাম- বুঝলে হে, আমার সবই Unmovable Files. কিস্সু কাজ হবে না!বাবার পালা এবার- কি ভাষায় কথা বলছেন আপনারা?আমি- হটেনটটদের ভাষা!করে, করে; অবশেষে রাতের খাওয়া। রুটি একদম খেতে পারি না, সেই শুকনো রুটি! আর আলুর দম! উনি বললেন- খরচা বাঁচাচ্ছেন!!! ( আলু ৪ টাকায় নেমে এসেছে)যাই হোক, খেয়ে, টয়লেটে গিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে; শুয়ে পড়লাম।
বোধহয়, মালদা হবে। রাত নিঝুম। আমাকে কে যেন দূর থেকে ডাকছে। ও মশাই,ও মশাই.......। নিশির ডাক হতে পারে ভেবে ঘাপটি মেরে অনেক ক্ষণ পড়ে থাকলাম। জোর ঠ্যালা খেয়ে হুড়মুড় করে উঠতে হলো। উনি, দেখি মাথা নিচু করে বসে। ওই ভদ্রলোক, সঙ্গে আরও কিছু লোক---- মশাই, আপনার নাকের সাউণ্ড বক্সের “বাস”টা কমাবেন?“হটেনটটদের ভাষা জানলেন কি করে?”“রাখুন তো, কোচে কেউ ঘুমতে পারছে না”“কেন?”“অত জবাব দেবনা! আর ঘুমোবেন না। এবার আমরা ঘুমোই”“এ তো তুঘলকি ফরমান”!“পরিবর্তনের জমানা! বুয়েছেন?????”“এই এক প্যাকেট সিগারেট দিলাম, টয়লেটে মাঝে মাঝে গিয়ে খেয়ে আসবেন, কিন্তু খবরদার!!!!! ঘুমোবেন না!!!! আপনি হৃদয়হীন হতে পারেন, কিন্তু আমরা নই। তাই সিগারেট দিলাম”“নাকের আমি, নাকের তুমি, নাক দিয়ে যায় চেনা”--- একজন ফুট কাটলেন।আরও একজন--- “ঘুম পেয়েছে? বাড়ী যান! ট্রেনে কেন স্যার!”বাউনের ছেলে- সব সইতে পারি, এমনকি চর্মপাদুকার প্রহার পর্যন্ত, কিন্তু অপমান???? কদাপি নয়! রেগে গিয়ে টয়লেটের সামনে মোবাইল চার্জ করতে লাগলাম!সক্কাল বেলায় নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে প্রায় অর্ধেক কোচ খালি! যাবার সময় ওই মেয়েটি বলে গেল—বোফোর্স কামান দেখি নি। আওয়াজটা শুনে গেলাম।
গোটা উত্তরবঙ্গে, দোলের দিন আবীর খেলা হয়।আর তার পরের দিন রং খেলা।কোচবিহারও তার ব্যতিক্রম নয়।ফলে, যে দিন কোচবিহার পৌঁছলাম, সে দিন কোলকাতায় দোল খেলা হলেও, কোচবিহার নিরাপদ।কোচবিহার নামে ষ্টেশন থাকলেও, নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে নামতে হয়।ওখানেই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের যাত্রা শেষ। নিউ কোচবিহার ষ্টেশন থেকে কোচবিহার শহর প্রায় ৯ কি.মি.। রিক্সা, বাস আর প্রচুর পরিমাণ ভাড়া গাড়ী, আপনাকে শহরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।এমনিতে, চাটার্ড গাড়ীতে, ষ্ট্যানডার্ড ভাড়া-১৫০ টাকা।স্থানীয় ভাষা, বাঙ্গাল না হলেও, একটু অন্যরকম। পরে, তারও উদাহরণ পাবেন।আস্তে আস্তে মালপত্র নিয়ে, বড় শালাবাবুর ( ষ্টেশনে এসেছিল, রিসিভ করতে, নাম- রাহুল) সঙ্গে ওভারব্রিজ পার হয়ে, আমার ওনার সঙ্গে যখন বাইরে এলাম, তখন প্রায় সব গাড়ী অদৃশ্য। বসার উপযুক্ত করে নেওয়া,একটা টাটা “এস” গাড়ীকে, ডাকল রাহুল।ড্রাইভার- জামবাবু না? এই গাড়ীতে আসচেন? বসেন, বসেন। দিদিও বসেন। রাহুলদা, আমারে বসায়ে ইষ্টিশনে গেল্, আপনাদের আনতে। মজবুত গাড়ী।ভয় নাই।বলে, সিটটা বাড়ি দিতেই,একটা মেঘ উড়ে এল। ধূলো না নস্যি, বুঝলাম না! হাঁচতে, হাঁচতে প্রাণ অতিষ্ঠ।ড্রাইভার- তা অনেকদিন পরে আসতিছেন, জামবাবু।কোচবিহারের অবস্থা একটু পালটিছে।আপনিও মোটা হই গেল্ ।মেঘটা আস্তে আস্তে কাটছে! হাঁচিটাও কমছে!ড্রাইভার, এবার তুরীয় মেজাজে।বলল- জামবাবু, একটা নতুন টিভি কিনসি। কালারিং। বউ পোস্কার করতে যাতিছিল, আমি মানা করসি। করসে কি, কাপড়ে সোডার জল দিয়া ঘসতে যাতিছিল, ওই ইস্ক্রিনটা। মাথ্থা খারাপ! সোডা দিয়া ঘষলে যদি রং উইঠ্যা গিয়া সাদা কালো হইয়া যায়! সোডা দিয়া আজকাল খুব রং উঠতিসে। কি দিয়া পোস্কার করব, বলি ফ্যালান তো!গম্ভীর হয়ে বললাম, বিয়েটা মিটে যাক, তোর বাড়ী গিয়ে সব বলে দেব।কোচবিহার শহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব রাস্তা সোজা। সুপারী গাছ প্রচুর। আর প্রায় প্রত্যেক বাড়ীর সামনে বাগান।
যাই হোক, শ্বশুর বাড়ী পৌঁছলাম। ওনাকে গ্যারেজ করে, বেরুলাম দাড়ী কাটতে। বাক্সের মধ্যে কোথায় সব যন্তর সেঁধিয়ে আছে!!! কে আর খোঁজে?কাছেই “ প্রিন্স হেয়ার কাটিং সেলুন”। মালিক- পরমেশ্বর। ছাপরার লোক! কিন্তু, কোচবিহারে থেকে ৯৯% বাঙ্গালী। সেই ১৯৭৪ থেকেই আমার বন্ধু। গিয়ে দেখি, ও গতকালই দেশে গিয়েছে। ছেলে রামেশ্বর। ছোট্ট করে রামু। লম্বায় ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি। দেখেই, চিনতে পারল।বাপ্পা, রাহুলের বন্ধু। ওখানে বসেছিল।“ শুনতিচীলাম, আপনে আসতিচেন। নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেসে আসিচেন?”‘হ্যাঁ”।তা- আচেন কেমুন?ওই ডাল ভাত খেয়ে কোনরকমে আছি আর কি!জামবাবু, আপনে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দ্যান?কেনো রে?না, ডাল চালের যা দাম! বড়লোকেরাই খেতে পারে। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে, আপনারে ধরবে। বুঝচেন নি??? রামু- কি কাটবেন?আমি- যাঃ!! বাবা! আমি কাটব কেন? তুই তো কাটবি!বাপ্পা- কিন্তু, জামবাবু, রামু তো লাফিয়ে, লাফিয়ে আপনার চুল বা দাড়ী কাটবে।সেলুন, ভর্তি লোক চেয়ে রইল।
তা, পরের দিন রং খেলা। বাইরে যেতে পারছি না।এদিকে কম্পিউটারও নেই, যে অরকুটে ঢুকব।মেয়ে মহলে উত্তেজনা। নানারকম প্ল্যানিং চলছে।যার বিয়ে,(সুষ্মিত) গম্ভীর মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ, একটা শন্না নিয়ে এসে বলল- আয়না দিয়ে দেখলাম,ঘাড়ে একটা ছোটো পাকা চুল দেখা যাচ্ছে, তুলে দাও তো!চশমা পরে, তন্ন তন্ন করে সেই অদৃশ্য পাকা চুল খুঁজে পেলাম না। তাই একটা কলপ করা চুলই তুলে দিলাম। শালাবাবু, খুব খুশী। বলল- যাক, আপদ বিদেয় হলো। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও পারছিলাম না।ভেতরের বারান্দায়, একটা ইজিচেয়ার। বসে পড়লাম। সামনের ছোটো টুলে পা দিয়ে বেশ আরাম। ননীবালা, সংক্ষেপে ননী, চা নিয়ে এলো। বুঝলাম, কিছু বলতে চায়।বলো, ননীকইলকাতায় কি রোজই হাট বসে, জামবাবু?কেন রে, ননী?শুনিসি, ইষ্টিশনে প্রচুর লোক, আমাদের ইআনে , প্রচুর লোক মানি তো হাট করতি যাওয়া!!!আস্সা, তোমারে পুছ করি, ওই যে আলা ( আলো, সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প) নাগাসে না, আমদের পঞ্চরঙ্গী মোড়োত!, এই টা কিসের আলা?ক্যানো রে ননী?লোকোত বলিসে, ওড্ডা নাকি ইলেকটিরি!হ্যাঁ তো!মস্করা করতিস? ইলেকটিরি হলি তো তার থাকিবে। ওড্ডা তো দেখত্ পারি না। ( কনসিলড্ অয়ারিং)তোর কি মনে হয়?ওড্ডা হলো কেচ্চিন ( কেরোসিন)। ওড্ডা তে ঢাউয়া (বড়) বাস্ক আছি না!!! হলদা আলা তো কেচ্চিনেই হয়।দুক্কুর বেলাত আসি মিনিস পালির লোকেরা ঢাউয়া বাস্কত ঢালি। বুঝিছ?ইতিমধ্যে লোডশেডিং ( ওখানে এটা না হলে, লোকে ৭ দিন আশ্চর্য হয়ে থাকে, কারণ, আমাদের কারেন্ট যায়, ওদের আসে!)ভেতরের বারান্দায় একটা খোলামেলা উঠোন আছে। ফলে, ওখান দিয়েও ঢোকা যায়। একটা কুকুর ঢুকে পড়ে আমাকে দেখে ল্যাজ নাড়ছিল। কুকুরে আমার ভীষণ আ্যালার্জি।তাড়াতে গেলাম। রাহুল বাধা দিল।জামবাবু,একটা পাখা ওর ল্যাজে ব্যাঁধে দিতেসি। তুমি বিস্কুট দাও, ও ল্যাজ লাড়লেই তুমি পাখার বাতাস পাবা।
একটু পরেই, কালোদা এন্ট্রি নিলেন। কালোদা,(ইনি প্রায় চলতি বাংলাই বলেন) প্রায় আমার বয়সী, একটু বড়ই হবেন। মেজ খুড়শ্বশুরের থেকে বয়সে অনেক ছোট হলেও,ওনার বন্ধু। নাটক করার শখ আছে। অনেকদিন আগে, কোচবিহারেই ওনার একটা ঐতিহাসিক নাটকের রিহার্সাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।“জাঁহাপনা” কে “হাজাপোনা” বলেই যাচ্ছিলেন। আর একটা ডায়ালগ ছিল, রক্ষী---বন্দী কর। কালোদা বারবার বলছিলেন, বন্দী- রক্ষী কর।বুঝলে হে জামাই! এবার একটা জব্বর লাটক লামাচ্ছি-কালোদা উবাচ।কি নাটক, কালোদা?নিজেই লিখেসি।বাঃ! বাঃ!হনুমানের ওপর বেস করে, বুঝলে? তা কত্তদিন থাকিসঅ?ক্যানো কালো দা?না, তোমাকে ভাবতিছিলাম, ওই লিড রোল টা দিব। সিরিয়াসলি বলছি। ওর্রম চেহারা!!! ( কালোদা, কিন্তু সিরিয়াস ছিলেন)একটু আসছি বলে, উঠে বসার ঘরে গেলাম।কালোদা একটু অবাক হলেন, আমার এই ব্যাবহারে।রাহল বলল- জামবাবু, মনে ব্যাথা পাসে।ক্যান?????আরে হাটের গল্প ভুলা গেলা?কোনডা রে?
এবার রাহুলের পালা ( আমি কোচবিহারের ভাষা থেকে কিছুটা অনুবাদ করে দিলাম)“হাটে, কলাওয়ালা আর পানওয়ালা বসে। কলাওয়ালা, একটু ভুলো মন।একদিন, পানওয়ালা একটু আগে এসে হাটে বসেছে। কলাওয়ালা, আসছে দেখে, মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল।পানওয়ালা- ও কলাওয়ালা, তোর মাথায় ওড্ডা কি?কলাওয়ালা- কলাপানওয়ালা- কাটি দিম, তোর গলাকলাওয়ালার খুব দুঃখ হল। বাড়ীতে বৌ বলল- কি হয়েছে?শুনে বলল- তুই আগে যাবি। জিজ্ঞেস করবি- ও পানওয়ালা তোর মাথায় ওড্ডা কি?যেই বলবে, পানবলবি- কাটি দিম তোর কানকলাওয়ালা খুব মুখস্থ করে পরের দিন, আগে হাটে গেল।পানওয়ালা আসছে দেখে – ও পানওয়ালা, তোর মাথায় ওড্ডা কি?পানওয়ালা- পানকলাওয়ালা- তোর পিছত ঢেঁকি।পানওয়ালা- মিলল না,মিলল না,মিলল না।কলাওয়ালা- মিলল না তো কি? পিছত ব্যাথা তো লাগসে!বুঝলা, কালো কাকু, জামবাবুর পিছত ব্যাথা তো লাগসে! তারপর, বিয়ের গপ্পো! তা সেটা না হয়, অন্য কোনো সময়!

Tuesday, March 16, 2010

বাংলা গদ্যের আদি যুগ

১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর, ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানী, বাংলার দেওয়ানী বা রাজস্বের আদায়ের ভার পেয়ে গেল।ফলে, কয়েক বছরের মধ্যেই কোম্পানী; দেশের রাজশক্তি,একেবারে কুক্ষীগত করে ফেলে।“বণিকের মানদণ্ড পরিণত হলো রাজদণ্ডে”। পরবর্তী কালের নিরীখে, সূচনা হলো এক নতুন যুগের। এ সময়ের কিছু আগে থেকেই, বাংলায় গদ্য রচনা আরম্ভ হয়ে গেছিল। শুধু, খ্রীষ্টান মিশনারীরা নয়; ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরাও এ বিষয়ে যত্নবান হয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য, স্মৃতি ও ন্যায় শাস্ত্রের কয়েকটি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদের কাজ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই শুরু হয়েছিল।বৈদ্য চিকিৎসকরাও, কয়েকটি কবিরাজী বই, বাংলা গদ্যে লিখেছিলেন। তেতো লাগলেও, এটা মেনে নিতে লজ্জা নেই যে ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অভ্যুদয় না ঘটলে; এ প্রচেষ্টা কতদূর ফলপ্রসু হতো, তা গবেষনার বিষয়বস্তু।কারণ,ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানী সাম্রাজ্যবাদের কুৎসিত নমুনা হলেও; বাংলা গদ্য সাহিত্য এই সাম্রাজ্যবাদের কাছেই ঋণী।ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানী, রাজ্যভার পেয়েই, দেশে আইনকানুন প্রণয়ণ করতে লাগল। সবটাই অবশ্য নিজেদের সুবিধের জন্য। চিঠিপত্র, দলিল দস্তাবেজের বাইরে, এটাই হলো বাংলা গদ্য ভাষার প্রথম কার্য্যকর ও ব্যাপক ব্যাবহার।
তারপর, বাঙ্গালিকে, ইংরেজী আর ইংরেজকে বাংলা শেখাবার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে, ব্যাকরণ আর অভিধান রচনা করা হতে লাগল। এ পর্যন্ত, হাতে লেখা বইয়ের ব্যাবহার ছিল। প্রচুর নকলনবীশ ছিলেন, যাঁরা এই বই গুলো হাতে নকল করে লিখতেন। কিন্তু, এগুলো ছিল, সময় ও ব্যায়সাপেক্ষ। তাই, ছাপার যন্ত্র আর বাংলা টাইপের প্রয়োজন অনিবার্য্য হয়ে উঠল।
বাংলা টাইপের সর্বপ্রথম ছেনী কাটেন একজন ইংরেজ।ইনি ছিলেন,ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানীর একজন কর্মচারী। নাম- চার্লস উইলকিনস। পরে অবশ্য ইনি স্যার উপাধি পেয়েছিলেন। এই সাহেব, শ্রীরামপুরের শ্রী পঞ্চানন কর্মকারকে বাংলা টাইপের ছেনী কাটান শিখিয়ে দেন। এইভাবে, বাংলা টাইপের আবির্ভাব হলো।বাংলা টাইপের প্রথম ব্যাবহার হয়; হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণে।১৭৭৮ সালে এটি হুগলি থেকে প্রকাশিত হয়। ফলে, বই আর সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত হল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, আমরা দেখতে পাই-দু- একটি আইনের বই; বাংলায় লেখা হয়েছিল। বইগুলো দলিল পত্রের মত, আরবী-ফার্সী শব্দে ভরা। তাই, পরবর্তীকালে এগুলোকে ঠিক সাহিত্যের কোঠায় ফেলা হয় নি।ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ঢল নামল।খাস বিলেত থেকে আসা ইষ্ট- ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীদের(এদের সিভিলিয়ান বলা হত) শিক্ষার জন্য ১৮০০ খ্রীঃ এ কোলকাতায় কলেজ অব ফোর্ট উইলিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হল।এই কলেজে প্রাচ্য ভাষার অধ্যক্ষ নিযুক্ত হলেন-শ্রীরামপুরের মিশনারী পাদ্রী উইলিয়াম কেরী।১৮০১ সালের মে মাসে;উইলিয়াম কেরীর সহকারী পণ্ডিত ও মুনশী কয়েকজনকে নিযুক্ত করা হলে; কলেজের প্রকৃত কাজ শুরু হয়।
সিভিলিয়ানদের বাংলা পড়াতে গিয়ে, দেখা গেল- বাংলা বই গুলো সবই কাব্য। এখন প্রয়োজন হয়ে পড়ল বাংলা গদ্যের।কারণ, ব্যাবহারোপযোগী বাংলা গদ্য না পড়ালে সিভিলিয়ানরা তথাকথিত নেটিভদের সাথে কথা বলবে কি করে?
উইলিয়াম কেরী, তাঁর মুনসী এবং পণ্ডিতদের বললেন ব্যাবহারোপযোগী বাংলা গদ্যের বই লিখতে। নিজেও লেগে গেলেন। লিখে ফেললেন- একটা ব্যাকরণ, একটা অভিধান, একটা কথোপকথনের বই আর একটা গদ্য গ্রন্থ সংকলন। সূচনা হলো, বাংলা গদ্যের। নিজেদের রাজ্য শাসনের জন্য, এগুলো তৈরী করলেও; ভবিষ্যতের বাংলা গদ্য সাহিত্য ঋণী হয়ে থাকল এঁদের কাছে। যে বছর কলেজ কাজ আরম্ভ করল, সেই বছরেই প্রকাশিত হলো; কেরীর “ব্যাকরণ”, ‌‍রামরাম বসুর “প্রতাপাদিত্যচরিত্র”, আর গোলোক শর্মার “হিতোপদেশ”।‌‍রামরাম বসুর “প্রতাপাদিত্যচরিত্র”,[u]বাংলা অক্ষরে ছাপা প্রথম মৌলিক গদ্য গ্রন্থ।[/u] এর আগে, পোর্তুগীজ পাদ্রীরা যে সব গদ্য গ্রন্থ বের করেছিলেন, সে সবই ছিল ইংরাজী বা রোমান হরফে ছাপা।
এ প্রসঙ্গে, জানিয়ে রাখা যেতে পারে; অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে যে তিনখানা আইনের অনুবাদ গ্রন্থ এবং ১৮০০-০১ সালে বাইবেলের যেটুকু অনুবাদ, শ্রীরামপুর মিশন প্রকাশ করেছিল, তা কিন্তু বাংলা অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।
রামরাম বসুর আর একটি গদ্য গ্রন্থ- “লিপিমালা”, প্রকাশিত হয়; পরের বছর অর্থাৎ ১৮০২ সালে। ১৮০৫ সালে প্রকাশিত হয়,চণ্ডীচরণ মুন্সীর- “তোতা ইতিহাস”। রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের- “ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রম্” ।
সবাইকে ছাপিয়ে গেছিলেন- মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার। কলেজের শ্রেষ্ঠ গদ্য লেখক ছিলেন এই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার। সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ এই মহাপণ্ডিত, কেরী সাহেবের ডান হাত ছিলেন। দেশী লোকের লেখা প্রথম ভারতবর্ষের ইতিহাস- “রাজাবলি”, এনারই রচনা। ১৮১৯ সালে ইনি প্রয়াত হন।
তারপর, গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে আজ আমরা এই একবিংশ শতাব্দীতে।
তথ্যসূত্র ও প্রভূত ঋণ- শ্রী সুকুমার সেন রচিত “বাংলা সাহিত্যের কথা”। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে প্রকাশিত সংষ্করণ।

দেশলাই

“নমামি বিলাতি অগ্নি ---- দেশলাই রূপী
চাঁচাছোলা দেহখানি , শিরে কালো টুপী”
বলুন তো কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা?কবি হেমচন্দ্র ১৮৮৪ সালে দেশলাই কাঠির এই স্তবটা রচনা করেছিলেন।আমাদের এই বাংলাতে দেশলাই কবে এসেছে, তা বলা বেশ মুশকিল। ১৮৬৪ সাল নাগাদ রসরাজ অমৃতলাল বসুর স্মৃতি কথায় পাড়ায় পাড়ায় দেশলাই ফেরী করার উল্লেখ আমরা পাই।
আগুন আবিস্কারের পর জ্বালানটা মানুষের কাছে কঠিন ছিল। তাই অনবরত আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হত, মানুষকে।চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালাতে হত। তারপর, সহজ দাহ্য পদার্থ তে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হত। যেমন- কাঠের গুঁড়ো, তুষ, দড়ি। কিন্তু যে প্রয়োজন মানুষ অহরহ অনুভব করত, সেটা হলো তাৎক্ষণিক আগুন বা চাওয়া মাত্র আগুন। সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত মানুষ এই অসুবিধার সন্মুখিন হচ্ছিল।
১৬৬৯ সালে সাদা ফসফরাস আবিস্কারের পর আয়ারল্যাণ্ডের রবার্ট বয়েল ১৬৮০ সালে দেখলেন; সাদা ফসফরাসের সঙ্গে গন্ধক মেশালে আগুন জ্বলে ওঠে। রাসায়নিক বিক্রিয়া তীব্র এবং অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে এই পদ্ধতিকে বাতিল করতে হয়। ১৮০৫ সালে ফ্রান্সের শঁষেল দেখলেন যে কাঠির মাথায় চিনি আর পটাশিয়াম ক্লোরোটের মিশ্রণ লাগিয়ে, ওই কাঠি গাঢ় সালফিউরিক আ্যাসিডের সংস্পর্শে আনলে আগুন জ্বলে ওঠে।
যাই হোক, এরপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী নানাভাবে চেষ্টা করেছেন, আগুন জ্বালাতে, কিন্তু আগুন জ্বললেও সে গুলো নিরাপদ ছিল না।
অবশেষে, লাল ফসফরাসের আবিস্কারের পর (১৮৪৫) সুইডেনের জে লুন্ডষ্ট্রম ১৮৫৫ সালে সেফটি ম্যাচ বা নিরাপদ দেশলাইয়ের পেটেন্ট নেন। এটাই আমরা এখন ব্যাবহার করি।

দেশলাই বাক্স জমানোর অনেকের অভ্যাস আছে। এই শখকে বলা হয় “ফিলুমেনি”। আর যাঁরা জমান তাঁদের বলা হয়- “ ফিলুমেনিষ্ট”। ল্যাটিনে “লুমেন” মানে আলো, আর তার থেকেই এই শব্দটির উৎপত্তি।
জাপানের তেইচি ইয়োসিজাওয়া, দেড়শোরও বেশি দেশের ৭ লক্ষেরও বেশি দেশলাই জমিয়ে গিনেস বুকে নাম তুলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে ডঃ উৎপল সান্ন্যাল ৩৫ বছর ধরে ১০০ এরও বেশী দেশের ২৫ হাজার দেশলাই বাক্স জমিয়েছেন। এটা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
হলান্ডে একটি দেশলাই কাঠি তৈরী হয়, যার ওজন ছিল ১০০০ কিলোগ্রাম আর লম্বায় ছিল- ৬২ ফুট। ২৫ শে জুন, ১৯৮৮ সালে এটি একনাগাড়ে ৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট জ্বলেছিল।
দেশলাই বাক্সতে নানারকম বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে, বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছাপা হয়েছে। তবে সে অন্য আর এক কাহিনী।

তথ্যসূত্র ও গভীর ঋণ- সাপ্তাহিক বর্তমান, ৬ ই ফেব্রু-২০১০। পৃষ্ঠা -৩৯। লেখক- ডঃ উৎপল সান্ন্যাল। প্রবন্ধের নাম- দেশলাইয়ের দেশে।

Thursday, January 14, 2010

BLOOD

Notes prepared by RAMKRISHNA BHATTACHARYA, erstwhile R.M. of Sarabhai Piramal.

BLOOD

n Blood is a specialized fluid connective tissue. (Because the Plasma is more)

n Blood is the transport system of the body.

n Blood forms 8% of the body weight or 1/12 Th of the body weight.

n The adult male contains: - 5-5.5 lit. Of blood.

n The adult female contains: - 4.5- 5 lit. Of blood.

n Color of the blood:-

n Oxygenated- Brilliant red.

n De-oxygenated-Blackish red.

n Temperature of Blood- 380 C.

n pH of Blood is 7.35 – 7.45(Slightly Alkaline)

n Specific Gravity of Blood – 1.05.

n Viscosity of Blood – 5 to 6 times more than water.

n Normal Blood Sugar Level- 80-120mg of Glucose/ 100ml (Adult).

BLOOD COMPONENTS

Composition of blood:-

Blood serum or plasma is a straw colored fluid, slightly alkaline in reaction. The composition of Blood serum or plasma is made up as follows:-

1. Water--- 91%.

2. Protein— 8%.

3. Salts----- 0.9%.

4. Other Trace Elements--0.1%

* Amongst Proteins, the following things are there: - Albumin, Globulin, Prothrombin, and Fibrinogen.

* Amongst Salts, the following things are there: - Sodium Chloride, Sodium Bicarbonate, Salts of Calcium, Phosphorus, Magnesium, and Iron etc

* Amongst Other Trace Elements, there are number of organic materials: Glucose, Fats, Urea, Uric Acid, Creatinin, Cholesterol, and Amino Acids.

ðThe plasma also carries:-

ðGases:- O2 & CO2

ðInternal Secretions.

ðEnzymes.

ðAntigens.

Ö Functions of the plasma: -

J Plasma protein is essential for the blood clotting.

J Plasma maintains colloidal osmotic pressure of blood and acids in regulating the distribution of fluid between blood and tissues.

J Plasma maintains viscosity and blood pressure.

J Plasma is concerned with Erythrocyte Sedimentation Rate.

J Plasma acts as buffers.

J Plasma acts as a protein reserve.

J Plasma helps CO2 carriage by forming carbamino proteins.

J Plasma acts for defence against infection.

Blood has got mainly three components:-

v R.B.C. or Erythrocytes.

v W.B.C. or Leucocytes.

v Platelets or Thrombocytes.

R.B.C. or Erythrocytes. (Carries Haemoglobin.)

Erythro means Red, & cyte means pertaining to cell. There are 5(50lacs) millions of R.B.C.s in each cubic millimeter of blood.

The main functions of Erythrocytes are:-

Ø To transport O2 & CO2.

Ø To maintain acid & alkali balance.

Ø To colour the bile, stool, urine.

Ø Generated from red bone marrow.

Ø Helps to maintain the iron balance by the special permeability of the cell membrane.

Ø Helps to maintain the viscosity of the blood.

Ø Life span- 120 days.

Haemoglobin:-

Haemoglobin is a complex protein rich in iron. Its location found in the RBC. There are two parts of Haemoglobin. One part is GLOBIN & the other part is HEAM. Globin is broken down into AMINO ACIDS to be used as protein in the tissues and the iron in the HEAM is removed for use in the formation of future R.B.C.s. It has an affinity for oxygen, and combines with it forming oxy-haemoglobin in the red cells. By means of this function oxygen is carried to the tissues from the lungs.

The amount of Haemoglobin present in normal blood is about 15gm per 100 ml of blood, and this is usually called 100%.

Anything over 90% is considered normal.

In many forms of anaemia the amount of Haemoglobin present in the blood is diminished. In some severe forms it may fall bellow 30%, i.e. 5gm /100ml. As Haemoglobin contains the iron necessary to combine with oxygen, it will readily be understood that these patients present symptoms of deficient oxygen such as breathlessness, often one of the first indications of iron deficiency anaemia.

W.B.C. or Leucocytes.

Leuco means White & cyte means pertaining to cell. There is 5 thousand to 10 thousands of W.B.C.s in each cubic millimeter of blood. It is the smallest cell in the human body. Granulocytes or Polymorphonuclear cells (P.M. N) forms 75% of the total W.B.C.

The main functions Leucocytes of are:-

Ø To kill the invading microorganisms by Phagocytosis.

Ø To develop immunity against diseases.

Ø Formation of fibroblasts.

Ø Secretion of heparin.

Ø Generated from Lymph Nodes, bone marrow.

Ø Life span- 1to 15 days.

Platelets or Thrombocytes.

Thrombo means thrombin which helps in blood co-agulation cyte means pertaining to cell. There are about ¼ to ½ millions (2.5 lacs to 5 lacs) of Thrombocytes in each cubic millimeter of blood.

The main functions of Thrombocytes are:-

Ø To help in blood co-agulation.

Ø Generated from bone marrow.

Ø Life span- 3 to 10 days.


The normal blood count or the number of cells / cubic millimeter of blood is approximately:-

1. Red Blood cells: - 4,500,000 to 5,500,000. Average: - 5,000,000.

2. White blood cells: - 6,000 to 10,000. Average: - 8,000.

White blood cells are made up as follows:-

a) Granulocytes:-

® Neutrophil cells: - 60% to 70%. Average: - 66%.

® Eosinophil cells: - 1% to 2%. Average: - 3 %.

® Basophil cells: - ½ % to 2%.Average: - 1%.

b) Agranulocytes

Lymphocytes: - (Large & Small):- 20 to 30%. Average: - 25%.

Monocytes: - 4% to 8%. Average: - 5%.

Platelets: - 250,000 to 500,000. Average: - 350,000.

Life Span: - 2-3 days

BLOOD GROUPS

In the W.B.C.s of blood there are special types of polysaccharides in the capillaries of W.B.C.s which determines the blood group. They are known as AGGLUTINOGEN OR BLOOD ANTIGEN. There are two types of AGLUTINOGENS. A& B. Similarly there are two types of AGGLUTININ OR BLOOD ANTIBODY again subdivided in two groups α & β.

Blood is divided in four groups according to the presence & absence of AGGLUTINOGEN & AGGLUTININ.

Sl. No.

Blood Group

Agglutinogen

Agglutinin

1.

+A

A

β

2.

+B

B

α

3.

+AB

A&B

Nil

4.

+O

Nil

α & β

Type

Blood Group

Agglutinogen

(ANTIGEN)

Agglutinin

(ANTIBODY)

Can donate to which group?

From which group can accept?

Universal Donors

O.

________

α & β.

O,A,B,AB.

O.

Universal Acceptors

AB.

A,B.

________

AB.

A,B,AB,O.

Antigen & Antibody Reaction causes ALLERGY.

RHESUS FACTOR OR Rh-factor AND IMPORTANCE.

Scientists Landstainer and Winner in 1940, extracted Blood from a type of Indian Monkey Called Rhesus macacus, and entered this blood to Rabbits and in the serum they created a type of Antibody which was nomenclatured by the said Scientists, as Anti-Rh. This Antibody they entered in white people and their R.B.C.s were converted into lumps.

Afterwards the scientists proved that, in the R.B.C.s of human bodies there is same ANTIGEN like Rhesus macacus. So, according to the name of the Rhesus macacus monkey, that ANTIGEN is called Rh-factor.

The human beings who have this factor, their blood is called Rh±. Now they are subdivided into two groups: - Rh+ &Rh--.

85% people have Rh+ factor in their blood.

This factor determines the compatibility of the foetus with MOTHER.

FUNCTIONS OF BLOOD:-

Blood has the following functions:-

v Transportation.

v Coagulation.

v Immunity.

v Protective.

v Regulation of temperature.

Functions of W.B.C.:-

The Granulocytes & Monocytes play a very important role in protecting the body microorganisms. By Phagocytic Action (Phago- I eat), they ingest living bacteria. As many as 10 to 20 microorganisms may be seen in a Granulocyte under microscopic examination. When performing this action they are called phagocytes. They have amoeboid (means amoeba like) movement. (For this movement Vit C is required.). So, they can move freely in and out of the blood vessels and wander about in all parts of the body.

In this way they can:-

Ü Surround any area which is infected or injured.

Ü They can take in living organisms and destroy them (Ingestion).

Ü Remove other materials.

Ü The Phagocytic Action of the W.B.C the inflammation may be completely arrested.

Ü Converted into Fibroblasts in an area of inflammation.


Functions of RBC: -

1. Maintains the acid-base balance.

2. Helps to maintain viscosity of blood.

3. Maintains the ion balance by the special permeability of the cell membrane.

4. Carry O2 & CO2.

5. Various pigments (Bilirubin, Biliverdin) are derived from Haemoglobin

6. Secrets Heparin which prevents intravascular clotting.

Functions of Thrombocytes: -

1. Helps in Clotting or Coagulation. (Clotting or Coagulation: - When blood is shed it losses its fluidity in a few minutes and sets into a semisolid jelly.)

When blood is shed, the platelets disintegrate and liberate thromboplastin. Certain amount of thromboplastin is also derived from the damaged cells of the injured tissue. Thromboplastin converts Prothrombin into Thrombin with the help of Calcium ions and Thrombin interacts with Fibrinogen forming Fibrin. This is the Clot.

Summary:-

Normal: -

Prothrombin + Calcium ion + Fibrinogen ¦ Nil

After shedding of Blood: -

1. Thromboplastin + Prothrombin + Calcium ion ¦ Thrombin

2. Thrombin+ Fibrinogen ¦ Fibrin (Clot),

SERUM & Differentiation of SERUM & PLASMA.

1. SERUM is the liquid part of blood which is left after Coagulation.

2. So, SERUM is PLASMA minus the blood clotting proteins.

Sl No

SERUM

PLASMA

1

Serum is the most fluid part of blood.

Plasma is the fluid part of blood.

2

Corpuscles and fibrinogen are not present.

Corpuscles are present.

3

Cannot be coagulated.

Can be coagulated properly.

TC & DC: -

TC: - The total number of WBC present in one Cubic Milliliter of blood is called TC or total count.

DC: - The proportional count of different WBC in 1 Cubic Milliliter of blood is called DC or Differential Count.

Normal DC or Differential Count of Human:-

Sl.No

Leukocyte (WBC)

%

1.

Eosinophil

4

2.

Basophil

1

3.

Neutrophils

65

4.

Monocytes

5

5.

Lymphocytes

25