Thursday, September 24, 2009

প্রাচীন কালে বস্তুর আকার ও পরিমাণ

সচরাচর কনুই থেকে মধ্যমার অগ্রভাগ পর্যন্ত পরিমাণকে আমরা ১ হাত বলে জানি।কিন্তু প্রাচীন কালের শাস্ত্রকারেরা এই পরিমানকে ১ হাত বলেন নি।তার কারন হিসেবে যেটা বলা হয়েছে যে; সকলের হাত সমান নয়। তাই আমার ১ হাত অন্য লোকের ১ হাত নাও হতে পারে। তাই শাস্ত্রকারেরা একটি “নির্দ্দিষ্ট মান” ঠিক করে দিয়েছেন। মধ্যমার ২য় ও ৩য় পর্বের মধ্যভাগকে; এক মানাংগুলি বা এক অঙ্গুলি বলে। সাধারণত এটা ৮ টি যবোদরের সমান। এবার যবোদর কি? যবোদর=যব+উদর, অর্থাৎ ১টা যবের উদর বা মধ্যের ভাগ। ৮ টা যব পর পর রাখলে তাদের মধ্যভাগের যে মাপ হবে তা এক অঙ্গুলি। এখনকার মতে ১.৩ ইঞ্চি বা ৩.৩ সে.মি. এর সমান।এটাই Standard বা Parameter.
সুতরাং; ৮ টি যবোদর = ১ অঙ্গুলি= ১.৩ ইঞ্চি বা ৩.৩ সে.মি.।
২৪ অঙ্গুলি= ১ হাত =২.৬ ফিট/৭৯.২ সে.মি.।
৪ হাত = ১ ধনু = ১০.৪ ফিট/ ৩১৬.৮ সে.মি.।
২০০০ ধনু = ১ ক্রোশ = ২ মাইল/ ৩.২৪ কিমি।
৪ ক্রোশ = ১ যোজন= ৮ মাইল/১২.৯৬ কিমি।

উৎস:- শ্রীজগন্মোহন তর্কালংকার প্রণীত "নিত্যপূজা পদ্ধতি"।

পুরীর রথ

এই ছোট প্রবন্ধে আমি চেষ্টা করেছি, পুরীর রথ সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানাতে। প্রথমেই আসা যাক, নব কলেবর প্রসঙ্গে। যে নিম গাছগুলি থেকে বিগ্রহগুলির নবকলেবর হবে; সেগুলির কতকগুলি বৈশিষ্ট্য থাকবে। ১) নিমগছের রং ঘন কালো হবে।
২) এই গাছের কাণ্ডের ব্যাস কম করে ১২ ফুট হবে।
৩) এক একটি গাছের ৪ টি প্রধান শাখা থাকবে।
৪) গাছগুলি কোন নদী বা পুকুরের পাশে থাকবে। গাছগুলিকে ৩টি রাস্তার সংযোগস্থলে খুঁজে পেতে হবে।
৫) গাছগুলি বরুণগাছ ও বেলগাছ দ্বারা পরিবৃত থাকবে।
৬) গাছগুলি ৩টি পাহাড় দ্বারা পরিবৃত থাকবে।
৭) নিমগাছের কাছেই কোন আশ্রম থাকবে।
৮) একটি শ্মশান ভূমিও থাকবে।
৯) ভগবান বিষ্ণুর ৪টি পবিত্র চিহ্ন – শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মের ছাপ থাকবে গাছের কাণ্ডে।
১০) নিমগাছের কাছেই উইপোকার ঢিবি থাকবে।
১১) পাখীর কোন বাসা থাকবে না গাছে।
১২) নিমগাছের ওপর কোনদিন বাজ পড়া চলবে না। ঝড়ে, নিমগাছের কোন শাখা প্রশাখা ভাঙ্গা চলবে না।
১৩) নিমগাছের নীচে গোখরো সাপের বাসা থাকতে হবে।
১৪) নিমগাছের নীচে কোন ঝোপঝাড় থাকা চলবে না।
এই ১৪ টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কম করে ৫ টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই নবকলেবরের জন্য সেই নিমগাছ নির্বাচন করা হবে।

সরকারী রেকর্ডে ১৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দ থেকে নবকলেবরের নথীভূক্তকরণ আছে। তারপর ১৮০৯,১৮২৮,১৮৫৫,১৮৭৪,১৮৯৩,১৯১২,১৯৩১,১৯৫০,১৯৬৯,১৯৭৭,১৯৯৬ পর্যন্ত আছে।

বলভদ্রের রথের নাম:- তালধ্বজ্ ।
সুভদ্রার রথের নাম:- দেবদলন।
জগন্নাথের রথের নাম:- নন্দিঘোষ।

রথগুলির বর্ণনা:-

তালধ্বজ্ (বলভদ্র/বলরাম) -
উচ্চতা- ১৩.২ মিটার।
কাঠের টুকরো-৭৬৩ টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- উন্মনী।
রথের কাপড়ের রং- লাল সবুজ।
চাকা-১৬ টি।

দেবদলন (সুভদ্রা) -
উচ্চতা-১২.৯ মিটার।
কাঠের টুকরো-৫৯৩টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- নাদম্বিক।
রথের কাপড়ের রং- লাল কালো।
চাকা-১৪ টি।

নন্দিঘোষ (জগন্নাথ) -
উচ্চতা- ১৩.৫ মিটার।
কাঠের টুকরো- ৮৩২ টি।
ধ্বজার/পতাকার নাম- ত্রৈলোক্যমোহিনী।
রথের কাপড়ের রং- লাল হলুদ।
চাকা-১৮ টি।

উৎস:- আমার পুরীতে সাধনরত অবস্থায় পুরীর পাণ্ডা বন্ধুদ্বয়; শ্রী বনবিহারী পতি ও শ্রীবিপিন পতি, পুরীর সরকারী গেজেট ও শারদীয় “বর্তমানে” প্রকাশিত শ্রী সুমন গুপ্তের প্রবন্ধ।

Tuesday, September 22, 2009

“টাকা –কড়ি” এই সমাসটা খুবই চালু। আবার – “ফ্যালো কড়ি মাখো তেল”! বা “১ ফুটো কড়িও” নেই, “টাকা কড়ির যা অবস্থা!”টাকা তো বুঝি, কিন্তু কড়ি টা কি? কীভাবে ‘কড়ি’ শব্দটা টাকার সঙ্গে জুড়ে গেল? আসুন, দেখা যাক, এর রহস্যটা কি?
ইংরাজীতে বলে cowry যদিও মূলত শব্দটা আফ্রিকান । বোধহয়, এখান থেকেই বাংলা ‘কড়ি’ শব্দটা এসেছে। তা যাক, কড়ি তখনকার দিনে স্বল্প মূল্যের বিনিময় দ্রব্য ছিল, বা নিম্নতম দ্রব্যমূল্যমান। প্রধানত ভারত মহাসাগরে এই কড়ি পাওয়া যেত। এর ওপরের ভাগ চকচকে হওয়াতে এর চাহিদা ছিল প্রচুর।
আফ্রিকা, চীন, ইয়েমেন, সুদান; প্রায় সব দেশেই কড়ির ব্যবহার ছিল।খ্রীষ্টীয় ৪র্থ শতকে পর্যটক ফা-হিয়েনের বিবরণ অনুযায়ী, লোকে তখন কেনাবেচায় কড়িই ব্যবহার করত!
১৯ শতক অব্দি কড়ির ব্যবহার ছিল। রাজারা যখন দান করতেন তখন কড়ি দিয়েই করতেন। রাজা লক্ষণ সেনের নিম্নতম দান ছিল ১ লাখ কড়ি।
কড়ির হিসেবটা ছিল এরকম:-
১০০ কড়ি= শিহায়
৭০০ কড়ি = ফাল
১২০০ কড়ি =কুট্ট
১ লাখ কড়ি = বুস্ত
১০ লাখ কড়ি = ১ স্বর্ণমুদ্রা

সূত্র :- ১৪১৬ সালের শারদীয় বর্তমানে শ্রী বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘ ইবনের সঙ্গে ৭০০ বছর আগে’

Monday, September 14, 2009