Saturday, November 29, 2014

এত তুলো ধুনবে কে ? ( পুরোনো গল্প, বোধহয় আলী সাহেবের লেখা)


++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

একটি ছেলে জাহাজ ঘাটায় গিয়ে দেখলো- একটা জাহাজে তুলো তোলা হচ্ছে, বিদেশে রপ্তানি করার জন্য ।
হঠাৎ ছেলেটার মনে প্রশ্ন এলো- এত তুলো ধুনবে কে ?
ভাবতে ভাবতে পাগলই হয়ে গেল বেচারা ।
কত ডাক্তার বদ্যি দেখানো- কিস্সু হলো না ।
ছেলেটার মুখে খালি বুলি - এত তুলো ধুনবে কে ? খায় না দায় না , সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা !
দিল্লি প্রবাসী এক বন্ধু কোলকাতায় এলো ছুটিতে । এই খবরটা পেয়ে তার বাড়ী গিয়ে শুধু বলল – তুলো ধোনার কোনো দরকারই নেই, জাহাজটা ঝড়ের কবলে পড়ে সমুদ্রে ডুবে গেছে !
পাগল পুরোপুরি সুস্থ হলো ।
================

আবার দোসরা ডিসেম্বর মিছিল । এত মিছিল ধুনবে কে ?

বিয়ে



এক বন্ধু তার ছেলের বৌভাতে নিমন্ত্রণ করতে এসেছে আমার বাড়ী । আমাদের দুজনেরই পরিচিত আর এক বন্ধু তখন আমার বাড়ীতে বসে ।
ওই বন্ধুকে বলল আমার নিমন্ত্রণ করতে আসা মিত্র ।
এই নে তোর কার্ড, তুইও যাবি কিন্তু ফুল ফ্যামিলি নিয়ে ।
একদা বাম মনোভাবাপন্ন বন্ধুটি জবাব দিল- যাবো না !
কেন? তোর বাড়ী গিয়ে কার্ড দেয় নি বলে ! এই বন্ধুত্ব ?
আরে না !
তবে ?
বিয়ে হলো ষ্ট্রাক্চারাল অ্যাণ্ড ফাকশানিং ইউনিট অফ ফ্যামিলি, এগেইন – ফ্যামিলি ইজ ষ্ট্রাক্চারাল অ্যাণ্ড ফাকশানিং ইউনিট অফ সোসাইটি ।
সোসাইটি ইজ ষ্ট্রাক্চারাল অ্যাণ্ড ফাকশানিং ইউনিট অফ আ্য ষ্টেট ।

আই অ্যাম সিরিয়াসলি কনসার্ন্ড অ্যাবাউট মাই ওন ষ্টেট, হেন্স দ্য ডিসিশন !

শ্রি কিসনো সেলুন ও দূর্গা সহায়



(বানানের দায়িত্ব আমার নয়)
==============

আমি এমনিতেই আলসে লোক । অবসরের পর ল্যাদ খাওয়া আরও বেড়ে গেছে । 


বিদেশ প্রবাসী ছোট ভাই দাড়ি কাটার জন্য ফোম, ইউজ অ্যাণ্ড থ্রো রেজর ( ভেতরে আবার তিনটে ব্লেডের টুকরো সযত্নে ঠুসে লাগানো) মানে ওই যে স্যান্ডুইচ রেজর বলে যাকে, সে সব দিয়ে যায় বছরান্তে দেশে এলে।

 কিন্তু কালে ভদ্রে নিজের দাড়ি নিজে কামাই । একে তো চিরকালীন বিতৃষ্ণা আর এখন বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারি না । চোখের দৃষ্টি শক্তিও কম , ফলে ঠিক মত কাটতে পারি না দাড়ি ( নিজের) ।


চাকরি করা কালীন রোজ দাড়ি কাটতে হতো । ওই দুঃখে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকতাম মাঝে মাঝে ।

আদৌ বাস্তবে নেই, এইরকম   রক্তের সম্পর্কের লোক মারা যেতেন ফলে অশৌচ রাখতে হত, এবং দাড়ি কাটতাম না ।

কখনও বা আদৌ না হওয়া- বারবারস্ ইচের জন্য দাড়ি কাটা হত না । মানে, এইসব বাম- ডান- অজু হাত দিতে হত, দাড়ি না কাটার জন্য ।

অবসর পাওয়ার পর ঠিকই করে ফেলেছিলাম – জীবনে আর দাড়িই কাটবো না ।
বেশ রবি দাদু টাইপ চেহারা আর হাতে লীলাকমল নিয়ে বসে থাকবো ইজিচেয়ারে ( সিতু মিঁয়ার লেখা থেকে ধার করা শব্দ) ।

কিন্তু, জীবনে কে আর প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছে এক ভীষ্ম ছাড়া ?

গণ্ড দ্বয়ে অজস্র চুলকুনি আর তিষ্ঠোতে দিল না ।  দিনরাত, মাছি তাড়ানোর মত করে হাত দুটো খালি গালের এপাশ আর ওপাশে কণ্ডূয়ন করে যাচ্ছে ।

একদিন ধূত্তোরি বলে বেরিয়ে পড়লাম, সেলুনের খোঁজে । সাদা কালো দাড়ি তখন সদ্য কচি ধানগাছের মত হাওয়ায় দুলতে লেগেছে, একটু হাওয়াতেই ।

দেখলাম- একটা নতুন সেলুন হয়েছে, হরির দোকান থেকে এগিয়ে ।  সেলুনের নামটাও বেশ আকর্ষণীয় ।


পর পর তিনটে চেয়ার -গদি আঁটা । সামনে পেছনে বড় বড় আয়না । জানলাম তিন ভাইয়ের দোকান । মানে, জিজ্ঞেস করার আগেই হিসটিরি জিওগেরাফি সঅঅঅব জানা হয়ে গেল আমার !


রাজশাহীর লোক শুনে- আরও গদগদ । নাম ধাম সব জেনে নিলো তিন ভাই- কৃষ্ণ, হরি, মধু ।

বরিশাল “পপারে বাড়ী আছিল । ভীষণ ভগবান ভক্ত ওরা । ডেলি “কিস্নের নাম লেখে একশো আটবার ।

দাড়ি কাটার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম কত দিতে হবে?

কত্তা, হয় তো তিরিশ টাকা, তা আফনে হইলেন গিয়া পাড়া আর ওইপারের লোক, কুড়ি ট্যাহাই দিয়েন !

বেরাম্ভন মাইনসের থিকা বেশী নিমু কিয়ার লাইগ্যা ? পাপ –পুইন্য বইলা কথা আছে তো নিকি?”

প্রসঙ্গত, তখন ষ্ট্যাণ্ডার্ড রেট ছিল পাঁচ  বা  সাত টাকা ।
+++++++++++++++

পরপর তিনদিন চন্দ্রশেখর আসে নি । সকালে হরির চায়ের দোকানে দেখা হয়েছিল ।

কেন আসছে না জিগ্গেস করাতে বলল – এখন সিজন ! তাই বাড়ীতে এসে দাড়ি কাটতে পারছে না  ও !

আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস ( এবারে ঠিক বানান )  করেছিলাম- চুল দাড়ি কাটার আবার সিজন কি?

জবাব এলো – শীত আসছে, তাই টপাটপ বুড়ো, বুড়ীরা মরে আর ঘাটকাজের কাজ তো লেগেই থাকে রোজ ।


আগামীকাল একটা বৌভাতের “লিমন্ত আছে, তাই সন্ধেবেলায় বেরিয়ে পড়লাম দাড়ি কাটাতে  ( কাটতে নয় কিন্তু) ।

সকাল হলেই রোব্বার ,তাই তিল ধারণের “এস্থান থাকবে না সেলুনে ।

যেতেই দেখলাম- কৃষ্ণের মুখ বিষণ্ণ ।

একদিনের একটা বাসী কাগজে  প্রয়াত তপন বাবুর ছবি দেখিয়ে বলল – ইনি গত হইসেন, হেয়ার লাইগ্যা মন খারাপ ।

আমিও বললাম- জানি খবরটা, খুব পণ্ডিত মানুষ ছিলেন, কীর্তিপাশার জমিদার বংশের ছেলে ।

কৃষ্ণ গম্ভীর হয়ে বলল – পণ্ডিত, কি কন ? জানেন উনি কাব্যতীর্থ আছিলেন ।

=========
কথা না বাড়িয়ে দাড়ি কাটিয়ে চলে এলাম- এক অজানা তথ্য তপনবাবুর সম্বন্ধে জেনে।

( এখন কুড়ি টাকাই নেয়, তবে বেশ যত্ন নিয়ে দাড়ি কেটে দেয় )









Wednesday, November 26, 2014

২৬/১১

০৮/০২/২০০৮ য়ে আমি প্রথম নেট কানেক্সান নেই বাড়িতে । কেবলের লোকই জোরাজুরি করে নিতে ।
তার আগে টুকটাক দরকার হলে কাছের একটা সাইবার কাফেতে যেতাম এখন সেটা অবশ্য উঠে গেছে ।
তখন মাসে - ২১০ টাকায় আনলিমিটেড ব্রাউজিং এবং ডাউনলোড !
হিসেব করে দেখেছিলাম- মাসে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতো সাইবারে ।
তা ছাড়া- রাতে নেট সার্ফ করাই যেতো না, কারণ রাত ১০টার পর সাইবার বন্ধ হতো।
এই সময় আমার ভাগ্নি ময়ূরিকা সন্ধান দেয়- অরকুটের । প্রোফাইল খুলি, কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে বারবার প্রোফাইল হ্যাক হতো ।
ধীরে ধীরে শিখলাম- মোটামুটি কিভাবে প্রোফাইলকে সুরক্ষিত রাখা যায় ।
তখন, বাংলা টাইপ জানতাম না ঠিক ভাবে, তাই হয় ইংরেজি বা বাংরেজিতে স্ক্রাপ করার অভ্যাস ছিল ।
এপ্রিলের ২২ তারিখ এলো । ইংরেজিতেই ১৯৭৬ সালে জন্ম হওয়া বড় ছেলের অকাল প্রয়াণ সম্বন্ধে লিখেছিলাম ।
দিন ছয় / সাত পরে একটা বন্ধু অনুরোধ এসেছিল । প্রোফাইলে লেখা আছে :- সেন্ট্রাল গভঃ এম্প্লয়ী ।
নাম দেখে বুঝলাম কেরালীয়ান ।
বন্ধু হয়ে গেলাম । ছোট্ট একটা প্রাইভেট মেসেজ এসেছিল- থ্যাংকস্ ।
আমিও একটা মেসেজ করেছিলাম । কিন্তু উত্তর এসেছিল- প্রায় ১০/১২ দিন পরে , লেখা:-
সরি- আমি খুব ব্যস্ত থাকি কাজে তাই বেশী নেট সার্ফ করতে পারি না । ভালো থেকো। একবার কেরালা এসো ।
এরপর আর কোনো স্ক্র্যাপ বা মেসেজ চালাচালি হয় নি । বন্ধু বাড়ছে প্রোফাইলে, তাই ভুলেই গিয়েছিলাম, ওর কথা ।
অবশেষে সেই ২৬/১১ ।
মাস চারেক পরে বুজলাম ছেলেটি এনএসজি কমাণ্ডোর মেজর ছিল ।
নাম সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণণ্
নাম বিভ্রাট হতে পারে ভেবে একটা মেসেজও করি । কিন্তু সেই মেসেজের উত্তর আসে নি কোনোদিন ।
তারপর ওর প্রোফাইলের লিংক আমি শেয়ারও করি অরকুট এবং ফেসবুকে । অনেক পুরোনো অরকুট বন্ধু জানেন সেটা ।
সেপ্টেম্বর ৩০ তারিখ ২০১৪ তে অরকুট উঠে যাবে জেনে ভেবেছিলাম- ওর অ্যাকাউন্টের কিছু স্ক্র্যাপের স্ক্রিন শট/ ফোটো ডাউনলোড করে রাখবো ( কিন্তু একটাও উর্দ্দি পরিহিত ছবি ছিল না, শুধুই মা বাবা আর কেরালার ছবি) ।
কিন্তু ভাবাটা আর বাস্তবায়িত হয় নি, কারণ আমি নিজেই নিজেরটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
২৬ /১১ এলে মনে পড়ে ।

আমি পুত্রশোক ভুলেছি , খালি ওর জন্ম আর প্রয়াত হবার দিনটা কোনোরকমে মনে রাখি, আর সন্দীপ তো....................

Tuesday, November 25, 2014

চামচাগিরি ও সাধু



হরি আজ ক্ষেপে গেছে । কমলবাবু বলেছেন- তুই সকাল বিকেল চামচা গিরি করিস ।
আমি কাউরে তেলাই না, বোজ্জেন ? চামচা গিরি করুম কির লাইগ্যা ?
এই ! এই প্রশ্নই তোকে অনেকদূর নিয়ে যাবে এমনকি সিদ্ধিলাভও করতে পারিস রে হরি !!!- কমলবাবুর জবাব ।
থোহেন্ আফনের‌্ কথা ! আগে কন্- আমি কার চামচা গিরি করসি?
এটা বুঝলেই তো সব । উপেক্ষার হাসি কমলবাবুর মুখে !
দ্যাহেন ! ফাল মাইরেন না ! আমার সাদা মনে কাদা নাই ! আমি চামচাগিরি করুম ?
দিনরাত, গেলাসে চামচ নিয়ে ঠনঠন করে যাচ্ছিস, আর চামচা গিরি করিস না? বুক বাজিয়ে আবার বলাও হচ্ছে ! কে রা তুই ? পাগল না অনন্তমূল!
হরি এবারে একটু নরম । অনন্তমূল কি ?- হরির জিজ্ঞাসা ।
যাদের শেকড় বাকড়ে বিশ্বাস , তারা মঙ্গল গ্রহের প্রতিকারের জন্য পরে ! চারিদিকেই তো এখন মঙ্গলের অমঙ্গল !
কে যে গ্রহটার নাম রেখেছিল মঙ্গল ! দীর্ঘনিশ্বাস কমলবাবুর ।
ব্যাপারটা অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে, বুড়ো কথা ঘোরানোর চেষ্টা করল !
আচ্ছা, কমলদা, আপনি সিদ্ধি লাভের কথা কি যেন বলছিলেন ?
সে অনেক কথা ভাই । বলতে গেলে বাজার বুজার হবে না ।
সদ্য আম্রিগা ফেরত ননী বলল সকাল বেলাতেই আপনি বুজ্ করেন নাকি?
দ্যাখো হে ! তুমি বড় কোম্পানীর লোক- আমি জানি । মাঝে মধ্যে বিদেশেও যাও । কিন্তু খাস বাংলা ককনী কি করে বুঝবে হে, ঠেকে না এলে ?
আমরা বলি- আহ্নিক !- কমলবাবু উত্তেজিত।
থাক্ থাক্ ! আপনি সিদ্ধিতেই ফিরে আসুন ! ননীর আবার মুখক্ষেপ !
হুম ! সে অনেককাল আগের কথা, বুঝলে হে ? একজন বনের মধ্যে সর্টকার্ট করতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে কেলোর কীর্তি । ঠিক রাস্তাটা খুঁজতে খুঁজতে সন্ধে হয়ে গেল ।
ইতি মধ্যে একটা বাঘ.............
থামুন, থামুন ! বুড়োর বাধা !
কমলবাবু অবাক !
কেন ?
মানে বলছিলাম, তখন জিপিআরএস ছিল না ? নিদেন পক্ষে একটা তদন্তকারি.........
থাক্ ! বোঝা গেছে, তোমার বিদ্যের দৌড় । বাঘকে ওভাবে আমি থামাবো না ! তা, লোকটাকে বাঘ তাড়া করল । বাঘে লাফ দ্যায় আর লোকটা গাছের ফাঁকে দৌড়চ্ছে ।
করে করে লোকটা দেখল, একটা বড় গাছের নীচে এক সাধু বসে জপ করছে পঞ্চমুণ্ডির আসনে ।
চট করে গাছের ওপর হাঁপাতে হাঁপাতে লোকটা চড়ে গেল বাঘের হাতে বাঁচতে !
বাঘটাও সাধুর ঘাড় মটকে ধরে , ধাঁ- ডিনারের জন্য ।
সকালবেলায় লোকটা নেমে ওই পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে ধ্যান করতে করতে মা কালীকে ডাকল !
ডাকতে ডাকতেই দ্যাখে- স্বয়ং মা দাঁড়িয়ে সামনে ।
বল বাবা, কি জন্য ডাকছিলে ?
বলছিলাম কি ! আমি পাপী তাপি মানুষ ! চুরী ডাকাতিও করি । গতকাল আমি আমার গ্রামে ফেরত আসছিলাম একটা দাঁও মেরে ।
তা, সাধু আপনার ধ্যান করছিল, তাকে না বাঁচিয়ে আমাকেই রক্ষা করলেন ?
মুচকি হেসে মা কালি জবাব দিল যাঃ, তোর সিদ্ধিলাভ হলো !
কেন কেন ?
ওই তোর মনে প্রশ্ন ! কে ? কেন ? তাই ! খালি চামচাগিরি করলেই হয় না, প্রশ্নও করতে হয়, বুইলি ?
-------

হরি বলল শা........................ ।

Monday, November 24, 2014

###অন্নপূর্ণার হাতা###




পুরোনো সোনা ভাঙ্গিয়ে অনেকেই নতুন গয়না গড়ান !‍ কিন্তু ষ্টীলের হাতা ভেঙ্গে অনেক হাতা বানানোর কথা একমাত্র
গল্প হলেও সত্যিচলচ্চিত্রে শুনতে পাবেন। সংলাপটি সংলাপ- রচয়িতার, প্রকাশ ভঙ্গিমা অভিনেতার।
আসলে, বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে যে সব অভিনেতারা এসেছিলেন, তাঁদের গয়নার মত ভাঙ্গিয়ে যদি অন্য অভিনেতা বানানো যেত, তা হলে তো আর কথাই ছিল না। সেটা তো আর হবার নয়!
যদি কখনও শোনেন, “অরণ্যদেবতাঁর প্রিয় নেকড়ে ডেভিলকে নিয়ে পার্ক ষ্ট্রীটের রাস্তায় হাঁটছেন, মানুষে বিশ্বাস করবেন।

যাদুকর ম্যানড্রেক”, মহাজাতি সদনে ম্যাজিক শোকরছেন, এটাও বিশ্বাস করলে কারও কিছু বলার নেই। পাশাপাশি- ফেসবুক, টুইটারের যুগে নাতনীর কি নাম রাখা হবে, এটা নিয়ে যখন সবাইকে ভাবতে বলা হচ্ছে, তখন রবি ঘোষ দস্তিদারের অভিনয়ের অনবদ্য অবদান নিয়ে কিছু লেখা হচ্ছে, এটা বিশ্বাস করবেন না।
আমাদের এই পোড়া ভারতে তথা বাংলার এটাই মুশকিল ! মুম্বাইয়ের অভিনেতা, জালাল আগা একবার বলেছিলেন- ইস্! আমি যদি রবিদার মত অভিনয় করতে পারতাম।




“সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। আমরা জুহুতে
পিকুছবির শ্যুটিং করছি। সেটে রয়েছে ইরফান খান, দীপিকা পাড়ুকোন এবং তিনি। সকাল থেকে ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে মিটিং করে শটটা প্ল্যান করেছি। টাইম মতো শ্যুটিং শুরু।
হঠাত্‌ শটের মাঝখানে দেখি উনি দীপিকাকে বলছেন, “দীপিকা ডু ইউ নো দিস অ্যাক্টর কলড্ রবি ঘোষ?”
প্রশ্নটা করে উনি ইরফানের দিকেও তাকালেন। দীপিকা, ইরফান কেউই রবি ঘোষকে চিনতেন না।

ভারতবর্ষে রবি ঘোষের থেকে বড় কমিক টাইমিং আর কোনও অ্যাক্টরের না কোনও দিন হয়েছে, না কোনও দিন হবে। যখন বলছেন তখন আমি, ক্যামেরাম্যান, দীপিকা, ইরফান শুধু হাঁ করে ওঁকে দেখছি আর কথাগুলো শুনছি।”
=====================
এখানে আমি অর্থে পিকুর পরিচালক সুজিত সরকার । আর যিনি বলছেন তিনি অমিতাভ্ বচ্চন ।
আনন্দ প্লাসের অক্টোবর ১০ য়ের ২০১৪ তে বেরিয়েছিল লেখাটা ।
==================
পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার ।

২৪শে নভেম্বর, ১৯৩১ সালে কলকাতায় জন্ম ।

তখন সবে এসেছে, আলফা চ্যানেল- কেবলে । এখন যেটা “ জি” ।  মাত্র আধঘন্টার জন্য  বাংলাতে একটা অনুষ্ঠান হতো ।
দেখানো হত – “দে রে” নামে একটা সিরিয়াল ।  চিত্রনাট্য খুব একটা উঁচুমানের না হলেও খালি রবি ঘোষের মামার চরিত্রে অভিনয় ছিল দেখার মত ।

হতভম্ভ হয়ে “ লেট রিঅ্যাকশন” গুরু উৎপল দত্তের কাছে শেখা হলেও – সেটাতে তিনি যোগ করেছিলেন- একটা অন্য মাত্রা ।

সন্দীপ রায়, ফেলুদা করতে গিয়ে নতুন ফেলুদাপেয়েছিলেন বলে আবার ফেলুদা সিরিজ সেলুলয়েডের পর্দায় আনতে পেরেছেন! তবে বাঘা”? না! তিনিও পারেন নি নতুন গুপী- বাঘাতৈরি করতে। কারণ? ওই যে- বাঘাআর হবে না! ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থেকে, ঈষৎ তোতলার মত সংলাপ বলা আর কি কেউ করতে পারবেন? ১৯৯৭ সালের চৌঠা ফেব্রুয়ারি বাঘাচলে গেছে হাল্লা রাজার দেশে। কারও সাধ্যি নেই, সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনার! না, নাটকে; না চলচ্চিত্রে!
পঁয়ষট্টি বছর বয়সে যদি তিনি যদি চলে না যেতেন তবে চব্বিশে নভেম্বর দু হাজার চোদ্দতে তাঁর বয়স হত তেরাশি ।
 আদতে বরিশালের লোক হলেও, জন্ম তাঁর কোলকাতাতেই ১৯৩১ সালে। সাউথ সুবার্বন স্কুলে পড়াশোনার পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ঠিকই , তবে ভেতরের অভিনয়ের আকুতি নিয়ে গেল উৎপল দত্তের পি. এল. টি বা পিপলস লিটল থিয়েটারে। অভিনয়ের ব্যাকরণ শেখাটা জলভাত হয়ে গেল উৎপল দত্তের তত্ত্বাবধানে, সাথে ছিল তাঁর অর্ন্তনিহিত অভিনয় সত্ত্বা!!!!!
অঙ্গারনাটকে এই স্ফুলিঙ্গ দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। তারপর এলো অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের নাটক আরোহণ
কমেডিকে যে উচ্চাঙ্গ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটা রবি ঘোষের সমস্ত ছবিতে, বিশেষ করে অভিযান”(১৯৬২), “অরণ্যের দিনরাত্রি ”(১৯৬৯), “জন- অরণ্যে”(১৯৭৬) নটবর মিত্রর চরিত্র, এইগুলোর সব কটিতেই সংলাপ বলার ভঙ্গি- কোথাও অপ্রত্যাশিত ভাবে একটু থেমে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজির মিশেল, একটা অনন্য শৈলী তৈরি করেছিল। এটাই রবি ঘোষিয় ট্রেডমার্ক। বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রে এই জাদু আর নেই!!!!!! সূক্ষ্ম রসজ্ঞান সংলাপেও নেই। এখন পাবলিক খাবেএই ধরণের সংলাপ রচনা করা হচ্ছে। মারবো এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানেএই জাতীয় সংলাপে রসজ্ঞান আশা করাটাই বৃথা! বহু বছরের, বাংলা সিনেমার উচ্চ মানের কমেডি উপাদান বিলুপ্ত। সাথে রবি ঘোষরাও নেই।
আধুনিকোত্তর বাংলা সিনেমাতে যে ধরণের পণ্য বিপণনের খেলা চলছে, তাতে এই ধরণের অভিনেতারা বেঁচে থাকলেও লাভ হতো না। ক্ষুরধার হাজির জবাব, রঙ্গ তামাশা- রবি ঘোষদের সঙ্গেই বিদায় নিয়েছে।
===========

শেষে, এই বিরাট অভিনেতা যতখানি বড় অভিনেতা ছিলেন, ততখানি বড় পরিচালক ছিলেন না ।

ফেসবুকেরই বন্ধু রজতের কাকা প্রযোজনা করেছিলেন বন্ধু রবি ঘোষ পরিচালিত নিধিরাম সর্দার ।

বক্স অফিসের মুখ দেখে নি সেই চলচ্চিত্র ।

========

জন্মদিনে প্রণাম ।





Friday, November 21, 2014

কোরপান শেখ

Wednesday, November 19, 2014

সিনেমার ছড়া

Monday, November 17, 2014

বাস্তু হারা



সকালে, হরির দোকানে  এমন একটা খারাপ খবর পাবো, সেটা কল্পনাতেও আসে নি।

বলছি, বলছি- এত তাড়া কিসের ?

জানি খবরের কাগজে প্রথম পৃষ্ঠায়, মৃতদেহের ছবি দেখলে মনটা ভারি হয়, সেটা অনস্বীকার্য , তবে এটা একেবারেই অন্য খবর ।

নীতু বাবু রিটায়ার করেছেন – বেশ কিছুদিন হলো । একমাত্র ছেলে- নয়ডায় চাকরি করে ।

পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাবেন না বলে- ছেলের কাছে যান নি । স্বামী – স্ত্রী, টোনাটুনির সংসার ।

বয়সকালে টুকটাক শরীর খারাপ হলেও- সে রকম মারাত্মক কোনো অসুখ নেই, দুজনেরই ।

সরকারি চাকরী করতেন বলে মাস গেলে একটা মোটা টাকা পেনসনও পান । রাজনীতি ব্যাপারটাকেই এড়িয়ে থাকার একটা প্রাণপণ চেষ্টা আছে ওনার ।

তবে, প্রচুর বই পড়েন । দিনে চারটে খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া চাই ওনার । দুটো ইংরেজী আর দুটো বাংলা সংবাদপত্র ।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে ।  তবে, বেশী অনলাইন হন না । মেল চেক করে, স্কাইপে তে কথা বলেন ছেলে- বৌমা – আর নাতির সাথে ।
বড় বংশের লোক !  প্রচুর আত্মীয় আর বন্ধু বান্ধব ।


আজ, হরিকে বললেন :- আমার ফ্ল্যাট টা বেচতে হবে । তুই তো দালালি করিস – খদ্দের দ্যাখ্ !

 আমি অবাক হয়ে বললাম – সে কি মশাই, বেশ তো আছেন, যাবেন কোথায় ?

ছেলের কাছেই চলে যাবো ।

কেন ? এই তো বলতেন- বাংলা ছেড়ে যাবো না বিদেশ বিভুঁইয়ে । কি গণ্ডগোল হলো আপনার ?

অন্য কিছু নয়- আত্মীয় আর বন্ধুদের অত্যাচারেই ছাড়বো এই বাংলা ।

কেন, কেন ? তারা আবার কি করলো ?
 কি যে বলি ! বলতেও লজ্জা করে ।

আরে বলুন বলুন- জানা দরকার । আমরা এরকম একটা বন্ধুকে হারাবো?

রোজ একটা করে নেমত্তন্ন । আজ বিয়ে, কাল জন্মদিন, পরশু পৈতে, তার পরের দিন বিবাহ বার্ষিকি  - শ্রাদ্ধ, সব মিলিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ ।  উপহার নিতেই হয়,  তাতে আবার সবাই কাছের লোক । বৌ বলে- সোনা টোনা না দিলে হয় ? একটা ফ্যাড়ফেড়ে সোনার দুল বা আংটির দামই হলো মিনিমাম – আড়াই হাজার, সাথে ট্যাক্সি খরচ ।

তার পর ?

গতকালই হিসেব করে দেখলাম, এ মাসে যা পেনসন পেয়েছি, তার সবটাই চলে গিয়ে আরও চার হাজার টাকা লেগেছে এক্সট্রা । এরকম প্রকৃত ঘাটতি হীন ভারসাম্যমূলক বাজেট নিয়ে মশাই- সরকার চলতে পারে, আমি পারবো না । তাই দূরে থাকাই ভালো ।
ওখানে কি আর নেমত্তন্ন পাবেন না ?

পাবো, তবে সশরীরে তো আসতে হবে না । টেলিফোনে আশীর্বাদই কাফি । শ্রাদ্ধ হলে- মনোবেদনা প্রকাশ । মাসে – বড়জোর ৪০০ টাকা টেলিফোনের বিল আসবে, ওয়ান ইণ্ডিয়া প্ল্যানে ।

=========
বিরস বদনে উঠে গেলেন নীতু বাবু । আধ খাওয়া চায়ের গ্লাসটাও হাঁ করে বসে থাকল, ইটের ওপর ।





Friday, November 14, 2014

সান্ধ্য আড্ডা




বিকেল বেলা, বুকি ঘোষের ফোন :-

অ, রামকিসনোদা, দোকানে আসেন না ক্যা আড্ডা মারতে ? কি যে দিইন রাইত বাড়ীতে বইয়া যন্তরে খুটুর খাটুর করেন !

বারে !  তুমিই তো বললে- দিন কয়েক এখন আসবেন না, আমি ব্যক্তিগত কারণে ব্যস্ত থাকবো !

কইসিলাম তো ! অহনে ফিরি, আইয়া পড়েন ।

যেতেই চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বলল । দেখি, চেয়ারের বসার জায়গায় গদী লাগানো ।

বাঃ ! বেশ হয়েছে তো ! তা গদী লাগানো কেন আবার ?

আর কইয়েন না ! আইজ্ ননীদার লগে বাজারে দেখা ! কইলাম – এত সকালে আপনে বাজারে ?

কি বলবো বুকী ! একটু যে শান্তিতে যে ঘুমোবো, তার উপায় নাই !

ক্যান ?

আজ সকাল হতেই বৌ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছে ।

অ ! এই কথা ! আমার বৌ, মানে হইলো গিয়া আপনের বৌমা, আমারে পেছনে হাঁটুর গুঁতা দিয়ে বাজারে পাঠাইসে । বুজ্জেন রামকিসনোদা, আপনার কি কেস জানি না, তয় হইলেও হইতে পারে ভাইব্যা, আপনার জন্যি একটা গদী লাগাইসি ।

আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম ।

অপু বিষণ্ণ বদনে বলল – রামকিসনোদা, আপনি তো ওষুধ বেচেছেন দীর্ঘদিন, এর কোনো ওষুধ নেই ?

আমি কিছু বলার আগেই, বুকি বলল – ধুরঃ ! আমার কাছেই তো ওষুধ আছে, তয় বানাইতে লাগবো ।

কি, বল্ তো বুকী – আমিও উদ্রগ্রীব ।

আপনে এই জিনিস গুলা জোগাড় কইর‌্যা আমার কাছে আইসেন ওই বিস্যুৎবার ।

বলো ! আমি ঠিক নিয়ে আসবো !

কইত্যাসেন ?

হ্যাঁ !

তাইলে শোনেন ! কচ্ছপের লোম- একজোড়া, জলের শিকড়- দুইহ্যান্, রোদ্দুরের গুঁড়া -৫০ গ্রাম আর বাতাইসের ডগা- একখান ।

 এগুলো পাবো কোথায় ?

তাইলে নিস্তার নাই ।

গদা বলল – এই বুকী থাম্ তো ! খালি ঘেউ ঘেউ করিস, কাজের কথা বল্

অ্যাই ! ক দেহি, কুত্তারা ঘেউ ঘেউ করে ক্যান ?

ভগবান ওই রকম করেছে ! 

দ্যাহো দেহি ! আসল কথাই জানস না !

কি ?

কোনো কুত্তারে ঘি দ্যায় না খাইতে !

জানি তো- লোম উঠবে তো !

তুই জানস্, কুত্তারা কি জানে ? অরা খালি চেঁচায় – ঘিউ ঘিউ ! উরুশ্চারণ করতে গিয়া ঘেউ ঘেউ হইয়া গেসে ।

তোর দেখি, ভালো বুদ্ধি ! এত রাখিস কোথায় ?

রাখি না, শিকসি !

কি রকম ?

তহন আমি বেকার, কাজ কাম নাই ! সামনের বাড়ীর মদন কাকায় কইলো – বুকী ! বেকার ঘুরস ক্যা ?

কি করুম ?

ব্যবসা কর !

ক্যাপিটাল কই পামু ?

ক্যাপিটাল লাগবো ক্যা ? সকালে উইঠ্যা,  দুগো কাউয়া ধরবি !

ধরলাম !

অগো  খালি পাখনাগুলারে রং কইর‌্যা, নাগের বাজার মোড়ে বইয়া কবি :- লইয়া যান, অচিন দেশের অচিন পাখী !

খেপসেন ? তারপরে কা কা কইর‌্যা চিক্কুর মারলেই গেসি ! মাইরা  ছাল ছাড়াইবো আমার পাবলিকে !

কি যে কস ! ডাকলেই কবি – দ্যাখসেন ! এই বাচ্চা বয়সেই কথা কয় ! এহনই কাকা কয় । তারপরে গিয়ে , বাবা, চাচা মা, কত ডাকবো !

=======
আমার আর সহ্য হলো না , উঠে চলে এলাম !

Wednesday, November 12, 2014

চা শিল্পে ধর্মঘট

Monday, November 10, 2014

সাফল্য

যে সময়ের কথা বলছি, তখন ষ্টীম এঞ্জিন পুরো মাত্রায় চালু ভারতীয় রেলে । কয়লা যারা ভরতো এঞ্জিনে , তাদের একটা ইউনিয়ন ছিল- কোল অ্যাণ্ড আসেজ ইউনিয়ন বা ওইরকমই একটা কিছু, এখন সঠিক মনে নেই ।
একটা মই বেয়ে, মাথায় ঝাঁকা ভরতি কয়লা নিয়ে ফেলতে হতো এঞ্জিনের কয়লা রাখার জায়গায় ।
সাধারণত বড় ষ্টেশনেই জল এবং কয়লা ভরা হতো । জলের জন্য বিশাল একটা ওল্টানো “এল” য়ের মত মোটা কল থাকতো । দশ বা পনেরো মিনিট ষ্টপেজের মধ্যেই কয়লা আর জল ভরতে হতো এঞ্জিনে ।
জল ভরতো অবশ্য- সেকেণ্ড ফায়ারমান আর ড্রাইভার তদারকী করত সে সবের ।
এঞ্জিনের দুটো ভাগ ছিল । একটা মূল ভাগ আর একটা কয়লা আর জল রাখার জায়গা । মোটা লোহার পাত দিয়ে জোড়া থাকতো দুটো ভাগ ।
এঞ্জিনে বসার একটা ছোট জায়গা থাকতো শুধু ড্রাইভারের জন্য, বাঁদিকের দরজার কাছে কিন্তু ফার্ষ্ট আর সেকেণ্ড ফায়ারম্যানদের বসার জায়গা থাকতো না ।
ওরা পালা করে কয়লার ঢিবির ওপরেই বসতো বিশ্রাম নেবার জন্য ।
শীতকালে, তেমন একটা কষ্ট হতো না কারোই তবে গরম আর বর্ষার দিনে অবস্থা ভয়ঙ্কর হতো ওদের ।
ব্রিটিশরা বিশ্বাস করতো এদের আরামের ন্যূনতম সুযোগ টুকু দেওয়া উচিত নয়, কাজের সময় । ভারতীয়ে রেল সেই ধারাটা ধরে রেখেছিল ।
ডিজেল আর ইলেকট্রিক এঞ্জিন আসার পর অবশ্য অবস্থাটা পাল্টেছে- এটা অনস্বীকার্য।
যাক্ যে কথা বলছিলাম ! এঞ্জিনে কয়লা ভরা ওই নির্ধারিত সময়ে বেশ পরিশ্রমের কাজ, কিন্তু পুরো কাজটাই করতো ঠিকাদার সংস্থা । এই সংস্থাই নিয়োগ করতো মজুরদের ।
সারাদিনে বেশ কয়েকটা এঞ্জিনে কয়লা ভরতে হতো । মজুরী একটা ছিল বটে সরকারি ভাবে, তবে ঠিকাদার তার চেয়ে অনেক কম পয়সা দিত শ্রমিকদের ।
পেটের তাগিদে, সেটাই মেনে নিতো ওরা ।
সালটা ১৯৬৫ ।
সদ্য গতবছর হায়ার সেকেণ্ডারি পরীক্ষা পাশ করেছি , আর বাবা নিয়ে চলে এসেছিলেন ওডিশা আন্ধ্রা সীমান্তের পারলা খেমুণ্ডির কলেজে ।
তাঁর ধারণা ছিল- বড় ছেলে কোলকাতায় থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে ।
এদিকে কোলকাতা ফেরত এক বঙ্গসন্তান কলেজে এসেছে – বাম রাজনীতির গন্ধ গায়ে নিয়ে, ফলে একটা হিরো ইমেজ আমার ।
বলতে দ্বিধা নেই, সেটা বেশ তারিয়ে উপভোগ করতাম ।
এদিকে বারবার কোলকাতা – পারলাখেমুণ্ডি যাবার ফলে, স্থানীয় দুটো ভাষা, তেলগু আর ওডিয়াতে দখলও ছিল আমার ।
(তেলগুতে আর সেই দখলটা নেই আমার অনভ্যাসের ফলে, তবে এখনও মোটামুটি কাজ চালানোর মত কথা বলতে পারি, তবে ওডিয়া এখনও মাতৃভাষার মত বলতে পারি ।)
পলাসা, কোলকাতা – মাদ্রাজ (চেন্নাই) রুটে এখনও বড় ষ্টেশন । পারলাখেমুণ্ডি থেকে বড় লাইনের ট্রেন ধরতে হলে ৩৮ কিমি দূরের ওই ষ্টেশনেই যেতে হতো সবার বাসে চেপে।
ন্যারো গেজ লাইনের ট্রেন ধরে নৌপাদা ষ্টেশনে যাওয়া যেত বটে, তবে সব ট্রেন ওখানে দাঁড়াতো না ।
========
একবার ঠিক হলো পলাসাতে আমাকে পাঠানো হবে, ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি বক্তা হিসেবে ।
তেলগু তে বক্তব্য রাখতে হবে । এক নেতার কাছে, কিছু প্রতিশব্দের জন্য নোটস্ নিলাম ।
পশ্চিমবাংলায় কিভাবে বিভিন্ন আন্দোলন হচ্ছে, তারই একটা সংক্ষিপ্ত রূপরেখা জানাতে হবে আমাকে ।
বিপদ বাধলো যেদিন যাবো সেই দিন । একজন বাস ড্রাইভার মারা যাওয়ার জন্য সেদিন মোটামুটি বাস বন্ধ ।
কিন্তু যেতেই হবে । খবর দেওয়া হয়ে গেছে । একজন পরামর্শ দিলেন সাইকেল চালিয়ে পলাসা চলে যাবার জন্য । সাথে আরও একজন থাকবে অন্য আরেকটা সাইকেল নিয়ে আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য ।
অল্প ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে, বাড়ীতে বললাম- পিকনিক করতে যাচ্ছি । ভোর ছটায় বেরিয়ে পড়লাম দুজনে ।
রাস্তাতে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে পলাসা পৌঁছলাম সকাল সাড়ে আটটার সময়।
সভা শুরু হবে বেলা ১০ টায় । তাই বিশ্রাম নিতে গেলাম- একজনের বাড়িতে । হাতে বানানো ইডলি দোসা, চাটনি, সাম্বার খেলাম প্রাণ এবং পেট ভরে ।
বিশ্বাস করুন- ওইরকম স্বাদ, পরে আর কোনোখানে পাই নি আমি । খিদের মুখে তো অনেকবারই খেয়েছি, তবে ওই “টেস” এখনও আমার জিভে ।
১২ ঘন্টা কাজ করে মজুরী পাওয়ার কথা দৈনিক আট টাকা, কিন্তু হাতে পান পাঁচ টাকা। সাইন করতে হয় একটা ভাউচারে আট টাকারই ।
সভার শেষ বক্তা ছিলাম, আমি । এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা প্রাণ ভরে বললাম । উত্তেজনার চোটে তোতলানোও ছিল কারণ, তেলগুতে কথপোকথন এক রকম আর ভাষণ বাজী আরেক রকম ।
প্রচণ্ড হাততালির মধ্যে, সভা শেষ হলো বেলা তিনটের সময় । দুপুরে গরম ভাত আর ঝাল ঝাল টক টক পাঁঠার মাংস খেয়ে রেডি ফেরার জন্য ।
এর মধ্যেই খবর চলে এলো- ঠিকাদার লোক লাগিয়েছে আমাকে মারবে বলে ।
একটা খালি ট্রাক দাঁড় করিয়ে জানা গেল তারা ফিরছে পারলাখেমুণ্ডিতে । আমাদের দুজনকে সাইকেল শুদ্ধু তুলে দিলেন ওঁরা । সাথে আরও দুজন এলেন আন্ধ্রা সীমান্ত পার করিয়ে দিয়ে তার পর ফিরবেন । ওনাদেরও সাইকেল তোলা হল বেডফোর্ড ট্রাকটাতে ।
সত্যি বলতে কি, গরম বক্তৃতা দিয়ে যতটা গরম হয়েছিলাম, ততটাই ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলাম ভয়ে ।
নিরাপদেই বাড়ী ফিরেছিলাম অবশ্য ।
==========

চার পাঁচ দিন পর খবর এসেছিল- আট টাকা না হলেও, মজুরী এক টাকা বেড়ে ছয় টাকা হয়েছিল ।

সলিলকি-৮

গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ( পূর্বতন অবিভক্ত ভারত) বরাবরই বহিরাগত আক্রমণ মুখে পড়েছে বারবার । প্রথম দিকের আক্রমণের উদ্দেশ্য কিন্তু সাম্রাজ্যবিস্তারের লক্ষ্যে ছিল না । বহুমুখী ধনসম্পদ লুট করাই ছিল এই সব আক্রমণের উপজীব্য । ধনসম্পদের মধ্যে মণি মাণিক্য তো ছিলই, তাছাড়া ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান, নানা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের অঢেল প্রাচুর্য । আক্রমণ কারীরা বারবারই এসেছে- এই কারণে । আমরা ইতিহাসে পড়েছি :- গজনীর সুলতান মাহমুদ (৯৯৭-১০৩০ খ্রীঃ) ভারতে প্রায় ১৭ বার অভিযান চালান । স্থায়ী কোন সাম্রাজ্যের বিস্তার, তার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু তারও আগে ভারতে আক্রমণ চালায় আরবরা – ব্যবসার কারণে, ৭৭০ খ্রীঃ নাগাদ । কোনো ব্যবসা করতে গেলে, দরকার হয় টাকা । আর টাকার কারণেই এই সব আক্রমণ হয়েছিল । ড. ঈশ্বরী টোপ্পা বলেন, মাহমুদ ভারতের মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন কারণ, তাতে বিপুল ধনরত্ন ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল। সেই সময়কার সামাজিক পরিস্থিতি যদি দেখি, তবে একটা জিনিস আমাদের অবশ্যই জানা উচিত, তখনকার সমাজ মূলত দুটো ভাগে বিভক্ত ছিল – ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ । সাহিত্য- চিত্রকলা- মণি মাণিক্য, সংস্কৃতি সবই এই মন্দির কেন্দ্রিক ছিল আর সেটা আক্রমণ কারীদের চোখ এড়ায় নি । ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ দের মধ্যে ছিল এক প্রচণ্ড ব্যবধান । এই কারণে দৃঢ় কোনো বন্ধন গড়ে ওঠে নি এদের মধ্যে । এই কারণেই ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় ফাটল ধরে এবং সেই সময় ভারতীয় রাজনীতি ও সমর পদ্ধতির দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল। এদিকে- তুর্ক, আফগান, মোঘল – এরা ধর্মে এক হলেও , একে অপরকে সহ্য করতে পারতো না । এইটুকুতেই দেখা যায়- ধনসম্পদ এবং রাজ্য বিস্তারে ধর্মের চেয়েও বড় জায়গা নিয়েছিল- স্বার্থ সিদ্ধি । আর এই স্বার্থ ছিল- ধনসম্পদ । বাবরও প্রথম দিকে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী না হলেও, ভ্যাকুয়াম দেখে এই খানে ঘাঁটি গেঁড়ে বসে যান । যার ফলে ভারতে মোঘল সাম্রাজ্য আসে । আমার মনে হয়- পর্তুগীজরা এদিক দিয়ে অনেক চালাক ছিল । তারা সঙ্গোপনে তাদের ধর্ম ছড়াতে থাকে । পর্তুগীজ মিশনারীরা চট্টগ্রাম, সন্দীপ, শ্রীপুর, বাকলা, চণ্ডিকান (যশোর) তথা দক্ষিণ বঙ্গে বেশী আনাগোনা করত। আবার, যে সময়ে তুর্ক আফগান ও মোঘল সংঘর্ষ চলছিল সে সময় বাঙালীরা এক প্রকার দিশেহারা হয়েই পড়েছিল। সে সময় জমিদার-জমিদারে, রাজায়-রাজায় আত্ম কলহ তুঙ্গে। দেশে ঐতিহাসিক ছিল না বললেই চলে। এমনকি মোঘল আমলের বই পত্তরেও বিস্তারিত ইতিহাস পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায়, তাও ডগমাটিক । এই সময়েই ইংরেজরা বণিক হিসেবে এলেও , তারা ধর্মের ভেদাভেদ, জাতপাতের সমীকরন চতুরতার সাথে বুঝে ফেলে । “জনগণ” এমন জাঁতাকলে পড়ে গিয়ে নিজেদের পেটের চিন্তা ভুলে সেই ফাঁদে পা দিয়েই বুঝল – এটা মারাত্মক ! ততদিনে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গিয়েছে । বৌদ্ধ- হিন্দু, হিন্দুদের জাতপাত , ব্রাহ্মণদের গর্ব, মুসলমান--- সব মিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে “ ভাত কাপড়ের” প্রশ্নকে দূরে সরিয়ে রেখে মসনদ দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হলো । ফলশ্রুতিতে দেশভাগ, যার বিষময় ফলে আমরা সাধারণ জনগণ এখনও ভুগছি । এই কনজিউমারিজমের যুগে এই সব এখনও সেই সব কে ভালো করে বাতাস করা হচ্ছে, যাতে আমরা বিভক্ত হতে হতে পাড়ায় পাড়ায় ভাগ হয়ে যাবো । টাকা উপায় করো- এটাই মূল মন্ত্র । তাই নানারকমের সুড়সুড়ি । টাকা উপায় করতে হলে- মসনদ দখল জরুরি আর এই সিংহাসন বজায় রাখতে গেলে ছায়াযুদ্ধ আরও দরকারি । বহুত্ব বাদী এই উপমহাদেশ তাই এখন ছিন্ন ভিন্ন । ====== তঙ্কা ধর্ম, তঙ্কা স্বর্গ, তঙ্কা হি পরমং তপঃ

Sunday, November 9, 2014

ইতিহাস

বেলের পানা



 আমি ঐতিহাসিক নই আর হবার কোনো সুযোগও নেই এই জীবনে ।  অবসর জীবন পাবার পর ইচ্ছে হলো না হয় একটু পড়লামই ।

কেউ তো আর পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে না বা থিসিস পেপারও দাখিল করতে হচ্ছে না ।

কি নিয়ে শুরু করা যায়, ভাবতে ভাবতেই একজন আমায় বললেন – লৌকিক সাহিত্য আগে পড় হে ! প্রথমেই ভারি ভারি ইতিহাস পড়তে যেও না !

কেন দাদা ?

বলি, শরিল পেরাণ জুরোতে গরমকালে কি খাও বা খেতে ?

অনেক ভেবে বললাম- কুঁজোর জলে লেবুর জল আর চিনি  । বড়জোর বেলের পানা ।

পথে এসো বাছা । আগে শরিল ঠাণ্ডা কর হে ! দ্যাখো গেরামে গঞ্জে কি রকম সংস্কৃতি চলে এসেছে, যুগ যুগান্ত ধরে ।

এই সব আচরণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলা বা ভারতের আসল ইতিহাস ।
তা হলে আমরা যে সব ইতিহাস পড়েছি বা পড়ছে অন্যরা- সেগুলো কি ইতিহাস নয়?
সন তারিখ হিসেবে ঠিকই আছে, তবে ..........

তবে ?

“জনসাধারণ” কোথায় এই সব ইতিহাসে ? খালি মারপিট, যুদ্ধ, সিংহাসন দখল- মাঝে মাঝে “দেশপ্রেমের” মুড়ি মশলা মেশানো ।

আরও একটু খোলসা করে বলবেন ?

হুম ! জোলাপ দিতে হবে দেখছি

যাঃ বাব্বা ! এর মধ্যে জোলাপ এলো কোত্থেকে ?

ডগমা বা মতবাদ বোঝো ?
ধর্মীয় না রাজনৈতিক ?

মাথায় চুল নেই, তোর শা.. বগলে বাবরি ।
আহা ! চটছেন কেন, বলুন না । সারা জীবন তো ওষুধ বেচেই কাটালাম , একটু অন্য জিনিস জানতে ইচ্ছে হয় না ?

শোন- এই ডগমাই ইতিহাস লেখার সময় অনেক জায়গায় বাধা সৃষ্টি করেছে ।

যেমন ?
একটা সিম্পল কথা বলি । লক্ষণ সেনের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে দু রকম মতবাদ ঐতিহাসিকদের মধ্যে । কেউ বলেন তুর্কি আক্রমণ, কেউ বা তুর্কি বিজয় ।

এটা তো ধর্মীয় ডগমা !

একজাক্টলি । তা বাবা, বলি এত তো ঠাকুর দ্যাবতার নাম শুনেছো , ঘেঁটু পুজোর কথা শুনেছো ?

এক্টু এক্টু ।
বেশ, ওলা বিবি, বন বিবি, দখিন রায় এসব ?

শোনা, তবে ডিটেইলস জানি না ।

এতো গেল পুজো । বলি, গম্ভীরা আলকাপ, সারি গান,  ভাটিয়ালি, কীর্তন, খেউর, তরজা, আখড়াই, হাপ আখড়াই  এসব গানের কথা শুনেছো হে ?
এই দ্যাখো ! জাতিস্মর বলে একটা হালে বই হয়েছে না, তার থেকে জেনেছি ।
 আহা! গম্ভীরা আলকাপ, সারি গান, ভাটিয়ালি, কীর্তন – এসব তো ছিল না ওই সিনেমাতে ।
তা ছিল না ।
তবে, মাটির গন্ধওয়ালা গানেও কিন্তু আবার ডগমা ছিল ।

এ বাবা ! কেন ?
ওই যে ! কোনটা শ্লীল, কোনটা অশ্লীল- এইসব যাঁরা গবেষণা করে হারানো গানের কথা গুলো লিখেছিলেন- তাঁরা নিজেদের রুচি অনযায়ী সব লিখেছেন । কোনোটা বাদ, কোনোটা যোগ ।
এই সব যোগ বিয়োগের খেলা কি “এপিক”দের মধ্যেও আছে ?
 আলবাৎ ।  তুমি কি ভাবছো, সব নিরপেক্ষ ভাবে লেখা হয়েছে?

আমি তো কিস্সু জানি না !
এখানেই ইতিহাস সচেনতা, উইথআউট  এনি ডগমা । পড়ো আগে লোক সংস্কৃতি, লোক গান এবং আচার বিচার । বলি বোয়েচো ? গোলগোল কথা বলে লাভ নেই !


সব কেমন যেন গুলিয়ে গেল । এতো ঘোলা বা নোংরা জলে মাছ ধরা !

সেটাই !‍ ওই বেলের পানা, কোক, পেপ্, ----- সব মিলে মিশে ঘেঁটে ঘ । ক্লিয়ার হ্যায় ?