Monday, November 17, 2014

বাস্তু হারা



সকালে, হরির দোকানে  এমন একটা খারাপ খবর পাবো, সেটা কল্পনাতেও আসে নি।

বলছি, বলছি- এত তাড়া কিসের ?

জানি খবরের কাগজে প্রথম পৃষ্ঠায়, মৃতদেহের ছবি দেখলে মনটা ভারি হয়, সেটা অনস্বীকার্য , তবে এটা একেবারেই অন্য খবর ।

নীতু বাবু রিটায়ার করেছেন – বেশ কিছুদিন হলো । একমাত্র ছেলে- নয়ডায় চাকরি করে ।

পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাবেন না বলে- ছেলের কাছে যান নি । স্বামী – স্ত্রী, টোনাটুনির সংসার ।

বয়সকালে টুকটাক শরীর খারাপ হলেও- সে রকম মারাত্মক কোনো অসুখ নেই, দুজনেরই ।

সরকারি চাকরী করতেন বলে মাস গেলে একটা মোটা টাকা পেনসনও পান । রাজনীতি ব্যাপারটাকেই এড়িয়ে থাকার একটা প্রাণপণ চেষ্টা আছে ওনার ।

তবে, প্রচুর বই পড়েন । দিনে চারটে খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া চাই ওনার । দুটো ইংরেজী আর দুটো বাংলা সংবাদপত্র ।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে ।  তবে, বেশী অনলাইন হন না । মেল চেক করে, স্কাইপে তে কথা বলেন ছেলে- বৌমা – আর নাতির সাথে ।
বড় বংশের লোক !  প্রচুর আত্মীয় আর বন্ধু বান্ধব ।


আজ, হরিকে বললেন :- আমার ফ্ল্যাট টা বেচতে হবে । তুই তো দালালি করিস – খদ্দের দ্যাখ্ !

 আমি অবাক হয়ে বললাম – সে কি মশাই, বেশ তো আছেন, যাবেন কোথায় ?

ছেলের কাছেই চলে যাবো ।

কেন ? এই তো বলতেন- বাংলা ছেড়ে যাবো না বিদেশ বিভুঁইয়ে । কি গণ্ডগোল হলো আপনার ?

অন্য কিছু নয়- আত্মীয় আর বন্ধুদের অত্যাচারেই ছাড়বো এই বাংলা ।

কেন, কেন ? তারা আবার কি করলো ?
 কি যে বলি ! বলতেও লজ্জা করে ।

আরে বলুন বলুন- জানা দরকার । আমরা এরকম একটা বন্ধুকে হারাবো?

রোজ একটা করে নেমত্তন্ন । আজ বিয়ে, কাল জন্মদিন, পরশু পৈতে, তার পরের দিন বিবাহ বার্ষিকি  - শ্রাদ্ধ, সব মিলিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ ।  উপহার নিতেই হয়,  তাতে আবার সবাই কাছের লোক । বৌ বলে- সোনা টোনা না দিলে হয় ? একটা ফ্যাড়ফেড়ে সোনার দুল বা আংটির দামই হলো মিনিমাম – আড়াই হাজার, সাথে ট্যাক্সি খরচ ।

তার পর ?

গতকালই হিসেব করে দেখলাম, এ মাসে যা পেনসন পেয়েছি, তার সবটাই চলে গিয়ে আরও চার হাজার টাকা লেগেছে এক্সট্রা । এরকম প্রকৃত ঘাটতি হীন ভারসাম্যমূলক বাজেট নিয়ে মশাই- সরকার চলতে পারে, আমি পারবো না । তাই দূরে থাকাই ভালো ।
ওখানে কি আর নেমত্তন্ন পাবেন না ?

পাবো, তবে সশরীরে তো আসতে হবে না । টেলিফোনে আশীর্বাদই কাফি । শ্রাদ্ধ হলে- মনোবেদনা প্রকাশ । মাসে – বড়জোর ৪০০ টাকা টেলিফোনের বিল আসবে, ওয়ান ইণ্ডিয়া প্ল্যানে ।

=========
বিরস বদনে উঠে গেলেন নীতু বাবু । আধ খাওয়া চায়ের গ্লাসটাও হাঁ করে বসে থাকল, ইটের ওপর ।





No comments: