Monday, December 28, 2009

BMTPA এর পিকনিক ২৭/১২/২০০৯

ঠাণ্ডাটা এবার জম্পেশ পড়েছে।কিছুদিন আগে মনে হচ্ছিল, ঠাণ্ডা না পড়লে চড়ুইভাতিটা জমবে তো? ভাবনা দূর। হৈ হৈ করে ঠাণ্ডা পড়ে গেল। প্রথম আশঙ্কা দূর অস্ত। দ্বিতীয় আশঙ্কা বাঙ্গালির সময়জ্ঞান! এটা বিশ্ববিখ্যাত! ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমার সময়জ্ঞান তো গিনেস বুকে উঠেছে। সক্কালবেলা আমার স্টেপনী/ব্রাহ্মণী, ঠেলা দিয়ে লেপের ওম থেকে জোর করে উঠিয়ে দিল। আমি বললাম- আঃ, করো কি? দেরী আছে তো!!! না, না, ওঠো। ৭.৩০ টা বাজে। বিএমটিপির বাস বাগুইআটিতে ৯.৩০ টার সময় আসবে।
আমি উবাচ- “ধূ্স্, এরা বলে, কিন্তু গিয়ে দেখবে দাঁড়িয়ে আছি, বাগুইআটিতে।” “তুমি উৎপলকে ফোন কর তো!” অগত্যা, উৎপলকে ফোন। ফোন বেজে গেল। আবার ফোন। এবারও একই অবস্থা! বিজয়ের হাসি আমার মুখে। ব্যাটা উৎপল ঘুম থেকে ওঠেই নি। আরাম করে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছি, উৎপলের ফোন।“দাদা, আমি টয়লেটে ছিলাম, ফোন ধরতে পারিনি। ৯.০৫ এ উল্টাডাঙ্গায় বাস আসবে। আমি ওখান থেকে উঠব।” আমি বললাম- শোনো, বাসে উঠে আমাকে ফোন করো, আমি বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়ব। ততক্ষণে স্টেপনী/ব্রাহ্মণী রেডি। অগত্যা, মধুসূদন। আমিও রেডি হলাম। ঠিক, ৯.০৬ এ উৎপলের ফোন।“দাদা, উঠে পড়েছি, আপনারা রওনা দিন।” এম্মা বলে কি??? এরা কি বাঙ্গালি? তড়িঘড়ি করে ওনাকে ট্যাঁকে গুঁজে, মোড়ে দাঁড়ালাম। বরাতজোর! কার্ত্তিকের নতুন অটো! উঠে পড়লাম। কার্ত্তিককে বললাম, একটু জোরে ছোটা বাবা, না হলে পিস্টিজে গ্যামাক্সিন!! বাগুইআটিতে নেমে দেখি, বারবি ডল। পাশে- এক লম্বু। কাছে গিয়ে বুঝলাম, উশ্রী আর অভিষেক। দূর থেকে দেখি, এক হ্যাণ্ডসাম ভদ্রলোক, মাথায় টুপি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। “ঘনাদা, আমি বাস থেকে নেমে পড়ে আগে এলাম। বাসটাকে দাঁড় করাতে হবে ঠিক জায়গায়, বাস আনন্দকে তুলে এখানে আসছে” কে রে বাপ? ওম্মা!!!! এযে, উৎপল!!!!!!! কিছু বলার আগেই বাস এসে পড়ল। নামল, “বাবা”“বাবা” দেখতে একটি ছেলে। গালে দাড়ি। জড়িয়ে ধরল! ঘনাদা!!!!!!!
আবার চমক! এযে প্রো!!!!![ কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের মত, এটি একটি।]প্রসেনজিৎ বাড়ুজ্জে। উঠে পড়লাম। সবাই হৈ হৈ করে উঠল। জায়গা পেলাম, মাথায় ইন্দ্রলুপ্ত, কিন্তু গণ্ডদেশে আলুলায়িত কেশ, এরকম এক ভদ্রলোকের পাশে। বিমোচন ওরফে বাসু। হৈ হৈ আর গপ্পোর মধ্যে বাস এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ , সামনের সিট থেকে একটি সুন্দরী মেয়ে, বলে উঠল- জেঠু, চিনতে পারছ? চিনলে তো, হ্যাঁ বলব!!! রাগ করলে মেয়েদের সুন্দর দেখায়।( অবশ্য এখানে সবাই দেখতে সুন্দর/সুন্দরী, একজন আর তার বর ছাড়া) মেয়েটি গাল ফুলিয়ে বলল- আমি লোপা! খুব তো বংশের মেয়ে বল, চিনতেই পারলে না!!!!ঠিক, সামনের সিটে আর একজন সুন্দরী। হেসে বলল- আমি নিবেদিতা! লাল সোয়েটার পরা একজন জড়িয়ে ধরল। গুরু রু রু রু!!!!! দেখি, আদি ও অকৃত্রিম- অজয়!!!! যাই হোক, এই করতে করতে গুস্তিয়া!!!!!!
নেমেই , গরম গরম কচুরী, ফাষ্টোকেলাস আলুর দম! আর রসগোল্লা! আহা! “স্বর্গ এসেছে নামি”। একটু পরে গরম গরম “কফির পায়েস!”( চিনি বেশী হয়েছিল।, পরে নীরব কর্মী সুবীর চাটুজ্জে অন্য ভালো কফি, প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেয়।)। দেবাঙ্কনের মাও এসেছিলেন! আর এক নীরব কর্মী। দিয়ার মা আর বাবা! সব মিলিয়ে একটা পরিবার! ইতিমধ্যে বিমোচনের কাছে জেনে গেছি, ওর চেয়ে দু বছরের বড় দাদা বুদ্ধ ওরফে বিশোভন আমার মালদার পুরনো বন্ধু। বিশোভনের পরিচালনায় “মিছিল” নাটকে অভিনয়ও করেছি। নাটক, গান, কবিতা “বাসু আর বুদ্ধের”বংশগত। হবে নাই বা কেন? কার ছেলে দেখতে হবে তো!!!! বিখ্যাত নাট্যকার প্রয়াত বিধায়ক ভট্টাচার্য্যের ছেলে এরা!!!! জমজমাটি ব্যাপার। রঙ্গীন “শিশুরা” দোলনায় দুলছে, হাসছে, গল্প করছে। হাঁড়ি ভাঙ্গা খেলা শুরু হল। হাঃ! হাঃ হাঃ! যা কাণ্ড!!! উৎপল তো অফিসিয়াল এখানে। মুখে পুরুরুরু বাঁশী। পম্পা তো সারা জায়গাটা ঘুরে নিল।
শতরঞ্চি পেতে বসল গানের আসর! বাসু বলল- “আমি হ্যাংলা গায়ক”। খুব রাগ হলো! আমার চেয়েও হ্যাংলা কেউ আছে নাকি??? শুরু করে দিলাম। দেবাঙ্কন ( ভুল হতে পারে। দেবাঙ্কর বলে আর একটি ছেলে ছিল। তবে এই ‘র’ আর ‘ন’ এর রনে আমি নেই,বাবা লোকনাথকে স্মরণ করে, ঠিক করে নিস তোরা, আমি তো তোদের পাড়ায় থাকি না!) গীটার বাজাচ্ছে। ছেড়ে দিল বাজনা। খেই পাচ্ছে না তো। তারপর বাসু, নীলাদ্রী, সুরঞ্জিতা,প্রলয়; সরকার আরও অনেকে।বাসু, নীলাদ্রী তো জমিয়ে দিল। সরকার তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করে দেখিয়ে দিল।
এবার খাওয়া। আমি লুকিয়ে খেলাম। পাছে আমাকে লোকে সরকারের চেয়েও বড় রাক্ষস বলে।(হেঃ, হেঃ, হেঃ)। বাসু, মনে হলো দেবতারা যেমন দৃষ্টি দিয়ে খান, সেরকম খেল। আনন্দ খালি ভি.ডি.ও করে গেল। আর হেসেই গেল। রবি, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পা মচকে পা টাকে ফাইলেরিয়ার পা বানিয়ে ফেলল। কাকে ছেড়ে কার কথা বলি????? এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। অনেকের কথা বাদ পড়ে গেল। কিছু মনে করিস না বাপ!

নিলয়, সুবীর, প্রো, অভিষেক, সৈকত-------- অজস্র ধন্যবাদ!!!!
আসছে বছর আবার হবে!!!!!!!

Saturday, December 26, 2009

মহাভারতে অক্ষৌহিনী

মহাভারত সম্বন্ধে অনেকে নানা কথা বলেন। অনেকেই আছেন; যাঁরা বিশ্বাসই করতে চান না যে, এরকম একটা যুদ্ধ আদৌ হয়েছিল ! মহাভারত নিজে পড়ে আমার মনে হয়েছে, হ্যাঁ! এরকম একটা যুদ্ধ হয়েছিল। কারন? কারন হিসেবে যেটা আমি প্রথমেই বলতে চাই, সেটা হলো মহাভারতে Details এর বর্ণনা প্রচুর। বিস্তৃত বর্ণনা কল্পনা দিয়ে হয় না। তাই আমি মহাভারতে অক্ষৌহিনী নিয়ে কিছু লিখছি। বিচারের ভার পাঠকদের। অক্ষৌহিনী ১টি রথ, ১টি হাতি, ৫ জন পদাতিক সৈন্য, ও ৩টি ঘোড়া= ১ পত্তি। ৩ পত্তি=১সেনামুখ।৩ সেনামুখ= ১ গুল্ম।৩ গুল্ম= ১ গণ।৩ গণ= ১ বাহিনী।৩ বাহিনী= ১ পৃতনা।৩ পৃতনা= ১ চমূ।৩ চমূ= ১ অনিকিনী।১০ অনিকিনী= ১অক্ষৌহিনীসুতরাং ১ অক্ষৌহিনী=২১,৮৭০ টি রথ।২১,৮৭০ টি হাতী।১,০৯,৩৫০ জন পদাতিক সৈন্য।৬৫,৬১০ টি ঘোড়া।অতএব, ১৮ অক্ষৌহিনী=৩,৯৩,৬৬০টি রথ।৩,৯৩,৬৬০টি হাতী।১৯,৬৮,৩০০ জন পদাতিক সৈন্য।১১,৮০,৯৮০ টি ঘোড়া।১৮ দিন ধরে চলা কুরুক্ষেত্রের এই যুদ্ধে; সব পদাতিক সৈন্য, হাতী, ঘোড়া, রথের সারথী কিন্তু সবাই মারা গেছিল!উৎস: - হরিদাস সিন্ধান্তবাগীশ কৃত"মহাভারতম্", বিদ্যাসাগর রচনাবলী।

Friday, December 25, 2009

আমার প্রথম প্লেন যাত্রা!



প্লেনে চড়াটা আজকাল জলভাত! কিন্তু আমাদের বালক,কৈশোর বা যৌবন বয়সে সেটা ছিল না! মধ্যবিত্ত পরিবারে প্লেনে চড়াটা আকাশ কুসুম কল্পনা ছিল। ট্রেনে, এখন কার মত স্লিপার ছিল না! ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা ট্রেনে আনরিজার্ভড অবস্থাতেই উঠত, বেশির ভাগ! গুঁতোগুঁতি, মারামারি। আমার তো অনেকদিন পর্য্যন্ত ধারণা ছিল, ট্রেনে ওঠার দরজা নেই। জানলা দিয়ে উঠতে হয়!!!!!!!! (তখন ট্রেনের কামরার জানলাতে রড লাগানো থাকতো না, পরে বোধহয় আমাদের মত লোকের কথা ভেবে লাগানো হয়েছে)। এহেন আমি প্লেনে চড়ব!!!!!! আপনারা কি ভাবছেন জানি না, কিন্তু আমার প্রচণ্ড ভয় করছিল। কলেজ/ইউনির্ভাসিটির ক্যান্টিনে রাজা উজির মারা লোক, ভয়টা প্রকাশও করতে পারছিনা!ওদিকে নতুন চাকরী। আ্যপয়েন্টমেন্ট লেটার এসে গেছে। তার সাথে নির্দ্দেশিকা, অমুক দিন জয়েন করতে হবে। নির্দ্দেশিকার শেষে লেখা ছিল, Please come by air, to avoid delay in training program. Expenses will be reimbursed. [বলে রাখি, Please come by air, ব্যাপারটা বুঝতেও সময় লেগেছিল।] অগত্যা, পাড়ার এক দাদাকে ধরলাম। তখনকার দিনে, দাদা ক্যাপষ্টান সিগারেটের টিন আর এবোনাইটের লাইটার হাতে নিয়ে ঘুরতেন। তা শুনেই তিনি বললেন- টিকেট( টিকিট নয় ) কিনেছিস? আমি বললাম, না। তারপর বললাম, ও তো যাওয়ার দিন দমদমাতে গিয়ে কিনব।[ আগেই বলেছি, ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা!!] দাদা অনুকম্পার দৃষ্টিতে আমার আপাদমস্তক দেখলেন।দাদা উবাচ:- “তুই কি সত্যিই বোম্বের (তখন মুম্বই হয় নি) ওই কোম্পানীতে চাকরী পেয়েছিস?” দাদার ওই কথা শুনে আমার নিজেরও কেমন সন্দেহ হতে লাগল। হাতের ফাইলটা খুলে দেখে নিলাম! কাগজে তো আমার নাম, ঠিকানা সবই ঠিক লেখা আছে!!!!! দাদা, ফাইলটা নিয়ে দেখলেন। একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস। স্বগতোক্তি করলেন- “ভগবান!!” তারপর বললেন- দেখিস, ওখানে আবার ইষ্টিশন বলিস না!! প্লেন যেখান থেকে ছাড়ে, ওটাকে বলে এ্যারপোর্ট। বুঝলি? আমি বিদ্যাসাগরের সুবোধ বালকের মত মাথা নাড়লাম। “ট্যাক্সি ধর”- দাদার হুকুম! তা ট্যাক্সিতে উঠে দাদা সর্দ্দারজীকে বললেন- চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউ। আমার দিকে তাকিয়ে- “ তোকে কিছু প্রাথমিক পাঠ দেব। প্রথমেই কিভাবে ইংরাজী বলবি শোন! তোর তো আবার ভেতো বাঙ্গালী উচ্চারণ!!” আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “প্লেনে উঠতে গেলে,ইংরাজী উচ্চারণ শিখতে হয় নাকি?” দাদার চাউনি দেখে তখন আমার ধরণী ...... অবস্থা।
দাদার বোধহয় দয়া হলো। বললেন- ওরে ,সেই ম্যারিকান ভদ্রলোকের গল্প জানিস তো? বলতো!!! There was a cool day মানে কি? বা There was a brown crow!!! বলতে যেতেই, দাদা হাত তুলে থামালেন! “হবে না! তুই যেটা বলতে চাইছিস, সেটা নয়! ওই দুটো বাক্য,ম্যারিকান উচ্চারনে হবে- দরওয়াজা খুল দে আর দরওয়াজা বন্ধ্ করো!” [ গল্পটা বস্তাপচা, কিন্তু ৩৯ বছর আগে দাদার কাছ থেকেই প্রথম এই গল্পটা শুনি]
এ্যার হোসটেস রা যখন কোনো আনাউন্স করবে, তখন তো তোকে বুঝতে হবে, কি বলতে চাইছে!!! ( অনেক পরে অবশ্য, দক্ষিণ ভারতীয় উচ্চারনে- মি. ভাটাচারাইয়া, ভাই ভার ইউ ভাণ্ডারিং ইন দা ভারাণ্ডা [Why are you wondering in the verandah,] শুনতে হয়েছে।) তা শুনতে শুনতে অবশেষে চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউ পৌঁছলাম। ভিতরে ঢুকলাম, দাদার পেছন পেছন। বাবা বলেছিলেন- ট্রাঙ্ক আর হোল্ড অল কিভাবে নিবি, জেনে আসবি। সব টাই পরা, সাদা সার্ট, কাঁধের আ্যপুলেন্টে (পরে জেনেছিলাম ওটা আ্যপুলেন্ট) কালো কালো কি সব লেখা! বুকে লেখা- “সার্ভিস উইথ এ স্মাইল”। সবার মুখ গম্ভীর। একটা ডেস্কের সামনে দাদা দাঁড়ালেন। ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বললেন- ইয়েস?? দাদা আমার যাবার দিনটা গোদা বাংলায় বলে বললেন ওই দিন বোম্বের টিকেট আছে কিনা!! ( আমার ইংরাজী শিক্ষাটা ধাক্কা খেল)।ভদ্রলোক একটা জাবদা খেরো খাতার মতো খুলে বললেন- ২ হ্যান আছে, কটা লাগবো? বলতে ভুলে গেছি- দাদা বাংলা বললে বাঙ্গাল ভাষা বলতেন! টাকা, বের করে দিলাম। ভদ্রলোক একটা লম্বা আয়তাকার বিল বইয়ের মত কি একটা তে মন দিয়ে লিখলেন। মধ্যের থেকে একটা কাগজ ছিঁড়ে নিয়ে পুরো বিল বইটা দাদার হাতে দিলেন। দেখলাম, পরের কাগজ গুলোতে কার্বনে সব লেখা! আশ্চর্য্য, কাবর্ন নেই, অথচ কার্বনে লেখা?????? যাই হোক, রিপোটিং টাইম, বলল- ভোর ৫.৩০ টা। সিটি অফিস! এ্যারপোর্ট না গিয়ে সিটি অফিস?? ব্যাপার কি? দাদা বললেন, তোকে গর্দভ বললে, ওই অবলা জীবদের অপমান করা হয়। আরে সিটি অফিস মানে তোকে এখানে আসতে হবে ভোর ৫.৩০ টাতে। এখান থেকে তোকে ঢাউস বাসে করে এ্যারপোর্ট নিয়ে যাবে। এটা এদের দায়িত্ব! আর ট্রাঙ্ক,হোল্ড অলের কথা কি বলছিলি? আরে তোকে তো কোম্পানী হোটেলে রাখবে। শুধু স্যুটকেশ নিয়ে যাবি! বুঝলি?
ঘাড় নাড়লাম! দাদা বললেন, প্লেনে কি পরে যাবি? তাই তো! এটা তো ভেবে দেখিনি!!!!!
সেজমামা এক্স এয়ার ফোর্স। তাঁর কাছে গেলাম। তিনি বললেন- এই গরমকালে তুই ব্লেজার পরবি? আমি বললাম- তা হলে? উপদেশ এল- সার্ট, প্যান্ট পরে যা! তা ছাড়া ব্লেজার পরলে তোকে সবাই কাকতাড়ুয়া বলবে। গরমে কেউ ব্লেজার পরে?
নির্ধারাত দিনে ভোর ৩টেয় উঠে, ফ্রেস হয়ে কপালে দইয়ের ফোঁটা পরে , বেরুলাম। শুধু সেজমামা বললেন- বিয়ে না হতেই দধি মঙ্গল? সিটি অফিস! ঢাউস বাস! উঠলাম। প্রচুর যাত্রী। যাই হোক, এ্যারপোর্ট পৌঁছলাম। প্লেনের পেটেও ঢুকলাম। গ্যালি সিট। পাশের ভদ্রলোককে দেখলাম কি একটা টিপে সামনে একটা ছোট টেবিলের মত বের করলেন। আমিও চেষ্টা করলাম। বোতাম টিপতেই পাশের ভদ্রলোক ধপাস করে সিট শুদ্ধু শোয়ার মত হয়ে গেলেন। দাঁত কড়মড় করে কি যে বলেছিলেন, এ্যাতোদিন বাদে আর মনে নেই। কান তখন ভোঁ ভোঁ করছিল। ইষ্টনাম জপ করতে করতে কথাবার্তা শুনে বুঝলাম প্লেন আকাশে। ৩ ঘন্টা বাদে প্লেনের গর্ভযন্ত্রণা শেষ হলো। তবে সে অন্য কাহিনী।
পুনশ্চ:- আমি এখনও একটু গেঁয়ো!

Sunday, December 20, 2009

আড্ডা

ফেলে আসা জীবনে শুধু তো দুঃখ থাকে না! অনেক মজা, হাসি , ঠাট্টা লুকিয়ে থাকে! মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরী জীবন শুরু ও শেষ হয়েছিল।শেষের দিকে একটু পায়া ভারি হয়েছিল, তবে ওটা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। এই চাকরী টা না করলে, আমি হয়তো বুঝতামই না, জীবনের মজা টা কি! আমাদের রেস্ট হাউস বলে একটা বাসস্থান থাকত, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে। হোটেল থেকে অনেক আরাম, আর আমাদের ইউনিয়নও আমরা করতাম এই রেস্ট হাউসকে কেন্দ্র করে।রেস্ট হাউসে দু ধরনের রিপ্রেজেন্টেটিভই থাকতেন।মেডিক্যাল এবং সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ। অনেক সাহায্য পেতাম আমরা, এই সব রেস্ট হাউসের সিনিয়র দাদাদের কাছ থেকে। তা আমাদের আড্ডাটা জমত রাতে। ওই আড্ডায় কি না চর্চা হত। অনেকেই পরবর্তী জীবনে সিনেমা, থিয়েটার, সংগীত, রাজনীতিতে নাম করেছিলেন। দু একটা নাম করছি। স্বরূপ দত্ত, অসীম রায়চৌধুরী। হালের শ্রীকান্ত আচার্য্য। প্রসঙ্গত বলে রাখি, শ্রী মৃণাল সেনও তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন,মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে । যাই হোক, কিছু টুকরো মজার ঘটনা তুলে ধরছি।
সেবার, একটি নতুন ছেলে এলো কটকের রেস্ট হাউসে। একটু হাই- ফাই ব্যাপার, ছেলেটির। টেনিদার চরিত্র ঠিক না হলেও, প্রায় কাছাকাছি। তা ছেলেটি, একদিন কথায় কথায় বলল- “বুঝলে, মিসেস সেন এর সাথে, একটা বড় রোল পাচ্ছি। বুড়োদা খুব হেল্প করছেন। আর,মিঠুর বিপরীতে আমার হিরো হবার কথা চলছে।”
আড্ডা তখন জমজমাট। হঠাৎ সবাই নিস্তব্ধ। মিসেস সেন, বুড়োদা এরা কে, আর মিঠু?????? সবাই মনে মনে উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। তা কিছুক্ষণ বাদে আমাদের এক সিনিয়ার দাদা বললেন‌ “মিসেস সেন মানে রমা???”আমরা অকুল পাথারে। আমার পাশের দাদা, আমার মুখ হাঁ দেখে, হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরে; কানে চুপি চুপি বললেন- রমা হচ্ছে সুচিত্রা সেন, আর বুড়ো দা- তরুণকুমার।
সিনিয়ার দাদা বললেন‌- তা, “মিসেস সেন, তোমার সাথে দেখা করেছেন?”
ছেলে-“ না, আসলে আমি ঠিক টাইম করে উঠতে পারি নি। হটাৎ চলে এলাম তো!”
সিনিয়ার দাদা-“ তা বুড়োদাকে ভার দিয়ে এসেছ বুঝি?
ছেলে- বললাম না, কটকে চলে এলাম!!!
সিনিয়ার দাদা-“তা, রমাকে টেলিগ্রাম করে দিচ্ছি, যাতে তোমার কাছে আ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে টেলিগ্রাম পাঠায়!”
ছেলেটি এরপর শুধু হাতে পায়ে ধরতে বাকি রাখে। কিনতু ওর নাম হয়ে যায়- হটাৎকুমার
----------
আর এক দিন, একটি নতুন ছেলেকে সেই সিনিয়ার দাদা জিজ্ঞেস করলেন- ভাই, তোমার নাম কি?
ছেলেটি- দাদা, আমার নাম; রবি সোম। আপনার নাম দাদা?
দাদা- মঙ্গল বুধ।
----------
হটাৎকুমার একদিন ছুটির শীতের সকালে খালি গায়ে তেল মাখছিল।
তা দাদা বললেন- কি রে! তোর গায়ে তো দেখছি প্রচুর কেশ!
"হটাৎকুমার-পুরুষ দাদা,পুরুষ।
দাদা- গাধা তো তা হলে মহাপুরুষ রে!

ভবিষ্যতে, আরও জানানোর ইচ্ছে রইল!




Friday, December 18, 2009

ওই ভদ্রলোক

ভাগ্যিস, তারক চাটুজ্জে ছিলেন। না হলে তো তিলুর কথা জানতেই পারতাম না! উল্কার গর্তের মধ্যে লাল খাতাটা তো তারক চাটুজ্জেই খুঁজে পেয়েছিলেন। টানাটানি যাচ্ছিল বলে মাত্র কুড়িটা টাকার বিনিময়ে খাতাটা হাত ফেরতা করেছিলেন। খাতাটা অদ্ভুত! পাতা ছেঁড়ে না, লেখার কালি ঘন্টায় ঘন্টায় রং বদলায়। আগুনে পোড়ে না! যে খাতাটা অবিনশ্বর মনে হয়েছিল, শেষে কিনা বুভুক্ষু ডেঁয়ো পিঁপড়েরা খেয়ে ফ্যালে!!!!!! তা খোঁজ খবর করে,পরে আরও একুশটা খাতা/ডায়েরী হাতে আসে, তিলুরই লেখা। না হলে কি যে হতো!!!!
গিরিডির ধন্বন্তরী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, ত্রিপুরেশ্বর বাবুর একমাত্র এই ছেলেটা; গিরিডির ইস্কুল থেকে মাত্র বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করে। তারপর চোদ্দোতে, আই.এস-সি আর ষোলোয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বি.এস-সি। এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট!!!!!!!জীবনে সেকেন্ড হয় নি কোনো পরীক্ষায়। আবার বিশ বছর বয়সে কোলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে অধ্যাপক! ভাবা যায়???????
১৯১৬ সালের ১০ ই জুন না অক্টোবরে জন্ম, তা নিয়ে একটু ধন্ধ ছেলেটির ডায়েরিতে আছে, আর ১৯৯১ সালের ডায়েরিতে অসমাপ্ত একটা লেখাতে লিখেছিল, “আজ আমার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হলো”। ও নিজে না বললেও ১৯১৬ সালটা বিয়োগ করলেই বেরিয়ে আসে। আর ১০ ই জুন না ১০ ই অক্টোবর; এটা নিয়ে দুরকম লেখা আছে ওই ডায়েরিতে। তা যাক, ওতবড় পণ্ডিতের একটু আধটু ভুল হতেই পারে।
আর হবে নাই বা কেন!!!! যে ছেলে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বৈজ্ঞানিক আবিস্কার করে, তেরো বছর বয়স থেকে চুল পাকে, সতেরো বছরে টাক পরতে শুরু করে, একুশ বছরে পুরো টাক, সে ছেলে যে মাথায় প্রচুর জিনিস ভরে রাখে, তার ভুল হতেই পারে। এগারো মাস বয়সের স্মৃতি মনে আছে ভদ্রলোকের। ওই জন্য, জন্মের তারিখের গোলমালটা.......। থাক!
লম্বায় পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি ( পরে আরও দুই ইঞ্চি বেড়েছিল), চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা। চোখের পাওয়ার মাইনাস সিক্স আর মাইনাস সেভেন পয়েন্ট টু ফাইভ। সুইডিস আ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস থেকে নোবেল সমতুল্য ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত এই ভদ্রলোক (আর ছেলে বলব না) আমাদের গর্ব।
বাইরের বিজ্ঞানীরা কিন্তু ভদ্রলোককে বিজ্ঞানী বলে মানতেই চায় না। আবিস্কারের কথা বললে বলে--- ভারতবর্ষ মন্তর তন্তরের দেশ। ওই ভাবেই নাকি আবিস্কার গুলো হয়ে গেছে। এই ভুল ধারণার একটা ভিত্তি আছে। ভালো সংস্কৃত জানেন ভদ্রলোক। তার ওপর, অতি বৃদ্ধ প্রপিতামহ বটুকেশ্বর তান্ত্রিক ছিলেন। বাবা গোলকের শিষ্য ছিলেন বটুকেশ্বর। আবার একটা গণ্ডগোল!!!! ডায়েরিতে পিতামহ বটুকেশ্বরের উল্লেখ দেখি। ইনি সাধনরত অবস্থায় শিলাবৃষ্টিতে ব্রহ্মতালুতে ফুটো হয়ে মারা যান। এদিকে পিতামহ, আর এক বটুকেশ্বর খাঁটি গৃহস্থ হলেও অসম্ভব ভালো শ্রুতিধর ছিলেন। তবে বটুকেশ্বরের নামটা তো আবার কেউ দিতেও পারে। হাজার হোক, তান্ত্রিক বলে কথা!! ভদ্রলোক নিজেও আবার ভুত-প্রেতের ব্যাপারটা বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করে মৌলিক এক বইও লিখেছিলেন।
নাঃ! এই ভদ্রলোককে কালটিভেট করতে হবে!

পুনশ্চ:- ভালো নামটা ভুলে গেছি বলতে! প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু! ওনার ডায়েরী টা পড়ে নেবেন আপনারা।

পঞ্জিকা অপভ্রংশে পাঁজি, নামটি এসেছে পঞ্চাঙ্গ থেকে। পঞ্চাঙ্গের অর্থ পঞ্জিকার ৫টি অঙ্গ।পঞ্জিকা : - বার বা বাসর , তিথি, নক্ষত্র, করণ, যোগ ।1. বার বা বাসর: - সোমবার থেকে রবিবার বা সোমবাসর থেকে রবিবাসর।2. তিথি: - সূর্য্যের সঙ্গে সংযোগের হিসাবে চান্দ্রমাসের গড় মান-২৯.৫৩ দিন। চান্দ্রমাস কাকে বলা হয়? এক অমাবস্যা থেকে ঠিক পরের অমাবস্যা পর্য্যন্ত সময়কে সাধারণত ১ চান্দ্রমাস বলা হয়। চান্দ্রমাসের নামকরণ কিভাবে হয়? আমরা জানি ১২ টি সৌরমাস। যথা:-১. বৈশাখ ২. জৈষ্ঠ ৩.আষাঢ় ৪. শ্রাবণ ৫.ভাদ্র ৬. আশ্বিন ৭.কার্ত্তিক ৮. অগ্রহায়ণ ৯. পৌষ ১০. মাঘ ১১.ফাল্গুন ১২.চৈত্র।আমরা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করি। এই মাসের কোন না কোন দিনে অমাবস্যা পড়বে। এই অমাবস্যা থেকে পরের অমাবস্যা পর্যন্ত “১ চান্দ্র বৈশাখ” বলা হয়। এইভাবে ১২টি চান্দ্রমাস হবে। যদি একই মাসে ২ টি অমাবস্যা পড়ে, তবে সেই চান্দ্রমাস মলমাস হিসাবে গণ্য হবে।আগেই বলা হয়েছে যে, এক চান্দ্রমাসের মান ২৯.৫৩ দিন। ২৯.৫৩ কে পূর্ণসংখ্যাতে রুপান্তরিত করলে হয় ৩০। এই ৩০ দিনকে ৩০ টি সমান ভাগে ভাগ করে, এক একটি অংশকে বলা হয় ‘তিথি’।তিথি হলো ১ চান্দ্রদিন। এবার প্রশ্ন কেন? অমাবস্যা কে আদি তিথি বা ১ম দিন ধরা হয়। যখন চন্দ্র ও সূর্য্যের একই সরলরেখায় মিলন হয় তখন অমাবস্যা হয় । সুতরাং তিথি= ১ চান্দ্রদিন। অমাবস্যার পরের দিন প্রতিপদ বা প্রথমা এবং শুরু শুক্লপক্ষ। সুতরাং অমাবস্যার পরের দিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ বা প্রথমা।চন্দ্র, সূর্য্যের সাপেক্ষে ১২০ কৌণিক দূরত্ব (angular distance) অতিক্রম করলেই প্রতিপদ বা প্রথমার শেষ এবং শুক্লা দ্বিতীয়ার আরম্ভ।পক্ষ ২টি। শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। পক্ষ সাধারণত ১৫ দিনের। অমাবস্যা থেকে পরের ১৫ দিন পর পূর্ণিমা। এই ১৫ দিন শুক্লপক্ষ । আবার পূর্ণিমা থেকে পরের ১৫ দিন পর অমাবস্যা। এই ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষ।

সুতরাং১ চান্দ্রমাসের ১ম ১৫ দিন শুক্লপক্ষীয় এবং ২য় ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষীয়।তিথি, যে কোন দিনাঙ্কের যে কোন সময়ে শুরু হতে পারে; দিনে অথবা রাত্রিতে। সাধারণত পঞ্জিকার যে কোন দিনাঙ্কের সূর্য্যোদয়ের সময় যে তিথি চলছে সেটাই সেই সৌরদিনের তিথি হিসাবে গণ্য হবে। তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হতে পারে। এর কারণ চন্দ্রের জটিল গতি। চন্দ্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এক কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, এটা আমরা সবাই জানি। কক্ষপথটি কিন্তু উপবৃত্তাকার (Elliptical) যার ফলে চন্দ্রের গতি সেই কক্ষপথে সব জায়গায় সমান নয়। কখনো ধীরে, কখনো জোরে।--আর সেই জন্যেই তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হয়। সুতরাং, পাঁজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হোল তিথি ।এবার নক্ষত্র: - নক্ষত্র ২৭ টি। ক্রমানুসারে ২৭ টি নামগুলি হোল: -১। অশ্বিনী ২। ভরণী ৩। কৃত্তিকা ৪। রোহিণী ৫। মৃগশিরা ৬।আর্দ্রা ৭। পুনর্বসু ৮। পুষ্যা ৯। অশ্লেষা ১০। মঘা ১১। পূর্বফাল্গুনি ১২। উত্তরফাল্গুনি ১৩। হস্তা ১৪। চিত্রা ১৫। স্বাতী ১৬। বিশাখা ১৭। অনুরাধা ১৮। জ্যেষ্ঠা ১৯। মূলা ২০। পূর্বাষাঢ়া ২১। উত্তরাষাঢ়া ২২। শ্রবণা ২৩। ধনিষ্ঠা ২৪। শতভিষা ২৫। পূর্বভাদ্রপদ ২৬। উত্তরভাদ্রপদ ২৭। রেবতী ।এছাড়াও অভিজিৎ নামেও আরও একটি নক্ষত্র আছে। উত্তরাষাঢ়ার শেষ পাদ এবং শ্রবণার প্রথম পঞ্চদশাংশ ব্যাপিয়া অভিজিৎ নক্ষত্র গণণা করা হয়। অর্থাৎ: -৯ রাশি ৬ অংশ ৪০ কলা থেকে ৯ রাশি ১০ অংশ ৫৩ কলা ২০ বিকলা পর্য্যন্ত।এখন নক্ষত্র বলতে কি বুঝব?মূলত চন্দ্র রাশিচক্রের (প্রকৃতপক্ষে চান্দ্রমার্গের) ৩৬০ডিগ্রি ঘুরে আসে। এই চন্দ্র রাশিচক্রের ভাগ ২৭ টি। প্রত্যেকের ব্যবধান হোল ১৩০২০’ ।এই এক একটি ভাগকে নক্ষত্র বলা হয়। এই ভাগের প্রধান উজ্জ্বল তারাকে যোগতারা বলা হয়।কোন দিন কোন নক্ষত্র বললে বুঝতে হবে চন্দ্রের অবস্থান নক্ষত্রের ১৩ ০ ২০’ সীমানার মধ্যে। (০=ডিগ্রি ’= মিনিট,)

Sunday, December 13, 2009

বাংলা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্র টেনিদা


টেনিদা নামটা শুনলেই না, কেমন গা ছমছম করে! বাপরে!!!!! এই বুঝি ডালমুট, পাঁঠার ঘুঘনি খেতে চাইবে!প্যালা একবার বলেছিল, হাওড়া, ইষ্টিশনে,জুতো বুরুশ যাচ্ছে, খাবে নাকি টেনিদা? টেনিদার যা চোপা!!!!!!!! তবে টেনিদার সিংহ হৃদয়। আমাদের লীডার।ভজহরি মুখুজ্জে বলে কথা!!!!!!! ম্যাট্রিক দিয়েছে, স্কুল ফাইনাল দিয়েছে, কে জানে হায়ার সেকেন্ডারীও দেবে কিনা!! তবে ৭ বারের চেষ্টায় স্কুল ফাইনাল পাশ করেছে। সিটি কলেজ আবার কাঁঠালে অমাবস্যাতেও ছুটি দেয়। গাবলু মামার আর কোনো খোঁজ নেই, কুট্টি মামা বাঘের দাঁত আর বাঁধালো কিনা বোঝা যাচ্ছে না!

ক্যাবলা [কুশল মিত্র] “ছপ্পর উপর কৌয়া নাচে, নাচে বগুলা” গাইছে না।

হাবুল [স্বর্ণেন্দু সেন] “মেকুরে হুড়ুম খাইয়া হৈক্কর করসে” বলছে না।

প্যালা [কমলেশ বন্দ্যোপাধ্যায়]‍“ বাসক পাতা দিয়ে সিংগি মাছ” খাচ্ছে কিনা জানি না। পটলডাঙায় চাটুজ্জ্যেদের রোয়াকটা কি আর আছে? নাকি ওটাও promoting হয়ে গেছে?

প্যালার দুই বোন- পুঁটি আর আধুলির বিয়ে হয়েছে কি? বাঙ্গালির আজ ঘোর দুর্দিন।

জাগো....................................................


আদ্যা স্তোত্রম্

আদ্যা স্তোত্রম্

ওঁ নম আদ্যায়ৈ

শৃণু বৎস প্রবক্ষ্যামি আদ্যাস্তোত্রম্ মহাফলম।যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব বিষ্ণুবল্লভঃ ।।

মৃত্যুর্ব্যাধি ভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিৎ কলৌযুগে।অপুত্র লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি।।

দ্বৌ মাসৌ বন্ধনামুক্তিঃ বিপ্র বক্ত্রাৎ শ্রুতং যদি।মৃতবৎসা জীববৎসা ষন্মাসং শ্রবণং যদি।।

নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয় মাপ্নুয়াৎ।লিখিত্বা স্থাপয়েৎ গেহে নাগ্নি চৌরভয়ং ক্কচিৎ।।

রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্নাঃ সর্ব্বদেবতাঃ।ওঁ হ্রীং ব্রহ্মাণী ব্রহ্মলোকে চ বৈকন্ঠে সর্ব্বমঙ্গলা।।

ইন্দ্রাণী অমরাবত্যাম্বিকা বরুণালয়ে।যমালয়ে কালরূপা কুবেরভবনে শুভা।।

মহানন্দাগ্নি কোণে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী।নৈঋত্যাং রক্তদন্তা চ ঐশানাং শূলধারিণী।।

পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী।সুরসা চ মণিদ্বীপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা।।

রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে।বিরজা ওড্রোদেশে চ কামাখ্যা নীল পর্ব্বতে।।

কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী।বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী।।

কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা।দ্বারকায়াং মহামায়াং মথুরায়াং মাহেশ্বরী।।

ক্ষুধা ত্বং সর্ব্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ।নবমী কৃষ্ণপক্ষস্য শুক্লস্যৈকাদশী পরা।।

দক্ষস্য দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণধ্বসং কারিণী।।

চন্ডমুন্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী।নিশুম্ভশুম্ভমণনী মধুকৈটভঘাতিনী।।

বিষ্ণুভক্তিপ্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা।আদ্যাস্তবমিমং পুণ্যং যঃ পঠেৎ সততং নরঃ।।

সর্ব্বজ্বরভয়ং ন স্যাৎ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনম্ ।কোটীতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।

জয়া মে চাগ্রতঃ পাতু বিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ।নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্ব্বাঙ্গে সিংহবাহিনী।।

শিবদূতী –উগ্রচণ্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী।বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী শঙ্খিনী শিবা।।

চক্রিণী জয়দাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া ।দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরী।।

নারসিংহা চ বারাহী সিদ্ধিধাত্রী সুখপ্রদা।ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয় বিনাশিনী।।

ইতি--- ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদসংবাদে আদ্যা স্তোত্রম্ সমাপ্তম্ ।


একান্নবর্তী পরিবার

একটু ধান ভাঙ্গতে শিবের গান গাই। মনে হয়, অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ঋগ্বেবেদের বিবাহ সূক্তে (১০/৮৫) যে সব উক্তি আছে তার থেকে প্রমাণ পাই যে সেকালে একান্নবর্তী পরিবার ছিল। প্রাসঙ্গিক অংশটিতে পাই, বধূকে আশীর্ব্বাদ সূচক একটি ঋক্ (৪৬) । তাতে যা লেখা আছে, তার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়- “তুমি শ্বশুরের উপর প্রভুত্ব কর, শ্বশ্রুকে বশ কর, ননদ ও দেবর গণের উপর সম্রাটের মত আধিপত্য কর।‍” বধূ বিবাহের পর এক বিরাট পরিবারের অঙ্গীভূত হত; তাকে শ্বশুর, শাশুড়ী, ননদ, দেবরদের নিয়ে সংসার করতে হত। এই গুলো ব্যবহারিক প্রয়োজন দ্বারা যে অনুপ্রাণিত ছিল, তা পাঠক মাত্রেই বুঝতে পারবেন। আমার মনে হয়, একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে অনেক গুলো আকাঙ্ক্ষার মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে আত্মপ্রকাশ করত। মানুষ হতেও মানুষের যে প্রতিকূলতা আছে তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য একটি শক্তির প্রয়োজনীয়তা, এবং সেই শক্তি হল যৌথ পরিবার, আর সেই যৌথ পরিবার কে সযত্নে রক্ষা করা।

আমি সমাজতাত্ত্বিক বা শব্দ বিশেষজ্ঞ নই, তবুও আমার মনে হয় “পাড়া” এই ধারণাটা এই যৌথ পরিবার থেকেই এসেছে। তা প্রত্যেক যৌথ পরিবারেই একজন করে অভিভাবক থাকতেন, যাঁরা যৌথ পরিবারের প্রত্যেকের অভাব অভিযোগের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। সাধারণত তাঁদের পরিচিতি “কত্তা” নামেই হত। “পাড়া” হত ( ইচ্ছে করেই অতীত ব্যবহার করলাম) কতক গুলো যৌথ পরিবারের সমষ্টি। এখানেও একাধিক “কত্তা” থাকতেন, যাঁদের ‘দাদা’ বলা হত।‘দাদা’ মানেই বড় ভাই আর এটা ষ্পষ্ট যে এঁরা কিন্তু রক্তের সর্ম্পকের না হলেও , ‘দাদা’ হিসেবেই আমাদের দায়ে অদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

তা যা বলছিলাম, সেই ঋগ্বেদের যুগ থেকে কিছুদিন আগে পর্য্যন্ত যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব ছিল। আর সেই যৌথ পরিবারে কিছু এমন সদস্যও থাকতেন, যাঁরা আবার গ্রাম সর্ম্পকে বা দূর সর্ম্পকের আত্মীয়। সব মিলিয়ে একটা জমজমাটি ব্যাপার।বেকার, সকার, নিষ্কর্মা, সব ছিল।

দেশ ভাগ হবার পর চেহারাটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল। অর্থনৈতিক অবস্থাও ভেঙ্গে পড়তে লাগল।(শ্রী প্রফুল্ল রায়ের উপন্যাস আর গল্পে এর প্রতিফলন আছে)

যৌথ পরিবারে সব মজার মধ্যে, কোথায় যেন সুর,তাল, লয় কেটে যাচ্ছিল। যারা রোজগার করেন, তাদের পাতে একটু ভালো মন্দ জিনিস, আর যারা করেন না; তাদের পাতে ওই থোড় বড়ি খাড়া বা খাড়া বড়ি থোড়।“পাড়া”তেও কিন্তু এর প্রভাব পড়তে শুরু করল। নিমন্ত্রণ বাড়ীতে কোমোরে গামছা বেঁধে পরিবেশন করার সময়, গানও তৈরী হলো—“ আরে যাদের পাতে মাথা মুড়ো, ওরাই কি তোদের জ্যাঠা খুড়ো?” ফলে,ম্যাটিনী শো এর টিকিট, মা, জেঠাইমা, খুড়ীমাদের কেটে দেওয়ার লোকের অভাব। ঘরে বসে, রঙ্গ মিলন্তি তাস আর কাঁহাতক খেলা যায়? পরনিন্দা, পরচর্চা শুরু হলো, আর জমতে লাগলো ধূমায়িত অসন্তাষ। আরও একটা ব্যাপার শুরু হলো, খুব আস্তে।“লভ ম্যারেজ”।“কত্তা”রা এই “লভ ম্যারেজ” ব্যাপারটা মেনে নিতে পারতেন না; নানা কারণে। জাত, পাত, সম্ভ্রম, আভিজাত্য সব মিলিয়ে একটা ভজকট ব্যাপার। ব্যাপারটা যেখানে গিয়ে দাঁড়াল,যারা “লভ ম্যারেজ” করত, তারা আলাদা হতে থাকল। একটা আপাত স্বাধীনতা, এদের কে আর যৌথ পরিবারের দিকে আকর্ষণ করতে পারল না।

এরপর, জীবিকার প্রয়োজনে.. দেশে, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে লাগল যৌথ পরিবারের লোকেরা। প্রথম প্রথম চিঠি- চাপাটি, তারপর প্রাথমিক উচ্ছাস কেটে গেলে; কমে যেতে লাগল যৌথ পরিবারের বন্ধন। জীবন যাত্রার মানও বদলাতে লাগল । স্বাভাবিক ভাবেই একই যৌথ পরিবারের লোক হলেও একটা অলিখিত ফারাক চলে এল। বাংলা ও বাঙ্গালি বদলাতে লাগল। বদলাতে লাগল, রুচি, ভাষা। রান্নাঘরেও এল অন্য স্বাদ। যে বাঙ্গালি অর্দ্ধেক ডিম খেত, যৌথ পরিবারে; তাদের সন্তানরা খেতে লাগল দুটো করে ডিম। মুড়ি, বাদাম হটে গিয়ে এল চাউমিঁএ। মুরগী আর বাইরে রান্না করতে হল না। বড় বাড়ী, প্রমোটিং এ চলে গেল। “যত্ত সব ফালতু সেন্টু” বলার লোক বেড়ে চলল। অণু পরিবারে ২ টাকায় সারাজীবন বসে খাওয়ার পিঁড়ি অদৃশ্য।

নিমন্ত্রণ খাওয়াবার জন্য গামছা পড়া পাড়ার ছেলে ছোকরা? তারাও যাদুবলে ভ্যানিশ। ক্যাটারারের আবির্ভাব হল। “দাদা, এদিকে আরও দশ পিস মাছ” বলা উঠেই গেল। সব ক্যালরি কনসাশ!“দাদা, এদিকে জল দেখি” আর কেউ বলে না। “এই যে, জল টা নাচান তো” বলার লোক বেড়ে চলল।

বাবা, মা গর্ব করে বলতে লাগল--- ছেলে না, বাংলাটা বলতে পারে; কিনতু পড়তে লিখতে পারে না।

পাড়ার রক আর নেই। ফলে, টেনিদা, ঘনাদা নেই। ঠাকুমার ঝুলি নেই। হ্যারি পটারের লেটেস্ট এডিশন কেনার জন্য ভোর থেকে লম্বা লাইন।

ঠাকুমা, ঠাকুরদারা সব বৃদ্ধাশ্রমে। যৌথ পরিবার?????? “যত্ত সব ফালতু সেন্টু”!!!!!!!!!!

খালি আমরা কিছু পাগল লোক, লবেঞ্জুসের মত তারিয়ে তারিয়ে স্মৃতি টাকে চুষে চুষে খাচ্ছি।

আর কাজ নেই হে????? “যত্ত সব ফালতু সেন্টু”!!!!!!!!!!