পঞ্জিকা অপভ্রংশে পাঁজি, নামটি এসেছে পঞ্চাঙ্গ থেকে। পঞ্চাঙ্গের অর্থ পঞ্জিকার ৫টি অঙ্গ।পঞ্জিকা : - বার বা বাসর , তিথি, নক্ষত্র, করণ, যোগ ।1. বার বা বাসর: - সোমবার থেকে রবিবার বা সোমবাসর থেকে রবিবাসর।2. তিথি: - সূর্য্যের সঙ্গে সংযোগের হিসাবে চান্দ্রমাসের গড় মান-২৯.৫৩ দিন। চান্দ্রমাস কাকে বলা হয়? এক অমাবস্যা থেকে ঠিক পরের অমাবস্যা পর্য্যন্ত সময়কে সাধারণত ১ চান্দ্রমাস বলা হয়। চান্দ্রমাসের নামকরণ কিভাবে হয়? আমরা জানি ১২ টি সৌরমাস। যথা:-১. বৈশাখ ২. জৈষ্ঠ ৩.আষাঢ় ৪. শ্রাবণ ৫.ভাদ্র ৬. আশ্বিন ৭.কার্ত্তিক ৮. অগ্রহায়ণ ৯. পৌষ ১০. মাঘ ১১.ফাল্গুন ১২.চৈত্র।আমরা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করি। এই মাসের কোন না কোন দিনে অমাবস্যা পড়বে। এই অমাবস্যা থেকে পরের অমাবস্যা পর্যন্ত “১ চান্দ্র বৈশাখ” বলা হয়। এইভাবে ১২টি চান্দ্রমাস হবে। যদি একই মাসে ২ টি অমাবস্যা পড়ে, তবে সেই চান্দ্রমাস মলমাস হিসাবে গণ্য হবে।আগেই বলা হয়েছে যে, এক চান্দ্রমাসের মান ২৯.৫৩ দিন। ২৯.৫৩ কে পূর্ণসংখ্যাতে রুপান্তরিত করলে হয় ৩০। এই ৩০ দিনকে ৩০ টি সমান ভাগে ভাগ করে, এক একটি অংশকে বলা হয় ‘তিথি’।তিথি হলো ১ চান্দ্রদিন। এবার প্রশ্ন কেন? অমাবস্যা কে আদি তিথি বা ১ম দিন ধরা হয়। যখন চন্দ্র ও সূর্য্যের একই সরলরেখায় মিলন হয় তখন অমাবস্যা হয় । সুতরাং তিথি= ১ চান্দ্রদিন। অমাবস্যার পরের দিন প্রতিপদ বা প্রথমা এবং শুরু শুক্লপক্ষ। সুতরাং অমাবস্যার পরের দিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ বা প্রথমা।চন্দ্র, সূর্য্যের সাপেক্ষে ১২০ কৌণিক দূরত্ব (angular distance) অতিক্রম করলেই প্রতিপদ বা প্রথমার শেষ এবং শুক্লা দ্বিতীয়ার আরম্ভ।পক্ষ ২টি। শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। পক্ষ সাধারণত ১৫ দিনের। অমাবস্যা থেকে পরের ১৫ দিন পর পূর্ণিমা। এই ১৫ দিন শুক্লপক্ষ । আবার পূর্ণিমা থেকে পরের ১৫ দিন পর অমাবস্যা। এই ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষ।
সুতরাং১ চান্দ্রমাসের ১ম ১৫ দিন শুক্লপক্ষীয় এবং ২য় ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষীয়।তিথি, যে কোন দিনাঙ্কের যে কোন সময়ে শুরু হতে পারে; দিনে অথবা রাত্রিতে। সাধারণত পঞ্জিকার যে কোন দিনাঙ্কের সূর্য্যোদয়ের সময় যে তিথি চলছে সেটাই সেই সৌরদিনের তিথি হিসাবে গণ্য হবে। তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হতে পারে। এর কারণ চন্দ্রের জটিল গতি। চন্দ্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এক কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, এটা আমরা সবাই জানি। কক্ষপথটি কিন্তু উপবৃত্তাকার (Elliptical) যার ফলে চন্দ্রের গতি সেই কক্ষপথে সব জায়গায় সমান নয়। কখনো ধীরে, কখনো জোরে।--আর সেই জন্যেই তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘন্টা পর্য্যন্ত হয়। সুতরাং, পাঁজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হোল তিথি ।এবার নক্ষত্র: - নক্ষত্র ২৭ টি। ক্রমানুসারে ২৭ টি নামগুলি হোল: -১। অশ্বিনী ২। ভরণী ৩। কৃত্তিকা ৪। রোহিণী ৫। মৃগশিরা ৬।আর্দ্রা ৭। পুনর্বসু ৮। পুষ্যা ৯। অশ্লেষা ১০। মঘা ১১। পূর্বফাল্গুনি ১২। উত্তরফাল্গুনি ১৩। হস্তা ১৪। চিত্রা ১৫। স্বাতী ১৬। বিশাখা ১৭। অনুরাধা ১৮। জ্যেষ্ঠা ১৯। মূলা ২০। পূর্বাষাঢ়া ২১। উত্তরাষাঢ়া ২২। শ্রবণা ২৩। ধনিষ্ঠা ২৪। শতভিষা ২৫। পূর্বভাদ্রপদ ২৬। উত্তরভাদ্রপদ ২৭। রেবতী ।এছাড়াও অভিজিৎ নামেও আরও একটি নক্ষত্র আছে। উত্তরাষাঢ়ার শেষ পাদ এবং শ্রবণার প্রথম পঞ্চদশাংশ ব্যাপিয়া অভিজিৎ নক্ষত্র গণণা করা হয়। অর্থাৎ: -৯ রাশি ৬ অংশ ৪০ কলা থেকে ৯ রাশি ১০ অংশ ৫৩ কলা ২০ বিকলা পর্য্যন্ত।এখন নক্ষত্র বলতে কি বুঝব?মূলত চন্দ্র রাশিচক্রের (প্রকৃতপক্ষে চান্দ্রমার্গের) ৩৬০ডিগ্রি ঘুরে আসে। এই চন্দ্র রাশিচক্রের ভাগ ২৭ টি। প্রত্যেকের ব্যবধান হোল ১৩০২০’ ।এই এক একটি ভাগকে নক্ষত্র বলা হয়। এই ভাগের প্রধান উজ্জ্বল তারাকে যোগতারা বলা হয়।কোন দিন কোন নক্ষত্র বললে বুঝতে হবে চন্দ্রের অবস্থান নক্ষত্রের ১৩ ০ ২০’ সীমানার মধ্যে। (০=ডিগ্রি ’= মিনিট,)
No comments:
Post a Comment