Thursday, September 4, 2014

সংগ্রাম



স্থান:-  ধরে নিন, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো একটা মফঃস্বল জেলা শহর

কাল :- আশীর দশকের মাঝামাঝি

পাত্র/পাত্রী :- এবারে ঘটনাটা ইচ্ছে হলে পড়ুন, তা হলেই বুঝবেন ।
==========
হঠাৎ মারা গেলেন বাড়ীর একমাত্র রোজগেরে কর্তা । সামান্য চাকরি ছিল এক প্রাইভেট কোম্পানিতে, তাঁর ।

একমাত্র ছেলে তখন কলেজে পড়ছে । বিধবা মায়ের ইচ্ছে- ছেলে আরও পড়ুক ।

মালিক বাবার জায়গায় ছেলেকে চাকরি দিতে চাইলেও, মা সেটা করতে দিলেন না ছেলেকে । ছেলেও, পড়াশোনায় খারাপ নয় ।

এককালীন একটা থোক টাকাও পেলেন মালিকের কাছ থেকে ।

সে কটা টাকা, যৎসামান্য হলেও ব্যাংকে ফিক্স ডিপোজিট হিসেবে রেখে দিলেন ।
নিজে ধরলেন টিউশনি । ইংরেজি-বিষয়টা মোটামুটি ভালই জানতেন, বলে বেশ কয়েকটা জুটেও গেল ।

টিউশন নিতে আসা একটি , ষোল- সাতেরো বছরের মেয়ের সাথে বেশ ভাব –ভালোবাসা হল ছেলেটার ।

ছেলের মা, টের না পেলেও- মেয়ের মা ব্যাপারটা যেন কিভাবে যেন জেনে গেলেন ।

একদিন তিনি এসে বললেন – অণিমাদি, আপনি ভালো পড়ান সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর এখানে যা টিউশনের রেট, তার থেকে বেশীই দেই আপনাকে ।
না কোনো দয়া নয় ! আপনার পড়ানোর জন্য মেয়েটা আমার ভালো রেজাল্টও করছে, তাই । তবে, আমার মেয়েটি কোনো কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ুক, এটা আমি চাই না !

অণিমা ব্যাপারটার কিছুই জানেন না তবু, ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হয়েই জবাব দিলেন :- বেশ ! আজ থেকে আর আপনার মেয়েকে আমি আর পড়াবো না !

ছেলেটি এরপরে আর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেই না ! এক নম্বর কারণ :- মায়ের কিছু রোজগার কমে যাওয়া আর দ্বিতীয় হলো, মেয়েটির সাথে দেখা না হওয়ার দুঃখ ।

অণিমা একে ধরেন, তাকে ধরেন কারণ জানার জন্য, ছেলেকে বোঝান---- কিন্তু ছেলেটি বাড়ীতে আর খায় না ।

উপায়ন্তর না দেখে, অণিমা গেলেন নিতুর কাছে ।

বাবা নিতু, জানি তুমি আমার ছেলের থেকে বয়সে বড়, তাও একটু বোঝাও ওকে ।  দুদিন ধরে বাড়ীতে তো খায়ই না, তার ওপর পড়াশোনাতেও মন নেই আর । খালি – পাগলের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । কারণ তো বুজতে পারছি না ! দেখো যদি কিছু করতে পারো !”

নিতু সেইদিনই বিকেলবেলা ছেলেটিকে পেয়ে গেল- এক বাজারের ভেতর চায়ের দোকানে । গরম গরম বেগুনিও ভাজা হচ্ছে, সেই দোকানে । ছেলেটি উদাস ভাবে তাকিয়ে সেই দিকে ।

নিতু গিয়ে বলল :- আমার সঙ্গে একটু কথা বলবি ? তাহলে আড়ালে চল ।

ছেলেটি অনিচ্ছা সত্বেও উঠে এলো নিতুর কাছে ।

বাড়ীতে না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করাতে, হড়হড় করে সব বলে ফেলল ছেলেটি ।

কোথায় খেলি, এই দুদিন ?

এই তো সঞ্জীবদের বাড়ীতে । কিন্তু আমি আর মায়ের পয়সায় খাবো না  ! ভাবছি, ওই মালিকের কাছে গিয়ে চাকরিটা চাইবো । আমাকে তো খেতে হবে !  তুমি কিন্তু আমাকে আর মায়ের কাছে খেতে অনুরোধ করো না  । মাথার ওপর ছাদ নেই বলে, রাতে বাড়ীতে থাকি ।

বেগুনী খাবি ?

তা খেতে পারি, খিদেও পেয়েছে ।

নিতু পয়সা দিতে ছেলেটি মোটা মোটা দুটো বেগুনিও নিয়ে এলো ।

খেতে খেতে নিতু বলা শুরু করলো :-

জানিস তো প্রদীপ আর মন্টু আমার বন্ধু ?

হ্যাঁ !

একদিন বেলা দুটো বেজে গেছে । বাজারে প্রায় ৭০ বছরের এক বুড়ো মানুষ একটা লাউ নিয়ে  সব্বাইকে অনুরোধ করছে:- এই লাউটা নিন । দু টাকায় ছেড়ে দেবো ।

কেউ নিচ্ছে না দেখে, মন্টু লাউটা নিয়ে বুড়োকে দুটো টাকা দিয়ে লাউটা নিয়ে নিলো।

প্রদীপ রেগেই অস্থির ।

মন্টু, তোর তো লাউ দরকার নেই ! সকালেই তো কিনেছিস !

ঠিক

তবে কিনলি কেন ?

লোকটাকে দেখিছিলি?

হ্যাঁ !

এই বয়সে, রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে , পাঁচ টাকার লাউটা দুটাকায় বিক্রি করতে চাইছিল । তাই!

দয়া ?

না, তবে মনে হলো ওনাকে সাহায্য করা উচিত !

 তা হলে তোর পাঁচ টাকাই দেয়া উচিত ছিল !

না, এটাই ঠিক হতো না !

কেন ?

উনি কিন্তু, এই বয়সেও ঘুরে ঘুরে একটা লাউ বিক্রি করছেন কড়া রোদে ।  ভিক্ষে চান নি  উল্টে কিছু বিক্রি করে টাকা চাইছেন। পাঁচ টাকা দিলে- ভিক্ষে দেওয়া হতো ।

ছেলেটি এবারে বলল – নিতুদা, আপনি ঠিক কি বলছেন বলুন তো ?


তোর মা- ভিক্ষে করছে না, এটা মনে রাখিস । এবারে বাড়ীতে খাবি কি খাবি না, সেটা তোর ব্যাপার  । আমি আর কিছু বলতে চাই না ।
==========
ছেলেটি  বাড়ী ফিরে গেছিল । পরে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে একটা বিডিওর চাকরি করছে এখন !

শেষ কথা :- সেই মা নিজে এসে ছেলেটির মাকে  নিজের মেয়ের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন ।

অণিমা  মেনে নিয়েছিলেন বিয়েটা ।


নাও দে আর এ হ্যাপি ফ্যামিলি  !

No comments: