Thursday, February 12, 2015

আম আদমীর জীবন



++++++++++++

নবা, ইয়ার, বাবলু, সেলিম, লক্ষণ, আবদুল এবং আরও অনেক – এদের চেনার কথা নয় কারোরই ।
ভোর ভোর, এদেরই প্যাডেল ভ্যানগাড়ী ভর্তি সব্জী বা পেছনে মাছের চুপড়ী নিয়ে সাইকেল গুলো দাঁড়িয়ে থাকে সারসার হরির দোকানের সামনে ।

কেউ এসেছে, লাউহাটি,  খড়িবাড়ী (উত্তর চব্বিশ পরগণা), কেউ বা ভোজেরহাট ( দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ) থেকে ।
 রাত দেড়টা থেকেই শুরু হয়ে যায় এদের তৎপরতা । সাইকেল বা ভ্যানগাড়ী তে ভর্তি করে সব্জী তোলা হয় ।
আর যারা মাছওয়ালা, তারা চলে যায় খড়িবাড়ী । মাছ নিয়ে আসে সেখান থেকে ।
মাছের খুব আকাল এখন । আগে যেখানে ভালো মাছের যোগান ছিল, সেখানে প্রায় নেইতে এসে ঠেকেছে ।
সব্জীও তাই । তবু পেট চালাতে হবে ।
একপেট পান্তা খেয়ে রওনা হয় সাইকেল বা ভ্যান নিয়ে, সার বেঁধে সবাই রাস্তায় নামে । শীত, বর্ষা, গরম সব ঋতুতেই একই ছবি ।
রাস্তায় খোলা থাকে চায়ের দোকানগুলো, অত রাতেও । সাঁ সাঁ করে ছুটে যায় প্রাইভেট বা অন্য গাড়ী । তোয়াক্কা নেই  এদের প্রতি ।
অসাবধান হলেই, এক ছোবলেই ছবি । প্রাতঃকৃত্য সেরে নেয় মাঠেই, আসার সময় ।

পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার মত- সাইকেল বা ভ্যান চালিয়ে এসে পৌঁছয়- দমদমের আনাচে কানাচে ।
কেউ কেউ আবার ম্যাজিক গাড়ীতেও আসে,  অতখানি রাস্তা শরীর আর দেয় না, সাইকেল বা ভ্যান চালাতে ।
এরা  ভ্যান বা সাইকেল রাখে স্থানীয় কোনো জায়গায় ।

পৌঁছেই বেরিয়ে পড়ে  সেই সব নিয়ে । যারা ডিম আনে, তাদের বাধ্য হয়েই ৯৩ নং বাসে আসতে হয়, সাবধানে । না হলে, ডিম গুলো ভেঙে যেতে পারে ।
টাটকা, হাঁস বা দেশী মুরগীর ডিমের চাহিদা প্রচুর । তবে, এদেরও যোগান কম আজকাল ।
 জিরিয়ে নেয় হরির দোকানে, লেড়ে বিস্কুট আর চা খেয়ে ।


পাইকারি হিসেবে বেচা হয় সব্জী । পাঁচ কিলোতে এক পাল্লা । স্থানীয় ভ্যানওয়ালারা কিনে নেয় সেসব ।

দরাদরির হাঁকডাক, বাস লরির আওয়াজকে ছাপিয়ে যায় ।
যোগান থাকলে, লাভ ২০০ থেকে ৩০০ টাকাও হয় । না হলে শ দেড়েক ।
ধুঁকতে ধুঁকতে বাড়ি ফেরে সব বেলা একটা দেড়টায় ।
এবারে গরম ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ আর কুচো মাচের জিরে বাটা ঝোল খেয়ে, মাটির মেঝেতেই লুটিয়ে পড়ে  ঘুমে,মড়ার মত ।
সন্ধে হব হব সময় উঠে শুরু হয়, পরের দিনের তৎপরতা ।
সময় নেই অন্য কিছু নিয়ে ভাববার । সংসার, মা, চাচী, বৌ সামলায় ।
=================
চলুন বাজার করে আসি ।




No comments: