ক্ষেপচুরিয়ান ব্লগে প্রকাশিত
বাবা বাজার থেকে জিওল মাছ আনলেই
পিন্টু সেগুলোকে প্যাট প্যাট করে চেয়ে দ্যাখে । চিমটে দিয়ে ধরে কয়েকটাকে ছেড়েও দিয়েছে । কিন্তু, সেই মৎস্যরাজকে আর
খুঁজেই পাচ্ছে না !
প্রত্যেকবার ভাবে, এবার বোধহয়
ছাড়া পেয়ে মাছটা বলবে- পিন্টু, তুমি আমার প্রাণ বাঁচালে । তোমাকে আমি আশীর্বাদ
করছি । এবার থেকে, যা চাইবে খালি বলবে – মৎস্যরাজের আদেশে যেটা চাইছি সেটা হোক ।
কাজটা আপনা- আপনি হয়ে যাবে ।
সে সব তো হয়ই না, উল্টে রান্নার
সাধনা মাসি মাছ কম পড়লে চেঁচামেচি করে বাড়ী মাথায় করে । আর, কপালে জোটে মায়ের
বকুনি !
মাছ ছাড়ার পর ভেবেছে, আরে !
কাছে পিঠে তো কোনো পুকুর- টুকুর নেই । তালে বাঁচবে কি করে ওরা?
বাবার মামা, ক্ষেতুদাদুর কাছ
থেকে রাশিয়ান না চাইনিজ রূপকথাটা শুনেছিল পিন্টু । মৎস্যরাজ বলে নাকি সত্যিই আছে কোথাও ।
ক্ষেতু- দাদু হঠাৎ করে তার
সন্ধান পেয়ে ,অঙ্কেতে বড় পাশ- টাশ দিয়ে এক নামকরা
কলেজে মাষ্টারী করত । এখন অবসর নিয়েছেন ।
ক্লাস ওয়ার্ক কপিতে ম্যাডাম প্রশ্ন করেছিলেন – H2O
র মানে লিখতে । পিন্টু লিখেছিল:- H- I- J- K- L- M- N -O ।
উত্তর দেখে ম্যাডাম বলেছিলেন :-
পিন্টু, তুই দেখছি একদিন কেমিষ্ট্রিতে নোবেল প্রাইজ পাবি ।
যত দোষ বঙ্কার । ওই তো বলেছিল,
নেটে নাকি জলের নতুন এম্পিরিক্যাল ফরমূলা বেরিয়েছে । H2O মানে জল ঠিকই, তবে আজকাল জলদূষণ হচ্ছে । তাই সহজ এই নতুন সিম্বল বেরিয়েছে । আ্যলফাবেটের লেটারগুলো ঠিক থাকলো আর
জলের দূষণটাও ঠিকঠাক ভাবে লেখা গেল ।
অপমানের শোধ নেবার জন্য,বঙ্কার
জন্য তলে তলে ফাঁদ পেতেছিল পিন্টু । সুযোগও এসে গেল । থার্ড ল্যাঙ্গোয়েজ ক্লাসে,
হিন্দি ম্যাম একটা নোটস্ দিয়ে বলেছিলেন – এটার ফোটোকপি করে নিও তোমরা ।
ফাঁপরে পড়েছিল সবাই ! পিন্টু
বলেছিল- হিন্দি জেরক্স বা ফটোকপি তো সব জায়গায় হয় না ! আমাকে দে, বাবাকে বলে
ধর্মতলার আপিস চত্ত্বর থেকে চল্লিশটা কপি করিয়ে আনবো ।
পরে, ফোটোকপির ব্যাপারটা বঙ্কা বুঝে, কিছু না বললেও পিন্টুকে নাম দিয়েছিল- এইচ টু ও ।
তারপর থেকেই পিন্টুকে ওর ক্লাস
সেভেনের সবাই এইচ টু ও বলে ডাকতে শুরু
করেছে । মৎস্যরাজকে একবার যদি পায়, তবে আর
পড়াশোনাই করবে না । খালি কম্পুতে গেম খেলে , মৎস্যরাজের আদেশে মগজে সব পড়া সড়াৎ
করে ঢুকে, পিন্টুকে সব বিষয়েই একশো তে একশো পাইয়ে দেবে । চাই কি পরে সত্যি সত্যি নোবেল
পেয়ে ম্যাডামকে, অবাক করাতে পারে ।
ক্ষেতু- দাদুর কি মজা ! একদিন প্রচণ্ড
বৃষ্টির মধ্যে একেবারে শুকনো অবস্থায় বাড়ীতে এসেছিলেন ।
না ভিজে, কি ভাবে শুকনো ভাবে
এসেছেন জিজ্ঞেস করাতে দাদু বলেছিল :-ওই যে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে যে ফাঁক গুলো
আছে, সেগুলোর মধ্যে দিয়ে এসেছি । এটা সেই মৎস্যরাজের আদেশের কৃপার ফল- বুজলি,
পিন্টু ! একটা জিওল মাছকে পুকুরে ছেড়ে
দেওয়াতে এই বরটা পেয়েছিলাম । মাছটা ছিল, মাছেদের রাজা । এই রূপকথাটা ছোটবেলায়
পড়েছিলাম । তারপর থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম । আর, হাতে চলে এলো বরটা ।
মার মুচকী হাসার কারণটা বুঝতে
পারে নি পিন্টু । সাধনা মাসী ইশারায় বাবার গাড়ীটা যে কেন দেখালো, সেটা আজও বোঝে নি
।
দাদু এলে অনেক মজার ঘটনার কথাও
জানা যায় । শান্তিনিকেতনের খোয়াইতে একটা মাঠে দুটো সাপকে দেখেছিল দাদু । একটা সাপ,
আরেকটা সাপের ল্যাজ মুখে দিয়ে আছে । আবার ওই সাপটা প্রথম সাপটার ল্যাজ মুখে দিয়ে আছে । এই করে করে দুটো সাপ
নিজেদেরকে খেয়ে ফেলে অদৃশ্য হয়ে গেল ।
গাড়ীতে ফেরার পথে, রাস্তার
গাড্ডাগুলোও আপনা- আপনি নিজেদের মত করে
সরে সরে রাস্তা করে দিচ্ছিল । ফলে
কোনো ঝাঁকুনিও ছিল না । আরামসে একটুও ঝাঁকুনি না খেয়ে, দাদু ফিরে এসেছিল কোলকাতায়
।
ছোটবেলায় ইতিহাসে প্রশ্ন
এসেছিল- প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের সম্বন্ধে যাহা জানো- লেখ ।
দাদু, খালি বইতে দেখা
বাবরের ছবিটা এঁকে দিয়ে খাতা জমা দিয়েছিল
মাষ্টারমশায়ের কাছে ।
তারপর একশোতে একশো পাওয়া দাদুকে
নিয়ে খুব হৈ চৈ হয়েছিল কয়েকদিন । পরীক্ষক
নাকি ইতিহাস বইয়ের চারশো কুড়ি নম্বর পাতার
পুরো লেখাটা হুবাহু খাতায় লেখা দেখেছিলেন । বাবরের ছবিটা ভ্যানিস্ । এটা
নাকি খবরের কাগজেও বেরিয়েছিল ।
দাদুরও নোবেল পাবার কথা । তবে,
সেটা ভয়ে ছেড়ে দ্যায় । রবি ঠাকুরের নোবেল পদকটা চুরি যাবার পর এই রিস্কটা দাদু নেয়
নি । একটা সম্পদ নষ্ট হবে ।
কেউ তো আর জানতো না, সবই মৎস্যরাজের
কৃপা ! তাই পিন্টুর এই আপ্রাণ মৎস্যরাজের
খোঁজ। পিন্টু আবার কিছুটা ভুলো । এই তো সেদিন ! অঙ্কের
ক্লাস টেস্টে প্রশ্ন এসেছিল :-
Expand (a+b) n
পিন্টু লিখেছিল
(a +
b) n
(a
+ b) n
etc.
অবশ্যম্ভাবী গার্জ্জেন কল !
ফলে, মায়ের মুখ গোমড়া আর বাবার হো হো করে দিলখোলা হেসে বলেছিল- পিন্টুর মাথায়
খ্যালেও বটে ।
ক্ষেতুদাদুকে অনুরোধ করে ডেকেছিল
মা বাড়ীতে । ঘিয়ে ভাজা ফুলকো লুচি আর সাদা তরকারি খাইয়ে
বলেছিল মা :-
কি যে সব ঢোকান পিন্টুটার মাথায়
! আজগুবি সব ব্যাপার মাথায় নিয়ে ঘোরে বলে, এইসব উদ্ভট চিন্তা আসে ।
দাদু বলেছিলেন :- দ্যাখো বৌমা !
বাচ্চারা যদি কল্পনাপ্রবণ না হয়, তালে কোনো কাজই ঠিকঠাক ভাবে করতে পারবে না । আগে ওদের কল্পনার সুযোগটা দাও ! তালেই
দেখবে, ধীরে ধীরে বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার ফারাকটা বুঝতে পারবে । তবেই না, পড়াশোনা
আসবে ? নো ইমাজিনেশান- হিউম্যান ক্যান নট এক্সসিট! পড়ার ব্যাগটা কাঁধে ঝুললে হবে না । প্রকৃত
শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে ।
-------------
খড়্গপুরের আইআইটির কম্পিউটার এঞ্জিনিয়ারিংএর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পিন্টুর আজকাল ওই কথা
গুলো মনে পড়লেই নিজের মনেই হাসে ।
মৎস্যরাজরা সত্যিই আছে-
ক্ষেতুদাদুদের ছদ্মবেশে ।
........সমাপ্ত.....
No comments:
Post a Comment