আজ, একটা
লণ্ঠনের ছবি দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল ।
প্রায়
৫৪ বছর আগের কথা । বাঘাযতীন কলোনিতে মামার বাড়ী ।
উদ্বাস্তু হয়ে আসার ক্ষত সকলের বুকে তখনও টাটকা । টিনের ছাউনি আর বেড়ার ঘরে
আমাদের বসবাস । সেই ঘরে, মোট তিনটে পার্টিশন । ঘরের
সামনে, একটা মাটির বারান্দা । সেখানে, একটা টেবিল । তার দুপাশে দুটো চেয়ার । মধ্যে
একটা লণ্ঠন রেখে আমি আর ছোটমামা পড়তাম । সন্ধের আগেই লণ্ঠনের ফিতে কেটে, কেরোসিন
তেল ভরে সব রেডি । মুছতেও হত চিমনিটা । কালি পরে, চিমনিটা আর বেশী আলো
প্রতিফলিত করতে পারতো না । তাই পরিষ্কার করে মুছতে হত । দিদিমার সন্ধে বাতি দেওয়া
হয়ে গেলেই, লণ্ঠন ধরিয়ে ফেলতাম ।
ঝিঁ
ঝিঁ পোকার ডাক আর সামনের মাঠটায় দুটো বকফুলের গাছ । লণ্ঠনের আলোয় সব কিছু একটা
মায়াময় দেখাত ।
গরমকালে,
হাতপাখাই সম্বল । রাত ৯টা মানে অনেক রাত, তখন খাবার ডাক পড়ত । খেতে যাবার আগে, আমি আর ছোটমামা তিনটে ক্যাম্প
খাট ধরাধরি করে, মাঠে বকফুল গাছের পাশে
পেতে বিছানা করতাম । তিনজন শুতাম বাইরে – দাদু, ছোটমামা আর আমি । মাঠের শেষেই ছিল
পুকুর । তালগাছের গুঁড়ি পেতে ঘাটও তৈরি । খাবার পর আর টিপকল টিপে জল নিয়ে হাত ধুতে ইচ্ছে করতো না ।
পুকুরে হাত ধুয়ে, একটা ডুব মেরে স্নান সারা হলে গা জুড়িয়ে যেত । তারপর হাতপাখা
চালিয়ে আরও একটু ঠাণ্ডা হয়ে দিব্বি ঘুম । পাশে, লণ্ঠনটা কমিয়ে দিয়ে রাখা থাকতো ।
সেই অন্ধকারময় আলোয় একটা স্বপ্নালু আবেশ ।
সেদিন,
বোধহয় গরমটা বেশী পড়েছিল । তন্দ্রা মত এলেও গরমে হাতপাখা নাড়াতে নাড়াতে হাত ব্যাথা
করছিল । ফলে, সেই সেঁটে ঘুমটা আর আসছিল না ।
দাদু
আর ছোটমামা দেখি দিব্বি ঘুমোচ্ছে ।
হঠাৎ
দেখি- একটা ছায়া আস্তে আস্তে এগুচ্ছে আমাদের দিকে । আধো ঘুমে ব্যাপারটা বুঝতেই
দেখি- ছায়াটা একটা আস্ত লোক । গুটিসুটি মেরে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঘরের দিকে ।
মুখ
দিয়ে চীৎকার করলাম – চোওওওওওওওওওওওওওররররররররররররর !
আওয়াজটা
বেরুল একটা গোঙানি হয়ে । দাদু আর ছোটমামার ঘুম ভেঙে গেল সেই গোঙানি তে ।
ওরাও
বুঝতে পারলেন- কেসটা কি ! লোকটা বুঝতে পেরে সরে আসছিল মূল ঘরের থেকে । সেটা দেখে,
দাদু কাছা সামলাতে সামলাতে বলতে লাগলেন – আই চোর, যেও না , যেও না বলছি । ভালো হবে
না ।
দাদুর
পা লেগে লণ্ঠনটা উল্টে পরে গিয়ে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল । শুকনো ঘাস কেটে রেখেছিল,
স্থানীয় বাগালরা। পরে নিয়ে যাবে বলে । আগুন লেগে গেল সেই ঘাসে । আমরা ব্যস্ত হয়ে
পড়লাম পুকুর থেকে জল এনে আগুন নেভাতে ।
পরে
দিদিমা বললেন – চোরটা পালাল, ভালো আর হলো কোই ???
No comments:
Post a Comment