Friday, May 24, 2013


আজ, একটা লণ্ঠনের ছবি দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল ।
প্রায় ৫৪ বছর আগের কথা । বাঘাযতীন কলোনিতে মামার বাড়ী ।  উদ্বাস্তু হয়ে আসার ক্ষত সকলের বুকে তখনও টাটকা । টিনের ছাউনি আর বেড়ার ঘরে আমাদের বসবাস । সেই ঘরে, মোট তিনটে পার্টিশনঘরের সামনে, একটা মাটির বারান্দা । সেখানে, একটা টেবিল । তার দুপাশে দুটো চেয়ার । মধ্যে একটা লণ্ঠন রেখে আমি আর ছোটমামা পড়তাম । সন্ধের আগেই লণ্ঠনের ফিতে কেটে, কেরোসিন তেল ভরে সব রেডিমুছতেও হত চিমনিটা । কালি পরে, চিমনিটা আর বেশী আলো প্রতিফলিত করতে পারতো না । তাই পরিষ্কার করে মুছতে হত । দিদিমার সন্ধে বাতি দেওয়া হয়ে গেলেই, লণ্ঠন ধরিয়ে ফেলতাম ।
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর সামনের মাঠটায় দুটো বকফুলের গাছ । লণ্ঠনের আলোয় সব কিছু একটা মায়াময় দেখাত ।
গরমকালে, হাতপাখাই সম্বল । রাত ৯টা মানে অনেক রাত, তখন খাবার ডাক পড়ত ।  খেতে যাবার আগে, আমি আর ছোটমামা তিনটে ক্যাম্প খাট ধরাধরি করে, মাঠে বকফুল গাছের  পাশে পেতে বিছানা করতাম । তিনজন শুতাম বাইরে – দাদু, ছোটমামা আর আমি । মাঠের শেষেই ছিল পুকুর । তালগাছের গুঁড়ি পেতে ঘাটও তৈরি । খাবার পর আর  টিপকল টিপে জল নিয়ে হাত ধুতে ইচ্ছে করতো না । পুকুরে হাত ধুয়ে, একটা ডুব মেরে স্নান সারা হলে গা জুড়িয়ে যেত । তারপর হাতপাখা চালিয়ে আরও একটু ঠাণ্ডা হয়ে দিব্বি ঘুম । পাশে, লণ্ঠনটা কমিয়ে দিয়ে রাখা থাকতো । সেই অন্ধকারময় আলোয় একটা স্বপ্নালু আবেশ ।
সেদিন, বোধহয় গরমটা বেশী পড়েছিল । তন্দ্রা মত এলেও গরমে হাতপাখা নাড়াতে নাড়াতে হাত ব্যাথা করছিল । ফলে, সেই সেঁটে ঘুমটা আর আসছিল না ।
দাদু আর ছোটমামা দেখি দিব্বি ঘুমোচ্ছে ।
হঠাৎ দেখি- একটা ছায়া আস্তে আস্তে এগুচ্ছে আমাদের দিকে । আধো ঘুমে ব্যাপারটা বুঝতেই দেখি- ছায়াটা একটা আস্ত লোক । গুটিসুটি মেরে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঘরের দিকে ।
মুখ দিয়ে চীৎকার করলাম – চোওওওওওওওওওওওওওররররররররররররর !
আওয়াজটা বেরুল একটা গোঙানি হয়ে । দাদু আর ছোটমামার ঘুম ভেঙে গেল সেই গোঙানি তে ।
ওরাও বুঝতে পারলেন- কেসটা কি ! লোকটা বুঝতে পেরে সরে আসছিল মূল ঘরের থেকে । সেটা দেখে, দাদু কাছা সামলাতে সামলাতে বলতে লাগলেন – আই চোর, যেও না , যেও না বলছি । ভালো হবে না ।
দাদুর পা লেগে লণ্ঠনটা উল্টে পরে গিয়ে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল । শুকনো ঘাস কেটে রেখেছিল, স্থানীয় বাগালরা। পরে নিয়ে যাবে বলে । আগুন লেগে গেল সেই ঘাসে । আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়লাম পুকুর থেকে জল এনে আগুন নেভাতে ।
পরে দিদিমা বললেন – চোরটা পালাল, ভালো আর হলো কোই ???

No comments: