Friday, May 24, 2013

তুলসী চক্রবর্তী


প্যাপিরাসে প্রকাশিত
*****************
চিত্র সৌজন্য :- গুগুল

বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ যে- সোনা হয়ে উঠতে পেরেছিলো তার অন্যতম কারণ তুলসী চক্রবর্তীর মত অভিনেতারা ছিলেন বলে।

"সাড়ে ৭৪"-এ তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীকে ছেড়ে যেন উত্তম-সুচিত্রার দিকে চোখই যায়না |

প্রথম সিনেমায় অভিনয় : -১৯৩২ এ। ছবির নাম ছিল- পুর্নজন্ম।
হ্যাঁ! আমার যতদূর জানা আছে, তুলসী চক্রবর্তী মেঘে ঢাকা তারা হয়েই ছিলেন। কিন্তু, তাতে তাঁর কোনো খেদ ছিল না। তিনি, এই রকম উপেক্ষাতেই অভ্যস্ত ছিলেন। বাংলা সিচুয়েশন কমেডির ভাণ্ডার একেবারে শূন্য নয়, কিছু কিছু রত্ন সেখানে রয়েছে, যেখানে তুলসী চক্রবর্তী একটি উজ্জ্বল রত্ন। অনেকদিন আগে একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম( নামটা মনে নেই) : - শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে, অনুপকুমার তুলসী চক্রবর্তীকে একটা কোট কিনে দিয়েছিলেন। সেটা পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন সন্তানহীন তুলসী চক্রবর্তী। অনুপকুমারকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ছেলে হিসেবে। পরশপাথর ছবিতে সত্যজিৎ রায় তুলসী চক্রবর্তীকে মুখ্য চরিত্রে নির্বাচিত করায়, আর এক দফা হাউ হাউ করে কেঁদেছিলেন। এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য কত পেয়েছিলেন, জানলে আপনাদের চোখে জল আসবে। মাত্র, ১৫০০ টাকা। ৩১৬ টার মত বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কোথাও নামমাত্র পয়সা বা কোথাও সবিনয় অনুরোধে, বিনে পয়সায় অভিনয় করতেন, এই অসাধারণ অভিনেতা। হাওড়ার শিবপুরে, নিজের বাড়ীতে ট্রাম ধরে ফিরে যেতেন স্যুটিং এর পর। টাক মাথা, ধুতি হাফ ফতুয়া পরা এই ভদ্রলোক পৌরহিত্য করতেন টাকার জন্য।

পরশপাথরে অভিনয়ের সময়, সত্যজিৎ রায় তুলসী বাবুকে ট্যাক্সি করে যাতায়াতের জন্য পরামর্শ দিয়ে হাতে টাকা দিয়েছিলেন। দুদিন যাতায়াতের পর তিনি সত্যজিৎ রায় কে বলেন : -এই ট্যাক্সি করে যাতায়াত কোরতে তিনি পারছেন না। এতে তিনি তাঁর অভিনয়ের স্বত: স্ফূর্ততা হারিয়ে ফেলছেন। তারপর থেকে তিনি আবার ট্রামেই যাতায়াত শুরু করেন।




আজকালকার দিনে, কেউ ভাবতে পারবেন- এই কথা? অভিনয় করতেন কোনো মেক আপ ছাড়াই। খালি গায়ে স্যুটিং থাকলে তাঁর পৈতে দেখা যেত।
৩ রা মার্চ, ১৮৯৯ সালে হাওড়া জেলার গোয়ারী গ্রামে জন্ম। বাবা আশুতোষ চক্রবর্তী রেলে কাজ করতেন বলে, পড়াশোনার জন্য কাকা প্রসাদ চক্রবর্তীর কাছে থাকতেন, তুলসী চক্রবর্তী। প্রসাদবাবু, ষ্টার থিযেটারে হারমোনিয়াম আর তবলা বাজাতেন। সেই সূত্র ধরেই অভিনয় জগতে প্রবেশ। ত্‌ৎকালীন ষ্টার থিযেটারের মালিক ছিলেন- অপরেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই চোখে পড়ে যান অপরেশবাবুর। সালটা ছিল ১৯১৬। এই অপরেশবাবুই তালিম দেন তুলসী চক্রবর্তীকে। টপ্পা গান, পাখোয়াজ বাজানো সব শিখেছিলেন। ১৯২০ তে প্রথম ষ্টেজে অভিনয় করেন। নাটকের নাম ছিল : - দুর্গেশনন্দিনী। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তিনি ষ্টার থিযেটারেই ছিলেন। পরে যোগ দেন, মনমোহন থিয়েটারে। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪২টা নাটকে অভিনয় করেন। শেষ নাটক ছিল- শ্রেয়সী ( ১৯৬০)। তার পর তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য ( হৃদযন্ত্র) আর নাটকে অভিনয় করেন নি।


১১ ই ডিসেম্বর ১৯৬১ তে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই অভিনেতা। পয়সাও ছিল না চিকিৎসার জন্য। প্রচণ্ড দারিদ্র তো ছিলই, তার ওপরে নিজের বাড়ীটা দান করেছিলেন এলাকার দরিদ্র পুরোহিতদের জন্য। স্ত্রী উষারাণী দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন একমুঠো খাবারের জন্য।
মারা যাবার পর সরকারের তরফ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোরও কোনও বন্দোবস্ত ছিল না তখন। অবশ্য তাতে কিছু আসে যায় না . তিনি আছেন . বাঙালির অন্তরে আছেন . থাকবেনও।

তুলসী চক্রবর্তী অমর রহে।

1 comment: