এই গল্পটা ক্ষেতু বাগচী সিরিজের দ্বিতীয় গল্প ! একটা বই পড়ে, এই গল্পটার প্লট আমার মাথায় এসেছিল । পাঠকরা বইয়ের নাম, এই গল্পে পাবেন । পারলে আসল বইটা সংগ্রহ করে পড়ে নিতে পারেন ।
“ দমকা হাওয়া” (রাণাঘাট) শারদীয়-২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত।
*********************
চেম্বারে রুগি নেই। সাধারণত, সন্ধে ৭ টার পর আর রোগী দেখে না চন্দন। আড্ডার জন্য প্রস্তুতি নেয় মানসিক ভাবে। কিছুক্ষণ পরেই সব আড্ডানোর লোকেরা এসে পড়বে। সত্য কম্পু মানে সত্য কম্পাউণ্ডারও যাব যাব করছে!
এই সময়ে এক পৃথুলা মহিলা এসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন!!!!!
- আমারে একডু দেইখ্যা দেন ডাক্তার বাবু!!!!
চন্দন জিজ্ঞেস করল:- কি হয়েছে আপনার?
- দ্যাহেন না, রিস্কা থিক্যা পইড়া গেসি। কোমোরে দুঃখ পাইসি আর কনুই ছইড়া একাক্কার। মনে লয়, আর উঠতে পারুম না। মহিলা কঁকিয়ে কঁকিয়ে কথাগুলো বললেন।
- ও কম্পুদা, দিদিকে একটা ভোভেরান এস আরের ষ্ট্রীপ, একটা টিটি, ছড়ে যাওয়া জায়গাটা মারকিউরোক্রোম দিয়ে ড্রেসিং করে দিন। যান ওখানে- সত্যদা দিয়ে দেবে। ভয় নেই ব্যাথা সেরে যাবে। চন্দন বলল।
- ও ডাক্তার বাবু আমি টিটি দিয়া কি করুম? হেয়া তো আমার পোলায় খ্যালে। হেইডা টেবিল টেনিস তো? আর শাড়ী তো পইরাই আচি। ড্রেসিং এর কি দরকার?
- ওফ! এই টিটি সেই টিটি না! এটা টিটেনাস টক্সয়েড। ধনুষ্টঙ্কার বোঝেন? সেটা যাতে না হয়, তাই এই ইনজেক্শান। ড্রেসিং মানে ,ঐ ছড়ে যাওয়া জায়গাটা ব্যাণ্ডেজ করে দেবে। বুঝলেন তো? আর হ্যাঁ! ব্যাথা না কমলে, কালকে একটা কোমোরের এক্স- রে করিয়ে আনবেন। প্রেসক্রিপশানে লিখে দিলাম।
মহিলা, মাথা হেলিয়ে খুব কষ্ট করে গেলেন সত্য কম্পুর কাছে। সত্যদার ইংরেজী বলার অভ্যাসের জন্য, চন্দন একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। সত্যদার ইংরেজী শুনে সবাই থরথর করে কাঁপতে শুরু করে বলেই, নাম- সত্য কম্পু! এই মহিলাকে আবার সত্যদা ইংরেজীতে কিছু বলে না বসে!!!!!!
ইনজেক্শানটা মহিলা কোমোরেই নেবেন। ওনার ধারণা, যেখানে ব্যাথা লেগেছে, সেখানে টিটি ইনজেক্শান নিলে তাড়াতাড়ী ব্যাথা সারবে।
চন্দনের আশঙ্কা সত্যি করে শুনতে পেল, সত্যদা ইংরেজীতে মহিলাকে বলছে:- হাতে ইনজেক্শান is better than কোমোরে ইনজেক্শান!!!!!
মহিলা, কি বুঝলেন, কে জানে! ইনজেক্শান নিয়ে ভিজিট আর ওষুধের পয়সা দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন।
উনি বেরিয়ে যেতেই কবি বদরী সান্যালের কবিতার খাতা হাতে প্রবেশ। সত্য কম্পু বলল:- চন্দন, আমি Exit মারছি। লোকজনের Entrance হচ্চে, আমি cut মারি।
কাট করে আবার পেষ্ট করবেন না- চন্দনের উত্তর।
মুচকী হেসে, সত্য কম্পু বেরিয়ে গেলেন।
চন্দনকে একা পেয়ে বদরী বললেন- একটা অনু কবিতা শুনবে? অন্যরা এসে গেলে আর চান্স পাবো না!
শোনান, ব্যাজার মুখে উত্তর দিল, চন্দন।
বদরীবাবু গলা ঝেড়ে শুরু করলেন:-
হিটলার জাঁদরেল
খায় বসে কৎবেল
ঝালনুন, লঙ্কায় ভিজিয়ে
যুদ্ধের বাজারে
মাছি মেরে হাজারে
রেখে দেয় টেবিলেতে সাজিয়ে
কিন্তু, বদরীদা, এটা আমার শোনা শোনা মনে হচ্ছে! ফেসবুকে আমার এক বন্ধু , এটা বোধহয় ষ্টেটাস মেসেজ দিয়েছিল ।
- তোমার তো সবই শোনা মনে হয়! এটা আমি নিজে লিখেছি!
- কি জানি, হবে হয়তো- চন্দনের উত্তর!
হতে পারে চন্দন! অনেক জিনিসই অজানা থাকে!
ক্ষেতুদা কখন যে ঢুকে পড়েছেন, সেটা দুজনে খেয়াল করে নি। বদরীবাবু কেমন যেন সিঁটিয়ে গেলেন। ক্ষেতুদা আজ কেমন যেন অন্যমনস্ক।
- তোমার কবিতাটা শুনে আজ অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল হে বদরী!!!!!!!
চন্দন আশ্চর্য্য হয়ে প্রস্তরীভূত হয়ে গেল। ক্ষেতুদা, বদরীবাবুর কবিতা শুনে খচিতং হলেন না, এটা পৃথিবীর দশম আশ্চর্য্য।
তারক কোথায় হে? ক্ষেতুদার প্রশ্ন।
- তারকদা রেশন আনতে গেছেন-বদরীবাবু বললেন।
- এই রাত সাড়ে আটটার সময় রেশন? সব দোকান তো বন্ধ!!!!!!!!
- আহা! ওই হুইস্কি আনতে গেছেন। রেশন টার্মটা কোড নেম।
- হুম! ক্রিপ্টোগ্রাফি! ক্ষেতুদার গম্ভীর জবাব।
- ওটা আবার কি?
- তথ্যগুপ্তিবিদ্যা, বুঝলে হে! বদরীর কবিতা শুনে মনে পড়ল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এর ব্যবহার। তবে ব্যপারটাকে তুঙ্গে নিয়ে গেছিল হিটলার। জার্মান লোরেন্ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল স্টাফ -বার্তা গোপন করার জন্য ব্যবহার করা হতো। ক্ষেতুদা সিগারেট বের করলেন।
তারক মোত্তিরও ঢুকে পড়েছেন, বগলে বোতল নিয়ে। কিঞ্চিৎ চড়িয়েও এসেছেন।
-কি যেন বলছিলেন, ক্ষেতুদা! ওই কি গাফি!
- বলছি, তবে তুমি তো দেশী খাও! আজ যে হুইস্কি?
- পরিবর্তনের জমানা, ক্ষেতুদা! সবাই বদল চাইছে! বদলাও নিচ্ছে। আমিই বা পিছিয়ে থাকি কেন?
হুম! বদলা তো হিটলারও নিয়েছিল, তার মৃত্যুর খবর রটিয়ে দিয়ে!
- আ্যই ব্যাস, বলেন কি! হিটলার তালে, ১৯৪৫ সালের ৩০ শে এপ্রিল আত্মহত্যা করে নি? চন্দন উত্তেজিত।
- না হে! আমি নিজে সাক্ষী!
- এঃ! ক্ষেতুদা! আপনি কিন্তু, ঘনাদা মানে ঘনশ্যাম দাসকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তারক মোত্তির মিউ মিউ করে বললেন।
- হোয়াট ননসেন্স! ক্ষেতুদা হুংকার দিলেন!!!!!! ঘনাদা কি মিথ্যে বলতেন নাকি! ইন ফ্যাক্ট, ঘনাদা, আই মীন মিঃ ঘনশ্যাম দাসই তো এই আ্যসাইনমেনটা আমাকে, ভায়া আ্যামিরিকান গভ্ মেন্ট দিয়েছিলেন। আর তুমি যে নিজেকে স্বদেশী বলো, তার বেলা!!!!!! এদিকে তো মাত্রো ২০০৩ সালে রিটায়ার করেছ। গ্যাঁজা মারো, খবর রাখি না নাকি? ক্ষেতুদা ভিসুভিয়াস!!!!!!
আড্ডার মেজাজ নষ্ট হচ্ছে দেখে চন্দন বলল- আরে ক্ষেতুদা! আপনার কথা চালিয়ে যান তো! আপনার ব্যাকগ্রাউণ্ড আমি জানি! এরা তো হালে আড্ডায় এসেছে! আরে “বল হরি”, চা দিয়ে যা!!!!!!!!!!!
জানো? হিটলারকে কৎবেল খাওয়া কে শিখিয়েছিল?- ক্ষেতুদার প্রশ্ন!
- কে?
- কে আবার!!!!!! স্বয়ং মিঃ ঘনশ্যাম দাস! হিটলার টক খেতে ভালবাসতো তো!!!!! তাই ঘনাদা এই নুন লংকা আর কৎবেলের রেসিপিটা “এভা”কে দিয়েছিলেন। হিটলার শেষ পাতে খেতে খেতে ইহুদি মারার ছক করতো! ঘনাদা তো সেই দুঃখেই বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসে টঙ্গের ঘরে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে নিয়েছিলেন।
- উরি ব্যাস! আমার কবিতা লেখা সার্থক! বদরীবাবুও উত্তেজিত।
- সার্থক কিনা জানি না, তবে কবিতার মধ্যে সত্যিটা লুকিয়ে আছে।
- কিরকম, কি রকম?
-ওই যে, মাছি মেরে হাজারে। হাজারে হাজারে ইহুদি মেরেছিল তো।
- সত্যি, মানুষ কত নৃশংস হতে পারে, তাই না?
- জানো? ১৯৩৩ সালে, নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছিল- হিটলারের জার্মানীতে।
তখন আধুনিক কম্পিউটার যুগ শুরু হয় নি ঠিকই, তবে আদি কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে ইহুদিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করার জন্য এগিয়ে এসেছিল,International Business Machine বা পৃথিবী খ্যাত IBM কোম্পানী।
কিভাবে তারা প্রতিটি ইহুদি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করত, তা এখন বহু আলোচিত।
হিটলারের শাসন কালে, সমস্ত ইহুদিরা হয়ে উঠেছিল এক একটি নম্বর। তার পাশে লেখা থাকত নাম ঠিকানা।
দেখা গেছে, যে অঞ্চলে, এই কাজটা ভালো ভাবে করা হয়েছিল, সেখানেই ইহুদি নিধন বেশী হয়েছিল। বলি বুঝলে কিছু????????
- উরি ত্তারা! আ্যমিরিকার কোম্পানী সাহায্য করেছিল, হিটলারকে?
- তবে আর বলছি কি!! আর এই আ্যমেরিকান সরকারই তো সাহায্য করে হিটলারকে পালিয়ে যেতে। সেখানে আমাকেই বেছে নেয় আ্যমেরিকা।
- একটু খুলে বলবেন? ঘনাদাই বা কেন আপনাকে বাছলেন ওই কাজের জন্য? চন্দন বিনীত ভাবে প্রশ্ন করল, ক্ষেতুদাকে।
- বলছি, বলছি! আগে চা খাই! জিভ শুকিয়ে গেছে। বনমালী নস্কর লেনে গেলে ফাউল কাটলেট খাওয়াতেন ঘনাদা! সঙ্গে কফি! কোথায় যে গেল, সেই সব দিন!!!!!!!!!!!!
- আপনি চিকেন রোল খাবেন? আনিয়ে দিচ্ছি!
- দাও! তবে আমার জন্য দুটো আনিও।
কৃপা করে বললেন ক্ষেতুদা।
খাওয়া হয়ে গেলে, ক্ষেতুদা শুরু করলেন:-
বেশ কয়েক বছর আগে, সাংবাদিক জেরার উইলিয়ামস এসেছিল ভারতে। সঙ্গে, সমর ঐতিহাসিক সাইমন ডানস্টান।
- কেন?
- মূর্খের মত প্রশ্ন করো না তো তারক! কেন আবার? আমার সঙ্গে দেখা করতে!!!!
- তাই!!!!!!! তা কি বললেন ওদের?
- কি আর বলব? একটা সাক্ষাৎকার নিল। তারপর একটা বই ছেড়েছে মার্কেটে ইদানীর! অবশ্য, আমার নামটা দেয় নি ওরা, আমারই অনুরোধে। বেশী নাম টাম পছন্দ হয় না আমার।
- বইয়ের নাম কি?
- গ্রে উলফ্, দি এসকেপ অফ আডলফ হিটলার,বা ধূসর নেকড়ে- আডলফ হিটলারের নির্গমন ।
- ওটা নয় পরে, পড়ে নেব আমরা, এখন একটু গপ্পোটা সংক্ষেপে বলবেন আমাদের!!!
- গপ্পো কি হে! সত্যি ঘটনা! একেবারে জ্বলন্ত ইতিহাস। এটা কোনো ভাবেই আনেকডোটাল নয়। অনেক রিসার্চ আর আমার কাছ থেকে শুনে, কষ্ট করে লিখেছে ওরা।
- আনেকডোটাল????????
- হ্যাঁ! আনেকডোটাল মানে অলিখিত ইতিহাস। যেটা গাঁজাখুরি বলে মনে হতে পারে অনেকের।
- বলুন ! বলুন! শুনছি! সমস্বরে চিৎকার করল সবাই।
- বলবো, তবে বাধা দেবে না কিন্তু!
- আমরা পাগোল নাকি! বলে যান!
ক্ষেতুদা শুরু করলেন:- প্রথমেই বলি, ঘনাদাকে তখন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা গোপন কাজে ফিরে যেতে হয়েছিল। হিটলারকে অনেক বুঝিয়েছিলেন ঘনাদা, যাতে ওই সব জঘন্য কাজ না করে। হিটলারও কথা দিয়েছিল। আমার তখন কম বয়েস। ঘনাদা ভরসা করে, আমাকে রেখে গিয়েছিলেন হিটলারের কাছে। বয়েস কম হলেও,আমার বুদ্ধির ওপর ভরসা ছিল ঘনাদার। সাগরেদি করছি তখন ওনার।
তখন কি আর জানি, আ্যমেরিকার অত ষড়যন্ত্র! ১৯৪৫ সাল! দিনটা খুব ভাল করে মনে আছে আমার। সাতাশে এপ্রিল। একজন গেষ্টাপো এসে আমাকে একটা গোপন খবর দিল। হিটলারের দোস্ত, মুসোলীনি তার উপপত্নি ক্লারা পেত্তাচিকে সঙ্গে নিয়ে ইতালীর ছেড়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে। মিলানের বিদ্রোহী দলের দুজনকে খতম করা সারা। তাদের দুজনকে পায়ে পায়ে বেঁধে মাথা নীচু করে ঝুলিয়ে রেখেছে, প্রকাশ্য স্থানে। উন্মত্ত জনতা মৃতদেহ দুটির ওপর যথেচ্ছ থুতু ছেটাচ্ছে, লাঠি মারছে, পাথর ছুঁড়ে মারছে। সে এক বীভৎস অবস্থা।
খবরটা হিটলারের কানে তুলে দিলাম। এই প্রথম, ওকে ভয় পেতে দেখলাম। বলল:- কেতুউউ! কি হবে আমার?
আমি সোজা বললাম:- তোমার পাপের ঘড়া ভরে গেছে। এবার নিজে মরার জন্য তৈরী হও।
-একটা উপায় বলো না!
- দেখ তালে, মরা কি ভয়ংকর জিনিস।
বলে, মনে কষ্টও হচ্ছিল। সাংঘাতিক প্রতিভা ছিল লোকটার। একজন রাজনৈতিক নেতার সমর নায়ক হওয়ার ঘটনা ইওরোপে প্রথম। আমাদের নেতাজীও অবশ্য তাই ছিলেন, তবে তিনি একদম অন্যরকমের একজন মহাপুরুষ।
আমি বুঝতে পারছি, লাল ফৌজ প্রায় পুরোটা ঘিরে ফেলেছে হিটলারকে। মায়া হল। বুদ্ধি দিলাম- তুমি প্রথমে একটা ষ্টেটমেন্ট দাও।
- কি রকম?
- বলো, আমি বুলেট দিয়ে আত্মহত্যা করছি, বলবে, এভাও পটাশিয়াম সাইনাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার অনুগামীদের বলছি, আমাদের মৃতদেহটা পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিতে। এভাকেও বিয়ে করে নাও।
- ঠিক আছে, জবাব দিল হিটলার।
তার আগে, ও একটা মন্তব্য করেছিল। দিনটা ছিল- ২৭ শে এপ্রিল। সাল ১৯৪৫। বলেছিল:- ‘গোটা দুনিয়া যদি আমাকে মৃত বলে ভাবে, তবেই ভবিষ্যতের আশা করতে পারে জার্মানি।” তাই বুদ্ধিটা আমার মাথায় এসেছিল।
লোরেন্ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান হল, আমেরিকার গভ্মেন্টকে। পিটার বমগার্ট নামে, একজন ধুরন্ধর আর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাইলটকে আমার জানা ছিল। তাকেই পাঠাতে বললাম। ছেলেটা আমারই বয়েসী বা একটু বেশী হবে। গোপনীয়তা রাখতে জানত।
প্লেন নিয়ে হাজির হল, পিটার বমগার্ট। চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম হিটলার আর এভাকে নিয়ে। পিটার তো দেখে থ। চোখ আর ফেরাতে পারছে না। আমি জোর ধমক দিলাম। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে প্লেন উড়িয়ে দিল পিটার।
ও ও! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। তখন হিটলারের একান্ত সচিব ছিল- মার্টিন বরমান। ১৯৪৩ সাল থেকেই এই ছকটা ওর সাথে আমার করা ছিল। হিটলারকে ইচ্ছে করেই বলিনি। ভেবেছিলাম, ও আর ইহুদিদের মারবে না। বিধির বিধান, খণ্ডাবে কে?
যাক।
আকাশে উড়ে ডেনমার্কের টনডরে নামলাম আমরা। তারপর ফের ফিরে গেলাম জার্মানির ট্রাভেমুণ্ডার বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, লুফ্ৎওয়াফে। এই ঘোরাটা ইচ্ছে করেই প্ল্যান করেছিলাম আমি।
পিটারকে ছেড়ে দিলাম। এবারে আর একটা প্লেনে ছদ্মবেশে উঠলাম আমরা। গিয়ে নামলাম বার্সেলোনার দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটি রিয়সে। জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে লোরেন্ৎস সাইফার মেশিন দিয়ে খবর পাঠান ছিল। ফ্রাঙ্কো আগে থেকেই আর একটা প্লেন রেডি করে রেখেছিল। আমরা গিয়ে নামলাম, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ফুয়েরতেবেনতুরায়। ওখান থেকে ইউ বোটে চড়ে সবাই ঢুকে পড়লাম অতলান্তিক মহাসাগরের গভীরে।
লাল ফৌজ বাঙ্কারে পৌঁছে গেলেও পাখী ফুরুৎ।
স্পেন ছেড়ে ৫৩ দিন বাদে পৌঁছলাম, আর্জেন্তিনার উপকূলে মার ডেল প্লাতার দক্ষিণে নিকোচিয়ায়।
- ক্ষেতুদা, একটা প্রশ্ন।
- বল!
- ইউ বোট কি?
- তোমরা তো দেখছি কিস্সু জানো না! ওটা হলো সাবমেরিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে খুব ব্যবহার হয়েছিল।‘
- ঠিক আছে। আপনি বলে যান।
- তারপর আর কি! আমি তো ভারতে চলে এলাম, ঘনাদার ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে।
- পরে আর কোনো খবর পান নি?
- হুঁ! পেয়েছিলাম।
- কি? কি?
- ওই আনডেসের পাদদেশে এক গণ্ডগ্রামে কেটেছিল হিটলারের শেষ জীবন। দুটো মেয়েও হয়েছিল। তবে এভার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় ১৯৫৩ তে। শেষমেষ হিটলার মারা যায়, ১৯৬২ র ১৩ ই ফেব্রুয়ারী, বেলা ৩টের সময়। এরপর আর কি হয়েছে, আমার জানা নেই।
ক্ষেতুদা আর একটা সিগারেট ধরালেন।
তারক মোত্তির বললেন- একটা শেষ প্রশ্ন ক্ষেতুদা!
- বল হে বল!
- আপনার মনে আছে? মাসখানেক আগে, আপনি সেল ফোনের সিম কার্ডের জন্য একটা ফর্ম ভরে আমাকে দিয়েছিলেন জমা করতে!
- হ্যাঁ! তো, তাতে কি হল?
- না! মানে ওই ফর্মের সাথে আপনার ভোটার কার্ডের সেল্ফ আ্যটেষ্টেড ফোটো কপি ছিল। আর ওটাতে আপনার জন্ম তারিখ , ১৯৪৫ সালের ৮ ই নভেম্বর ।
ক্ষেতুদা আগুন ঝরা চোখে তারক মোত্তিরে দিকে তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন চন্দনের চেম্বার থেকে।
____সমাপ্ত_______
No comments:
Post a Comment