Friday, May 24, 2013

ডুয়াল সিম


ডুয়াল সিম


কারিগরি কারি - কুরীর জমানা । তাই জীবনটাকে মাঝে মাঝে সেল ফোন আর কম্পিউটারের মিশ্রণ বা কম্বিনেশন মনে হয় আমার ।
জীবনটা আবার ডুয়াল সিমের ফোন । সাথে দশ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা উইথ ফ্ল্যাশ ।  মাঝেই মাঝেই ফ্ল্যাস ব্যাকে চলে যাই ।
মাথার হার্ডডিস্কটা , মোটে কুড়ি জিবি একশো আঠাশ র‌্যাম । পুরোনো কালের ফ্লপি ডিস্কও মনে হয় আমার । খুব স্লো ইস্পিড !  সব উইণ্ডো খোলে না একসাথে
দুটো সিমে আলাদা আলাদা করে ভরা আছে- হাসি আর সুখ । আর একটাতে, কান্না আর দুঃখ ।
দুঃখের সিমটা আর আ্যক্টিভেট করি না আজকাল । নো ইনকামিং অর আউটগোয়িং । কি হবে, এই সব সিম রেখে ! আছে থাক, সংগ্রামের সাথী !!! অন্য সিমের অভিজ্ঞতা গুলোই ফ্ল্যাসে ঝলসে ওঠে ।
তারই  টুকরো টুকরো ছবি আঁকার চেষ্টা করি- কম্পিউটারের কি বোর্ডে । কোনোটায় আলো নেই, কোনোটায় বা ফ্ল্যাস ।
সদ্য, অঙ্কে এম.এস.সি পাশ করে উঠেছি । ছাত্রাবস্থা থেকেই থাকি কটকের বারবাটি ষ্টেডিয়ামের পেছনে- ওয়াই. এম. সি. এ. র গেষ্ট হাউসে ।  দুটো করে সীট এক একটা ঘরে । আমি, দুটো সীটেরই ভাড়া দিয়ে  পুরো একটা ঘর দখল করে থাকিএকটু দূরেই বাথরুম , টয়লেট।  টিউশনি করি চুটিয়ে । মাস গেলে খারাপ টাকা পাই না,  তখনকার হিসেব । তাও চাকরীর চেষ্টা করছি ।  চাকরী করলে নাকি, মান ইজ্জত বাড়ে ।
ভায়োলা সরকার নামে এক ছাত্রী, একদিন কথায় কথায় বলল :- জানেন স্যার !
-      কি ?
-      কোলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, আমার ঠাকুদার বাবার আউট হাউস ছিল ।  ইংরেজরা দখল করে নিলে, তিনি মনের দুঃখে কটকে চলে আসেন । সেই থেকে আমরা এখানেই আছি । মাঝে মধ্যে কোলকাতায় গিয়ে দেখে আসি ওই মেমোরিয়াল ।
-      তাই নাকি ! কে বলেছে ?
-      আমার বাবা !
-      এটাও তালে, তোমার জানা উচিত, নেতাজী ওইজন্যেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল । কটকের লোক ছিলেন কিনা !
-      স্যার ! এই তথ্য তো হিষ্টরি বুকে পাই নি !
-      আছে, আছে, তোমার বাবার কাছে যে পুরনো ইতিহাস বই আছে, পুঁথির আকারে , সেটা একবার দেখে নিও । তোমার বাবা আমাকে দেখিয়েছিলেন ।
আমার পাশের ঘরে থাকতেন এক বাঙালি ভদ্রলোক  । বেশ আন্নাদুরাই মার্কা গাব্দাগোব্দা চেহারা । সার্ট- টাই পরে, একটা বাদামী রঙের ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে বেরুতেন । আলাপ হল । বেশ সদালাপি । জানলাম, উনি স্কুইব বলে একটা আ্যমেরিকান ওষুধ কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ ।
একদিন ওনার ঘরে গেলাম ।  স্তুপাকার ময়লা গেঞ্জি আর মোজা জড়ো করে রাখা । জিজ্ঞেস করাতে, বললেন কে কাচবে? নতুন কিনে নেই । পরে, কোলকাতায় গেলে মা সব কেচে দ্যায় । তখন, ওই গুলোই পরি আবার ।
নাম, জিজ্ঞেস করাতে বললেন – ওসব নাম ঘুচে গেছে । আমি এখন – বেচু মানে ওষুধ বেচি  ঘুরে ঘুরে । মাথায় ঝাঁকা নেই, তবে হাতে ব্যাগ আছে । এককথায় ওষুধের হকার । ভালো নাম অবশ্য আছে, তবে ওই বেচু নামেই পরিচিত সবার কাছে । বলে, হো হো করে দিলখোলা হাসি হাসলেন । আজকালকার দিন হলে, স্মাইলি দিলেই হতো ।

ওনার সঙ্গে একদিন রেষ্ট হাউসে গেলাম । এখানেই সব থাকেন । কেউ পার্মানেন্ট সীট নিয়ে, কেউ বা মেটারনিটি ওয়ার্ডের মত সারি সারি পাতা বিছানায় । সবার জায়গা হয় না বলে, কেউ কেউ বাইরে থাকেন । যেমন সমীরদা ( ততদিনে আসল নাম জেনে গেছিপদবী সান্যাল )
একটু রাতের দিকে জমজমাটি আড্ডা বসে । সমীরদা নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।
একজন বয়স্ক ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে পাশে বসিয়ে, বললেন :-
-     আমি বাপের ধর !!!
-     ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না !
-     আমি যে কোম্পানীতে কাজ করি, তার নাম হল- বসন্ত আয়ুর্বেদিক প্রডাক্ট ! সংক্ষেপে “বাপ” আর আমার পদবী- ধর । তাই, বাপের ধর ।
হাসবো না কাঁদবো বুঝে ওঠার আগেই একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন :- ইনি মহাপুরুষ । গায়ে বড় বড় লোম আছে ।
আবার অবাক হবার পালা আমার ! গায়ে বড় বড় লোম থাকলেই, মহাপুরুষ ?
-      ও একদিন বাথরুমে স্নান করার জায়গা না পেয়ে, ইঁদারার জল তুলে স্নান করছিল ।  খালি গায়ে লোম দেখে, জিজ্ঞেস করলাম- তোর গায়ে এত লোম কেন ? উত্তর দিল- পুরুষ ! বুঝলেন বাপের ধরদা ! একেই বলে- পুরুষ । আমি বলেছিলুম- গাধা তো তালে মহাপুরুষ ! সেই থেকে ওই নামেই পরিচিত- মদন সাহা ।
দেখে- শুনে ঘোর লেগে গ্যালো । ঠিক করলাম এই বৃত্তিতেই আসবো ! বছর চল্লিশ- পঁয়তাল্লিশ আগে, এই বৃত্তি সম্বন্ধে বাইরের লোকেদের ধারণা ছিল- সব বাপে খ্যাদানো , মায়ে তাড়ানো ছেলেদের কাজকম্মো । মেয়েরা তো আসতোই না , এই কাজে ।
কিছু লোকের কালচারাল শক লাগল । কিন্তু আম্মো নাছোড় । সমীরদার কথা মতো বেশ কয়েকটা কোম্পানীতে আ্যপ্লাই করলাম । অবশেষে, একটা কোম্পানী থেকে ডাক এলো ।
কটকেই ইনটারভিউ । সমীরদার স্যুট টাই পরেই গেলাম । একটু ঢলঢলে ।  এক সর্দারজী ইনটারভিউ নিচ্ছিলেন  ।
ঢুকতেই জিজ্ঞেস করলেন :- I wonder ! In rainy season, Cuttack is having Circus Party!
-  Why Sir?
-   Oh, noooooooo ! You look like a clown!
-  Yap! I know, I am a mirror!
সর্দারজী হেসে ফেললেন । তবুও, কমলী নেহী ছোড়তি । বললেন :-
-      Bengalis are born clerks! Will you be able to perform this tough pharma sales job?
-      Sir, have you gone to Calcutta?
-      Oh ! Come on! Calcutta is my headquarter!
-      Then Sir, we Bengalese are accustomed to see Sardijees as truck, bus and taxi drivers! If you are in this job, well, I can also perform!!!!
সর্দারজী জোরে হেসে পরিস্কার বাংলায় বললেন –তোমার হবে । কবে জয়েন করবে ?
উত্তর দিলাম – যখন বলবেন স্যার !
ঠিক আছে, তোমার কাছে আ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার চলে যাবে । তৈরি থেকো, বোম্বেতে ট্রেণিং  ! এসো ! গুড লাক্ ।
ছুট্টে এসে রেষ্ট হাউসে খবর দিলাম । সবাই বেশ আনন্দিত । বাপের ধর বললেন :- ব্যাটা রামকেষ্টর বয়স, আমি যতদিন ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছি, তার থেকেও কম ! ব্যাটা জবরদস্ত দিয়েছে । তবে, সর্দারজী বেশ স্পোর্টিং । না হলে, রামকেষ্টর চাকরী হতো না !
আমাদের ট্রেণিং শুরু হল- মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ/ বেচু হওয়ার জন্যবোম্বাইয়ের ( এখন মুম্বাই ) এক ফাইভ ষ্টার হোটেলে । প্রায় দেড়মাস ধরে চলেছিল এই ট্রেণিং ।
বিভিন্ন বিষয় , দুটো ভাগে বিভক্ত । আ্যনাটমি, ফিজিওলজি, নানারকম রোগে ওষুধের ক্রিয়া,  পার্শ প্রতিক্রিয়া !
আর একটি বিষয়, সেলস এবং ডাক্তাদের কাছে কি ভাবে ওষুধকে উপস্থাপন করা এবং তার রিহার্সাল , আর কিছু ইউএসপি নিজেদের থেকে উদ্ভাবন করে কোম্পানীকে জানান,যাতে পছন্দ হলে কোম্পানী সেটা ব্যবহার করতে পারে !
রাজ বিষ্ণোইকে জিজ্ঞেস করলেন- ডঃ দত্ত !
Raj!
Suppose, our company has launched a baby food! What should be the USP to the Doctors?
রাজের হাজির জবাব !
It contains all the qualities of mothers’ milk, except but the container!
আমার মেডিক্যাল/সেলস্ রিপ্রেজেনটেটিভ  জীবনে, প্রচুর জ্ঞানী- গুণী লোকের সংস্পর্শে এসেছি । এই বৃত্তি থেকেই অনেকে পরে, নাট্য, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, সঙ্গীত জগতে স্বনাম ধন্য হয়েছেন ।
আগেই বলেছি রেস্ট- হাউসে, রাতে আড্ডা বসত ।  অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন । হাসি- মজা- দুঃখের, সব ঘটনাই থাকত । অভিজ্ঞতা যখন “ আড্ডা” র গল্পে পরিণত হয়, তখন একটু জল মেশান থাকে , তাই ব্যাপারটা উপভোগ্য হয় ।
একটা নিখাদ সত্যি,মজার ঘটনাই ( হয়ত, কিছুটা জল আছে ) বলি আপনাদের কাছে ।
উত্তরবঙ্গের একটা “প্রায় গ্রামে”, এই ঘটনাটার সূত্রপাত ।
তখন সবে “ ওডোমস” মশার ক্রিম বাজার জাত হয়েছে । ব্যাপারটা যে কি,সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না । এদিকে, কোম্পানির সেলস্ রিপ্রেজেনটেটিভের ওপর থেকে বিক্রির চাপে দমবন্ধ হবার জোগাড় ।
একদিন রিপ্রেজেনটেটিভ ওই ভদ্রলোক গেলেন , শহরতলী লাগোয়া এক আধা গ্রামে । একটা বড় মনোহারী দোকানের মালিক পরামর্শ দিলেন- বেশ কয়েকটা স্যাম্পল টিউব দোকানে রেখে, চোঙা ফুকতে । চোঙা ফুঁকতেই লোক এসে হাজির । তাদের বোঝান হল ক্রিমের উপকারিতা । অনেকেই নিয়ে গেলেন একটা করে স্যাম্পল টিউব !
বেশ কয়েকদিন পরে, ভদ্রলোক গেলেন ওই গ্রামেলোকে, ওনাকে দেখেই- রে রে করে তেড়ে এলো । ক্রিম ভেবে সবাই গালে একটু করে মেখেছে । মশা, কামড়েই গিয়েছে । সকলেই অতিষ্ঠ
শাস্তি হিসেবে দড়ি- দড়া দিয়ে হাত পা বেঁধে একটা গোয়াল ঘরে,  আটকে রাখা হলো, ভদ্র লোককে । দোকানদারের  অনুরোধে ছেড়ে দিল, ভদ্রলোককে এক ঘণ্টা পরে
কোনোক্রমে তিনি একটা গাড়ী ভাড়া করে এসে পৌঁছলেন, রেস্ট হাউসে । সারাদিন যন্ত্রণায় এদিক- ওদিক করছেন আর পেটের নীচে হাত দিচ্ছেন । আমরা বললাম- দাদা, আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝলাম । ব্যাপারটা খুলে বলুন, তারপর ডাক্তারের কাছে না হয় যাওয়া যাবে ।
তিনি জবাব দিলেন- সিরিয়াস কিছু না, তবে একটা বাছুরকেও আমার পায়ের সামনে ছেড়ে রেখেছিল কিনা  !!!!!
টক- মিষ্টি- ঝাল, চানাচুরের মত প্রচুর গল্প রয়েছে । একসঙ্গে সব বললে, আর পরবর্তীতে কিছু লেখার থাকবে না । তাই :-
অলমতি !










No comments: