ডুয়াল সিম
কারিগরি
কারি - কুরীর জমানা । তাই জীবনটাকে মাঝে মাঝে সেল ফোন আর কম্পিউটারের মিশ্রণ বা
কম্বিনেশন মনে হয় আমার ।
জীবনটা
আবার ডুয়াল সিমের ফোন । সাথে দশ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা উইথ ফ্ল্যাশ । মাঝেই মাঝেই ফ্ল্যাস ব্যাকে চলে যাই ।
মাথার
হার্ডডিস্কটা , মোটে কুড়ি জিবি । একশো আঠাশ র্যাম । পুরোনো কালের
ফ্লপি ডিস্কও মনে হয় আমার । খুব স্লো ইস্পিড !
সব উইণ্ডো খোলে না একসাথে ।
দুটো
সিমে আলাদা আলাদা করে ভরা আছে- হাসি আর সুখ । আর একটাতে, কান্না আর দুঃখ ।
দুঃখের
সিমটা আর আ্যক্টিভেট করি না আজকাল । নো ইনকামিং অর আউটগোয়িং । কি হবে, এই সব সিম
রেখে ! আছে থাক, সংগ্রামের সাথী !!! অন্য সিমের অভিজ্ঞতা গুলোই ফ্ল্যাসে ঝলসে ওঠে
।
তারই
টুকরো টুকরো ছবি আঁকার চেষ্টা করি-
কম্পিউটারের কি বোর্ডে । কোনোটায় আলো নেই, কোনোটায় বা ফ্ল্যাস ।
সদ্য,
অঙ্কে এম.এস.সি পাশ করে উঠেছি । ছাত্রাবস্থা থেকেই থাকি কটকের বারবাটি ষ্টেডিয়ামের
পেছনে- ওয়াই. এম. সি. এ. র গেষ্ট হাউসে ।
দুটো করে সীট এক একটা ঘরে । আমি, দুটো সীটেরই ভাড়া দিয়ে পুরো একটা ঘর দখল করে থাকি । একটু
দূরেই বাথরুম , টয়লেট। টিউশনি করি চুটিয়ে
। মাস গেলে খারাপ টাকা পাই না, তখনকার
হিসেব । তাও চাকরীর চেষ্টা করছি । চাকরী
করলে নাকি, মান ইজ্জত বাড়ে ।
ভায়োলা
সরকার নামে এক ছাত্রী, একদিন কথায় কথায় বলল :- জানেন স্যার !
-
কি ?
-
কোলকাতার
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, আমার ঠাকুদার বাবার আউট হাউস ছিল । ইংরেজরা দখল করে নিলে, তিনি মনের দুঃখে কটকে
চলে আসেন । সেই থেকে আমরা এখানেই আছি । মাঝে মধ্যে কোলকাতায় গিয়ে দেখে আসি ওই
মেমোরিয়াল ।
-
তাই নাকি ! কে
বলেছে ?
-
আমার বাবা !
-
এটাও তালে,
তোমার জানা উচিত, নেতাজী ওইজন্যেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল । কটকের
লোক ছিলেন কিনা !
-
স্যার ! এই
তথ্য তো হিষ্টরি বুকে পাই নি !
-
আছে, আছে,
তোমার বাবার কাছে যে পুরনো ইতিহাস বই আছে, পুঁথির আকারে , সেটা একবার দেখে নিও ।
তোমার বাবা আমাকে দেখিয়েছিলেন ।
আমার পাশের ঘরে থাকতেন এক
বাঙালি ভদ্রলোক । বেশ আন্নাদুরাই মার্কা
গাব্দাগোব্দা চেহারা । সার্ট- টাই পরে, একটা বাদামী রঙের ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে
বেরুতেন । আলাপ হল । বেশ সদালাপি । জানলাম, উনি স্কুইব বলে একটা আ্যমেরিকান ওষুধ
কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ ।
একদিন ওনার ঘরে গেলাম । স্তুপাকার ময়লা গেঞ্জি আর মোজা জড়ো করে রাখা ।
জিজ্ঞেস করাতে, বললেন কে কাচবে? নতুন কিনে নেই । পরে, কোলকাতায় গেলে মা সব কেচে
দ্যায় । তখন, ওই গুলোই পরি আবার ।
নাম, জিজ্ঞেস করাতে বললেন – ওসব
নাম ঘুচে গেছে । আমি এখন – বেচু মানে ওষুধ বেচি
ঘুরে ঘুরে । মাথায় ঝাঁকা নেই, তবে হাতে ব্যাগ আছে । এককথায় ওষুধের হকার ।
ভালো নাম অবশ্য আছে, তবে ওই বেচু নামেই পরিচিত সবার কাছে । বলে, হো হো করে দিলখোলা
হাসি হাসলেন । আজকালকার দিন হলে, স্মাইলি দিলেই হতো ।
ওনার
সঙ্গে একদিন রেষ্ট হাউসে গেলাম । এখানেই সব থাকেন । কেউ পার্মানেন্ট সীট নিয়ে, কেউ
বা মেটারনিটি ওয়ার্ডের মত সারি সারি পাতা বিছানায় । সবার জায়গা হয় না বলে, কেউ কেউ
বাইরে থাকেন । যেমন সমীরদা ( ততদিনে আসল নাম জেনে গেছি । পদবী
সান্যাল ) ।
একটু
রাতের দিকে জমজমাটি আড্ডা বসে । সমীরদা নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।
একজন
বয়স্ক ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে টেনে নিয়ে পাশে বসিয়ে, বললেন :-
-
আমি বাপের
ধর !!!
-
ব্যাপারটা
ঠিক বুঝলাম না !
-
আমি যে
কোম্পানীতে কাজ করি, তার নাম হল- বসন্ত আয়ুর্বেদিক প্রডাক্ট ! সংক্ষেপে “বাপ” । আর আমার পদবী- ধর । তাই, বাপের ধর ।
হাসবো
না কাঁদবো বুঝে ওঠার আগেই একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন :- ইনি মহাপুরুষ ।
গায়ে বড় বড় লোম আছে ।
আবার
অবাক হবার পালা আমার ! গায়ে বড় বড় লোম থাকলেই, মহাপুরুষ ?
-
ও একদিন
বাথরুমে স্নান করার জায়গা না পেয়ে, ইঁদারার জল তুলে স্নান করছিল । খালি গায়ে লোম দেখে, জিজ্ঞেস করলাম- তোর গায়ে এত
লোম কেন ? উত্তর দিল- পুরুষ ! বুঝলেন বাপের ধরদা ! একেই বলে- পুরুষ । আমি
বলেছিলুম- গাধা তো তালে মহাপুরুষ ! সেই থেকে ওই নামেই পরিচিত- মদন সাহা ।
দেখে-
শুনে ঘোর লেগে গ্যালো । ঠিক করলাম এই বৃত্তিতেই আসবো ! বছর চল্লিশ- পঁয়তাল্লিশ
আগে, এই বৃত্তি সম্বন্ধে বাইরের লোকেদের ধারণা ছিল- সব বাপে খ্যাদানো , মায়ে
তাড়ানো ছেলেদের কাজকম্মো । মেয়েরা তো আসতোই না , এই কাজে ।
কিছু
লোকের কালচারাল শক লাগল । কিন্তু আম্মো নাছোড় । সমীরদার কথা মতো বেশ কয়েকটা
কোম্পানীতে আ্যপ্লাই করলাম । অবশেষে, একটা কোম্পানী থেকে ডাক এলো ।
কটকেই
ইনটারভিউ । সমীরদার স্যুট টাই পরেই গেলাম । একটু ঢলঢলে । এক সর্দারজী ইনটারভিউ নিচ্ছিলেন ।
ঢুকতেই
জিজ্ঞেস করলেন :- I wonder ! In
rainy season, Cuttack is having Circus Party!
-
Why Sir?
-
Oh, noooooooo ! You look like a clown!
-
Yap! I
know, I am a mirror!
সর্দারজী
হেসে ফেললেন । তবুও, কমলী নেহী ছোড়তি । বললেন :-
-
Bengalis
are born clerks! Will you be able to perform this tough pharma sales job?
-
Sir, have
you gone to Calcutta?
-
Oh ! Come
on! Calcutta is my headquarter!
-
Then Sir,
we Bengalese are accustomed to see Sardijees as truck, bus and taxi drivers! If
you are in this job, well, I can also perform!!!!
সর্দারজী
জোরে হেসে পরিস্কার বাংলায় বললেন –তোমার হবে । কবে জয়েন করবে ?
উত্তর
দিলাম – যখন বলবেন স্যার !
ঠিক
আছে, তোমার কাছে আ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার চলে যাবে । তৈরি থেকো, বোম্বেতে
ট্রেণিং ! এসো ! গুড লাক্ ।
ছুট্টে
এসে রেষ্ট হাউসে খবর দিলাম । সবাই বেশ আনন্দিত । বাপের ধর বললেন :- ব্যাটা
রামকেষ্টর বয়স, আমি যতদিন ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছি, তার থেকেও কম ! ব্যাটা জবরদস্ত
দিয়েছে । তবে, সর্দারজী বেশ স্পোর্টিং । না হলে, রামকেষ্টর চাকরী হতো না !
আমাদের ট্রেণিং শুরু হল-
মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ/ বেচু হওয়ার জন্য । বোম্বাইয়ের
( এখন মুম্বাই ) এক ফাইভ ষ্টার হোটেলে । প্রায় দেড়মাস ধরে চলেছিল এই ট্রেণিং ।
বিভিন্ন বিষয় , দুটো ভাগে
বিভক্ত । আ্যনাটমি, ফিজিওলজি, নানারকম রোগে ওষুধের ক্রিয়া, পার্শ প্রতিক্রিয়া !
আর একটি বিষয়, সেলস এবং
ডাক্তাদের কাছে কি ভাবে ওষুধকে উপস্থাপন করা এবং তার রিহার্সাল , আর কিছু ইউএসপি
নিজেদের থেকে উদ্ভাবন করে কোম্পানীকে জানান,যাতে পছন্দ হলে কোম্পানী সেটা ব্যবহার
করতে পারে !
রাজ বিষ্ণোইকে জিজ্ঞেস করলেন-
ডঃ দত্ত !
Raj!
Suppose, our company has launched a baby food! What should be the USP to the Doctors?
Suppose, our company has launched a baby food! What should be the USP to the Doctors?
রাজের হাজির জবাব !
It contains all the qualities of
mothers’ milk, except but the container!
আমার মেডিক্যাল/সেলস্
রিপ্রেজেনটেটিভ জীবনে, প্রচুর জ্ঞানী-
গুণী লোকের সংস্পর্শে এসেছি । এই বৃত্তি থেকেই অনেকে পরে, নাট্য, চলচ্চিত্র,
সাহিত্য, সঙ্গীত জগতে স্বনাম ধন্য হয়েছেন ।
আগেই বলেছি রেস্ট- হাউসে, রাতে
আড্ডা বসত । অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা
বলতেন । হাসি- মজা- দুঃখের, সব ঘটনাই থাকত । অভিজ্ঞতা যখন “ আড্ডা” র গল্পে পরিণত
হয়, তখন একটু জল মেশান থাকে , তাই ব্যাপারটা উপভোগ্য হয় ।
একটা নিখাদ সত্যি,মজার ঘটনাই (
হয়ত, কিছুটা জল আছে ) বলি আপনাদের কাছে ।
উত্তরবঙ্গের একটা “প্রায়
গ্রামে”, এই ঘটনাটার সূত্রপাত ।
তখন সবে “ ওডোমস” মশার ক্রিম
বাজার জাত হয়েছে । ব্যাপারটা যে কি,সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না । এদিকে,
কোম্পানির সেলস্ রিপ্রেজেনটেটিভের ওপর থেকে বিক্রির চাপে দমবন্ধ হবার জোগাড় ।
একদিন রিপ্রেজেনটেটিভ ওই
ভদ্রলোক গেলেন , শহরতলী লাগোয়া এক আধা গ্রামে । একটা বড় মনোহারী দোকানের মালিক
পরামর্শ দিলেন- বেশ কয়েকটা স্যাম্পল টিউব দোকানে রেখে, চোঙা ফুকতে । চোঙা ফুঁকতেই
লোক এসে হাজির । তাদের বোঝান হল ক্রিমের উপকারিতা । অনেকেই নিয়ে গেলেন একটা করে
স্যাম্পল টিউব !
বেশ কয়েকদিন পরে, ভদ্রলোক গেলেন
ওই গ্রামে । লোকে,
ওনাকে দেখেই- রে রে করে তেড়ে এলো । ক্রিম ভেবে সবাই গালে একটু করে মেখেছে । মশা,
কামড়েই গিয়েছে । সকলেই অতিষ্ঠ ।
শাস্তি হিসেবে দড়ি- দড়া দিয়ে
হাত পা বেঁধে একটা গোয়াল ঘরে, আটকে রাখা
হলো, ভদ্র লোককে । দোকানদারের অনুরোধে
ছেড়ে দিল, ভদ্রলোককে এক ঘণ্টা পরে ।
কোনোক্রমে তিনি একটা গাড়ী ভাড়া
করে এসে পৌঁছলেন, রেস্ট হাউসে । সারাদিন যন্ত্রণায় এদিক- ওদিক করছেন আর পেটের নীচে
হাত দিচ্ছেন । আমরা বললাম- দাদা, আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝলাম । ব্যাপারটা খুলে
বলুন, তারপর ডাক্তারের কাছে না হয় যাওয়া যাবে ।
তিনি জবাব দিলেন- সিরিয়াস কিছু
না, তবে একটা বাছুরকেও আমার পায়ের সামনে ছেড়ে রেখেছিল কিনা !!!!!
টক- মিষ্টি- ঝাল, চানাচুরের মত
প্রচুর গল্প রয়েছে । একসঙ্গে সব বললে, আর পরবর্তীতে কিছু লেখার থাকবে না । তাই :-
অলমতি !
No comments:
Post a Comment