Friday, May 24, 2013

গাছ- মা

দিয়ালা -কিশোর ওয়েবজিনে প্রকাশিত
গাছ- মা
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য
রোজ ভোরবেলায়, পিন্টু একবার মায়ের কাছে যাবেই। মায়ের পাশে শুয়ে শাড়ীর গন্ধ শোঁকে পিন্টু। বাবা, ঘুম থেকে উঠেই বাজারে চলে যায়। বাড়ীতে ফ্রিজ থাকা সত্ত্বেও টাটকা মাছ চাই বাবার। রোদ- ঝড়- জল, কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।একবার ভারি বিপদ হয়েছিল। ভারী বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে বাবা ছাতা নিয়ে, বাজার করে বাড়ি ফেরার সময় তাল রাখতে পারে নি। বাবা আবার পাজামা পরতে পারে না। কাটা লুঙ্গি পরে। মায়ের সাথে কোনোদিন বাবার ঝগড়া দেখে নি পিন্টু। সেদিন, দেখেছিল।
ছাতা, বাজারের থলে আর কাটা লুঙ্গি কোনোরকমে মুঠোতে ধরে, বাবার ফেরত আসা দেখে মায়ের সে কি চোপা!!!!!!!
বলেছিল- পাজামা পরতে পারো না! ভরবাজারে লোকের সামনে লুঙ্গি খুলে গেলে কি হত?
বাবা সমানে হো হো করে হেসেই যাচ্ছিল। মায়ের মুখ গোমড়া!
বাবা বেরিয়ে গেলেই মা আবার এসে খানিকটা শুয়ে থাকে, সাধনা মাসী না আসা পর্যন্ত। মাসীই রান্না করে, তবে, মাছের ঝোল টা মা না রাঁধলে, বাবা কিছুতেই খেতে পারে না। মার স্কুল থাকে, তবে ওইটুকু রান্না না করলে, মায়েরও শান্তি হয় না।
সকালের এই সময়টাই পিন্টু মায়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে থাকে।  লম্বা ছায়ার একটা নিরাপদ আশ্রয়। পাউডারের হাল্কা গন্ধ ছাপিয়ে আর একটা সুন্দর গন্ধ। এটা অনেক দামী ডিয়োডোরেন্ট মনে হয় পিন্টুরসারা গায়ে মায়ের এই গন্ধটা সে চাকুম- চুকুন করে চেখে , গায়ে মেখে নেয়। এই সময় মাকে, মনে হয় বট- গাছ
পিন্টুদের পাড়ায় একটা বট- গাছ ছিল। তাতে, প্রচুর পাখীর বাসা। সকাল বেলায় প্রচুর পাখীর কিচির- মিচির শুনতে ভালো লাগতো।
গাছটাকে-পিন্টুর, মা বলেই মনে হত। সবাই কেমন আশ্রয় পায়।
আজ রোববার। খুব একটা তাড়া হুড়ো নেই! তার ওপর ক্ষেতু দাদু অনেকদিন পরে আজ আসবেন। বাবার মামা, এই ভদ্রলোক জীবনে প্রচুর দেশ- বিদেশ ঘুরেছেন কাজের জন্য। প্রচুর পড়াশোনা করা আর খুব আমুদে লোক।
মা বলল:- ছাড় রে পিন্টু! আমি এবার উঠি। ময়দা মাখতে হবে। ক্ষেতু মামা ফুলকো লুচি খেতে ভালোবাসে! তবে, আজ হিংয়ের কচুরী করবো । দাদুর এটাও খুব ফেভারিট ডিস ।
পিন্টু কচুরীর নামে লাফিয়ে উঠে ছেড়ে দিল মাকে। ক্ষেতু দাদু, ফুলকো লুচি ফুটো করে, তার মধ্যে ভেলি গুড় ঢুকিয়ে পুরোটা মুখে পুরে চোখ বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে। মনে হয়, যেন অমৃত খেয়েছেন। গোটা কুড়ি খাওয়ার পর আবার সাদা আলুর ঝাল ঝাল তরকারি দিয়ে আরও গোটা কুড়ি!  মা অবশ্য তরকারিটা যা রাঁধে না! একে বারে ফাটাফাটি।
তারপর ফিলটার্ড কফি , গোটা ৪ কাপ মত খেয়ে, বুঁদ হয়ে বসে থেকে বারান্দায় গিয়ে একটা দামী সিগারেট ধরিয়ে মৌতাতটা উপভোগ করেন।
পিন্টু ক্ষেতু দাদুর সিগারেট খাওয়াটা পছন্দ করে না ! চারিদিকে, সিগারেট খাওয়া নিয়ে এত সচেতন করার চেষ্টা চলছে, তাও এগুলো কি দাদু মানতে চায় না?
জিজ্ঞেস করেছিল পিন্টু । উত্তর এসেছিল- বুঝলি পিন্টু, আমি জানি, সিগারেট খাওয়াটা ঠিক নয়, তবুও মনে হয় এটা না খেলে বুদ্ধি খোলে না ! তাছাড়া, এই হাত দুটো নিয়ে যে কি করবো ভেবে পাই না । তাছাড়া, তোর হিরো, ফেলুদা তো সিগারেট খায় । তাও কড়া চারমিনার । আজকাল ফেলু মিত্তির, কি খায় কে জানে? ওটা তো আর পাওয়া যায় না !
বাবা হেসে বলেছিল- ওই জন্যই ফেলুদা সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, জানেন না? দাদু, মুচকী হাসিটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখে ।
মা, ঘরের মধ্যে সিগারেট খাওয়াটা একেবারেই পছন্দ করে না । তাই, দাদু বারান্দায় গিয়ে খেয়ে আসে।
আজকের মেনু ছিল হিংয়ের কচুরী আর কষা আলুর দম ! মা, ডিসে করে সেগুলো আনতেই, দাদুর চোখগুলো গোল্লা গোল্লা হয়ে গেল !!!!!
মা, আরও একটা প্লেট দাদুর সামনে রাখতেই মনে হলো, দাদু আনন্দে হার্ট ফেল করবে । প্রায় ফুটবল সাইজের এক একটা রাজভোগ ! সাথে রাবড়ী
দাদু, চোখ বন্ধ করে খেয়েই যেতে লাগল ।
আজ দাদুকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল পিন্টুর । জুতসই সময় পাচ্ছে না ।  স্কুলে গাছপালা নিয়ে পড়ানো চলছে ।  সিলেবাসের বাইরেও যে অনেক কিছু জানার থাকে । 
দাদুর সিগারেট খাওয়া শেষ হতেই, পিন্টু আর দেরী করল না !
-       দাদু !
-       বল
-       তুমি জগদীশ বসুর নাম নিশ্চয়ই শুনেছ ?
-       শুনব কি রে ! উনি তো আমার বন্ধু !
-       সে কি? উনি কবেএ মারা গেছেন, তোমার বন্ধু হবেন কি করে?
-       এই দ্যাখো ! বলি, ওনার বই তো পড়ি, না কি? সেই হিসেবেই আমার বন্ধু ! যেমন তোপসে, জটায়ু, ফেলুদা, প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু- তেমনই রবি ঠাকুর, রাজশেখর বসু-সত্যজিৎ রায়- আরও অনেকে, আমার – তোর- সবার বন্ধু ! এদের তো ভালবাসতে হবে, তাই না ? বুঝলি কিছু?
-       হুম, বুঝলাম !
-       তা, কি বলবি বল !
-       বলছিলাম, গাছের প্রাণ আছে- এটা জগদীশ বসু আবিস্কার করেছিলেন?
-       এই তো! এটা সম্পূর্ণ ভাবে ভুল কথা ! সবাই বলে বটে, তবে এটা ঠিক নয় । গাছের যে প্রাণ আছে সে কথা কিন্তু জগদীশ বোস বলেন নি।  তবে, এটা বলা যেতে পারে তিনি আবিস্কার করেছিলেন নতুন করে ! ইংরেজী তে, ডিসকভারি আর ইনভেনশান এই দুটো কথা আছে । ডিসকভারি হচ্ছে, যে জিনিসটা অচেনা ছিল, তাকে সামনে আনা আর ইনভেনশান হচ্ছে, যেটা ছিলই না, তাকে বের করা । যেমন ইলেকট্রিক বাল্ব, টিভি- এই সব ।  তিনি, ডিসকভার করেছিলেন এটা বলা যেতে পারে, তবে,  ইনভেনশান করেছিলেন এটা বলা যায় না ! তবে, তিনি আচার্য্যদেব অন্য কারণে ।
-       তাই?
-       এজ্ঞে, পিন্টু বাবু- ঠিক তাই ! গাছের প্রাণের কথা বহুদিন ধরেই পণ্ডিতেরা জানেন আর  এটাও সবাই দেখেওছিলেন- গাছ, চারা থেকে আস্তে আস্তে কি করে বেড়ে ওঠে তাই, গাছের যে প্রাণ আছে, সেটা জানাই ছিল । গাছেরা আমাদের মত চলাফেরা করতে পারে না ।
-       তারপর?
-       বলতো, পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থের নাম কি ?
-       প্রাচীনতম গ্রন্থ, কি দাদু?
-       ভুলেই গেছিলাম, তুই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িস ! গ্রন্থ মানে বুক! বই ! পুস্তকও বলা হয় ! আর প্রাচীনতম মানে- ওলডেস্ট- সবচেয়ে পুরোনো !  এবার বল, উত্তরটা ! দেখি, জানিস কিনা!
-       বুঝেছি! ওটার উত্তর- ঋগ্বেদ !
-       রাইট্ । কি করে জানলি?
-       ক্লাস ফাইভের হিস্ট্রিতে পড়ানো হয়েছিল আমাদের ।
-       বেশ, বেশ
এর মধ্যে দাদু, মাকে বললেন – পিঙ্কি, আর এক  কাপ কফি দাও ! তোমার ছেলের প্রশ্নের চোটে আমার বকতে বকতে গলা শুকিয়ে গিয়েছে ।
মা বলল- আনছি, বসুন । তবে আমি না আনা পর্যন্ত আপনি শুরু করবেন না ! আমিও শুনছি কিন্তু ! হেবী ইনটারেস্টিং তো !
কফিটা তারিয়ে তারিয়ে খেলেন দাদু । দাদু, নিজে অংকের ছাত্র ছিলেন, কিন্তু সব বৈজ্ঞানিক ব্যাপারেই খুব আগ্রহী বা ইনটারেষ্টেড্ ।
-       শোন ! বেদেই বলা আছে, প্রাণ চার রকম । অন্ডজ(ডিম থেকে যাদের জন্ম), জীবজ( জীবদেহ থেকে যাদের জন্ম), স্বেদজ( সিক্ততা থেকে যাদের জন্ম), এবং উদ্ভিজ্জ( যা মৃত্তিকা থেকে উদ্ভূত)
-       সব শুনে যে লাট খাচ্ছি !
বাবা এবার মুখ খুলল! এই সব সংস্কৃত শব্দ বললে তো হার্ট ফেল করব মামু! পারো বটে তুমি !
-       রতন, তুই তো একটু আধটু সংস্কৃত পড়েছিলি, তুই একথা বলছিস কেন ?
-       সে তো ক্লাস এইট অব্দি ! অতটুকু পড়ে কি আর সব বোঝা যায় ! আমার তো উচ্চারণ করতে গেলেই দাঁত খুলে পড়ে যাবে । তবে, অণ্ডটা বুঝলাম । মানে হল – ডিম বা এগ্ ।
-       আর জীবজ? একটু যেন বুঝতে পারছি । মায়ের প্রশ্ন ।
-       তালে, পরিস্কার করেই বলি, কেমন?
-       হ্যাঁ ! হ্যাঁ! সেটাই বরঞ্চ ভালো ! উরি বাবা ! বাবা হেসে বলল।
-       ডিম থেকে প্রাণের জন্ম তো বুঝলি, যেমন পাখি।  জীবজ মানে যে কোন জীবের থেকে , মানে মানুষ, বাঘ এইসব । স্বেদ মানে ঘাম । এদের থেকে নানারকম জীবাণু বা ব্যাক্টেরিয়া । সিক্ত মানে ভিজে । আর মৃত্তিকা মানে মাটী । উদ্ভিদ, মানে মাটী ভেদ বা ফুটো করে যেটা ওঠে । বলি বুঝলি কিছু ?
-       হুম, পিন্টুর উত্তর ।
-       বেদ স্বীকার করে এই চারপ্রকার প্রাণ ই প্রজ্ঞা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মানে হল, বেদ এটা স্বীকার করে, এই চাররকম প্রাণই বুদ্ধি দিয়ে কন্ট্রোলড্  ।
-       প্রজ্ঞা?
-       প্রজ্ঞা কথাটার মানে হল, তীক্ষ্ণমতি বা প্রচণ্ড বুদ্ধি । পাশ্চাত্য বিজ্ঞানে, জগদীশ বোসের বেশ কিছুদিন আগেই চার্লস ডারউইনের কাজ স্বীকৃতি পেয়ে গেছে এবং জীবরাজ্যে উদ্ভিদের স্থান নিয়ে কোনো দ্বিমত তখন আর নেই। এ হল,১৮ শতকের শেষের দিক। অন্যদিকে, জগদীশবাবু যখন উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন সে হল ১৯ শতকের গোড়ার দিক। বলা যেতে পারে জগদীশ বোস উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে গিয়েছেন, এবং এখনো সেই দিগন্তে অনেক কিছুই আমাদের অজানা।
-       গবেষণা মানে রিসার্চ, বুঝলি পিন্টু, আর পাশ্চাত্য বিজ্ঞান মানে ওয়ের্ষ্টান সায়েন্স- বাবা বলল।
ক্ষেতু দাদু, এবার উঠে বারান্দায় সিগারেট ধরাতে গেলেন । পিন্টু মুগ্ধ হয়ে শুনছিল ।  মা, বাবাকে বলল:- এবারে মামু যখন বলবে, তখন আর বাধা দিও না । উনি বলে যান, তারপর যদি কিছু জানার থাকে, আমরা জেনে নেব । বার বার বাধা দিলে উনি ঠিক ভাবে বলতে পারছেন না ।
ক্ষেতু দাদু ফিরে এসে শুরু করলেন :-
জগদীশ বোসের উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণা শুরু হয়েছিল জড় ও জীবজগতের মধ্যে কোথায় সীমারেখা টানা যায় তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে। ১৯০২ সালে প্রকাশিত তাঁর বই “Response in the Living and Non-living” তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন জড় পদার্থ, যেমন পাথর বা ধাতু কে বৈদ্যুতিক উত্তেজনা সরবরাহ করলে, শুধু যে তারা সাড়া দেয় তা নয়, সেই সাড়ার ধর্মে ক্লান্তি, উৎসাহ ইত্যাদি জীবসুলভ সমস্ত ওঠানামাই দেখা যায় এবং তা মাপাও সম্ভব। পেশীর সংবেদনশীলতা ও জড় পদার্থের এই electrical response curve কে না বলে দিলে, আলাদা করে বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়। জগদীশ বোস ছিলেন ইউরোপিয়ান reductionist মতবাদের একজন পথিকৃৎ, যদিও তিনি নিজে তা তত বোঝেন নি, পৃথিবীর মূল বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র গুলো থেকে ভারতবর্ষ বহুদূরে সরে থাকার জন্য। তাঁর ফিলোজফি, তাঁর বিজ্ঞান সাধনাকে বহুলাংশে একপেশে করে দিয়েছিল, কারণ তিনি চেষ্টা করেছিলেন একটা unified manner of response  খুঁজতে,- সেটা  জড়েই হোক বা প্রাণীকুলে বা উদ্ভিদেই হোক। কিন্তু সেই পথে এগিয়েই তিনি দেখিয়েছিলেন, যে পতংগভুক গাছ, কি লজ্জাবতী গাছ, যে সব গাছ কে তখন পর্যন্ত special case হিসাবে দেখা হত, কারণ তাদের বাইরের উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া আমরা চোখে দেখতে পাই, এ ছাড়াও অন্যান্য গাছেরাও একই ভাবে সাড়া দেয়। তাদের সাড়া দেওয়া আমরা চোখে না দেখতে পেলেও তা electrical potential wave হিসাবে মাপা সম্ভব। এই measurement করে দেখিয়ে তিনি দাবি করেন যে প্রতিটি উদ্ভিদ ই excitable এবং প্রাণীকুলের সংগে তাদের excitability র সাদৃশ্য দেখে বলা যায় যে উত্তেজনায় প্রাণী বা উদ্ভিদ একই ভাবে respond করে। এই থিওরির প্রচুর সমালোচনা ত হয় ই, উপরন্তু, ১৯০১ সালে রয়াল সোসাইটি তে আরকাইভ করা বোসের পেপারের মূল বক্তব্য, A. Waller, নামে এক তৎকালীন নামকরা উদ্ভিদবিজ্ঞানী- নিজের মত করে ছেপে দেন, এবং তার পরে, পর পর উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা নিয়ে পাঁচটি পেপার রয়াল সোসাইটি ছাপতে অস্বীকার করে।
সেগুলি মনোগ্রাফ হিসেবে ছাপা হয় এবং প্রত্যেকটি কাজই আজ প্রমাণিত।
একটানা বলে, ক্ষেতু দাদু দম নেবার জন্য থামলেন । সাধনা মাসী ট্রে তে করে কফি নিয়ে হাজির হলে, মা সেটা পট থেকে ঢেলে, কাপে করে দিলেন দাদুর সামনে ।
দাদু বললেন- সব না হয় বলছি, কিন্তু আজ দুপুরের মেনু কি?
মা বলল:- দেরাদুন রাইস
ইলিশ মাছের ভাপা
কচুর শাক দিয়ে ইলিশের মাথা
আর শেষ পাতে জনাইয়ের মনোহরা ।
দাদু, চোখ বন্ধ করে চুপ করে থেকে বলল:- ওই কচুর শাকের ওপর একটু কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে দিবি তো পিঙ্কি ! খ্যাঁট টা যা জমবে না! আহা !
পিন্টু বলল:- নাও এবার আবার শুরু কর। আমি কিন্তু সব কিছুর নোট নিচ্ছি ।
দাদু শুরু করলেন :-
গাছের নার্ভাস সিস্টেম, যোগাযোগ করার ক্ষমতা, এবং স্বতন্ত্র ও উন্নত জীব হিসাবে স্বীকৃতি।এইসব উদ্ভিদ বিবর্তনের ইতিহাসে ততটাই উন্নত, যতটা মানুষ, এই নিয়ে এখনো বিতর্ক তুঙ্গেএখন আমরা জানি যে গাছের নিজস্ব কমিউনিকেশন সিস্টেম আছে। মূল দিয়ে মাটি থেকে জীবনের উপাদানগুলি শুষে সে নিজের খাবার বানায়, সূর্য অস্ত গেলে তারও ঘুমের সময় হয়, আমাদের ই মত তার শ্বাস প্রশ্বাসের আণবিক রহস্য, বৃদ্ধির পদ্ধতি। প্রশ্ন, উদ্ভিদের মস্তিষ্ক নেই , নেই নার্ভ্ তন্ত্র, এই অবস্থায় কি তাকে বলা চলে সত্যি উন্নত? অথবা, অন্য কথায়, উদ্ভিদের ভিন্ন গঠনের যোগাযোগ তন্ত্র কে কি বলা চলে নার্ভাস সিস্টেম”? এ নিয়ে বিজ্ঞান এখনো ধন্দে। উদ্ভিদের মূল যোগাযোগতন্ত্র টি কেমিক্যাল। ঊর্দ্ধগামী মাটি থেকে শুষে নেওয়া জল, যাতে মিশে আছে বিভিন্ন রাসায়নিক সিগন্যাল, বয়ে চলে মৃত জাইলেম নলের ভিতর দিয়ে। যেতে যেতেই সেই খবর সে ছড়িয়ে দিয়ে যায়, হাজারো রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করার জন্য। কখনো সে খবর বলে মাটিতে মিশে রয়েছে অতিরিক্ত নুন, বা নেই প্রয়োজনীয় জল বা খাবারের উপাদান। সেই অনুযায়ী প্রতিটি কোষ নিয়ন্ত্রণ করে তার আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া। আবার পাতায় পৌঁছে, খাবার তৈরি হয়, আলোর উনুনে, আর সেই খাবার ফ্লোয়েম নলের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে যায় গাছের শরীরে। পোকামাকড় বা জীবাণুর আক্রমণে আপৎকালীন তৎপরতাও দেখা যায়। এমন কি ছুঁলে লজ্জা পায় গাছ, বারবার ছুঁলে, সেই গাছ ঠিক্ঠাক বাড়ে না। হাজারো আগাছার মধ্য থেকে নিজের প্রজাতিকে চিনে সাহায্যের হাত ও বাড়িয়ে দিতে পারে, যাকে বলে kin selection. নিজের বাচ্চাকে ঠিক চিনে নিতে পারে প্রতিটি জীব । এই এত রকম সচেতন সিদ্ধান্ত যে নিতে পারে, যার adaptability প্রশ্নাতীত, তার বুদ্ধিমত্তা নেই বলা কি ঠিক?
এর উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের redefine করতে হচ্ছে মস্তিষ্ক ও বুদ্ধির সংজ্ঞা। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এটি এখন Hot topic, বিভিন্ন দিক থেকে চলছে, স্নায়ুতন্ত্রের মত কিছু একটা structural form পতঙ্গভুক বা ওই রকম গাছে খুঁজে বার করার চেষ্টা। বিরোধীরা বলছেন, নো ব্রেন, নো গেইন। অর্থাৎ যতক্ষণ না ঐ বুদ্ধির ভরকেন্দ্রটিকে দেখা যাচ্ছে ততক্ষন কোষস্থিত বুদ্ধিমত্তা কে তাঁরা মানবেন না।
অর্থাৎ, এই  একবিংশ শতাব্দীতেও আচার্য্যদেব হেড্ লাইনে। এখানেই আমরা জগদীশ বোসের কাছে মাথা নত করি ! ভাবতেও অবাক লাগে, সেই সময়ে এই সব আবিস্কার এবং তর্ক বিতর্কের শুরু করে দিয়েছিলেন । বুঝলি পিন্টু???
আর ঠিক এই জন্যেই আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু আমাদের সকলের বন্ধু।
পিন্টু মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল :- মা আস্তে আস্তে একটা গাছ হয়ে, ডাল নাড়িয়ে তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলছে :- পিন্টুউউ, খেতে আয়য়য়য়য়য়য়য়য়য়!
(সমাপ্ত)
=
তথ্যের জন্য কৃতজ্ঞতা :- সোনালী সেনগুপ্ত ( গবেষিকা)








No comments: