সৃষ্টিতে প্রকাশিত
“ঈশাক্ষীর উসুর্ব্বুদে মারা গেল মার
নাকেতে নির্জ্জরগণ করে হাহাকার”
হুংকার দিয়ে উঠলেন - ক্ষেতু বাগচী!- বল্, দেখি এর মানে কী? কাব্যি চর্চা হতিসে? যত্ত সব! সবাই চমকে গেল! এ আবার কোন ভাষায় কথা বলছেন ক্ষেতুদা! হুংকারের চোটে বদরী বাবু চেয়ার থেকে ছিটকে পড়লেন, “বল হরি”র চায়ের গ্লাসে চিনি মেশানোর শব্দটা ফাটা রেকর্ডের মত চলতেই থাকলো। তারক খুড়ো, নেশালু চোখ খুলে কে কে বলে চেঁচিয়ে উঠলেন! হলটা কী? উগ্রপন্থীরা কি হানা দিয়েছে না বোম ফাটালো কেউ!!!!! ক্ষেতু বাগচী আবার একটা হুংকার দিলেন - ল্যাভেণ্ডিস্!!!!!!!! সবার পিলে চমকে উঠলো! কয়েকদিন আগেই ভূমিকম্পের রেশ রয়ে গেছে! আজই কি পৃথিবীর পালা কীর্ত্তন শেষ?
কিন্তু এই কাণ্ডকারখানার পরিপ্রেক্ষিতটা কী? খুলেই বলা যাক!
রোগীর ভিড় কম থাকায় সন্ধে বেলায় চন্দন ডাক্তারের চেম্বারে আড্ডা বসে। আড্ডার বিষয় টালা থেকে টালিগঞ্জ! তারক খুড়ো মানে তারক মোত্তির স্বদেশী করতেন। বয়স হলেও বেশ তরতাজা! চেহারা এবং মনেও। একটা স্কুলে বাংলা পড়িয়েছেন এককালে। এখন অবসর নিয়েছেন। সন্ধে হলেই একটু চোখটা লাল হয়। বিলিতি খান না। চিরজীবন স্বদেশী করে এসেছেন, তাই “দিশি” খান। জিজ্ঞেস করলে বলেন - হুঁ হুঁ বাবা! স্বদেশী করেছি, তাই চরিত্রভ্রষ্ট হই নি!
তারক মৈত্রের স্বদেশী করার কথায় সবার একটু কিন্তু কিন্তু আছে! তা সে যাক গে!
কয়েকদিন আগে যেমন, হঠাৎ “বল হরি” জিজ্ঞেস করেছিল-
আচ্ছা! ভগবানের হাইট কত?
ক্ষেতু বাগচী বলেছিলেন - এক্সাট হাইট টা বলতে পারবো না! তবে তিনি গড়পড়তা মানুষের থেকে অনেক অনেক খাটো!
- কেন? সকলেরই জিজ্ঞাসা!
- না হলে, সবাই কেন বলবে- ভগবান!!!! মুখ তুলে চাও!!!!!
চন্দন ডাক্তার লোকটি বেশ ভালো। ডঃ চন্দন ভাদুড়ি - এম.বি.বি.এস।পশার বেশ জমজমাট।অনেক গরীব লোক পয়সা দিতে না পেরে, জমির কলাটা, মূলোটা দিয়ে যায়! হাসি মুখে তাই নেয় চন্দন ডাক্তার। রাত বিরেতে লোকে ডাকলে চন্দন হাসিমুখে হাজির। এইখানে শহরতলীর গঞ্জে রিক্সা চলে। কোলকাতা শহর বাসে মাত্র ৬ টাকার দূরত্ত্ব। বাস রাস্তার ওপরেই চেম্বার। এর পাশেই হরির চায়ের দোকান! “বল হরি” বলেই পরিচিত। গান করতে করতে হরি চা বানায়! বদরী সান্যাল প্রায়ই ওকে অন্যমনস্ক হয়ে চা বানাতে বলেন। বদরী বাবুর বক্তব্য-এতে “বল হরি”, চাটা যদি দৈবাৎ ভালো বানায়!
আজকের আড্ডাতে বদরী সান্যালের লেখা কবিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কবিতাটা এরকম:-
অনন্ত কাল ধরে, তোমারই প্রতীক্ষায়
খুঁটে খুঁটে খাচ্ছি সময়।
গরুর পাল হাঁচে, সেই গোধূলিবেলায়
ছড়িয়ে যায় কত গোময়।
তবু তুমি আসো নাকো, দেরী কেন হয়?
এটা, বদরীবাবুর ৩২৭১ তম অণু কবিতা। পত্র পত্রিকায় পাঠান, কিন্তু তারা ছাপে না। সম্পাদকদের কবিত্ববোধ সম্বন্ধে বিরক্ত হয়ে তিনি, তাঁর একটা কবিতা; এ ফোর সাইজে “প্রিন্টিত” (বদরী বাবুর নিজের ভাষা) আকারে রাতে পাড়ার দেয়ালে দেয়ালে সেঁটেছিলেন। কুলোকে বলে চন্দন ডাক্তারের পশার বাড়ার এটা অন্যতম কারণ।
লোকে কবিতা পড়ছে আর মৃগী রোগী হয়ে গিয়ে চন্দন ডাক্তারের কাছে ছুটছে! কবিতাটা পড়ে, লোকে এই কারণে বদরীবাবুর ঠিকানা হন্যে হয়ে খোঁজ করেছে কিছুদিন। চন্দন পরামর্শ দিয়েছিল, বদরীবাবুকে- দাদা, আপনি এক্ষুণি চিৎপুরে গিয়ে মেক আপ নিয়ে মুখটা পাল্টে নিন! না হলে কিন্তু ঘোর বিপদ আপনার!
“বল হরি” কিন্তু বদরী বাবুর খুব ভক্ত!
মহম্মদ রফীর গানের সুরে ওনার লেখা কবিতাগুলো চা বানাতে বানাতে গায়! বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গানের রিয়ালিটি শোয়ে নাম দেবার কথা ওর মাথায় বদরীবাবুই ঢুকিয়েছেন। বদরীবাবুর ইচ্ছেটা অবশ্য অন্য কারণে!
নাটু লাহিড়ী সর্দ্দির জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলেন! ক্ষেতু বাবুর ল্যাভেণ্ডিস্, শুনে মিউ মিউ করে বললেন!
লবেঞ্চুস? ওটার কারখানায় তো ধর্মঘট!
তারক মোত্তির বললেন - ধর্মঘট, কী সমাস?
নাটু লাহিড়ী উত্তর দিলেন- ধর্মঘট হচ্ছে কমাস! মানে কয় মাস!!!!! ওপস! তারকদা!!!! খালি মাষ্টারী ফলান কেন? যাক! তাআআআআ ধর্মঘট- ৭ মাস হয়ে গেল!!!!
ক্ষেতু বাগচী আবার বললেন- যাও হে! যত্ত সব ফ্যাদরা প্যাচাল! বলো ওই দুই লাইনের মানে কী?
নাটুবাবু দুবার ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হেঁচে বললেন- আমি পরে আসব চন্দন! কে যেন বলল, কোথায় যেন, কটার সময় যেতে হবে! কার যেন আসার টাইম হয়ে এসেছে! আমি যাই! বলে, সুড়ুৎ করে কেটে পড়লেন।
চন্দন বলল- দাঁড়ান ক্ষেতুদা! একটু দম নিতে দিন। আপনি যা ভয়ংকর হুংকার দিলেন। পিলে এক্কেরে চলকে উঠিসে। আই বাপস্।
ক্ষেতুবাবু আবার ক্ষেপে গেলেন।
- আমি তো বসেই রয়েসি! খামাকা দাঁড়াব কেন হে? যত্তসব! ওই বদরী যত নষ্টের গোড়া! রোজ একটা করে কবিতা শোনাবে আর আমার কোষ্ঠকাঠিন্য হবে! আজ ইসপার কি উসপার!
বদরীবাবু অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন- আমার কবিতার সঙ্গে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্পর্ক কী?
- তুমি কবিতার কী জানো হে ছোকরা! খালি কতক অর্থহীন শব্দ লিখে অনর্থক কর্ণ কণ্ডুয়ন করো। তাইতেই তো আমার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়!
- যাঃ! বাবা !!!!আমায় ছোকরা বলছেন? আমার রিটায়ার করার ৪ বছর হয়ে গেছে! হে ভগবান!! মুখ তুলে চাও!!!!!
- বদরী, তুমি আর ভগবানকে মুখ তুলে তোমার দিকে চাইতে বল না! ভগবানের পোনডাইটিস হবে! যা ঢাউস-ঢ্যাঙ্গা তুমি!!!!! তোমার একটাই প্লাস পয়েন্ট! গরীব রুগীরা ডায়ারিয়ায় ভুগলে আর চন্দনকে ওষুধ লিখতে হবে না! তোমার কবিত গুলো পড়িয়ে দিলেই হবে।
চন্দন বলল- ক্ষেতুদা ওটা স্পোণ্ডিলোসিস হবে! পোনডাইটিস নয়!
- আরে ছাড়ো হেঃ!
ইতিমধ্যে বল হরি চা নিয়ে এসেছে! ক্ষেতু বাগচী গুণগুণ করে গাইতে শুরু করলেন-
চায়ে চর্বি
বিড়িতে বল
বাদবাকী যা খাবি
সবই অম্বল!
চা-তে সুরুৎ করে একটা
চুমুক দিলেন- তারক মোত্তির! একটা বিড়ি নিয়ে কানের কাছে ধরে পাকিয়ে, দেশলাই দিয়ে বিড়িটা ধরিয়ে বললেন- ঠিক আছে
ক্ষেতুদা! আপনার ওই বিদঘুটে কথাগুলোর মানেটা বলুন।
বিদঘুটে! তোমার গিদরিং জ্যাম করে দেব কিন্তু, তারক!
আহা! রাগ করেন কেন, ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির ভিসুভিয়াসের মত বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বললেন।
-মাফ করে দিন!
বলছি- কিন্তু ফের যদি প্যাচাল পাড়িচ আর ওই বদরী ব্যাটা কবিতা শুনিয়েচ, তো ওরই একদিন কি আমারই একদিন। ক্ষেতু মোত্তির উত্তর দিলেন।
না! না! কিছু বলবে না বদরীদা! আপনি প্লিজ বলুন! চন্দন ডাক্তার বলল!
বলছি! কিন্তু বলার সময় ভজর ভজর করবে না কানের কাছে। ক্ষেতু বাগচী বললেন।
আরে না! বলুন, বলুন!
বেশ বলছি!
ঈশাক্ষী মানে – মহাদেব! বুঝলে হে! উসুর্ব্বুদের মানে হল, মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়ন থেকে রোষানল! মারা গেল মার, – এর অর্থ হলো মরে গেল কামদেব। মার হলো কামদেবের আর এক নাম! নাক হলো স্বর্গ! আর নির্জ্জর হলো যাদের জরা নেই! মানে- দেবতারা!
তাহলে পুরো মানেটা কি দাঁড়াল ক্ষেতুদা? - চন্দন ডাক্তার জিজ্ঞেস করল!
মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়নের রোষানলে মদনদেব মারা গেলে স্বর্গে দেবতারা হাহাকার করতে লাগল- বুইচ হে!
- বাবাঃ! কী জিনিস গুরু! ক্ষেতুদা!
- হুঁ! হুঁ! এটা কি বদরীর ফ্যাদরা প্যাচাল নাকি! খালি, ইং তাং কিরিমিচি!
- উফ্! এই ইং তাং কিরিমিচি টা আবার কি? চন্দন বলল।
- ওটা বদরীকে জিজ্ঞেস কর! বাঁদরের মত কবিতা লেখে ব্যাটা!
- সে না হয় বুঝলাম- কিন্তু ল্যাভেণ্ডিস কথাটার মানে কি?
- তুমি একটা লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ল্যাভেণ্ডিস এর মানে হচ্ছে ল্যাভেণ্ডার সাবান!
- যা! বাবা! এ আবার কী ভাষা!
- বদরী যদি প্রিন্টিত বলতে পারে তো আমি কেন ল্যাভেণ্ডিস বলবো না চন্দন!
- হুম! কিন্তু আবার একটা কথা ব্যবহার করলেন- লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ওটা আবার কি?
- লাফাঙ্গা আর যার কোনো ওয়ারিস নাই!
বদরী খেপে গেলেন।
দেখুন, ক্ষেতুদা - একে আপনি বয়োজেষ্ঠ তার ওপর বারিন্দির! আমারই জাতভাই! তাই কিছু বলছি না! তা বলে আমাকে এ ভাবে অপমান করবেন?
- কোথায় অপমান করলাম? আমি তোমার এই মাথামুণ্ডুহীন কবিতার প্রতিবাদ জানালাম! বুয়েচ? আর বারিন্দিরদের কথা বলো না ভায়া! প্রবাদ আছে- বারিন্দির মরে ভাসে জলে, কাক বলে এ কোন ছলে!!!!! কাকের মত ধূর্ত প্রাণীও বারিন্দিরদের মড়া ঠোকরাতে সাহস পায় না! এত প্যাঁচ বারিন্দিরদের! আমি তো খোলাখুলি বলেচি তোমায়!
- হে! হে! ঠিক বলেছেন ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির বললেন।
বুঝলে বদরী! এখানে তো সবাই বারিন্দির!
তাই পেরেকদের নিস্তার!
কেন? গম্ভীর স্বরে বললেন বদরী!
এই দ্যাখো! রাগ হয়েসে তো? তা পুরুষের রাগ থাকা ভালো! বারিন্দিরদের তো পেছন ভরা রাগ!
- যাক! ওই পেরেকের কথা কি বলছিলেন, ক্ষেতুদা! বলল, চন্দন।
- বলব আর কী! বারিন্দিরদের মাথায় পেরেক ঢোকালে ইস্ক্রুপ হয়ে বেরোয় জানো?
- ঠিকই তো! নাটুদার সঙ্গে গায়ে গা ঠেকলে, নাটুদা উল্টো সাত পাক ঘুরে যান! জিজ্ঞেস করলে বলেন - প্যাঁচ ছাড়াচ্ছি! এ্যাতোদিনে বুঝলাম কারণটা!
বল হরি, খালি চায়ের গেলাস গুলো নিতে এসেছিল! এই কথা গুলো শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল।
- ওরে কাঁদিস ক্যান রে ছোকরা!
- কাঁদবু নি! আপনাদের সঙ্গে কত্ত যে গা ঠোকাঠুকি হইসে! এ্যাহন আমার কি হইবো!
- হবে আবার কি! তোর ওই চোখের জলে তো আর শ্যাওলা পড়বে না! বুদ্ধি বেড়ে যাবে!
- বুদ্ধি বাড়বো? ঠিক কইতাসেন?
- ছ্যাঁচরামি বুদ্ধিটা বাড়বে!
আর বেড়ে লাভ নেই! এমনিতেই ১০ টা চা খেলে ১৫ টা চায়ের পয়সা চায়! তার ওপর যদি... থাক, আর বললাম না। - বললেন তারকখুড়ো।
বদরীদার কবিতা নিয়ে আলোচনা হবে না? বলল চন্দন!
আলোচনা করে লাভ নেই, বদরীর কবিতা পাবলিক খাবে না! যত্ত সব ভাট বকা! ক্ষেতু বাগচী ফায়ার হয়ে গেলেন!!!
ব্যাপার স্যাপার দেখে তারক মোত্তির বললেন -
নাঃ! উঠি! রাত ১০ টা বাজে। এরপর বাড়ী গেলে গিন্নি ঠ্যাঙ্গাবে!
বলে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন।
তা হলে আজকের মত এখানেই আড্ডা শেষ? বলল চন্দন!
হ্যাঁ! হ্যাঁ! শেষ! বেশী আড্ডা আর আলোচনা করলে আবার ভূমিকম্প হবে!
চলো হে! বাড়ী যাই! ক্ষেতু বাগচী একটা চলন্ত রিক্সা ধরে উঠে পড়লেন।
বিদঘুটে! তোমার গিদরিং জ্যাম করে দেব কিন্তু, তারক!
আহা! রাগ করেন কেন, ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির ভিসুভিয়াসের মত বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বললেন।
-মাফ করে দিন!
বলছি- কিন্তু ফের যদি প্যাচাল পাড়িচ আর ওই বদরী ব্যাটা কবিতা শুনিয়েচ, তো ওরই একদিন কি আমারই একদিন। ক্ষেতু মোত্তির উত্তর দিলেন।
না! না! কিছু বলবে না বদরীদা! আপনি প্লিজ বলুন! চন্দন ডাক্তার বলল!
বলছি! কিন্তু বলার সময় ভজর ভজর করবে না কানের কাছে। ক্ষেতু বাগচী বললেন।
আরে না! বলুন, বলুন!
বেশ বলছি!
ঈশাক্ষী মানে – মহাদেব! বুঝলে হে! উসুর্ব্বুদের মানে হল, মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়ন থেকে রোষানল! মারা গেল মার, – এর অর্থ হলো মরে গেল কামদেব। মার হলো কামদেবের আর এক নাম! নাক হলো স্বর্গ! আর নির্জ্জর হলো যাদের জরা নেই! মানে- দেবতারা!
তাহলে পুরো মানেটা কি দাঁড়াল ক্ষেতুদা? - চন্দন ডাক্তার জিজ্ঞেস করল!
মহাদেবের ঊর্দ্ধনয়নের রোষানলে মদনদেব মারা গেলে স্বর্গে দেবতারা হাহাকার করতে লাগল- বুইচ হে!
- বাবাঃ! কী জিনিস গুরু! ক্ষেতুদা!
- হুঁ! হুঁ! এটা কি বদরীর ফ্যাদরা প্যাচাল নাকি! খালি, ইং তাং কিরিমিচি!
- উফ্! এই ইং তাং কিরিমিচি টা আবার কি? চন্দন বলল।
- ওটা বদরীকে জিজ্ঞেস কর! বাঁদরের মত কবিতা লেখে ব্যাটা!
- সে না হয় বুঝলাম- কিন্তু ল্যাভেণ্ডিস কথাটার মানে কি?
- তুমি একটা লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ল্যাভেণ্ডিস এর মানে হচ্ছে ল্যাভেণ্ডার সাবান!
- যা! বাবা! এ আবার কী ভাষা!
- বদরী যদি প্রিন্টিত বলতে পারে তো আমি কেন ল্যাভেণ্ডিস বলবো না চন্দন!
- হুম! কিন্তু আবার একটা কথা ব্যবহার করলেন- লাওয়াঞ্জে লাওয়ারিস! ওটা আবার কি?
- লাফাঙ্গা আর যার কোনো ওয়ারিস নাই!
বদরী খেপে গেলেন।
দেখুন, ক্ষেতুদা - একে আপনি বয়োজেষ্ঠ তার ওপর বারিন্দির! আমারই জাতভাই! তাই কিছু বলছি না! তা বলে আমাকে এ ভাবে অপমান করবেন?
- কোথায় অপমান করলাম? আমি তোমার এই মাথামুণ্ডুহীন কবিতার প্রতিবাদ জানালাম! বুয়েচ? আর বারিন্দিরদের কথা বলো না ভায়া! প্রবাদ আছে- বারিন্দির মরে ভাসে জলে, কাক বলে এ কোন ছলে!!!!! কাকের মত ধূর্ত প্রাণীও বারিন্দিরদের মড়া ঠোকরাতে সাহস পায় না! এত প্যাঁচ বারিন্দিরদের! আমি তো খোলাখুলি বলেচি তোমায়!
- হে! হে! ঠিক বলেছেন ক্ষেতুদা! তারক মোত্তির বললেন।
বুঝলে বদরী! এখানে তো সবাই বারিন্দির!
তাই পেরেকদের নিস্তার!
কেন? গম্ভীর স্বরে বললেন বদরী!
এই দ্যাখো! রাগ হয়েসে তো? তা পুরুষের রাগ থাকা ভালো! বারিন্দিরদের তো পেছন ভরা রাগ!
- যাক! ওই পেরেকের কথা কি বলছিলেন, ক্ষেতুদা! বলল, চন্দন।
- বলব আর কী! বারিন্দিরদের মাথায় পেরেক ঢোকালে ইস্ক্রুপ হয়ে বেরোয় জানো?
- ঠিকই তো! নাটুদার সঙ্গে গায়ে গা ঠেকলে, নাটুদা উল্টো সাত পাক ঘুরে যান! জিজ্ঞেস করলে বলেন - প্যাঁচ ছাড়াচ্ছি! এ্যাতোদিনে বুঝলাম কারণটা!
বল হরি, খালি চায়ের গেলাস গুলো নিতে এসেছিল! এই কথা গুলো শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিল।
- ওরে কাঁদিস ক্যান রে ছোকরা!
- কাঁদবু নি! আপনাদের সঙ্গে কত্ত যে গা ঠোকাঠুকি হইসে! এ্যাহন আমার কি হইবো!
- হবে আবার কি! তোর ওই চোখের জলে তো আর শ্যাওলা পড়বে না! বুদ্ধি বেড়ে যাবে!
- বুদ্ধি বাড়বো? ঠিক কইতাসেন?
- ছ্যাঁচরামি বুদ্ধিটা বাড়বে!
আর বেড়ে লাভ নেই! এমনিতেই ১০ টা চা খেলে ১৫ টা চায়ের পয়সা চায়! তার ওপর যদি... থাক, আর বললাম না। - বললেন তারকখুড়ো।
বদরীদার কবিতা নিয়ে আলোচনা হবে না? বলল চন্দন!
আলোচনা করে লাভ নেই, বদরীর কবিতা পাবলিক খাবে না! যত্ত সব ভাট বকা! ক্ষেতু বাগচী ফায়ার হয়ে গেলেন!!!
ব্যাপার স্যাপার দেখে তারক মোত্তির বললেন -
নাঃ! উঠি! রাত ১০ টা বাজে। এরপর বাড়ী গেলে গিন্নি ঠ্যাঙ্গাবে!
বলে চেয়ার থেকে উঠে পড়লেন।
তা হলে আজকের মত এখানেই আড্ডা শেষ? বলল চন্দন!
হ্যাঁ! হ্যাঁ! শেষ! বেশী আড্ডা আর আলোচনা করলে আবার ভূমিকম্প হবে!
চলো হে! বাড়ী যাই! ক্ষেতু বাগচী একটা চলন্ত রিক্সা ধরে উঠে পড়লেন।
1 comment:
উফফফ অসাধারণ!!!
Post a Comment