আদরের নৌকা- ব্লগজিনে প্রকাশিত
বাবার
ডেস্কটপে ফেসবুক লগ ইন করে সবে নোটিফিকেশন গুলো দেখছে তুহিনা, এই সময় ডোরবেল বেজে
উঠল । সন্ধের সময়টা মা, চ্যানেল থেকে চ্যানেলান্তরে বাংলা সিরিয়াল আর রিয়েলিটি শো
গুলো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে । ডিভানে তখন ফেভিকুইকের বন্যা। সাথ দ্যায়
কাজল মাসী । সংলাপ শুনে, এরপর কি হতে পারে সেটা মা আর কাজলমাসী , দুজনে মিলে জোর
আলোচনা চালায় ।
বাবা, বাড়ী
এসে সকালের বাসী কাগজগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে নিজের মতামত টুকে রাখে একটা
ডায়েরীতে । পরের দিন
অফিসে গিয়ে সারগর্ভ ভাষণ দেওয়ার নোটস
ওগুলো ।
কাজল
মাসী গিয়ে দরজাটা খুলতেই , ঝড়ের বেগে অমৃতা ঢুকে সোজা তুহিনার সামনে । হাঁফাতে
হাঁফাতে অমৃতা কোন রকমে বলল – এক গ্লাস জল ।
টুং
করে একটা পিঙ্গের শব্দ ।
-
কেমন আছেন ?
তুহিনা
আড়চোখে দেখল, একটা অচেনা লোকের মেসেজ । আজকাল, ফেসবুকে আরও একটা নতুন আপদ হয়েছে ।
নোটিফিকেশন এলেও টুং করে আওয়াজ হয় । চ্যাটটা বন্ধুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে বলে
রোজ ঠিক করে, আর ভুলে যায় ! চ্যাট অফ করে রাখলেও এই আপদ গুলো জ্বালিয়ে মারে ।
অমৃতা
একটু ধাতস্থ হয়েছে । তুহিনা বলল- কি হয়েছে রে ? এরকম হাঁফাচ্ছিস কেন !!
-
প্রেম করার
সময় গৌতম কিন্তু এইসব আগে ভাগে বলে দেয় নি
।
-
কি রে ?
-
আমাকে রোজ
সন্ধের সময় শাঁখে ফুঁ দিতে হবে ।
-
কে বলেছে, শাঁখে
ফুঁ দিতে ?
-
আমার শাশুড়ি
-
সেকি রে !
-
হুম ! সেটাই
তো ! আজ সন্ধের সময় ঠাকুরাইন বললেন- বৌমা, ঠাকুরঘরে সন্ধে দাও । প্রদীপটা জ্বালিয়ে
চলে এসেছি । সেই সময় উনি বললেন – শাঁখ বাজালে না ?
-
তুই কি বললি
?
-
বললাম, আমি
পারি না মা ! ব্যাস্, উনি ভিসুভিয়াস হয়ে আমাকে বাংলা সংস্কৃতি আর কৃষ্টি সম্বন্ধে
একটা দশ মিনিটের জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দিলেন ।
-
তুই কি বললি
?
-
কি আর বলব ?
মাথা হেলিয়ে চুপচাপ শুনলাম । তারপর টুকটাক শপিং আছে বলে কেটে, তোর বাড়ীতে বডি
গ্যারেজ ।
-
তুই যে আজ
শাড়ী পরেছিস ?
-
কি করবো ?
শ্বশুরবাড়ীতে ড্রেস কোড মানতে হয় । জিনস্ বা সালোয়ার কামিজ পরা চলবে না, এটা
প্রকাশ্য বিধান । জানিস তো, বাড়ীতে নাইটি পরাও চলবে না ! গৌতম এটাও আগে বলেনি । কাঁদো
কাঁদো মুখে বলল অমৃতা । ইতিমধ্যে কাজল মাসী চা আর বিস্কুট নিয়ে এসে সব শুনছিল ।
ফুট কাটল :-
-
তা বাপু !
মেয়েরা যখন বৌ হয়, তখন এসব করলে ক্ষতি কি ?
-
তুমি থামো
তো মাসী ! এবার কাজে যাও । তুহিনা ধমক দিলো ।
ইংরেজীতে
এম. এ পাশ করার পর, এখন বাবার হোটেলে বসে
খাওয়া শুধু । বি. এড করার ইচ্ছে মনে মনে
আছে, তবে গেঁতোমী করে আর আ্যপ্লাই করাই
হচ্ছে না তুহিনার । মাঝে পাড়ার একটা প্রাইভেট মন্টেশরী স্কুলে চাকরী করেছিল
। ভোরবেলায় উঠতে হয় । বেলা সাড়ে বারোটায় ছুটি । মাস গেলে মাত্র দু হাজার টাকা
। ধ্যাৎত্তারি, বলে ছেড়ে দিয়ে এখন বাড়ীতে বসে
ল্যাদ খায় ।
বাবার
সুপ্ত ইচ্ছে বিয়েটা হয়ে যাক , তবে তুহিনার
এখনই বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই । এখনও বছর দুই অপেক্ষা করতে চায় । সাবলম্বী
হয়েই তবে বিয়ের কথা ভাববে । মা গজগজ করে বলে- এম. এ পাশ করে মেয়ে আঁতেল হয়ে গেছে । ওর আর বিয়ে
হবে না !
কয়েকজন
বান্ধবীদের বিয়ে হয়েছে । এরই মধ্যে একজনের
ডিভোর্সও শেষ । বাকীরা মোটামুটি আছে । সবারই একই সমস্যা । কারও শ্বশুর
ভালো তো কারও শাশুড়ি সুবিধের নয় । রান্না
করতে পারে না বলে কারও শ্বশুরের মৃদু অভিযোগ । এইসব দেখে
তুহিনা আপাতত বিয়ে করার কথা শিকেয় তুলে রেখেছে ।
অমৃতা
বলল- মাইরি ! বিয়ে করে জীবনটা খণ্ড ত হয়ে গেল । ভাগ্গিস, প্রাইমারি টিচারের
চাকরিটা ছাড়িনি ! নইলে নরকে যেতে হত ।
তুইও একটা চাকরি বাকরি খুঁজে নে । আপাতত ট্যুশানি কর । ইংরেজীর হেব্বী
ডিমাণ্ড ।
তুই
খুঁজে দে না ! তুহিনার জবাব !
-
সিরিয়াসলি
করবি তো ?
-
আরে হ্যাঁ !
ফেসবুকে ছেলেদের বোকা বোকা প্রেম নিবেদনে হাঁফিয়ে উঠেছি ।
-
তালে, তোকে
একটা ফোন নং দিচ্ছি । মাল্লু আছে ওদের ! একটা মেয়েকে ইংরেজী পড়াতে হবে । এবারে
ক্লাস টুতে উঠল । নাম্বার দিচ্ছি,তুই ফোন করে ওটা ঠিক করে নে ।
-
আমি ? আমার
ফোন করাটা উচিত হবে না বোধহয় !
-
আচ্ছা,
দাঁড়া, আমি ফোন করছি ওদের । তারপর তুই কথা বলে নে ।
সেল ফোনে নাম্বার ডায়াল করল
অমৃতা । ও প্রান্তে ফোন তুলতেই
লাউডস্পীকার অন করে কথা চালু করল।
-
হ্যালো,
মিসেস প্যাটেল বলছেন ?
-
আরে, অমৃতা
বলো ! কেমন আছ ? তোমার বিয়ের রিসেপশানের পর আর তো দেখাই হল না আমাদের । আমার মেয়ের
ইংরেজী মাষ্টারনী পেলে ?
-
ওইজন্যই তো
ফোন করলাম । আর শুনুন আমার বন্ধু তুহিনা । গতবছর প্রেসিডেন্সী থেকে ইংরেজীতে এম এ
পাশ করেছে । ওকে অনেক বলে কয়ে রাজী করালাম আপনাদের বাড়ীর ট্যুশানিটা করতে ।
-
তা, ওনাকে
আমার বাড়ী কাল পাঠাও না । কথা বলি ।
-
ঠিক আছে, ওর
সাথে কথা বলুন ।
তুহিনাকে
ফোনটা ধরিয়ে দিল অমৃতা ।
-
গুড ইভিনিং
মিসেস প্যাটেল ! আমি তুহিনা !
-
ওয়াও !!!
সারু ছে !
-
কি বললেন,
সেরেছে ?
-
আরে না !
সারু ছে, মানে খুব ভালো, নামটা খুব ভালো, সেটাই বললাম । আনন্দ হলে, মাতৃভাষা
গুজরাতি বেরিয়ে পড়ে আর কি ।
-
ও আচ্ছা !
-
বলছি কি,
কাল সকাল ১২ টা নাগাদ আমার বাড়ী আসতে পারবেন ?
-
তা পারবো !
-
সারু
ছে ! মজামা !
-
কি বললেন
মোজা পরে যেতে হবে ?
-
ওহো ! সরি
সরি ! মজামা মানে আনন্দ !
-
ও ! তাই
বলুন ।
-
বলছিলাম,
সেই সময় বিজয় ভাই থাকবে, বেশী লেট করলে, উনি আবার বেরিয়ে যাবেন ।
-
আপনার ভাই,
বিজয় এসব দেখেন ?
-
ভাই মানে
আমার হ্যাজবেণ্ড ! ছেলেদের ভাই বলে । আর আমার হাবির নাম বিজয় !
-
ও ! ঠিক আছে
। তাই যাবো । বাই !
বলে, তুহিনা
সেল ফোন অফ করে অমৃতার হাতে ফেরত দিল ।
-
বাপরে, কি
জিনিস গুরু ! এর বাড়ীতে পড়াতে হবে ?
-
তোর কি রে ?
পড়াবি, মাইনে নিবি, চলে আসবি ব্যস ! কিন্তু, প্রেসিডেন্সীর মেয়ে হয়ে তুই গুজু ভাষাটা
বুঝলি না ?
-
ওসব আমি
বুঝি না ! প্রেসিডেন্সীতে পড়লে এক্সট্রা হাত – পা গজায় নাকি ?
অমৃতার সেলে
এবার কলার টিউন বাজল । এক পলক দেখে নিয়ে বলল- গৌতম ফোন করেছে । দাঁড়া, কথা বলি ।
-
বল !
-
...
-
আরে আমি,
বাড়ী ছেড়ে চলে আসবো কেন ?
-
...
-
আমি শাঁখ
বাজাতে পারি না বলে, দু চারটে মেঠো বক্তৃতা শুনতে হল । তাই শপিংয়ের নাম করে
তুহিনার বাড়ীতে এসেছি । এমনিতে, আসতেই হত । মিসেস প্যাটেল জ্বালিয়ে খাচ্ছেন একজন
ইংলিশ টিউটরের জন্য ।
-
...
-
সত্যি বলছ ?
পিটার ক্যাটে ডিনার করবে ? মা কিছু বলবে না ?
-
...
-
যাক বাবা !
ম্যানেজ করেছ তা হলে । আমি কিন্তু, জিন উইথ ফ্রেশ লাইম খাবো, বলে দিচ্ছি ।
-
...
-
ঠিক আছে,
একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসছি । তুমি, মিউজিক ওয়ার্ল্ডের সামনে দাঁড়াও ।
তুহিনাকে
বলল- সরি রে ! আজ চলি । গৌতম ডিনার করাবে বাইরে । আর থাকতে
পারছি না তোর এখানে । তুই কিন্তু কাল ঠিক চলে যাস, মিসেস প্যাটেলের বাড়ীতে ।
তুহিনা অবাক
হয়ে দেখল, কত সহজে পোষ মানলো অমৃতা । কি জানি, তার বেলাতেও এই ব্যাপার হবে কিনা !
হুস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ফেসবুকে মন দিল তুহিনা ।
সেই অচেনা
লোকটা একটা মেসেজ দিয়ে রেখেছে ।
আপনি খুব
সুন্দর দেখতে । বন্ধু হবেন ?
হাড় পিত্তি
জ্বলে গেল তুহিনার । এইসব লোকেরা ভাবে কি নিজেদের ? ফেসবুকে এইসব নোংরামো !!
ও লিখলো :-
প্রোফাইল পিকচারটা আমার নয় । অমিতাভ বচ্চনের বৌমার !
টুং শব্দে
জবাব এলো:- আহা রাগ করছেন কেন ? আপনার আ্যবাউটটা দেখে খুব ভালো লাগলো ।
-
বেশ , তা
হলে কি করতে হবে ?
-
না, তেমন
কিছু নয় । একটা গ্রুপে আপনার লেখা কবিতা পড়ে খুব ভালো লাগলো । আপনি বেশ ভালো কবিতা
লেখেন ।
-
বেশ !
-
জানেন ? আমি
অবাঙালি ! কিন্তু কোলকাতায় জন্ম এবং কর্ম । আহমেদাবাদ
আমাদের রুট । কবিতা আমার দারুণ লাগে ।
এবারে
একটু অবাক হলো তুহিনা । এই ক্যালেণ্ডারকে
কাল্টিভেট করতে ইচ্ছে করছে । হাইলি সাসপিসিয়াস ! গতকালই আবার নতুন করে বোম্বাইয়ের
বোম্বেটে দেখছিল টিভিতে, তাই কয়েনজটা মনে এলো ।
টাইপ করল –
-
বাঃ ! আপনি
তো দারুণ লোক ! তা, কবিতা লেখেন ?
-
থ্যাংক ইউ ! লিখি, তবে সেটা পাতে দেবার মত নয় !
আর আপনার কাছে তো কিছুই নয় !
তুহিনা বুঝল, লোকটা ওকে ফুয়েলিং করার চেষ্টা করছে । আরও একটু দেখে না
হয় ওকে ব্লক করে দেবে ।
-
আপনি তো
বাংলিশে লিখছেন । বাংলা পড়তে- লিখতে পারেন
?
-
কি যে বলেন
! কম্পিউটারে বাংলা টাইপ ঠিক আসে না ! তবে, বাংলা পড়া আর লেখা জলের মত পারি ।
-
কি করেন
আপনি?
-
ব্যবসা ! ইলেকট্রনিক
গুডসের । চাঁদনীতে দোকান আছে আমার ।
-
কোথায় থাকেন
?
-
যাদবপুর ।
আপনি কোথায় থাকেন ?
-
জেনে লাভ কি
?
-
না, মানে
এমনি অলস কৌতুহল ।
-
বাঘাযতীনে ।
-
বাঃ ! তাহলে
তো কাছেই একেবারে ।
-
কোনো লাভ
নেই !
-
আপনি খুব
রাগী ? তাই না !
-
মোটেই নয়,
তবে অচেনা লোকের সাথে ফালতু হ্যাজানো ভালো লাগে না আমার ।
-
তা, ম্যাডাম
আপনার সাথে একটু কাজের কথা বলতে পারি ?
-
আবার কি !
-
আ্যবাউটসে
দেখলাম আপনি ইংরেজীতে এম. এ । একটা টিউশনি
করবেন ? ক্লাস টুয়ের বাচ্চা । আমার বোনের
মেয়ে ।
-
কোথায় ?
-
যাদবপুরেই ।
রামঠাকুরের আশ্রমের কাছে ।
-
কাল সকালে,
আর একটা টিউশনের ব্যাপারে যাবো ওদিকে । যদি সময় পাই তাহলে যেতে পারি , আপনার বোনের
বাড়ীতে।
-
তাহলে, আমার
ফোন নং দিলাম । এলে আমাকে একটা কল করবেন । আমার নাম উমিচাঁদ প্যাটেল ।
-
ভেবে দেখবো
! উঠি এখন ।
ফেসবুক থেকে
লগ অফ করে এবারে আদরের নৌকার এফ . এম শুনতে লাগল তুহিনা । এটা অনিয়মিত চালায় ওরা- ভালো ভালো গান আর কবিতা আবৃত্তি করে শোনায় অভিক । শুনছে, এটা নাকি ওরা বন্ধ করে
দেবে । অভিক ওর ফ্রেণ্ড লিষ্টে আছে । ওকে
মেসেজ করেছিল এই ব্যাপারে, অভিক অনেক সমস্যার কথা শোনাল । নিয়মিত এফ এম শোনানো কেন
যাবে না , তার একটা লম্বা ফিরিস্তি । তা যাক, ওদের ব্যাপার, ওরা বুঝুক । আপাতত গান শুনে ডিনার । তারপর শুয়ে পড়বে ।
কবিতা লেখার
কথা মনে পড়তেই ফিক করে মনে মনে হাসল তুহিনা । সবাই আজকাল কবিতা লেখে । গদ্য লেখার
হ্যাপা অনেক । তাছাড়া মনসামঙ্গল, বৈষ্ণব পদাবলী, চণ্ডীমঙ্গল বেশির ভাগ কবি পড়েই নি
। অল্প কয়েকটা ইংরেজী বই আর সিনেমা দেখে কিছু কঠিন শব্দ দিয়ে কয়েকটা কবিতা নামিয়ে
, একটা সংকলন বের করে ফেলে তার আ্যড দ্যায় ফেসবুকে । এত কবিতার বই যে কে পড়ে, কে
জানে ! এদিকে ফেসবুকে কবিতা কেউ পড়ে কিনা বোঝা যায় না । কিছু পাঠক বাদে সকলেই
মন্তব্যে লেখে- দারুণ, দুর্দান্ত, বা ফাটাফাটি । বোঝা যায় এরা পড়েই নি । উমিচাঁদও
মনে হয় ওই ক্যাটাগরির । মেয়েদের ইম্প্রেস করার চেষ্টা ।
মিসেস
প্যাটেলের ওখান থেকে একবার ফোন করে দেখবে
উমিচাঁদকে । সুবিধের না , মনে হলে ওর
নাম্বারটা ফোনেই ব্লক করে দেবে । জন্মদিনে বাবা এই লেটেষ্ট মডেলের ফোনটা গিফ্ট
করেছিল । দেখাই যাক, দুটো টিউশনি পেলে হাতখরচটা চলে যাবে । নেট রিচার্জের জন্য
বাবার কাছে হাত পাততে হবে না ।
পরের দিন
ফোন করে, মিসেস প্যাটেলের বাড়ীতে হাজির হলো তুহিনা । পুতুলের মত বাচ্চা মেয়েটা দারুণ মিষ্টি ।
প্রথমেই এক
গ্লাস জল এনে টেবিলে রাখলেন মিসেস প্যাটেল । তার চেয়ে
বছর দুয়েকের বড় হলেও হতে পারেন । এই সকালেও চড়া মেক আপ । তবে, বয়স কম এটা বোঝাই
যাচ্ছে । সালোয়ার কামিজে বেশ সুন্দরী ।
জলটা দিয়ে
বললেন- এটা আমাদের গুজরাতিদের কালচার । আপনারা যেমন চা দেন, সেরকম আমরা আগে জল দেই
অথিতিকে । তারপর চা । আমার পুরো নামটা বলা হয় নি আপনাকে । আমার নাম হলো, প্রমীলা
বিজয় প্যাটেল ।
-
বিজয় নামটা
মধ্যে কেন ?
-
এটা আমাদের
আর একটা নিয়ম । নামের পরে স্বামী বা বাবার নাম মধ্যে রাখতে হয় । তবে, ওটা অফিসিয়াল
। এমনিতে আমি প্রমীলা প্যাটেল । আপনাকে তো গতকাল বলেছি, আমার হাবির নাম বিজয় ভাই ।
মানে, বিজয় ।
ইচ্ছে করেই
মাসে দেড় হাজার টাকা বলল তুহিনা । সপ্তাহে তিনদিন পড়াবে, বিকেলে । অবাক হয়ে দেখল প্রমীলা দরাদরি করল না ।
এর মধ্যে
বিজয় বাবু এসে হাজির হলেন, লিভিং রুমে ।
হ্যাণ্ডসাম চেহারা । বর- বৌয়ের জুটিটাও
সুন্দর । আলাপ হয়ে ভালই লাগলো ।
ঠিক হলো, সামনের মাসের পয়লা তারিখ থেকে পড়াতে আসবে তুহিনা ।
একটা কথা
মনে হতেই সেল ফোনটা বের করে গতকালের সেভ করে রাখা উমিচাঁদের নাম্বারে ডায়াল করল
তুহিনা । তার আগে অবশ্য এক্সকিউস মি বলে নিয়েছে ওদের ।
এর মধ্যে
বিজয়ের সেল ফোনে একটা কলার টিউন । বিজয় স্লাইডিং ফোনটা তুলে বলল – হ্যালো !
তুহিনার
সেলেও হ্যালো । মনে হল আওয়াজটা কাছ থেকে আসছে ।
-
আমি তুহিনা
বলছি । আপনি কি উমিচাঁদ ?
-
আরে হোয়াট এ
প্লেজার । বলুন ম্যাম ।
তুহিনা অবাক হয়ে দেখল, বিজয়ই কথা বলছে ওর সাথে । বিজয় অত খেয়াল করে
নি । ফোনটা কেটে দিয়ে প্রমীলাকে জিজ্ঞেস করল- আপনার
হাবির পুরো নামটা কি যেন ?
-
বিজয় উমিচাঁদ
প্যাটেল । কেন বলুন তো ?
-
এবারে বুঝলাম । চাঁদনীতে ওনার দোকান আছে,
ইলেকট্রনিক গুডসের ?
-
হ্যাঁ !
কিন্তু আপনি জানলেন কি করে ?
-
সে অনেক কথা । প্রমীলা
ম্যাম, আপনার মেয়েকে আমার আর পড়ানো হলো না ।
-
কেন ?
-
সেটা আপনার
হাবিকে জিজ্ঞেস করবেন । চলি ।
হতভম্ভ
প্রমীলা আর বিজয়ের মুখের দিকে একটা মুচকি হাসি ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো তুহিনা ।
No comments:
Post a Comment