ভদ্রলোক সম্পর্কে যে খুব সবাই ভালো জানেন তা কিন্তু নয়। তিনি সমরেশ, সুনীল বা হুমায়ুনের, মত জনপ্রিয় কোন লেখকও নন ।
হাতে গোনা যে কজন চেনেন, এই ভদ্রলোককে, তাঁরা খ্যাত নামা ঐতিহাসিক
নামেই চেনেন । যখন, কলম ধরেন আমাদের মত পাঠকদের জন্য তখন, সেই লেখা পড়তে পড়তে একটা
স্মৃতিমেদাতুর হাসি মনে বুদবুদিয়ে ওঠে ।
আলী সাহেবের পর, এরকম মুজতবী কলম আমি অন্তত আর পাই নি । একজন রাশভারী
ব্যক্তিত্ব যখন নিজের কথা লেখেন আত্মজীবনী হিসেবে, তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ,
ইনিই সেই ঐতিহাসিক ।
এ কথা ঠিক যে বরিশালের মানুষ সম্পর্কে জানতে হলে বুঝতে হবে তাদের মন
আর মানসিকতা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারনা থাকতে হবে। তা না হলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল
ধারনার জন্ম হতে পারে।
লেখক এক জায়গায় বলছেন :-
আমার কাকা গেলেন কলকাতায়। সেখানে তিনি কাপড় কিনবেন। কলকাতার
নিউমার্কেটে একটা দোকানে দোকানীর সাথে তিনি কথা বলছেন। দেখা গেল কাপড়ের দোকানদার
তিনি নিজেও একজন বরিশালের মানুষ। আর যায় কোথায়? ঐ
কাপড়ের দোকানদারও বুঝে ফেললেন যে আমার কাকা বরিশালের মানুষ। তাদের মাঝে দর কষাকষি
শুরু হয়ে গেল।
কাকা জিজ্ঞেস করলেন, ”দাম কত?” দোকানীর উত্তর ” এত”। কাকা
বললেন, “দাম এত ক্যান? এই দামে তো নেওয়া যাবে
না।” দোকানীর উত্তর ” না নিলে না নিবেন, ঠেকলাম
কিসে?”
এই হল বরিশালের মানুষের মন। একটা ইগো কাজ করে। আমরা যারা বরিশালের
বিষয়টা আমাদের জন্য সহজ কিন্তু বাইরের অনেকেই হয়তো বিষয়টা ভুল বুঝতে পারে। যেমন
ধরা যাক বরিশালের মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম সবসময় খুব উঁচু। মনে হবে বুঝি রোম
সভ্যতার পরই বরিশালের স্থান। জোয়ান বুড়া সবাই বরিশালের নামি ব্যক্তিত্বদের নাম
মুখস্থ করে বসে আছে। একটু জিজ্ঞেস করলেই সব মুখস্থের মত বলে দেবে। আমাদের সময়ে
ছাত্র মহলে প্রেমে ব্যর্থ যুবকদের বেশ কদর ছিল। তাদের কে কেমন জানি, একটু হিরো
হিরো মনে হত। আর সে কারণেই বরিশালের সব যুবকরাই নিজেদেরকে রোমিও ভাবত। বুকের মধ্যে
ভালোবাসা বেঁধে চিঠির সাথে ইটের টুকরা বেধে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে ঢিল দিত। আর সেই কখনো
কখনো প্রেমিকার সামনে না পড়ে প্রেমিকার বাবার সামনে পড়লে তো বুঝতেই পার কি
দুরবস্থা!! তবে আমরা সেই সব বীর যুবকদের নিয়ে গর্ব করতাম। বলতে গেলে প্রেম
বিষয়টা বরিশালের একটা ঐতিহ্যের মধ্যেই পড়ে। একজন
সফল প্রেমিকের ভাষায়, ”
হ্যারে দেইখ্যা ত” পেরথমেই
লাভে পড়িয়া গেলাম। হ্যার পর, নদীর ধারে দুই দিন ’ফলো’ করলাম।
তিনদিনের দিন একটু আন্ধার হইতেই ফোকাস মারলাম।”
তিনি বরিশালের চাষি সম্বন্ধে লিখছেন :-
ক্ষেতে বর্ষা নেমেছে, হাঁটু
অবধি জল, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দুই চাষি ধানের চারার রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রথমের
প্রশ্ন, “ক দেহি, মহারাণী ভিক্টোরিয়া এহন কি করতে আছে?
উত্তর, “হে কি আর আমাগো মত? পানি
নাবতেই পান্তাভাত খাইয়া কাঁথা মুড়ি দিয়া উব্বুত।”
বা, কোলকাতার হোস্টেলে প্লেন বিশেষজ্ঞকে আকাশে বিরাট একটা প্লেন দেখে
, এটা কি ধরণের প্লেন যখন জিজ্ঞেস করা হয়, উত্তর আসে:- এয়ার ক্র্যাফট কেরিয়ার !
অন্য জায়গায় লিখছেন :- জেঠামশায়ের কথা- "একটু ইনডাইরেক্টলি কইয়া দিলাম আর কি !!!
“জ্যাঠামশায় বরিশাল-কৃষ্টি সম্পর্কে অনেক কাহিনী শোনাতেন। ওঁদের ছোটবেলায় নাকি স্থানীয় ব্রাহ্মরা ‘কুসংস্কার-নিবারণী সভা’ স্থাপন করেন। জনহিতৈষী ব্রাহ্ম যুবকবৃন্দ প্রভাতফেরিতে বের হতেন, খোল-করতাল সহযোগে কুসংস্কার-নিবারণী কীর্তন করতে করতে,-(রাগ ভৈরবী, ঝাঁপতাল)
“প্রভাতে উঠিয়া দেখ মাকুন্দ চো-ও-পা-আ।
বদন ভরিয়া বল ‘ধোওপাআ, ধোওপাআ।
“জ্যাঠামশায় বরিশাল-কৃষ্টি সম্পর্কে অনেক কাহিনী শোনাতেন। ওঁদের ছোটবেলায় নাকি স্থানীয় ব্রাহ্মরা ‘কুসংস্কার-নিবারণী সভা’ স্থাপন করেন। জনহিতৈষী ব্রাহ্ম যুবকবৃন্দ প্রভাতফেরিতে বের হতেন, খোল-করতাল সহযোগে কুসংস্কার-নিবারণী কীর্তন করতে করতে,-(রাগ ভৈরবী, ঝাঁপতাল)
“প্রভাতে উঠিয়া দেখ মাকুন্দ চো-ও-পা-আ।
বদন ভরিয়া বল ‘ধোওপাআ, ধোওপাআ।
আবার লিখছেন :- হঃ, এরপর কইবেন "অগো বেঙ্গী, মগো বেঙ্গী আর জগদীশ্যা" আমার ছুডবেলার খেলার সাথী আছিল ।
“বরিশালী সংস্কৃতির সব চেয়ে লক্ষনীয় প্রকাশ প্রচণ্ড পৌরুষে । Machismo কাকে বলে ল্যাটিন আমেরিকার বাঘা বাঘা পুরুষ তথা মার্কিন গুণ্ডাবীর Rambo তা বরিশালবাসীর কাছে সাত জন্মে শিখতে পারে। এই machismo শুধু পুরুষ জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দামু কাকার দুই বৌ যখন সম্মিলিত শক্তি নিয়ে তাঁকে ঝাঁটাপেটা করতেন তখন সে দৃশ্য দেখলে অনেক পুরুষসিংহেরই পিতৃনাম বিস্মরন হত। আদর্শগত শুচিতা ভুলে নারী আন্দোলনকারিনীরা ‘দামুরক্ষা সমিতি’ খুলতেন ।”
হাসতে
হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যায় ।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছিলেন । তাঁর ‘বাঙাল নামা’য় তিনি লিখেছেন: “... (সেই দাঙ্গার সময়কার বর্ণনা) একজন কোথা থেকে একটা চোথা খবরের কাগজ নিয়ে এল যার নাম আগে বিশেষ শুনিনি। লোমহর্ষক সব কাহিনীতে ভরা ওই কাগজটির বিক্রি নাকি তিন দিনে বেশ কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছিল। এবং তার অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী সম্পাদকটি শুনেছি সমস্ত কাগজখানা নিজের বৈঠকখানা ঘরে বসে লিখতেন। বাইরে বের হওয়া তখন নিরাপদ ছিল না। আর দাঙ্গার আগে ওই কাগজটির যা বিক্রি তাতে সম্পাদক ছাড়া অন্য কোন কর্মচারী রাখার মতো সামর্থ্য বা প্রয়োজন হয়েছে এমন মনে হয় না। এখন ওই বিরল প্রতিভাটি সম্পূর্ণ নিজের মস্তিষ্ক থেকে কলকাতার কুরুক্ষেত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। ওই বজ্জাতের মনোভূমি কলকাতার রাস্তার চেয়ে দাঙ্গার জন্মস্থান হিসেবে সত্যের আঁকর হয়ে উঠলো। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, রাতারাতি ওই চোথা পত্রিকাটি স্মৃতি শ্রুতির স্থান অধিকার করলো। শহরের সর্বত্র কি ঘটছে না ঘটছে তা ওই অশ্লীল নির্জলা মিথ্যা কথায় ভরা প্রকাশনাটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে সবাই আলোচনা করতে লাগলো। যদি প্রশ্ন করা হতো এসব যে সত্যি তা তোমরা কি করে জানলে, তাহলে লোকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে বাক্যালাপ বন্ধ করে দিতো। ... ওই বিষাক্ত পত্রিকাটির কপি এখন আর পাওয়া যায় না। নগণ্য একটি প্রকাশন মিথ্যা প্রচারের মারফত কত অনিষ্ট করতে পারে, বাঙালির দুর্ভাগ্যের বিবরণীতে সে ইতিহাস অলিখিত রয়ে গেল।” -বাঙাল নামা, তপন রায়চৌধুরী, আনন্দ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, আগস্ট ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৫২) ।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছিলেন । তাঁর ‘বাঙাল নামা’য় তিনি লিখেছেন: “... (সেই দাঙ্গার সময়কার বর্ণনা) একজন কোথা থেকে একটা চোথা খবরের কাগজ নিয়ে এল যার নাম আগে বিশেষ শুনিনি। লোমহর্ষক সব কাহিনীতে ভরা ওই কাগজটির বিক্রি নাকি তিন দিনে বেশ কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছিল। এবং তার অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী সম্পাদকটি শুনেছি সমস্ত কাগজখানা নিজের বৈঠকখানা ঘরে বসে লিখতেন। বাইরে বের হওয়া তখন নিরাপদ ছিল না। আর দাঙ্গার আগে ওই কাগজটির যা বিক্রি তাতে সম্পাদক ছাড়া অন্য কোন কর্মচারী রাখার মতো সামর্থ্য বা প্রয়োজন হয়েছে এমন মনে হয় না। এখন ওই বিরল প্রতিভাটি সম্পূর্ণ নিজের মস্তিষ্ক থেকে কলকাতার কুরুক্ষেত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। ওই বজ্জাতের মনোভূমি কলকাতার রাস্তার চেয়ে দাঙ্গার জন্মস্থান হিসেবে সত্যের আঁকর হয়ে উঠলো। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, রাতারাতি ওই চোথা পত্রিকাটি স্মৃতি শ্রুতির স্থান অধিকার করলো। শহরের সর্বত্র কি ঘটছে না ঘটছে তা ওই অশ্লীল নির্জলা মিথ্যা কথায় ভরা প্রকাশনাটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে সবাই আলোচনা করতে লাগলো। যদি প্রশ্ন করা হতো এসব যে সত্যি তা তোমরা কি করে জানলে, তাহলে লোকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে বাক্যালাপ বন্ধ করে দিতো। ... ওই বিষাক্ত পত্রিকাটির কপি এখন আর পাওয়া যায় না। নগণ্য একটি প্রকাশন মিথ্যা প্রচারের মারফত কত অনিষ্ট করতে পারে, বাঙালির দুর্ভাগ্যের বিবরণীতে সে ইতিহাস অলিখিত রয়ে গেল।” -বাঙাল নামা, তপন রায়চৌধুরী, আনন্দ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, আগস্ট ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৫২) ।
“বাঙাল নামা” অথবা “রোমন্থন অথবা ভীমরতি প্রাপ্তর পরচরিতচর্চা” গ্রন্থগুলোতো
এখনো বাঙালির মস্তিষ্ক থেকে উধাও হয়ে যায় নি, নাকি?
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ”বাঙাল নামা”র
জন্য দুই বাংলার মানুষের অন্তরে যেন তিনি একটু বেশি পরিমাণেই আদৃত হয়ে আছেন।
নিউ ইয়র্কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন :-
“দ্যাখো, আমি বরিশালের একজন মানুষ হিসেবে গর্বিত। বরিশালের সেই সব স্মৃতি গুলো আমার জন্য শুধুই কোন নস্টালজিক বিষয়
না। এই স্মৃতিগুলো আমার প্রতিদিনের জীবনের নিত্য খোরাক। আমি এই স্মৃতির মাঝেই
প্রতিদিন বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি। একটা কথা বুঝতে হবে বরিশালের
আলো-হাওয়ায় আমার শিরের শিরা-উপশিরায়। তাদের প্রতিদিনের জীবনের খুনসুটি, ইগো, যাই
বল না কেন সব কিছুই কিন্তু আমি ধারণ করেই আমার এই যাপিত জীবন। আমার ছেলেবেলা
কাটিয়েছি বরিশালে। আমার শৈশব স্মৃতি আমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তবে এ কথা ঠিক
যে বরিশালের মানুষ নিয়ে কথা বললে এর শেষ করা যাবে না। শেরে বাংলা এক বিশাল মাপের
মানুষ ছিলেন। তবে আমার মনে হয় অনেক বরিশালিরাই হয়তো এই বিশাল মাপের মানুষকে সঠিক
ভাবে চিনতে পেরেছিলেন। আগে বুঝতাম না এখন বুঝি যে শেরেবাংলা কত দূরদর্শী ছিলেন।
তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বর্তমানে যে কোন রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে বিরল। তবে এ কথা
ঠিক যে বরিশালের মানুষ সম্পর্কে জানতে হলে বুঝতে হবে তাদের মন আর মানসিকতা সম্পর্কেও
স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ধারনার জন্ম হতে পারে।আমরা
বলি বৃটিশরা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটা বিবাধের দেয়াল তুলে দিয়ে গেছে। আমি
কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না। বৃটিশ আসার আগেও হিন্দু-মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক খারাপ
ছিল। আসল বিষয়টা হল ধর্ম মানেই এমন। আমরাটাই শ্রেষ্ঠ। তবে হ্যা, এই
ধর্মকে কেন্দ্র কে আমাদের সাম্য কতটুকু ব্যাহত হয়েছে সেটা হল কথা। আমি বলব
অনেকটুকুই। এই দেশ ভাগের কোন ফসল আমরা পাই নি। দেশ ভাগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি
হয়েছে উত্তর ভারতের মুসলমানদের। এখনো পর্যন্ত মারামারি কাটাকাটি লেগেই আছে। আমি
কিছুদিন আগে পাকিস্তান গিয়েছিলাম। ভাবতেই পারবেন না আমি সেখান থেকে কি যে
ভালোবাসাটা পেয়েছি। একটা পাঞ্জাবীর দোকানে চা খাচ্ছিলাম। চা খাওয়ার পর বিল দিতে যাব। এই দেখে পাঞ্জাবী চায়ের স্টলের
মালিক আমাকে কিছুক্ষণ তিরস্কার করলেন। তারপর চায়ের বিল দিতে আমাকে নিভৃত করলেন।
আমরা তখন কেউ ভাবিনি যে আমি হিন্দু আর উনি মুসলমান। কথা হল সাধারন মানুষের
ভালোবাসায় কে হিন্দু আর কে মুসলমান এই সব নেই। ধর্মকে মানুষ ব্যবহার করে রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যে। আমরা এই সাধরণ মানুষরা কিন্তু এর করুণ শিকার ছাড়া আর কিছুই না।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য এই ধর্মকে ব্যবহার করা
হয়েছে। এই সত্যটাতো একদম জলের মতই পরিস্কার।”
"বাঙালী
হিন্দু-মুসলমানের শরীয়ত-সুন্নাহ, পুজো-অর্চনা জীবনপ্রবাহ আর
ইতিহাস মিলে গড়ে ওঠা ভাব-সংস্কৃতিই এখানে জীবন দর্শন। হিন্দু ব্রাহ্মণ কিংবা
মুসলমান মৌলভী আর ব্রিটিশ সাহেবদের ভদ্র পোশাকি রাজনীতি অর্থনীতি অথবা প্রথাগত
সমাজ সংস্কৃতির নগ্নরূপ এখানে মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করেছে। মানবিক সম্পর্ক
ফেলেছে সঙ্কটে। জনগণের ধর্মবোধ মানুষকে পৌঁছে দেয় মনুষত্ববোধের কাছে। সেখানে
মানিয়ে চলার নামই উদারতা। মরুভূমির কঠোর ধর্মাচরণ নয়, দ্বীপের
এই বাংলাদেশ পলিমাটির মননে জীবন্ত। এখানে ধর্ম তলোয়ারের জোরে নয়, পারস্য সভ্যতার নরম মেজাজে এসেছে। লালন ফকির আর আজমীরের মতো পীর ফকির
দরবেশ আউলিয়াদের দরগায় হিন্দু-মুসলিম সব বাঙালীর ভ্রমণ আজও দৃশ্যমান। বাঙালী হিন্দু-মুসলিমের
ধর্ম দর্শনে উন্মাদনার জায়গা ক্ষীণ, তবে সংস্কারপন্থীদের
সঙ্গে প্রথাগতদের বিরোধ ছিল। বাংলা সাহিত্যের ভিন্ন সুরে বাঙালী কেবলই আবেগের।
সেখানে মনুষত্বের সংস্কৃতিরই আধিপত্য।"
অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী একজন
ভারতীয় ইতিহাসবেত্তা যিনি ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার জন্য
প্রসিদ্ধ। তিনি দীর্ঘকাল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ইতিহাস ও সভ্যতা
বিষয়ে শিক্ষকতা করার পর বর্তমানে অক্সফোর্ডের সেইন্ট এন্টনী কলেজে এমিরিটাস ফেলো
হিসেবে সংযুক্ত আছেন। তাঁর জন্ম ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের বরিশালে, কীর্তিপাশায়, এবং সেখানেই তাঁর স্কুল জীবন অতিবাহিত
হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ছেড়ে তারা ভারতে চলে আসেন। অতঃপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া
করেছেন এবং উভয বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. ফিল. ডিগ্রী
লাভ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রী অর্জন
করেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকেঁ সম্মানসূচক ডি. লিট.
উপাধি প্রদান করে। জীবনের শুরু থেকেই তপন রায় চৌধুরী শিক্ষকতাকে জীবিকা হিসাবে
গ্রহণ করেছেন। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। বাংলা এবং ইংরেজি উভয়
ভাষায় তাঁর বহু গ্রন্থ এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও গবেষণামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
=
আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার রইলো অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরীর প্রতি । পাঠকদের অনুরোধ- তাঁর বইটা পড়ে দেখুন ।
আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার রইলো অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরীর প্রতি । পাঠকদের অনুরোধ- তাঁর বইটা পড়ে দেখুন ।
=
তথ্য :- ইন্টারনেটে প্রকাশিত তাঁর সাক্ষাৎকার এবং “বাঙাল নামা” ,
“রোমন্থন
অথবা ভীমরতি প্রাপ্তর পরচরিতচর্চা”
No comments:
Post a Comment