Friday, May 24, 2013

জাল নোট



ক্ষেপচুরিয়ান - ওয়েবজিনে প্রকাশিত




পাঁচশ টাকার নোটটা অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল দোকানদার মুদি মদন! এই নিয়ে প্রায় বার দশেক হয়ে গেল! দুরু দুরু বুকে দাঁড়িয়ে আমি! একবার মিউ মিউ করে বললামও:- এইমাত্র ব্যাংকের এ.টি. এম থেকে তুলে এনেছি রে, মদন! মনে হয় না, জাল নোট হবে।
থামুন তো! ঝাঁজিয়ে উঠল মদন! আজকাল এ.টি. এম থেকেও জাল নোট  বেরুচ্ছে! খবর টবর রাখেন না নাকি?
ক্ষেতু বাগচী এসে বসে, হাত বাড়িয়ে সকালের খবরের কাগজটা টেনে নিলেন। হেডলাইন থেকে প্রিন্টার্স লাইন পর্যন্ত খুঁটিয়ে পড়ে, মুখস্থ করা তাঁর রোজকার অভ্যেস। এককালে একটা জাঁদরেল চাকরী করতেন। সেই সুবাদে বিদেশেও গেছেন বেশ কয়েকবার! সব ব্যাপারেই, তাঁর মত দেবার অধিকার আছে বলে, ক্ষেতু বাগচী মনে করেন। তিনি বেশ জাঁক করেই বলেন- অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে হে!  তাঁর অভিমতই যে শেষ কথা, সেটা আমরা সবাই মেনেও নিয়েছি!! যতই হোক! বিদেশ ফেরতা বলে কথা!!!!!!!!
আজ, ক্ষেতু বাগচীকে আসতে দেখেই,  চায়ের দোকানদার খগেন চায়ের গ্লাসটা ঠক করে কাউন্টারের ওপর রাখল। আমিও একটা চায়ের গ্লাস পেলাম। মদন, রোজ খাতির করে ক্ষেতুদাকে চা খাওয়ায়!
জলদ গম্ভীর স্বরে ক্ষেতুদাবললেন:- চাটা অন্যমনস্ক ভাবে বানিয়েছিস তো রে খগেন!
খগেন একটা কলগেট হাসি দিয়ে বলল;- আর ভুল হয় স্যার??
 আমি অবাক হয়ে তাকাতে, ক্ষেতুদা আমার অজ্ঞতাটা ভাঙ্গলেন!!!!!
খগেন যদি মন দিয়ে চা করে, তবে সেটা আর মুখতব্য থাকে না, মানে মুখে দেওয়া যায় না! বুয়েচ? তাই এই অন্যমনস্কতার টোটকা!
বাঃ! বাঃ! হাততালি দিয়ে উঠল মদন!
তা স্যার! এটার একটা ট্রায়াল নিশ্চয়ই দিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকেই!!!
তা আর বলতে!!! ক্ষেতুদা উবাচ!
জানোই তো! আমি বাড়ীতে বাঘ! অবশ্য তোমাদের বৌদি রিং মাষ্টার!  সে যাকগে!!!!!কিছুদিন হল, যা রান্না করছিল না, তোমাদের বৌদি, তাতে আমাকে খেতে বসার সময় জিজ্ঞেস করতে হচ্ছিল- কোনটা কি !!
বৌদি বলত- এটা ডাল, আমি ডাল মনে করে খেতাম।
বৌদি বলত- এটা মাছ! আমি মাছ মনে করে খেতাম!!!
করে করে সবই বলে দিচ্ছিলেন তোমাদের বৌদি আর আমি সেটা মনে করেই খাচ্ছিলাম। শেষে, জিজ্ঞেস করলাম! তুমি কি খুব মন দিয়ে রান্না কর?
আমার বৌ বলল- হ্যাঁ!
আমি বললাম- তা এক কাজ কর! আজ থেকে একটু অন্যমনস্ক হয়ে রান্না কর। ব্যাস্!!!! কেল্লা ফতে! এবার আরাম করে, পদগুলো চিনে চিনে খেতে শুরু করলাম! সেই টোটকাটাই আমি খগেন কে দিয়েছি!
মদন এবার আর চুপ করে থাকতে পারে না! বলে ওঠে:-তা হলে তো অন্যমনস্ক হলে, প্রচুর ভালো ভালো কাজ করা যায়!!!!!!!
সে আর বলতে!‍, ক্ষেতুদা আয়েস করে একটা সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়ার রিং ছাড়তে ছাড়তে শুরু করলেন:- এই যে ধর, কিছুদিন আগে, দুধের ট্যাংকারে কষ্টিক সোডা পাওয়া গেছিল, এটা তো অন্যমনস্কতারই ফল! অন্যমনস্ক হওয়াতে পাবলিকের কত সুবিধে হলো বলো দেখি!
কি রকম! এবারে আমি বললাম।
কি ফটফটে সাদা দুধ, একবার ভাবো দেখি!!! গরুও অমন দুধ দিতে পারে না! সোডা দিয়ে কাপড় কাচলে, জামাকাপড় যেমন ধবধবে সাদা হয়, ঠিক সেই রকম! অঙ্কটা পরিস্কার! পেটও সাদা, দুধও সাদা!!!!! একটানা বলে ক্ষেতুদা দম নিলেন।
দম নিয়ে আবার শুরু করলেন:-তবে সব সময় যে ভালো হয়, তা কিন্তু নয়!
-                     কি রকম? আমার জিজ্ঞাসা।
-                     এই দ্যাখো না! পিন্টু আর সুকুরের কথা শুনেছ?
-                     পিন্টু? আমাদের পাড়ার? সুকুরকে তো ঠিক চিনলাম না!
-                     বলি, কাগজ তো রাখো বাড়ীতে, পড় কি?
-                     তা পড়ি!
-                     ঘোড়ার আণ্ডা! পড়লে আর এই রকম বিদঘুটে প্রশ্ন করতে?
-                     কি রকম?
-                     পিন্টু হচ্ছে চোর! চুরি করতে গিয়ে ফ্যানের হাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল!
-                     তারপর?
-                     তার আর পর নেই!
-                     এই দেখুন! হেঁয়ালী করতে শুরু করলেন তো!!!!!!!
-                     হেঁয়ালী করবো কেন? চুরী করতে গেছিল পিন্টু, তারপর ঘুমিয়ে পড়ে! উঠে দ্যাখে বাড়ীর মালিক হাজির! তারপর বেদম ক্যালানী খেল!
-                     আর সুকুর?
-                     ওরও একই কেস! তবে ও ঘুমিয়েছিল মোবাইলের দোকানে! তারপর পিন্টুর হাল! বুঝলে হে!! অন্যমনস্ক হওয়ার বিপদও আছে!!!!
আমার মোবাইল দুবার বেজে বন্ধ হয়ে গেল! মোবাইলটা বের করে দেখলাম, গিন্নী মিস কল দিয়েছেন!!!! বুঝলাম, দেরী হচ্ছে দেখে, এই চেতাবনী!
ক্ষেতুদা জিজ্ঞেস করলেন:- কে মিস কল দিলে?????????
-        মিসেস!!!!
-       বাঃ! এই বয়সেও তোমার মিসেস, তোমায় মিস কল দিচ্ছেন? খুব স্বাস্থকর ব্যাপার! তোমার তো দুধ জমে ক্ষীর আর ক্ষীর জমে প্যাঁড়া হে!!!!!!!!
মুচকী হাসি ছাড়া এসব ক্ষেত্রে আর কোনো উপায় থাকে না!
-                     তা, হ্যাঁ হে!!! তোমার মিসেসের কি মিস কল দেওয়াই অভ্যেস?
-                     না, না!!!!!!!
-                     তবে???????
-                     ওই! আমাকে ওয়ার্নিং দিতে হলে, মিস কল দ্যায়!
-                     তা ভালো!‍!!! আমার কিপ্টে শ্যালক বাহাদুর আবার জীবনে একটা গোটা করল না জীবনে! সামনের বাড়ীতে একবার আগুন লেগেছিল!‍!!!! তা তিনি সমানে দমকলকে মিস কল দিয়ে গেছিলেন!!!!!!!!!
-                     তা দাদা, আপনার কোনো মিস কলের অভিজ্ঞতা?
-                     ভূরি, ভূরি! তোমাদের বৌদি প্রায়ই তাঁর মোবাইলটা অন্যমনস্ক হয়ে এখানে সেখানে রেখে দিয়ে আর খুঁজে পান না! আমাকেই ওনার মোবাইলে মিস কল দিয়ে, রিং টোনের উৎস ধরে মোবাইলটা বের করতে হয়!
-                     ওটা তো আমারও হয়!
-                     সে তো বুঝলাম! কিন্তু, কিছুদিন আগে তোমাদের বৌদি চশমাটা হারিয়ে, আমাকে বললেন, মিস কল দিয়ে চশমাটা খুঁজে বের করতে!!!!!!!!!!
-                     কি করলেন আপনি?
-                     কি আর করবো!!! চশমাটা কোথায় ছিল দেখতে পাচ্ছিলাম! তাই মিস কলের ভান করে  চশমাটা বের করে দিলাম! শুধু টর্চের জন্য কেনা নতুন চারটে ব্যাটারীর কিছু করতে পারি নি!!
-                     ব্যাটারী?????????
-                      নতুন ব্যাটারীগুলো ভালো থাকবে বলে, তোমাদের বৌদি ওগুলো ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন! ওই অন্যমনস্কতার ফল!!!!! বুঝলে হে!!!!!

আবার গিন্নীর মিস কল!!! আমি মদনকে বললাম- কি রে! মালগুলো দিয়ে দে! দেখছিস না , বারে বারে মিস কল আসছে!!!!!!!
দিতে তো অসুবিধে নেই, ঘনাদা!!!! ওই নোটটাই যত নষ্টের গোড়া!‍ বুঝতেই পারছি না, নোটটা আসল না জাল!
ক্ষেতু বাগচী বললেন:- প্রবলেমটা কি?
মদন:- কিছুই না, ঘনাদা একটা পাঁচশ টাকার নোট দিয়েছেন! নোটটা আসল না জাল, বুঝতেই পারছি না!
-                     ও!ও! এই ব্যপার! এ তো খুব সোজা!- ক্ষেতুদা বললেন।
-                     আমার কাছে নোট চেক করার মেশিন যে নেই স্যার!
-                     দরকার নেই! এক কাজ কর হে মদন! গাঁধীজির ছবিটা ভেতরে রেখে- নোটটাকে দু ভাগে ভাঁজ কর!
-                     করলাম!
-                     বেশ, এবার ওই ভাঁজ করা নোটের ওপর জোরে জোরে ৫ বার ঘুঁসি মারো!
-                     মারছি! বলে মদন শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ভাঁজ করা নোটের ওপর জোরে জোরে ৫ বার ঘুঁসি মেরে হাতটা ঝাঁকাতে লাগলো!
-                     আহা! খুব লেগেছে বুঝি, মদন!
-                     তা আর বলতে! হাত টা টনটন করছে ব্যাথাতে!
-                     ঠিক আছে! এবার নোটটার ভাঁজ খোলো!
-                     খুললাম, মদনের উত্তর!
-                     খুব ভালো! এবার দ্যাখো, গাঁধীজির চশমাটা ভেঙ্গেছে কি!!!!
-                     না তো! মদন খুব ভালো করে দেখে বলল!
-                     তালে, ঘনার দেওয়া নোটটা আসল! নকল হলে গাঁধীজির চশমাটা ভেঙ্গে যেত!!!!
-                     ওরে কানাই! ঘনাদার মালগুলো একটা রিক্সো ডেকে তুলে দে! মদনের হুকুম হলো।
-                     আমিও যাই! ক্ষেতুদা বললেন। সকাল থেকে পেটে একটাও গোটা কল আসে নি! এবার ঘনঘন মিস কল দিচ্ছে! আর তো চাপা যাচ্ছে না!
বলে, ক্ষেতুদা আমার সাথে রিক্সোয় চেপে বসলেন। আসার সময় দেখলাম, মদন তখনও ডান হাতটা ঝাঁকিয়েই চলেছে, ঝাঁকিয়েই চলেছে!!!!!!

( সমাপ্ত)
-
-
-


ক্ষেপচুরিয়ান ব্লগে প্রকাশিত

No comments: