দু-
দুটো প্রেমে ল্যাং খেয়েছি । তাই আর প্রেমের পথে নয় । এদিকে, বন্ধু বান্ধবদের বিয়ে
হয়ে যাচ্ছে, আমার বিয়ে হচ্ছে না! কি যে দুঃখ!!! এখনও মাঝে
মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে আঁৎকে উঠি। বাবা,
নির্ব্বিকার, মাও তথৈবচ। সবাই
প্যাঁক দিচ্ছে।কেউ খাট কাটার গপ্পো শোনাচ্ছে তো কেউ বলছে- চশমা খুলে, বাপকে পিসে
বল।
শেষে কপাল ঠুকে আনন্দবাজার পড়ে কোচবিহারের ঠিকানায়, বাবার বয়ানে একটা চিঠি ছেড়ে দিলাম।
শেষে কপাল ঠুকে আনন্দবাজার পড়ে কোচবিহারের ঠিকানায়, বাবার বয়ানে একটা চিঠি ছেড়ে দিলাম।
১০ দিন পর, কন্যার ( বর্তমানে আমার গৃহিণী) পিতৃদেবের উত্তর এলো।
বাবার হাতেই পড়লো চিঠিটা। তিনি কি উত্তর দিয়েছিলেন, তা লিখছি। কি করে জানলাম?
রেডিও তে অনুরোধের আসর হচ্ছে। মান্না দের সেই বিখ্যাত গান- ও ললিতা........., আর বাবা, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাকে চিঠির উত্তর শোনাচ্ছেন ( আমাকেও কি?)। বাবা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং বর্তমানে আমার ফাদার নং টু বাংলায় স্নাতকোত্তর।
অশেষগুণালঙ্কৃতেষু,
আপনার প্রেরিত, পত্র পাইয়া যুগপৎ আনন্দিত ও বিষ্মিত হইলাম।আপনি বিদোৎসাহী, মননশীল এবং সদাশয়; তাহা আপনার পত্রপাঠে অবগত হইলাম। আপনার বংশ পরিচয় পাইয়া এবং সাণ্ডিল্য গোত্র সম্ভুত বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ জানিয়া, একান্ত বাধিত ও সাতিশয় হর্ষ অনুভব করিলাম।
অপিচ, ( ইংরাজী- However এর সমতুল্য) এই পরিদৃশ্যমান বাহ্যজগতে; ওহো! কি আশ্চর্য্য ঘটনা প্রতিনিয়ত সংগঠিত হইয়া থাকে!!!!!!
আপনি প্রতারিত। এবংবিধ পত্র, স্বয়ং তো নহে, আপনাকে মদীয় ঊর্দ্ধতন চতুর্দশ পুরুষেরাও কেউ লেখে নাই। তবে অনুমান করিতে পারি, এই কার্য কাহার দ্বারা সম্পাদিত হইয়াছে। ইহা মদীয় শাখামৃগ ( বানর) সদৃশ জেষ্ঠ্য পুত্র , ........ কর্তৃক লিখিত।
মদ্যপ, গঞ্জিকা সেবন কারী ও আরও গুণালঙ্কৃত(?) মদীয় এই পুত্রটি বর্তমানে ভাদ্র মাসের সারমেয়র ন্যায় হইয়াছে বলিয়া এমত আচরণ করিয়াছে।
ঔষধ প্রস্তুতকারী কোন একটি সংস্থায়, বিপননের কার্য্য করিতেছে বলিয়া শুনিয়াছি।
"ওষুধ লিবে মা!!!! বলে মাথায় ঝাঁকা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ওষুধ বিক্রী করে আর কি!!!”"
ক্রোধ সংবরণ করিতে না পারিয়া, কিঞ্চিৎ দেশীয় ও তদ্ভব শব্দ ব্যাবহারের জন্য দুঃখিত। ঔষধের গুণাবলীর প্রচারের নিমিত্ত অনৃত ভাষণের ( মিথ্যা কথা বলা) জন্য পুত্রটি তাহার প্রাপ্য মাসিক অর্থ পাইয়া থাকে। তাহার প্রদত্ত ঔষধে, মদীয় পত্নীর যে পীড়া ৭ দিনে উপশমিত হইবার কথা, তাহা ১ সপ্তাহে উপশম হইয়াছে।
এমত পুত্রের সহিত, আপনার সুলক্ষণা কন্যার বিবাহ উপযুক্ত নহে বলিয়া বোধ হইল।
সাদর সম্ভাষণান্তে
ভবদীয়
রামনারায়ণ ভট্টাচার্য (সান্ন্যাল)
M.A. (Triple), কাব্যব্যাকরণ শাস্ত্রী।
(আগে লোকে, নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখতেন)
এরপরও, যে কি করে আমার বিয়েটা হয়েছিল; তা কল্পনা করতে পারবেন না।
বালেশ্বরে, (ভারতের
অঙ্গরাজ্য, ওড়িশায়।তখন বাবা ওখানে থাকতেন, আমার হেড
কোয়ার্টার কটক হলেও, বালেশ্বরে কাজের জন্য আসতে হত, আর দিন ১৫ র
কাজও থাকত) একদিন বর্তমান ফাদার নং ২ (তখনও হলেও হতে পারেন) থেকে বাবার কাছে
টেলিগ্রাম এলো, Reaching 24th
with wife, please arrange an hotel.
আমি বাড়ী ঢুকতেই, গম্ভীর মুখে বাবা; টেলিগ্রামটা ধরিয়ে বললেন- Take action.
আমাদের বাড়ীতে টেলিফোন ছিল না, কিন্তু পাশের বাড়ীর উদয় দাসের টেলিফোন নং আমি আগেই, আমার ওই বিতর্কিত চিঠিতে দিয়ে দিয়েছিলাম।
পরের দিন, সক্কাল বেলা উদয়ের বাড়ী থেকে ডাক! এই তোর টেলিফোন, কোচবিহার থেকে। তোকেই চাইছে। মন ধকধক করতে লাগল। কি বিপদ!!!!!!!
যাঁরা জানেন তাদের নয়, নতুনদের জন্য বলছি ( ৭৪ সালের ঘটনা তো!!!!!!)--------তখন ট্রাঙ্ক কল মানে চেঁচিয়ে কথা বলতে হত। (টেলিফোনে যে জোরে কথা বলতে হত, তাতে বোধহয় এমনিই লন্ডন পর্যন্ত শোনা যেত!!)
...... ঘনা (আমার ডাকনাম) বলছ?
.......হ্যাঁ
.......তা, শোনো বাবা; আমরা ২৪ তারিখ পৌঁছচ্চি। তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলে, আমরা পুরী যাব। শুনেছি, তুমি ওখানেও ট্যুরে যাও। তা আমাদের একটা ভালো হোটেল ঠিক করে দিও, ওখানে। কেমন?
.......তা করব, কিন্তু!
........আবার, কিন্তু কিসের?
........মানে, আপনারা কি বিয়ের কথা বলতে আসছেন?
........ হ্যাঁ, এটা আবার বলতে হবে?
.........বাবার চিঠি পেয়েছিলেন?
........হ্যাঁ
........মানে, আপনারা তারপরেও আসছেন?
........মানে? উনিই তো আমাদের আসতে বলেছেন। আরও বলেছেন, আগে ছেলে দেখুন। তারপর আপনাদের ছেলে পছন্দ হলে, না হয় আপনার মেয়েকে দেখব।
........তো, তো,তো,তো,তো,তো,তো,তো,তো,
........তুমি তোতলা নাকি? তোমার বাবা তো বলেন নি।
-না, মানে।
- তোমার কি বিয়েতে মত নেই?
- কে বলেছে? ( রেগে)
- তুমি, যে ভাবে কথা বলছ, তাতে মনে হচ্ছে।
- আরে ধূ্স্ । কি ভাবে বোঝাব, বুঝতে পারছি না।
- কি বোঝাবে?
- বাবার চিঠি পেয়েছেন?
- হ্যাঁ, বললাম তো!
- তারপরেও আসছেন?
- না আসার কি আছে? উনি সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ওই চিঠিতে।
- ও! ঠিক আছে, আপনারা আসুন। সব বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি।
আমি বাড়ী ঢুকতেই, গম্ভীর মুখে বাবা; টেলিগ্রামটা ধরিয়ে বললেন- Take action.
আমাদের বাড়ীতে টেলিফোন ছিল না, কিন্তু পাশের বাড়ীর উদয় দাসের টেলিফোন নং আমি আগেই, আমার ওই বিতর্কিত চিঠিতে দিয়ে দিয়েছিলাম।
পরের দিন, সক্কাল বেলা উদয়ের বাড়ী থেকে ডাক! এই তোর টেলিফোন, কোচবিহার থেকে। তোকেই চাইছে। মন ধকধক করতে লাগল। কি বিপদ!!!!!!!
যাঁরা জানেন তাদের নয়, নতুনদের জন্য বলছি ( ৭৪ সালের ঘটনা তো!!!!!!)--------তখন ট্রাঙ্ক কল মানে চেঁচিয়ে কথা বলতে হত। (টেলিফোনে যে জোরে কথা বলতে হত, তাতে বোধহয় এমনিই লন্ডন পর্যন্ত শোনা যেত!!)
...... ঘনা (আমার ডাকনাম) বলছ?
.......হ্যাঁ
.......তা, শোনো বাবা; আমরা ২৪ তারিখ পৌঁছচ্চি। তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলে, আমরা পুরী যাব। শুনেছি, তুমি ওখানেও ট্যুরে যাও। তা আমাদের একটা ভালো হোটেল ঠিক করে দিও, ওখানে। কেমন?
.......তা করব, কিন্তু!
........আবার, কিন্তু কিসের?
........মানে, আপনারা কি বিয়ের কথা বলতে আসছেন?
........ হ্যাঁ, এটা আবার বলতে হবে?
.........বাবার চিঠি পেয়েছিলেন?
........হ্যাঁ
........মানে, আপনারা তারপরেও আসছেন?
........মানে? উনিই তো আমাদের আসতে বলেছেন। আরও বলেছেন, আগে ছেলে দেখুন। তারপর আপনাদের ছেলে পছন্দ হলে, না হয় আপনার মেয়েকে দেখব।
........তো, তো,তো,তো,তো,তো,তো,তো,তো,
........তুমি তোতলা নাকি? তোমার বাবা তো বলেন নি।
-না, মানে।
- তোমার কি বিয়েতে মত নেই?
- কে বলেছে? ( রেগে)
- তুমি, যে ভাবে কথা বলছ, তাতে মনে হচ্ছে।
- আরে ধূ্স্ । কি ভাবে বোঝাব, বুঝতে পারছি না।
- কি বোঝাবে?
- বাবার চিঠি পেয়েছেন?
- হ্যাঁ, বললাম তো!
- তারপরেও আসছেন?
- না আসার কি আছে? উনি সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ওই চিঠিতে।
- ও! ঠিক আছে, আপনারা আসুন। সব বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি।
পুরো কেসটা
হজম করতে টাইম নিয়েছিল। এখনও শিউরে উঠি।
বলে রাখি, বাবা কিন্তু
সত্যি সত্যি ওই চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
কিন্তু, ওই চিঠির ওপরে আরও একটা চিঠি ছিল।
অনুজকল্পেষু,
পত্রের, নীচের পত্র খানি, আমার জেষ্ঠ্য পুত্রকে ভীতি প্রদর্শন করাইবার হেতু লিখিয়াছি।
আপনার কন্যার রাশিচক্র বিচার করিয়াছি। সর্ব্বতো ভাবে রাজযোটক। কিন্তু, বর্তমান যুগ, বিজ্ঞানের যুগ। উভয়ের অসৃক( রক্ত) পরীক্ষা করিয়া যদি, কোনরূপ বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত না হয়, তবে এই বিবাহ হইবেই।
আমার পুত্রের অসৃক পরীক্ষার সমুদায় সারণী, অত্র পত্রের সহিত প্রেরণ করিলাম।
শুনিয়াছি, আপনার শ্যালক, ইংলণ্ডীয় মতে বড় চিকিৎসক। দেখাইয়া লইবেন।
আসিবার সময়, আপনার কন্যার অসৃক পরীক্ষার সমুদায় সারণী আনিবেন। আমি আর কন্যা দেখিতে যাইব না। পুত্রই যাইবে।
আমি নিশ্চিত, আপনার কন্যাকে আমার পুত্রের পছন্দ হইবে।
শুধু, অনুরোধ; বাটির কোন নিভৃত কক্ষে, তাহাদের কথোপকথনের সুযোগ দিবেন।
ভবদীয়
...........
বাবার এই রসিকতা আর বিজ্ঞান চেতনায়, আমি স্তব্ধবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু, ওই চিঠির ওপরে আরও একটা চিঠি ছিল।
অনুজকল্পেষু,
পত্রের, নীচের পত্র খানি, আমার জেষ্ঠ্য পুত্রকে ভীতি প্রদর্শন করাইবার হেতু লিখিয়াছি।
আপনার কন্যার রাশিচক্র বিচার করিয়াছি। সর্ব্বতো ভাবে রাজযোটক। কিন্তু, বর্তমান যুগ, বিজ্ঞানের যুগ। উভয়ের অসৃক( রক্ত) পরীক্ষা করিয়া যদি, কোনরূপ বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত না হয়, তবে এই বিবাহ হইবেই।
আমার পুত্রের অসৃক পরীক্ষার সমুদায় সারণী, অত্র পত্রের সহিত প্রেরণ করিলাম।
শুনিয়াছি, আপনার শ্যালক, ইংলণ্ডীয় মতে বড় চিকিৎসক। দেখাইয়া লইবেন।
আসিবার সময়, আপনার কন্যার অসৃক পরীক্ষার সমুদায় সারণী আনিবেন। আমি আর কন্যা দেখিতে যাইব না। পুত্রই যাইবে।
আমি নিশ্চিত, আপনার কন্যাকে আমার পুত্রের পছন্দ হইবে।
শুধু, অনুরোধ; বাটির কোন নিভৃত কক্ষে, তাহাদের কথোপকথনের সুযোগ দিবেন।
ভবদীয়
...........
বাবার এই রসিকতা আর বিজ্ঞান চেতনায়, আমি স্তব্ধবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
1 comment:
asadharon .. ramkrishna da...
..
Post a Comment