Friday, August 29, 2014

গোমাংস

গোমাংস খাওয়া নিয়ে প্রচুর তর্ক বিতর্ক হয়েছে । তাই কয়েকটা কথা বলি । অনেকেরই ধারণা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গোমাংস খায় না বা খেত না । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ।
প্রথমেই বলি, সংস্কৃতে একটা প্রাচীন শব্দ আছে । গো-সঙ্খ্য। এই শব্দটার অর্থ হলো- গো পরীক্ষক । পরে অর্থ সঙ্কুচিত হয়ে গোপহয়েছে ।
এই পরীক্ষা কেন হতো ? কারণ, আর কিছুই না , যে বলদ বা ষাঁড়কে কাটা হবে, তার স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখার জন্য । না পরীক্ষা হলে, সেই মাংস মানুষের জন্য খারাপ হতে পারে ।
মাংস তিন প্রকার :-
ভূচর ( যারা ভূমিতে চরে )
খেচর ( যারা আকাশে ওড়ে )
জলচর ( যারা জলে বিচরণ করে )
এক জলচর বাদে, স্ত্রী- পশু বধ নিষিদ্ধ ছিল, কারণ তাতে প্রজনন কমে যাবে । মাছেদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা শক্ত বলেই হয়তো, এই ব্যাপারটা হয়েছিল ।
বৌদ্ধ যুগের আগে , হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতো এ তথ্যও অনেকেই জানেন।
ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত অনেক গ্রন্থে, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জাতি গঠনে বাধাগ্রন্থে উল্লেখ আছে।
এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ণ থেকে যেতো ।
তাই অতিথির আর এক নাম গোঘ্ন ।
বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের সময় থেকে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। সুতরাং বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ২০০০ বছর আগে হলেও গো-হত্যা আরও অনেক পরে নিষিদ্ধ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সম্রাট অশোকের নিষেধাজ্ঞা হিন্দুরা মানছে কেন?
এটাও ধর্মীয় সংঘাতের ফল । বৌদ্ধ ধর্ম এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচুর লোক, বিশেষ করে তথাকথিত নীচ জাতিআকৃষ্ট হয়েছিল, এই ধর্মের প্রতি ।
ব্রাহ্মণ্য বাদী এবং ব্রাহ্মণরা প্রমাদ গুনলো । তারাও পুরোপুরি মাছ- মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভেক ধারী হয়ে গেল ।
মূলত, এটা উত্তরভারতেই হয়েছিল । তাই এখনও ওটা গো- বলয়
বেশীদিনের কথা নয়, আলিবর্দির সময়ে রামপ্রসাদের গুরু কৃষ্ণা নন্দ আগম বাগীশ একটা বই লেখে। নাম বৃহৎ তন্ত্রসার ।
এতেও অষ্টবিধ মহামাংসের মধ্যে গোমাংস প্রথম বলেই বলা হয়েছে ।
ঋগ্বেদে ফিরে আসি । কি দেখছি ? প্রথম মণ্ডলের ১৬৪ সূক্তের ৪৩ নং শ্লোকে বৃষ মাংসের খাওয়ার কথা আছে । মহিষ মাংসের উল্লেখ আছে পঞ্চম মণ্ডলের ২৯ নং সূক্তের ৮ নং শ্লোকে ।
মোষ বলি আজও হয় । নেপালে যারা মোষের মাংস খায়, তাদের ছেত্রী বলা হয় ।
এছাড়া, বনবাস কালে রামচন্দ্রের লাঞ্চের মেনু কি ছিল, অনেকেরই জানা নেই ।
তিন রকম মদ ( আসব ) গৌড়ী, ( গুড় থেকে তৈরি ) পৌষ্টি, ( পিঠে পচিয়ে তৈরি ) মাধ্বী ( মধু থেকে তৈরি ) । এর সঙ্গে প্রিয় ছিল- শূলপক্ব গোবৎসের মাংস ।
বিশ্বাস না হলে রামায়ণ পড়া উচিত । রামকে যদি কল্প চরিত্র বলেও ধরি, তাহলেও এই গুলো তখনকার খাদ্যাভ্যাসের নমুনা ।
The earliest surviving description of mead is in the hymns of the Rigveda,
Rigveda Book 5 v. 43:3–4, Book 8 v. 5:6, etc ))


2 comments:

Anonymous said...

এত তথ্য আমার সত্যি জানা ছিল না। ভীষণ উপকার করলেন। কথাপ্রসঙ্গে এই রেফারেন্স অন্ততঃ ব্যবহার করতে পারব (যদিও এটা জানি যে, মানুষের সাথে আর কথা বলা যাচ্ছে না। হয়ত মেরেই দিতে পারে। ভীষণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে মানুষ যদিও তারা জানে না যে, রাষ্ট্রযন্ত্র আসলে তাদের অসহিষ্ণু ও অস্থির করে দিয়েে নেপোয় দই মারছে)।
আমি এটুকু বুঝি, প্রকৃতি আমাকে খেতে যা যা দিয়েছে, আমি তো তা খাবই। বিষ তো আর খাচ্ছি না!
দিনাজপুর।

প্রসাদ চক্রবর্ত্তী।
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর।

Unknown said...

সুলিখিত প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ধন্যবাদ! তবে আমার মনে হয় গোহত্যা নিষেধের কারণটা শুধু অশোক নয়, হয়ত গোরু এত কিছু দিয়ে থাকে বলেও তাকে ছাড়া দেয়ার কথা ভেবেছিল ব্রাহ্মণরা!