Sunday, March 8, 2015

টুকরো – টাকরা -৭

প্রমোদ হাঁপাচ্ছে । কপাল চাপড়ে বলল – টিপিনের প্যাকেটটা পড়ে গেল এই সকালবেলা ! ইস্, গরম পুরি আর আলুর তরকারি ছিল প্যাকেটটাতে । খেতে তো হবে কিছু ! নামবো তো সেই বেলা ১১ টায় ।

বলি- তুমি পড়ে গেলে কি হতো ? রাখো তোমার টিপিন !

ওদিকে ভেস্টিবিউল দিয়ে রেলের লোক বেরেকপাষ্ট বলে মার্চ পাষ্ট করতে করতে আসছে !
তাই সই ! কিনে নিলাম, তিন প্যাকেট ! ৪০ টাকা করে প্রতিটা ! বেশ ঢাউস সাইজ,প্যাকেটগুলোর !

খুলে দেখি:- শুকতলার মত পাঁউরুটি দু পিস, তাতে  একটুকু ছোঁয়া লাগে টাইপের অদৃশ্য মাখন আর  ছেঁড়া শাড়ীর মত জ্যালজেলে মামলেট ! পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা- কাঁহি উধার ফলেন্, কাঁহি ইধর ফলেন‌্ ।
প্যাকেটের এক কোণে পড়ে আছে ওগুলো ! মনে হচ্ছে, বিশাল কড়াইয়ের মধ্যে দু পিস রসগোল্লা, চোখ মারছে ।

চাও উঠেছে ! ডিপ ডিপ চা ! ও বলল – মুড়ি উঠবে, ঘাবড়াবেন না !


খেয়ে টেয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য উঠতে যাবো, দেখি কয়েকটা মুশকো আরপিএফ্ টহল দিচ্ছে কামরার এদিক সেদিক । সন্দেহের নজর আমাদের দিকে !
এদিকে প্রায় ১২ ঘন্টা নো সিগারেট ! মাথা পাঁই পাঁই করে ঘুরছে ! মনে হচ্ছে, প্লেনে বসে আছি আর সেটা এয়ার টারবুলেন্সে পড়েছে !
অন্নচিন্তা চমৎকার, বস্ত্রচিন্তা নৈরাকার (নৈরাকার = একাকার)
তার চেয়ে বেশী চিন্তা, তামাক নাই যার


কি আর করা !
 ঢিকির  ঢিকির করে ট্রেনের শিলিগুড়ি জংশনে প্রবেশ । কোচ অ্যাটেনডান্ট এসে   সাইরেনের মত বলল – অল ক্লিয়ার !
জাপানী বোমারু প্লেন গুলো চলে গেল তালে ?
এখানে প্লেন এলো কোথায় ? কোচ অ্যাটেনডান্ট বিস্মিত ‍!

ওটা বুঝলেই তো পাগলে সারে – আমার জবাব !
যাই হোক, ফুকু ফুকু করে এসে প্রমোদের সঙ্গে আড্ডা জমল ।

ভারতের ব্যাপারে একটা অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি । কথা বলার সময়, সবাই ইণ্ডিয়া বলে ।


কোলকাতা মুখি বাস যখন উত্তর বঙ্গ থেকে ছাড়ে, যে কোনো লোককে জিজ্ঞেস করবেন , বলবে ক্যালক্যাটা বাস ।

যাই হোক, পশ্চিমবঙ্গের শহর জয়গাঁ হচ্ছে “ইণ্ডিয়া”র বর্ডার ভূটানের পথে । জয়গাঁ যেমনই অগোছালো, তেমনই গোছানো ভুটানের প্রথম শহর ফুণ্টশোলিং !
থিম্পু বা পারো যেতে হলে, পারমিট লাগবে । দমদমের মল রোডের ভুটান হাউস থেকেও করিয়ে নিতে পারেন বা ফুণ্টশোলিংয়েও করাতে পারেন বেড়াতে যেতে গেলে।
অনেকেই জয়গাঁয় এক রাত্তির থেকে পারমিট করিয়ে নেন । ফুণ্টশোলিংয়েও থাকতে পারেন, তবে হোটেল খরচা বেশী ।
এপার , ওপার করাটা কোনো ব্যাপারই না ।

 জয়গাঁর হোটেল কস্তুরী বেশ ভালো । যারা বাঙালি খাবার খেতে চান, তাঁরা এখানে ভালো খাবারও পাবেন । থাকার বন্দোবস্তও খারাপ না ।

অবশ্য অন্য হোটেলও প্রচুর আছে, তবে প্রমোদের দেখলাম, হোটেল কস্তুরিটাই বেশী পছন্দের ।

ফুণ্টশোলিং থেকে থিম্পু যেতে পারেন বাস বা গাড়ী ভাড়া করে । দূরত্ব  মোটামুটি ১৫৩ কিমি মত ।

সিজন টাইমে গাড়ী ভাড়া আড়াই হাজার থেকে তিনহাজার টাকা । আর বাসে সেটা  ২০০ টাকা মত । বেশীর ভাগই ২০ সিটের তবে ৫০ সিটের বাসও আছে ।
গাড়ীতে লাগবে সাড়ে চার ঘন্টা থেকে পাঁচ ঘন্টা আর বাসে প্রায় ৭ ঘন্টা ।

ফেব্রুয়ারী ২১ থেকে ২৮- এই এক সপ্তাহে, ভুটানে আপনি কোনো আমিষ খাবার পাবেন না ।

কারণ,  ফেব্রুয়ারী ২১ হচ্ছে ভুটানের রাজার জন্মদিন । থিম্পুর হোটেল গুলোতে তাই মাংস ফ্রিজে রাখা থাকে, পরে যখন খাবেন, তখন কিন্তু একেবারে ছিবড়ে ।

ফুণ্টশোলিংয়ে কিন্তু এই এক সপ্তাহের জন্য মাংস জমিয়ে রাখা হয় না, কারণ জয়গাঁ থেকেই টাটকা মাংস আনা যায়, নিষেধাজ্ঞা ফুরোলেই ।

চিকেন আপনি পাবেন তবে গোমাংস আর বরাহমাংসের কদর বেশী সারা ভুটান জুড়ে।

ছবির মত শহর থিম্পুতে বেশীর ভাগ হোটেলেই চিকেন দুর্লভ । ভুটানে আইন শৃঙ্খলা দেখার মত ।
পুলিশ ওখানে ভারি সক্রিয় ।

একটাও ভিখিরিকে প্রকাশ্যে দেখতে পাবেন না রাস্তায় । সারা ভুটানে মদ খুব সুলভ, কিন্তু সিগারেট খাওয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ ।
তবে লুকিয়ে বিক্রি যে হয় না, তা নয় । আর হোটেলে একটা স্মোকিং জোনে খাওয়া যায় ।

পাবও আছে । মাতাল হলে মদ আর দেবে না । বেঁগড়বাই করলে ঘাড় ধরে বার করে দেবে ।

ট্রেনে যেতে গেলে, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে গিয়ে হাসিমারাতে নামা ভালো ।

ওখান থেকে, জয়গাঁ ১৮ কিমি । যেতে লাগে আধঘন্টা ।

প্লেনে গেলে, ড্রুক বা ভুটান এয়ারলাইন্সে থিম্পু যেতেই পারেন ।

এই সব আড্ডাতেই কেটে গেল সময় । দলগাঁও তে ট্রেন ঢুকছে । এর পরই হাসিমারা ।

আমরা সবাই নামবো এখানে ।

গৌতম ফোন করে জানালো- গাড়ী নিয়ে ও ষ্টেশনেই আছে । গাড়ী আধঘন্টা লেট ।











No comments: