Sunday, March 22, 2015

মনের ছিটমহল -৬

মনের ছিটমহল -৬
+++++
প্রত্যেক মানুষের একটাই জীবন এবং সেই জীবনে অভিজ্ঞতা হয় প্রচুর । অতীতের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে সেই সব কথা , মননে এবং মস্তিস্কে ।
কখনও বা চাপা পড়ে থাকে, সাধারণ ভাষায় যাকে বলে ভুলে যাওয়া । মনে পড়ে যায়, কখনও কেউ উস্কে দিলে ।
বাচ্চা বয়স থেকে কৈশোর বেয়ে যৌবন তারপর প্রৌঢ়ত্ব এবং বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা একটা অবশ্যম্ভাবী ক্রম ।
আনন্দ, শোক, দুঃখ সব মিলে মিশে একটা মানুষ মিলিয়ে যায়, কালের গহ্বরে ।
পেছনে পড়ে থাকে অজস্র বন্ধু, আত্মীয় পরিজন ।
যাঁরা কীর্তিমান, তাঁদের কথা লেখা থাকে ইতিহাসে । যারা অখ্যাত তারা থাকে কিছু মানুষের স্মৃতিতে ।
তারপর সেই মানুষগুলোও যখন হারিয়ে যায়, মহাকালে সবাই একজন করে নেই মানুষ হয়ে যায় ।
এই উপমহাদেশে কত নেই মানুষ হারিয়ে গেছে, মহাকালের গহ্বরে ।
ঘটমান বর্তমানে আমরা বুঝতে পারি না অনেক কিছুই । ইতিহাসের সাক্ষী থেকেও বুঝতে পারি না তার মহত্ব বা দোষ গুণ ।
বুঝতে পারিনা কখন ইতিহাসের সমান্তরালে হাঁটছি আমরা আর ধীরে ধীরে হয় ভালো নয় খারাপের ছাপ আমাদের ওপর পড়ছে ।
আমি ইতিহাসবিদ নই তবু কুঁজো হিসেবে মাঝে মাঝে চিৎ হবার শখ তো জাগেই ।
আজকাল চোখ বন্ধ হলেই মনে হয়, অন্ধকার এক লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
সামনে দিয়ে ঝমঝম করে ছুটে যাচ্ছে মেল ট্রেন। ইঞ্জিনটা কখনও ডাবলু পি ষ্টীম ক্যানাডিয়ান, কখনও বা ডিজেল বা হালের ঝকঝকে ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ।
কামরা গুলো শনশন করে বেরিয়ে যায়, আলো আর আঁধার; পিচকিরি দিয়ে ছিটিয়ে।

অনেকবার চেষ্টা করেছি, কটা কামরা আছে দেখতে, কিন্তু গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া আমার সারা জীবনভর হয় নি।
তাই আর গোনাও হয় না।অন্ধকার জাঁকিয়ে বসে, ট্রেন চলে যাবার পর। তখন হু হু করে মন। ধূ ধূ করা কাকে বলে, হাড়ে হাড়ে বুঝি।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশানেই আজকাল আ্যালপ্রাজোলাম খাই। তা প্রায় নয় বছর হয়ে গেল। ঘুমের ওষুধের মৃদু ঝাঁকুনিতে, শরীর টা মনে হয় ট্রেনের কামরাতেই আছে।
ডাবলু পি ষ্টীম ক্যানাডিয়ান ইঞ্জিনে টানা মেল ট্রেনটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। সামনেই একটা কামরা! প্রতিটা জানলায় জ্বলছে আলো।
-----
রাতের খাবারে ছিল- বড় বড় কই মাছের ঝোল, ডাল আর আলু ভাজা । সানকীতে রাখা লাল চালের ভাত থেকে এক মনমাতানো সুগন্ধ । পাশে আর একটা কাঁচের বড় সুন্দর রেকাবীতে রাখা বেশ কয়েকটা দানাদার ।
সাতক্ষীরায় এসে দানাদার না খাওয়া আর দোজখে যাওয়া নাকি একই ব্যাপার।
খাও খাও বাপজানেরা , যশুরে কই । মাথা মোটা হয় এদের । আমাদেরও তো লোকে বলে যশুরে কই ।
হা হা করে প্রাণ খোলা হাসি হাসান সাহেবের ।
বোজসো ! এবারে তো ধান ভাল করে রুইতেই পারি নাই ! কষ্ট করে খাও ।
গোবিন্দের রান্না করা মশুর ডালটা বেশ ঘন। ওপরে কাঁচা সরষের তেল হালকা করে ছেটানো । কুচি করা পেঁয়াজ আর দুটো করে কাঁচালঙ্কা সানকির এক পাশে রাখা ।
ডাল দিয়ে ভাত মেখে মুখে দিতেই জিভে অমৃতের স্বাদ । সারাদিন পেটে ভালো করে ভাত পড়ে নি কারও সেরকম ভাবে ।
ছোটমামা মুশুরের ডাল খেতে খুব ভালোবাসে । একটু করে মাখা ভাত মুখে দিচ্ছে আর কচর মচর করে পেঁয়াজ চিবোনোর শব্দ ।
আমাদের চার সানকি ভাত নিমেষেই উধাও প্রত্যেকের পেটের ভেতর ।
জলিল ভাই আমাদের খাওয়া দেখে বলল :- ভয় নেই । প্রচুর ভাত আছে।

(চলবে)

1 comment:

Samir Kumar Biswas said...

এগুলোতো ফেসবুকে আগেই পড়েছি ৷ আবার পড়ে আবারও দারুন ভাল লাগল ৷
তবে এইটার শিরোনামটা ভুল হয়ে গেছে ৷ হবে মনের ছিটমহল -৬ , কিন্তু হয়ে গেছে মনের ছিটমহল -৭ ! মানে সাত দুবার হয়ে গেছে ৷