ভারতে অর্থনৈতিক বর্ষ শেষ হয় মার্চে । শেষের দিকে প্রচণ্ড কাজের চাপ থাকে সবারই !
ছুটি ছাটা পাওয়া খুবই কষ্টকর । তখন সদ্য নতুন
বেচুবাবুর চাকরি । কটকে পোষ্টেড ।
সলিল মুখার্জ্জী (
খাস কোলকাতার কাঁকুলিয়াতে বাড়ী ) এবং কমল তরফদার (বালুরঘাট) আমার সহকর্মী ।
জোৎস্নাময় দাসগুপ্ত আমাদের ওপরওয়ালা ।
বালেশ্বরে, মা-বাবা থাকেন- ভাই বোন সহ ।
আমার টার্গেট যা ছিল- সেটা পূরণ করে ফেলেছি । জোৎস্নাদার কাছে ছুটির দরখাস্ত দিতেই বললেন :- এখনই তোর ছুটির দরকার পড়লো?
আমার টার্গেট যা ছিল- সেটা পূরণ করে ফেলেছি । জোৎস্নাদার কাছে ছুটির দরখাস্ত দিতেই বললেন :- এখনই তোর ছুটির দরকার পড়লো?
মানে,
বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে । যাই, ঘুরে আসি ।
তুই গিয়ে কি উপকার করবি ?
আমি, আবার কি করবো ! দেখি আসি ঐ দেশটাকে । আমার তো
জন্মস্থান, তাই নষ্টালজিয়া ।
ঠিক আছে, আমাদের জন্য একটা করে পতাকা আনিস ওই দেশের,
বুঝলি ?
হ্যাঁ বলতেই
দশদিনের ছুটি মঞ্জুর ।
অফিসের বাকি ষ্টাফেরা ওডিয়া । আমি, সদ্য জন্মানো
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে যাবো শুনে তারাও উত্তেজিত ।
সেদিন রাতেই পুরী এক্সপ্রেস ধরে সোজা কোলকাতায় । মাঝে
আর বালেশ্বরে নামি নি, যেটা হরহামেশাই করতাম ।
বাবা বাধা দিতে পারেন – ভয় পেয়ে ।
বাঘাযতীনে, পরিমলদা জুটে গেল দলে । পরিমলদারও নতুন
চাকরি- কাটছি মাটি দেখবি আয় ( সি.এম.ডি.এ) আপিসে । ছোটমামার বন্ধু ।
ছোটমামাতো
ছিলই, আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় । তখন
জাষ্ট এম.বি.বি.এস পাশ করেছে বা করবে
করবে, সেই সময় ।
আর ছিল সত্যদা । আমরা সবাই বন্ধুর মত ।
বাস থাকলেও আমরা একটা গাড়ী ভাড়া করে গিয়েছিলাম বসিরহাট দিয়ে টাকী পর্যন্ত।
রিফিউজী ক্যাম্পে ভর্তি সব লোকজন । প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক । পৌঁছতে রাত হওয়ায় সেখানে খাবার নেই কোনো দোকানেই । অনেকেই অসুখে ভুগছেন । স্থানীয় প্রশাসনের ভয়, যে কোনো রোগ মহামারী আকার ধারণ করতে পারে ।
বাস থাকলেও আমরা একটা গাড়ী ভাড়া করে গিয়েছিলাম বসিরহাট দিয়ে টাকী পর্যন্ত।
রিফিউজী ক্যাম্পে ভর্তি সব লোকজন । প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক । পৌঁছতে রাত হওয়ায় সেখানে খাবার নেই কোনো দোকানেই । অনেকেই অসুখে ভুগছেন । স্থানীয় প্রশাসনের ভয়, যে কোনো রোগ মহামারী আকার ধারণ করতে পারে ।
আরও একটা ভয়- অনেক রাজাকারও ভয়ে ওপার থেকে শরণার্থী
সেজে এসেছে । সেটাও মাথাব্যাথার কারণ প্রশাসনের কাছে ।
এদিকে কেউ প্রচুর টাকা কামিয়ে নিচ্ছে । একটা ঘটনা শুনলাম । এক আত্মীয়ের কাছে ওপার থেকে লুকিয়ে আনা গয়না রেখেছিলেন এক শরণার্থী ।
এদিকে কেউ প্রচুর টাকা কামিয়ে নিচ্ছে । একটা ঘটনা শুনলাম । এক আত্মীয়ের কাছে ওপার থেকে লুকিয়ে আনা গয়না রেখেছিলেন এক শরণার্থী ।
পরের দিন সকালে সেই গয়না বেচে টাকা করার জন্য ওগুলো
চাইলে- বেমালুম অস্বীকার করেন সেই আত্মীয় ।
সব হারানোর শোকে তখন সেই ভদ্রলোক পাগল । স্বেচ্ছাসেবকরা গিয়ে আড়ং ধোলাই দিতেই শুড়সুড় করে বের হয় গয়না গুলো ।
এরকম কত ঘটনা যে এখনও অজানা ।
সব হারানোর শোকে তখন সেই ভদ্রলোক পাগল । স্বেচ্ছাসেবকরা গিয়ে আড়ং ধোলাই দিতেই শুড়সুড় করে বের হয় গয়না গুলো ।
এরকম কত ঘটনা যে এখনও অজানা ।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তখন আকাশছোঁয়া বসিরহাট
আর টাকীতে । তার জের, কোলকাতাতেও ।
আবেগ ছাড়িয়ে সকলেরই তখন বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ।
আবেগ ছাড়িয়ে সকলেরই তখন বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ।
এপারে তখন নতুন করে শরণার্থীদের ওপর ক্রোধ, ঘৃণা ।
তার মধ্যে আবার ওপার থেকে আসা ৪৭ য়ের লোকজনও আছে ।
২৪ বছরেই এক নতুন
রাষ্ট্রের জন্ম- সকলেই ভালো ভাবে নেয় নি জীবন জীবিকার কারণে ।
তখনও লোকে জানে না, নতুন করে ট্যাক্স বসতে চলেছে, সারা ভারতের নাগরিকদের ওপর ।
========
তখনও লোকে জানে না, নতুন করে ট্যাক্স বসতে চলেছে, সারা ভারতের নাগরিকদের ওপর ।
========
একটা দোকানে ডিম আর পাঁউরুটি ছিল । সেঁকা রুটি আর
ওমলেট দিয়ে পেট ভরালেও ভাতের অভাব বোধ
করছিলাম আমরা সকলেই ।
মুক্তি যোদ্ধাদের তরফ থেকে একটা সাদা কাগজে ষ্টাম্প মেরে ওপারে যাওয়ার অনুমতি মিলছিল ।
মুক্তি যোদ্ধাদের তরফ থেকে একটা সাদা কাগজে ষ্টাম্প মেরে ওপারে যাওয়ার অনুমতি মিলছিল ।
খুব একটা বেগ
না পেলেও সেটা যোগাড় করা গেল ।
রাতে থাকবো কোথায়- এই নিয়ে চিন্তা !
অনেক খোঁজাখুঁজি করে একজনের বাড়ীতে থাকার ব্যবস্থা
হলো কোনো রকমে । তখনকার দিনে তিনি ত্রিশ
টাকা নিয়েছিলেন এক রাত থাকার জন্য ।
তখন তো আর প্যাকেজড্ ড্রিকিং ওয়াটার ছিল না ।
তখন তো আর প্যাকেজড্ ড্রিকিং ওয়াটার ছিল না ।
নলকূপের জলই ভরসা ।
ডাক্তার ছোটমামার খুঁতখুঁতানি জল খাবার ব্যাপারে । একটু কর্পূর যোগাড় করে জলে খানিকক্ষণ ফেলে রেখে ঐ জল খাওয়া ।
মন্দের ভালো ।
ডাক্তার ছোটমামার খুঁতখুঁতানি জল খাবার ব্যাপারে । একটু কর্পূর যোগাড় করে জলে খানিকক্ষণ ফেলে রেখে ঐ জল খাওয়া ।
মন্দের ভালো ।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment