Wednesday, March 11, 2015

নো

ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ( ফোন করার পর ওপার থেকে শোনা যাচ্ছে, ফোন করনেওয়ালার ফোনে)
-
রেকর্ডেড ভয়েসে
ওয়েলকাম টু আওয়ার সার্ভিসেস । ফর হিন্দি- প্রেস ওয়ান, ফর বেঙলি- প্রেস টু, ফর ইংলিশ - প্রেস থ্রি ।
ক্যাঁচ ( ২ টেপা হলো)
আমাদের পরিসেবায় আপনাকে স্বাগত । আপনার কলটি আমাদের ম্যানেজারের কাছে দেওয়া হচ্ছে । দয়া করে অপেক্ষা করুন ।
টুং টাং টাং ( বাজনা )
( পাঁচ মিনিট পর )
নমস্কার ! বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি ?
মানে, আমার বাথরুম পরিস্কার করাতে হবে ।
বেশ, আপনার বাথরুমে কমোড না ইণ্ডিয়ান ষ্টাইল ?
কমোড
ফ্ল্যাশ কাজ করে ?
না
বাথটাব আছে ?
না
কমোডের রঙ কি ?
যাঃ বাবা, রঙও বলতে হবে ?
হ্যাঁ, ওই বুঝে সার্ভিস চার্জ হবে ।
ও ! ইয়ে, মানে সাদা !
কল দিয়ে জল পড়ে ?
একটু একটু
প্রিপেইড কার্ড ভরেন নি, জলের জন্য ?
ভরেছি তো, এই তিনদিন হলো, তাও জল পড়ছে না !
আচ্ছা, দুঃখিত ! এটার জন্য আপনার চার্জ একটু কম হবে !
তা, মোট কত লাগবে ?
একটু দাঁড়ান ! সিস্টেমটা দেখে নেই !
----
আপনার টোটাল বিল হবে হাজার টাকা !
হাহাহা জার টাকা ?
আগে জমাদার এমনি লুঙ্গি পরে আসতো, এখন তো ট্রাউজার, শার্ট আর টাই পরে যাবে, এটা তো লাগবেই !
এত পারবো না, খরচের ধাক্কায় জেরবার !
বাঁচার ইচ্ছে নেই আপনার ?
না !
তাহলে, একটা অ্যাডভাইস দিচ্ছি ফ্রিতে !
কি বলুন তো?
আমাদের চলন্ত বুলেট ট্রেনের সামনে চোখ বন্ধ করে দাঁড়াবেন, এক সেকেণ্ডের একটু কষ্ট, তারপরেই আপনার জীবনটা কাঁসা !
ক্কি ?
হ্যাঁ আর আমাদের NO
NO মানে ?

New Opportunity , এটাই বর্তমান ভারতের আদর্শ । গুড ডে !

Sunday, March 8, 2015

টুকরো – টাকরা -৭

প্রমোদ হাঁপাচ্ছে । কপাল চাপড়ে বলল – টিপিনের প্যাকেটটা পড়ে গেল এই সকালবেলা ! ইস্, গরম পুরি আর আলুর তরকারি ছিল প্যাকেটটাতে । খেতে তো হবে কিছু ! নামবো তো সেই বেলা ১১ টায় ।

বলি- তুমি পড়ে গেলে কি হতো ? রাখো তোমার টিপিন !

ওদিকে ভেস্টিবিউল দিয়ে রেলের লোক বেরেকপাষ্ট বলে মার্চ পাষ্ট করতে করতে আসছে !
তাই সই ! কিনে নিলাম, তিন প্যাকেট ! ৪০ টাকা করে প্রতিটা ! বেশ ঢাউস সাইজ,প্যাকেটগুলোর !

খুলে দেখি:- শুকতলার মত পাঁউরুটি দু পিস, তাতে  একটুকু ছোঁয়া লাগে টাইপের অদৃশ্য মাখন আর  ছেঁড়া শাড়ীর মত জ্যালজেলে মামলেট ! পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা- কাঁহি উধার ফলেন্, কাঁহি ইধর ফলেন‌্ ।
প্যাকেটের এক কোণে পড়ে আছে ওগুলো ! মনে হচ্ছে, বিশাল কড়াইয়ের মধ্যে দু পিস রসগোল্লা, চোখ মারছে ।

চাও উঠেছে ! ডিপ ডিপ চা ! ও বলল – মুড়ি উঠবে, ঘাবড়াবেন না !


খেয়ে টেয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য উঠতে যাবো, দেখি কয়েকটা মুশকো আরপিএফ্ টহল দিচ্ছে কামরার এদিক সেদিক । সন্দেহের নজর আমাদের দিকে !
এদিকে প্রায় ১২ ঘন্টা নো সিগারেট ! মাথা পাঁই পাঁই করে ঘুরছে ! মনে হচ্ছে, প্লেনে বসে আছি আর সেটা এয়ার টারবুলেন্সে পড়েছে !
অন্নচিন্তা চমৎকার, বস্ত্রচিন্তা নৈরাকার (নৈরাকার = একাকার)
তার চেয়ে বেশী চিন্তা, তামাক নাই যার


কি আর করা !
 ঢিকির  ঢিকির করে ট্রেনের শিলিগুড়ি জংশনে প্রবেশ । কোচ অ্যাটেনডান্ট এসে   সাইরেনের মত বলল – অল ক্লিয়ার !
জাপানী বোমারু প্লেন গুলো চলে গেল তালে ?
এখানে প্লেন এলো কোথায় ? কোচ অ্যাটেনডান্ট বিস্মিত ‍!

ওটা বুঝলেই তো পাগলে সারে – আমার জবাব !
যাই হোক, ফুকু ফুকু করে এসে প্রমোদের সঙ্গে আড্ডা জমল ।

ভারতের ব্যাপারে একটা অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি । কথা বলার সময়, সবাই ইণ্ডিয়া বলে ।


কোলকাতা মুখি বাস যখন উত্তর বঙ্গ থেকে ছাড়ে, যে কোনো লোককে জিজ্ঞেস করবেন , বলবে ক্যালক্যাটা বাস ।

যাই হোক, পশ্চিমবঙ্গের শহর জয়গাঁ হচ্ছে “ইণ্ডিয়া”র বর্ডার ভূটানের পথে । জয়গাঁ যেমনই অগোছালো, তেমনই গোছানো ভুটানের প্রথম শহর ফুণ্টশোলিং !
থিম্পু বা পারো যেতে হলে, পারমিট লাগবে । দমদমের মল রোডের ভুটান হাউস থেকেও করিয়ে নিতে পারেন বা ফুণ্টশোলিংয়েও করাতে পারেন বেড়াতে যেতে গেলে।
অনেকেই জয়গাঁয় এক রাত্তির থেকে পারমিট করিয়ে নেন । ফুণ্টশোলিংয়েও থাকতে পারেন, তবে হোটেল খরচা বেশী ।
এপার , ওপার করাটা কোনো ব্যাপারই না ।

 জয়গাঁর হোটেল কস্তুরী বেশ ভালো । যারা বাঙালি খাবার খেতে চান, তাঁরা এখানে ভালো খাবারও পাবেন । থাকার বন্দোবস্তও খারাপ না ।

অবশ্য অন্য হোটেলও প্রচুর আছে, তবে প্রমোদের দেখলাম, হোটেল কস্তুরিটাই বেশী পছন্দের ।

ফুণ্টশোলিং থেকে থিম্পু যেতে পারেন বাস বা গাড়ী ভাড়া করে । দূরত্ব  মোটামুটি ১৫৩ কিমি মত ।

সিজন টাইমে গাড়ী ভাড়া আড়াই হাজার থেকে তিনহাজার টাকা । আর বাসে সেটা  ২০০ টাকা মত । বেশীর ভাগই ২০ সিটের তবে ৫০ সিটের বাসও আছে ।
গাড়ীতে লাগবে সাড়ে চার ঘন্টা থেকে পাঁচ ঘন্টা আর বাসে প্রায় ৭ ঘন্টা ।

ফেব্রুয়ারী ২১ থেকে ২৮- এই এক সপ্তাহে, ভুটানে আপনি কোনো আমিষ খাবার পাবেন না ।

কারণ,  ফেব্রুয়ারী ২১ হচ্ছে ভুটানের রাজার জন্মদিন । থিম্পুর হোটেল গুলোতে তাই মাংস ফ্রিজে রাখা থাকে, পরে যখন খাবেন, তখন কিন্তু একেবারে ছিবড়ে ।

ফুণ্টশোলিংয়ে কিন্তু এই এক সপ্তাহের জন্য মাংস জমিয়ে রাখা হয় না, কারণ জয়গাঁ থেকেই টাটকা মাংস আনা যায়, নিষেধাজ্ঞা ফুরোলেই ।

চিকেন আপনি পাবেন তবে গোমাংস আর বরাহমাংসের কদর বেশী সারা ভুটান জুড়ে।

ছবির মত শহর থিম্পুতে বেশীর ভাগ হোটেলেই চিকেন দুর্লভ । ভুটানে আইন শৃঙ্খলা দেখার মত ।
পুলিশ ওখানে ভারি সক্রিয় ।

একটাও ভিখিরিকে প্রকাশ্যে দেখতে পাবেন না রাস্তায় । সারা ভুটানে মদ খুব সুলভ, কিন্তু সিগারেট খাওয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ ।
তবে লুকিয়ে বিক্রি যে হয় না, তা নয় । আর হোটেলে একটা স্মোকিং জোনে খাওয়া যায় ।

পাবও আছে । মাতাল হলে মদ আর দেবে না । বেঁগড়বাই করলে ঘাড় ধরে বার করে দেবে ।

ট্রেনে যেতে গেলে, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে গিয়ে হাসিমারাতে নামা ভালো ।

ওখান থেকে, জয়গাঁ ১৮ কিমি । যেতে লাগে আধঘন্টা ।

প্লেনে গেলে, ড্রুক বা ভুটান এয়ারলাইন্সে থিম্পু যেতেই পারেন ।

এই সব আড্ডাতেই কেটে গেল সময় । দলগাঁও তে ট্রেন ঢুকছে । এর পরই হাসিমারা ।

আমরা সবাই নামবো এখানে ।

গৌতম ফোন করে জানালো- গাড়ী নিয়ে ও ষ্টেশনেই আছে । গাড়ী আধঘন্টা লেট ।











Friday, March 6, 2015

টুকরো- টাকরা-৬

রাতে, শুয়ে পড়ার আগে, আপ্পারাও একটা গোল পাকিয়েছিল । ওর এই প্রথমবার শিলিগুড়ি আসা ।

 অফিসের কাউকে জিজ্ঞেস না করেই –  এজেন্সিকে দিয়ে শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে পড়েছে ।

একটা নামকরা সফ্ট ড্রিংক কোম্পানিতে আছে ও ।

মহেশ বলল – নিউ জলপাইগুড়ি নামাটাই ভালো । তর্ক জুড়ল আপ্পারাও ।

 ভাট ইজ দিস ? আই ভুইল গো টু শিল্লিগুড়ি, ভাই টু গেট ডাউন টু জলপাইগুড়ি ?

ইটস্ নিউ জলপাইগুড়ি, নট জলপাইগুড়ি !

নিউ অর ওল্ড ! ইট ইজ সেম ! আফটার অল জলপাইগুড়ি !

ইউ বেটার আস্ক ইউর পিপল, আপ্পারাও জী

অক্কে !

ফোনানোর পর জানল- নিউ জলপাইগুড়ি নামাটাই ভালো ।

সারি সারি, মহেশজী ! উ আর রাইট্ট্ ! ভি ভিল গেট ডাউন অ্যাট্ নিউ জলপাইগুড়ি।
মহেশ মুচকি হেসে নিজের বার্থে শুতে চলে গেল ।

রাতে টয়লেট যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে পড়লাম । দরজা খুলে দেখি, ট্রেন দাঁড়িয়ে মালদাতে ।

চকিতে, কত ঘটনা চলে গেল মনের ভেতর ফ্ল্যাশ ব্যাকে ।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরে এসে শুয়ে পড়লাম নিজের বার্থে ।

ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি, সকালের নরম রোদ, জানলার কাঁচ দিয়ে এসে পড়েছে বার্থে । পর্দা তোলাই ছিল ।

লোকজনের নামার ব্যস্ততা ! বুঝলাম ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি ঢুকছে । গতিও বেশ মন্থর।
হঠাৎ একজন আমাকে প্রণাম করল ।

ঘাবড়ে গিয়ে বললাম – একি করছেন ?

না না ! আপনি ক্ষণ জন্মা !

কেন কেন ?

আপনার নাকের গান সারা রাত্তির ধরে শুনেছি আমি এবং সারা কামরা ।কত রকম রাগ রাগিণী !  আহা,ডোভার লেনেও এই রকম শুনি নি !

আওয়াজ দিচ্ছেন ভাই ? না হয়, আমার নাক ডাকে !

ছি ছি ! আওয়াজ দেবো কেন ! আমার বাবা কাকারাও খানদানি নাক ডাকিয়ে ছিলেন, তবে আপনি  এই ব্যাপারে ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলি ! তারিফে কাবিল্ ! তোফা কবুল কিজিয়ে !

ছোকরা, ট্রলি ব্যাগ টেনে নিয়ে চলে গেল !

এদিকে আপ্পারাও আর মহেশও নেমেছে তাদের গন্তব্য স্থলে । ফোন নং দেওয়া নেওয়া সারা !
প্রমোদও নেমে জলখাবারের সন্ধানে প্ল্যাটফর্মে ।

আমি দরজাতে দাঁড়িয়ে । ট্রেন ছাড়ার সংকেত ! প্রমোদের দেখা নেই !

ট্রেন ছেড়েও দিল !

মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, প্রমোদের হাতে প্যাকেট নিয়ে দৌড় কামরার দিকে । ট্রেনের গতিও বেশ ভালো পিক আপ নিচ্ছে ।

কভি কামরা, কভি প্রমোদ ! কভি প্রমোদ , কভি কামরা

করে করে প্রমোদ উঠেই পড়ল ট্রেনে !


খুদা মেহের বান ! কামরার হাতল ধরতে গিয়ে টিপিনের প্যাকেটটাই পড়ে গেছে !

Thursday, March 5, 2015

টুকরো- টাকরা -৫



পৃথিবীতে যত ভাষা আছে, সে গুলো শেখা এক জন্মের কম্মো নয় । তবে, একটাই সর্বজনীন ভাষা আছে, নাক ডাকা ।
কত বিচিত্র যে তার তাল, লয়, মীড়, গমক, মূর্চ্ছনা, সে আর বলে শেষ করা যাবে না।
কবিতার ছন্দ থেকে শুরু করে গদ্যের সমাহিত ভাব, সবই উপস্থিত ।
জানি না, ভাষাবিদরা এই নাক ডাকাকে এসপারেন্তোর মত সর্বজনগ্রাহ্য ভাষা বলে স্বীকার করবেন কিনা, তবে করলে ভালো হয় ।
এটাও জানি না, পশু পাখীরা নাক ডাকে কিনা, তবে আমি বাইশ তেইশ বছর আগে আমার এক বন্ধুর বাড়ীতে তার পোষা বৃদ্ধ অ্যালসেসিয়ানের নাক ডাকা শুনেছিলাম, দিনের বেলা ।
মনে হলো দিন তো গেল, হরি পার করো আমারের সুরে, নাক ডাকছে তার । কালো নাসারন্ধ্র দুটো, তালে তালে নেচে নেচে- আয় মা শ্যামার বোল তুলেই যাচ্ছে ।
পেত্যয় করবেন কিনা, সেটা আপনাদের ব্যাপার, তবে নিজের কানের প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে ।
চিলে নিয়ে যায় নি এখনও আমার কানটা!
যাকগে, প্রসঙ্গে ফিরে আসি ।
খাওয়া দাওয়া চলছে ! আপ্পারাও পরমানন্দে চিবিয়ে চলেছে শুকনো পুরি আর আলু ভাজা, মাঝে আচারের টাকনা ।
আমরাও খেয়ে চলেছি অবিচ্ছিন্ন ভাবে । আমাদের নিয়ে যাওয়া চিকেন কষা আর প্রমোদের আনা চিকেন চাঁপের ফিউশন সুবাস, সারা কামরাকে মাতিয়ে রেখেছে ।
হ্যালো, দাদু- আমি মহেশ আগরওয়াল । আপনাদের সাথে পরিচয় করতে এলাম ।
নমস্কার, নমস্কার বসো ভাই বসো ! কিন্তু তোমার এই চিকেনের গন্ধ কি সহ্য হবে ?
কি যে বলেন দাদু ! ওই লোভেই তো এলাম ।
বলো কি হে ? মারওয়াড়ীরা তো এই সব সহ্য করতেই পারে না !
আরে দাদু, এখন সেই জমানা নেই আর, বুঝলেন ?
কি যাতা বলছো ?
ঠিক বলছি । আমার দিদি তো বিয়ে করেছে বাঙালিকে । দিদির তারপর থেকে মাছ ছাড়া ভাতই রোচে না মুখে !
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় !
দুঃখ কি জানেন ?
কি?
জামাই বাবুর সুন্দরী ছোট বোনটা পাত্তাই দেয় না আমাকে ।
কেন ?
বলে, তোমার সাথে প্রেম করবো কি, সারা গা দিয়ে তো ভঁয়সা ঘিয়ের বাজে গন্ধ !
তারপর, তারপর ? এতো ফেসবুকে রেজিয়াল কমেন্টের মত !
তারপর আর কি, ওকে আর্সেনেলের বিরিয়ানী, সাবিরের রেজালা, দিলখুসার কষা মাংস খাইয়ে আর নিজে খেয়ে একটু লাইনে আনতে পেরেছি ।
তোমার বাড়ীতে জানে, মানে তোমার এই খাবার ব্যাপারটা ?
চিকেন পক্স হলে কি আর চাপা দেওয়া যায় ?
উরি ত্তারা ! তা, মা বাবা কি বললে ?
কি আর বলবে ! আমাকে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে বলেছে, বিয়ের পর !
ত্যজ্য পুত্র করবে না তো ?
না না, সে চান্স নেই ! আমার মা তো বাঙালি, তবে খাওয়া দাওয়া সব নিরামিষ !
বাঙালি নারীর কি আত্মত্যাগ !
প্রেমে সব কিছু হয় দাদু ! তবে বলছিলাম কি, আমাকে এক পিস চিকেন আর একটু গ্রেভি দেবেন ? মা ঘি মাখানো রুটি আর মোটা লাল লঙ্কার আচার দিয়েছে, প্যাক করে । গলা দিয়ে নামছে না ! লজ্জার মাথা খেয়ে চাইলাম !
আহারে ! আগে বলবে তো ! নাও নাও !
থেংক্যু, থেংক্যু !
তারপর আর কি ?
আলো নিবিয়ে , পর্দা টেনে চললো আর্ন্তজাতিক ভাষায় কথা বার্তা

টুকরো- টাকরা-৪


আপ্পারাও সব দেখেশুনে বলল :- আইতে, ইদি মন্দু গুরিঞ্চি আউনাই আনি মাটা ।
 ( তাহলে, এই সব মদ খাওয়ার জন্য হয়েছে বলে মনে হচ্ছে- যদিও মন্দু মানে ওষুধ, তবে যোগরূঢ়ার্থে মদ)
না দাগ্গিরা কুডা উন্দি, তাগুতারা ?
( আমার কাছেও আছে, খাবেন নাকি?)

প্রমোদ ফিসফিস করে বলল আমায়:- ভাইনা, এঠি পিইলে এবে সবু মারিবে, রাতি ভি হেলানি। চালন্তু , খাইবা ।
( দাদা, এখানে খেলে এখন সবাই মারবে, রাতও হলো- চলুন খেয়ে নি )

আপ্পারাও বুঝতে না পেরে দৃশ্যত রেগে গেল ।
এমিটাণ্ডি, এমো চেপ্তুন্নারু মিরু ?
( এই যে, আপনারা সব কি বলছেন?)
 প্রমোদ :- মিরু শিলিগুড়ি এলতাড়ু গাদা ।অ্যাকড়া মন্দু তিসকোন্টে, ইউ আর ক্যারিং কোল টু নিউ ক্যাসেল । ইপ্পরু, পাদাণ্ডি- মিলস্ তিসকান্ডে বাগু
 ( আপনি তো শিলিগুড়ি যাচ্ছেন, ওখানে মদ নিয়ে যাওয়া আর নিউ ক্যাসেলে কয়লা নিয়ে যাওয়া একই ব্যাপার । চলুন খাবার খেয়ে নি )
-  আইতে পাদাণ্ডি
(তা হলে চলুন ।)

সিটে ফিরে, যে যার খাবার খুলে বসা গেল ।

আপ্পারাও বের করলো- শুকনো লুচি আর আলু ভাজা , সঙ্গে ঝাল আচার ।
প্রমোদ আর আমাদের ছিল চিকেন কষা আর ভাত এবং রুটি ।
 আপ্পারাও গন্ধ পেয়েই নাক কুঁচকালো ।
নেনু, ষ্ট্রিক্ট ভেজেটেরিয়ান্ । বাসম্ অস্তে, নাকু বান্তি ওস্তুন্দি
( আমি, শুদ্ধ নিরামিষাশী । গন্ধ এলেই আমার বমি আসে)

আমি বললাম – মিরু,  ব্যাঙ্গাল্ লো ওচ্চারু । রোজু চাপালু বাসম্ ওস্তায়ি

( আপনি বাংলায় এসেছেন- রোজই মাছের গন্ধ পাবেন)

আউনু-নেনু ইকড়া মারি পাদি রোজু উন্টে ছাছিপতানু
( ঠিক, এখানে আরও দশদিন থাকলে মারা যাবো)
প্রমোদ চুপি চুপি বলল :- আইঁগ্গা, ইয়ে মাছঅ খাউনি, হেলে অম্রুতর সন্ধান ইহাকু মিলি নি ।
( আজ্ঞে, এ ব্যটা মাছ খায়নি, অমৃতের সন্ধান এ পায় নি)

পাশের বার্থ থেকে হুংকার ভেসে এলো :- খাচ্ছেন খান ! আপনাদের কিচির মিচির বন্ধ করুন ।
জ্বালিয়ে মারল । কানে ধাপা ধরে গেল মাইরি
 প্রমোদ :- শলা, বঙালি মানে এমিতি হুয়ন্তি
( শালা বাঙালিরা, এইরকমই হয় )
বলেই, আমার দিকে তাকিয়ে জিভ কাটলো


Wednesday, March 4, 2015

টুকরো- টাকরা-৩



শেয়ালদা থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার ট্রেনের সিস্টেমটা এইরকম :-

টিটি, গার্ড এবং ড্রাইভার- যায়, শেয়ালদা থেকে মালদা । তারপর মালদায় পূর্ব রেলের এঞ্জিনও বদল হয় ।
তখন এঞ্জিন লাগানো হয়, পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের । গার্ড, টিটি, ড্রাইভারও বদল হয়ে যায় নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন পর্যন্ত ।

এঞ্জিন এক থাকলেও, এখানে আবার স্টাফ বদল হয় । যায়, টার্মিনাল ষ্টেশন পর্যন্ত ।

আমি মূলত দুটো ট্রেনের কথা বললাম – উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস আর কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস । এদের যাত্রাপথ শেষ হয়- যথাক্রমে, নিউ কোচবিহার আর আলিপুরদুয়ার জংশনে ।
তবে, কোচ অ্যাটেনডান্ট যায় টানা । কখনও এই ট্রেন তো কখনও ওই ট্রেন । ফলে, নিয়মিত যাত্রীদের এরা চেনে মোটামুটি ।
এটা না বললে, ঘটনাটা পরিস্কার হবে না ।

শুনেই হোক বা গ্লাসডোরের কাঁচের  ভেতর থেকে দেখে- কোচ অ্যাটেনডান্ট “মৃতদেহ”কে দেখেই বলল :-
উফ্ ! আর পারি না, এই ভিকিকে নিয়ে ।

কি কি হলো? সমবেত উৎকণ্ঠা ।

কি আর হবে ! এই ভিকি গুপ্তা সপ্তাহে দুবার করে আসে জয়গাঁ থেকে । ওখান থেকে হাসিমারা আধঘণ্টা মত । জয়গাঁ হলো ফুণ্ট সোলিংয়ের ঢোকার পথ ।
ব্যাটার দোকান আছে জয়গাঁতে । শেয়ালদার টাওয়ার হোটেলে বসে আকণ্ঠ মদ গেলে, কোলকাতায় সওদা পাতি করে ।
সময় হলেই ট্রেনে উঠেই বার্থে ঘুমিয়ে পড়ে । আগেই টিকিট তো ওর করাই থাকে ।
তারপর প্রায়ই বার্থ থেকে পড়ে যায়, তাও ব্যাটার ঘুম ভাঙে না ।
আমাকেই ভোগান্তি পোহাতে হয় সব । রড ঠিক করা, পর্দা সেলাই করা ! গালাগালিও খাই ওপরওয়ালার কাছে ।
বলেই টেনে একটা লাথি কসালো ওই ভিকি গুপ্তার পেছনে ।
কৌন মারা বে ? ভিকি এবারে উঠে বসলো ।

মৈঁনে- বিশুর জবাব (অ্যাটেনডান্ট)

ওহো ! ফির গির গয়া থা কেয়া মৈঁ ?
শালার ফিকির দেখো ! যেন হিন্দি সিনেমার স্মৃতিভ্রষ্ট নায়ক ! এক যাত্রী রেগে মেগে বললেন ।
আমরা ভাবছি – খুন, আর ব্যাটা কিনা  মাতাল ! সড়কি লাও, ব্যাটাকে সত্যিই খুন করেগা । সেই বৃদ্ধ বললেন ।
আমার কেন যেন ছিনাথের কথা মনে পড়াতে, ফিক করে হেসে ফেললাম ।
বৃদ্ধ রেগে কাঁই আমার ওপর !
হাসতা হ্যায় ? আপনি একঠো দামড়া ! সব কিলাকে কাঁঠাল পাকিয়ে দিলো, আর আপনি হাসতা হ্যায় ?







টুকরো- টাকরা-২


আপ্পা রাওয়ের ( তেলুগু ভদ্রলোক) দেওয়া কিং সাইজ সিগারেটটা যে পুরো খেতে পারবো না, সেটা বুঝি নি আগে ।

দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছিল । পায়ের লিগামেন্টে টান । একটু খেয়েই খোলা দরজা দিয়ে ফেলতেও মন চাচ্ছিল না, দামী সিগারেটটা ।

হঠাৎ দেখি, পাশের এসি থ্রি টায়ারের ভেষ্টিবিউল দিয়ে টিটি আসছে ।

সাড়ে সর্বনাশ ।

একে, পায়ে ব্যাথা তার ওপর টিটি ! পা দুটো থরথর করে কাঁপছে আমার ।

 টিটি এসেই কটমট করে তাকালেন ।

লজ্জা করে না আপনাদের , এভাবে সিগারেট খেতে ?

মানে, মানে

কিসের মানে ?

বুইলেন কিনা, সিগারেট খাওয়া যে ট্রেনে মানা, সেটা জানি তবে ওই !

 কিসের ওই ? জানেন, আমার সিগারেট কেনা হয় নি !  আমাকে কে দেবে ?

আপ্পারাওকে বললাম দিতে । প্রমোদ ফিক ফিক করে হাসছে তখন ।

আপ্পারাও দিতেই ঈগলের মত ছোঁ মেরে নিলেন, টিটি মহাশয় ।

আমিও মায়া ত্যাগ করে আমার সিগারেটটা ফেলতে যাবো, টিটি হাঁ হাঁ করে উঠলেন ।

করেন কি ?

মানে, দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে তো, তাই ফেলে দিয়ে সিটে ফিরে যাবো ।

দিন, ওটা দিন আমায় । দামী জিনিস নষ্ট করতে নেই ।

দান করে, গ্লাসডোর ঠেলে, দু পা এগোতেই এক মোটা মতন ভদ্রলোক, সাইড লোয়ার বার্থ থেকে পর্দা ফাঁই করে, কম্বল জড়িয়ে পড়ে গেলেন প্যাসেজে । রডটাও ভেঙে গড়াগড়ি ।

চারপাশে সোরগোল । ভদ্রলোকের নিথর দেহ কোচের মাটিতে ।

এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন, পাখা লাও, জল লাও ।

যাকে বললেন- সে তার পাশের লোককে কথার ব্যাটনটা রিলে রেসের মত পাস অন করে দিলেন ।

 লাও তো বটে, আনে কে?

ফচকে একজন গেয়ে উঠলো:-

এ তুমি কেমন তুমি, এসি কামরায় পাখা চাও !

আরেকজন চ্যাঁচালেন :- খুন , খুন ! পুলিশ বোলাও ।

বাঙালি ভয় পেলেইহিন্দি বলে আর রাগলে ইংরেজী বলে অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ।

একজন তো ফিক্সড্ পাখাকে ধরে টানাটানি শুরু করলেন, ঘোরাবেন বলে ।

ভদ্রলোকের নিথর দেহ নট নড়ন চড়ন !

কম্বল মোড়া এক মৃতদেহ, সকলকে মুখ ভ্যাঙাচ্ছে ।

 (চলবে)