সকালে, হরির দোকানে যাওয়াটা আমার কাছে এল.এস.ডি. র নেশার
মত । শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন না হোক, পশ্চিমবঙ্গ দর্শন তো হয়ই ।
নানা কিসিমের লোক, নানা ভাষ্য-টিকা, রকমারি মতামত সব মিলিয়ে
একেবারে হিন্দি সিনেমার ফিউশন গানকেও ছাড়িয়ে যায়।
নাগেরবাজারের আগের ষ্টপেজ সাতগাছি থেকে - একটু এগোলেই
বিবেকানন্দ পল্লী ।
ঢোকার মুখেই হরির দোকান ।
কোনোরকমে মাথায় একটা ছাউনী, আর কাঠের তক্তা পেতে বসার
জায়গা ।
ফেরী করে বেড়ানো মাছওয়ালা থেকে শুরু করে সব্জী বিক্রেতা,
স্বঘোষিত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে- কে নেই সেখানে ?
কুড়ি বছর আগে যখন এখানে ফ্ল্যাট কিনি, তখন আমাদেরটা ছিল
তিন নম্বর ফ্ল্যাট বাড়ী। কান ঘেঁষে আছে দু নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট ।
নব্বই শতাংশ উদ্বাস্তু এই অঞ্চলে । আস্তে আস্তে পাল্টেছে
ম্যাট্রিক্স ।
বাঙালি ছাড়া এই এলাকায়, আগে কেউ আসতো না, এখন সেটা পাল্টে
গেছে । গুজু, মাড়ওয়াড়ি, সিন্ধ্রি সব মিলিয়ে মিনি ভারতবর্ষ ।
জায়গার নামও পাল্টাচ্ছে । আগে যেটা ছিল কলোনী, সেটা এখন
পল্লী । লাহা কলোনী , তাই এখন লাহা এ্যাভিনিউ ।
বাঙাল ভাষার দাপট অস্তমিত হলেও গোধূলি বেলার মত পুরোনো
লোকেদের মুখে এখনও বর্তমান ।
জায়গার নাম পাল্টালেও প্রাচীন লোকেরা ভোলে না । এই এক
জ্বালা নতুন প্রজন্মের কাছে ।
হরির বাড়ীটা ভেঙে এখন ফ্ল্যাট বাড়ী হচ্ছে । নানা লোকের
আনাগোনা কেনার জন্য ।
একজন এসে জিজ্ঞেস করল :- দাদা, বোলতে পারবেন জী, ইয়ে জয়
হিন্দ পল্লী কাঁহা পর মিলেগা?
হরি চা দিতে গেছে অন্য দোকানে ।
মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে সবাই !
সোত্তর বছরের কালুদা , চেঁচিয়ে বলল – বুজসি, ওডা হাগড়া
পট্টি !
মানে ?
আরে ওই যে হরিরা ড্রেইনের ধারে বইয়া হাগতো না- সেই থিকা
তো হাগড়া পট্টি !
হরি, ফিরে এসে শুনেই ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে গেল !
কি কইলেন ? হাগড়া পট্টি ?
হ !
নাম পাল্টাইসে, জানেন না । ওইটা এখন গিয়া জয় হিন্দ পল্লী
! হাগড়া পট্টি কইলে আমাগো ফ্ল্যাট তো আর বিকাইবো না !
ঠিহ আসে ! উয়ারে – পটি পল্লী কমু হনে, ইবার থিকা !
(পাঠক,কিছু সংস্কৃত ভাষার জন্য দুঃখিত )
No comments:
Post a Comment