Thursday, April 2, 2015

আবার হরি -৪




সকালে, হরির দোকানে যাওয়াটা আমার কাছে এল.এস.ডি. র নেশার মত । শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন না হোক, পশ্চিমবঙ্গ দর্শন তো হয়ই ।

নানা কিসিমের লোক, নানা ভাষ্য-টিকা, রকমারি মতামত সব মিলিয়ে একেবারে হিন্দি সিনেমার ফিউশন গানকেও ছাড়িয়ে যায়।

নাগেরবাজারের আগের ষ্টপেজ সাতগাছি থেকে - একটু এগোলেই বিবেকানন্দ পল্লী ।

ঢোকার মুখেই হরির দোকান ।

কোনোরকমে মাথায় একটা ছাউনী, আর কাঠের তক্তা পেতে বসার জায়গা ।

ফেরী করে বেড়ানো মাছওয়ালা থেকে শুরু করে সব্জী বিক্রেতা, স্বঘোষিত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে- কে নেই সেখানে ?

কুড়ি বছর আগে যখন এখানে ফ্ল্যাট কিনি, তখন আমাদেরটা ছিল তিন নম্বর ফ্ল্যাট বাড়ী। কান ঘেঁষে আছে দু নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট ।

নব্বই শতাংশ উদ্বাস্তু এই অঞ্চলে । আস্তে আস্তে পাল্টেছে ম্যাট্রিক্স ।

বাঙালি ছাড়া এই এলাকায়, আগে কেউ আসতো না, এখন সেটা পাল্টে গেছে । গুজু, মাড়ওয়াড়ি, সিন্ধ্রি সব মিলিয়ে মিনি ভারতবর্ষ ।

জায়গার নামও পাল্টাচ্ছে । আগে যেটা ছিল কলোনী, সেটা এখন পল্লী । লাহা কলোনী , তাই এখন লাহা এ্যাভিনিউ ।

বাঙাল ভাষার দাপট অস্তমিত হলেও গোধূলি বেলার মত পুরোনো লোকেদের মুখে এখনও বর্তমান ।

জায়গার নাম পাল্টালেও প্রাচীন লোকেরা ভোলে না । এই এক জ্বালা নতুন প্রজন্মের কাছে ।

হরির বাড়ীটা ভেঙে এখন ফ্ল্যাট বাড়ী হচ্ছে । নানা লোকের আনাগোনা কেনার জন্য ।

একজন এসে জিজ্ঞেস করল :- দাদা, বোলতে পারবেন জী, ইয়ে জয় হিন্দ পল্লী কাঁহা পর মিলেগা?

হরি চা দিতে গেছে অন্য দোকানে ।

মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে সবাই !

সোত্তর বছরের কালুদা , চেঁচিয়ে বলল – বুজসি, ওডা হাগড়া পট্টি !

মানে ?

আরে ওই যে হরিরা ড্রেইনের ধারে বইয়া হাগতো না- সেই থিকা তো হাগড়া পট্টি !

হরি, ফিরে এসে শুনেই ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে গেল !

কি কইলেন ? হাগড়া পট্টি ?

হ !

নাম পাল্টাইসে, জানেন না । ওইটা এখন গিয়া জয় হিন্দ পল্লী ! হাগড়া পট্টি কইলে আমাগো ফ্ল্যাট তো আর বিকাইবো না !

ঠিহ আসে ! উয়ারে – পটি পল্লী কমু হনে, ইবার থিকা !


(পাঠক,কিছু সংস্কৃত ভাষার জন্য দুঃখিত )

No comments: