Friday, November 7, 2014

পাল বনাম সাহা

আমি, এবার থেকে পণ করেই ফেলেছি- বেশী রাস্তাঘাটে বেরুবো না !!!
বিশেষ করে সন্ধের দিকে ।
বেরুলেই ঘটনার ছড়াছড়ি চোখে পড়বেই , আর এমনি কপাল যে তার মধ্যস্থতা; আমাকেই করতে হবে ?
নাগের বাজার মোড়েই দেখেছিলাম- রঘু পাল, ফটিক পাল, পঞ্চু সাহা আর পলু সাহা, গুরুদেবের আশ্রম থেকে বেরিয়ে; টলমল করতে করতে আসছে সাতগাছি মোড়ের দিকে ।
আমার অন্য একজনের সঙ্গে দেখা বাবুতলার কাছে । কুশল বিনিময় কালীনই দেখলাম, ওরা চারজন খুব জোরে জোরে কথা বলে হাঁটছে ।
সাতগাছি মোড়ে দুলালের দোকানে সিগারেট কেনার সময়, ওরা আমায় দেখে ফেলল।
পলু সাহা আমাকে মোড়ে, ঐ ভীড়ের মধ্যে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করছে :-

ক ক ক কয়েন দেহি, রা রা রামকিসনোদা !!!
কি ?
পাল বড়ো না সাহা বড় ?
মুশকিল !‍ !!! আমি জানবো কি করে ?
না না‍!‍ এ এ এর একটা বিহিত করণ লাগে- রঘু পাল মরীয়া !!
পঞ্চু সাহাও নাছোড় বান্দা !!! আরম্ভ করলো :-
কি কি কি বিহিত করণের আসে ক দেহি !!! আমাগো- ম্যাঘনাদ সাহা, বি বি বিজ্ঞানী !!! আরতী সাহা সাঁতরাইয়া স স সমুদ্র পাড়ি দেছিল !!!! কোলকাতার বি বি বি.কে সাহা পুলিশ কমিশনার আছিল । তোগো পালেরা কি আছিল ?
এবার আসরে, ফটিক পাল আমাগো পালেরা নাই ?
না নাই !
পালেরা নাই ?
ক ক কইলাম তো, নাই !!!
তোগো বি কে সাহা, কার আণ্ডারে কাম করতো, ক দেহি !!!
কার ?
হঃ !!! জানে না , আবার বড় বড় কথা কয় !!!
কি কইলাম ?
ওই যে সাহা- রা বড় !!
বড়ই তো !!
তইলে শোন !! বি কে সাহা কাম করতো কার আণ্ডারে !!!
কার !!

রাইজ্য পাল !!!! হুঃ !!

Wednesday, November 5, 2014

রঘুদাস পাল





পাড়ার রঘুকে নিয়ে লিখলে, মহাভারত হয়ে যাবে । আমাদের হরির দাদা- রঘু । না, ডাকাত নয়, তবে মাতাল ।

নাগেরবাজার – হাওড়া রুটে মিনি বাস চালাতে দেখছি, গত আঠেরো বছর ধরে । ষ্টিয়ারিং ধরলে- একটুও মদ খায় না । বলে- গুরুর বারণ ।

দুরন্ত গাড়ী চালায় রঘু । এই তল্লাটে এই রকম মিডিয়াম ভেহিকল চালানোর লোক খুব কমই আছে ।
এমনিতে, বিনয়ী- ভদ্র- কম কথা বলে ।
বাস গ্যারাজ করে – গুরু পাঁচুর আশ্রমে ঢোকে নাগের বাজার মোড়ে । দুটো বোতল সাফ করে ঢোকে পাড়ায় ।

যত তাফালিং শুরু হয়- পাড়ায়  ।

আমার সঙ্গে দেখা হলেই- একটা স্যালুট ঠুকে, বিড়ি দেবে । সঙ্গে পেটেন্ট সংলাপ :- মা কি তোর একার ? ( মদ না খেলে আমায় – আপনি বলে)
স্যালুট ঠোকারও কারণ আছে ।
বছর ১৪/১৫ আগে, ট্রেন লেট থাকার ফলে ;দেরি হয়েছে হাওড়া থেকে আসতে । ভাগ্য ভালো হওয়াতে একটা ২১৯ বাস পেয়েছিলাম ।

প্রায় রাত বারোটায় নামলাম নাগের বাজারে । কি আশ্চর্য- একটা চেনা রিক্সাও পেলাম, পাড়ার ।
একটু এগুতেই দেখি- রঘু হেব্বী কাকুতি মিনতি করছে জীপে বসা কামারডাঙা ফাঁড়ির বড়বাবু- সেন সাহেবের কাছে ।

আমারে ছাইড়া দ্যান ছ্যার ।  মিনি চালাই সারাদিন, তারপরে আর শরিলে দ্যায় না ছ্যার । ওই একটু মদ খাই ।

সেন বাবু মিচকি হাসছেন ।

আমাকে দেখতে পেলো রঘু ।
ও রামকিসনোদা, বড়বাবুরে কইয়া দ্যান না ।

সেন বাবু হেসে বললেন :- নিয়ে যেতে পারবেন আপনার রিক্সাতে ?

কেন পারবো না ? ও আর আমি তো একই পাড়াতে থাকি ।

সে জানি- ব্যাটা এত টলছিল, যে কোনো সময় লরী চাপা পড়তে পারতো, তাই দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম ।

রঘু আস্তে করে এসে উঠলো রিক্সায় । একেবারে স্পিকটি নট ।

গলির মুখটাতে ঢুকতেই গর্জে উঠলো ।

আমারে ছাড়াইলেন ক্যান ?

আমি তো ছাড়াই নি, বড় বাবুই তো ছেড়ে দিয়েছেন ।

রাহেন !  বদনাম করসে আমার  ।

কি ?
আমি নাকি এত মদ খাইসি যে টলতাছিলাম । ঘোরান “রিস্কা” । আজ ইসপার উসপার ।

আমি কেনাকে বললাম – ঘোরা রিক্সা ! রঘুর অপমার সহ্য করা আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না ।

ঘুরিয়ে একটু এগিয়েছি , ওমনি রঘু বলল:-

থাউক গিয়া । অত রাতে আর ক্যাচাল কইরা লাভ নাই, ফেরত চলেন ।

===========
পরের দিন হরির দোকানে আমাকে আর কেনাকে চা খাইয়ে একপাশে ডেকে বলেছিল :-

রাইতের কথা আর কাউরে কইয়েন না ।

এত বছর পর এই আপনাদের বললাম – অবশ্য আগেও বলেছি বোধহয় ।







Monday, November 3, 2014

ফক্কার





সালটা ১৯৭১ বা ৭২ হবে বোধহয় । কটকে আমার পোষ্টিং । ভুবনেশ্বরে এয়ারপোর্ট ।
কটক থেকে ভুবনেশ্বরের এয়ারপোর্ট দূরত্ব সড়ক পথে মোটামুটি ভাবে ৩০ কিমি ।
ঘন ঘন বাস ছিল ( এখনও আছে) ভুবনেশ্বর যাওয়ার । কোলকাতায় মিটিংয়ের ডাক পড়তো আর স্যাংশান ছিল ট্রেনে ফার্ষ্ট ক্লাসের ।
ট্রেনের ভাড়া, যতদূর মনে আছে- ছিল ২৮ টাকা মত ( কম বেশী, হতে পারে, ঠিক মনে নেই )।
তখন, ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্স বাসে করে নিয়ে যেত, এয়ার পোর্টে- সে কোলকাতা বা ভুবনেশ্বর, যেখানেই হোক ।
একবার ওদের সিটি অফিসে রিপোর্ট করলেই হল । কোলকাতায় চিত্তরঞ্জন এভিনিউ তে অফিসটা এখনও আছে বোধহয় ।
প্লেনের ভাড়া ছিল বোধহয় ৬০ / ৭০ টাকা । যে পয়সা পাবো, সেটার সঙ্গে নিজের গোটা ত্রিশেক টাকা জুড়লেই প্লেনের বাবুয়ানি ।
২৮ সিটের ফক্কার চলতো সেই সময় । প্রেসারাইজড্ প্লেন । টু বাই টু সিট ।
এখন যেমন মাইকে কি কি করতে হবে বমি পেলে বা মাথা ঘুরলে, বলে দেওয়া হয় আর কিছু বাদে বাদে দাঁড়িয়ে এয়ার হোষ্টেসরা মূকাভিনয় করে, তখন সেটা ছিল না ।
দরজা বন্ধ হলে, একজন উঁচু গলায় করণীয় গুলো বলে দিতো । সিটের মাথার ওপর ছিল এসির মুখ, ঘোরানো যেত । জানলা গুলো গোল নয়, আয়তাকার ।
নাইট ল্যাণ্ডিং ফেসেলিটি ছিল না ভুবনেশ্বরে । ফলে, দুপুর গড়িয়ে জাষ্ট বিকেল হচ্ছে ঠিক সেই লাষ্ট ফ্লাইটটা ধরতাম ভুবনেশ্বর থেকে ।
যাতায়াত করতে করতে, প্রায় অনেক ষ্টাফের সঙ্গেই পরিচিতি হয়ে গেছিল ।
তা, সেদিন কমাণ্ডে ছিল ক্যাপ্টেন সঞ্জীব মিশ্রা ( নামটা সঞ্জয়ও হতে পারে ) । বোম্বে ফিল্মের হিরো মার্কা চেহারা । প্রায় ৬ ফুটের মত উচ্চতা ।
তেমনই সুন্দর কথা বলতো- ইংরেজী, হিন্দিতে ।
ডিউটি শেষ হলে- অনেক সময় নিজের গাড়ীতে তুলে নিত আমায় । তবে, এই সুযোগ বেশী পেতাম না , ওর বিভিন্ন কাজের জন্য ।
স্মুদ টেক অফ । উড়ে চলেছি কোলকাতার দিকে ।
নীচের বাড়ী ঘর, রাস্তা , গাড়ী টাড়ি সব খেলনার মত লাগছে । আমার ডান দিকের উইণ্ডো সিট । জানলা দিয়ে মোটামুটি প্লেনের পাখা যে ঘূর্ণায়মান, সেটা একটু দেখতে পারা যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে একটু ঝাঁকানি , এয়ার পকেটের জন্য, কারণ এই প্লেন বেশী উঁচুতে উড়তে পারতো না, তবে সেটা আমার গা সওয়া হয়ে গেছিল ।
কানে ধাপা ধরতো, কিন্তু মুখটা হাঁ করে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে নিলে, কিছুক্ষণ পরে ছাড় পেতাম ।
কফি খেতে খেতে , একটা ইলাষ্ট্রেটেড উইকলিতে চোখ রেখে ছবি আর লেখা গুলো পড়ছি ।
পাশের সিটে এক মাড়োয়ারি সহযাত্রী হনুমান চালিশা পড়ছে মন দিয়ে উঁচু গলায় ।
জিজ্ঞেস করে জানলাম, এটাই তার প্রথম বায়ু মার্গে ভ্রমণ ।
হঠাৎ প্লেনটা একটু বাঁ দিকে হেলে পড়ল আর কাঁপা শুরু ।
হোষ্টেসদের মুখ গম্ভীর । একবার করে ফ্লাইট ডেকে ঢুকছে আর গম্ভীর মুখে বেরিয়ে আসছে ।
জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছে না ।
আমার এবারে ভয় ধরলো । মাত্র বছর তিনেক ( ১৯৬৮) আগেই দমদমে প্যান অ্যামের বোয়িং প্লেন ভেঙে পড়েছিল রানওয়ে ছোঁয়ার আগেই ।
নীচে নীল জল দেখা যাচ্ছে । অল্প একটু সময় বঙ্গপোসাগরের ওপর দিয়ে যেত বা যায় এখনও ।





মিনিট পাঁচ এরকম ছিল । তারপরই সব স্বাভাবিক ।
ভয়টা তখনও কাজ করছে মনে । ধীরে নজরে এলো সুতোর মত কোলকাতার রাস্তা ।
রানওয়েতে নেমে এলো মসৃণ ভাবে আমাদের প্লেন ।
সবার শেষে নামলাম আমি ।
ঘর্মাক্ত সঞ্জীব একটা ট্রলির গায়ে হেলান দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে । তখন এত কড়াকড়ি ছিলই না ।
জিজ্ঞেস করলাম কেয়া হুয়া থা ইয়ার !
একটা সিগারেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ক্যাপ্টেনের উত্তর :- এক সাইড কা এঞ্জিন বন্ধ্ হুয়া থা ফর এ সর্ট হোয়াইল ।
আমার পড়ে যাওয়াটকে কোনো রকমে আটকেছিল সঞ্জয় বা সঞ্জীব ।
========

তার পর আর পারতপক্ষে প্লেনে কোলকাতা যেতাম না, লাচার না হলে

নাটক

গতকাল, যাত্রার কথা লিখেছিলাম ।
আজ পাড়ার নাটক । এটা অবশ্য আগে লিখেছি বলে মনে হচ্ছে, তবে না হয় নতুন করেই লিখলাম ।
=======
বাঘাযতীনে একবার ঠিক হলো- দুর্গা পূজার সময় নাটক হবে । ভূতো দা খুব ভালো ষ্টেজ অ্যারেঞ্জার ।
মানে হল গিয়ে- কখন, কোন দৃশ্যে কি লাগবে বা গোটা নাটকে প্রয়োজনীয় জিনিস ঠিক সময়ে হাজির করাটাই কাজ, এই ষ্টেজ অ্যারেঞ্জারের ।


এত নিঁখুত ভাবে পাড়াতে আর কেউ করতে পারতো না- ভূতোদা ছাড়া ।

এহেন ভূতোদা এবারে জেদ ধরে বসলেন- তিনিও পার্ট করবেন ।

সর্বনাশ ! কপালে হাত, পরিচালকের । ভূতোদা পার্ট করলে- আর দেখতে হবে না । ওই সব প্রয়োজনীয় জিনিস সিন ওয়াইজ জোগাড় দেবে কে ?

অনেক বোঝানো হল – ভূতোদাও নাছোড় বান্দা । শেষে, মধুদিকে গিয়ে ধরা হলো । আর কয়দিন পরেই ভূতোদার বিয়ে মধুদির সঙ্গে ।

ভূতোদা রাজী হলেন অগত্যা।

যথাসময়ে নাটক শুরু । জমে ওঠেছে , দর্শক মুগ্ধ । ভূতোদার অ্যারেঞ্জমেন্ট নিঁখুত ।

শেষের সিনে নায়ক ধরতে পারবে, আসল ষড়যন্ত্র কে করেছিল ! হাতে রিভলবার, আর কোমোরে ছোরা নিয়ে ভিলেনের কাছে হাজির নায়ক ।

অনেক তর্কা তর্কির পর নায়ক গুলি করল, ভিলেনকে ( এই সময় ভূতোদা পটকা ফাটাবে ষ্টেজের পেছনে, যাতে মনে হয় রিভলবারের গুলি চলল ) ।

পটকা আর ফাটে না ! নায়ক বেগতিক দেখে- ছোরা বের করে ভিলেনের বুকে বসালো।

ঠিক সেই সময়েই – দুম্ করে পটকার আওয়াজ ।

ভূতোদা উধাও । দর্শকদের মধ্যে হাসির ফোয়ারা ।

ড্রপসিন ।
============

এখনও কত কি যে উল্টাপাল্টা হচ্ছে- জীবন রঙ্গ মঞ্চে !!!

Sunday, November 2, 2014

ধুঢ়ুম্- ধ্রাস‌্



( এই ঘটনা কাল্পনিক । বাস্তবের  কোনো চরিত্র, ঘটনা , পরম্পরার সাথে কোনো মিল নেই । এই রকম ঘটনা যদি আগে কোথাও ঘটে থাকে, তবে সেটা সম্পূর্ণ কাকতালীয় )
===========

বেশী দিন আগের কথা নয় । বছর তেরো হবে !  আমি সদ্য অবসর নিয়েছি চাকরী থেকে ।  তখনও সেভাবে সোসাল নেটওয়ার্কিং চালু হয় নি, তাই হরির দোকানেই আড্ডাটা হয় ।

পাল বাবুর হঠাৎ সখ জাগলো-  আমার ফ্ল্যাটের  ঠিক উল্টো দিকেই ,পাড়ার মধ্যেই যাত্রা পালা করা হবে ।

যাত্রা করার জন্য  প্রচুর পয়সা নেবে, চিৎপুর পার্টিরা – কর বাবুর সময়োচিত ভাবনা, কথার মাধ্যমে বেরিয়ে এলো ।

কেন ? আমরাই পালা করবো, বাইরের পার্টি আনবো কেন ? পাল বাবুর জবাব ।

এবারে সবাই একটু নড়ে চড়ে উঠে, স্মৃতি মেদুর হয়ে অনেকেই নিজের নিজের যাত্রা দেখার কথা বলতে লাগলেন ।

ঘন্টা খানেক পর অনেক বাত বিতণ্ডার পর ঠিক হলো, আমাদের চাতালের শেষে যে ক্লাব ঘর আছে, সেখানেই রিহার্সাল হবে ।

চাতালটা আইনত মিউনিসিপ্যালিটির রাস্তা হলেও কানা গলি । গাড়ী – ঘোড়ার ঝামেলা নেই ।

জায়গাও লম্বা হওয়ার ফলে, দর্শকদের অসুবিধে হবে না । ক্লাবঘরের সামনেই যাত্রাটা হবে ।

ঠিক ষ্টেজ না হলেও  একটু উঁচু না করলে, সবাই আবার দেখতে পাবে না, তাই ঠিক হলো- ডেকোরেটারকে বলতে হবে, পাটাতন লাগাতে , অল্প উঁচু করে ।

এবারে যাত্রা পালার বিষয় বস্তু নির্বাচন । বাকবিতণ্ডার পর ঠিক হলো- রামায়ণের একটা অংশ নিয়ে পালা হবে ।

হনুমান – রাবণের যুদ্দু টুদ্দু থাকবে, বেশ মারকাটারি জমজমাটি ব্যপার সাপার ।

মুখার্জ্জী বাবু অনেক উৎসাহ নিয়ে- কলেজ ষ্ট্রীটে গিয়ে দু তিনটি রামায়ণের ওপর লেখা যাত্রা পালার বই কিনে নিয়ে এলেন ।

ওই বইগুলো থেকেই  অনেক সংশোধন আর পরিমার্জনের পর লেখা হল পালা – হনুমানের লঙ্কা বিজয় ।

ব্যানার্জ্জী বাবুর অনেক চেনা জানা চিৎপুরে । গদা , পোশাক সব নিয়ে তিনি গাড়ী করে হাজির  পাড়াতে, যাত্রা পালা হওয়ার আগের দিন । ক্লাব ঘরেই রাখা হলো সব ।

মহেন্দ্রক্ষণে মেক আপ ম্যান আসবে বিকেল চারটের সময় । রোববারের বাজারে, উত্তেজনায় সবাই থরথর করে কাঁপছে ।
হঠাৎ দেখা গেল- হনুমানের গদাটাই নেই । কেউ নিয়ে গেল নাকি ? না যাতে পালা না হয়, তার জন্য কারও কীর্তি ?

যা!!!!!!!! এবারে কি হবে ? রোববার , তাই  দোকান পাট সব বন্ধ ।

অভিজ্ঞ মেক আপ ম্যান বলল – আরে দাদা ঘাবড়াচ্ছেন কেন ? ক্রিকেটের উইকেট তো আছে দেখছি । তার ওপরে একটা বড় ডাবের খোলা লাগিয়ে দিচ্ছি । তার ওপরে রাংতা । দেখতে একদম গদা লাগবে ।

যথা সময়ে অভিনয় আরম্ভ হলো । চরম ক্ষণে হনুমান বীর দর্পে রাবণের দিকে তেড়ে গেল- গদা ঘুরিয়ে  ।

অত স্পিডে গদা ঘোরানোর ইমপ্যাক্ট, গদার মুণ্ডু মানে ডাবটা নিতে পারল না ।
ছিটকে দর্শকদের মাঝে ।
 যার মাথায় পড়লো- সে তো চিপটাং ।

কোঁকাতে কোঁকাতে বলল – আমিই গদাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম । হনুমান আমায় শাস্তি দিলেন ।

সমস্বরে আওয়াজ :- জয় বজরং বলীর জয় ।

==========
গদার আঘাত এখনও চলছে ।









Saturday, November 1, 2014

চিন্তা ভাবনা




আমার বন্ধু তালিকায় বেশ কিছু বিবাহযোগ্য বা যোগ্যা , ছেলে- মেয়ে ( আমি সাধারণত, মহিলাদের কথাই আগে উল্লেখ করি, তবে এই ক্ষেত্রে সেটা কেমন যেন বেমানান হবে ) আছে, যারা বিয়ে করবো করবো করেও করতে পারছে না ।

না না, কোনো যৌতুকের কৌতুক নেই তবে ব্যাপারটা অন্য ।

একটি মেয়েকে জানি- যে উচ্চশিক্ষিতা, সুন্দরী , বিদেশেও গেছে, তার আর ছেলে পছন্দ হয় না । এদিকে, প্রেম করাটাও মানতে পারে না !

মা – বাবা হন্যে হয়ে বিভিন্ন ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন । সংবাদপত্রেও চলছে সেগুলো । প্রচুর ফোন, মেইল, চিঠি । একেবারে এলাহি ব্যাপার ।

ছেলেদের কারও হাইট ছোট, কারও বা তোতলামি আছে, কেউ বা শ্যামবাজারী “ শ”য়ে অভ্যস্থ । 

আবার কেউ এটিকেট জানে না । বিকট শব্দ করে হেঁচেছে, নিভৃতে কথা বলার সময় , নানান বায়নাক্কা ।

শেষমেষ, একটি ছেলে ( ও আগেই শুনেছিল এসব ) বলল – শোনো হে সুন্দরী, বিয়ে আমি তোমাকেই করবো, বুইলে । তুমি আমার পছন্দ ।

ব্যাস্- মেয়েটি গলে জল । আজকেই তার বিয়ের নেমন্তন্ন পেলাম, নভেম্বরেই বিয়ে হচ্ছে ।

একটি ছেলের খালি বাতেলা ! বিয়ে করবো করবো বলেই চেল্লায় । এদিকে মেয়ে দেখলেই কাঁচু মাচু ।

ছেলেটি এই কিছুদিন আগেই  ফোন করল ।

 ঘনাদা, মেয়ে দেখতে যাচ্ছি

বেশ বেশ, তা কোথায় ? তোদের পাড়ায় বা রাস্তাঘাটে দেখতে পাস না ? তুই তো আবার ঝাড়িও মারতে পারিস না !

উফ্ ! এই মেয়ে দেখা, সেই দেখা নয় । বিয়ের জন্য ।

অ ! তা যে সেদিন খুব বাতেলা ঝাল্লি,  ওসব মেয়ে দেখা টেখা সামন্ততান্ত্রিক লক্ষণ !

উফ্ ! পাগল হয়ে যাবো ! শোনো শোনো, ভালো করে শোনো আগে

বলবি, বল্ তালে ! 

আমি তো বলেছিলাম, মা বাবার পছন্দ মানেই আমারও ! তা মেয়ের বাবা একদিন ফোন করে আমায় বলল, বিয়েটা কে করবে শুনি ? তুমি, না তোমার বাবা ?

খাইসে ! তাপ্পর ?

তাই আজ যাচ্ছি । খুব নার্ভাস লাগছে জানো ? তুমি যাবে আমার সাথে ?

বলি- আমিও তো বিয়ে করবো না , গিয়ে কি লাভ ?

লাভের মধ্যে দুটো গুড ব্যাড খেতে পাবে এই যা !

বলছিস ?

হ্যাঁ – তা ছাড়া বেশী দূর যেতেও হবে না । তোমাদের অঞ্চলেই ! রিক্সা করেই চলে যাবো দুজনে  । আমি তোমার বাড়ী আসছি সন্ধে ছটার সময় ।

তা গেলাম । গিয়েই অবাক আমি ! এতটা আশা করি নি  । ভদ্রলোক আমার চেনা!একসাথে ঢুকু ঢুকুও করেছি ।

আরে ! আসুন আসুন  রামকৃষ্ণ দা । আপনি এর সাথে ?

 মানে ? ওকি সমাজবিরোধী নাকি, যে ওর সাথে আসবো না ?

না না, উফ্ । আপনার কে হয় ?

আমার ফেসবুক তুতো ভাই ।

কি ভাই ?

তুমি যা ভাবছো, সেই ভাই নয় । আমি তো চিনি তোমাকে !

একেবারে থার্টি টু অল আউট ভদ্রলোকের ।

ওরে মিনু, এদিকে আয় !

মিনিও আমার ফেসবুক তুতো বোন ! ও এসেই বলল :- তোমরা ভাই ভাই, আমরা ভাই বোন । তা হলে- ওই ছেলেটা আর আমিও তো ভাই বোন, তাই না ?

ভাইফোঁটা ওভার ! এসব প্রশ্ন আর নয় । এবারে তোরা কথা বল । তোর বাবা আর আমি ওঘরে গিয়ে বসি ।

সেদিন গুড ব্যাডের সাথে ভাল পিনাও জুটেছিল । ছেলেটা জুল জুল করে দেখলেও, ওর কিছু করার ছিল না ।

-------
ওদের বিয়ের কার্ডও পেলাম আজ । অবশ্য তারিখ দুটো আলাদা !

বাংলা প্রবাদ প্রবচন

“হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
***
প্রবাদ কাকে বলে, এ ব্যাপারে সবারই জানা আছে । ব্যাপারটা হলো, কেউ ঠিক এর সংজ্ঞা নির্দেশ করতে চাইবেন না ।
প্রবাদ বলতে, সাধারণত আমরা যা বুঝি- সেটা এত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকম বিচিত্র ভাষায় প্রকাশ হয়, তাদের মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে কোনো একটা সাধারণ লক্ষণ খুঁজে পাওয়া বড় মুশকিল ।
অসংখ্য উৎসমুখ থেকে আসা, ক্ষীণ স্রোত ধারাতে প্রবাহিত হয়ে, যা কিছু একসঙ্গে মিশেছে- তাদের একের সঙ্গে অপরের কোনো মিল বা যোগাযোগ নেই ।
এগুলোই প্রবাদ নামে চিহ্নিত হয়ে এসেছে । সহজে, পৃথক করা মুশকিল !!!
তবুও আমাদের পূর্বসূরিরা এই বিষয় নিয়ে যে সব নির্দেশ বা দিক দিয়েছেন বা দেখিয়েছেন- সে সবের সাহায্যে, কিছু কিছু সাধারণ লক্ষণের সন্ধান আমরা পাই যার থেকে আমরা একটা সংজ্ঞায় আসতে পারি ।
সাধারণ লোকের মুখে সচরাচর যে সব বুলি বা বচন শোনা যায়, তার অল্প অংশ স্বরচিত হলেও হতে পারে কিন্তু বেশীর ভাগই পরের কাছ থেকে শোনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে শুনে এসেছে ।
যে সব উক্তি বা বচনে চিরন্তন সত্য বা নির্ভুল তথ্য আছে আর যা আকারে সংক্ষিপ্ত , ভাষার মনোহারিত্বে মর্মস্পর্শী এবং জনগণের মধ্যে বহুল প্রচার পেয়েছে, তাকেই খাঁটি প্রবাদ বলে স্বীকার করা হয়েছে ।
এই সব লক্ষণের মধ্যে কোনো একটার অভাব থাকলে, তাকে প্রবাদ না বলা গেলেও – লোকোক্তি বা জনশ্রুতি বলে নেওয়া হয়ে থাকে ।
আগামীতে আমার চেষ্টা থাকবে, এই প্রবাদ –প্রবচন নিয়ে লেখার ।


***
এটা দেখা গেছে- জ্ঞান আর সত্যের প্রচার এবং সেই সঙ্গে ভাষার লালিত্য দিয়ে জনগণের মনোরঞ্জনের যোগ্যতা – এই দুটো কিন্তু সার্থক কবিতার লক্ষণও বটে ।
সব সাহিত্যের ইতিহাসে দেখা গেছে- আদিতে কবিতারই জন্ম হয়েছে । শব্দ নিয়ে গড়া বাক্য যখন রসাত্মক হয়, তখন সেটা কাব্য হয়ে দাঁড়ায় ।
শব্দ বিন্যাসের সংযত সংক্ষিপ্ততাও কাব্যের অপরিহার্য্য লক্ষণ । এই সংক্ষিপ্ততার চরম পরিণতি দেখা যায় প্রবাদে ।
যে প্রবাদ যতো অল্প শব্দে রচনা করা হয়েছে, তার সার্থকতা ততোই বেশী ।
কাব্যের ধ্বনি বা ব্যঞ্জনাও প্রবাদের এক বিশেষ উপাদান । তাই, এক একটা প্রবাদকে কবিতার ঘনীভূত নির্যাস বা কাব্য কণিকা বলা যেতে পারে ।
প্রবাদে সত্য প্রচারের চেষ্টা হয়েছে, নানা ভাবে । ধর্ম, নীতি, কৃষিকাজ, বাজারের দাঁড়িপাল্লা, সামাজিক , পারিবারিক কর্তব্য করার উপদেশ, স্বাস্থ্যরক্ষা- সব বিষয়েই ব্যবস্থা নেবার এবং তার সাথে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
যেমন :-
কখনো খেয়ো না তালে আর ঘোলে
কখনো ভুলো না ঢ্যামনার বোলে
-
পথ চলবে জেনে
কড়ি নেবে গুণে
-

রুয়ে কলা, কেটো না পাত
তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত
-
যার হাতে দাঁড়ি পাল্লা
নাই তার খোদা তাল্লা
-
অনেক প্রবাদে সরাসরি উপদেশ না দিয়ে অন্যায় বা অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করে করণীয় করার দিকে মন দিতে বলা হয়েছে ।
উদাহরণ :-
যার ধন, তার ধন নয়
নোপোয় মারে দই
-
বজ্র আঁটুনি- ফস্কা গেরো
-
আপনি পায় না, শঙ্করাকে ডাকে
-
যতো ছিল নাড়া বুনে
সব হলো কীর্তুনে




-
আগেই বলেছি, স্বল্প পরিসরের মধ্যে- ভাবের প্রকাশ, প্রবাদের একটা প্রধান গুণ । দু চারটে শব্দের মধ্যে দিয়ে বক্তব্য এলে অনেক গ্রহণযোগ্য এবং হৃদয়গ্রাহী হয় – এটা অস্বীকার করা যায় না ।

তাই ছোট ছোট প্রবাদ- প্রবচনের প্রচণ্ড আদর । এর প্রচুর উদাহরণ আছে । যেমন :-
পরচিত্ত অন্ধকার

মন না মতি

নারীর বল, চোখের জল

ধরি মাছ, না ছুঁই পানি
কেবল ব্যতিক্রম দেখা যায়, মেয়েলী বচনে । ( এটা কোনো রেসিয়াল কমেন্ট নয় !! লক্ষ্য করে দেখা গেছে )
নারীজাতির অলঙ্কার প্রিয়তার খ্যাতি, আর প্রগলভতার অখ্যাতি – এই দুটোই আছে । ( আবার মাফ চাইছি)

তাই এদের তৈরী প্রবাদ- প্রবচন অনেক ক্ষেত্রেই বেশ অলঙ্কার মণ্ডিত হয়ে, শব্দবহুল হয়ে গেছে।
দেখা গেছে, অনেক জায়গায় বড় ছড়ার জন্ম দিয়েছে- এই সব মেয়েলী বচন ।
একটা উদাহরণ :-
যার হাতে খাই নি, সে বড় রাঁধুনী
যার সঙ্গে ঘর করি নি, সে বড় ঘরণী

নানা রকমের বিচিত্র প্রকাশ ভঙ্গীর জন্য প্রবাদ- প্রবচন সাধারণ জনগণের মন কাড়ে ।
যাঁরা এই সব প্রবাদ- প্রবচন তৈরী করেছেন, নিঃসন্ধেহে বলা যায়, তাঁদের বক্তব্য সরস এবং হৃদয়গ্রাহী করার জন্য সবরকমের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ।

ঠিক, এই কারণেই সরল জনসাধারণের সহজ রসবোধ বংশপরম্পরায় এই প্রবাদ প্রবচনকে সাদর স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে এবং আসছে ।
একটা শাস্ত্র আছে- অলঙ্কার শাস্ত্র । এই সব প্রবাদ- প্রবচনে শাস্ত্র নির্দিষ্ট সব রকমের প্রয়োগে কোনো ভুল নেই । এটা হয়তো জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাত সারে হয়েছে ।
শব্দালঙ্কারের প্রধান কৌশল- অনুপ্রাসের সাহায্য নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে ।
অন্ত্যানুপ্রাস বা মিল, যা সকল ভাষায়, সকল যুগে কাব্যের অপরিহার্য্য লক্ষণ বলে আমরা জানি, প্রবাদ- প্রবচনের সংকীর্ণ পরিসরেও তার উপস্থিতি, সেটা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে হোক বারবার দেখছি ।
কেবল মনোহারিত্বের জন্য নয়- মনে রাখার সুবিধের জন্য মিলের প্রয়োজন সেই প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে ।
সব ব্যাপারেই এই কারণে মিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যাপক ব্যবহার । জনগণের সুদীর্ঘ কাল মনে রাখাটা এই কারণেই হয়েছে । ছোট প্রবাদ- প্রবচনেও এই মিলের জন্য শ্রুতি সুখকর ।
নুন খাই, গুণ গাই
-
ধন জন পরিবার
কেউ নয় আপনার






তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।
-
অন্তানুপ্রাসের পরই দেখতে পাই-আদ্যানুপ্রাসের আদর । সব দেশেরই কবিতায় এটা দেখা যায় ।
=
চাল নেই চুলো নেই
পরের বাড়ী হবিষ্যি
যেমন:-
বামুন, বাদল, বান
দক্ষিণা পেলেই যান
-
প্রবাদে আরও যেটা দেখা যায়- মধ্যানুপ্রাসের প্রাদুর্ভাব ।

যেমন:-
খুচরো কাজের মুজরো নেই
-
ঘোমটার ভেতর খেমটা নাচ
-
বাড়া ভাতে নেড়া গিন্নী
-
যদি হয় লুচি, মুচীর ঘরেও রুচি

আবার অর্থালঙ্কারের মধ্যে, উপমা আর রূপকের ছড়াছড়ি – প্রবাদে ।


অতিশয়োক্তি,সমাসোক্তি(যে অলংকারে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের ব্যবহার বা ধর্ম আরোপ করা হয়),ব্যাজস্তুতির ( নিন্দাচ্ছলে প্রশংসা) প্রয়োগও বেশ ভালো ভাবে দেখা যায় ।

উদাহরণ :-
চাঁদের হাট
-
ঘরের ঢেঁকি কুমীর
-
বাছার কি বা মুখের ছাঁই
তবু হলুদ মাখেন নাই

অত্যুক্তি বা অতিশয়োক্তির প্রয়োগে প্রবাদের চমৎকারিত্ব ফুটেছে ।
যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় দুজন

কুরগা মরা গরু, মাগ্গো লারতে উদয় চাঁদ ( কুঁড়ে মরা গরু, পেছন নাড়াতেই চাঁদ উঠে যায়, বরিশাল ) কুঁড়েদের প্রতি এই প্রবাদটা বলা হয়ে থাকে ।
-

হোগা নাই মেয়া উদ্দার হইররা পাদে। (বরিশালের প্রবচন) অর্থ: সামর্থ নাই ফুটানি কতো! ঋণ:- যথা ক্রমে ধ্রুবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায় ও ডঃ মোস্তাক আল মেহেদি

এই ভাবে, প্রবাদের প্রকৃত যে বক্তব্য অর্থালঙ্কারের পেছনে লুকিয়ে থাকে না । ঠিক, এই জন্যেই প্রাকৃত জনগণের কাছে এদের আবেদন কখনোই ক্ষুণ্ণ হয় না ।

একটা জিনিষ লক্ষ্য করা গেছে :- প্রবাদের কৌলিন্য, তার প্রাচীনত্বে ।
ইদানীং একটা প্রবাদ প্রায়ই শোনা যায় – যদির কথা নদীতে । ( অনিশ্চিত )

ভাবের গৌরব, আকারে সংক্ষিপ্ত, মধ্যানুপ্রাস উপস্থিত- সবই আছে, কিন্তু কেবল নবীন বলে এটা তত প্রাচীন নয় বলে প্রবাদ কৌলিন্য পায় নি ।

হতে পারে, এটা কিছু জায়গায় চলে, বেশ কিছু লোক বলে- কিন্তু মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে- দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়ে নি সেভাবে ।

এই প্রাচীনত্বের জন্যই আবার রচয়িতার নাম খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর ।

যত হাসি, তত কান্না
বলে গেছে রামশর্মা

এই রকম কিছু প্রবাদের মধ্যে রচয়িতার নাম পাই বটে, তবে সময়ের প্রভাবে জনগণ এই সব রচয়িতার নাম বাদ দিয়েছে ।

এদের মধ্যে ছিলেন – শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, বিচক্ষণ গ্রাম্য মৌলবী, মোড়ল, কৃষক বা শিল্পী ।

আবার শুদ্ধ অন্তঃপুর বাসীনী গৃহকর্ত্রী থেকে, মেয়ে বউ রচনা করেছে –সরস ও সুতীব্র মন্তব্য- আর তার থেকেই হয়েছে প্রবাদ ।

নিম্ন আয়ের গৃহকর্ত্রী বাজার দর দেখে ক্ষেপে গেছেন, সাথে ছেলের বৌয়ের ঘন ঘন বাপের বাড়ী যেতে চাওয়ার জন্য – ছড়া কাটছেন :-

বাজার করবি ঘুরে ঘুরে/ শ্বশুর করবি দূরে দূরে ।
বাজার করতে গেলে একজায়গায় না কিনে ঘুরে ঘুরে কিনতে হয়, যাতে একটু সাশ্রয় হয় । আর শ্বশুর বাড়ী দূরে হলে, ক্যাচাল কম এবং বৌ ঘন ঘন বাপের বাড়ী যেতে চায় না।

বাজারে দাঁড়িপাল্লায় ওজনে ঠকাচ্ছে দেখে মৌলবী বলছেন :-

যার হাতে দাঁড়ি পাল্লা/ নেই তার খোদা তাল্লা




-
প্রবাদ- প্রবচনে বহু ধর্মীয় উপদেশ বাণী দেখা যায় । স্রষ্টারা স্বাভাবিক ভাবেই এগুলোতে চটুলতা এড়িয়ে চলেছেন ।
এদের ভাব – গভীর, ভাষা গম্ভীর ও সংযত ।
সত্যের প্রকাশকে, আপ্তবাক্য হিসেবে সমাজ শ্রদ্ধার সাথেই নিয়েছে ।
তৎসম শব্দ থাকায়, প্রাকৃত জনগণ এখানে হস্তক্ষেপ করেছে কিন্তু কোনো রকম বিকৃতি বা মর্যাদা হানি হয় নি ।
তার মধ্যে কয়েকটা:-
অভাবে, স্বভাব নষ্ট
-
চক্ষু বিনা যেমন অঙ্গ
ভক্তি বিনা সাধু সঙ্গ
-
কৃপণের ধনক্ষয়
চুরি কিংবা ডাকাতি হয়
-
গবেষকরা মনে করেন- কোনো আকস্মিক ঘটনা বা কারও খারাপ ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রাম্য কবি তার কাব্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছে । সৃষ্টি হয়েছে রসগর্ভ এই সব বচন:-

ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখোনি
-
বড়ো হাতী গেল তল
মশা বলে কত জল
-
হায়রে কপাল একপেশে
সবাই বলে ফেন খসে
-
সামাজিক বা পারিবারিক নানা ব্যাপারে অনেক কাল ধরে জড়িয়ে থেকে, প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন ।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা তাই নিজের মত প্রকাশের জন্য , এক একটা মন্তব্য করতে গিয়ে , তাঁদের অজ্ঞাত সারেই প্রবাদের সৃষ্টি করে গেছেন ।

এগুলিকে ভূয়োদর্শন জাত প্রবাদ বলা যায় ।

ছোট একটা মেয়েকে বারবার পুকুর থেকে ঘটি ভরে জল এনে জালায় ( জল রাখার বড় পাত্র ) রাখছে দেখে, কৃষিজীবী প্রবীণ গৃহকর্তা ফুট কাটলেন :-
এমন করে ছাগল দিয়ে কি ধান মাড়ান হয় ?

সঙ্গে সঙ্গে গৃহকর্ত্রীর উত্তর :- হয় গো হয় । কিছুটা তো হয় !! কেন, কাঠবেড়ালিতে সাগর বাঁধেনি ?
এই দুটো পরস্পর বিরোধী কথা, পরিবারের লোকেরাও শুনে বহু জায়গায় ব্যবহার করতে করতে, একসময় প্রবাদ প্রবচনের ভাঁড়ারে ঢুকে গেল ।
বা
বাড়ীতে, নতুন বিয়ে হয়ে আসা বৌ- একটু অলস, সহজে বাড়ীর কাজ করে না, ঝগড়াও করে একটু আধটু । তাই, তাকে বাড়ীতে গঞ্জনাও সইতে হয় ।
সূত্রধর ( কাঠমিস্ত্রি) শ্বশুর কিন্তু স্নেহ প্রবণ । র‌্যাঁদা চালাতে চালাতে বললেন :-
ও সব কালে ঠিক হয়ে যাবে খন । “ কুঁদের মুখে আর বাঁক থাকবে না
জন্ম হলো- আরও একটা প্রবাদের !!
এসব দেখে মনে হয়- প্রবাদ বচনের বেশীর ভাগই সাধারণ লোকের রচনা ।
নানা বিষয় নিয়ে রকমারি বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রকাশ পেয়েছে ।
সেজন্য – যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে- কথাটা বোধহয় প্রবাদের ক্ষেত্রে বেশী করে খেটে যায় ।
আমাদের তখনকার গ্রাম সর্বস্ব সমাজ জীবনের নানা স্তরের অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করেই প্রবাদ বচনের সৃষ্টি ।
তাদের স্বাভাবিক সহজ জীবনের তথ্যই প্রবাদ সাহিত্যের উপজীব্য ।
ঠিক এই কারণেই , এমন কোনো বিষয় বস্তু নেই যা প্রবাদ সাহিত্যে স্থান পায় নি ।




-
প্রবাদের সর্বজনীন ভাণ্ডার সাধারণের সম্পত্তি । এই ভাণ্ডার থেকেই সকলেই যেমন জানতে পারেন, সেই রকম নিজের সাধ্যমত দান দেবারও অধিকারী ।

যদি ভালো করে দেখা যায়, তবে বুঝবো- এই অধিকারের প্রয়োগে কারও কোনো ত্রুটি হয় নি বা এখনও হচ্ছে না ।

একটু আধুনিক কালে এগিয়ে আসি । ইদানীং টিভিতে বাংলা সিরিয়াল দেখে একটা বচন ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোসাল নেট ওয়ার্কিং সাইট মারফত :-

আতা গাছে তোতা পাখি,ডালিম গাছে মৌ
বাংলা সোপে, একটা ছেলের দুটো করে বৌ

খুব উন্নত মানের নয়, তবে পাবলিক “খেয়েছে আপাতত এই সমালোচনার জন্য ।

সকলের অধিকার যে সমান, সেটা অস্বীকার করার কোনো জায়গাই নেই ।

সমাজের / প্রশাসনের সর্বোচ্চদের অপ্রিয় সমালোচনার অধিকার আছে “ হীনতম গ্রামীন বা শহুরে লোকেদের ।

অসাক্ষাতে রাজার মাকেও “ ডাইন বলার অধিকার, কার ছিল না সেকালে ? এখনও আছে ।

পরের দোষ ধরতে তো সকলেই ওস্তাদ খলিফা । তাই সমাজের প্রত্যেকেই অন্যের সমালোচক ।

যে যখন সমালোচক হয়েছে- সমাজের যে স্তরে তার স্থান, সেই পরিবেশের মধ্যে থেকেই পরিচিত ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে ঘিরে দ্বিধাহীন ভাবে বক্তব্য রেখেছে ।

অভ্যস্ত ভাষা আর নিজস্ব ভঙ্গীতে প্রয়োগ করার ফলে- অনেক সময়েই মনে হয়, এগুলো “বিকৃত রুচির প্রতিফলন ।

অনেক সময়ে নগ্ন অশ্লীলতাও এসে পড়েছে অনিবার্য্য ভাবে ।
-
মজার ব্যাপার হলো একই অর্থবহ প্রবাদ ওপার বাংলাতেও আছে । কারা যে কার দ্বারা প্রভাবিত, এটা বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তবে আছে ।

আইসো শাল- মাগ্গে বও । ঝাড়ের বাঁশ- গাঁড়ে আয় - ( যেচে বিপদ ডেকে আনা )

-
চালৈন কয়- সুইজেরে, তর পন্দে একডা ফুডা ! চালুনি বলে- সূঁচ, তোর পাছায় একটা ফুটো !! ( নিজের প্রচুর দোষ, তাও অপরের দোষ খোঁজা )
-
পোঁদে গু নিয়ে দৌড়নো – (অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে দৌড়নো ) । পন্দে গু লইয়া দৌড়ায় ।
-
এরকম সমালোচনা করতে গিয়ে কাউকেই ছাড়া হয় নি । যে “বাউনকে ভগবানের মত পুজো করতো সেকালের লোক, তারা কি বলেছে- একবার শুনি :-

লাখ টাকায় বাউন ভিখারি
-
বামুনের মড়া ভাসে জলে
ফলারের নামে উঠে বসে
-
বাউনে দক্ষিণা ধরে
ঢেঁকির নামে চণ্ডী পড়ে
-
রাজা , রাণীকেও ভয় করা হতো না । খুব বেশীদিন আগে নয় । একটা দীর্ঘদিনের অনশন চলেছিল ।
তখন শুনেছিলাম :-

বারো কাঁদি নারকেল, তেরো কাঁদি কলা
আজ  আমাদের রাণীর উপবাসের পালা ।
-
এটা পুরোনো প্রবাদ- কিন্তু অনশনের সময় মুখে মুখে ফিরতো !!! শুনেছেন হয়তো কেউ কেউ।

মন্ত্রীদের ব্যাপারেও প্রাচীন প্রবাদকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে বলা হত :-

রাজার আঙ্গুল মোটা মোটা
তাই দেয়, ফোঁটা ফোঁটা – এটা আসল । পরিবর্তিত রূপ হল :-
-
মন্ত্রীর আঙ্গুল মোটা মোটা
তাই দেয়, ফোঁটা ফোঁটা
=
সমাজের শীর্ষ স্থানীয়দের প্রতি যখন প্রবাদ প্রবচন – নদারৎ, তখন সাধারণ মানুষকে যে নাকের জলে, চোখের জলে হতে হয়েছে- সেটা বলাই বাহুল্য ।

এই গুরু সাইটেই সিকি ,টইয়ের একটা লিংক দিয়েছে । সেটাতেও প্রচুর প্রবাদ আছে। সেখানে প্রচুর প্রবচনের উল্লেখ আছে ।
কলমও চালানো হয়েছে সেই সব পুরোনো প্রবাদে । এভাবেই বহু প্রবাদের রূপান্তর ঘটেছে ।
টইয়ের লিংক থেকেই দিচ্ছি :-
পশ্চিম বঙ্গে ২০১১ র বিধান সভা নির্বাচনের পর একটা প্রবাদ আবার ভীষণ ভাবে চালু হয়েছিল :-
হেলে ধরার মুরোদ নেই, ধরতে গেছে কেউটে.....


আসলটা অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট ।
আগে ছিল – ল্যঙ্গোটের আবার বুকপকেট !!
এখন:-
জাঙ্গিয়ার আবার বুক পকেট
তাতে আবার ক্রেডিট কার্ড।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ও তৈরি হচ্ছে :-
খ্যাপা খাবি কি ঝাঁঝে মরে যাবি
-
ছিঁড়তে পারে না লোম, দেওয়ালে ছুঁড়বে বোম
-
কি বদল আনলে কাকা/আলুর কেজি তিরিশ টাকা
-
প্রবাদ প্রবচনের বিবর্তন। প্রাচীন কাল থেকে।

পাগল না পায়জামা।
পাগল না হাপপ্যান্ট
পাগল না বার্মুডা
পাগল না মাথাখারাপ
পাগল না সিপিএম
বাকি গুলো লিখলে জেল হবে আমার ।





-
প্রবাদ প্রবচনের গুরুত্ব পেয়েছে- দুষ্কৃতকারীরাও । সবচেয়ে মনোযোগ পেয়েছে- চোর !!! ডাকাত- বাটপাড়- গাঁটকাটা নয়, সিঁদেল চোর এবং ছিঁচকে চোর ।

পরের জিনিস অপহরণ যারা করে, সেই বিদ্যায় পারদর্শীদের সম্বন্ধে জন সাধারণের কৌতুহলের সীমা নেই ।
কোনো চোর ধরা পড়লে- গৃহস্থ কে সাহায্য দানের যত না বেশী ইচ্ছে, তার চেয়েও নিজের হাতের সুখ করে নেওয়ার জন্য প্রচুর লোক রবাহুত হয়ে ছুটে যায় ।

তাই- চোর, এই রহস্যজনক লোকটিকে নিয়ে যত বচন প্রচলিত, তেমন বোধহয় আর কাউকে নিয়ে আর হয় নি।

চুরি বিদ্যে বড়ো বিদ্যে, যদি না পড়ে ধরা- এই সত্য সকলেই মুক্তকণ্ঠে মেনে নেবে , বিশেষ করে যারা নিজে ধরা পড়ে নি ।

অবশ্য ধরা না পড়ার কৃতিত্বর ফলে যত চুরি হয়, ধরা পড়াটা তার একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র ।

চোরের মনস্তত্ত্ব, কর্মকুশলতা ও জীবন দর্শন সম্বন্ধে এত সূক্ষ্ম গবেষণা আর বিশ্লেষণ হয়েছে যে, যারা এতটা কৃতিত্ব দেখিয়েছে, তারা ঐ ধরা না পড়ার দল ভুক্ত ।

যেহেতু- “চোরে চোরে মাসতুতো ভাই এবং “ এক চোরে বিয়ে করে আর এক চোরের শালী- একে অপরের হাঁড়ির খবর অজানা নয় ।

তাই এই মহাবিদ্যা বিশারদেরা (এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ) সাধু পরিচয়ে যেমন সমাজে প্রতিষ্ঠা বজায় রেখে চলে, তেমনই পরহিতৈষণায় প্রেরণার তাগিদে যাবতীয় গোপন রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে ইঙ্গিত করেছে – “সাধু সাবধান

সবাই জানে- চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী । তাকে যত উপদেশই দেওয়া যাক না কেন- সব এ কান দিয়ে ঢুকে, ও কান দিয়ে বের করে ফেলে ।

এই রকম অবস্থায়, তাকে নিরস্ত করার উপায় নেই দেখে, অগত্যা গৃহস্থের সাবধান হওয়া ছাড়া আর কোনো চারাও নেই ।

কিন্তু, মানুষ আর কতো সাবধান হতে পারে ?

এমন শুভানুধ্যায়ী, আত্মীয় বন্ধুদের অভাব নেই – যারা চোরকে চুরি করতে বলে আর গৃহস্তকে বলে সজাগ থাকতে ।

প্রসিদ্ধি যে, মহাকবি কালিদাস, স্বীয় অসাধারণ কবি প্রতিভা সত্ত্বেও একদা রাজসভায় কয়েকটি সমস্যা পূরণে অপারগ হইয়াছিলেন ।

মহারাজা বিক্রমাদিত্য ( মতান্তরে মহারাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত) তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, কালিদাস উত্তর দিয়াছিলেন:-

দরিদ্রস্য গুণাঃ সর্বে ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ ।
অন্নচিন্তা চমৎকারা কাতরে কবিতা কুতঃ ।।

ভস্মাচ্ছাদিত অগ্নির ন্যায় দরিদ্রের গুণাবলী প্রকাশ পাইতে পারে না । অন্নাভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্তের নিকটে কবিতা কোথা হইতে আসিবে ?

ইহা হইতেই বঙ্গীয় ভাষায় প্রবাদ রচিত হইল :-

অন্নচিন্তা চমৎকারা,ঘরে ভাত নাই জীয়ন্তে মরা

যাঁহারা রসিক, তাঁহারা এক পদ আগাইয়া মন্তব্য করিলেন :-

অন্নচিন্তা চমৎকার, বস্ত্রচিন্তা নৈরাকার (নৈরাকার = একাকার)
তার চেয়ে বেশী চিন্তা, তামাক নাই যার
+++++++++++++++++++++++++++++
সমাপ্তম্

==================

তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ । দুর্লভ এই বইটি আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন বলে আমি শ্রী পরিচয় সেনগুপ্তের ( আগরপাড়া) কাছে ঋণী ।