Sunday, October 19, 2014

সলিলকি-৫

সাহিত্য তো একদিনে গড়ে ওঠে না !! ধীরে, ধীরে তার পাখনা বিস্তার করে । অনুভব, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গিমা, ভাব, ভাষা সব গুলোই এর সাথে জড়িত ।

নিজেকে পাঠক হিসেবেই ভাবি, কারণ- না পড়লে সাহিত্যের ধারা বোঝা যায় না, অন্তত আমি বুঝি না । আমার জানা, কিছু লোক আছেন, তাঁরা নিজেদের লেখা ছাড়া আর কারও লেখা পড়েন না। কিছু পাঠকও আছেন, যাঁরা- বড় পত্রিকায় লেখা ছাড়া পড়েন না ।


 তবে, ভাগ্য ভালো ইদানীং এঁদের সংখ্যা কমছে । আরও দেখা যাচ্ছে- “বৃহৎ” পত্রিকাদের দোষারোপ করার একটা ধারা । যারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তাঁরা কেন যে হীনমন্যতায় ভোগেন, সেটা বোধগম্য নয় ।
এটা ভুললে চলবে না, এই পত্রিকাগুলো যখন আরম্ভ হয়েছিল, তখন কিন্তু তারা ছোটই ছিল । এখনকার অনেকেই তখন পৃথিবীতে আসেন নি । বদলে যাচ্ছে, ভাষার ধরণ, লেখার শৈলী, শব্দের ব্যবহার ।

 সাধু ভাষা থেকে কথ্য ভাষায় রচনা এখনকার একটা গ্রাহ্য ধারা । বদলে গেছে কারিগরি । আগে, ক্ষুদ্র পত্রিকা খুব একটা বেশী ছিল না, এখন বেড়েছে । এগুলো যে বিক্রি হয়, তা নন্দনে ক্ষুদ্র পত্রিকার মেলা বা কোলকাতা বইমেলাতে গেলেই বোঝা যায় ।

বিষয় বস্তুর বৈচিত্র্যের জন্যই এদের জনপ্রিয়তা । তাছাড়া, লেখকদের পরিসরও অনেক বেড়েছে । ফেসবুক আছে, আছে ব্লগ আর ওয়েবজিন ! এখানেও অনেক দারুণ দারুণ লেখা দেখা যায় । ছাপানো পত্রিকার ( সে বৃহৎ হোক বা ক্ষুদ্র) চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই পাঠকদের কাছে এরা তাড়াতাড়ি পৌঁছয় এবং সারা পৃথিবী জুড়ে ।


অন্য পত্রিকারাও এখন এই আন্তর্জাল সংস্করণ বের করছেন- পাঠকের কাছে পৌঁছনোর জন্যই । বৃহৎরা পাঠকদের কাছ থেকে টাকা নিলেও, তাঁদেরও যে বিশ্বব্যাপী পাঠক চাই, সেটা তো স্পষ্ট । তাও, আমার মনে হয় ছাপা পত্রিকার একটা আলাদা আমেজ । যেভাবে খুশী পড়তে পারা যায় । অবশ্য এটাও অনস্বীকার্য, আজকাল ট্যাব , স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপের যুগে, এসবই পড়া যায় । আসলে, ব্যাপারটা আমার কাছে এরকম :- একটা লেখা কতজনের কাছে পৌঁচচ্ছে, সেটাই ধর্তব্য ।

কারণ, পাঠকের প্রতিক্রিয়া সাথে সাথে পাওয়া যায় । দুঃখের সঙ্গে এটাও লক্ষ্য করেছি- প্রতিক্রিয়া যদি লেখকের মনমত না হয়, তা হলে তাঁরা ক্ষেপে যান । মুদ্রিত পত্রিকায় সেটা অনুপস্থিত । তাই বলা ভাল, কে ছাপবে আর কে ছাপবে না, বা প্রকাশ করবে কি করবে না সেটা না ভেবে লিখে যান সবাই । কে কি বলল - সেটার ধনাত্মক দিক দেখে, নিজেকে তৈরি করাই ভালো । বৃথা আত্মশ্লাঘা ক্ষতি করে, সৃষ্টির । ভালো লেখার কদর থাকবেই । এটাই আমার অনুভব ।

Wednesday, October 15, 2014

নেট সংস্করণ আনন্দবাজারে লেখা শাহী সমাচার

Thursday, October 9, 2014

বাংলা ব্যাকরণ

আগে শরীর তারপর পোষাক ।

একই ভাবে আগে ভাষা তারপর ব্যকরণ ।

ভাষার শৃঙ্খলা বাংলা ভাষা কেন, সব ভাষাকেই বেঁধে রেখেছে ।

এবারে শুধু বাংলা ভাষার কথাই বলা যাক ।

=========

আপাতত বাংলা ভাষা নিয়েই লেখাটা সীমাবদ্ধ রাখি ।
একটা গোলমাল আছে , সেটা হলো ব্যাকরণ । এই ব্যাপারটাই বড্ড ঝঞ্ছাট পাকায় । মানুষ যখন কথা বলে, তখন তো ব্যাকরণ মাথায় রাখে না । কি প্রকাশ করছে সেটাই প্রধান ।
আমার এক সাঁওতাল বন্ধু ছিলেন । কথায় কথায় বলতেন – অসম্ভব্ । খুব বেশী উত্তেজিত হলে বলতেন – সাট্টাম্ ।
অনেক পরে বুঝতে পারি তিনি কি বলতে চাইছেন , তবে তাঁর সমজাতীয়রা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতেন ।
উদাহরণ :- হ্যাঁরে ! কোলকাতায় যে গেলি, কি বুঝলি শহরটার ?
উত্তর এলো – অসম্ভব । মানে সে এই শহরের বিরাটত্বকে এক কথায় ধরতে চাইলো।
এবারে ওর উচ্চারণ অনুযায়ী যদি লিখি, সেটা হবে – অশমবব । শেষ “ব” টা অনেক দীর্ঘ । এটাই যদি লিখি, তবে পণ্ডিতরা তেড়ে মারতে আসবেন এবং এটাই বলতে পারেন- আপনি মশাই ব্যাকরণেও “ নাস্তিক” ।
যাক, সে কথা । এবারে তাকে বললাম- এই যে তুই পাতাল রেল দেখলি, সেটা কেমন লাগল ?
উত্তর – সাট্টাম্ ।
মানে টা হলো ভয়ংকর ভাবে সুন্দর ।
আরও একটা সমস্যা- ব্যকরণ জানতে গেলে ভালো করে , ভাষাতত্ব, উচ্চারণ পদ্ধতিও জানতে হবে !
আমার এক বন্ধু আছেন, তাঁর ইংরেজী জ্ঞান সন্দেহাতীত । মুশকিল তিনি আবার ফোনেটিক্স (উচ্চারণ পদ্ধতি ) পড়ান !

আমার মত রজক বাহন তাঁর উচ্চারণ শুনে বুঝতেই পারেনা, যে কি বলছে ?
আমরা তো জানি মানডে অথচ তিনি বলছেন – মানডি ।

ল্যাও ঠালা ! এবারে এটা “ বার” ( না, ভাটিখানা নয় – রোজ ) না হাট কি করে বুঝি ? তিনি তো বলেই খালাস , আমি / আমরা বুঝি কি করে ?
গোড়ায় গলদ আরও আছে । আমরা দেখেছি রাঢ় অঞ্চলের ভাষা এবং বানান রীতি সব জায়গায় মান্যতা পায় । কারণ, মূলে ছেল ( ছিল নয় ) সব লেখকরাই ওই রাঢ় অঞ্চলের ই !
অতি কষ্টে আমার রাজশাহী জুবানে, আমি যখন বলি এই ভাষা তখন লোকে সেটা কিচকিচ বলে ভেবে শাখামৃগ ( বান্দর) বলবে ।
আরও বিপদ !!
যদি লিখি – কাল রেইতে মাল্ খেয়ে, জানটা তররররররররররররর্ হয়ে গেল – প্রথমেই তেড়ে আসবে সংস্কৃত ভাষার লোকেরা ! নাসিকা কুঞ্চিত করে বইলবে ( বলে – নয় ) এটা মড়া দাহ- শবপোড়া ভাষা !
আরবীর লোকেরা বলবে জান মাল হবে, মাল জান নয় ।
কি বিপদ !
বলি কি- এই সব দিকদর্শনের দিকদারী আর তকলিফ বোহোত হয়েছে । বাকীটা ঠিক করবে পাঠক আর সময় ‍!
আমরা খালি লিইখ্যে যাব ।
বহতা স্রোত যেমন সব মালিন্য মুছে নিয়ে যায়, ভাষার স্রোতও তাকে আরও জীবন্ত করে তোলে বলে আমার দৃঢ় ধারণা ।

স্বয়ং বিদ্যাসাগর যাঁকে আমরা “ বংশগত সংস্কৃত ব্যবসায়ী” বলেই জানি, তিনি কি করেছিলেন ?
“ শব্দসংগ্রহ” ( সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকার ৮ ই শ্রাবণ ১৩০৮ য়ে মুদ্রিত) দেখলে অবাক হয়ে যেতে হবে ।

অল্প – বেশী সাত হাজার শব্দের সংগ্রহে- মৌলিক এবং সেখান থেকে উদ্ভব হওয়া শব্দের বাইরে খাঁটি বাংলা শব্দ বা দেশী শব্দের পাশাপাশি ফারসী, আরবী, ইংরেজী, পোর্তুগীজ শব্দও নিয়েছেন অকাতরে ।

কেন নিয়েছিলেন ? সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই বলেই ।

ইংরেজ শাসন অবিভক্ত ভারতে আসার আগে, ফার্সী ছিল ভারতের শাসনের ভাষা । তারও আগে ছিল সংস্কৃত ।

দেশজ ভাষায় যারা কথা বলতেন বা এখনও বলেন তাঁদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে লাগল এই সব ভাষার সংমিশ্রণ ।

হট্ট- আপণ- বিপণি সরে গিয়ে এলো – বাজার, দোকান । এখন চলছে শপিং মল । এই সব “ শব্দ” র সঙ্গে আমজনতা অতি পরিচিত ছিল তখন এবং এখনও ।

ওজন করেছিলাম, তৌলন না করে এখন ওয়েট করিয়ে নেই, ক্ষতি কি ?

আগে আপসোস করতাম জালবাজির ফেরেবীতে পড়ে । এখন ? রিগ্রেট করি ফর্জারির সাইকেলে পড়ে । অনুতাপ করছি প্রতারকের পাল্লায় পড়ে এটাও বলি ।

বেকুব বনে যাই মাঝে মাঝে । মোটেই বোকা হই না । বিফুল্ড হই অবশ্য ।

কেতাবী থেকে জীবনের স্রোতে যদি ফিরে আসা যায় মন্দ কি ?

ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি, সিনেমা, অটো ডেইলি ব্যবহার তো হয়ই । লিখিত এবং কথ্য ভাষায়, সে “ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত” দের মধ্যেই ।

একটা সময় যে ছিল বিদেশী, সে এখন এতই আপন ( আপণ নয় ) যে আঙুল দেখালেও চিনতে কষ্ট হয় ।

লোন ওয়ার্ডস তাকে কৃতঋণ বা অতিথি শব্দ- যাই বলুন না কেন, আমাদের ভাষার শ্রীবৃদ্ধি তো ঘটাচ্ছে !!!

এখন রেশন কার্ড বললে ১০০ শতাংশ লোক বুঝবেন, কিন্তু সংবিভাগ পত্র বললে কি হবে ?
মুশকিলটা অন্য জায়গায় । " শুদ্ধ বাংলা ব্যাকরণ" এখনও লেখা হয় নি !!

যে ব্যাকরণ গুলো আমরা পড়েছি আর পড়ি- সেগুলো সংস্কৃত ব্যাকরণের সক্ষম অনুবাদ ।

চেষ্টা করেছিলেন- হুমায়ুন কবীর, কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয় নি !!

বাংলাদেশের বাংলা অ্যাকাডেমী উঠে পড়ে লেগেছে এটা তৈরি করতে ।

আমার বন্ধু- তপন বাগচী- যিনি বাংলাদেশের বাংলা অ্যাকাডেমীর অন্যতম কার্যকর্তা, তাঁর কাছেই জেনেছি এই খবর ।

আমরা বলি " খেদ্দাও" । কিন্তু লিখি- খেতে দাও ।

ঝিঙে একটা সাঁওতালি শব্দ । সেই হিসেবেই জানি এই সব্জীকে ।

" জ্যোৎস্নিকা" বললে- কয়জন এই সংস্কৃত শব্দ বুঝবে ? ?

বা - পলাণ্ডু এবং তীক্ষ্ণ কন্দ ????

পেঁয়াজ রসুন বললে, সবাই বুঝবে ।
ভাষা সতী লারি বা বেবুশ্যে নয়, যে তাকে পতিব্রতা হতে হবে ।


সুতরাং আগে বঢ়ো ভাইয়া !!!! গর্দিশে যা আছে, তাই হবে !!!

Tuesday, October 7, 2014

লক্ষ্মী পুজো-২০১৪

গত রাতেই উনি বলেছিলেন :- কাল সকালে কিছু বাজার করো, লক্ষ্মী পুজোর জন্য । আঁতকে উঠে বললাম- তুমি বললে, নিজে বাজার করবে, তাই পনেরশো টাকা দিলাম, সব শেষ ?

“হুদহুদের” মত কথার টাইফুন ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর । 

বলি, জিনিসের দাম জানো ? খালি তো ফেসবুকে বুলি আওড়াও আর জ্ঞান ! নিজেকে কি ভাবো তুমি ?

চুপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম । ভোর সাড়ে পাঁচটায় চা দিয়ে ঠেলে উঠিয়ে দিলেন ।

মুখ হাত ধুয়ে, হরির দোকান । সেখানে “বিষ” চা দিয়ে আচমন করে, রবির “রিস্কা” নিয়ে বাজারের দিকে রওনা ।

ওই সাত সকালেই ভীড়ে ভীড়াক্কার সব । দাম – স্কাই স্ক্রাপারের কাছাকাছি ।

দুটো শশা- ১৫ টাকা

কলা – ৭০ টাকা ডজন

একটা পদ্মফুল- ২০ টাকা

করে করে পকেট থেকে ৫০০ টাকা ধাঁ ।

===========

একজন ফুট কাটলেন :- দশ হাজার কোটী টাকার স্ক্যাম, উসুল করতে হবে তো !

Monday, October 6, 2014

ডুয়ার্স

ডুয়ার্স কথাটা এসেছে- দুয়ার থেকে । অসমিয়া, বাংলা, নেপালি, মৈথিলি, ভোজপুরি, মাঘাই এবং তেলুগু ভাষায় দুয়ারের অর্থ হলো  'দরজা'  সমতল অঞ্চলের ভারত থেকে ভুটানের প্রবেশ দরজা । ভুটানের মানুষ সমতল বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারতো বা পারে আঠেরোটা দরজা দিয়ে, তাই ইংরেজীর বহুবচনে এটা – ডুয়ার্স ।
কোচ রাজাদের অধীনে ছিল এই ডুয়ার্স ।  রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ভূটান দখল করে ডুয়ার্স ।
চা-বাগানের পত্তন হচ্ছে ডুয়ার্সে। শ্রমিক চাই। যারা খাটবে খুব। বদলে যা পাবে তাতেই খুশি। ডুয়ার্সের গাজোলডোবায় ব্রুহাম সাহেব ১৮৭৪ সালে প্রথম চায়ের বাগানের পত্তন করেন। অবশ্য তার ৩৫ বছর আগে অসমে এবং ২০ বছর আগে দার্জিলিং-এ চা-বাগানের যাত্রা শুরু। ডুয়ার্সের চা-বাগান তৈরি দেরিতে হওয়ার কারণ, অঞ্চলটা ছিল ভুটানের অধীনে। ১৮৫৯ সালে কর্নেল জেনকিনস নামের এক ইংরেজ জায়গাটা ঘুরে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, ‘চা তৈরি করতে জরুরি এই অঞ্চল খুব তাড়াতাড়ি ভুটান থেকে নেওয়া প্রয়োজন। ইংরেজরা দখল নেয় ১৮৬৪ সালে।
১৮৬৫ সালের ভূটান যুদ্ধে- ক্যাপ্টেন হেদায়ত আলীর নেতৃত্বে ব্রিটিশরা ভূটান থেকে একে বিচ্ছিন্ন করে ।
অঞ্চলটি দুভাগে বিভক্ত করে , পূর্ব অংশটি  চলে যায়- আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় আর পশ্চিমাংশটির নাম হয়- পশ্চিম ডুয়ার্স ।
১৮৬৯  সালে এই পশ্চিমাংশটির নাম হয় – জলপাইগুড়ি জেলা । এখন এটা নতুন আলিপুরদুয়ার জেলার একটি অংশ ।
কিন্তু, চা-বাগানের শ্রমিক কারা হবে? এই অঞ্চলের যাঁরা আদি বাসিন্দা, তাঁদের নানা প্রলোভন দেখিয়েও আকর্ষণ করা যাচ্ছিল না। কেন? দুটো মত চালু আছে। কেউ কেউ বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন সংখ্যায় খুব কম। তাঁদের জীবিকা ছিল কৃষিভিত্তিক। চা-বাগানের কাজে আগ্রহ ছিল না। আর একটি অভিমত, এই আদিবাসীরা, যাঁরা রাজবংশী, কোচ, মেচ সম্প্রদায়ভুক্ত, মূলত শিবের উপাসক ছিলেন। শিবের অবস্থান মাটিতে। সেই মাটিতে চাষ করে তাঁরা খাবার পান। চা-গাছ চাষ করে কোনও খাবার তাঁরা পাবেন না। না শেকড়, না ডাল, না পাতা, না ফুলফল তাঁদের খাদ্য হতে পারে। তাই এমন হতচ্ছাড়া গাছের চাষে ঈশ্বর বিরূপ হবেন বলে তাঁরা সরে দাঁড়ালেন।
সেই একশো আঠাশ বছর আগে আড়কাঠিদের সাহায্যে খাবার এবং ভাল থাকার লোভ দেখিয়ে যে, ওঁরাও, মুণ্ডাদের নিয়ে আসা হয়েছিল ডুয়ার্সে, তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্যে ব্রিটিশরা একই সঙ্গে দুটো শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এক, চাবুক। দুই, ধর্ম।

এই ডুয়ার্সে অকৃপণ প্রকৃতি বিছিয়ে রেখেছে সবুজ চাদর। মায়াময় চায়ের বাগান, প্রায় সব জায়গাতেই  খরস্রোতা নদী, ছোট ছোট টিলা, পাহাড়ী দিগন্ত, শাল সেগুনে ঢাকা মেঠো পথ- এসব কিছুই পাগল করে দেবার জন্য যথেষ্ঠ যে কোন প্রকৃতি প্রেমিককে।
মদেশী- এই কথাটা হলো আদতে নেপালি । অর্থ:- উপজাতি । চা বাগানে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ ভারতের থেকে প্রচুর উপজাতি (মূলত ওঁরাও, মুণ্ডা,) শ্রমিক আসে। এসেছিল রাঁচি, হাজারিবাগ, সাঁওতাল পরগণা থেকে ।
কালক্রমে, এদের নাম হয়ে যায় মদেশিয়া । এদের ভাষা বিচিত্র । বাংলা, নেপালি, হিন্দি এবং আরও কিছু ভাষা মিশিয়ে গড়ে উঠেছে- নিজস্ব ভাষা, সান্দ্রী ।
সরল ও সহজ বলে- এদের বশ করা সহজ । আমার দু বার ঘুরে মনে হয়েছে- এই শ্রমিকদের তথাকথিত “ দুর্দশার” মূলে কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা ।

ঋণ :- সমরেশ মজুমদার, উইকি ।


কালচিনি

মনুয়া কলা  ( কাঁটালি ) আমাদের পুজোয় লাগে, আর মালভোগ (মর্তমান) কলা খাইতে - বচ্চন থাপা গাড়ীর ষ্টীয়ারিং হাল্কা ঘুরিয়ে একটা ছাগলকে পাশ কাটাল ।
যাচ্ছিলাম ডুয়ার্সের কালচিনিতে, এক সদ্য পরিচিত বন্ধুর অনুরোধে । বচ্চন নিয়ে যাচ্ছিল ওখানে । প্রথমে ভেবেছিলাম, নামটা বোধহয় বানানো, আসল নামটা অন্য । কিন্তু পরে জানলাম, ওটাই আসল নাম। পরিচিত বন্ধু, গাড়ী পাঠিয়েছিলেন আমাদের মথুরা চা বাগান থেকে কালচিনি নিয়ে যাবার জন্য ।
চিলাপাতার ফরেষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ।  চিকন অ্যাসফল্টের রাস্তা চাকার নীচে গড়াচ্ছে ।

বচ্চনের লাইভ ধারাবিবরণী  । নিজে ড্রাইভারি করে, বউ চা বাগানে পাতা তোলার ওয়ার্কার । ছেলে ফার্ষ্ট ইয়ারে পর্যন্ত পড়ে, এখন আলিপুরদুয়ারের একটা রেষ্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করে ।
মেয়ে কোনো রকমে মাধ্যমিক পাশ করে এখন একটা নাচের ইস্কুল চালায় ।
বচ্চনের দুঃখ- কেউই পড়াশোনাটা ঠিক ভাবে করল না । তবে, গর্ব ভরে বলল- আমরা কেউই বসে নেই । টাকা রোজগার সৎ ভাবে করি ।
কালচিনি ঢুকতেই একটা লেভেল ক্রসিং । পার হয়ে ডান দিকে ঘুরে যেতে হয় বন্ধুর বাড়ী ।
ষ্টেশনের ধার ঘেঁসে বাজার । একটা এপিয়েল,  আর একটা বিপিয়েল – এই দুভাগে বিভক্ত বলে জানালো- বচ্চন ।
বিপিয়েল বাজারে সব্জী মাছ সস্তা, কারণ ওখানে একটু কম সরেস জিনিস বিক্রি হয় ।
সেদিন নেপালিদের পরব ছিল । অষ্টমীর দিন ও রাত থেকে শুরু হয়ে দশমী পর্যন্ত চলে । পরবটার নাম – ফুলমতিয়া ।
তাই এপিয়েল,   বিপিয়েল বাজারে – মনুয়া কলা ৫ টাকা পিস ।
সন্ধে বেলা মথুরাতে ফেরার সময়, বচ্চন বলল – ও চোখে কম দেখে, রাতে । আর বলল কখন- আমরা যখন চিলাপাতা পার হচ্ছি !
ওই অন্ধকার ঘন জঙ্গলে  একটা কাঠের ব্রীজে দুজন ফরেষ্ট গার্ড । একজনের হাতে বন্দুক দেখলাম ।

হাতীরা কাঠের ব্রিজে চড়ে না ।  বচ্চনের আরও যোগ :- এখন হাতী  বেরুতে পারে।
সন্ধে বেলা ওদের জল খাবার সময় ।
আমার শুরু হলো হৃৎকম্প । অন্ধকারে একটা কালো ছায়া দেখলাম মনে হল । বচ্চনের অভয় বাণী- ওটা হাতী নয় ।
আমার বুক ধরফড় করছেই । একে বচ্চন ভালো চোখে দেখে না রাতে, তার ওপর হাতী ! ভালোবেসে, গাড়ীতে একটা টোকা দিলেই........
বচ্চনের উদাস কথা :- এলে আসবে । লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকবো ।
গাড়ী এগোতে এগোতে  জঙ্গল পার হয়ে মথুরা বাগানে ।
======






Sunday, October 5, 2014

গুহ্যপূজা

বাল্মিকী রামায়ণে কিন্তু রামচন্দ্রের অকাল বোধন করে, দুর্গাপূজার কথা নেই । পরে কবি কৃত্তিবাস এটা বাংলা রামায়ণে অর্ন্তভুক্ত করেন ।
বলা আছে- মাঘ মাস থেকে আষাঢ় মাস, দেবতাদের দিন বা দক্ষিনায়ণ । আর শ্রাবণ থেকে পৌষ, দেবতাদের রাত বা উত্তরায়ণ ।
বলা হয়, ব্রহ্মার উপদেশে রাম শারদীয়া দুর্গা পূজা করেন, রাবণ বধের জন্য । দেবীকে নাকি বালিকা রূপে এক বেলগাছের নীচে পাওয়া যায় ।
সেখানেই রাম বোধন করেন দেবীর ।
সপ্তমীতে দেবী রামের ধনুকে প্রবেশ করেন । অষ্টমীতে, রাম রাবণের ভয়ানক যুদ্ধ । অষ্টমী- নবমীর সন্ধিক্ষণে রাম, রাবণকে বধ করেন আর দশমী হলো  বিজয় উৎসব ।
আরও বলা হয়- সপ্তমীর মধ্য রাতে যখন দেবী, রামের ধনুকে প্রবেশ করছেন গুহ্যভাবে- তখন রাম হোম করেছিলেন আর সেটা ছিল মধ্যরাত ( সার্ধ যামে গতে নক্ত – অর্ধেক রাতে) ।
তাই প্রচলিত বিশ্বাস- গুহ্যপূজা করলে শক্তি লাভ হয় ।