Saturday, May 22, 2010
“বাইগনের কিলো কত?”
ঘটি হেসে কুটিপাটি, বলে- কি বললে মাইরী!
বাঙাল তো!!! চেইত্যা গেল।
“ক্যান? বাইগন কইসি তো কইসি, তয় হইসে টা কি?”
ঘটি—ছোঃ! বেগুন বলতে পারো না?
বাঙাল:- ক্যান, বাইগনরে বেগুন কমু ক্যান?
ঘটি:- আহা, বেগুন বললে মিষ্টি শোনাবে!
বাঙাল:- তাইলে, বাইগনরে বেগুন না কইয়া, প্রাণনাথ কইলেই হয়, আরও মিষ্টি শোনাইবো! তা. তোমার প্রাণনাথের কিলো কত কইর্যাি ?
বস্তাপচা গপ্পো, কিন্তু বললাম বিশেষ কারণে। দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ নাতনী ঠেলা দিয়ে বলছে- এই দাদা, হালুম নানা হয়েছিস নাকি? শুনেছি আমার নাক ডাকে। কিন্তু নাক তো আর মিষ্টি করে ডাকে না!!! বিয়ের পর তিনি তো কানে কালা হয়েছেন বলে; বলে বেড়ান। কিন্তু এবার আমি কি করি? তিনি তো কোনোদিনই প্রাণনাথ বলে ডাকবেন না! নাতনিটাও! “দাও টু ব্রুটাস!”
শেষে ঠিক করলাম ও যখন বড় হবে; রবীন্দ্রনাথের বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ থেকে পড়ে শোনাব----
“শুধু বেঘোরে ঘুমঘোরে,
গরজে নাক বড় জোরে।
বাঘের ডাক মানে পরাভব,
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।"
ওঁ শান্তিঃ!!! ওঁ শান্তিঃ!!! ওঁ শান্তিঃ!!!
এই ক্যাটারিং এর ১৫ দিন পর একটা বিয়েবাড়ীর ক্যাটারিং। রাজুর তদারকিতে ফিস ফ্রাই ভাজা হচ্ছে। মেয়ের বাবা বললেন- “রাজু, একটা ফিস ফ্রাই দাও তো! টেষ্ট করে দেখি!” রাজু দুটো ফিস ফ্রাই একটা প্লেটে দিয়ে বলল- “ নিন কাকু, খান”। মেয়ের বাবা-“ না হে রাজু, টেষ্টটা ঠিক খুলছে না”। রাজু অম্লান বদনে বলল- “কেন কাকু? তেলটা তো ওই ১৫ দিন আগেকারই!!!!!!”
‘রাজুর ইংরাজী শেক্সপীয়ারের মত! উচ্চারণটাও সুস্পষ্ট। যেমন- বিরিয়ানীকে বলে- ব্রানী। গ্রেভিকে বলে – গ্রাভী। এরকম আর কি!!! ,,,,তো রাজু কে বলা হলো- কিরে? তুই কি আজও রিহার্সালে আসবি না? রাজু বলল-“ ওই যে নতুন ফ্ল্যাট বাড়ী টা হয়েছে না!!! ওই যে গঙ্গা আ্যাপয়েন্টমেন্ট, ওখানে একটা কাজ ধরেছি।” আ্যাপয়েন্টমেন্ট? পটল বলল –“ আরে ওটা আ্যাপার্টমেন্ট”। রাজু- “ঠিক বলেছিস! ওই যে নতুন ষ্টেডি( এস.টি,ডি) বুথটার নীচে!!!”
রাজু, হঠাৎ একদিন মোটোরবাইক নিয়ে হাজির! আমরা হইহই করতেই, রাজু লাজুক হেসে বলল- এটা “ষ্টলমেন্টে” কিনলাম! রাজু আর একদিন এলো। আমরা বললাম, আজ রিহার্সালটা দিয়ে যা!!! রাজু দেখলাম, খুব ক্ষেপে আছে। বলল- মুড খারাপ! আমরা বললাম – কেন? রাজু- “ওই যে দেখিস নি? রাজুর গেঞ্জি........... পরুন! চারিদিকে লেখা আছে? তা সবাই আমার গেঞ্জি........... পরলে, আমি পরব কি?”
রাজু এসে একদিন বলল- “তেরো কাপ নুন” টা কি রে? আমরা বললাম- কোথায়? রাজু বলল- এই তো গড়িয়াহাটার মোড়ে। আমরা দৌড়লাম, দেখতে। পটলা শেষে উদ্ধার করল! ওটা ছিল—“তাঁতের কাপড় কিনুন। শাড়ীর দোকানের আ্যাড! “তাঁ,ড় কি” টা উঠে গেছে।
যাই হোক, শেষের সে দিন এলো! রাজুও এসেছে। সেজে গুজে রাজু রেডি। মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত!
রাজু বলল- বন্দী ই ই ই- রক্ষী করো
ড্রপসিন!
একটা ঘটনা শোনাল। আপনাদের সাথে ভাগ করে নি।
এক মহিলার দুই জামাই। বড় জামাই বাংলায় বি.এ পাশ, আর ছোটজন বাংলায় এম্. এ পাশ।
যা হয় আর কি!
ছোটজন, বড়কে পাত্তা দেয় না। বড় অবশ্য তাতে কিছু মনে করে না।
বড়জন, শ্বাশুড়িকে চিঠি লেখে- শ্রীচরণেষু, মা বলে।
ছোটজন কোনো চিঠি লেখে না। কারণ “চরণ” থেকে তো ও বড় থাকতে হবে।
শ্বাশুড়ি দুঃখ করে ছোটজনকে লিখলেন- তুমি তো কোনো খবরই নাও না আমার। বড়জন কত খবর নেয়, চিঠি লেখে!!!!
ছোটজন চিঠি লিখল- হাঁটুরেসু মা বলে।
চরণ থেকে তো উঁচু!!!!!!!
শ্বাশুড়ি জবাবে ছোটজনকে লিখলেন- ভাগ্যিস, তুমি ডবল এম্. এ পাশ নও!!!!!!!!!
খুব ভীড়! রোব্বারের বাজার। সুখেন, যেতেই ওর বৌ উমাকে হাঁক দিয়ে বলল- কাকা আসছে! ভালো মাংস দিবা, বুঝলা?
তারপর বলল- কাকা, মেয়েটার না রোমান্টিক ফিভার হইসে।
আমি- কি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
সুখেন- হঃ! কি আর কমু। এইমাত্র ডাক্তার দেখাইয়া আনলাম।
আমি- প্রেসক্রিপশান দেখি!
সুখেন- উমা! পেচছিপশানটা লইয়া আস ত!
প্রেসক্রিপশান আনতেই দেখি- লেখা আছে- রিউমাটিক্ ফিভার।
ও হ্যাঁ!
গত ১৯ তারিখ, ধর্মতলা গিয়েছিলাম এক বন্ধুর (পুং- আপনারা ভারচুয়ালি চেনেন তাকে) সঙ্গে দেখা করতে। টাইম ছিল বিকেল ৬.১৫- ৬.৩০ এর মধ্যে। মেট্রোর ( সিনেমা হল) সামনে অ্যাপো। আমি একটু আগেই পৌঁছে গেলাম। খিদেও পেয়ে ছিল। পাশের “ ম্যাড্র্যাস টিফিনে” গেলাম দোসা খেতে। খেয়ে, বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে দেখি, বাঁ পাশের রান্নাঘরের দরজায় লেখা আছে- “নো কাম”। বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
কত শিল্পী যে ছড়িয়ে আছে!!!!!!
আমরাই “ভুল-ভাল”
তা,খুব দুঃখ করে; ও “ ভদ্রতার ব্যালান্স” নিয়ে আমায় ফোন করে ওর স্বরচিত ,এই শ্যামাসংগীতটা শোনাল
(সুর- রামপ্রসাদী)
দে মা আমায় বোতোল খুলে
যতই ভাবি আর খাব না,
সন্ধে হলেই যাই মা ভুলে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........
টাকাকড়ি নেই মা আমার
টাকা কামাই নানা ছলে
টাকাকড়ি নেই মা আমার ( উঁচু স্বরে)
টাকা কামাই নানা ছলে
(তাই) প্রাণ সঁপেছি, বাংলা মালে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........ ( খাদে)
রাস্তা দিয়ে, যাই হেঁটে মা
লোকে আমায় মাতাল বলে
রাস্তা দিয়ে, যাই হেঁটে মা
লোকে আমায় মাতাল বলে ( উঁচু স্বরে)
(তাই) বাংলা ধরেছি তোর চরণতলে
দে মা আমায় বোতোল খুলে........ ( খাদে)
আমি শুনে “ঢিশ্”!!!!!!!!!!
ভুলভাল
জানেন তো! পাড়ায় পাড়ায় আজকাল মন্দির গজায়! তা, আমাদের প্রিয় ক্রিকেটারেরও একটা চাটাই ঘেরা টেম্পোরারী মন্দির গজিয়ে উঠল। দেবতারা নানা পোজে মন্দিরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ খাঁড়া হাতে, কেউ গদা হাতে....ইত্যাদি। এখানেও আমাদের প্রিয় ক্রিকেটার ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে। যে কেউ বল হাতে পুজো দিতে পারে। পুরোহিতের পারমিশন নিয়ে প্রিয় ক্রিকেটার দেবতাকে বল করতে হবে। দর্শনার্থী, বল করার পর, প্রিয় ক্রিকেটার যদি-বাপী, বাড়ী যা বলেন মানে ছক্কা মারেন, তো দর্শনার্থীর দিন, খুব খুব ভালো যাবে। যদি চার মারেন, তো দর্শনার্থীর দিন, ভালো যাবে। সিঙ্গল বা ডাবল নিলে দিন মোটামুটি যাবে। ডট বলে হলে ৫০-৫০।
এক ক্রিকেট প্রিয় ভদ্রলোক “সুতানুটি ডে রাইডারস” এর জন্য গেলেন পূজো দিতে। “সুতানুটি ডে রাইডারস”পরপর কয়েকটা খেলাতে হেরে প্রায় যায় যায়। পুরোহিত, মন্ত্র পড়ে বল তুলে দিলেন ভদ্রলোকের হাতে । ভদ্রলোক দৌড়ে এসে বল করলেন প্রিয় ক্রিকেটার দেবতাকে।
বোল্ড!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!, মানে কাঠি গুলো সব ছিটকে গেল, বেল সহ ( এ বেল, সে বেল নয়)। তিনটে কাঠি মিলে উইকেট! কি উইকেড ব্যাপার!!!!!!!
পুরোহিত বললেন- সর্বনাশ! এরকম তো হয় না।
ভদ্রলোক- কি হবে?
পুরোহিত- দাঁড়ান, বল শুদ্ধ করতে হবে। দিন হাজার টাকা দিন!
অগত্যা মধুসূদন! কড়কড়ে দশটা একশ টাকার নোট বের করে দিলেন ভদ্রলোক!
পুরোহিত মন্ত্র পড়ে বল শুদ্ধ করে বললেন- “ ওঁ নো বলায় নমঃ”। বল শুদ্ধ হয়ে গেল, আর “আউটের” দোষ কেটে গেল। ফ্রি হিট! ভদ্রলোক মনের আনন্দে বল করলেন আবার! এবার কিন্তু -বাপী, বাড়ী যা । ভদ্রলোক মনের আনন্দে “ছপ্পর উপর কৌয়া নাচে, নাচে বগুলা, আরে রামাহো” গাইতে গাইতে মাঠে খেলা দেখতে গেলেন। তখন কি তিনি আর জানতেন, পুরোহিতের বাড়ীতে আয়কর হানা হবে????????
বলতেই ভুলে গেছি, ভদ্রলোক টেনিদা ভক্ত।
হলে কি হবে!!! ঘোর কলিকাল! পুরোহিতের প্রতিকার কাজেই লাগল না। পুস্করে স্নান করেও কলিকালে চন্দ্র গ্রহণ হচ্ছে। শুধু “ গেলাম আর এলাম” আর “ফেল”। আমাদের গর্ব টেনিদাই যা খেলল। “সুতানুটি ডে রাইডারস” হেরে ভূত! সবার মুখে শ্লোগান- খেলব, ক্যাচ ফেলব, হারবো রে! ললিত বাণী আর পাওয়ারের শক্তি প্রদর্শন।
“আসছে বছর আবার হবে” বলে ভদ্রলোক হাজারীবাগে ফিরে গেলেন। গত তিন বছরে ওই বিদেশি ওমলেট আর দেশী মামলেট মিলেমিশে একাকার হতে পারল না। “আসছে বছর আবার হবে”, হবেই হবে।
দুগ্গা! দুগ্গা! তাই যেন হয়! হয়ে যেন যায়!!!!
Friday, April 9, 2010
আমার শ্বশুরবাড়ী যাত্রা!
ট্রেন থেকেই শুরু করি। শিয়ালদা থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস সন্ধ্যে ৭.৩৫ এ ছাড়বে।কোচবিহার যাব। খুড়তুতো শালাবাবুর বিয়ে। কোচবিহারের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৩৬ বছরের সর্ম্পক। সৌজন্য- বিবাহ।মনটা খুব ভালো নেই। গচ্চা গেছে অনেক পয়সা। কি সব উপহার কিনেছেন আমার উনি। সান্তনা দিলেন- আরে আমরা তো সিনিয়ার সিটিজেন। ভাড়া তো কম লাগছে যেতে।বুঝলাম, সান্তনা দিচ্ছেন। জনান্তিকে ভাবলাম, মরে তো গেছি; মাথার চুল কামালে আর কতটুকু হালকা হব?যথারীতি, শেয়ালদা পৌঁছলাম। জানি প্ল্যাটফর্ম ৯। শেষ মুহূর্তে মাইকে বলল প্ল্যাটফর্ম ৮। যৌবনের সেই ‘সার্ভিস উইথ এ স্মাইলের’ কথা মনে পড়ল। “সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে”। ‘রং বদলায় না’।হুড়মুড় করে প্ল্যাটফর্ম ৮। কোচ নং ৯।প্ল্যাটফর্ম না হোক, কোচ তো হল। এবার দেখলাম, যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানেই কোচ টা দাঁড়াল। কোচবিহারে বিহার করতে যাচ্ছি, কোচ তো সামনে দাঁড়াবেই। কি বলুন? তা, ধীরে ধীরে সীটে গিয়ে বসে,জম্পেশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। হাঁ হাঁ করে উঠলেন, সামনের ভদ্রলোক।“খাবেন না, খাবেন না!”“কেন?”“দেখছেন না! এই যে, আমার প্যাকেট। আমি বলে খাচ্ছিনা, আর আপনি খাচ্ছেন?”“তাতে, আপনার কি? আমি তো আপনার কাছে সিগারেট চাই নি।”“বুঝবেন ঠ্যালা, যখন পুলিশ ধরবে!!!”“কেন, পুলিশ ধরবে কেন, আমি কি চুরি করেছি নাকি ,আপনার সিগারেট?”“কোন বেকুবের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা!!! কোত্থেকে আসচেন? দেখে তো হটেনটট মনে হচ্ছে না”“দেখুন! গালাগালি করবেন না!বেকুবটা বুঝি, হটেনটট মানে কি?”“যা ইচ্ছে বুঝুন, শুধু সিগারেটটা খাবেন না”“আরে মশায়, আপনি কি আমার গার্জেন নাকি? উনি তো সাথেই আছেন, কিছু তো বলছেন না!! আপনি কে মশাই?”
এবার হাসতে হাসতে পাশের কিউবিকল থেকে ভদ্রলোকের মেয়ে ( পরে জেনেছি) এসে সামনে এসে বলল- জেঠু, অনেকদিন হলো রেলের প্ল্যাটফর্ম আর কামরায় সিগারেট খাওয়া বন্ধ। পুলিশ দেখতে পেলে, হয় ফাইন না হয় জেলে পুরবে আপনাকে। জানেন না? অনেকদিন ট্রেনে চড়েন নি, না?ধাঁ আ আ-- করে মনে পড়ল। চট করে সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে, আমার পক্ষে যতটা সম্ভব মোলায়েম মুখে বললাম- আগে বলবেন তো!!! খালি হেঁয়ালি করে যাচ্ছিলেন!!! ভদ্রলোক স্বভাবতই গম্ভীর।বললাম- আমার চেহারা দেখেছেন? (যাঁরা আমায় “লাইভ”দেখেছেন, তাঁরা জানেন, আমি গোরিলাদের সাক্ষাৎ বংশধর)কেন? মারবেন নাকি?ছিঃ! ছিঃ! কি যে বলেন!!!!আরে না মশাই। আমার যেমন দেহে ফ্যাট, সেরকম ব্রেনেও ফ্যাট! তাই ব্রেনের হার্ড ডিস্কের “ফাইল আ্যলোকেশন টেবল”(FAT) কাজ করে না আমার। ফলে,এই ধূমপায়ীদের বিরূদ্ধে ফরমানটা ভুলে মেরে দিয়েছি।এবার মেয়ে হেসে বলল- NTFS বা New Type File System, Brainএ লাগিয়ে নিন। অনেক তাড়াতাড়ী কাজ করবে। আমি বললাম- বুঝলে হে, আমার সবই Unmovable Files. কিস্সু কাজ হবে না!বাবার পালা এবার- কি ভাষায় কথা বলছেন আপনারা?আমি- হটেনটটদের ভাষা!করে, করে; অবশেষে রাতের খাওয়া। রুটি একদম খেতে পারি না, সেই শুকনো রুটি! আর আলুর দম! উনি বললেন- খরচা বাঁচাচ্ছেন!!! ( আলু ৪ টাকায় নেমে এসেছে)যাই হোক, খেয়ে, টয়লেটে গিয়ে সিগারেটে সুখটান দিয়ে; শুয়ে পড়লাম।
বোধহয়, মালদা হবে। রাত নিঝুম। আমাকে কে যেন দূর থেকে ডাকছে। ও মশাই,ও মশাই.......। নিশির ডাক হতে পারে ভেবে ঘাপটি মেরে অনেক ক্ষণ পড়ে থাকলাম। জোর ঠ্যালা খেয়ে হুড়মুড় করে উঠতে হলো। উনি, দেখি মাথা নিচু করে বসে। ওই ভদ্রলোক, সঙ্গে আরও কিছু লোক---- মশাই, আপনার নাকের সাউণ্ড বক্সের “বাস”টা কমাবেন?“হটেনটটদের ভাষা জানলেন কি করে?”“রাখুন তো, কোচে কেউ ঘুমতে পারছে না”“কেন?”“অত জবাব দেবনা! আর ঘুমোবেন না। এবার আমরা ঘুমোই”“এ তো তুঘলকি ফরমান”!“পরিবর্তনের জমানা! বুয়েছেন?????”“এই এক প্যাকেট সিগারেট দিলাম, টয়লেটে মাঝে মাঝে গিয়ে খেয়ে আসবেন, কিন্তু খবরদার!!!!! ঘুমোবেন না!!!! আপনি হৃদয়হীন হতে পারেন, কিন্তু আমরা নই। তাই সিগারেট দিলাম”“নাকের আমি, নাকের তুমি, নাক দিয়ে যায় চেনা”--- একজন ফুট কাটলেন।আরও একজন--- “ঘুম পেয়েছে? বাড়ী যান! ট্রেনে কেন স্যার!”বাউনের ছেলে- সব সইতে পারি, এমনকি চর্মপাদুকার প্রহার পর্যন্ত, কিন্তু অপমান???? কদাপি নয়! রেগে গিয়ে টয়লেটের সামনে মোবাইল চার্জ করতে লাগলাম!সক্কাল বেলায় নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে প্রায় অর্ধেক কোচ খালি! যাবার সময় ওই মেয়েটি বলে গেল—বোফোর্স কামান দেখি নি। আওয়াজটা শুনে গেলাম।
গোটা উত্তরবঙ্গে, দোলের দিন আবীর খেলা হয়।আর তার পরের দিন রং খেলা।কোচবিহারও তার ব্যতিক্রম নয়।ফলে, যে দিন কোচবিহার পৌঁছলাম, সে দিন কোলকাতায় দোল খেলা হলেও, কোচবিহার নিরাপদ।কোচবিহার নামে ষ্টেশন থাকলেও, নিউ কোচবিহার ষ্টেশনে নামতে হয়।ওখানেই উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের যাত্রা শেষ। নিউ কোচবিহার ষ্টেশন থেকে কোচবিহার শহর প্রায় ৯ কি.মি.। রিক্সা, বাস আর প্রচুর পরিমাণ ভাড়া গাড়ী, আপনাকে শহরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।এমনিতে, চাটার্ড গাড়ীতে, ষ্ট্যানডার্ড ভাড়া-১৫০ টাকা।স্থানীয় ভাষা, বাঙ্গাল না হলেও, একটু অন্যরকম। পরে, তারও উদাহরণ পাবেন।আস্তে আস্তে মালপত্র নিয়ে, বড় শালাবাবুর ( ষ্টেশনে এসেছিল, রিসিভ করতে, নাম- রাহুল) সঙ্গে ওভারব্রিজ পার হয়ে, আমার ওনার সঙ্গে যখন বাইরে এলাম, তখন প্রায় সব গাড়ী অদৃশ্য। বসার উপযুক্ত করে নেওয়া,একটা টাটা “এস” গাড়ীকে, ডাকল রাহুল।ড্রাইভার- জামবাবু না? এই গাড়ীতে আসচেন? বসেন, বসেন। দিদিও বসেন। রাহুলদা, আমারে বসায়ে ইষ্টিশনে গেল্, আপনাদের আনতে। মজবুত গাড়ী।ভয় নাই।বলে, সিটটা বাড়ি দিতেই,একটা মেঘ উড়ে এল। ধূলো না নস্যি, বুঝলাম না! হাঁচতে, হাঁচতে প্রাণ অতিষ্ঠ।ড্রাইভার- তা অনেকদিন পরে আসতিছেন, জামবাবু।কোচবিহারের অবস্থা একটু পালটিছে।আপনিও মোটা হই গেল্ ।মেঘটা আস্তে আস্তে কাটছে! হাঁচিটাও কমছে!ড্রাইভার, এবার তুরীয় মেজাজে।বলল- জামবাবু, একটা নতুন টিভি কিনসি। কালারিং। বউ পোস্কার করতে যাতিছিল, আমি মানা করসি। করসে কি, কাপড়ে সোডার জল দিয়া ঘসতে যাতিছিল, ওই ইস্ক্রিনটা। মাথ্থা খারাপ! সোডা দিয়া ঘষলে যদি রং উইঠ্যা গিয়া সাদা কালো হইয়া যায়! সোডা দিয়া আজকাল খুব রং উঠতিসে। কি দিয়া পোস্কার করব, বলি ফ্যালান তো!গম্ভীর হয়ে বললাম, বিয়েটা মিটে যাক, তোর বাড়ী গিয়ে সব বলে দেব।কোচবিহার শহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব রাস্তা সোজা। সুপারী গাছ প্রচুর। আর প্রায় প্রত্যেক বাড়ীর সামনে বাগান।
যাই হোক, শ্বশুর বাড়ী পৌঁছলাম। ওনাকে গ্যারেজ করে, বেরুলাম দাড়ী কাটতে। বাক্সের মধ্যে কোথায় সব যন্তর সেঁধিয়ে আছে!!! কে আর খোঁজে?কাছেই “ প্রিন্স হেয়ার কাটিং সেলুন”। মালিক- পরমেশ্বর। ছাপরার লোক! কিন্তু, কোচবিহারে থেকে ৯৯% বাঙ্গালী। সেই ১৯৭৪ থেকেই আমার বন্ধু। গিয়ে দেখি, ও গতকালই দেশে গিয়েছে। ছেলে রামেশ্বর। ছোট্ট করে রামু। লম্বায় ৪ ফুট ৫ ইঞ্চি। দেখেই, চিনতে পারল।বাপ্পা, রাহুলের বন্ধু। ওখানে বসেছিল।“ শুনতিচীলাম, আপনে আসতিচেন। নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেসে আসিচেন?”‘হ্যাঁ”।তা- আচেন কেমুন?ওই ডাল ভাত খেয়ে কোনরকমে আছি আর কি!জামবাবু, আপনে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দ্যান?কেনো রে?না, ডাল চালের যা দাম! বড়লোকেরাই খেতে পারে। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে, আপনারে ধরবে। বুঝচেন নি??? রামু- কি কাটবেন?আমি- যাঃ!! বাবা! আমি কাটব কেন? তুই তো কাটবি!বাপ্পা- কিন্তু, জামবাবু, রামু তো লাফিয়ে, লাফিয়ে আপনার চুল বা দাড়ী কাটবে।সেলুন, ভর্তি লোক চেয়ে রইল।
তা, পরের দিন রং খেলা। বাইরে যেতে পারছি না।এদিকে কম্পিউটারও নেই, যে অরকুটে ঢুকব।মেয়ে মহলে উত্তেজনা। নানারকম প্ল্যানিং চলছে।যার বিয়ে,(সুষ্মিত) গম্ভীর মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ, একটা শন্না নিয়ে এসে বলল- আয়না দিয়ে দেখলাম,ঘাড়ে একটা ছোটো পাকা চুল দেখা যাচ্ছে, তুলে দাও তো!চশমা পরে, তন্ন তন্ন করে সেই অদৃশ্য পাকা চুল খুঁজে পেলাম না। তাই একটা কলপ করা চুলই তুলে দিলাম। শালাবাবু, খুব খুশী। বলল- যাক, আপদ বিদেয় হলো। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও পারছিলাম না।ভেতরের বারান্দায়, একটা ইজিচেয়ার। বসে পড়লাম। সামনের ছোটো টুলে পা দিয়ে বেশ আরাম। ননীবালা, সংক্ষেপে ননী, চা নিয়ে এলো। বুঝলাম, কিছু বলতে চায়।বলো, ননীকইলকাতায় কি রোজই হাট বসে, জামবাবু?কেন রে, ননী?শুনিসি, ইষ্টিশনে প্রচুর লোক, আমাদের ইআনে , প্রচুর লোক মানি তো হাট করতি যাওয়া!!!আস্সা, তোমারে পুছ করি, ওই যে আলা ( আলো, সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প) নাগাসে না, আমদের পঞ্চরঙ্গী মোড়োত!, এই টা কিসের আলা?ক্যানো রে ননী?লোকোত বলিসে, ওড্ডা নাকি ইলেকটিরি!হ্যাঁ তো!মস্করা করতিস? ইলেকটিরি হলি তো তার থাকিবে। ওড্ডা তো দেখত্ পারি না। ( কনসিলড্ অয়ারিং)তোর কি মনে হয়?ওড্ডা হলো কেচ্চিন ( কেরোসিন)। ওড্ডা তে ঢাউয়া (বড়) বাস্ক আছি না!!! হলদা আলা তো কেচ্চিনেই হয়।দুক্কুর বেলাত আসি মিনিস পালির লোকেরা ঢাউয়া বাস্কত ঢালি। বুঝিছ?ইতিমধ্যে লোডশেডিং ( ওখানে এটা না হলে, লোকে ৭ দিন আশ্চর্য হয়ে থাকে, কারণ, আমাদের কারেন্ট যায়, ওদের আসে!)ভেতরের বারান্দায় একটা খোলামেলা উঠোন আছে। ফলে, ওখান দিয়েও ঢোকা যায়। একটা কুকুর ঢুকে পড়ে আমাকে দেখে ল্যাজ নাড়ছিল। কুকুরে আমার ভীষণ আ্যালার্জি।তাড়াতে গেলাম। রাহুল বাধা দিল।জামবাবু,একটা পাখা ওর ল্যাজে ব্যাঁধে দিতেসি। তুমি বিস্কুট দাও, ও ল্যাজ লাড়লেই তুমি পাখার বাতাস পাবা।
একটু পরেই, কালোদা এন্ট্রি নিলেন। কালোদা,(ইনি প্রায় চলতি বাংলাই বলেন) প্রায় আমার বয়সী, একটু বড়ই হবেন। মেজ খুড়শ্বশুরের থেকে বয়সে অনেক ছোট হলেও,ওনার বন্ধু। নাটক করার শখ আছে। অনেকদিন আগে, কোচবিহারেই ওনার একটা ঐতিহাসিক নাটকের রিহার্সাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।“জাঁহাপনা” কে “হাজাপোনা” বলেই যাচ্ছিলেন। আর একটা ডায়ালগ ছিল, রক্ষী---বন্দী কর। কালোদা বারবার বলছিলেন, বন্দী- রক্ষী কর।বুঝলে হে জামাই! এবার একটা জব্বর লাটক লামাচ্ছি-কালোদা উবাচ।কি নাটক, কালোদা?নিজেই লিখেসি।বাঃ! বাঃ!হনুমানের ওপর বেস করে, বুঝলে? তা কত্তদিন থাকিসঅ?ক্যানো কালো দা?না, তোমাকে ভাবতিছিলাম, ওই লিড রোল টা দিব। সিরিয়াসলি বলছি। ওর্রম চেহারা!!! ( কালোদা, কিন্তু সিরিয়াস ছিলেন)একটু আসছি বলে, উঠে বসার ঘরে গেলাম।কালোদা একটু অবাক হলেন, আমার এই ব্যাবহারে।রাহল বলল- জামবাবু, মনে ব্যাথা পাসে।ক্যান?????আরে হাটের গল্প ভুলা গেলা?কোনডা রে?
এবার রাহুলের পালা ( আমি কোচবিহারের ভাষা থেকে কিছুটা অনুবাদ করে দিলাম)“হাটে, কলাওয়ালা আর পানওয়ালা বসে। কলাওয়ালা, একটু ভুলো মন।একদিন, পানওয়ালা একটু আগে এসে হাটে বসেছে। কলাওয়ালা, আসছে দেখে, মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল।পানওয়ালা- ও কলাওয়ালা, তোর মাথায় ওড্ডা কি?কলাওয়ালা- কলাপানওয়ালা- কাটি দিম, তোর গলাকলাওয়ালার খুব দুঃখ হল। বাড়ীতে বৌ বলল- কি হয়েছে?শুনে বলল- তুই আগে যাবি। জিজ্ঞেস করবি- ও পানওয়ালা তোর মাথায় ওড্ডা কি?যেই বলবে, পানবলবি- কাটি দিম তোর কানকলাওয়ালা খুব মুখস্থ করে পরের দিন, আগে হাটে গেল।পানওয়ালা আসছে দেখে – ও পানওয়ালা, তোর মাথায় ওড্ডা কি?পানওয়ালা- পানকলাওয়ালা- তোর পিছত ঢেঁকি।পানওয়ালা- মিলল না,মিলল না,মিলল না।কলাওয়ালা- মিলল না তো কি? পিছত ব্যাথা তো লাগসে!বুঝলা, কালো কাকু, জামবাবুর পিছত ব্যাথা তো লাগসে! তারপর, বিয়ের গপ্পো! তা সেটা না হয়, অন্য কোনো সময়!