Saturday, August 9, 2014

আমার দিনলিপি ০৯/০৮/২০১৪ ( বিকেল পাঁচটা দশ)


-------------
প্রৌঢ়ত্ব শেষ, সেই কব্বে ! এখন আমি কালের নিয়মেই বৃদ্ধ । শরীরে নানা রোগ ! বাতের ব্যাথা থেকে শুরু করে উচ্চ রক্ত চাপ ।

বাল্যে, কৈশোরে, যৌবনে যাদের সাথে মিশেছি- তারা আজ হয় বিচ্ছিন্ন আমার বসবাসের জায়গা বদল হবার ফলে, নয়তো, পৃথিবীর “চাপ” সহ্য না করতে পেরে ভবনদী পার !
এখন আমি কোলকাতার শহরতলী, দমদমে থাকি । জায়গাটা ঠিক সেভাবে “পশ” হয়ে উঠতে পারে নি , যদিও আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর খুবই কাছে ।
ফেসবুকের বাইরে আমার জগৎ- হরির দোকান, নাগের বাজার ফ্লাই ওভারের নিচে বাজার, নাগের বাজার ।
অবরে সবরে চলে যাই আশু বাবুর বাজারেও, সেই বেলগাছিয়ায়, তাও ছেলের গাড়ীটা ফ্রি পেলে ।
হরির দোকানের পাশেই রিক্সাষ্টাণ্ড । ভদ্রলোকেদের ভাষায় এই রিক্সা চালকরা লুম্পেন প্রলেতারিয়েত।
চা খেতে আসে- ডিমওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, মাছ ওয়ালা এই সব “পাবলিক” !
এরাই আমার বন্ধু, এবং অনেক জায়গায় এরা একদম সাচ্চা ।
ফ্লাই ওভারের নীচের ফুটপাথের দোকানীরা গেলেই ভ্রাম্যমান, কেটলী আর প্ল্যাষ্টিকের ছোট কাপ হাতে ঘোরা- চা ওয়ালাদের কাছ থেকে চা খাওয়ায় ।
চা শেষ হলে, একটা বিড়িও দেয় ! সিগারেট মহার্ঘ । তাই, মুখে না ধরানো সিগারেট থাকলেও সচল মস্তিস্ক আর হাতকে বাড়িয়ে দেয় না- দেশলাইয়ের দিকে ।
এই সব লোকেরাই বিভিন্ন পার্টির ভোট দাতা । এদের নিয়ে চিন্তা ভাবনার শেষ নেই পার্টিদের ।
অথচ, এদের সাথে মিশলে জাত যাবে বলে সুকৌশলে, সুচারু ভাবে ভুরু বেঁকিয়ে হরির দোকানেই চা খান নেতারা, দাদারা ।
কোথায় যেন পড়েছিলাম- উচ্চ চিন্তা করতে গেলে, পেট ভরানো দরকার । তবেই মাথা ঠিক থাকবে । খালি পেটে এসব হয় না । “অন্ন”কেই ভগবান বলা হয়েছে ।
এটাও শুনেছি- ক্ষুধার্তের কাছে , ভগবানও নাকি খাদ্য ছাড়া অন্য কোনো চেহারায় আসতে সাহস করেন না ।
হবে হয়তো ! এসব ডায়ালেক্টিস বোঝার মত ক্ষমতা আমার নেই ।
তাই আমার লেখাতে থাকে তরি তরকারির দাম সহ অন্যান্য অনেক নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিশের ক্রয় মূল্য ।
টিভিতেও ভারি আলোচনা হয়------- বাজারের দরদাম নিয়ে ।
অ্যাকাডেমী পুড়লে দুঃখ পাই, কারণ কুশীলবরা শিল্পী হলেও তাঁদেরও পেট আছে । পাপী পেট কা সওয়ালের জন্য এঁনারও দায়বদ্ধ থাকেন পরিবারের প্রতি । তাই মেরামত করার জন্য বন্ধ থাকলে দুশ্চিন্তা ।
বেশী বৃষ্টি পড়লে, আবার যাদের কথা বললাম---- তারা বেরুতে পারে না । আজকেই গঙ্গা মাসী আসে নি আমার বাড়ী রান্না করতে ।
জানি- কাল সকালেই এসে ফোকলা মুখে হেসে বলবে- মেসোমশাই, চা খাবা?
বৃষ্টিতে অসহায় ভাবে বাজারে দাঁড়িয়ে ভিজলে- পরম মমতায় আড্ডার বন্ধু রিক্সাওয়ালা হাত ধরে ওঠায় নিজের রিক্সাতে ।
বেশী পয়সা পাওয়া যাবেও জেনেও তারা অন্যকে না তুলে আমাকেই তারা ওঠায় রিক্সাতে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সামান্য দশ টাকায় হয় না ।
জেশপ খুললে শান্তি পাই । পুজোর মুখে তাও তো কিছু লোক টাকা পাবে !
রাজনীতি দিয়ে কি হবে ?
আগে পেট, পরে সব কিছু !
আমি, জানি যাঁরা ফেসবুকের বন্ধু, তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন, ভুল ত্রুটি শুধরে দেন।
তবুও যে আমি পাতি নন- ইনটেলেকচুয়াল ! বিড়ি টানাই আমার কাজ ।
=================
আমার বাবার খেদ ছিল- ওনার বড় ছেলেটা মানুষ হলো না !

কি আর করি---------- এই দুঃখ নিয়েই থাকবো, যতদিন বাঁচবো । আমার চেয়ে ভালো করে আর কে জানে---------- আমাকে দিয়ে কোনো কাজ হয়নি আর হবেও না !

No comments: