(জানি, অনেক বিতর্ক, প্রশ্ন উঠবেই তবু একটা অক্ষম চেষ্টা)
=======================
ইদানীং একটা ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফেসবুকে , বিভিন্ন চ্যানেলের বাংলা সিরিয়াল নিয়ে আলোচনার।
নাসিকা কুঞ্চন, দেখা যায় না এ সব, সবাই ভালো ভালো শাড়ী পরে থাকে । এমনকি কাজের পরিচারিকা পর্যন্ত – এরকম সব ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য ।
আমার মনে প্রথম প্রশ্নই যেটা জাগে---- যাঁরা এই সব মন্তব্য
করছেন, তাঁরা এই সব সিরিয়াল না দেখেই কি মন্তব্য করছেন ?
মনে হয় না ! কারণ, ক্ষমা ঘেন্না করে তাঁরা নিশ্চয়ই
দেখেন । না হলে, এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানলেন কি করে ?
অবশ্য না দেখেও পরোক্ষ ভাবেও জানতে পারেন !
বলে রাখি--- চ্যানেলরা এই সব সমালোচকদের পাত্তাই দেয় না ।
কারণ, তাদের টার্গেট সেই সব মানুষরা- যারা শহরে, গ্রামে, মফঃস্বলে , আধা গঞ্জে বাস করেন ।
শহরে কারা দেখেন ?
অবশ্যই মহিলারা সিংহভাগ
( এদের মধ্যে প্রচুর উচ্চ শিক্ষিতাও আছেন)
তবে প্রচুর পুরুষও আছেন, যাঁরা এই সব সিরিয়াল দেখেন ।
দু এক জন-বাংলা সিরিয়াল চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতাদের
সাথে দৈবাৎ কথা হয়েছিল।
বলে রাখা ভালো---- সিনেমা যেমন ডিরেক্টরস্ মিডিয়াম, সিরিয়াল কিন্তু তা নয় !
এটা স্ক্রীন প্লে রাইটার আর সংলাপ রচয়িতারদের একচ্ছত্র
রাজত্ব ।
যিনি যত ভালো চিত্র নাট্য/ সংলাপ লিখবেন, তাঁর চাহিদা তত বেশী ।
এবারে প্রশ্ন উঠতেই পারে---- একটা সিরিয়াল যে ভালো চলছে, সেটা বোঝা যাবে কি করে ?
প্রথমেই একটা কথা আছে- সেটা হলো, রিচ । কত
লোকের কাছে পৌঁছচ্ছে একটা সিরিয়াল ।
একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্র আছে, যার
মাধ্যমে বোঝা যায়- একটা নির্দিষ্ট সিরিয়ালের “রিচ” কতটা !
আবার এই রকমই একটা
যন্ত্রের সাহায্যে বোঝা যায়---- সেই সিরিয়াল কতক্ষণ ধরে রাখতে পারছে
দর্শকদের। অবশ্যই বিজ্ঞাপনের সময়টুকু বাদ
দিয়ে ।
এই দুটো মিলিয়েই টি আর পি বা টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট ।
এবারে যে সিরিয়ালের টি আর পি বেশী- সেই চিত্রনাট্যকার ও
সংলাপ রচয়িতার কদর প্রচুর ।
মানুষের আকাঙ্খা অনেক আর সেটা অনেকেই জীবনে পূরণ করতে পারে
না ।
ধরুন- একজন মধ্যবিত্ত বাড়ী, যাদের সব
মিলিয়ে কুল্লে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা আয়, জীবনে
মাত্র একটাই ভালো শাড়ী বা পাঞ্জাবী, আপনারা মানুন চাই না মানুন- সেই
দর্শক কিন্তু এগুলো দেখে মানসিক তৃপ্তি পায় ।
সাজানো গোছানো ঘরদোর একটা তৃপ্তি আনে বই কি তাদের জীবনে ।
এবারে ধরুন- একটা গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে । চুপি চুপি করলে তো
কেউ টের পাবে না আর খেলিয়ে তুলতে গেলে সময় চাই । সেটার জন্য চলচিত্র দরকার ।
কুড়ি মিনিটের স্লটে তাই বাধ্য হয়ে দেখাতেই হয় ষড়যন্ত্রের
মনোলগ বা উচ্চকিত সংলাপ অন্য কুশীলবদের সাথে ।
শাশুড়ী বা শ্বশুরকে যে বৌ সামনা সামনি কিছু বলতে পারে না, সেই সংলাপ যদি টিভির পর্দায় দেখে, তবে দর্শক একটা তৃপ্তি পায় ।
এবারে বহু বিবাহ প্রসঙ্গে । এটা বহুদিন ধরে চলে আসা একটা
বিতর্ক ! সিরয়াল আসার অনেক আগেই আছে ।
পুরোনো দিনের গল্প বা উপন্যাসেও পাবেন ।
যাঁরা বঙ্কিম চন্দ্রের মুচিরাম গুড় পড়েছেন- সেই পাঠকরা
জানেন, বাড়ীর বৌরা একজোট হয়ে আলোচনা করে গর্ব করছেন- কার
স্বামীর কটা রক্ষিতা আছে ।
যে কর্তার বেশী রক্ষিতা, তার কদর
আরও বেশী “বৌ” সমাজে ।
এই মানসিকতার কি আদৌ পরিবর্তন হয়েছে আমাদের ? মহিলা- পুরুষ নির্বিশেষে ? এত শিক্ষার পরেও ? গভীর ভাবে ভেবে দেখতে অনুরোধ করি।
সিরিয়ালে দেখা--
পোশাক পায় নি বলে, আত্মহত্যার ঘটনাও আছে, এটা অনস্বীকার্য ।
এসব বাদ দিয়ে একটা বৃহত্তর চিত্র ভাবুন তো ! কত লোকের রুজি
রোজগার জড়িয়ে আছে, এর সাথে ।
সিগারেটের, মদের বিজ্ঞাপন বন্ধ, তাও কি খাওয়া কমেছে ? দাম বেড়েছে, এই সবের, বিক্রি কমেছে ?
এই সব নিয়ে বুদ্ধিজীবিরা আন্দোলন করতে পারেন, পারেন সরকারকে বাধ্য করতে আইন আনার জন্য !
যতক্ষণ পারবেন না---- ততক্ষণ চ্যানেলদের বয়েই গেছে, বুদ্ধিজীবিদের কথা ভাবতে ।
=====
আপনারা যতই বলুন---------- এগুলো দেখার লোকের অভাব নেই ।
বাংলা সিরিয়াল
------- আজকাল একটা গালাগালি ।
যাঁরা দেবেন দিন------- কোনো আপত্তি নেই
হে হে হে !
No comments:
Post a Comment