=======
একটা সময়, এই টেলিফোন অনেক বাড়ীতেই ষ্টেটাস সিম্বল ছিল । পাড়াতে বড় জোর একটা, খুব বেশী হলে দুটো “ টেলিফোন বাড়ী” থাকতো ।
আপ্লাই করে দশ বছর
পরে লাইন এসেছে বাড়ীতে- এটাও দেখেছি । অবশ্য, যদি কারও এমপি জানাশোনা
থাকতো বা কেউ যদি এশেনসিয়াল গভরমেন্ট চাকরী করতেন- তাঁদের বেলা এই দেরিটা হতো না ।
এঁদের টেলিফোন
নম্বর আমরা দিয়ে রাখতাম, বিভিন্ন বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়
স্বজনের কাছে ।
যাঁদের টেলিফোন, তাঁরা
কিন্তু একটুও বিরক্ত হতেন না, আমাদের টেলিফোন এলে । রাত-
বিরেতে কারও অসুস্থ হবার খবর পেলে, তাঁরা যুদ্ধ তৎপরতায় সেটা
পৌঁছে দিতেন যাদের দরকার, তাদের কাছে ।
তখন কিন্তু এই তিন
মিনিটের সময় সীমা ছিল না । তাই যতক্ষণ খুশী কথা বলা যেত।
আবার মুশকিলও ছিল ।
ধরুন আপনি অমিতকে
ফোন করবেন, চলে গেল অমিতার কাছে । সে এক বিরাট লাফড়া ।
বা, ধরুন
কথা বলছেন কারও সাথে, অন্য কেউ ঢুকে পড়লেন লাইনে । তখন শুরু
হত ক্যাওড়ামী ।
কখনও সেই ক্যাওরামী
থেকে জন্ম নিত প্রেম, এক অদেখা যুবক যুবতীর মধ্যে । দেখা করার জায়গা ঠিক
হত ।
ঘনিষ্ঠ হতে হতে
বিয়ে- ছেলে- পিলে- ক্যাঁথা, ফিডিং বোতল, গ্ল্যাক্সো বেবী
ফুড সব মিলিয়ে এক উপাদেয় রান্না ।
বঙ্কিমী ভাষায় :-
ওহো কি হেরিলাম, জন্ম- জন্মান্তরেও ভুলিব না !!!
দূরের জন্য ট্রাঙ্ক
কল বুক করে বসে থাকতো লোকজন । লাইটনিং কল ছিল । আটগুণ বেশী পয়সা দিয়ে সেই কল সাথে
সাথেই পাওয়া যেত ।
আবার ছিল- পিপি ।
মানে পার্টিকুলার পারসন । নাম বলে দিতে হতো যাকে চাইবেন, তার
কথা । সে না থাকলে, আর কল ম্যাচিওর করতো না ।
কত যে নাটক, সিনেমা,
গল্প, উপন্যাস লেখা হয়েছে সেই সময়ে, সেটা সমঝদার মানুষ মাত্রেই জানেন ।
আর ছিল ম্যানুয়াল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ । আগে শিল্পক্ষেত্রে মহিলাদের নাইট ডিউটি করানো নিষিদ্ধ ছিল । ব্যতিক্রম ছিলো হাসপাতাল(ডাক্তার ও নার্স) এবং এই ম্যানুয়াল টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মহিলা অপারেটর । ক্রস কানেকশন হয়ে প্রেমের ঘটনা খুবই অল্প , কিন্তু এই ম্যানুয়াল টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মহিলা অপারেটরদের সঙ্গে প্রেমে পড়ার ঘটনা ভুরি ভুরি ঘটতো সারা পৃথিবীতেই । এই নিয়ে প্রচুর গল্প-উপন্যাস-সিনেমা হয়ে গেছে অনেক । আমাদের কলকাতায় আগে মহিলা টেলিফোন অপারেটর মানেই ছিল এ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের । ওদের সেই মৌরসি পাট্টায় প্রথম ধাক্কা আসে দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে অসংখ্য ছিন্নমূল উদ্বাস্তু পরিবারের মেয়েরা পেটের দায়ে এই (নাইট ডিউটি ওয়ালা) চাকরি নিতে বাধ্য হওয়ার কারনে । তার আগে এদেশি মেয়েরা চাকরিই প্রায় করতো না , সামাজিক বাধার কারনে । বাঙাল মেয়েরা নার্স ও টেলিফোন অপারেটরের চাকরি করতে শুরু করায় ও এদেশি ছেলেদের সঙ্গে চাকরিসূত্রে প্রচুর মেলামেশার কারনে ব্যাপক প্রেম-পরিনয় সুরু হয়ে যাওয়ায় এদেশি গোঁড়া লোকেদের মধ্যে গেল গেল রব উঠে গেছিলো । বাংলা গল্প-উপন্যাসে-সিনেমায় অল্প হলে তার প্রতিফলনও হয়েছিলো ।
কারিগরী বদলালো ।
এলো এসটিডি । সাবস্ক্রাইবার
ট্রাংক ডায়ালিং । আর কারও দ্বারস্থ হতে হতো না । যে শহরে ফোন করবেন, তার
একটা কোড আছে । যে নম্বর চাইবেন তার আগে ওই কোড বসালেই কেল্লা ফতে !
মিনিটের আর হিসেব
থাকতো না ! দিল্লিতে ছুটির দিনে খিচুড়ী বসিয়ে মেয়ে , কোলকাতায় মাকে
জানাতো, আর মাও সব কাজ ফেলে মেয়েকে নির্দেশ দিতেন কিভাবে
করতে হবে ।
এদিকে বিল চড়চড় করে
উঠেই চলেছে, আর জামাই বাবাজীবন কপাল ঠুকছে দেওয়ালে ।
সেই সময়ে রব উঠলো—এসটিডি
, যৌন রোগের নাম । বিশুদ্ধ বাদীরা রে রে করে তেড়ে গেলে নাম
পাল্টে হলো – এন.এস.ডি । ন্যাশনাল সাবস্ক্রাইবার ডায়ালিং ।
আন্তর্জাতিক কল হলো
:- ইনটারন্যাশন্যাল সাবস্ক্রাইবার ডায়ালিং, সংক্ষেপে এন.এস. ডি ।
ব্রাত্য হলো
স্বপ্নের সেই ভারী টেলিফোন । পোষাকী ভাষায় ল্যান্ড লাইন । আরও সফি নাম হলো-
ডেস্কটপ ফোন ।
হা-
হতোস্মি-------- ওরা সবাই বৃদ্ধ
হলেন । চলো এলো সেল ফোনের যুগ । কল রেট পাল্লা দিয়ে কমে এখন সমস্ত দুনিয়া হাতে মুঠোয়
।
যাক্ গে ধান ভানতে
শিবের গীত হয়ে গেল এটা ।
যে কথা বলতে- এত
কথা লিখলাম ।
সক্কালবেলা আমার এক
বন্ধুর ফোন ।
আরম্ভ হলো---- এক
মহাভারত । মেয়ে কবে গিয়েছিল আম্রিগায় পড়তে ( সবই জানা ), ওখানে
কি খায় ( এটাও জানা – কারণ আগেও ফোন করেছে আর মেয়েটার মুখে
ছোটবেলায় টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল ষ্টার শুনে কতবার যে মুগ্ধতার ভান করতে হয়েছে ,
বন্ধুর সামনে ), এই সব দিয়ে শুরু হলো---- রাম,
দুই, তিন করে ।
গম্ভীর হয়ে বললাম:-
ভ্যানতারা ছেড়ে বল, কি করতে হবে ?
বন্ধু কাঁচু মাচু
গলায় বলল – অনি আজ আসছে কোলকাতায় । একা যেতে ভয় করছে এয়ারপোর্টে,
তুই আমার সাথে যাবি ?
========
বলুন ------এই সব
কোথায় পেতাম, যদি সেল ফোন না থাকতো?
গড়ে টু নেতাজী
আন্তর্জাতিক- কম কথা ?
No comments:
Post a Comment