Saturday, August 16, 2014

সিনেমা দেখা

এখন অখণ্ড অবসরের জীবন । সংসারে হোল টাইমার । গিন্নির সাথে বিয়ে হয়েছিল তখনকার নিয়ম অনুসারে, বিয়ের পাটিপত্র করে । এদানীর তিনি আমার হাতে সওদাপত্র ধরিয়ে দেন বাজার করার জন্য ।

হাজারটা ভুল হয়, তাও ! কি করবো বলুন ? লজঝড়ে ১৯৪৫ মডেল । গাড়ী টাড়ী হয়ে জন্মালে, কবে কাটাই হয়ে লোহার দোকানে বিক্রি হয়ে যেতাম ! নেহাত, অমানুষ হয়ে জন্মেছি । তাই আর কাটাই না হয়ে কথার জাঁতাকলে পেষাই আর জবাই হই নিত্য ।


তিনি, উপরওয়ালা- আর আমি তেনার আশ্রয়ে থাকি । দুবেলা দুটো গুড- ব্যাড খেতে দেন দয়া করে । তাই, বেঁচে আছি ।


ফাঁকে ফোকরে মনে পড়ে- বাল্য, কৈশোর আর যৌবনের কথা । আর সেই কথা গুলো আমার অপটু হাতে লিখে থুক্কু কিবোর্ড দিয়ে টাইপ করে রাখি । মাঝে মাঝে ভাগ করে নেই আপনাদের সাথে ।
আজ একটা ঘটনার কথা বলবো আপনাদের ! বন্ধুটি এখন থাকে, লন্ডন শহরে । তার ফচকেমি এই বয়সেও যায় নি !

সাহেবদের সাথেও ফচকেমি করে ! চাড্ডিখানি কথা ? আমার তো ভাবলেই গা শিউরে ওঠে । এককালের শাসকদের এখনও আমি ভয় পাই রীতি মত । তার ওপর ওই আংরেজী জবান ! ওরে বাপরে !

ও ব্যাটা কিন্তু ফরফর করে ইঞ্জিরি বলে । কথ্য- ককনীও নাকি বলতে পারে । তা, সে যাকগে ! ওর সাহেবদের সাথে সাহসী ফক্কুড়ির গপ্পো না হয় পরে একদিন বলা যাবে ।
আজ বলি আমাদের কৈশোরের কথা । তবে, ঠিক কৈশোর নয় তখন ! যুবকত্বে প্রোমোশন হচ্ছে সবার । মাথায় কিলবিল করে নানা বদমাইশি । বন্ধুটার মাথায় কিলবিল করত এর ইনফিনিটি টাইমস ।
খবর পেলাম, কয়েক ষ্টেশন পরেই একটা শহরে দেবানন্দের একটা নতুন বই রিলিজ হয়েছে । নাম লাভ ম্যারেজ । নামটা শুনেই নেশা লেগে গেল, আমাদের কয়েকজনের । একে দেবানন্দ তার ওপর লাভ ম্যারেজ ! ভাবা যায় না মাইরি !
আমাদের পাঁচজনের পকেট ঝেড়েঝুড়ে বেরুল, সর্বসাকুল্যে পাঁচটি টাকা । ট্রেনের টিকিট, সিনেমার টিকিট, খাবারের খরচা, বিড়ির দাম সব ফুর্তির পয়সা ওতে কুলোয়ে না !
বন্ধুটি হিসেব করে বলল- ট্রেনের টিকিট যদি না কাটি, তবে বাকী সব কুলিয়ে যাবে। ভয় হল মনে । বন্ধুবর বলল- চল ম্যানেজ করে নেব ! ডরপুক বাঙালি হয়েই রয়ে গেলি তোরা !
সদলবলে রওনা দিলাম ষ্টেশনে । ষ্টেশনে গিয়েই বন্ধুটি একটা ব্যবহৃত পুরোনো টিকিট জোগাড় করে ফেলল । তার পর জলে ভেজা রুমালে সেটিকে জড়িয়ে পকেটে রেখে সঙ্গী হয়ে ট্রেনে চাপল আমাদের সাথে ।
গন্তব্য ষ্টেশনে পৌঁছে, ও আমাদের বলল- তোরা গেট দিয়ে বেরুবি, এক এক করে । চেকার টিকিট চাইলেই পেছনে আমার দিকে দেখিয়ে দিবি ।
সেই নির্দেশ মত বেরিয়ে গেলাম আমরা চারজন । চেকার ওকে ধরল টিকিটের জন্য ।
তাকিয়ে দেখি, দুটো দেশলাই কাঠি দিয়ে ব্যালেন্স করে ধরে আছে পুরোনো ভেজা টিকিটটা । চেকার টিকিট চাইতেই নাক হাত দিয়ে বন্ধ করে, মুখ কুঁচকে এগিয়ে দিল চেকারের দিকে ।
চেকার বলল- একি ? টিকিটের এই অবস্থা কেন ?
- স্যার ! এটা বাথরুমের জমে থাকা নোংরা জলে পড়ে গেছিল । টিকিট বলে কথা ! ওই নোংরা জল ঘেঁটেই তুলে এনেছি । অবশ্য পরে হাত ধুয়ে নিয়েছি । তাই দেশলাই কাঠি দিয়ে ধরে আপনাকে দিলাম । হাজার হোক, বিনা টিকিটে তো আর ট্রেনে চাপতে পারি না ! ( কাঁদো কাঁদো মুখে )
- যাও যাও, বাইরে বেরিয়ে যাও ! ওই নোংরা টিকিট আর দিতে হবে না ‍!


বেরিয়ে এসে ,প্রত্যেকে দু পয়সা প্লেট ঘুগনি খেয়ে রওনা দিলাম, সিনেমা হলের দিকে ।

No comments: