শুনেছিল, তাদের নাকি একটা দেশ আছে । সেখানে আর যাওয়া যায় না । চার বিঘে জমি,একটা পুকুর, তিনটে নারকোল , একটা জামরুল, দুটো তালগাছ ঘেরা ছিল তাদের চার কামরার একতলা বাড়ীটা ।
দুবেলাই ভাত খাওয়া হতো, মাছের ঝোল দিয়ে ।
অতিথি এলে রাতে লুচি আর পাঁঠার মাংস । কাদের কাকা বলে একজন ছিল, তাকে বললেই তিন সের মাংস দিত- দিদিমা বলেছে ।
খোকার মনে হয়, দিদিমার এগুলো কল্পনা । এখন তো দুপুরে ভাত আর রাতে গোণা- গুণতি চার পাঁচটা রুটি বেগুনপোড়া দিয়ে ।
কখনও হাঁসের ডিম হয়, ডুগি তবলার মত আদ্দেক করে সুতো দিয়ে কাটা । রগরগে ঝাল দিয়ে রাঁধা সেই ঝোল দিয়ে খোকা ভাত খায় ।
ডিম টা সরিয়ে রাখে এক দিকে । সেখানকার ঝোল দিয়ে অনেকখানি ভাত মেখে মুখে জীভে স্বাদ নিতে নিতে গিলে ফেলে চিবিয়ে । আবার সেই ডিমটা সরিয়ে, সেখানকার ঝোল দিয়ে আরও খানিকটা ভাত ।
এই করেই চলতো, ছুটির দিনে খাওয়া । শেষে ডিমটা চুষে আস্তে খেয়ে ফেলা । হাঁসের ডিমের একটা মন কেমন করা সুগন্ধ লেগে থাকতো হাতে ।
একদিন দিদিমার পায়ে ভাঙা কাঁচ ঢুকলো । কাউকে বলেনি । শেষে মরেই গেল! ডাক্তার বলেছিল রোগের একটা কঠিন নাম ! দিদিমা কেমন যেন ধনুকের মত বেঁকে যাচ্ছিল ।
দাদু বলেছিল- আগে বলনি কেন ?
ডাক্তারের পয়সা কে দিত ?
খোকা এখন বৃদ্ধ । ডায়ামণ্ড প্লাজার শিয়রে একটা আড়াই হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট !
আরও বৃদ্ধ দুই মামা , সাউথ সিটিতে থাকে ।
দাদু- দিদিমার ছবিতে রোজ নিয়ম করে মালা দেয় ।
ডিম, খাওয়া বন্ধ ডাক্তারের নির্দেশে দুই মামা আর খোকার ।
No comments:
Post a Comment