Saturday, March 21, 2015

মনের ছিটমহল -৫



আমার ইংরেজি জ্ঞান ছিল – প্রশ্নাতীত ।  স্কুল থেকেই এই প্রতিভার বিস্ফোরণে স্কুলের  সবাই থরথর করে কাঁপতো !

অনুবাদ করতে দিয়েছিলেন হেড স্যার ( প্রয়াত প্রবোধ মিত্র) – অর্জুনের টিপ খুব সুন্দর ছিল ।

 উত্তরে লিখেছিলাম :- অর্জুন হ্যাজ গুড ফিঙ্গারটিপ

এটা দেখে হেড স্যার দিন তিনেক ইস্কুলে আসেন নি ।

দপ্তরী যজ্ঞেশ্বর দা বলেছিল -  হেড স্যার, মনে লয় হার্ট ফেল করসে । কি যে তোরা সব লেখস ।

শান্তি বলেছিল :-  অর্জুন হ্যাভ ওয়েন্ট টু ফরেষ্টের মত ব্যাপারটা । শান্তি খুব গল্প টল্প পড়তো । তাক মত লাগিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছিল ।

 আরও দিন চারেক পর হেড স্যার এলেন ইস্কুলে, তবে আমাদের ক্লাসে ইংরেজী পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন ।

অজুহাত ছিল :- ওনার পিতৃদত্ত প্রাণ একটাই ।
পারলাখেমুণ্ডির রাজবাড়ীর কাছেই ছিল আমাদের ভাড়া বাড়ী । প্রতি ঘন্টায় সেখানে  ঢং ঢং করে ঘন্টি বাজিয়ে জানান দেওয়া হতো সময়টা সারা শহরে ।

একবার রাত বারটার সময়, ঘন্টিওয়ালা তেরবার ঘন্টা বাজিয়ে ছিল ।

পরের দিন তলব রাজার – ঘন্টিওয়ালকে

নির্ভয়ে জবাব দিয়েছিল সে :- হঁ !  মু তেরটা বজইথিলি , সিনা গোটিয়ে ছেপ দেইকি পোছি দেইথিলি ।

( হ্যাঁ ! আমি তেরবারই বাজিয়ে ছিলাম, কিন্তু একটা থুথু দিয়ে মুছে দিয়েছি )

================
জলিল ভাইয়ের আম্মীজান , ভুল ইংরেজী শুনে হার্টফেল করেন নি- তবে ঘনঘন রাজাকারদের মেরে ফেলা মৃতদেহ দেখে  হার্টফেল করে মারা গিয়েছিলেন  । সহ্য করতে পারেন নি, এই অত্যাচার ।

 মাগরীবের নামাজের পর হাসান সাহেব বলেছিলেন – বাংলাদেশ হওয়াতে তিনি খুশী ঠিকই, কিন্তু ভাঙা দেশ আর জোড়া লাগবে না ।

অখণ্ড ভারতের জন্য স্বাধীনতা সৈনিকদের আশা আকাঙ্খা নিমেষে ধূলিস্যাৎ করেছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ ই অগাষ্ট ।

আরও অজানা বিপদ কোথায় যে লুকিয়ে আছে, কে জানে !
 চলো ! রাত হয়ে গেছে ! খেয়ে নেওয়া যাক

আমার মনে পড়ছিল সেই তেরটা বাজানোর অজুহাত ।

থুথু দিয়ে কি সব মোছা যায় ?


(চলবে)



মনের ছিটমহল -৪





মার্চ মাস প্রায় শেষ । অল্প অল্প ঠাণ্ডা হাওয়া । নামেই বসন্ত । অজানা আতঙ্ক সারা সাতক্ষীরা শহর জুড়ে ।

তবু সূর্য ডুবছে । মনে হলো অনিচ্ছা সহকারেই চলে যাচ্ছে অস্তাচলে । একটা মলিন আলো জ্বলে উঠলো ঘরে ।

হাসান সাহেবের ঋজু আশী বছরের দেহটা থেকে চল্লিশ ওয়াটের আলো ঠিকরচ্ছে বলে মনে হলো ।

দূরের মসজিদ থেকে এষার আজান ভেসে আসছে ।  ম্রিয়মান সেই আজান । মনে হয় কেঁদে যাচ্ছে পরিবার পরিজনদের মৃত্যুতে ।

একটা থমথমে আবহাওয়া, সারা ঘর জুড়ে ।

হাসান সাহেব, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন :- যাই, এষার আজান আদা করে আসি ।

জলিল ভাই বললেন – আব্বা খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদা তো করেনই, উপরন্তু ভোরবেলা, মানে আপনারা যাকে ব্রাহ্মমুহূর্ত বলেন – সেই সময়ে তাহাজ্জুত্ নামাজও আদা করেন । খুব কম লোকই করেন এটা ।

পরিমলদা বললেন – তাহলে, মোট ছটা  ! বাকি নামাজগুলো কি ?

ফজর, জোহর, আসর, এষা, মগরীব  ।


এই সময় একজন ঢুকলেন । গায়ে চাদর আর পরণে ধুতি । গলায় কণ্ঠিমালা ।

আমাদের দেখেই বললেন :- নমস্কার মেহমানরা ।  বড় সাহেব, ডাকি পাটাচেন আপনাদের রান্না করি দেবার জন্য । আমি গোবিন্দ । জেতে বৈরাগী  !
মানে ?

বৈরাগী হলো গে- মড়া নিয়ে যাবার সময়, যারা আগে আগে যায় খোল কত্তাল বাজিয়ে ।

হিন্দুও কমি আসিছে । আর বাকী বৈরাগীরা তো  চলে গ্যাসে দেশ ছাড়ি ইণ্ডিয়াতে ।

বড় সাহেব আমারে রাখি দেসেন । দু বিঘা জমিও খয়রাত করসেন আমারে । ওই খান সেনাদের হাত থেকেও বাঁচাচেন ।

উনি না থাকলে আমার বড় মাইয়াটারে খুবলে খাইতো খান সেনারা । মাগো !
জলিল ভাই ইতি মধ্যে আবার ঢুকলেন  ঘরে ।
আসলে, আমার আম্মী নাই । আমার বৌটারও শরীল খারাপ । বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না । রান্না করার কেউ নাই ।  গোবিন্দ ভাই দুবেলা রেঁধে দিয়ে যাচ্ছে, এই কয় দিন ।
আব্বা তাই একটু মজা করেই বলেছেন । তাছাড়া, হিন্দুরা মেহমান হয়ে এলে আমাদের সিধে দেওয়াই রেওয়াজ ।

ব্রাহ্মণরা তো ছোট লোক দের হাতে খেতো না । তাই ওরা সিধে দিতো ।

ছোট লোক শব্দটা কানে খট্ করে লাগলো ।

কিন্তু, তার তো দরকার ছিল না । আমরা তো দুপুরে হোটেলেই খেয়েছি । সেখানেই খেতাম ।

পাগল নাকি ? রাতে আর সেই হোটেল খোলা পাবে না ভাই ।  খান সেনারা আসার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবন বন্ধ সব । আস্তে আস্তে হবে ।  শুনছি শ্যাখ সাহেবের কুনো খবর নাই । হারামীরা মাইরাই ফালালো কিনা কে জানে !
++++++++++++++

(চলবে)



Friday, March 20, 2015

মনের ছিটমহল -৩






 আমার জীবনটা বড়ই অদ্ভূত, জানেন ? কোনোদিন কোথাও থিতু হতে পারি নি । এমন কি, মা- বাবার সাথেও না !

এই জীবন সায়াহ্নে এসে হিসেব করে দেখছি, মা- বাবার সঙ্গে থেকেছি কুল্লে  ষোলো বছর । এটাও কিস্তিতে ।

প্রথম বারো বছর টানা, রাজশাহী ( কিছুই মনে নেই ঠিক ভাবে বলতে গেলে) বেনারস, মহিষাদল, পারলাখেমুণ্ডি
তারপর কলেজ জীবন ( পারলাখেমুণ্ডি আর বালেশ্বর মিলিয়ে) চার বছর ।

কটকের র‌্যাভেনশ্যতে পড়েছি- ওয়াই এম সি এ তে থেকে ।

প্রাথমিক শিক্ষা বেনারসে । সেটার কথা ঠিক মনে নেই । তারপর স্কুলের শিক্ষা মামার বাড়ী, বাঘাযতীন কলোনি ( এখন “জাতে” উঠে – পল্লী) থেকে ।

পাতি বাংলা স্কুল – বিজয়গড় শিক্ষানিকেতন ।

 তারপর, খালি দৌড় দৌড় ! মাঝে মধ্যে মা- বাবার সঙ্গে টানা  থেকেছি কখনও ৪-৫ দিন, কখনও বা এক দিন ।

যদি না হতো, তবে দেখে লিতাম !

ও ! ওই ঘটনাটা বলি নি না ?

মালদায়, তখন ইংরেজবাজার পৌরসভায় ড্রাইভার নেওয়া হবে । পুরপিতা, চেনা শোনা এবং বাংলার অধ্যাপক ।
কথায় কথায় বলতেন – অপদার্থ ।

পরে বিধানসভার  সদস্য হয়েছিলেন । নাম বললে, হয়তো মালদার ( মানে- মালদহ বা ইংরেজবাজার, টাকাওয়ালা বড়লোক নয়) পুরোনোরা চিনতে পারবেন।  প্রয়াত প্রভাত আচার্য্য । বড় ভালো মানুষ ছিলেন- মনের দিক থেকে ।

 যখন কোলকাতায়, সেবার ট্রাম উঠিয়ে দেবার কথা হয়েছিল, তখন তিনি ইংরেজবাজার শহরে বাতিল ট্রামগুলো এনে চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন  বিধানসভায়
প্রায় ১০ মিনিট ধরে জ্বালময়ী বক্তৃতা দিয়ে বিধানসভা সরগরম করে রেখেছিলেন
 কু লোকে বলে ঐ ১০ মিনিটে নাকি ১০০ বার অপদার্থ বলায়, বিধান সভার রেকর্ড থেকে ঐ শব্দগুলো বাদ গেছিল ।

মাণিকের বাবা এসে ধরল – ওর ছেলেকে পৌরসভায় ড্রাইভার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে হবে ।

অনুরোধে লোকে ঢেঁকি গেলে । তা, এটা তো চাকরীর ব্যাপার ।
গেলাম প্রভাতদার কাছে ।

অপদার্থ ! আমার কি করার আছে ?

না, মানে আপনি বললে চাকরীটা হয়ে যাবে !

অপদার্থ !  চেয়ারম্যান বললে সব সময় হয় না !

না না- এসব চালাকি করবেন না ! আপনি আমাদের শহরে ট্রাম চালাবেন বলছেন, আর এতো সামান্য চাকরি  ! কি যে বলেন !

অপদার্থ ( এবারে গ্যাস খেয়ে আকাশে), আচ্ছা ওকে ইন্টার ভিউতে পাঠিয়ে দেবে অমুক দিন, অমুকটার সময় ।

মাণিক তো গেল যথা সময়ে ।

বেরিয়ে এলো কাঁচুমাচু মুখ করে ।

কি রে ! কি প্রশ্ন করল ?

 একটাই তো পুছ করল !
কি ?

ফুয়েল মানে কহ ।

তুই কি বললি ?

 সানকিয়ে ( ভয় পেয়ে) চুপ করে ছিলাম । আচ্ছা, রামকিসনোদা – ফুয়েল মানে কি ?

তেল ! এটা বলতে পারলি না ?

ওওওওওওওওওওওও ত্যাল ? শা........... জানলে দেখে লিতাম্ !


কি যে দেখতো, কে জানে ! তবে চাকরিটা হয়েছিল । ওর ছেলেমেয়েরা এখন ভালো লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত । মাঝে মাঝেই ফোন করে খবরাখবর নেয় । অনুরোধও করে মালদা যেতে । খরচ –খরচা সব ওর ।

 যা বলছিলাম্ ( বুড়ো হওয়াতে খেই হারিয়ে ফেলি ) !

এই রাজনৈতিক নেতারা দেশটাকে – দেখেই লিয়েছিলেন ।

( চলবে)



মনের ছিটমহল-২



পশ্চিম বাংলার, আর পাঁচটা মফঃস্বল শহরের মতই সাতক্ষীরা ! অবিভক্ত বাংলায় প্রথমে এটা ২৪ পরগণার মহকুমা ছিল, পরে খুলনার মহকুমাতে আসে তারপর ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে জেলার মর্যাদা পায় ।
ফলে, কথার টান সেই ২৪ পরগণার মতই । সাধারণ লোকে বলতো- ৬ গণ্ডা ( গণ্ডা =৪) পরগণা বা কেউ কেউ বলতো- ৬ হালি পরগণা ( হালি মানেও চার)।
তখন বেশ পরিস্কার ছিমছাম শহর । যুদ্ধে, এই শহরের খুব একটা ক্ষতি হয় নি, বললেই চলে ।
তবে, খুলনা যাওয়ার রাস্তা খান সেনারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়াতে, ভারতের সৈন্যবাহিনী মেরামত করতে ব্যস্ত ।
মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লোকেরা শহরে তাদের প্রয়োজনের জন্য আসা যাওয়া করছে ।
আমাদের হেলিকপ্টার চালকরা কাছারির সামনে নিয়ে গেল । সেখানে, তখন মাত্র গেটাকয়েক খাবার হোটেল খোলা ।
চালক সহ আমরা ঢুকে পড়লাম একটা হোটেলে । খিদেতে পেটের নাড়িভুঁড়ি হজম হওয়ার উপক্রম ।
হোটেলের নামটা, যতদূর মনে আছে- সেলিম হোটেল বা ঐ রকমই কিছু । পাশেই একটা ষ্টেশনারি ষ্টোর্স ।
নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মনোহর ভাবে সাজানো সেই মনোহারি দোকানে । অনেক খানি জায়গা জুড়ে বিরাট বড় দোকানটা ।
টিনে ভরা বিলিতি হরলিক্স থেকে জন প্লেয়ারর্স সিগারেট সব আছে ।
আমরা ঢুকতেই, দোকানের একটি লোক সালাম দিয়ে বলল :- আসেন চ্যার । ইণ্ডিয়া থিকি আসচেন মনে হচ্চে ।
আমরা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই জবাব এলো – কিন্তু, এটা মুসলমানদের হোটেল । আপনারা কি এখানে খাবেন ? হিন্দু হোটেল গুলা সব বন্ধ । কি যে করি !
হেসে উড়িয়ে দিলাম । বললাম – আমরা এসব মানি না । তবে, একটা মুশকিল !
কি?
আমাদের কাছে তো ইণ্ডিয়ার টাকা ! পাকিস্তানি টাকা তো নাই !
সে – হয়ি যাবে । চিন্তা করেন কেন ? আগে খান , তারপর ওসব হবে । কি খাবেন- মাছ না মাংস, ভাতের সাথে ? একটা কথা- আমরা কিন্তু গরুর মাংস রান্না করি না ।
সে ঠিক আছে, তবে আমরা মাছই খাবো !
আচ্ছা, ইলিশ খাবেন তো ?
নিশ্চয়ই ! দ্যান্, দ্যান্ ।
এর মধ্যেই, উর্দ্দি পরা চারজন সর্দার ঢুকলেন হোটেলে । প্রত্যেকের কোমোরে রিভলভার ঝুলছে ।
রোটি হো গয়া ভাই ? সুবে আকে অর্ডার দিয়া থা ! খয়াল হ্যায় আপকা ?
জি জি, খেয়াল আছে, সাথে মোর্গাও বানিয়েছি ।
সর্দাররা হাসি মুখে বসতেই আমাদের ৮ জনকে দেখল ।
আপ চার লোগ ভারতসে আয়েঁ হ্যায় কেয়া ?
জি হাঁ !
ঠিক হ্যায়, লেকিন শাম হোনে সে পহলে নিকল যাইয়ে ! বর্ডার পঁহুচনা জরুরি হ্যায়!
কিঁউ জি ?
রাস্তে পর ইহাঁ উঁহা মাইন হ্যায়, খান সেনা লোগোঁকা কারোয়ার । বহোত খতর নাক চিজ সব !
হামলোক সোঁচতে হ্যায়, ইধর এক রোজ ঠহরেঙ্গে !
তো ঠিক হ্যায় ! লেকিন কহাঁ ?
ও তো মালুম নেহি ! ই সাইকেল ওয়ালে লোগ বতায়েঙ্গে !
দরাজ হাসি হেসে বললেন ওদেরই একজন :- কোই বাত নেহি ! আপলোগ হমারে ক্যাম্প মেঁ ভি ঠহর শকতে হ্যায় ।
জি সুক্রিয়া । দেঁখতে হ্যায় !
ঠিক হ্যায় ।
---
খাবার সব দিয়ে গেল ! সুবাস আসছে ইলিশ মাছের । ভাত মেখে মুখে তুলতেই, হঠাৎ সেই বাসী মৃতদেহদের বোঁটকা গন্ধ ভেসে এলো নাকে । কেন যে এলো, কে জানে ।
তাকিয়ে দেখি, মামা আর বন্ধুরাও খেতে পারছে না ।
কোনো রকমে খেলাম ।
খেয়ে হাত ধুয়ে টাকা দিতে গেলে, দোকানদার হাত জোড় করে বলল – নিতে পারবো না ।
কেন ?
জি, আপনারা আমাদের মেহমান, তার ওপর আমাদের বন্ধু । একদিন টাকা না নিলে না খেতে পেয়ে এন্তেকাল হবে না আমার ।
ওই মিলিটারিদের কাছ থেকেও টাকা নাও না ?
কি যে বলেন ! খান সেনারা খেয়ে টাকা দিত না, এরা দ্যায় । তবে, প্রথম দিন আমি নিজে নেই নি !
অনেক জোরাজুরি করলেও নিল না টাকা ।
-
বোঁটকা গন্ধটা সরানোর জন্য পাশের দোকানে সিগারেট কিনতে গেলাম ।
দোকান মালিক- জলিল আহমেদ ( আসল নামটা বললাম না, হয়তো তিনি আছেন এখনও )।
তিনি বললেন :- আপনারা আজ রাতে এখানে থাকবেন শুনলাম, সেলিম বলল ।
আমাদের বাসায় থাকবেন?
সম্মতির জন্য তাকালাম হেলিকপ্টার চালকদের দিকে । তারা ইশারায় সম্মতি জানালো ।
জলিল সাহেব আমাদের বললেন :- জানি, আমাকে আপনারা বিশ্বাস করবেন না, তবে, একটা কথা বলি । আমার আব্বা এখানে নাম করা লোক । প্রায় ৮০ বছর বয়স।
যেদিন দেশভাগ হলো, সেদিন থেকে উনি কথা বন্ধ রেখেছিলেন । বাংলাদেশ হবার পর থেকে কথা বলছেন । আমার আব্বাকে অন্তত দেখে যান । দরকার হলে কোনো হিন্দু বাসায় রাখার ব্যবস্থা করবো আপনাদের ।
লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল ।
দোকান বন্ধ করে আমাদের নিয়ে চললেন জলিল সাহেব । আমাদের সকলের থেকে বয়সে বড় বলেই মনে হলো তাঁকে ।
হেলিকপ্টার চালকদের বলে দিলেন – কাল আসবি তোরা । ওরা টাকা নিয়ে চলে গেল। আমরাই দিলাম ।
সিগারেট খেতেও ইতস্তত বোধ করছি আমরা ।
নিজেই সিগারেট এগিয়ে দিলেন ।
ওই যে সংস্কৃত ভাষায় আছে না – প্রাপ্তেষু ষোড়ষে ----
পরিমলদা বলল – আপনি সংস্কৃত জানেন ?
দরাজ হাসি দিলেন ।
পরে বলবো ওসব কথা । এখন চল তোমরা আমার বাসাতে ।
কখন যে আমরা “ তুমি” হয়ে গেছি বুঝতেও পারি নি ।
-
বাসায় ঢুকেই হাঁক দিলেন বাবাকে ।
আব্বাজান দ্যাখো, কাদের এনেছি !
পরিচয় হলো ওনার সাথে । শরবত, চা সব এলাহি ব্যাপার ।
তারপর হাসান সাহেব বললেন :- রাতে তো এরা খাবে । জলিল, এক কাজ কর এদের জন্য চাল , ডাল, মাছ, মশলা, প্রাইমাস ষ্টোভ, হাঁড়ি- কড়াই আর যা সব লাগবে, দিয়ে দে । আমাদের হাতের রান্না ওনাদের খাওয়ানো উচিত হবে না !
মাথায় হাত, আমাদের সকলের ।

----
পড়ার সুবিধের জন্য আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করি নি
-

(চলবে)

মনের ছিটমহল – ১



না, এবারে ক্রিকেট নয় । নিজের কিছু অনুভূতি/ অভিজ্ঞতার কথা বলছি।
দেশ ভাগ হবার পর, এপারে যখন আসি, সেই বয়সে কেন দেশ ছেড়ে আসা হয়েছিল- সেটা বোঝার মত বুদ্ধি, বিশ্লেষণী ক্ষমতা কোনোটাই ছিল না এবং এখনও নেই ।
এখন, শুধু এটুকু বুঝতে পারি, ১৯৪৭ য়ের আগে ভারতে ছিলাম, আর তার পরে আবার ভারতে এসেছি ।
বারবার, প্রহসন বলেই মনে হয়েছে আমার ।
বাবা, কাকা, মাতামহ সবাইকে বিমর্ষ দেখেছি দেশ ছেড়ে আসার কারণে ।
এমন নয়, যে ওপার বাংলাতে গোলাভরা ধান , পুকুরভরা মাছ, বা বিশাল স্বচ্ছল অবস্থা ছিল আমাদের ( শোনা কথা ) ।
মোটামুটি খেয়ে পরে বাঁচার অবস্থা অবশ্য ছিলই , নাটোরের আগদীঘা গ্রামে, দেবোত্তর সম্পত্তির কারণে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, তখন রাগ হতো “মুসলমান দের ওপর এই মুষল পর্বে ।
মালাউন নামটা তখনই প্রথম শুনি ।
কারণ, বাবা- কাকা- মাতামহরা সংগ্রাম করছেন এক নতুন জায়গায় এসে সংগ্রাম করছেন বেঁচে থাকার জন্য সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে । এই সংগ্রাম তখন ঘরে ঘরে ।
এখানকার বাঙালিরা আমাদের মানিয়ে নিতে পারে নি- এটাও সত্যি কথা ।
আর কেনই বা মেনে নেবে ? তাই, আমাদের রাগ এদের প্রতিও ।
রুজি- রোজগারে টান পড়লে না মানাটাই স্বাভাবিক ।
তার ওপর সংস্কৃতির দুস্তর ব্যবধান ।
আমরা যে ভাষাই বলি না কেন- সেটা, শাখামৃগর কিচির মিচির মনে হতো এদেশীয়দের কাছে ।
কেউ কেউ গালাগালিও ভাবতো !
মানসিক ব্যবধান বিরাট হয়ে দাঁড়াচ্ছিল , তাচ্ছিল্যের বহিঃপ্রকাশে ।
সে সময় সন্ত্রাস বাদ ছিল না, কিন্তু এই মানসিক অত্যাচার দুঃসহ সন্ত্রাসবাদের চেহারাই নিয়েছিল তখন ।
তবু, সেই যুগে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার লোকেরও কোনো খামতি ছিল না ।
আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি- শুভ বুদ্ধি বারবার হেরেছে অশুভ শক্তির কাছে ।
উদ্বাস্তু বাঙালি ছড়িয়ে পড়েছে- ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে । সেখানেও একই অবস্থা ।
ধীরে ধীরে বিশ্বস্ত লোকেদের কাছে শুনে, ইতিহাস পড়ে মাথায় আসল কারণটা ঢোকে ।
তখন তো কিছুই করার উপায় নেই ।
আমার মত অনেকেরই বিদ্বেষ টা পুরোপুরি না হলেও ৯৮% কাটে,১৯৭১ য়ে ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, এপারের বাঙালিদেরও উদ্ধুদ্ধ করেছিল ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে পরেই টাকী দিয়ে ঢুকেছিলাম, আমার ছোটমামা এবং আরও কিছু এদেশীয় বন্ধুর সঙ্গে ।
সবে আত্মসমর্পণ করেছে- পাকিস্তানি সৈন্যরা ।
চারিদিকে ছড়িয়ে নারকীয় দৃশ্য । কোথাও হাতকাটা, মাথাকাটা পচা মৃতদেহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, কোথাও বা অসহায় শিশু বসে আছে মৃতা মায়ের পাশে ।
অসহ্য পরিস্থিতি ।
পেটে মোচড় দিচ্ছে, বমি হবার উপক্রম ।
বাহন বলতে – হেলিকপ্টার । সাইকেলের পেছনের বড় কেরিয়ারে বস্তা বাঁধা ।
সেই কেরিয়ারে বসে এক একজন করে সাইকেল প্রতি । কত টাকা নিয়েছিল, এখন আর মনে নেই ।
এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চলতে চলতে সাইকেল চালক দিয়ে চলেছে ধারাবিবরণী । তেমন “আলোকপ্রাপ্ত নয় তারা ।
মুসলমান সেই চালকের প্রশ্ন ছিল- ধর্ম যদি একই হয় তবে পচ্ছারা ( পশ্চিমারা) আমাদের এই ভাবে মারল কেনে ?
এদের পথ দেখাছে- এখানকার রাজাকাররা । জানেন এটা ?
উত্তর ছিল না আমাদের মুখে ।
পরে জেনেছি (কিছুটা ইতিহাস পড়ে আর অনেকটা জনাব হুমায়ুন কবীরের উপন্যাস- এক জীবনের কথা পড়ে) – তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানে “মুসলমান বাঙালিরা চাকরী পেত ১ % , তাও মুচলেকা দিয়ে ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনীতে একই বৈষম্য ছিল ।
অথচ – তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমাদের সরকারী চাকরীতে অবস্থান ছিল, ৩০-৩৫ % মত। রাজার মত ব্যবহার তাদের !
ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও ধর্ম এক করতে পারে নি একটা জাতিকে ।
সেই আমলের পাকিস্তান ছিল – একটা অজানা পাখির মত, যার দুটো ডানা আছে, দেহটাই নেই।
সেই অদেখা দেহটার মাংস খেতে তখন ব্যস্ত তারা।
সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই দেশভাগের কারণে ।
এমন কয়েকজনের সঙ্গে তখন দেখা হয়েছিল বাংলাদেশে, তাঁরা হিন্দু – মুসলমান নির্বিশেষে আনন্দিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে জিততে পেরে ।
একটা অলীক স্বপ্নও দেখেছিলেন – স্বাধীন “ বাংলাস্তানগড়বেন দুই বাংলা মিলিয়ে ।
সেটা অসম্ভব ছিল । গঙ্গা- যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে ।
যাই হোক – আমরা পৌঁছলাম সাতক্ষীরা শহরে কোনো রকমে ।খিদে পেয়েছে ।

( চলবে)

Wednesday, March 11, 2015

নো

ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ক্রিইইইরিং, ( ফোন করার পর ওপার থেকে শোনা যাচ্ছে, ফোন করনেওয়ালার ফোনে)
-
রেকর্ডেড ভয়েসে
ওয়েলকাম টু আওয়ার সার্ভিসেস । ফর হিন্দি- প্রেস ওয়ান, ফর বেঙলি- প্রেস টু, ফর ইংলিশ - প্রেস থ্রি ।
ক্যাঁচ ( ২ টেপা হলো)
আমাদের পরিসেবায় আপনাকে স্বাগত । আপনার কলটি আমাদের ম্যানেজারের কাছে দেওয়া হচ্ছে । দয়া করে অপেক্ষা করুন ।
টুং টাং টাং ( বাজনা )
( পাঁচ মিনিট পর )
নমস্কার ! বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি ?
মানে, আমার বাথরুম পরিস্কার করাতে হবে ।
বেশ, আপনার বাথরুমে কমোড না ইণ্ডিয়ান ষ্টাইল ?
কমোড
ফ্ল্যাশ কাজ করে ?
না
বাথটাব আছে ?
না
কমোডের রঙ কি ?
যাঃ বাবা, রঙও বলতে হবে ?
হ্যাঁ, ওই বুঝে সার্ভিস চার্জ হবে ।
ও ! ইয়ে, মানে সাদা !
কল দিয়ে জল পড়ে ?
একটু একটু
প্রিপেইড কার্ড ভরেন নি, জলের জন্য ?
ভরেছি তো, এই তিনদিন হলো, তাও জল পড়ছে না !
আচ্ছা, দুঃখিত ! এটার জন্য আপনার চার্জ একটু কম হবে !
তা, মোট কত লাগবে ?
একটু দাঁড়ান ! সিস্টেমটা দেখে নেই !
----
আপনার টোটাল বিল হবে হাজার টাকা !
হাহাহা জার টাকা ?
আগে জমাদার এমনি লুঙ্গি পরে আসতো, এখন তো ট্রাউজার, শার্ট আর টাই পরে যাবে, এটা তো লাগবেই !
এত পারবো না, খরচের ধাক্কায় জেরবার !
বাঁচার ইচ্ছে নেই আপনার ?
না !
তাহলে, একটা অ্যাডভাইস দিচ্ছি ফ্রিতে !
কি বলুন তো?
আমাদের চলন্ত বুলেট ট্রেনের সামনে চোখ বন্ধ করে দাঁড়াবেন, এক সেকেণ্ডের একটু কষ্ট, তারপরেই আপনার জীবনটা কাঁসা !
ক্কি ?
হ্যাঁ আর আমাদের NO
NO মানে ?

New Opportunity , এটাই বর্তমান ভারতের আদর্শ । গুড ডে !

Sunday, March 8, 2015

টুকরো – টাকরা -৭

প্রমোদ হাঁপাচ্ছে । কপাল চাপড়ে বলল – টিপিনের প্যাকেটটা পড়ে গেল এই সকালবেলা ! ইস্, গরম পুরি আর আলুর তরকারি ছিল প্যাকেটটাতে । খেতে তো হবে কিছু ! নামবো তো সেই বেলা ১১ টায় ।

বলি- তুমি পড়ে গেলে কি হতো ? রাখো তোমার টিপিন !

ওদিকে ভেস্টিবিউল দিয়ে রেলের লোক বেরেকপাষ্ট বলে মার্চ পাষ্ট করতে করতে আসছে !
তাই সই ! কিনে নিলাম, তিন প্যাকেট ! ৪০ টাকা করে প্রতিটা ! বেশ ঢাউস সাইজ,প্যাকেটগুলোর !

খুলে দেখি:- শুকতলার মত পাঁউরুটি দু পিস, তাতে  একটুকু ছোঁয়া লাগে টাইপের অদৃশ্য মাখন আর  ছেঁড়া শাড়ীর মত জ্যালজেলে মামলেট ! পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা- কাঁহি উধার ফলেন্, কাঁহি ইধর ফলেন‌্ ।
প্যাকেটের এক কোণে পড়ে আছে ওগুলো ! মনে হচ্ছে, বিশাল কড়াইয়ের মধ্যে দু পিস রসগোল্লা, চোখ মারছে ।

চাও উঠেছে ! ডিপ ডিপ চা ! ও বলল – মুড়ি উঠবে, ঘাবড়াবেন না !


খেয়ে টেয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য উঠতে যাবো, দেখি কয়েকটা মুশকো আরপিএফ্ টহল দিচ্ছে কামরার এদিক সেদিক । সন্দেহের নজর আমাদের দিকে !
এদিকে প্রায় ১২ ঘন্টা নো সিগারেট ! মাথা পাঁই পাঁই করে ঘুরছে ! মনে হচ্ছে, প্লেনে বসে আছি আর সেটা এয়ার টারবুলেন্সে পড়েছে !
অন্নচিন্তা চমৎকার, বস্ত্রচিন্তা নৈরাকার (নৈরাকার = একাকার)
তার চেয়ে বেশী চিন্তা, তামাক নাই যার


কি আর করা !
 ঢিকির  ঢিকির করে ট্রেনের শিলিগুড়ি জংশনে প্রবেশ । কোচ অ্যাটেনডান্ট এসে   সাইরেনের মত বলল – অল ক্লিয়ার !
জাপানী বোমারু প্লেন গুলো চলে গেল তালে ?
এখানে প্লেন এলো কোথায় ? কোচ অ্যাটেনডান্ট বিস্মিত ‍!

ওটা বুঝলেই তো পাগলে সারে – আমার জবাব !
যাই হোক, ফুকু ফুকু করে এসে প্রমোদের সঙ্গে আড্ডা জমল ।

ভারতের ব্যাপারে একটা অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি । কথা বলার সময়, সবাই ইণ্ডিয়া বলে ।


কোলকাতা মুখি বাস যখন উত্তর বঙ্গ থেকে ছাড়ে, যে কোনো লোককে জিজ্ঞেস করবেন , বলবে ক্যালক্যাটা বাস ।

যাই হোক, পশ্চিমবঙ্গের শহর জয়গাঁ হচ্ছে “ইণ্ডিয়া”র বর্ডার ভূটানের পথে । জয়গাঁ যেমনই অগোছালো, তেমনই গোছানো ভুটানের প্রথম শহর ফুণ্টশোলিং !
থিম্পু বা পারো যেতে হলে, পারমিট লাগবে । দমদমের মল রোডের ভুটান হাউস থেকেও করিয়ে নিতে পারেন বা ফুণ্টশোলিংয়েও করাতে পারেন বেড়াতে যেতে গেলে।
অনেকেই জয়গাঁয় এক রাত্তির থেকে পারমিট করিয়ে নেন । ফুণ্টশোলিংয়েও থাকতে পারেন, তবে হোটেল খরচা বেশী ।
এপার , ওপার করাটা কোনো ব্যাপারই না ।

 জয়গাঁর হোটেল কস্তুরী বেশ ভালো । যারা বাঙালি খাবার খেতে চান, তাঁরা এখানে ভালো খাবারও পাবেন । থাকার বন্দোবস্তও খারাপ না ।

অবশ্য অন্য হোটেলও প্রচুর আছে, তবে প্রমোদের দেখলাম, হোটেল কস্তুরিটাই বেশী পছন্দের ।

ফুণ্টশোলিং থেকে থিম্পু যেতে পারেন বাস বা গাড়ী ভাড়া করে । দূরত্ব  মোটামুটি ১৫৩ কিমি মত ।

সিজন টাইমে গাড়ী ভাড়া আড়াই হাজার থেকে তিনহাজার টাকা । আর বাসে সেটা  ২০০ টাকা মত । বেশীর ভাগই ২০ সিটের তবে ৫০ সিটের বাসও আছে ।
গাড়ীতে লাগবে সাড়ে চার ঘন্টা থেকে পাঁচ ঘন্টা আর বাসে প্রায় ৭ ঘন্টা ।

ফেব্রুয়ারী ২১ থেকে ২৮- এই এক সপ্তাহে, ভুটানে আপনি কোনো আমিষ খাবার পাবেন না ।

কারণ,  ফেব্রুয়ারী ২১ হচ্ছে ভুটানের রাজার জন্মদিন । থিম্পুর হোটেল গুলোতে তাই মাংস ফ্রিজে রাখা থাকে, পরে যখন খাবেন, তখন কিন্তু একেবারে ছিবড়ে ।

ফুণ্টশোলিংয়ে কিন্তু এই এক সপ্তাহের জন্য মাংস জমিয়ে রাখা হয় না, কারণ জয়গাঁ থেকেই টাটকা মাংস আনা যায়, নিষেধাজ্ঞা ফুরোলেই ।

চিকেন আপনি পাবেন তবে গোমাংস আর বরাহমাংসের কদর বেশী সারা ভুটান জুড়ে।

ছবির মত শহর থিম্পুতে বেশীর ভাগ হোটেলেই চিকেন দুর্লভ । ভুটানে আইন শৃঙ্খলা দেখার মত ।
পুলিশ ওখানে ভারি সক্রিয় ।

একটাও ভিখিরিকে প্রকাশ্যে দেখতে পাবেন না রাস্তায় । সারা ভুটানে মদ খুব সুলভ, কিন্তু সিগারেট খাওয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষিদ্ধ ।
তবে লুকিয়ে বিক্রি যে হয় না, তা নয় । আর হোটেলে একটা স্মোকিং জোনে খাওয়া যায় ।

পাবও আছে । মাতাল হলে মদ আর দেবে না । বেঁগড়বাই করলে ঘাড় ধরে বার করে দেবে ।

ট্রেনে যেতে গেলে, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে গিয়ে হাসিমারাতে নামা ভালো ।

ওখান থেকে, জয়গাঁ ১৮ কিমি । যেতে লাগে আধঘন্টা ।

প্লেনে গেলে, ড্রুক বা ভুটান এয়ারলাইন্সে থিম্পু যেতেই পারেন ।

এই সব আড্ডাতেই কেটে গেল সময় । দলগাঁও তে ট্রেন ঢুকছে । এর পরই হাসিমারা ।

আমরা সবাই নামবো এখানে ।

গৌতম ফোন করে জানালো- গাড়ী নিয়ে ও ষ্টেশনেই আছে । গাড়ী আধঘন্টা লেট ।