Thursday, July 24, 2014

চোখে দেখা চরিত্র



+++++++++

চন্দ্রশেখর ঠাকুর । বিহারের মুঙ্গের জেলায় বাড়ী । সদর শহর থেকে বাসে আধ ঘন্টার দূরত্বে ওর গ্রাম – বিছনপুর ।   পেশায় নরসুন্দর ।

আমি দমদমে এসেছি প্রায় ১৮ বছর । তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার আলাপ ।

চুল দাড়ি কাটতে আসে আমার আর ছেলের ।

ভালই হাতটান আছে বলা যায় ।

একটু চোখের আড়াল হয়েছি তো, সিগারেটের প্যাকেট থেকে মিনিমাম দুটো সিগারেট ঝেড়ে দেবে ।

ধরা পড়লে দন্তরাজি কৌমুদি বিকশিত করে বলবে – হে ভগবাআআআননননননন ! আমি করি নি, আমার হাতটা সিগারেট নিয়েছিল ।

বৌয়ের নাম, নাকি ফুলমোতিয়া । একটা মেয়েও নাকি আছে । কেউ আজ পর্যন্ত চোখে দ্যাখে নি ওদের ।

যে বাড়ীতে থাকে, সেই বাড়ীওয়ালা, মাসের শেষে ভাড়া চাইতে এলে অম্লান বদনে চন্দ্রশেখর বলে – চুল দাড়ি কেটে শোধ করি দিব ভাড়া ।

ফলে, পাততাড়ি গোটাতে হয়, সেই ভাড়াবাড়ী থেকে ।

নাই নাই করে গোটা পাঁচেক বাড়ী পাল্টানোর পরে------ এখন অ্যাডভান্স না নিয়ে ওকে আর বাড়ী ভাড়া দেয় না কেউ ।

বাজারের হোটেলে ভাত ডাল তরকারি, মাছ খেয়ে বাক্স বের করে চুল দাড়ি কাটতে চায় হোটেল মালিকের ।

কিছুতেই পয়সা বের করতে চায় না চন্দ্রশেখর ।

এখন হোটেল গুলোও সাবধান । কুড়ি টাকা নিয়ে তবে ওকে খেতে দ্যায় ।

 দাবী অনুযায়ী,  বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরের দাড়ি- নাকি কামিয়ে দিত চন্দ্রশেখর ।

একদিন হিসেব করে দেখা গেল, কপূর্রী ঠাকুর যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন,  তখন চন্দ্রশেখরের বয়স পাঁচ  বা  ছয় বছর ।

 দু বছর আগে একটা হার্টের সমস্যা হয়, ওর । পাড়ার লোকেরা ওকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তিও করে ।

চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলে ওরই হাতে প্রায় তিন হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় । 

পরদিনই ওকে দেখতে পাড়ার একজন গেলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বাবু বলেন- চন্দ্র শেখর বণ্ড দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে ।

দিন কয়েক পরে- ওর দাদা  আমাদের জানায় , দেশে চলে গেছে চন্দ্রশেখর ওই টাকা নিয়ে ।
মাস খানেক পর চন্দ্র শেখর হাজির । 

জিজ্ঞাসা বাদে কাবু হয়ে কবুল করল :- ওর অসুখ নাকি গ্রামে ঝাড়ফুঁক করে সেরে গেছে, মাত্র ১০০ টাকায় ।

বাকী টাকায় ওর ভাগের বাড়ীটা ঠিক করেছে ।

আজকাল ও ঠিক দুপুরের খাবার সময়ে আসে  । এসেই উদাত্ত কণ্ঠে বলে- একটু ভাত দেন না, খাইইইইইইইইইইইই !

কখনও বা বলে – চা করেন না, খাইইইইইইইইইইইই !

বলেই  গা, হাত পা টিপতে বসে যায় ।

 আমাদের খাওয়া –দাওয়া না হয়ে থাকলে, ভাত জোটে ওর কপালে,না হলে গোটা কুড়ি টাকা আরও আবদার করে নেয়- হোটেলে খাবে বলে  ।

ভাইয়ের ছেলের পৈতের সময়, মাথা কামাতে ওকেই নিয়ে গিয়েছিলাম ।

নতুন ক্ষুর নিয়ে এসেছিল । দাম বলল – ১০০ টাকা ।  দিয়েও দিল ছোট ভাই । সাথে ওর প্রাপ্য পারিশ্রমিক ।

পরে জানা গেল- কাজীপাড়ার ঐ দোকানে নতুন ক্ষুরটা ও আশী টাকায় বেচে দিয়েছে।

ঝাঁড়ফুঁকে ওর রোগ সারে নি- ফলে বাধ্য হয়ে এখন ওষুধ কিনে খাচ্ছে ।

চেষ্টা করেছিল- দোকানদারের টাকা চুল – দাড়ি কামিয়ে শোধ করতে, কিন্তু সে চেষ্টা তার সফল হয় নি ।
 +++++
আজ এসেছিল আমার বাড়ীতে । ততক্ষণে খাওয়া দাওয়া শেষ । কুড়ি টাকা নিয়ে  চলে গেল গা – হাত টিপে ।

এমনিতে নেবে না ।
==========

বাড়ীতে গিয়ে আলু চোখা, ডাল আর ভাত বানিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়বে । উঠবে ভোর পাঁচটায় ।

আবার শুরু তার পেশার জগত  । দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় ওর  ।

তবুও কেন যে ঠিক ভাবে খায় না , সেটা ওর দাদা বা গ্রামের লোকেরাও বলতে পারে না ।
ফুলমোতিয়া আছে, তবে ওর মেয়ে নেই । ব্যাংকে নাকি দু লাখ টাকার ওপর জমিয়েছে !!!

কি করবে, ওই টাকা নিয়ে--------- কেউ জানে না ।

No comments: