Tuesday, July 29, 2014

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়


একটা প্রশ্ন  অহরহ মনে ঘুরপাক খায় !  এই যে খিদে আর উপবাস  নিয়ে  চারিদিকে এত হৈ চৈ, তালে বৈদিক যুগে কি হতো ?  সবাই কি দুধে ভাতে থাকতো, নাকি  সেকালেও খাবারের অভাব ছিল ?

সেটাই দেখা যাক না ! লোকে তো বলে :- সবই “ব্যাদে” আছে ।  তাহলে, এটাও কি থাকবে না ?  ঐ যে আজকাল কম্পুতে কোনো কোনো  অ্যাপসে বলে- টেক এ ট্যুর !  তাই করি বরং ।

“সুজলাং সুফলাং” এই ভারত । সেখানে তো  খাদ্যের অভাব হওয়ার কথা নয় । অতীত এবং বর্তমানে তো প্রচুর গৌরব গাথা শুনি আমরা । সেটা কতখানি ঠিক ?
দেখা যাচ্ছে, খাদ্যের জন্য অসংখ্য প্রার্থনা !! শুধু সংহিতা ব্রাহ্মণে নয়, আরণ্যক উপনিষদেও আছে এই সব  ।

প্রচুর খাবার  বা উদ্বৃত্ত থাকলে তবেই    খাদ্য সঞ্চয় করা যায় । সেটা তো কোনোদিন সাধারণ “ জনসাধারণ” করতে পারে নি  । অথচ, এই সব জন সাধারণের জন্যই সব কিছু ।

এরা সারা পৃথিবীতেই “ দিন আনি- দিন খাই” জনগণ । দ্রারিদ্র্য, ক্ষুধা, অভাব   এদের নিত্য সঙ্গী। প্রাচীন মিশর, চীন – কোনো জায়গাতেই চাষি- মজুর সারা বছর পেট ভরে খেতেই পেত না । ভারতও তার ব্যতিক্রম নয় ।


বৈদিক ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, আর্যরা আসার (?) চার পাঁচ শতাব্দীর মধ্যেই উৎপাদন ব্যবস্থায় কৌশল গত প্রকরণে বিপ্লব এসে যাওয়ায়, উৎপাদনের মাত্রা বেড়েছে । প্রয়োজনকে ছাপিয়ে উদ্বৃত্তও থেকেছে । মনে রাখতে হবে, আলোচ্য সময়কার “ আর্য” মানে পশুচারণের, মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করতো- এমন একটা গোষ্ঠীবদ্ধ জনগোষ্ঠী যারা পরে কৃষিতে        মন দেয় ।

এর সাথে সাথেই সমাজে শ্রেণীবিভাগও এসে গেল , আর উদ্বৃত্ত জমা হতে লাগল মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে ।
নিরন্ন মানুষদের না দিয়ে এই  উদ্বৃত্ত খাদ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার হল, নিজস্ব আর্থিক সমৃদ্ধি বাড়াতে । এর ফলে, সাধারন মানুষ খাবার আর পেলো না ।

 “ খেতে যেন পাই” এই প্রার্থনাটা আছে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য জুড়ে  । প্রশ্ন উঠতেই পারে, সাধারণ মানুষের তো এসব জানার কথা নয়, তারা প্রার্থনাটা করল কি ভাবে ?
উদারবাদী লোকেরা সব সময়েই আছে  এবং একটা প্রতিরোধও ছিল ।

“ অপরিহবৃতাঃ সনুয়াম্ বাজম্” (১।১০০।১৯) – সরলচিত্ত আমরা খাদ্য লাভ করবো । অর্থাৎ - আমরা যদি কুটিলতা পরিহার করে, নৈতিক জীবন যাপন করি, তা হলে দেবতা আমাদের খাদ্য যোগাবেন , এমন একটা বিশ্বাস ছিল মানুষের অন্তর্নিহিত চেতনায় ।

শুনলে অবাক লাগে, উপনিষদের যুগে – যখন আধ্যাত্মিকতাই জয়যুক্ত, যখন ব্রহ্মই পরম সত্য, তখন “ নেহাৎ তুচ্ছ” প্রয়োজনীয় বস্তু “অন্ন”কে গৌরবান্বিত করা হচ্ছে ।
যত দিন গেছে, ততই মানুষ বুঝেছে- যতই উচ্চকোটীর চিন্তা বা দার্শনিক চিন্তা হোক না কেন, সেই চিন্তা করার জন্য দরকার শরীরের । আর শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে – অন্ন (  সব কিছুই যাহা  উদর পরিপূর্ত্তি করে, অর্থ সংকোচার্থে – ভাত ) ।


এই অন্ন মহ বা মহৎ । অন্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে- প্রাণের মহিমা । “অন্নে হীমানি সর্বানী ভূতানি বিষ্টানি- বৃহদ আরণ্যক উপনিষদ (৫১২১) অন্নেই এই সমস্ত প্রাণী        নিহিত ।” 

বৈদিক যুগে মানুষ- পশু শিকার, পালন, ফলমূল সংগ্রহ বা চাষ, যে করেই হোক খাবার বা খাদ্য    সংগ্রহ করত ।

সেখানে আবার অনেক অনিশ্চিয়তাও ছিল । ঝড়, বৃষ্টি , চাষ ঠিক ভাবে না জানা – এই সব । তাই এক অজ্ঞাত শক্তির কাছে বারবার মাথা নোয়ানো । তিনি যদি খুশী হয়ে পেটে খাদ্য যুগিয়ে দেন !!

আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের- সে যুগে মানুষ চেষ্টায় প্রকৃতিকে বশ করতে পারতো না বলেই যজ্ঞের উদ্ভাবন । ব্রাহ্মণ সাহিত্যে বারবার এর উদাহরণ আমরা পাই ।

স্পষ্টতই মানুষের চেষ্টাতে যেটুকু খাদ্য উৎপাদন হতো, তা  প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম। তাই দেবতা আর যজ্ঞই ছিল ভরসা ।
সংহিতা ব্রাহ্মণে অর্থাৎ বেদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুধার খাদ্যের জন্য সরাসরি প্রার্থনা আছে ।  খাদ্য ছিল মুখ্য কাম্য বস্তু ।

ক্ষুধা সম্বন্ধে বারবার আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে কারণ, যজ্ঞ দিয়ে- দেবতার স্তব দিয়ে-তীব্র প্রার্থনা দিয়ে ক্ষুধা জনিত মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ পাবার প্রার্থনা বারবার দেখতে পাই ।
আরণ্যক- উপনিষদে অর্থাৎ বেদের জ্ঞানকাণ্ডে কি ছবিটা পাল্টে গেল ?


তখন তো লোহার লাঙলের ফলা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ! অল্প পরিশ্রমে বেশী জমি চাষ করা যাচ্ছে ।ফসলও ফলছে বেশী । ক্ষুধার প্রকোপ কি কমলো কিছু ? এযুগে মুখ্য কথাটা যজ্ঞ নয়- ব্রহ্মজ্ঞান ! এই সব তত্বকথা যখন এসেছে সমাজে তখন কি খাদ্যের জন্য আকুলতা কি কমেছে ?


আরণ্যক- উপনিষদে ক্ষুধার অন্নের জন্য একই রকম আগ্রহ । জন্মান্তর বাদ এসে গেছে চেতনায়, তবুও এই আগ্রহ ।

নানা উপাখ্যানে ক্ষুধার গুরুত্ব এবং অন্নের মহিমা ব্যক্ত করা হয়েছে । এর    সংখ্যা এত বেশী যে , এ যুগেও নিরন্ন মানুষের সংখ্যা, সমাজে অন্নের ব্যাপক অভাব, ক্ষুধায় মৃত্যুর আতঙ্ক সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ আর বজায় থাকে না ।


তত্ব আলোচনার যুগে মাঝে মধ্যেই ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য রাজা জনকের সভায় এসে খেজুর আলাপ করতেন ।

একবার, তেমন আসার পর জনক জিজ্ঞেস করলেন :-

কি মনে করে ঠাকুর ?  ব্রহ্ম তত্বের জন্য এলেন না গাভীর জন্য ?

যাজ্ঞবল্ক্য :-দুইয়ের জন্য মহারাজ ।

কথাটা উনি নিঃসঙ্কোচে বলেছিলেন । এবারে ভেবে দেখুন স্বয়ং যাজ্ঞবল্ক্যের যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে তখনকার সাধারণ মানুষের কি অবস্থা ছিল ?

 ঋষিরা তাদের ইষ্টসিদ্ধি গুছিয়ে নিতে পারতেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের অভাবের দিনে উপোস করে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না, কারণ রাজার কাছে তাদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ ।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন কোনো বিধান ছিল না, যে খরা- অজন্মা – দুর্ভিক্ষর সময় রাজকোষ উন্মুক্ত করে তাদের খাদ্য যোগাতে হবে ।

এমন নয় যে কোনো কোনো রাজা বা ভূস্বামী এটা করতেন না, তবে সেটা ছিল ব্যতিক্রম । এমন    বহু তথ্য পাওয়া যায়, যখন মানুষ ভিক্ষা সংগ্রহ না করতে পারলে, তাদের অনাহারেই মরতে হত।এই সময় থেকে এগিয়ে এলে দেখতে পাবো-


“ দুর্ভিক্ষ শ্রাবস্তীপুরে যবে
জাগিয়া উঠিল হাহা রবে
বুদ্ধ নিজ ভক্তগণে
শুধালেন জনে জনে
ক্ষুধিতের অন্নদান সেবা
তোমরা লইবে কেবা ?”

রাষ্ট্রে কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা থাকলে, বুদ্ধ তাঁর ভক্তদের এই দায়িত্ব নিতে বলতেন না, এটা এখন স্পষ্ট ।

উত্তর বৈদিক তত্বের যুগেও যাঁরা ব্রাহ্মণ্য  এবং ব্রাহ্মণ্যেতর প্রস্থানের বড় বড় প্রবক্তা, তাঁরা ইহকাল- পরকাল-জন্মান্তর-কর্ম- কর্মফল নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন, কিন্তু যে মানুষ গুলো  দিনভর খেটে তাঁদের অন্ন যুগিয়েছে, তাদের খবর আর তাঁরা রাখেন নি ।

অনিবার্য্য ফল হিসেবে , ক্ষুধার প্রকোপ রয়েই গেল সমাজে । খাদ্য সংস্থান না থাকলে এই সব আলোচনা একেবারেই নিরর্থক ।

 মহাত্মা গাঁধি বলেছিলেন :-Before the hungry even God dares not come except in the shape of bread.

ক্ষুধিতের সামনে  স্বয়ং ভগবানও  খাদ্য ছাড়া অন্য চেহারায় আসতে সাহস পান না । 

সরাসরি খাদ্য দিয়ে ক্ষুধার মোকাবিলা সেই বেদের যুগেও হয় নি, আজও হচ্ছে না । সেদিন মৃত্যু আসতো “ অশনায়াপিপাসের”  ( ক্ষুধা এবং পিপাসা) চেহারায় । মানুষ সেদিন যজ্ঞে দেবতাকে মাথা খুঁড়েও অন্ন পায় নি ।

আজ, তাদের উত্তর পুরুষ আমরা এখনও সরকারের কাছে মাথা খুঁড়ছি, অথচ আমাদের আরও উপোস করতে হবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে ।

“কোথায় পাবো তারে”?

=====================================

- সর্বাত্মক ঋণ :- সুকুমারী ভট্টাচার্য রচিত “ বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য”  বই । ( চিরায়ত প্রকাশন)  





Saturday, July 26, 2014

ঝগড়া

সাত গাছির মোড়টা, অটো ওয়ালাদের দখলে যাবে—সেটা টোডরমল লিখে রেখে গেছিলেন, পরচাতে ।

আর সেই সুযোগে, ওদের সার সার অটো দাঁড়িয়ে থাকে, সরু নগেন্দ্র নাথ রোড জুড়ে।

যশোর রোডের মুখটাতে এসেই হয় মুশকিল । টোডরমলের কথা তো কেউ জানে না, তাই,  অপশব্দ অহরহ বের হয় সব্বার মুখ থেকে ।

অটো ওয়ালারাও কোমর কষে ঝগড়া করে । নিত্য অশান্তি ।

তার ওপর বৃষ্টিতে, রাস্তায় জমা জল ছলাৎ ছলাৎ করে গায়ে এসে লাগে । 

প্রত্যেকের পোষাকেই তাই নামী দামী কোম্পানির কালার কম্বিনেশন ! 

চালু কথা, রং য়ের দোকানে গিয়ে আর কষ্ট করে কম্পুতে আর “ শেড” দেখতে হচ্ছে না কারও, ফ্ল্যাটের রুম গুলো রং করার জন্য ।

--
রতন নিয়ে চলেছে আমায়, আজ সন্ধেবেলায় নাগের বাজারে । ঠিক সাতগাছির মুখ থেকেই ডান দিকে “রিস্কার” হ্যাণ্ডেল ঘোরাতেই  পেছন থেকে  একটা গাড়ী চক্কাস্ করে ব্রেক করে দাঁড়ালো ।

গাড়ীর সারথি, মুখ বের করে গয়ারু শব্দ বলতেই রতন রুখে ফায়ার ।
- আফনে কি দক্ষিণেশ্বর থিকা আইসেন নি, যে আমারে গালি দেন ?
- যা, যা, আমি রামকৃষ্ণ নই  যে ভক্তির কথা বলবো, বুজলি !
- কেডায় কয়, দক্ষিণেশ্বরে খালি রামকৃষ্ণ থাকেন ?
- সবাই জানে !
- ধুরোঃ ! কিস্যু জানে না । তয়, গাছের হনুমান গুলা কোত্থিকা আইলো?
- ক্ষী ! আমি হনুমান ? 
- হনুমানও আফনের থিকা ভদ্র !
- আমি কারও কাছ থেকে কিছু কেড়ে খাই না ! তবে, মন্দিরে গেলেই সিঁড়িতে মাথা ঠুকি !
- হেই দ্যাহেন, আফনে একটা ছাগল !
- ক্ষী ?
- আরে মন্দিরেই যদি যাইবেন, তৈলে সিধা ঠাইরানের পায়ে মাথা ঠুকেন না ক্যা ? যত্ত সব আজাইরা কাম করেন !
- দ্যাখ, আমি ড্রাইভার ! সন্মান দিয়ে কথা বলবি
- হঃ ! আমিও ডেরাইভার, তয় তিন চাক্কার ।
- তোর মত প্যাডেল মেরে গাড়ী চালাই না
- কেডায় কয় ? আফনেও প্যাডেলে চাপ দ্যান, তবে শ্যান গাড়ী চলবো !
- তোদের মত অত শক্তি লাগে না
- লাগবো ক্যা ? খাইতে পারবেন ৪৪ টা রুটি ?   একবার খাইছিলাম এই দাদার বাড়ী ( আমাকে দেখিয়ে) । তরকারী ফুরাই সিল, ৩০ খানা খাওনের পরে । বাকী ১৪ খান ঠাকুরের কুচি কলা আর নকুলদানা দিয়া চালান করসিলাম, প্যাডে । হঃ আমারে খাওয়া শেখায় !
============
আরও হয়তো চলতো, তবে সারসার গাড়ী, বাস, রিক্সা দাঁড়িয়ে গেছে । তাই সাউথ দমদম পুরসভার স্বেচ্ছা সেবকরা রতনের রিক্সার পেছনে আলতো করে লাঠির বাড়ি দিয়ে এগোনোর সিগন্যাল দিল ।

রফি সাহাব

জুলাই মাস এলেই যে দুজনের কথা মনে পড়ে- তাঁরা হলেন, উত্তমকুমার আর মহম্মদ রফি ।

দুজনেই পঞ্চান্নর কোঠায় চলে যান । হৃদরোগে মারা যান দুজনেই ।

দুজনের মধ্যে আরও একটা মিল হলো :- মৃত্যুর ৩৪ বছর পরেও এঁরা জনমানস আচ্ছন্ন করে রেখেছেন – এখনও ।

তানসেনের গান শোনার সৌভাগ্য হয় নি, হওয়ার কথাও নয়, তবে - সঙ্গীত পরিচালক নওসাদ আলি তাঁকে ভারতের আধুনিক তানসেন আখ্যা দিয়েছিলেন।

মহম্মদ রফির বয়স তখন পঞ্চান্ন। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যান রফিসাব।

মান্না দে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন :- বাংলা গানে আমি যত শক্ত গানই করি, সেটা জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু হিন্দিতে ব্যপারটা এমন না। সেখানে আমি ছিলাম বহিরাগত।

হিন্দি ভাষায় বাঙালি হয়ে গান গাইতাম। যাদের ভাষা ছিল হিন্দি তারা অনেকটাই এগিয়ে ছিল। যেমন রফি ছিল পাঞ্জাবী, হিন্দি উর্দু ওর স্বাভাবিকভাবেই আসত। আমি সেটা মেনে নিয়েছিলাম। কারণ, রফির মতো গায়ক ভারতবর্ষ পায়নি।

একজন বড় গায়ক আরেকজনের প্রতি এরকম খোলামেলা ভাবে স্বীকার করছেন, এটা ভাবা বর্তমানে কেন যেন বিশ্বাস হয় না ।

রফি সাহেবের গান কিন্তু কোনো দিনই  রফির গান বলে পরিচিতি পেয়েছে বলে আমার জানা নেই !

যখন যে নায়কের কণ্ঠে গেয়েছেন, তখনই সেটা সেই নায়কের গান বলেই পরিচিতি পেয়েছে ।

গীতা দত্ত-মহম্মদ রফি’র গাওয়া ডুয়েট ‘আাঁখো হি আঁখো মে’ গানটি জনপ্রিয়তা পেলেও
সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় হয়েছিল  ‘সি আই ডি’-র অন্য আরেকটি ডুয়েট: ‘অ্যায় দিল  মুশকিল…ইয়ে হ্যায় বম্বে মেরি জান’।

বিনাকা গীতমালা’য় জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম হয়েছিল এই ডুয়েট ।

তদানীন্তন বোম্বেতে যে ডবল ডেকার ট্রাম চলত, তার সাক্ষী হয়েছিল এই গানের  চলচ্চিত্রায়ন ।

দুর্মর রোমান্টিসিজমে আচ্ছন্ন করে শ্রোতাদের৷ হিন্দি সিনেমার গানে টানার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল রফি সাহেবের ।

বম্বেতে একটা সময় ছিল- মাতালের মুখের গান মানেই মহম্মদ রফি। সলিল চৌধুরী নিজেও ‘দো বিঘা জমিন’-এ জনি ওয়াকারের মুখে রফিকেই গাইয়েছিলেন।

আর প্রেমের গান ?

কত বলি ?

পাঠকরা সেই সব গান আজও শোনেন , কোনো একটা গানকে শ্রেষ্ঠ বলা যাবে না । সবই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ ।

অনায়াসে উঁচু সপ্তকে সুর খেলাতে পারতেন‚  রফি সাব।  ও দুনিয়াকে রখওয়ালে - গানটা শুনে দেখবেন ।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি অন্য একটা গানের কথাই বলবো :-

কলাবতী রাগে স্বর লাগছে স গ প ধ ণ ।

এই রাগে অনেকেই গান গেয়েছেন । মহম্মদ রফি গেয়েছিলেন-----দিল দিয়া দর্দ লিয়া ছায়াছবিতে গেয়েছেন কলাবতী রাগের গান 'কোই সাগর দিল যো বহলাতা নহি!!

দীর্ঘ ৩৫ বছরের কেরিয়ারে শচীন দেব বর্মন,সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিষেণ, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল, ও পি নাইয়ার প্রায় সব বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেই কাজ করেছেন রফি।

 সাদা হাফ সার্ট আর ঢোলা প্যান্ট ছিল রফি সাহেবের প্রিয় ।

সখ বলতে ভোর বেলা ব্যাডমিন্টন খেলা ।

রয়্যালটি নিয়ে একটা গণ্ডগোল হওয়াতে লতাজী, রফি সাহেবের সঙ্গে তিন বছর গান গান নি ।

তখন রফি সাহেবের সাথে গাইতেন- সুমন কল্যাণপুর !

আশা ভোঁসলের সাথে রফি সাহেবের অনেক গানই আছে অমর হয়ে ।

লিখে শেষ করা যাবে না---- এই কিংবদন্তী গায়কের কথা ।
===

তথ্যসূত্র :- ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট

Friday, July 25, 2014

পাগলামি

কি জানেন ?  এখন তো আমার কোনো কাজ নেই, তাই ফেসবুকেই বসে ওকরা ফ্রাই করি ।

আর কি আশ্চর্য, প্রচুর পুরোনো বন্ধুদের দেখাও পাই !
কটক থেকে ভুবনেশ্বর পুরী, মালদা থেকে বালুরঘাট, শিলিগুড়ি সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এই সব বন্ধুরা ।
লিখতে মন চায় সেই সব পুরোনো কথা ! অক্ষম হাতে সেগুলো লিখেই ফেলি  !

একবার বালুরঘাট থেকে মালদায় ফিরবো । লাষ্ট “ ক্যালকাটা” ( উত্তর বঙ্গে তখন সবাই ক্যালকাটাই বলত) বাস ।
আগেরটা এক ঘন্টা আগে ছেড়ে গেছে । ডাক্তার ভিজিট আর আড্ডাতে দেরীও হয়ে গিয়েছিল সেই দিন ।
পরের দিন ফিরতে পারতাম তবে আমার আর বিলুর ( আরেক বেচু বাবু) বস ( মানে ওপরওয়ালা) আসবে । তাই ফিরতেই হবে ।
ষ্ট্যাণ্ডে গিয়ে দেখা গেল, একটাও সিট নেই । সব বুকড্ । চেনা কনডাক্টারও নেই যে ম্যানেজ করবে । তিন ঘন্টাই দাঁড়িয়ে যেতে হবে । এটা সম্ভব ?
তখন মালদায় নামকরা মানসিক ডাক্তার জয়ন্ত বোস ( এখন শুনেছি সল্ট লেকে আছেন ) ।
আমার আর বুলির চোখা- চোখা চোখি হয়ে গেল । আমার আর বুলির ব্যাগটা বুলি ধরল ।
ঠেলাঠেলি করে উঠে পড়লাম ।
অনর্গল ভুলভাল বকে যাচ্ছি আর হা হা করে হেসেই যাচ্ছি অনর্থক ।
অন্য যাত্রীরা বিরক্ত হলেও কিছু বলছিলেন না !
কনডাক্টার বলল :- এই রোগীকে নিয়ে যাওয়া তো মুশকিল । কোথায় যাবেন আপনারা ?
আমি হারেরে করে তেড়ে গেলাম ওর দিকে । কনডাক্টর ভয় পেয়ে পেছনে সরে গেল ।
বুলি হাত জোড় করে বলে উঠল :- দেখতেই পারছেন, পাগল । মালদায় নিয়ে যাচ্ছি  ডাঃ জয়ন্ত বোসকে দ্যাখাতে । কালকেই দেখাতে হবে । ট্রাঙ্ক কল এসেছিল একটু আগে।  বসার জায়গা দিন না , প্লিজ! তাহলে বোধহয় ঠাণ্ডা হলেও হতে পারে ।

দয়া করে কনডাক্টার নিজের সীটে বসতে দিলেন আমায় । বুলি বলল :- আমাকেও ওর পাশে বসতে দিন, না হলে মুশকিল হতে পারে ।

সেকেণ্ড ড্রাইভার সিট ছেড়ে দিলেন । আমরা যথার্থ ভাড়াও দিলাম । 

সব চেক টেক হয়ে গেলে সেকেণ্ড ড্রাইভার আর কনডাক্টর- ড্রাই ভারের  পেছনে বসলেন ।

মালদা এলো । আমরাও নামলাম ।
আমি শান্ত মুখে কনডাক্টর সজলকে ( এটাই বোধহয় নাম ছিল )  অনেক ধন্যবাদ দিলাম ।
আপনি পাগল নন ?
ছিলাম, বসার জায়গা না পেয়ে---- তবে এখন আর নেই !
=====

এর পর থেকে ক্যালকাটা বাসে সব কনডাক্টারাই- আমাকে দেখলেই বসার জায়গাটা দিত, সে যতই ভীড় থাকুক না কেন !!




Thursday, July 24, 2014

জিও গুরু




( বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ :- এই ফটো আমার বন্ধু বাসুর ( বিমোচন ভট্টাচার্যের ) ব্যক্তিগত সংগ্রহের থেকে নেওয়া। ব্যবসায়িক কারণে ব্যবহৃত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।)







মাইরী বলছি, গুরু বলতে আমাদের একজনই ছিল ! যে সে গুরু নয় !!!! এক্কেরে খোদ মহাগুরু !

কত মেয়ে যে নীরবে চোখের জল ফেলেছে, গুরুর জন্য! সব জল জমেই তোএখনও পর্যন্ত কোলকাতার বুকে জলের অভাব নেই !
সারা পশ্চিমবঙ্গে, এমনকি খোদ বাঁকুড়া-পুরুলিয়াতে জল-জল বলে যে মাঝে মাঝে হাহাকার ওঠে, গুরুর সময় সে সব ছিল না ।
আমরা যারা গুরুর কাছে ইনডায়রেক্টলি দীক্ষা নিয়েছিলাম- সব সময় গুরুর হেয়ার এষ্টাইল, সার্ট, পেণ্টুলুন পরার টুকলি করতাম ।
কারণ একটাই ! আঠেরো থেকে আশি সব মেয়ে/ মহিলা / নারী ফিদা গুরুর জন্য ! উডু উডু অ্যালবাট চুল,পেছনে ইউ কাট; বঙ্কিম গ্রীবা, হৃদয় তোলপাড় করা হাসি নিয়ে গুরু আমাদের সক্কলকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল ।


ধুতি পরলে, গায়ে গোটানো হাতা কলার দেওয়া ফুলজামা ! নিজেকে ঘ্যামা লাগত !

আড়ে – আগে দেখতাম- মেয়েরা তাকাচ্ছে কিনা !
গিলে করা আদ্দির পাঞ্জাবী, কোঁচান ধুতি পরে গুরু, পুরো রূপকথার রাজপুত্তুর !!!!
চোখ চিনচিন করে, মাথা টনটন করে, বুক ধঢ়পঢ় করে সে সব কথা ভাবলে ! গুরু যখন হাফসোল খেয়ে আমাদের দিকে তাকাত- জান, লবেজান‌্-হালাকান্ ! ওফ্ ! ভাবলেই পেটের মধ্যে গুড়গুড় !

গুরুর গাড়ী ছিল প্রথম ছিল হাফ সাদা, হাফ কালো স্টুডিবেকার, তারপর ইমপালা, তার অনেক পরে

অ্যামবাসাডর। নাম্বার, ডব্লুউ এম সি ৮৭৮৭।
বনেটের নিচে দুটো ফগ লাইট, প্রথম থেকেই ছিল। এ গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়িতে চড়তেন না আমাদের পরম আরাধ্য।
রাস্তায় যদি দৈবাৎ চোখে পড়ত, তখন সেই রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে পিচের আলকাতরা গায়ে মেখে নিতাম ।


ট্র্যাফিক জাম্ ! পেছনে পুলিশের রুল কোনোকিছুই “দ্যাবায়ে” রাখতে পারত না !!!!!!!
গুরুর পদ-রজ না পাই, গাড়ী-রজ তো পেতাম, সেটাই বা কে দ্যায় ? রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি, শীতে কেঁপেছি- খালি গুরুকে একপলক নিজের চোখে দেখার জন্য ।
গুরু ম্যাজিক আচ্ছন্ন করে রেখেছিল বাঙালিকে !

আর কোনো গুরু হালে পানি পেতো না ! আশ্রম সব খাঁ খাঁ করছে !
গুরু তো আর একদিনে হয়ে ওঠেন নি !
ম্যাট্রিক পাশ করে, কলকাতা বন্দরে কেরানির কাজ আর একই সময় বেশী রোজগারের আশায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের গান শেখানোর দায়িত্ব নিয়ে,কেজো জীবন শুরু হয়েছিল এই রাজপুত্তুরের ।
মেট্রো সিনেমাতে টর্চ লাইট নিয়ে “ আশারের” কাজ করতেন বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় ।
উত্তর কোলকাতার আহিরী টোলায় মামার বাড়িতে, ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯২৬ এ জন্ম । বাবা নাম রেখেছিলেন অরুণ কুমার ।

জীবনের উত্থান পতন ছিলো তাঁর নিত্য সঙ্গী । পাড়ার নাটকে অভিনয় করার সুবাদে পা রেখেছিলেন


সিনেমার আঙিনায় । আজও মুক্তি পায় নি তাঁর প্রথম অভিনীত হিন্দী ছবি- মায়াডোর ।
১৯৩৯ সাল। দেশজুড়ে তখন এক অশান্ত অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা। সেই উত্তপ্ত সময়ের মধ্যে কৈশোর


পেরিয়ে যৌবন উত্তমের। একচল্লিশের ২২ শ্রাবণ।
১৫ বছরের অরুণ পায়ে পায়ে এসে দাঁড়াল রবীন্দ্রনাথের শেষ যাত্রায়, লক্ষ মানুষের মিছিল। পরের বছরই ‘


ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের উন্মাদনায় ভবানীপুরের অলিগলিতে বের হতো অরুণের নেতৃত্বে স্বদেশি
]
প্রভাতফেরি।
অরুণেরই লেখা গান তারই সুরে গাওয়া হতো। সে বছরই ম্যাট্রিক পরীক্ষা এবং পাস। ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন কলকাতার সাউথ সুবাবরণ মেইন স্কুল থেকে। ভর্তি হন গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে। এখানে পড়েন কমার্স নিয়ে। ১৯৪২ সালেই নিদান ব্যানার্জির কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন।
১৯৪৪ সালে পোর্ট কমিশনারস অফিসে খিদিরপুর ডকে ক্যাশিয়ারের চাকরি পান, ২ হাজার টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে জমা দিয়ে।


১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওর ফ্লোরে আসেন উত্তম কুমার। প্রথম অভিনীত ছবি ‘মায়াডোর’ (হিন্দি)। এ ছবিতে কাজ করে দৈনিক পাঁচ সিকি পেতেন। নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় ‘কামনা’ ছবিতে (১৯৪৯)।
নায়িকা ছিলেন ছবি রায়। ‘কামনা’ মুক্তি পাওয়ার পর এটি ফ্লপ করল। সেই লড়াইটা ছিল ভয়ঙ্কর। ফ্লপ এবং ফ্লপ। হাত থেকে কনট্রাক্টের কাগজ ছিনিয়ে নিয়েছেন প্রযোজক। মুখের ওপর বলে দিয়েছেন, ‘কিছু মনে করবেন না, আপনার চেহারাটা নায়কোচিত নয়’।
তুলনাটা চলে আসত প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়ার সঙ্গে। দ্বিতীয় প্রতিপক্ষও তখন নেপথ্যে দাঁড়িয়ে সেই ‘দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তাঁর ‘মাচো-হিম্যান’ ইমেজে গত শতাব্দীর পঞ্চাশোর্ধ বাঙালিরা তখনও আত্মহারা।
হৃদয়ের কুঠুরিতে লেখা হয়ে গেছে ‘দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়’ কিংবা ‘প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া’ এই দুই নাম। তাদের পাশে নবাগত অরুণ কুমার। নাম পালটে হলেন উত্তমকুমার । ভাগ্যিস বসু পরিবার (১৯৫২) বক্স অফিসের মুখ দেখেছিল। ।
উত্তম কুমার বিয়ে করেন ১৯৫০ সালের ১ জুন পদ্ম পুকুরের বাসিন্দা গৌরী দেবীকে। একমাত্র ছেলে গৌতমের জন্ম ১৯৫১ সালে। এই সংগ্রামের সময় গৌরী দেবী, উত্তমকুমারকে সব সময় সাহস যোগাতেন ।
কলকাতার ভবানীপুর এলাকায় থাকতেন উত্তম কুমার। কাছাকাছি পাড়ায় সেকালের রূপবান নায়ক ধীরাজ ভট্টাচার্য, পুরনো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (বড়), চরিত্রাভিনেতা ইন্দু মুখার্জি বসবাস করতেন। তাদের কাজ দেখে শিখেছেন উত্তম কুমার। আর তার সঙ্গে অবচেতন মনে ছিল দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, জ্যোতি প্রকাশ, অসিত বরণ ও রবীন মজুমদারের মতো রোমান্টিক সব নায়কের রূপালি পর্দায় দেখার অদৃশ্য শিহরণ।
অবশেষে ১৯৫৩ তে এলো- ৭৪।।০ ( সাড়ে চুয়াত্তর) । ১৯৫৪ তে অগ্নিপরীক্ষা । দুটোতেই নায়িকা সুচিত্রা সেন ।

ব্যাস্ ! পেছনে পড়ে রইলো দৃষ্টিদান (১৯৪৮), কামনা (১৯৪৯), মর্যাদা (১৯৫০), ওরে যাত্রী (১৯৫১), নষ্ট নীড় (১৯৫১), সঞ্জীবনী (১৯৫২)- এদের মত সব ফ্লপ ছবি ।
উডু উডু অ্যালবাট চুল, বঙ্কিম গ্রীবা, হৃদয় তোলপাড় করা হাসি আর অভিনয়ের চূড়ান্ত আধুনিকতা এগুলোই ছিল উত্তমের তুরুপের তাস । সব মেয়ে ফিদা ।
তবে, যে বাঙ্গালী উত্তমকুমারকে আবেগের স্রোতে ভেসে 'শ্রেষ্ঠতম অভিনেতা'র তকমা দিতে ব্যস্ত, তাঁরাই কিন্তু উত্তমকুমারের প্রকৃত অভিনয়-সম্বলিত চলচ্চিত্রের (বক্স অফিস অনুযায়ী) দাম দেন নি।
শেষের দিকে যখন উত্তমকুমার একজন পরিণত অভিনেতা হিসাবে বেশ কিছু ছবিতে চরিত্রাভিনয় করেছেন, সেগুলি আশ্চর্যজনকভাবে ফ্লপ। উদাহরণ হিসাবে নবরাগ, বিকেলে ভোরের ফুল, নগরদর্পণে, যদুবংশ, বাঘবন্দী খেলা-র নাম উল্লেখ করা যায়।
উত্তমকুমারের দর্শক তাঁকে শুধুমাত্র 'নায়ক' হিসাবে, 'গুরু' হিসাবেই দেখতে চেয়েছি আমরা (ব্যক্তিগত ধারণা) ।
এতে বাংলা সিনেমার অর্থিক দিক থেকে লাভ হলেও গুণগত দিক থেকে ঈষৎ ক্ষতিই হয়েছে বলে মনে হয়।


ঝাড়া ৩২ বছর ধরে গুরু রাজত্ব করে চলে গেল মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ! দিনটা ছিল ১৯৮০ সালের ২৪ শে জুলাই, বৃহস্পতিবার রাত ৯-৩০ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে !
বৃদ্ধ উত্তমকে ভাবাই যায় না । ভাবতেই পারি না ।




ইষ্টনাম :- উ-ত্ত-ম-কু-মা-র ফুটুস ! আর আমাদেরও ফুটুর ডুম্ !!!!
-

আমি ভাল আছি

আমি, মূলত বড় হয়েছি, মামাবাড়ীতে । বাঘাযতীন তখন উদ্বাস্তু কলোনী । ইলেকট্রিক নেই, শাওয়ার নেই, কত কিছু ছিল না ।


টয়লেট বলতে তিন দিক ঘেরা বেড়া দিয়ে একটা জায়গা । নং টুয়ের জন্য অন্য ব্যবস্থা।
মাটির মেঝে, বেড়ার ঘর । ওপরে টিনের চাল । পানা ভরা পুকুর । তাল গাছের গুঁড়ি দিয়ে ঘাট বানানো ।
চিৎকার করে , ডাকাডাকি । কোনো “সফি”র ব্যাপারই ছিল না ।
গরম কালে, বকফুল গাছের নীচে ক্যাম্প খাট পেতে শোওয়া । তাল পাখার হাওয়া খেতে খেতে ঘুমোনো ।
লণ্ঠনের হলুদ আলোয় পড়া----- চিৎকার করে । একই লাইন বারবার বলা- মুখস্ত করার জন্য ।
গলা শুকোলে, একটু থামা, তারপর আবার শুরু ।
কোনো চিন্তা নেই, ভাবনা নেই--------

=======

এখন বড় হয়ে বৃদ্ধ হয়েছি, এখন আর পারবো না ওসব ।
যাই------ , যে মরে মরুক, আমার কি ?

আমি ভাল আছি ।





বজ্জাতি

আমি তো বটেই, আমার ক্লাসের সবাই বেধড়ক পিটুনি খেতাম স্যারেদের কাছে । পড়ার জন্য- যতটা নয়, বেশী মার পড়তো, বদমাইয়েসী করার জন্য ।
বেতের বাড়িটা পেছনে পড়ত সব সময়, কখনই বুকে পেটে নয় ।
বিজন স্যার, শশাঙ্ক স্যার, প্রিয়নাথ স্যার, হেমাঙ্গ স্যার সবাই মারতেন । হেডস্যার প্রবোধ মিত্র   তো বটেই ।
মারার ঠিক  আধঘন্টা পরেই ডেকে নিয়ে যেতেন টিচার্স রুমে । গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে, স্কুলের সামনে থেকে দশরথদাকে (দপ্তরী) দিয়ে আনিয়ে ঘুঘনি খাওয়াতেন ।

আগেই বলেছি- তাও বলি, আমাদের গায়েই লাগতো না মারটা । বরং শান্তির নেতৃত্বে আরও বেশী নষ্টামি করতাম ।
ওই ঘুঘনী খাওয়ার লোভ ।
কারও বই লুকিয়ে ফেলা, চটি এক পাটি ছুঁড়ে ফেলা, এগুলোই ছিল আমাদের মজার বিষয় ।
একবার, খোদ প্রিয়নাথ স্যারের সাধের চটিটা লুকিয়ে ফেলেছিলাম । ওটা দিয়েছিল, এক পুরোনো ছাত্র । বেশ দামী ।
অনেক বার বলেছিলেন – কে লুকাইছিস- ক, না কইলে পর হাড্ডিগুলান আস্ত রাখুম না ।
কেউ বলেনি । চোরের মার খেয়েছিলাম আমরা সাতজন, তাও বলিনি—শান্তি লুকিয়েছিল ।
শান্তির বাড়ী ছিল, প্রিয়নাথ স্যারের বাড়ীর কাছেই । মার খেয়ে স্যারের স্ত্রীকে বলে দিয়েছিল ও, সাথে চটিটাও ।
পরের দিন কাকীমা নিজে স্কুলে এসে , আমাদের সক্কলকে দু –প্লেট করে, নিজের হাতে তৈরি করা ঘুঘনি খাইয়েছিলেন ।
মিনতি করে বলেছিলেন :- লোকডার তো বয়স হইত্যাসে, মেজাজ ঠিহিই রাখতে পারে না ।
তোগোও কই----- তোরা এত বজ্জাত ক্যা ?
বড় হবি, তোরা, তারপর শ্যান বুজবি- কম টাকায় সংসার চালানোর লইগ্যা কি কষ্ট!
=========

আমরা আর অন্তত কারও জুতো বা চটি লুকোই নি, এখন এফএমে বাজছে- সেদিনের সোনাঝরা সন্ধ্যা



চোখে দেখা চরিত্র



+++++++++

চন্দ্রশেখর ঠাকুর । বিহারের মুঙ্গের জেলায় বাড়ী । সদর শহর থেকে বাসে আধ ঘন্টার দূরত্বে ওর গ্রাম – বিছনপুর ।   পেশায় নরসুন্দর ।

আমি দমদমে এসেছি প্রায় ১৮ বছর । তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার আলাপ ।

চুল দাড়ি কাটতে আসে আমার আর ছেলের ।

ভালই হাতটান আছে বলা যায় ।

একটু চোখের আড়াল হয়েছি তো, সিগারেটের প্যাকেট থেকে মিনিমাম দুটো সিগারেট ঝেড়ে দেবে ।

ধরা পড়লে দন্তরাজি কৌমুদি বিকশিত করে বলবে – হে ভগবাআআআননননননন ! আমি করি নি, আমার হাতটা সিগারেট নিয়েছিল ।

বৌয়ের নাম, নাকি ফুলমোতিয়া । একটা মেয়েও নাকি আছে । কেউ আজ পর্যন্ত চোখে দ্যাখে নি ওদের ।

যে বাড়ীতে থাকে, সেই বাড়ীওয়ালা, মাসের শেষে ভাড়া চাইতে এলে অম্লান বদনে চন্দ্রশেখর বলে – চুল দাড়ি কেটে শোধ করি দিব ভাড়া ।

ফলে, পাততাড়ি গোটাতে হয়, সেই ভাড়াবাড়ী থেকে ।

নাই নাই করে গোটা পাঁচেক বাড়ী পাল্টানোর পরে------ এখন অ্যাডভান্স না নিয়ে ওকে আর বাড়ী ভাড়া দেয় না কেউ ।

বাজারের হোটেলে ভাত ডাল তরকারি, মাছ খেয়ে বাক্স বের করে চুল দাড়ি কাটতে চায় হোটেল মালিকের ।

কিছুতেই পয়সা বের করতে চায় না চন্দ্রশেখর ।

এখন হোটেল গুলোও সাবধান । কুড়ি টাকা নিয়ে তবে ওকে খেতে দ্যায় ।

 দাবী অনুযায়ী,  বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরের দাড়ি- নাকি কামিয়ে দিত চন্দ্রশেখর ।

একদিন হিসেব করে দেখা গেল, কপূর্রী ঠাকুর যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন,  তখন চন্দ্রশেখরের বয়স পাঁচ  বা  ছয় বছর ।

 দু বছর আগে একটা হার্টের সমস্যা হয়, ওর । পাড়ার লোকেরা ওকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তিও করে ।

চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলে ওরই হাতে প্রায় তিন হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় । 

পরদিনই ওকে দেখতে পাড়ার একজন গেলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বাবু বলেন- চন্দ্র শেখর বণ্ড দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে ।

দিন কয়েক পরে- ওর দাদা  আমাদের জানায় , দেশে চলে গেছে চন্দ্রশেখর ওই টাকা নিয়ে ।
মাস খানেক পর চন্দ্র শেখর হাজির । 

জিজ্ঞাসা বাদে কাবু হয়ে কবুল করল :- ওর অসুখ নাকি গ্রামে ঝাড়ফুঁক করে সেরে গেছে, মাত্র ১০০ টাকায় ।

বাকী টাকায় ওর ভাগের বাড়ীটা ঠিক করেছে ।

আজকাল ও ঠিক দুপুরের খাবার সময়ে আসে  । এসেই উদাত্ত কণ্ঠে বলে- একটু ভাত দেন না, খাইইইইইইইইইইইই !

কখনও বা বলে – চা করেন না, খাইইইইইইইইইইইই !

বলেই  গা, হাত পা টিপতে বসে যায় ।

 আমাদের খাওয়া –দাওয়া না হয়ে থাকলে, ভাত জোটে ওর কপালে,না হলে গোটা কুড়ি টাকা আরও আবদার করে নেয়- হোটেলে খাবে বলে  ।

ভাইয়ের ছেলের পৈতের সময়, মাথা কামাতে ওকেই নিয়ে গিয়েছিলাম ।

নতুন ক্ষুর নিয়ে এসেছিল । দাম বলল – ১০০ টাকা ।  দিয়েও দিল ছোট ভাই । সাথে ওর প্রাপ্য পারিশ্রমিক ।

পরে জানা গেল- কাজীপাড়ার ঐ দোকানে নতুন ক্ষুরটা ও আশী টাকায় বেচে দিয়েছে।

ঝাঁড়ফুঁকে ওর রোগ সারে নি- ফলে বাধ্য হয়ে এখন ওষুধ কিনে খাচ্ছে ।

চেষ্টা করেছিল- দোকানদারের টাকা চুল – দাড়ি কামিয়ে শোধ করতে, কিন্তু সে চেষ্টা তার সফল হয় নি ।
 +++++
আজ এসেছিল আমার বাড়ীতে । ততক্ষণে খাওয়া দাওয়া শেষ । কুড়ি টাকা নিয়ে  চলে গেল গা – হাত টিপে ।

এমনিতে নেবে না ।
==========

বাড়ীতে গিয়ে আলু চোখা, ডাল আর ভাত বানিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়বে । উঠবে ভোর পাঁচটায় ।

আবার শুরু তার পেশার জগত  । দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় ওর  ।

তবুও কেন যে ঠিক ভাবে খায় না , সেটা ওর দাদা বা গ্রামের লোকেরাও বলতে পারে না ।
ফুলমোতিয়া আছে, তবে ওর মেয়ে নেই । ব্যাংকে নাকি দু লাখ টাকার ওপর জমিয়েছে !!!

কি করবে, ওই টাকা নিয়ে--------- কেউ জানে না ।

মেয়ে দেখা

আমি আর বাবা গিয়েছিলাম, মেয়ে দেখতে । খুব একটা কথা বার্তা আমার সাথে হয় নি "ওনার"  ।

বাবা, ফাদার নং টু এবং মেয়ের দিদিমা, সবাই লেগে পড়লেন----- বারেন্দ্র বংশ নিয়ে ।

দেখা গেল, মেয়েটি সম্পর্কে আমার ভাগ্নি । 

ক্ষী ক্ষেলো !

তার পর হিসেব করে দেখা গেল--------- পাঁচ পুরুষ পেরিয়ে গেছে, তাই বিবাহ অনুমোদন যোগ্য  ।

বাবা হেসে বলেছিলেন :- পাঁচ পুরুষ না পেরুলেও এই বিয়েটা দিতাম ।

ফাদার নং টু একটু বিষ্মিত হলেন !!!!! 

বাবার উত্তর ছিল - ধরে নিন আমরা তামিল ব্রাহ্মণ। ওদের তো মামা - ভাগ্নি তে বিয়ে হয় ।

এদিকে মেয়ের দিদা আর আমার বাবার  কমন ভাগ্নে বেরিয়ে গেলেন------- প্রয়াত চারু মজুমদার। ( আরেক বারিন্দির )

বাবা তখনই বিয়েটা ফাইনাল করে দিলেন ।

উঠে আসার সময়--- মেয়ের দিদা বললেন, আমার বড় নাতনী সুন্দর গান গায় । রবীন্দ্র সঙ্গীতে ডিপ্লোমা আছে, একটু শুনুন ।

মেয়ে তো লজ্জায় গানই গাইবেন না ।

ফাদার নং টু আবার রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষা প্রাপ্ত ।

অবশেষে মেয়ে গাইলেন :- ভজ রামকৃষ্ণ নাম ......................

Sunday, July 20, 2014

রোজনামচা

ফুটবল জ্বর শেষ । জার্মানির কড়া অ্যান্টিবায়োটিকের এফেক্ট হরির দোকান জুড়ে রাকার চাঁদের মত ছেয়ে আছে ।

ভারতের ইংলণ্ডে ক্রিকেট টেষ্ট খেলার মত ভিটামিনও দোকানের আড্ডাকে আর চাগিয়ে তুলতে পারছে না ।

হরি মুখ বেঁকিয়ে বলল :- ছাড়ান দেন ! ধোনীগো হালায় বাজার যাইতে কইলেও চোট পায় ।  এরা খেলবো কিরকেট ?
নেইমারের মত চোট খাইত, তবে শ্যান বুজতাম !

পাড়ার কালুদা বলল – হরি তোর ভালো নাম যেন কি ?

দীপক

তুই কি অধিকারী ?

কন কি !  আমি অধিকারী হমু ক্যান? খাস পাল !

বুঝেছি-  অধিকারী হলে তোকে চাঁদের পাহাড়ে উঠতে হত !

হেয়া তো দেবায় উঠসিল

হ্যাঁ, তবে দেবের ভাল নাম দীপক । দীপক অধিকারী

কি কইতে চান ?

কিছুই না !! তোকে স্কোলারীকে বলে ব্রেজিলে পাঠাবো
ক্যান?
তুই ব্রেজিল দলের ক্রিকেট অধিনায়ক হবি । অধিকারী এখন স্কোলারী !!!!

--------
হরির   মুখ বেগুনী হয়ে গেল ।




আভি না যাও ছোড়কর... .........



নীদ আয়ি তো খোয়াব আয়ি
খোয়াব আয়ি তো তুম্ আয়ি
পর তুমহারী ইয়াদমেঁ
না নীদ আয়ী, না খোয়াব আয়ি, না তুম্ আয়ি!
অথবা
আ্যায় ঈশক্, জী ভর কে সতালেঁ মুঝকো
কাল মেরা ঈশক্ কা অন্দাজ বদল যায়েগা!
ইটালিয়ান ভাষায় অমের্তাবলে একটা কথা আছে। এই শব্দটার প্রায় কাছাকাছি অর্থ হলো- নীরবতার বিধি, Code of Silenceসবাই জেনেছিলেন, এই প্রেম- কাহিনী। কিন্তু, দেব সাহাব ঠিক, এই শায়েরীগুলো আউড়েছিলেন কিনা, সুরাইয়ার প্রতি, সেটা ওই অমের্তার মধ্যে পড়ে রয়েছে।
অমর প্রেম কহানিয়াঁ র মধ্যে আমরা জানি; লয়লা- মজনু, হীর- রণঝার কথা! সেগুলোর একটা ধারণা পাওয়া যাবে, দেবআনন্দ- সুরাইয়ার জুটির সত্যিকারের প্রেমের মধ্যে। সেলুলয়েডের পর্দায়, যেমন রোমান্টিক জুটি, বাস্তব জীবনেও এই জুটি ছিলেন-আদর্শ প্রেমিক যুগল। হাম হ্যায় রাহী প্যার কি, হাম কিসিকি হো লিয়ে।বাদ সেধেছিলেন, সুরাইয়ার মা! তাও, দেব সাহাব চেষ্টা করেছিলেন- মানা জনাবনে পুকারা নেহিবলে, তবু দুজনের মধ্যে অলঙ্ঘ প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল- ধর্ম। সুরাইয়া সারাজীবন রয়ে গেলেন- অনূঢ়া! চির তরুণঅভিনেতা দেব আনন্দ রয়ে গেলেন, সুরাইয়ার হৃদি-মাঝারে। সেই হৃদরোগেই আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন, আমাদের দেব- সাহাব। দেবআনন্দ বিয়ে করেছিলেন, তাঁরই নায়িকা কল্পনা কার্ত্তিককে। ৮৮ বছর বয়সে ০৩/১২/২০১১র রাতে লন্ডনের মে- ফেয়ার হোটেলের এক কামরাতে, মৃত্যু হয় এই কিম্বদন্তি প্রেমিক অভিনেতার! চিকিৎসার জন্য, ছেলে সুনীলকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি! কে জানত, এটাই হবে তাঁর শেষ যাওয়া!!!!!!!!!!
ধর্মদেব পিশোরীমল আনন্দ, রয়ে গেলেন, অগণিত ভক্তের হৃদি-মাঝারে”- দেবআনন্দ, দেবসাহাব হয়ে। প্রবাদপ্রতিম এই অভিনেতা একবার বলেছিলেন- আমার তৈরী ফিল্ম হাম দোনোর একটা গান, আমার জীবনের দর্শন হয়ে থেকে গেছে। মেঁয় জিন্দেগী কা সাথ নিভাতা চলা গয়া
জাত খেলোয়াড়, প্রসঙ্গে ক্রিকেট লিখিয়েদের কাছে শেক্সপিয়র হিসেবে বিবেচিত হওয়া নেভিল কার্ডাস লেখেছিলেন-, 'হাঁস যেমন জলে নেমেই পারে সাঁতার কাটতে পারে, পাখি যেমন জন্মের পরই পারে আকাশে উড়তে, জাত ক্রিকেটাররাও হলেন তাই। অভিজ্ঞতা কিংবা অন্য কোনো কিছুরই দরকার পড়ে না তাদের। মাঠে নেমেই তারা পারেন চমকে দিতে।' জাত অভিনেতা নিয়ে কার্ডাস কিছু বলেছেন কি-না তা আমার জানা নেই। তবে, ১৯৪৬ সালে তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি- হাম এক হ্যাঁয়জন্ম দিল পরবর্তী ছয় দশক ধরে চলা এক অসামান্য সাফল্যের খতিয়ান।
অবিভক্ত পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে ২৬ শে সেপ্টেম্বর ১৯২৩ সালে, বাবা পিশোরীমল আনন্দের মেজ ছেলে দেবের জন্ম। লাহোরের গর্ভমেন্ট ল কলেজ থেকে ইংরাজী সাহিত্যের স্নাতক, দেব; চলে আসেন, তদানীন্তন বোম্বেতে। চাকরী খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলেন- চার্চগেটে মিলিটারী সেন্সর দপ্তরে ১৬০ টাকা মাইনের চাকরী। মহাতারকা ভোল্টেজে আলোকিত অভিনয় জীবনের শিখরেও, তিনি ভোলেন নি, এই চাকরীর কথা। কারণ, এই ১৬০ টাকাই ছিল তাঁর বোম্বের জীবনে পাথেয়। বন্ধু গুরু দত্ত্ র সঙ্গে থাকতেন তিনি। প্রতিজ্ঞা ছিল, একে অপরকে সাহায্য করবেন, অভিনয় জীবনে। এভারগ্রিন রোমান্টিক সুপারস্টারহলেন- ১৯৪৭ এ মুক্তি পাওয়া ছবি- জিদ্দিথেকে। এরপর তাঁকে আর কখনওই পিছনে তাকাতে হয়নি.
অভিনয়ের ক্ষেত্রে বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী দেব আনন্দ এরপর একের পর এক হিট সিনেমার মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন.পেয়িং গেস্ট’, ‘বাজি’, ‘জুয়েল থিফ’,’সিআইডি’, ‘জনি মেরা নাম’, ‘আমির গরিব’, ‘ওয়ারেন্ট’ ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণএবং দেশ পরদেশ’ –এর মতো সিনেমার মাধ্যমে।

এই সব ছবি
,আমোদিত করেছে সিনেমাপ্রেমীদের।ভারতীয় সিনেমার গ্রেগরী পেকের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১-এ পদ্মভূষণ এবং ২০০২-এ দাদা সাহেব পুরস্কার দেওয়া হয় দেব আনন্দকে। ১৯৪৯-এ তিনি তাঁর নিজস্ব ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি নবকেতন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মসগড়ে তোলেন।এই কোম্পানি প্রায় ৩৫টি সিনেমার প্রযোজনা করে.
ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ফিল্ম-ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দুবার পেয়েছেন দেব আনন্দ. প্রথমবার কালা পানি ছবিতে অভিনয়ের জন্য,দ্বিতীয়বার ১৯৬৬-এ গাইড সিনেমার জন্য।গাইড সিনেমা ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের পাঁচটি বিভাগে সেরার শিরোপা জিতে নেয়। ওই বছরই বিদেশি ছবি হিসেবে অস্কার পুরস্কারের জন্য পাঠানো হয় ওই ছবিটিকে। নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বার্কের সঙ্গে দেব আনন্দ যৌথভাবে প্রযোজনা করেন গাইডের ইংরেজি ভার্সান- দ্য গুড আর্থ। ১৯৯৩- দেব আনন্দ ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাওয়ার্ড সম্মান পান।
হলিউড মানে যদি স্ট্রবেরি আর ক্রিম হয়, বলিউড বা হিন্দি ফিল্ম হলো দেবআনন্দের ইংলিশ হ্যাট আর স্যুট।
সালাম- দেবসাব!


ব্রহ্মপুত্রের পাখী




আসামের সাদিয়া গ্রামের এক যুবক পাল্টে দিয়েছিল- হিন্দি,অহমিয়া,বাংলা এবং ভারতীয় ভাষার গানের অভিমুখ। টেনরকণ্ঠের এই যুবক গান গাইত একটু নাকি সুরে। পরিবারের ব্রতই ছিল, শিক্ষকতা। তাই, গানের রেওয়াজ ছিল না সেরকম। কিন্তু, কথায় আছে- নিয়তি কেন ব্যাধ্যতে। নিয়তিকে, কে রোধ করবে?
মাত্র বারো বছর বয়সেই গান গাইলেন, অহমিয়া ছবি- ইন্দ্রমালতীতে। ব্যাস! পড়াশোনার সাথে শুরু হলো গানের চর্চা। এদিকে পরিবারের রীতি মেনে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেন। প্রথমে, গুয়াহাটি এবং পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার কোর্স করে, চলে গেলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি গানের সাধনা। সরস্বতী যুক্ত হলো মেধার সাথে। সঙ্গীত হয়ে দাঁড়াল- তাঁর সারা জীবনের পরিচয়। বোম্বেতে এলেন। যুক্ত হয়ে পড়লেন I.P.T.A এর সাথে। পরিচিত হলেন, সলিল চৌধুরী, বলরাজ সাহানী, ঋত্বিক ঘটক, ক্যাইফি আজমীদের সঙ্গে। অহমিয়া গানের হিল্লোলে মেতে উঠল- বোম্বে। বিশেষ করে ভাওয়াইয়া গানের সুরে কেঁপে গেল বোম্বের সুরলোক। উত্তরবঙ্গ আর আসামের গোয়ালপাড়ার লোকগানে যে আত্মার সুর!!!!!!!!
বিশ্বমানবতা যখন আক্রান্ত- তখন গেয়ে উঠলেন, মানুষ- মানুষের জন্য।
সেই মানুষ- ভূপেন হাজারিকা চলে গেলেন ৮৫ বছর বয়সে। শনিবার(০৫/১১/২০১১) সন্ধ্যায় তিনি মুম্বাইয়ের আন্ধেরির কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।




রয়ে গেল- তাঁর গান। আমাদের আত্মার আত্মীয় হয়ে থেকে গেল- দোলা, হে দোলা!

কুমুদলাল কাঞ্জিলাল গাঙ্গুলি



নিজের ই হাসি পায়, আজকাল এসব কথা ভাবলে। বড্ড ছেলে মানুষ ছিলাম। লোকে বোম্বে যেত হিরো হতে, আর আমরা বোম্বে ( তখনও মুম্বাই হয় নি যে) গিয়েছিলাম ইনষ্ট্রুমেন্টালিষ্ট হতে। আমরা বলতে- আমি আর অপূর্ব বীর।অপূর্ব বীর ওড়িয়া ছেলে। পরে অপূর্ব নামকরা ক্যামেরা ম্যান হয়েছে হিন্দী চলচিত্র জগতে।এই মুহূর্তে একটাই চলচিত্রের নাম মনে পড়ছে- ঘরোন্দা!
সে সব কথা থাক! সেই সময়ে একবার সৌভাগ্য হয়েছিল অশোককুমারের (কুমুদলাল কাঞ্জিলাল গাঙ্গুলী) সঙ্গে দেখা করার।
সহজে কি আর দেখা হয়? অনেক মেহনত করতে হয়েছিল! মাণিক ব্যানার্জ্জী না থাকলে দেখাই হতো না। মাণিক কাকু ছিলেন তখনকার একজন নামকরা প্রোডাকশান কনট্রোলার। পরিচয় কি করে হয়েছিল, সেটা এখানে গৌণ।
সারা ইণ্ডাষ্ট্রিতে তাঁর পরিচয় দাদামণি। একটা ড্রেসিং গাউন পরে বসেছিলেন, একগাদা টেপ রেকর্ডারের মাঝে। বিভিন্ন ধরণের টেপ রেকর্ডার কেনাই ছিল তাঁর সখ।
ভালোবাসতেন চিংড়ি মাছ খেতে। তাঁর জন্মদিনে ( ১৩ ই অক্টোবর, সাল-১৯১১, স্থান:-ভাগলপুর) এটাই হতো প্রধান পদ। অবশ্য ১৯৮৭ সালে তাঁর ছোটো ভাই কিশোরকুমার মারা যাওয়ার পর আর জন্মদিন পালন করেন নি।
বিয়ে করেছিলেন- শোভা দেবীকে। বিবাহিত জীবন মাঝে মাঝেই বিঘ্নিত হত, শোভা দেবীর অতিরিক্ত মদ খাবার জন্য।
মজার ব্যাপার ছিল, যেটা কেউ কেউ জানেন- অনেকেই জানেন না, সেটা হলো তিনি তলদেশে কোনো অন্তর্বাস পরতেন না। ফলে, সৃষ্টি হতো অনেক মজার ঘটনা।
বাবা নিজে ছিলেন- মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়ার নামকরা উকিল। চেয়েছিলেন- বড় ছেলে উকিল হোক! বিধির বিধান খণ্ডাবে কে?
বোন সতী দেবীর বিয়ে হয়েছিল- হিন্দী চলচিত্র জগতের তখনকার সম্রাট শশধর মুখার্জ্জীর সঙ্গে।
কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের স্নাতক হয়েও তিনি খাণ্ডোয়া না ফিরে চলে গেলেন- বোম্বেতে। বম্বে টকীজের ল্যাবোরেটরী আ্যসিস্টান্ট হিসেবে।
চলচিত্র জীবন শুরু হয় আকষ্মিক ভাবে। হিমাংশু রায়ের পরিচালনায় শুরু হয়েছে জীবন নাইয়ারস্যুটিং! নায়ক নিজাম-উল- হুসেন, নায়িকা দেবীকারাণীকে নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। পরিচালকের মাথায় হাত! কিছুদিন পরে দেবীকারাণী ফিরে এলে স্যুটিং আরম্ভ হলো, কিন্তু হিমাংশু বাবু নায়ক পাল্টে দিলেন। কুমুদলাল হয়ে গেলেন- অশোককুমার!

কিছুদিন পরে দেবীকারাণীকে নায়িকা করে তৈরী হলো
অচ্ছুৎ কন্যা। এক ব্রাহ্মণ ছেলের সঙ্গে হরিজন মেয়ের প্রেম কাহিনী। সুপার- ডুপার হিট! শুরু হয়ে গেল ষাট বছরের (১৯৩৬-১৯৯৭) হিন্দী চলচিত্র জগতের এক বর্ণময় অধ্যায়।
দশ বছর আগে, ১০ ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে চলে গিয়েছেন এই কিম্বদন্তী অভিনেতা!
আজ তাঁর ১০০ তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে কমিউনিটির তরফ থেকে থাকল- বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিজয়তে সত্যম্- শিবম্- সুন্দরম্ ।