আমরা ইংরাজী নববর্ষ এলেই খুব মাতামাতি করি। ২০০৯ পেরিয়ে ২০১০ এ পড়লাম। এটা আমরা এখন সবাই জানি যে, যীশু খ্রীষ্টের জন্ম থেকে এই ইংরাজী সালের হিসাব চলে আসছে। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগের সময়কে খ্রীষ্টপূর্ব এবং জন্মের পর থেকে খ্রীষ্টাব্দ বলা হয়।
যাই হোক, যে কোন ইংরাজী সালের শেষ থেকেই আগামী নতুন বছরের ক্যালেন্ডার নিয়ে আমরা খুব মাতামাতি করি। কে কটা ক্যালেন্ডার পাব, তাই নিয়ে চলে অলিখিত এক রেশারেশি।
আমরা চেষ্টা করি, এই ক্যালেন্ডারের ইতিহাসটা জানতে। ক্যালেন্ডার সৃষ্টির পেছনে দুইজনের নাম ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। একজন রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার, আর একজন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। আমরা জানি, ১২ মাসে ১ বছর, বা ৩৬৫ দিনে ১ বছর। এই সাধারণ গণণাকে ইংরাজীতে “সিভিল ইয়ার”; বাংলায় “লৌকিক বছর” বলে। কিনতু, বিজ্ঞানের দৌলতে এখন আমরা জানি, পৃথিবীর সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে, ৩৬৫ দিন, ৫ ঘন্টা, ৪৮ মিনিট,৪৭.৫ সেকেণ্ড। এটাকেই “সোলার ইয়ার” বা “সৌরবছর” বলে বিজ্ঞানীরা বলেন; আর এটাকেই আসল বছর হিসেবে গণ্য করা হয়। (প্রসঙ্গত বলে রাখি, বরাহমিহির তাঁর “সূর্য্যসিদ্ধান্ত” গ্রন্থে আর পরে ৪৭৬ খ্রীষ্টাব্দে আর্য্যভট্ট কিনতু ঠিক এই হিসেবটাই দিয়ে গেছেন। মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজের গুরু বর্ধমানের শ্রী বিশুদ্ধানন্দ বলেছিলেন, হিমালয়ের আড়ালে,এক গোপন জায়গায়; একটি সূর্য্যমন্দির আছে। সেখানে শেখানো হয় সূর্য্যবিজ্ঞান।মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ বেনারস সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শেষ চাকরী করেছিলেন। তবে সে অন্য প্রসঙ্গ। পরে না হয় আলোচনা করা যাবে।)
আগে ধারণা ছিল, পৃথিবী সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন নেয়। খ্রীস্টপূর্ব ৪৬ এ রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার জানতে পারলেন যে ওটা ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা হবে। তা তখনই তিনি ঘোষণা করলেন- বছর ৩৬৫ দিনই হবে, আর বাকী ৬ ঘন্টা প্রতি ৪ বছর পরে পরে ১ দিন করে যোগ হবে। ৬x৪=২৪ ঘন্টা= ১ দিন। প্রতি ৪ বছর অন্তর,যে বছরে এই ১ টা দিন যোগ হবে, তাকে লিপ ইয়ার বলা হবে।
সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে এই ক্যালেণ্ডারের নাম হলো- জুলিয়েন ক্যালেণ্ডার। এই ক্যালেণ্ডারের হিসেবে বছরে গড় দিন দাঁড়ালো-৩৬৫.২৫ দিন। কিন্তু, এই হিসেবটাও ভুল বলে প্রমাণিত হলো, যখন সৌর বছর ৩৬৫ দিন, ৫ ঘন্টা, ৪৮ মিনিট,৪৭.৫ সেকেণ্ড বলে প্রমাণিত হলো। এবার; ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা থেকে ৩৬৫ দিন, ৫ ঘন্টা, ৪৮ মিনিট,৪৭.৫ সেকেণ্ড বিয়োগ করলে দাঁড়ায়- ১১ মিঃ ১২.৫ সেঃ। এবার ২৪x৬০x৬০=৮৬,৪০০ সেঃ।সুতরাং, দিনের হিসেবে ১১ মিঃ ১২.৫ সেঃকে,৮৬,৪০০ ভাগ করলে হলো ০.০০৭৭৮৩৫৬ দিন(প্রায়)। তার মানে দাঁড়াল, প্রতি বছর ১১ দিন করে দিন এগোচ্ছে, কিন্তু সেটার হিসেব থাকছে না। এবার ১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির এই হিসেব অনুযায়ী, ইংলাণ্ড ২রা সেপ্টেম্বর পরে ৩রা সেপ্টেম্বর না করে ১৩ ই সেপ্টেম্বর করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার চালু করে দিল। ধীরে ধীরে পৃথিবীর সারা দেশে এটা চালু হয়ে গেল। সুতরাং আমরা এখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার অনুসরণ করি। এই ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী আমরা, আসুন ক্যালেণ্ডার সংগ্রহ করি! কেমন?
2 comments:
darun, dada, darun - abak lage aapni maths e msc hoeyo eto parasuna korlen kahon? himalayar suryamondir niye aapnar lekhar apekhai thakbo. pronam neben
দারুণ লাগল দাদা । ফেসবুকে আপনার সঙ্গে আলাপ ; সে এক হালকা চাল। আপনার মতো জ্ঞানী ব্যক্তিদের আরো যে প্রকট হতে হবে আর তাতেই সমাজের অনেক পিপাসা মিটবে । চিন্তা স্হিরকেন্দ্রিক হবে । একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস্য ছিল ; যদি আলো দেখান বড় ভাল হবে। ভারতীয় জ্যোতিষ বলে : চন্দ্র ও রবি যদি এক রাশিতে অবস্হান করে [ বিশেষ ডিগ্রীতে ?] তাহলে অমাবস্যা । কিন্তু কখনো এটাও দেখা যায় ; অমাবস্যার একদিন পর সংক্রান্তি । এবং দিন দুয়েক পরে চন্দ্র ঐ রাশিতে পুনরায় রবির সঙ্গে বসল । এই ক্ষেত্রেও কি অমাবস্যার মত effect পৃথিবী বা পার্থিব প্রাণী ও নদনদীসমুদ্র ইত্যাদির ওপর ক্রিয়াশীল হবে ? আমার নমস্কার জানিবেন ।
Post a Comment