Friday, April 10, 2015

নাম এবং ছবি না দেওয়ার সর্তে





 সকাল, সাড়ে দশটা হবে ! একটা কল এলো সেল ফোনে , অজানা নম্বর থেকে ।

ওপার থেকে ভারি গলায় প্রশ্ন :-

-       কি রে রামকেষ্ট গলা চিনতে পারছিস ?
-       মোটেই না !
-      এই মরেচে ! বলি, বিজয় গড় শিক্ষা নিকেতনের কথা ভুলে গেলি ?
-       ভুলে গেলেই ভাল হতো !
-      কেন?
-       ঐ দু বার ফেল করার বিভীষিকা কে আর মনে রাখতে পারে, বলুন !
-       ল্লে ! আমি তোকে তুই বলছি, আর তুই আপনি ?
-      চিনি নি তো এখনও ।
-       আমি অমুক চন্দ্র অমুক !  তোর থেকে দু কেলাস এগিয়ে গিয়েছিলাম, তুই গাড্ডু মারাতে ।
-      অ্যাই ব্যাস্ ! শুনেছিলাম, তুই আম্রিগা না বিলেত – কোথায় যেন থাকিস ?
-      হতভাগা, এখনও সাবকন্টিনেন্ট গুলো চিনলি না ? ভূগোলে তুই বরাবরই কাঁচা থেকে গেলি দেখছি !
-       ভূগোলে আমি কোনোদিনই থাকি নি, বাজে কথা বলিস না !
-       তুই দেখছি, সেই একই থেকে গেলি !
-      রতনে রতন চেনে রে ! যাক্, বল কেমন আছিস ?
-       তোর সঙ্গে যে দরকার ছিল রে  ঘনা !
-      একদিন আয় আমার বাড়ীতে
-      না, আজই যাবো, অমুককে নিয়ে ।
-      চলে আয় !
-      তোর ফ্ল্যাটের কাছাকাছি ভালো রেস্তোরাঁ আছে ?
-      আছে আছে, বার কাম রেষ্টুরেন্টও আছে !
-       নাঃ ! এখনও তুই রেষ্টুরেন্ট বলিস ?
-      কি করবো বল ? রেষ্টুরেন্ট, মামলেট, কবিরাজী-  এসব খাস বাংলা শব্দ, ভুলি কি করে ?
-      হুম, এখনও পুজোর মার্কেটিং না শপিং করিস ?
-       মার্কেটিং ই বলি ।
-      তুই ব্যাটা, নাঃ থাক, আমি আসছি তোর বাড়ী । ডিরেকশানটা বল্

বললাম


ঘন্টা দুয়েক বাদে একটা মোটোর গাড়ী এসে দাঁড়ালো বাড়ীর সামনে ।

দু জনেই বেরিয়ে সটান আমার ছোট্ট ফ্ল্যাটে । একথা, সে কথার পর বলল:-

-      শোন্ আমার আজ জন্মদিন ! চল, তোর বৌকে সঙ্গে নে । বাইরে খাব । চাস তো বিয়ারও খাওয়াতে পারি । খাবি তো?
-      কি যে বলিস, চ চ শিগ্গির ।

তৈরি হয়ে নিয়ে, আমার উনি সহ বন্ধুর গাড়ীতে উঠে পড়লাম ।

ওই বন্ধু এতক্ষণ কিছু বলেনি ! এবারে মুখ খুলে বলল :-
-      বুজছস, রামকেষ্ট ! ওরে আমি কইলাম, তুই অহনে দমদমায় থাকস, মালদায় আর না ।
-      এহে ! একটা গিফ্ট কিনতে পারতাম !
-       দরকার নাই, হ্যার জিনিসের অভাব ? তয় আমি একটা গিফ্ট কিনসি !
-       কি রে ?
-      আম্রিগায়, ওগুলা খুব দামী !
-       আরে, বলবি তো !
-       কমু অনে ! আগে তো খাইয়া লই ! ক্ষুধা পাইসে ।

যা হোক বিয়ার লাঞ্চ হলো আমাদের ।
শেষে অপর বন্ধুটি বের করল একটা জুতোর বাক্স ।  প্রবাসী  বন্ধুটির হাতে দিল বাক্স টা ।

-      ধর্ !
-      কি ?
-      জুত্তা !
-       শ্যাষে, তুই আমাকে জুতো দিলি ?
-      কস্ কি রে ! তোগো দ্যাশে জুত্তা খুব দামী, তাই দিসি !
-      দামী হোক, তাই বলে জুতো ?
-      আরে বলদা নতুনই দিসি, পুরানো তো আর দেই নাই !









Thursday, April 2, 2015

আবার হরি -৪




সকালে, হরির দোকানে যাওয়াটা আমার কাছে এল.এস.ডি. র নেশার মত । শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন না হোক, পশ্চিমবঙ্গ দর্শন তো হয়ই ।

নানা কিসিমের লোক, নানা ভাষ্য-টিকা, রকমারি মতামত সব মিলিয়ে একেবারে হিন্দি সিনেমার ফিউশন গানকেও ছাড়িয়ে যায়।

নাগেরবাজারের আগের ষ্টপেজ সাতগাছি থেকে - একটু এগোলেই বিবেকানন্দ পল্লী ।

ঢোকার মুখেই হরির দোকান ।

কোনোরকমে মাথায় একটা ছাউনী, আর কাঠের তক্তা পেতে বসার জায়গা ।

ফেরী করে বেড়ানো মাছওয়ালা থেকে শুরু করে সব্জী বিক্রেতা, স্বঘোষিত রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে- কে নেই সেখানে ?

কুড়ি বছর আগে যখন এখানে ফ্ল্যাট কিনি, তখন আমাদেরটা ছিল তিন নম্বর ফ্ল্যাট বাড়ী। কান ঘেঁষে আছে দু নম্বর অ্যাপার্টমেন্ট ।

নব্বই শতাংশ উদ্বাস্তু এই অঞ্চলে । আস্তে আস্তে পাল্টেছে ম্যাট্রিক্স ।

বাঙালি ছাড়া এই এলাকায়, আগে কেউ আসতো না, এখন সেটা পাল্টে গেছে । গুজু, মাড়ওয়াড়ি, সিন্ধ্রি সব মিলিয়ে মিনি ভারতবর্ষ ।

জায়গার নামও পাল্টাচ্ছে । আগে যেটা ছিল কলোনী, সেটা এখন পল্লী । লাহা কলোনী , তাই এখন লাহা এ্যাভিনিউ ।

বাঙাল ভাষার দাপট অস্তমিত হলেও গোধূলি বেলার মত পুরোনো লোকেদের মুখে এখনও বর্তমান ।

জায়গার নাম পাল্টালেও প্রাচীন লোকেরা ভোলে না । এই এক জ্বালা নতুন প্রজন্মের কাছে ।

হরির বাড়ীটা ভেঙে এখন ফ্ল্যাট বাড়ী হচ্ছে । নানা লোকের আনাগোনা কেনার জন্য ।

একজন এসে জিজ্ঞেস করল :- দাদা, বোলতে পারবেন জী, ইয়ে জয় হিন্দ পল্লী কাঁহা পর মিলেগা?

হরি চা দিতে গেছে অন্য দোকানে ।

মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে সবাই !

সোত্তর বছরের কালুদা , চেঁচিয়ে বলল – বুজসি, ওডা হাগড়া পট্টি !

মানে ?

আরে ওই যে হরিরা ড্রেইনের ধারে বইয়া হাগতো না- সেই থিকা তো হাগড়া পট্টি !

হরি, ফিরে এসে শুনেই ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে গেল !

কি কইলেন ? হাগড়া পট্টি ?

হ !

নাম পাল্টাইসে, জানেন না । ওইটা এখন গিয়া জয় হিন্দ পল্লী ! হাগড়া পট্টি কইলে আমাগো ফ্ল্যাট তো আর বিকাইবো না !

ঠিহ আসে ! উয়ারে – পটি পল্লী কমু হনে, ইবার থিকা !


(পাঠক,কিছু সংস্কৃত ভাষার জন্য দুঃখিত )

আবার হরি-৩


আজ সকালে হরির দোকানে সবাই কেমন যেন বিষণ্ণ । ইলেকট্রিক মিস্ত্রি নীলু বেশী কথা বলে, কিন্তু আজ তার মুখে অদৃশ্য সেলোটেপ ।
এদিকে ওয়ার্ডে প্রার্থীরা বেরিয়েছেন পরিক্রমায় ।
শাসক দলের নয়, এমন একজন প্রার্থী দাঁড়িয়ে পড়লেন চা খেতে । অল্প কিছু সাঙ্গোপাঙ্গো সাথে ।
এককালে বাঘে গরুতে, একসাথে জল খেতো তাঁর দাপটে । এখন তিনি নিজেই ভিজে বেড়াল ।
নীলুকে অনুরোধের স্বরে বললেন – দুটো ফ্যান লাগাস তো, আমাদের নির্বাচনী কার্যালয়ে । ভাড়া নেবো ।
তারপর কি ভেবে আবার বললেন – ঠিক আছে, আপাতত একটাই ফ্যান লাগা ।
মধুর উত্তর :- নীলু, শুধু মুণ্ডিটা লাগিয়ে দে আগে –তারপর বুঝে শুনে পাখাগুলো লাগাবি ।
প্রার্থী ভদ্রলোক রেগে গেলেও বহিঃপ্রকাশ করলেন না । আগে হলে, রোওয়াবটা বোঝা যেত ।
আমাকে বললেন :- কেমন আছেন ?
বিগলিত করুণা, জাহ্নবী যমুনা হয়ে বললাম – ভালো, আপনি ?
এই তো, আছি একরকম । যা সন্ত্রাস চারিদিকে !
হ্যাঁ – আর বলবেন না ! আচ্ছা, ওই দশ বছর আগে আপনি ওমুক ওয়ার্ডে আনকনটেসটেড হয়ে জিতেছিলেন না ?
হঠাৎ ওনার তাড়া দেখলাম, চলে যাওয়ার । মঞ্চ থেকে নিস্ক্রমণ হয়ে গেল তাঁর ।
হরির মঞ্চে আগমন ।
বোজছস্ নীলু, বিরটিস রা আবার আইলেই ভালো
কেন ?
অগো আমলে দল ছিল না ! কত্ত কাজ করসে , ক দেহি ?
তুমি দেখেছিলে নাকি ?
না তয়, হুনসি তো !
এবারে নীলুর মাষ্টার ষ্ট্রোক :-

তালে মোঘল আমল এলেই ভালো । আর ঝামেলা থাকে না ।