Thursday, July 3, 2014

বং- আং, চিং, ফেং, ইং !


===========


  

না, না- কোনো সোমসকিত নয়, পূজোরও মন্তর নয় ! ওই যে !! আজকাল সব সংক্ষেপে সারে না ? সেটাই !
বং মানেটা বলতে হবে না আশা করি !  এই বং রা আজকাল আন্তর্জাতিক হয়েছে । মানে, বংদের জিভে এখন মাল্টি কুইজিনের সহাবস্থান ।
ইডলি- ধোসা- সাম্বার বঢ়া থেকে শুরু করে- হাঙ্গেরিয়ান গুলাশ, চিলি চিকেন, চিকেন আলা কিয়েভ, এরকম আরও কত ।
মিষ্টিতে লাড্ডু, কাজু বরফি, কেক, পেষ্ট্রী ।
তাই বং আজ আং- মানে আর্ন্তজাতিক । তবে, গুর্মেরা ( খাদ্য- রসিক) বলেন এই পিথিবিতে  নাকি কুল্লে তিনরকম রান্না ।
চিং চাইনিজ
ফেং- ফ্রেঞ্চ
ইং- ইণ্ডিয়ান
আমার গুরুদেব ( আমি একলব্য শিষ্য), মুজতবা সাহেব বলতেন :- ইংরেজরা খাওয়ার ব্যাপারে হটেনটট ! পুরো রান্না ঘরটাই খাবার টেবিলে তুলে নিয়ে আসে । সব আধা সেদ্ধ ।
আরো বলেছেন :- এক ইংরেজ গেছে ফ্রান্সের এক রেষ্টুরেন্টে ! ভাষা না জানার জন্য,মেনুর মধ্যিখানে হাত দেখালো- এলো সুপ ।
আরও, ১০ টা পদ নীচে হাত দেখিয়ে ওয়েটারকে ইশারায় বলল: এইটা !
এলো আর এক রকম স্যুপ।
গুরুদেব বলছেন :- বেচারা হটেনটট ইংরেজ জানবে কি করে, ফ্রেঞ্চ মেনুর প্রথমেই ৬০ রকম স্যুপ থাকে ।
তা, বেচারা ইংরেজ শেষের থেকে ৩ ধাপ ওপরে হাত দেখাল । এলো খড়কে !
বং- জাত খাইয়ে বলে এরকম আহাম্মুকি করবে না !
তবে, হ্যাঁ ! গ্রীকরা নাকি, বং দের সঙ্গে এই ব্যাপারে টক্কর দিতে পারে । প্রবাদ আছে, গ্রীসে গেলে নাকি বেল্টের সাইজ বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হয় ।
আর ইয়াংকিদের তো সব ব্যাপারেই “ World’s Greatest” এক বন্ধুবর এই রকম আ্যডের খপ্পরে পড়ে , কফি খেয়েছিল । “ World’s Greatest” কফি! এক চুমুক দিয়েই- ওয়াক্ থুঃ। হাওড়া- শেয়ালদার ষ্টেশনের থেকেও বাজে কফি !!!!!!! ( এটা আমার পরোক্ষ অভিজ্ঞতা, যাঁরা থাকেন ওখানে, তাঁরাই বরং ভালো বলতে পারবেন !!!! )
আমার এক তালেবর বন্ধু আছেন । খাওয়ার ব্যাপারে তিনি খলিফা লোক ! চাইনীজ যে রান্না এই কোলকাতায় পাওয়া যায়, সেটার সাথে নাকি পাঞ্জাবী রেসিপি যুক্ত হয়েছে বলে তার বিশেষজ্ঞের মতামত ।

আমার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু – রূপঙ্কর সরকার, একবার আমার এই সব লেখায় মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলেন :-

এখন নাকি বিদেশে পাতি চিং এর বদলে ইংচিং-এর কদর বেশি। ইংচিং হল, চাইনি কুক্‌ড ইন ইন্ডিয়ান ফ্যাশন। আসল চিনে রান্না চিনেরা ছাড়া কেউ খেতে পারবেনা, আমরা ছোটবেলায় মাঝে মধ্যে খেয়েছি, ভাল লেগেছে, এমন সার্টিফিকেট মোটেই দেবনা।

তার পর নানা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে কোলকাতার চিনেরা এক নতুন ফিউশন আবিষ্কার করল বাঙালিদের জন্য। সেটারই এখন সারা বিশ্বে জয়জয়কার। তবে যদিও ওরা বলে 'ইন্ডিয়ান ফ্যাশন', ভারতের আর কোনও শহরে কোলকাতার মত চিনে রান্না পাবেননা। বোম্বেরটাও ভাল তবে আমাদের মত নয় (কর্পোরেশনের জলের গুণ)। আর ফ্রেঞ্চরা সাহেবদের খেতে শিখিয়েছে, এটা তো সত্যি।

ইংরিজি ভাষা যে অ্যাংলো স্যক্সন ও অ্যাংলো নর্মান ভাষা থেকে এসেছে, সেখানে 'অক্স' শব্দটা স্যক্সন, আর 'বীফ'টা নর্মান। আবার 'ডিয়ার'টা স্যক্সন কিন্তু 'ভেনিসন' টা নর্মান। ইউরোপে রান্না বান্না ফ্রেঞ্চরা অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এবার আবার ইংচিং-এ ফিরি। ছেলেবেলায় এক ধরণের জাপানী নুড্‌লস খেতাম, এখন আর পাওয়া যায়না। সেগুলোর টেস্ট আমার চিনেদের থেকে অনেক ভাল লাগত।
আসল চাইনীজ খেতে গেলে যেতে হবে, চায়না টাউনে । সেখানেও ভালো করে বুঝিয়ে বলতে হবে আপনাকে। তাহলে গিয়ে, আপনি পাবেন লক্ষী বাবুর আসলি সোনা চাঁদি!
 ক্ষী ক্ষাণ্ড !
আবার  চাইনীজ খাওয়ারও শাস্ত্রীয় বিধান আছে !  পোত্থমে- এমনি এমনি তিন/ চার চামচ খেতে হবে সব আইটেম । তারপর গিয়ে, ওই সব সস- টস দিয়ে খাওয়া ইষ্টার্ট !
এবারে, থাই খাবারের কথাও বলতে হবে । এরা সুগন্ধিযুক্ত, মশলাদার খাবার বানান । গানে যেমন, হারমনি থাকে, সেইরকম ভাবেই প্রত্যেকটা রান্নায় উঁচু, নীচু স্কেলে তেতো, ঝাল, টক, লবণ সব দিয়ে এক অপূর্ব সিম্ফনি । যেন সিল্কের শাড়ীর পাড়ে ফ্লোরাল মোটিফ ।
এবারে দ্যাখা যাক ফেং বা ফ্রেঞ্চ খাবার । এটা বলা হয়:- "The Italians civilized all of Europe and it is they, without a doubt, who taught us how to eat. . . . For more than two centuries the French have enjoyed good cooking, but rest assured, dishes have never been as delicate, as expertly prepared, or better tasting, than they are today."
ইটালিয়ানরা নাকি সমস্ত ইউরোপকে সভ্য বানিয়েছে । তাই ফ্রেঞ্চ রান্না এত সোয়াদের ! মোদ্দা কথা হল এটি ।
সে যাক! পনির আর ওয়াইন হল এই সমস্ত ফ্রেঞ্চ খাবারের সুর ।ফরাসি আঞ্চলিক রন্ধনপ্রণালী চরম বৈচিত্র্যপূর্ণ । এ যেন আমাদের বংদের তাঁতের শাড়ীর হরেক কিসিম।
তবে, এখন কোলকেতায় জাঙ্ক ফুডের রমরমা ! যেমন চলছে, জাঙ্ক জুয়েলারী । এদের কদর কতদিন থাকবে বলা মুশকিল ।

বেঁচে থাক, আমাদের মোচার ঘন্ট থেকে শুরু করে, চিতল মাছের মুইঠ্যা ! যারা খায় নি, তাদের নরকে বা দোজখেও জায়গা হবে না বলে দিলাম ।

জয় বং থুক্কু বাংলা !

No comments: