বাঙালী
জাতটা আদতে খুবই নাক উঁচু! (জানি, এক্ষুনি হই হই করে বেশ কয়েকটা
প্রতিবাদী পোষ্ট পড়তেও পারে- তবে, আম্মো লাচার) ধরুন, একটা বাড়ীতে হয়, গেট টুগেদার, অনেক লোক
মিলে আড্ডা, এই সব হচ্ছে! অবধারিত ভাবে, একবার না
একবার গান, কবিতা, চুটকী, পি.এন.
পি.সি. এইসব হবেই হবে।
ধরুন- আমি
সোমেনকে ( এটা কিন্তু একটা প্রতিকী নাম) বললাম- একটা গান গাও তো হে ! ও হয়তো, সুমনের গান ধরল। শোনার পর, কেউ একজন বলল- রবীন্দ্র সঙ্গীত হোক
। বেশ হলো। এবার কেউ বলল- একটা হিন্দী গান হোক! অমনি- সবাই হাঁ হাঁ করে উঠবে।
অনেক
তর্ক- বিতর্কের পর, বড়জোর মহম্মদ রফি বা মান্না দের গান হবে! কিন্তু- গজল? নৈব নৈব চ!
কারণ
একটাই! এই গজলের কয়েকটা মুশকিল আছে। গলায় সুর না থাকলেও অন্য গান বাঙালী সাহস করে
গেয়ে দেবে, কিন্তু গজল? ওরে বাবা! ওই গিটকিরি, তান, লয়- সবার ওপরে উর্দ্দু লব্জ, বাঙালী
ঠিক বুঝতেও চায় না বা বলা ভালো বুঝতে চায় না! তার ওপর, ওই যে
বললাম! নাক উঁচু! বাংলা ভাষার ধারে কাছে কেউ আছে নাকি?
এই
ধারণাটাই ভেঙেছিলেন, সদ্য প্রয়াত জগজিৎ সিং আর গুলজার! গজল, নগমা, গীতের পার্থক্য ভুলিয়ে দিয়ে এরা সেই প্রথাগত গজলকে
ভুলিয়ে দিয়ে,আম বাঙালী তথা ভারতীয় বা বলা ভাল- সারা পৃথিবীর কাছে
তুলে ধরলেন।
শরীর
থাকলেই মৃত্যু থাকবে! এটা কোনো আপ্তবাক্য নয়, প্রতিষ্ঠিত
সত্য।
প্রত্যেকেই
কালের নিয়মে চলে যান! কিছু কিছু লোক থেকে যান হৃদয়ের মণিকোঠায়! এরা না থেকেও আছেন।
শোক তো
থাকবেই! ছাড়ুন সেই শোক! আসুন- অল্প আড্ডা মারি, জগজিৎ
সিংকে নিয়ে।
জগজিৎ আর
দাড়ি- টাড়ি কাটবেন না বা রেওয়াজ করবেন না, আর পাঁচটা
লোকের মত বা গায়কের মত, কিন্তু থেকে যাবেন, স্মৃতিচারণে, গানের সি ডিতে।
প্রথাগত
গজলের কয়েকটা নিয়ম ছিল। তবলার ভূমিকা, এস্রাজ আর হারমোনিয়াম। জগজিৎ আনলেন-
গীটার। তবলাকে মেলো করে দিলেন। এলো বেহালা আর বাঁশী।প্রথমে, প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল- কিন্তু সবাই জানে; সবসময়ই “ মৌলবাদী” আর “প্রগতিশীল” দের দল
থাকে।
এবারে
কিন্তু “প্রগতিশীল” রাই দলে ভারী হলো। ১৯৮৭ সালে
প্রকাশিত হলো ভারতের প্রথম মাল্টি চ্যানেল রেকর্ডের ( আসলে,ফোর ট্র্যক ডিজিটাল সাউণ্ড) আলবাম- বিয়ণ্ড দ্যা টাইম। বেরোতেই হই হই-চই চই!
সাউণ্ড
ইঞ্জিনিয়ার, গুলজার, বাদ্যযন্ত্রী আর জগজিৎ সিং এর
সমবেত প্রচেষ্টা। পরপর বেরুতে লাগল আ্যলবাম।
তবে
সাফল্য এত সহজে ধরা দেয়নি তাঁর কাছে । মুম্বাইতে প্লে-ব্যাক গেয়ে ভাগ্য পরীক্ষা
করতে আসেন ১৯৬১ তে কিন্তু তেমন সুবিধে না হওয়ায় আবার জলন্ধরেই চলে যান | কিন্তু নতুন উদ্যমে আবার স্বপ্নের মুম্বাইতে ফিরে আসেন ১৯৬৫ এ আরেকবার চেষ্টা
করে দেখার জন্যে । HMV থেকে দুটি গজল রেকর্ড হয় । পাগড়ি ও দাড়ি ছেড়ে
নতুন রূপ নেন | প্লে-ব্যাক তখন অবধি স্বপ্নই...। জিঙ্গল , ডকুমেন্টারি ইত্যাদি তে সঙ্গীত পরিচালনা করেই রুজিরোজগার চলছিল | চিত্রার সাথেও সেই সময়ে দেখা ও ১৯৭০ এ পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়া । এর পর
ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে ।
তাতে
সিনেমা জগতের লাভ না হলেও গজল সঙ্গীতের ক্ষয়িষ্ণু ধারা পেলো এক নবজীবন | ১৯৭৫ এ HMV র উত্সাহে তিনি চিত্রার সাথে এক অনন্য আঙ্গিকে তাঁর
প্রথম গজলের LP রেকর্ড বের করলেন 'The Unfogettables' । প্রত্যেকটি গান
অসাধারণ এবং বলাই বাহুল্য গানগুলি তাঁর নিজেরই সুরারোপিত । ব্যবহৃত হলো সারেঙ্গী ও
তবলা ছাড়া অন্য বাদ্যযন্ত্র | সে রেকর্ড অসামান্য জনপ্রিয়তার
তুঙ্গে উঠে গেল ।
এর পর আর
পেছন ফিরে দেখতে হয়নি | বের হলো প্রথম ডাবল এলবাম 'Come Alive' | এর পর আরো দুটি ডাবল এলবাম 'Live at Wembley' এবং 'Live at Royal Albert Hall', লাইভ কনসার্ট থেকে, ১৯৭৯ ও ১৯৮২ তে| জগজিত-চিত্রা জুটি ততদিনে খ্যাতির তুঙ্গে |
২৮ জুলাই
১৯৯০। বিবেক, মারা গেল পথ দুর্ঘটনায়। জগজিৎ আর চিত্রা সিংএর
একমাত্র সন্তান!
তার মাত্র
তিন মাস আগে গানগুলো রেকর্ডিং হয়েছিল!
বিবেক
বলেছিল:- বাবা, আমি এর রিভিউ ম্যনেজমেন্ট করব।আমার একটা ফোটো যেন
থাকে ওই সিডির কভারে।
সেই সিডির
কোনো নামকরণ হয় নি তখনও!
পরে-
জগজিৎ নাম দিলেন:- সামওয়ান সামহয়্যার! চিত্রার সেই শেষ সিডি- জগজিৎ এর সঙ্গে!
তারপর
অনেক ঝড়, পারিবারিক জীবনে! চিত্রা গান ছেড়ে দিলেন!
বর্তমানে
তিনি পক্ষাঘাত গ্রস্তা!
মনে-
আমাদের সেই গান:-
আপ কো ভুল
যায়েঁ হম্, ইতনে তো বেওয়াফা নহীঁ
আপ সে
ক্যা গিলা করেঁ আপ সে কুছ গিলা নহী।।
No comments:
Post a Comment