Wednesday, July 2, 2014

পুজোর খাওয়া

স্পাঘেটি, চাউ, রোল- এসব শুনলে কি মনে হয়? মাথার মধ্যে , ঘেটি ধরে, চই চই করে রোলিং করে স্পা হচ্ছে। যা- তা ব্যাপার!


পূুজোর কেনাকাটি করতে গিয়ে, বাঙালী যেটা লিষ্টে প্রথম রাখে- সেটা হলো, বাজার করতে গিয়ে কি খাওয়া হবে!

তারপর , প্ল্যানিং চলে পূজোর চারদিন আরও সব কি খাওয়া হবে। খেতে খেতেই এই বাঙালী জাতটা
গেল!!!!!



এমন পেট সর্বস্ব জাত, দুনিয়াতে, গ্রীক ছাড়া আর কেউ নেই।

প্রবাদ আছে, গ্রীসে গেলে নাকি বেল্টের ফুটো বাড়াবার দরকার নেই।

পূজোর সময়, বাঙালীর সব বিচিত্র খাওয়া- দাওয়ার কম্বিনেশন। ইডলি- দোসা, বিরিয়ানী, কাবাব, লুচি-

মাংস, মিক্সড চাউমিঁএ- আরও সব কত নাম জানা- অজানা খাবার! বাপরে বাপ!

ফেসবুকে আবার আজকাল দেখছি, বাজার দর দিচ্ছেন, বিভিন্ন জন!

কোলকাতার সল্ট লেকের একটি পাড়ায় যে পুজো হয় , ওদের চাঁদার বরাদ্দ ১০০০ টাকা, তবে সপ্তমী থেকে দশমী -এই ৪ দিনে দু বেলার খাবার ব্যবস্থা পুজো প্যান্ডেলে !

পূব বাংলায়, পুজোর রান্না করতে করতে, রান্নার ঠাকুর নাকি, এই গানটি গাইতো:—
“কি বঙ্গ দ্যাখাইলি হরি কলিতে

মানে না ধর্মাধর্ম করে না কোনও কর্ম

সুগম্য অগম্য পথে চলিতে”—

এই ঠাকুর মনে হয়, ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ছিল। এখন তো তাই হচ্ছে!

কোথায় গেল সেই-

বাড়ির তৈরি গাওয়া ঘি, কাঠের উনুনের রান্নার স্বাদ, মাটির হাঁড়ির ঝরঝরে ভাত, হাঁড়ির ভাতের মাঝে

সরষে-লঙ্কা বাটা কাঁচাতেল দিয়ে ভাপে দেওয়া ইলিশের গন্ধ, কখনও পুজোর সকালের লুচি, যেগুলো এপার বাংলার ছোট মাপের লুচি না, আকারে বেশ বড়। প্রায় মাপসই এখনকার একটা ষ্টীলের রেকাবীর মত।
উল্লুস!
অষ্টমীতে পাঁঠা বলি হত। সেই মাংসে পেঁয়াজ রসুন দেওয়া হত না।তাই বলা হত নিরামিষ মাংস। ধনে বাটা, জিরে বাটা, লঙ্কাবাটা দিয়ে তৈরী সেই নিরামিষ মাংস চেটেপুটে খেত বাঙালী।
“ঘরের মেঝেতে নকশি কাঁথাটি মেলে ধরে পল্লীবধূ তাঁর কলমি ফুলের মতো সুন্দর আঙুলগুলি দিয়ে সরু সূত্র জালে যে পদ্মফুলটাকে জীবন্ত করে তুলেছেন, কৃষাণ বধূ ঘরের আঙ্গনে.............. ঘরের চৌকাঠে জানালায় সুতার মিস্তরিরা কঠিন কাঠ কেটে যে নক্সা এঁকে দিয়ে গেছে — বাড়ির গৃহিণী পাথরের উপরে সূক্ষ্ম বাটালি ও নরুনের আঘাতে তাকে রূপ দিয়ে তারই ছাঁচে নানা রকমের পিঠা তৈরি করে আপন আত্মীয় পরিজনদের আনন্দ পরিবেশন করেছেন”— জসীমউদ্দিন।
মিষ্টির কি সব বাহার! নাড়ু, পিঠেপুলি, আর ছিল ছাঁচে তৈরি সন্দেশ। আবার পাবনায় বিখ্যাত ছিল গজা, বালুসাই। কয়েকটা পিঠের নাম বলছি!
হংসকেলি
শোভারিকা
বেণী
চন্দ্রকান্তি
ললিতা!( মাননীয় মান্না দে, আমার মনে হয়, এই পিঠেটা খেয়েছিলেন, না হলে ওই বিখ্যাত গানটা হতো না)
চিত্রা
কর্পূরকেলি
অমৃতকেলি
নাড়ু দুরকমের- চিনির আর গুড়ের!
এপার বাংলায় হলো- কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া আর শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বাবরসাহি........
দুর্গাপূজা- সাহিত্য- খাবার, এটা ত্রিকোণ! যাবে কোথায় বাছা? পূজোর আড্ডা মারতে গেলেও খাবার!
এখানে কিন্তু আবার ফাষ্ট ফুড! ক্যালরী কনশ্যাস সুন্দরীরা পূজোর এ কটা দিন সব ভুলে যায়! রান্নাটা করতে পারে না, এই যা দুঃখুঃ! যদিও বা রান্নাটা করতে যায়, তবে মনে হবে গামছা পরে বাটিতে নামি! কয়েকটা ব্যতিক্রম আছে, তবে কে না জানে- বিধিই ব্যতিক্রমের নিয়ামক!

No comments: