+++++++++
চন্দ্রশেখর ঠাকুর । বিহারের মুঙ্গের জেলায় বাড়ী । সদর শহর থেকে বাসে আধ ঘন্টার দূরত্বে ওর গ্রাম – বিছনপুর । পেশায় নরসুন্দর ।
আমি দমদমে এসেছি প্রায় ১৮ বছর । তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার আলাপ ।
চুল দাড়ি কাটতে আসে আমার আর ছেলের ।
ভালই হাতটান আছে বলা যায় ।
একটু চোখের আড়াল হয়েছি তো, সিগারেটের প্যাকেট থেকে মিনিমাম দুটো সিগারেট ঝেড়ে দেবে ।
ধরা পড়লে দন্তরাজি কৌমুদি বিকশিত করে বলবে – হে ভগবাআআআননননননন ! আমি করি নি, আমার হাতটা সিগারেট নিয়েছিল ।
বৌয়ের নাম, নাকি ফুলমোতিয়া । একটা মেয়েও নাকি আছে । কেউ আজ পর্যন্ত চোখে দ্যাখে নি ওদের ।
যে বাড়ীতে থাকে, সেই বাড়ীওয়ালা, মাসের শেষে ভাড়া চাইতে এলে অম্লান বদনে চন্দ্রশেখর বলে – চুল দাড়ি কেটে শোধ করি দিব ভাড়া ।
ফলে, পাততাড়ি গোটাতে হয়, সেই ভাড়াবাড়ী থেকে ।
নাই নাই করে গোটা পাঁচেক বাড়ী পাল্টানোর পরে------ এখন অ্যাডভান্স না নিয়ে ওকে আর বাড়ী ভাড়া দেয় না কেউ ।
বাজারের হোটেলে ভাত ডাল তরকারি, মাছ খেয়ে বাক্স বের করে চুল দাড়ি কাটতে চায় হোটেল মালিকের ।
কিছুতেই পয়সা বের করতে চায় না চন্দ্রশেখর ।
এখন হোটেল গুলোও সাবধান । কুড়ি টাকা নিয়ে তবে ওকে খেতে দ্যায় ।
দাবী অনুযায়ী, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরের দাড়ি- নাকি কামিয়ে দিত চন্দ্রশেখর ।
একদিন হিসেব করে দেখা গেল, কপূর্রী ঠাকুর যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন চন্দ্রশেখরের বয়স পাঁচ বা ছয় বছর ।
দু বছর আগে একটা হার্টের সমস্যা হয়, ওর । পাড়ার লোকেরা ওকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তিও করে ।
চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলে ওরই হাতে প্রায় তিন হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় ।
পরদিনই ওকে দেখতে পাড়ার একজন গেলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বাবু বলেন- চন্দ্র শেখর বণ্ড দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে ।
দিন কয়েক পরে- ওর দাদা আমাদের জানায় , দেশে চলে গেছে চন্দ্রশেখর ওই টাকা নিয়ে ।
মাস খানেক পর চন্দ্র শেখর হাজির ।
জিজ্ঞাসা বাদে কাবু হয়ে কবুল করল :- ওর অসুখ নাকি গ্রামে ঝাড়ফুঁক করে সেরে গেছে, মাত্র ১০০ টাকায় ।
বাকী টাকায় ওর ভাগের বাড়ীটা ঠিক করেছে ।
আজকাল ও ঠিক দুপুরের খাবার সময়ে আসে । এসেই উদাত্ত কণ্ঠে বলে- একটু ভাত দেন না, খাইইইইইইইইইইইই !
কখনও বা বলে – চা করেন না, খাইইইইইইইইইইইই !
বলেই গা, হাত পা টিপতে বসে যায় ।
আমাদের খাওয়া –দাওয়া না হয়ে থাকলে, ভাত জোটে ওর কপালে,না হলে গোটা কুড়ি টাকা আরও আবদার করে নেয়- হোটেলে খাবে বলে ।
ভাইয়ের ছেলের পৈতের সময়, মাথা কামাতে ওকেই নিয়ে গিয়েছিলাম ।
নতুন ক্ষুর নিয়ে এসেছিল । দাম বলল – ১০০ টাকা । দিয়েও দিল ছোট ভাই । সাথে ওর প্রাপ্য পারিশ্রমিক ।
পরে জানা গেল- কাজীপাড়ার ঐ দোকানে নতুন ক্ষুরটা ও আশী টাকায় বেচে দিয়েছে।
ঝাঁড়ফুঁকে ওর রোগ সারে নি- ফলে বাধ্য হয়ে এখন ওষুধ কিনে খাচ্ছে ।
চেষ্টা করেছিল- দোকানদারের টাকা চুল – দাড়ি কামিয়ে শোধ করতে, কিন্তু সে চেষ্টা তার সফল হয় নি ।
+++++
আজ এসেছিল আমার বাড়ীতে । ততক্ষণে খাওয়া দাওয়া শেষ । কুড়ি টাকা নিয়ে চলে গেল গা – হাত টিপে ।
এমনিতে নেবে না ।
==========
বাড়ীতে গিয়ে আলু চোখা, ডাল আর ভাত বানিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়বে । উঠবে ভোর পাঁচটায় ।
আবার শুরু তার পেশার জগত । দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় ওর ।
তবুও কেন যে ঠিক ভাবে খায় না , সেটা ওর দাদা বা গ্রামের লোকেরাও বলতে পারে না ।
ফুলমোতিয়া আছে, তবে ওর মেয়ে নেই । ব্যাংকে নাকি দু লাখ টাকার ওপর জমিয়েছে !!!
কি করবে, ওই টাকা নিয়ে--------- কেউ জানে না ।
No comments:
Post a Comment