ওধুয়া- বলে একটা গ্রাম আছে ঝাড়খণ্ডে । জায়গাটা তখন বিহারে ছিল
। পশ্চিমবঙের লাগোয়া বলতে গেলে ।
মালদার মাণিকচক বা বিহারের রাজমহল হয়ে যাওয়া যেত সেই গ্রামে
।
মায়ের বাবা তখন ওখানে ডাক্তারি করতেন, দেশ ভাগ হবার পর ।
হিন্দু, মুসলমান সবাই মিলে মিশে থাকতো । হিন্দি
বাংলা দুটোই চলত কথ্য ভাষা হিসেবে।
যে বাড়ীতে থাকতাম, তার পাশ দিয়েই গঙ্গা নদীর চওড়া বুক
। রাতের বেলা কান পাতলে জলের ছলাৎ ছলাৎ শোনা যেত ।
মাছ ধরার জেলে নৌকো থেকে আস্তে ভেসে আসতো সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত
ছবি “ নাগিনের” গান – মন ডোলে রে ।
কলের গানে বাজতো আরও হিন্দি গান- ৭৮ আর পি এম রেকর্ডে । একটু
দূরেই ছিল একটা ভাঙা ব্রিজ ।
বলা হতো – ওটা মোঘল আমলে তৈরি, রাজমহলের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ।
তা, ঐ ভাঙা ব্রীজের ওপর দিয়ে নাকি ঘোড়ার
খুরের আওয়াজ পাওয়া যেত গভীর রাতে । লোকের ভয় ছিল ।
মাঝে মাঝে চীৎকার হত উর্দু ভাষায় ।
ভয়ে সিঁটকে , চোখ খুলে চাইতে পারতাম না লণ্ঠনের আলোয়
ভরা গঙ্গা মুখী বারান্দার দিকে । মায়ের পাশে চুপ করে শুয়ে থাকতাম । মা পাখা নেড়ে হাওয়া
করতো আমায় ।
আমার মেজোমামা ছিলেন দাদুর কম্পাউণ্ডার । ওধুয়ার হাটখোলাতে সোনার
দোকান ছিল ভগীরথ মামার ।
মেজোমামার হাত ধরে , ভগীরথ মামার
দোকানে যেতাম ।
ভারি পয়সাওয়ালা লোক তারা । বাড়ীতে, ইয়া বড় একটা
রেডিও আর চোং লাগানো কলের গান ছিল ।
বিশাল দুটো উঁচু বাঁশ দু দিকে পোঁতা । মধ্যে খানে ঝুলতো তামার
পাক খাওয়া তার।
তারটা বাঁধা থাকতো দুটো শামুকের খোলের মত দেখতে সাদা পোরসিলিনের
ছোট খোপ ওয়ালা জিনিসের সঙ্গে । ও দুটো আবার দড়ি দিয়ে বাঁধা, বাঁশ গুলোর সাথে ।
তামার তারের মাঝখানে জোড়া একটা কালো তার নেমে সেঁধিয়ে যেত রেডিওতে
। এটার পোষাকী নাম ছিল – এরিয়াল । আজকালকার অ্যান্টেনার ছোট
ভাই।
বলা হতো- যত উঁচুতে থাকবে এরিয়েল- তত ভালো রিসেপশান হবে রেডিওতে
।
কত যে গান বাজনা শুনতাম ।
ছুটি ফুরিয়ে গেলে গরুর গাড়ী চেপে আসতাম মায়ের সঙ্গে রাজমহল ষ্টেশনে।
সেখান থেকে দু বার ট্রেন বদল করে ওডিশার পারলাখেমুণ্ডিতে বাবার
কাছে।
মেজোমামা পৌঁছে দিয়ে একদিন বাদেই ফিরে যেতো ওধুয়ায় , না হলে একা দাদুর কষ্ট হবে ।
বাবা একবার জন্মদিনে আমায় একটা রুপোর টাকা দিয়েছিলেন- রাজার
মুখ খোদাই করা ।
কোথায় যে হারিয়ে গেল সেটা ! এখন শুধু স্মৃতি সেই টাকা আর পায়েস
খাওয়া
No comments:
Post a Comment