কটক থেকে ভুবনেশ্বরের এয়ারপোর্ট দূরত্ব সড়ক পথে মোটামুটি
ভাবে ৩০ কিমি ।
ঘন ঘন বাস ছিল ( এখনও আছে) ভুবনেশ্বর যাওয়ার । কোলকাতায়
মিটিংয়ের ডাক পড়তো আর স্যাংশান ছিল ট্রেনে ফার্ষ্ট ক্লাসের ।
ট্রেনের ভাড়া, যতদূর মনে আছে- ছিল ২৮ টাকা মত (
কম বেশী, হতে পারে, ঠিক মনে নেই )।
তখন, ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্স বাসে করে নিয়ে
যেত, এয়ার পোর্টে- সে কোলকাতা বা ভুবনেশ্বর, যেখানেই হোক ।
একবার ওদের সিটি অফিসে রিপোর্ট করলেই হল । কোলকাতায়
চিত্তরঞ্জন এভিনিউ তে অফিসটা এখনও আছে বোধহয় ।
প্লেনের ভাড়া ছিল বোধহয় ৬০ / ৭০ টাকা । যে পয়সা পাবো, সেটার সঙ্গে নিজের গোটা ত্রিশেক টাকা জুড়লেই প্লেনের বাবুয়ানি ।
২৮ সিটের ফক্কার চলতো সেই সময় । প্রেসারাইজড্ প্লেন । টু
বাই টু সিট ।
এখন যেমন মাইকে কি কি করতে হবে বমি পেলে বা মাথা ঘুরলে, বলে দেওয়া হয় আর কিছু বাদে বাদে দাঁড়িয়ে এয়ার হোষ্টেসরা মূকাভিনয় করে, তখন সেটা ছিল না ।
দরজা বন্ধ হলে, একজন উঁচু গলায় করণীয় গুলো বলে
দিতো । সিটের মাথার ওপর ছিল এসির মুখ, ঘোরানো যেত । জানলা গুলো গোল নয়, আয়তাকার ।
নাইট ল্যাণ্ডিং ফেসেলিটি ছিল না ভুবনেশ্বরে । ফলে, দুপুর গড়িয়ে জাষ্ট বিকেল হচ্ছে ঠিক সেই লাষ্ট ফ্লাইটটা ধরতাম ভুবনেশ্বর থেকে ।
যাতায়াত করতে করতে, প্রায়
অনেক ষ্টাফের সঙ্গেই পরিচিতি হয়ে গেছিল ।
তা, সেদিন কমাণ্ডে ছিল – ক্যাপ্টেন সঞ্জীব মিশ্রা ( নামটা সঞ্জয়ও হতে পারে ) । বোম্বে ফিল্মের হিরো
মার্কা চেহারা । প্রায় ৬ ফুটের মত উচ্চতা ।
তেমনই সুন্দর কথা বলতো- ইংরেজী, হিন্দিতে
।
ডিউটি শেষ হলে- অনেক সময় নিজের গাড়ীতে তুলে নিত আমায় । তবে, এই সুযোগ বেশী পেতাম না , ওর বিভিন্ন কাজের জন্য ।
স্মুদ টেক অফ । উড়ে চলেছি কোলকাতার দিকে ।
নীচের বাড়ী ঘর, রাস্তা , গাড়ী টাড়ি
সব খেলনার মত লাগছে । আমার ডান দিকের উইণ্ডো সিট । জানলা দিয়ে মোটামুটি প্লেনের
পাখা যে ঘূর্ণায়মান, সেটা একটু দেখতে পারা যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে একটু ঝাঁকানি , এয়ার
পকেটের জন্য, কারণ এই প্লেন বেশী উঁচুতে উড়তে পারতো না, তবে সেটা আমার গা সওয়া হয়ে গেছিল ।
কানে ধাপা ধরতো, কিন্তু মুখটা হাঁ করে এদিক সেদিক
ঘুরিয়ে নিলে, কিছুক্ষণ পরে ছাড় পেতাম ।
কফি খেতে খেতে , একটা ইলাষ্ট্রেটেড উইকলিতে চোখ
রেখে ছবি আর লেখা গুলো পড়ছি ।
পাশের সিটে এক মাড়োয়ারি সহযাত্রী হনুমান চালিশা পড়ছে মন
দিয়ে উঁচু গলায় ।
জিজ্ঞেস করে জানলাম, এটাই তার
প্রথম বায়ু মার্গে ভ্রমণ ।
হঠাৎ প্লেনটা একটু বাঁ দিকে হেলে পড়ল আর কাঁপা শুরু ।
হোষ্টেসদের মুখ গম্ভীর । একবার করে ফ্লাইট ডেকে ঢুকছে আর
গম্ভীর মুখে বেরিয়ে আসছে ।
জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলছে না ।
আমার এবারে ভয় ধরলো । মাত্র বছর তিনেক ( ১৯৬৮) আগেই দমদমে
প্যান অ্যামের বোয়িং প্লেন ভেঙে পড়েছিল রানওয়ে ছোঁয়ার আগেই ।
নীচে নীল জল দেখা যাচ্ছে । অল্প একটু সময় বঙ্গপোসাগরের ওপর
দিয়ে যেত বা যায় এখনও ।
মিনিট পাঁচ এরকম ছিল । তারপরই সব স্বাভাবিক ।
ভয়টা তখনও কাজ করছে মনে । ধীরে নজরে এলো সুতোর মত কোলকাতার
রাস্তা ।
রানওয়েতে নেমে এলো মসৃণ ভাবে আমাদের প্লেন ।
সবার শেষে নামলাম আমি ।
ঘর্মাক্ত সঞ্জীব একটা ট্রলির গায়ে হেলান দিয়ে সিগারেট
খাচ্ছে । তখন এত কড়াকড়ি ছিলই না ।
জিজ্ঞেস করলাম – কেয়া হুয়া থা ইয়ার !
একটা সিগারেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ক্যাপ্টেনের উত্তর :- এক
সাইড কা এঞ্জিন বন্ধ্ হুয়া থা ফর এ সর্ট হোয়াইল ।
আমার পড়ে যাওয়াটকে কোনো রকমে আটকেছিল সঞ্জয় বা সঞ্জীব ।
========
তার পর আর পারতপক্ষে প্লেনে কোলকাতা যেতাম না, লাচার না হলে
No comments:
Post a Comment