পাড়ার রঘুকে নিয়ে লিখলে, মহাভারত হয়ে যাবে । আমাদের হরির দাদা- রঘু । না, ডাকাত নয়, তবে মাতাল ।
নাগেরবাজার – হাওড়া রুটে মিনি বাস চালাতে দেখছি, গত আঠেরো বছর ধরে । ষ্টিয়ারিং ধরলে- একটুও মদ খায় না । বলে- গুরুর বারণ ।
দুরন্ত গাড়ী চালায় রঘু । এই তল্লাটে এই রকম মিডিয়াম ভেহিকল চালানোর লোক খুব কমই আছে ।
এমনিতে, বিনয়ী- ভদ্র- কম কথা বলে ।
বাস গ্যারাজ করে – গুরু পাঁচুর আশ্রমে ঢোকে নাগের বাজার মোড়ে । দুটো বোতল সাফ করে ঢোকে পাড়ায় ।
যত তাফালিং শুরু হয়- পাড়ায় ।
আমার সঙ্গে দেখা হলেই- একটা স্যালুট ঠুকে, বিড়ি দেবে । সঙ্গে পেটেন্ট সংলাপ :- মা কি তোর একার ? ( মদ না খেলে আমায় – আপনি বলে)
স্যালুট ঠোকারও কারণ আছে ।
বছর ১৪/১৫ আগে, ট্রেন লেট থাকার ফলে ;দেরি হয়েছে হাওড়া থেকে আসতে । ভাগ্য ভালো হওয়াতে একটা ২১৯ বাস পেয়েছিলাম ।
প্রায় রাত বারোটায় নামলাম নাগের বাজারে । কি আশ্চর্য- একটা চেনা রিক্সাও পেলাম, পাড়ার ।
একটু এগুতেই দেখি- রঘু হেব্বী কাকুতি মিনতি করছে জীপে বসা কামারডাঙা ফাঁড়ির বড়বাবু- সেন সাহেবের কাছে ।
আমারে ছাইড়া দ্যান ছ্যার । মিনি চালাই সারাদিন, তারপরে আর শরিলে দ্যায় না ছ্যার । ওই একটু মদ খাই ।
সেন বাবু মিচকি হাসছেন ।
আমাকে দেখতে পেলো রঘু ।
ও রামকিসনোদা, বড়বাবুরে কইয়া দ্যান না ।
সেন বাবু হেসে বললেন :- নিয়ে যেতে পারবেন আপনার রিক্সাতে ?
কেন পারবো না ? ও আর আমি তো একই পাড়াতে থাকি ।
সে জানি- ব্যাটা এত টলছিল, যে কোনো সময় লরী চাপা পড়তে পারতো, তাই দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম ।
রঘু আস্তে করে এসে উঠলো রিক্সায় । একেবারে স্পিকটি নট ।
গলির মুখটাতে ঢুকতেই গর্জে উঠলো ।
আমারে ছাড়াইলেন ক্যান ?
আমি তো ছাড়াই নি, বড় বাবুই তো ছেড়ে দিয়েছেন ।
রাহেন ! বদনাম করসে আমার ।
কি ?
আমি নাকি এত মদ খাইসি যে টলতাছিলাম । ঘোরান “রিস্কা” । আজ ইসপার উসপার ।
আমি কেনাকে বললাম – ঘোরা রিক্সা ! রঘুর অপমার সহ্য করা আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না ।
ঘুরিয়ে একটু এগিয়েছি , ওমনি রঘু বলল:-
থাউক গিয়া । অত রাতে আর ক্যাচাল কইরা লাভ নাই, ফেরত চলেন ।
===========
পরের দিন হরির দোকানে আমাকে আর কেনাকে চা খাইয়ে একপাশে ডেকে বলেছিল :-
রাইতের কথা আর কাউরে কইয়েন না ।
এত বছর পর এই আপনাদের বললাম – অবশ্য আগেও বলেছি বোধহয় ।
No comments:
Post a Comment